৬. কর্নেলের প্রকল্প

কর্নেলের প্রকল্প

 থানার সামনে শান্ত প্রতীক্ষা করছিল কর্নেলের। কর্নেল তাকে দেখে খুশি হলেন।এসে গেছ দেখছি! কিন্তু রাস্তায় কেন? আমি এদের তোমার কথা বলে রেখেছিলুম-পরিচয় দাওনি নিশ্চয়?

শান্ত হেসে বলল, রক্ষে করুন কর্নেল! ওসব থানা-পুলিস থেকে আমি সবসময় দূরে-দূরে অবস্থান করতে চাই।

কর্নেল ওর হাত ধরে টানলেন।…রাইট, রাইট। চলো আমরা গঙ্গার ধারে নিরিবিলিতে গিয়ে বসি। তোমার অবশ্য বিশ্রাম দরকার। কারণ ছ-সাত ঘণ্টার জার্নিতে তোমার প্রচুর ক্লান্তি স্বাভাবিক। তবে হাতে সময় এত কম! আগে কথা বলার পর সে ব্যবস্থা হবে। প্যালেস হোটেলের সুরঞ্জনকে খবর পাঠিয়েছিলুম সকালে। বিকেলের মধ্যে একটা রুম পেয়ে যাচ্ছি। দুজনে সেখানে গিয়েই থাকা যাবে বরং। বুঝলে শান্ত, থানা-পুলিস থেকে আমিও তোমার মতো দূরে অবস্থান করতে ভালবাসি। কিন্তু হয়ে ওঠে কই?

দুজনে কিছুদূর হাঁটার পর বাজার ছাড়িয়ে বাঁদিকে ঘুরে কেল্লাপ্রাঙ্গণে ঢুকলেন। তারপর নির্জন একটা জায়গা দেখে গঙ্গার ধারে বসলেন।

শান্ত বলল, আমি জানতুম, আপনি আমাকে ডাকবেন।

 কর্নেল হাসলেন। …তাই বুঝি? কেন ডাকব ভেবেছিলে?

সেই হ্যালুসিনেশান–অর্থাৎ রাতের মায়ার ব্যাপারে কিছু আপনি সন্দেহ। করছেন, তা তখনই টের পেয়েছিলুম।

তুমি বুদ্ধিমান ছেলে, শান্ত।

কর্নেল, আপনার সন্দেহ সত্য। আমি সোমনাথবাবুর গাড়িতে একটা ব্যাপার দেখে একটু অবাক না হলে সে-রাতে অত অস্থির হতুম না। স্টেশন ওয়াগন গাড়ির পিছনটায় সাধারণ গাড়ির মতো খোল বানিয়ে নেওয়া হয়েছিল–তার কারণ নিশ্চয় আউটডোর শুটিং-এর জন্য দরকারি আসবাবপত্র বইবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আমার প্রথম অবাক লাগল, যখন দেখলুম প্রায় সব আসবাবই গাড়ির ভিতরে ঠাসা হয়েছে। সোমনাথবাবুকে যখন বললুম, বসার অসুবিধে না করে এগুলো পিছনের খোলে রাখলেই তো ভালো হত–তখন উনি জবাব দিলেন, চাবিটা খুঁজে পাচ্ছি না কদিন থেকে। আমি বললুম, চেষ্টা করলে আমি খোলের ডালাটা খুলতে পারি হয়তো–অমনি উনি শশব্যস্ত আপত্তি করলেন। তখনকার মতো ব্যাপারটা ধামাচাপা রইল। কিন্তু আমার ওই এক অভ্যেস, কিছু মাথায় ঢুকলে আর স্বস্তি পাইনে। পথে একজায়গায় চা খেতে ওরা সবাই নেমে গেল। আমি একটু দেরি করে বেরোলুম। রাস্তার ধারে একটা কারখানার দেয়ালের পাশে গাড়িটা দাঁড় করানো ছিল। সটান এসে পিছনে খোলের হ্যাঁন্ডেলটা জোরে মোচড় দিতেই খুলে গেল। ঢাকনাটা একটু তুলেছি, পিছন থেকে সোমনাথবাবু ধমকে উঠলেন–আঃ, কী হচ্ছে শান্ত!..রেখে দিলুম। কিন্তু যা দেখবার দেখা হয়ে গেছে।

নির্ঘাত ওর মধ্যে একটা বাঁদর ছিল?

 শান্ত কর্নেলের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, আপনি জানেন?

হ্যাঁ। তারপর কী হল বলো?

সোমনাথবাবুকে কথাটা বললুম। তার ছবিতে বাঁদরের কোন ভূমিকা আছে নাকি? উনি কিছু উদ্ভট তত্ত্ব আমাকে বোঝাবার চেষ্টা করে শেষে বললেন, এ ব্যাপারটা সায়ন্তন-স্মিতা-শ্রীলেখাকে যেন জানানো না হয়। কারণ–ওঁর সেই তত্ত্বের ভাষায়–একজন আধুনিক মানুষ আচম্বিতে তার পূর্বপুরুষের এক বিশেষ প্রজাতির মুখোমুখি হয়ে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করে, সেটাই তাঁর ছবিতে অন্যতম বিষয় হয়ে থাকবে। আগে থেকে যদি জানা থাকে যে এবার দৃশ্যে একটা বাঁদরের উপস্থিতি আছে তাহলে তো পাত্র-পাত্রীরা তৈরি হয়ে রইল অভিনয় করার জন্যে। সোমনাথ তাঁর ছবিতে অভিনয় চান না, চান বাস্তবের প্রত্যক্ষতা। যাই হোক, আমিও চেপে গেলুম। কিন্তু সারাক্ষণ অস্বস্তি বাড়তে থাকল। শেষে এক অদ্ভুত খেয়াল চেপে বসল মাথায়। সবখানে বাঁদর দেখতে থাকলুম কল্পনায়।…শান্ত হাসতে লাগল।

কর্নেল বললেন, হুম! কিন্তু এই জাল সোমনাথের আসল উদ্দেশ্য কী, তুমি কি অনুমান করেছিলে কিছু–নাকি করনি? 

কিছুই মাথায় আসছিল না। পরে যখন সিতারা আমাকে বিপদ হবে বলে ভয় দেখাতে লাগল, তখন মনে হল–সোমনাথ যা কিছু করতে যাচ্ছেন, এবং তা যাই হোক, ওই মেয়েটা সব যেন জানে।

আমারও তাই ধারণা। ওর দাদা–হেকিমসায়েবকে পুলিস শিগগির গ্রেপ্তার করছে। দেখা যাক্, জেরায় কী বেরোয়।…কর্নেল একটু ভেবে ফের বললেন– আচ্ছা শান্ত, তুমি আমাকে বলেছিলে যে কলকাতা ফেরার পর আবার জাল সোমনাথ ভট্টের সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছে…।

শান্ত বাধা দিয়ে বলল, ওটা আমার রসিকতা! আসলে সেই আগের ঠিকানায় গিয়ে দেখি ঘরে তালা ঝুলছে।

তুমি বড্ড মিস-লিড করো, শান্ত!

শান্ত কর্নেলের অনুযোগ মেনে নিয়ে বলল, আমি দুঃখিত কর্নেল। ও আমার বড় বাজে অভ্যেস।

ঠিক আছে। এবার ওঠা যাক।

কর্নেল সন্দিগ্ধভাবে বললেন, এও সেই বড় বাজে অভ্যাস নয় তো?

শান্ত হেসে বলল, না। সায়ন্তনকে হঠাৎ কাল রাস্তার ভিড়ে আবিষ্কার করলুম। আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে গা ঢাকা দিচ্ছিল। ধরে ফেললুম।

তারপর?

সায়ন্তন আমাকে একটা অদ্ভুত কথা বলল। কবরখানার সেই ঘরটায় যখন ও ঘুমের ভান করে নাক ডাকাচ্ছিল, তখন টের পায় কে আলো নিবিয়ে দিল। তারপর খসখস শব্দ হচ্ছিল। সায়ন্তন ভেবেছিল সোমনাথবাবু এসে শুয়ে পড়ল। একটু পরেই দরজার চটের পর্দা তুলে কে বেরিয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারে। সেইসময় একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে নাকে। আর তক্ষুনি ওর মনে পড়ে, এই গন্ধটা সিতারা বেগমের কাছে টের পেয়েছিল কিছুক্ষণ আগে। তাই শেষ অব্দি সায়ন্তন বেরিয়ে গিয়ে সিতারার ঘরের দরজায় উঁকি দিচ্ছিল।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে, সিতারা সোমনাথের ব্যাগ থেকে কিছু চুরি করতে এসেছিল! কী জিনিস?

আমি তার একটুকরো দরজার কাছে পেয়েছিলুম–আপনাকে সেটা দিয়েছিও।

সেই ইতিহাস লেখা কাগজটা!

তার মানে সিতারা জানত সোমনাথ আসলে কি এবং কেন এসেছে।

কিন্তু ওসব কাগজপত্র চুরি করল কেন সিতারা?

হয়তো কোন কবরে গুপ্তধন আছে–তার হদিস এতেই লেখা ছিল।

তোমার অনুমানে যুক্তি আছে।…বলে কর্নেল কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর ফের বললেন, সোমনাথ শ্রীলেখা আর স্মিতাকে নগ্ন হয়ে সেক্সয়াল দৃশ্যে অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিল। এর কারণ কী থাকতে পারে?

খুব সোজা। আসলে এসেছে তো গুপ্তধন হাতাতে। কেউ কিছু টের পাবার। আগেই খুব ভোরে পালানো দরকার। ছবি না তুলে চলে গেলে আমাদের পাছে কিছু সন্দেহ হয়–আর সন্দেহ তো ছিলই আমার প্রতি, সোমনাথ ওই প্রস্তাবটা একটা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করবে ভেবেছিল। কারণ, কোন ভদ্র শিক্ষিতা মেয়েই ওই উদ্ভট প্রস্তাবে সম্মত হতে পারে না।

কর্নেল ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, কিন্তু সেই বাঁদরটা কী হল?

শান্ত একটু হাসল।…বলছি। তার আগে একটা ব্যাপার ভাবার আছে, কর্নেল। সোমনাথের মাথায় ইয়াকুব বা সিতারাকে খুন করার প্ল্যান কিন্তু আগে ছিল না। আমার ধারণা, ওটা আকস্মিক ঘটনা। সোমনাথ ভাবেইনি যে পরিস্থিতি অমন হবে।

সোমনাথ নিজের হাতে খুন করেনি–এটা ঠিকই। প্রথমে মর্গের রিপোর্ট বিশ্বাস করিনি। কিন্তু এখন করি। তোমাকে পরে বলবখন। সে নিজেও ভাবেনি যে ওরা ভয় পেয়ে প্রাণে মারা যাবে।

শান্ত চমকে উঠে বলল, ভয়!

হ্যাঁ ভয়। যুক্তিহীন ভয়–একটা অন্ধ বিভীষিকা! সেই প্রচণ্ডতম হরর বা ত্রাসের প্রতিক্রিয়া কতদূর গড়াতে পারে তোমাদের সোমনাথ ভট্ট অনুমানও করতে পারেনি! সে ভেবেছিল, ভয় পেয়ে ওরা ভূত দেখছে ভেবে তার কাজে ঘাঁটাতে সাহস পাবে না। দৌড়ে নিজের ঘরে পালিয়ে যাবে।

তাতে রিস্ক ছিল, কর্নেল! ভয় পেয়ে চাঁচামেচি করলে আমরা বেরিয়ে আসতুম। তখন সোমনাথের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হত।

শান্ত, যে-মানুষ স্বপ্নের মধ্যে ভয় পায়–তার কী অবস্থা ঘটে নিশ্চয় জানো? তাকে বোবায় ধরে। সে প্রচণ্ড চাচাতে চেষ্টা করে। কিন্তু কণ্ঠস্বর ফোটে না। ইয়াকুব আর সিতারা সে-রাতে যা কিছু করেছে, সব স্বপ্নের মধ্যে অবচেতনার তাগিদে করেছে। দুজনেই অবসেসানের মধ্যে ছিল। এখানে মনস্তত্ত্বের প্রসঙ্গ অপরিহার্য। দীর্ঘকাল অবচেতনায় পোষা কোন ইচ্ছা স্বপ্নের মধ্যে প্রতাঁকে প্রকাশ পেয়ে আত্মচরিতার্থতা সাধন করে।

শান্ত হাসতে হাসতে বলল, আপনি ক্লাসরুমের লেকচার দিচ্ছেন কর্নেল স্যার?

বিষয়টি সেরকমই, শান্ত। একটু পণ্ডিতি ব্যাপার।

 বেশ, বলুন।

ইয়াকুব যেভাবে হোক জানত যে খোঁজা জরজিশ বেন্নার কবরে গুপ্তধন আছে। সুতরাং ধরে নিচ্ছি–সিতারাও জানত। এখন ওই নামের খোঁজা ছিল দুজন। দ্বিতীয় জরজিশ বেন্নার কবরের স্ক্রিপ্টে একটা ঢ্যারা কেটে চিহ্ন দিয়ে রেখেছিল ইয়াকুব এবং সুযোগ খুঁজছিল। যে লোকটা সারাজীবন কবরখানায় কাটাচ্ছে, বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে তার জ্ঞান স্বভাবত নগণ্য। যে কোন সময় সে ওই কবর খুঁড়ে গুপ্তধন চুরি করে পালিয়ে যেতে পারত। কিন্তু পারেনি তার কারণ–গুপ্তধন নিয়ে কীভাবে সামলাবে, জানত না। তাই সে সুযোগ খুঁজছিল। আমার ধারণা, তখন তার স্ত্রী তাকে একটা মতলব দেয়। মতলবটা হল, তার হেকিমদাদার শরণাপন্ন হওয়া। এই হেকিম ভদ্রলোক সম্ভবত উপযুক্ত পার্টি হিসেবে তোমাদের ভট্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যোগাযোগ করে–কিন্তু নিশ্চয় তাকে সবকিছু খুলে ঠিক-ঠিকানার হদিস দেয়নি। এতে জাল সোমনাথের লোভ বেড়ে যায় এবং সে ঠিক করে যে ওদের ফাঁকি দিয়েই সে একা গুপ্তধন আত্মসাৎ করবে। ডঃ দীননাথ হোড় সেজে নবাবী মহাফেজখানার দলিল হাতানোর কারণ কিন্তু এটাই।

কর্নেলকে চুপ করতে দেখে শান্ত বলল, তারপর?

হেকিমসায়েব তার ভগ্নীপতি ইয়াকুব বা বোন সিতারাকে শুধু বলে থাকবে যে পার্টি ঠিক হয়েছে কিন্তু কে সেই পার্টি বা কখন আসবে তা বলেনি। কারণ, তখনও কোন চূড়ান্ত ফয়সালা নিশ্চয় হয়নি। এদিকে ডঃ হোড় সেজে খোঁজাদের দলিল চুরি করার পর চোরমশায় পড়ে গেছে ধাঁধায়। কোন্ কবরে গুপ্তধন আছে, হেকিম তা বলেনি তাকে। দলিলপত্রে সে আভাস পেল যে খোঁজা জরজিশ বেন্নার কবরেই গুপ্তধন থাকা সম্ভব। কিন্তু জরজিশ বেন্না যে দুজন! তখন অগত্যা সে ফের হেকিমের কাছে গেল–ভাবল হেকিমকে বেশি পাওনার লোভ দেখালে যেভাবে হোক প্রকৃত কবরটা চিনিয়ে দেবে। কিন্তু হেকিম বেচারাও জানত না কোষ্টা সেই আসল কবর। লোভে হেকিম তখন ভগ্নীপতি আর বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেও ওদের সঙ্গে চালাকি করতে চেয়েছিল। লোভ তখন তাকে পুরো গ্রাস করেছে। গুপ্তধনের মোটা অংশ তাকে জাল সোমনাথ ওরফে জাল দীননাথ হোড় দিতে চেয়েছে।…শান্ত, আমার অনুমান, হেকিম ওদের বোকার মতো বলে ফেলেছিল যে পার্টি খোঁজাদের দলিল হাতিয়ে জানতে পেরেছে দুটো কবরের মধ্যে যে-কোন একটায় গুপ্তধন আছে–কাজেই ওরা যদি এক্ষুনি আসল কবরটা না চিনিয়ে দেয়, বিপদ হতে পারে। সিতারাকে বুদ্ধিমতী বলেই আমার ধারণা। সে দাদার উদ্দেশ্য টের পেয়ে গিয়েছিল। বলাই বাহুল্য, এর ফলে ওদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়ে থাকবে। হেকিম, রেগে বাড়ি ফিরে যায়। যে রিকশায় হেকিম এসেছিল এবং ফিরে গিয়েছিল–সেই রিকশাওয়ালার কাছে আমি যা বিবরণ পেয়েছি, তার যুক্তিতেই এ প্রকল্প আমি সাজিয়েছি, শান্ত। রিকশাওয়ালা বলেছে, আসবার সময় হেকিমসায়েবকে খুব চঞ্চল দেখাচ্ছিল–ফেরার সময় সে রাগে টগবগ করে ফুটছিল যেন। ঝগড়াঝাটির আবছা আওয়াজও রিকশাওয়ালা শুনেছিল। যাইহোক, ফিরে গিয়ে সে এক মতলব করে। পার্টিকে মতলবটা জানিয়েও দ্যায়। কী সে মতলব? শান্ত, এটাই এ ঘটনার ভাইটাল অংশ। সেই বিভীষিকার দৈত্যকে সৃষ্টি করা।

খুলে বলুন, কর্নেল।

হেকিম এক রকম সুর্মা তৈরি করতে জানে। তা চোখে লাগালে মানুষের স্নায়ু আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না। চোখে সব অদ্ভুত ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখতে থাকে। সে যেন স্বপ্নের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। পার্টিকে সে এই সুর্মার কথা বলে। ইয়াকুব সিতারা শুতে যাবার আগে সুর্মা ব্যবহার করে। পার্টি কবরখানায় কোন ছলে গিয়ে যদি রাত্রিবাস করতে পারে, তাহলে কোন সুযোগে ওদের সুর্মাদানিটার মধ্যে এই ভয়ঙ্কর সুর্মা ঢেলে রেখে দেবে। ইয়াকুব-সিতারা এই সুর্মা পরার আধঘণ্টার মধ্যে স্বপ্নাচ্ছন্ন বিভীষিকার রাজত্বে পৌঁছে যাবে। কিন্তু এখানে শর্ত আছে। এই সুর্মার ফলে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটে? দৃশ্যমান বস্তুর আয়তন বিদঘুঁটে হয়ে বেড়ে যায়–যার দরুন মানুষ অনেক অসম্ভব ব্যাপার দেখতে পায়। তাই। জাল সোমনাথ আর হেকিম মিলে ঠিক করল যে ওদের ভয় পাইয়ে চুপ করিয়ে রাখতে একটা জীবন্ত বাঁদর খুব কাজ দেবে। বাঁদরটা ওদের চোখে অতিকায় দৈত্যের মতন দেখাবে–যা মানুষের অভিজ্ঞতায় নেই। অর্থাৎ জাল সোমনাথ আর হেকিমের কবর খুঁড়ে গুপ্তধন হাতানোর সময় যদি দৈবাৎ ওরা এসে পড়ে, বাঁদরটা ছেড়ে দেওয়া হবে।

শান্ত বলল, আপনার প্রকল্পটি চমৎকার। ছাদের ঘরে তাহলে আমরা হেকিমকেই সিগারেট খেতে দেখেছিলুম!

হ্যাঁ। তবে সিগারেট নয়–বিড়ি। বলে কর্নেল পকেট থেকে একটা কাগজের মোড়ক বের করে খুললেন। তিনটে আধপোড়া বিড়ি রয়েছে তাতে।…এগুলো সকালে কবরখানার দোতলায় কুড়িয়ে পেয়েছি। তবে বেচারা হেকিম শেষ অব্দি ঘটনার পরিণতিতে বাকসো-টাকসো সোমনাথের কাছে ফেলেই কেটে পড়ে।

তারপর?

তারপর আর কী! কবর হেকিমই খুঁড়ছিল–আর সোমনাথ বাঁদরটা নিয়ে তৈরি ছিল। এদিকে ইয়াকুব প্রথমে সন্ধ্যাবেলায় তোমাদের পার্টিকে কোন সন্দেহই কিন্তু করেনি। করেছিল বুদ্ধিমতী সিতারা। পরে কোন একসময় সে স্বামীকে তার সন্দেহের কথা বলে থাকবে। যার ফলে ইয়াকুবের মাথায় ছিল যে। রাত গম্ভীর হলে সে আগেভাগে গুপ্তধনটা হাতাবে–সিতারা থাকবে পাহারায়। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার খুব স্পষ্ট নয়। ইয়াকুব-সিতারা তাহলে সুর্মা পরল কেন? তোমার কী মনে হয় শান্ত?

কী মুশকিল! প্রতিরাতে শুতে যাবার সময় যেমন সুর্মা পরার অভ্যাস, তেমনি পরেছিল। এখানে কোন গোলমেলে ব্যাপার নেই, কর্নেল। ধরুন, শুতে যাবার সময় আমার জল খাওয়ার অভ্যেস আছে। গভীর রাতে চুরি করতে যাবার মতলব আছে বলে কি আমার জল খেতে এবং লোক দেখানো শুতে যাওয়া মানা?

রাইট, রাইট। কর্নেল মাথা দোলালেন।…এখন সে রাতের ঘটনাটা লক্ষ্য করো। তোমাদের সাক্ষ্যপ্রমাণের হিসেবে জোর দিয়ে বলা যায় রাত দুটোর কাছাকাছি ওরা ভয় পেয়ে মারা যায়। তাহলে তোমার সিদ্ধান্তই ঠিক। ওরা যথারীতি সুর্মা পরে শুতে গিয়েছিল যথাসময়ে। তারপর সুযোগ বুঝে মতলব হাসিল করতে বেরিয়েছিল। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার–তখন তারা দুজনেই সেই সুর্মার গুণে প্রকৃতিস্থ অবস্থায় ছিল না। তবে আগেই বলেছি, অবচেতনায় দীর্ঘকাল ধরে ঢ্যারা চিহ্নিত কবরটার অস্তিত্ব ইয়াকুবের মনে ছিল। তাই স্বপ্নাচ্ছন্ন অবস্থাতেও কবরটার কাছে পৌঁছতে তার ভুল হয়নি। কিন্তু তখনই তার সামনে এসে দাঁড়ায় বাঁদরটা। অতিকায় সেই প্রাণীকে দেখেই সে প্রচণ্ড আতঙ্কে মারা যায়। সিতারা অদূরে পাহারা দিচ্ছিল স্বামীকে। সেও একই দশায় পড়ে যায়। সুর্মার গুণে তাদের দুজনের স্নায়ু দুর্বল ছিল, হার্টের অবস্থাও ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়তে বাধ্য। এই সুর্মা খুব মারাত্মক জিনিস।

কিন্তু কর্নেল, কবরটা খোঁড়া হয়েছে, তার তলায় বাকসোর ছাপ রয়েছে– তার মানে, গুপ্তধন ওই কবরেই ছিল। ইয়াকুব যেটা খুঁড়তে আসছিল, সেটায় নিশ্চয় কিছু নেই তাহলে!

এটা এখনও রহস্য। খোঁজা জরজিশ বেন্না নামে দুজন লোক ছিল। ইয়াকুব অতকাল ধরে, বলতে গেলে বংশপরম্পরায় ওই গোরস্তানের প্রহরী। তার জানায় ভুল হবে বলে মনে হয় না। খোঁজাদের দলিলগুলোও বেহাত। এখন দুটো প্রমাণ দুদিক থেকে পেলে এর মীমাংসা হয়। প্রথমটা অসম্ভব দ্বিতীয় বেন্নার কবর খোঁড়ার অনুমতি ট্রাস্টি বোর্ড কদাচ দেবেন না। দ্বিতীয়টা হচ্ছে–চোর বামাল সমেত ধরা পড়া। তাহলে বোঝা যায় বাকসোটায় সত্যি কী ছিল।

পিছন থেকে মিঃ সত্যজিৎ গুপ্ত বলে উঠলেন–কিচ্ছু না। ওটা ভুয়ো গুপ্তধনের বাকসো কর্নেল। চোর বামালসমেত ধরা পড়েছে কলকাতার একটা হোটেলে। বাকসো ভরতি ঝুটা রঙিন পাথর!

দুজনে ঘুরে বসল। কর্নেল বললেন, আসুন, আসুন মিঃ গুপ্ত। এতক্ষণ আমি শান্তকে আমার প্রকল্পটা শোনাচ্ছিলুম। চোর ধরা পড়েছে? বামালসমেত? ঝুটা মণিমুক্তো? বাঃ বাঃ! কর্নেল হো হো করে হেসে উঠলেন।

মিঃ গুপ্ত বললেন, আপনাকে খুঁজছি কতক্ষণ। পরে শুনলুম এদিকে, এসেছেন। যাক্ গে, চলুন। মিসেস ভদ্র কর্নেলকে এক পেয়ালা কফি না খাওয়াতে পারলে স্বস্তি পাচ্ছেন না।

.

পরদিন সকালে সেই সুর্মার বিশ্লেষণী রিপোর্ট পাওয়া গেল। স্পেশাল মেসেঞ্জার মারফত পাঠানো হয়েছে। ফোরেনসিক বিশেষজ্ঞরা সুর্মাগুলো পরীক্ষা করে তার মধ্যে সাংঘাতিক একটা জিনিস পেয়েছেন তার নাম এলিমেল। একজাতীয় ব্যাঙের ছাতায় প্রচুর এলিমেল পাওয়া যায়। বেশি পরিমাণে রক্তে গেলে হার্ট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এর সবচাইতে ক্রিয়াশীলতা প্রকট হয় চোখের স্নায়ুতে। প্রাচীন আরবীয় চিকিৎসকরা এর ব্যবহার জানতেন। পরিমিত প্রয়োগে অন্ধতা সারাতে এ ওষুধ অব্যর্থ। অপরিমিত প্রয়োগে চোখের স্বাভাবিক কাজকর্ম গুরুতরভাবে বদলে যায়। সেইসঙ্গে মস্তিষ্কে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। পরিণামে হার্ট আক্রান্ত হয়।

রিপোর্ট পড়ার পরে কর্নেল বললেন, মিঃ ভদ্র, শান্ত আমাকে বলেছে– কলকাতা ফেরার সময় জাল সোমনাথের সেই বাঁদরটা আর সে দেখতে পায়নি। আমার ধারণা, বাঁদরটা এখনও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে কোথাও কবরখানার আশেপাশে কিংবা এলাকার মধ্যেই।

একজন কনস্টেবল এগিয়ে এসে বলল, কী আশ্চর্য! গতকাল বিকেলে ডিউটির সময় কবরখানায় যখন ছিলুম, একটা বাঁদরকেই তাহলে দেখেছিলুম পাশের বটগাছটায়! আরে! আমি ওটাকে হনুমান ভেবেছিলুম! এলাকায় হনুমানের উৎপাত প্রচণ্ড।

মিঃ ভদ্র বললেন, তরফদার, গণেশ আর তুমি তাহলে একবার যাও। ডিউটি রেজিস্টার নিয়ে এস। আর শোন, নহবৎখানার ওখানে একটা লোক আছে–লালু নামবাঁদর নিয়ে ম্যাজিক দ্যাখায়। চেনেনা?

হ্যাঁ স্যার।

ওকে সঙ্গে নিয়ে যাও।

যদি না থাকে স্যার? এখন তো ওর বাড়ি থাকার কথা নয়!

অত যদি টদি আমি বুঝিনে। বাঁদরটা চাই–ব্যস!

ওরা চলে গেল। কর্নেল বললেন, হেকিমসায়েবের রাতের খবর কী? বেরোল কিছু?

মিঃ ভদ্র একটা ফাইল এগিয়ে দিলেন। কর্নেল পড়ে দেখে বললেন, শান্ত, আমার প্রকল্পে এতটুকু ভুল নেই। যা যা বলেছি, হেকিমসায়েবের জবানবন্দিতে সব মিলে যাচ্ছে। বাই দা বাই, মিঃ গুপ্ত, খোঁজাদের সেই দলিলটা উদ্ধার করতে পারেননি?

মিঃ গুপ্ত বললেন, আলবৎ পেরেছি স্যার। স্টার হোটেলের ঘরে জাল ডঃ হোড় ওরফে জাল সোমনাথ ভট্ট ওরফে কুখ্যাত স্মাগলার গোপাল অধিকারী। সবে বাকসোটা ভেঙেছে এবং ভেঙেই চক্ষু ছানাবড়া করেছে মণিমুক্তোর জেল্লা দেখে, তখনই পুলিস দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে। ওগুলো বুটো–স্রেফ পাথর, বেচারা এখনও জানে না। ওর ফোলিও ব্যাগে দলিলগুলোও পাওয়া যায়।

কর্নেল বললেন, কিন্তু সিতারা যে কপিগুলো সে-রাতে চুরি করে, তার একটা পাতা আমরা পেয়েছি। বাকিগুলো কী হল?

পাওয়া গেছে। একটা ঝোঁপের মধ্যে পড়ে ছিল। কিন্তু সিতারা ওগুলো চুরি করতে গেল কেন?

কর্নেল বললেন, সে-রাতে অন্তত শুতে যাবার স্বাভাবিক সময় দশটা থেকে। এগারোটার পর সিতারা যা কিছু করেছে, স্বপ্নাচ্ছন্ন অবস্থায় করেছে। অনেকে স্বপ্নের ঘোরে নিজের জিনিস নিজেই চুরি করে। আমি একটা কেস জানি। ভদ্রলোক নিজেই স্বপ্নাচ্ছন্ন অবস্থায় রাতে নিজের জামাকাপড় বাগানে পুঁতে আসতেন। তারপর সকালে হইচই লাগিয়ে চাকরদের মারধর করতেন। এর পিছনে যে সাইকলজি আছে, তা বিচিত্র। তবে আমাদের প্রসঙ্গ হচ্ছে সিতারা। সিতারার অবচেতনে সেই দলিলের ব্যাপারটা ছিল–তাই স্বপ্নাচ্ছন্ন অবস্থায় যুক্তিহীনভাবে সে ওগুলো চুরি করতে গিয়েছিল। এছাড়া আর কোন ব্যাখ্যা হতে পারে না।…বলে কর্নেল মৃদু হেসে চুরুট ধরিয়ে শান্তর উদ্দেশে বললেন, তাহলে শান্ত, এবার চলো তোমার ডিরেকটার মশায়ের সঙ্গে দেখা করা যাক। সওয়া দশটায় ট্রেন। শেয়ালদা পৌঁছব প্রায় সওয়া চারটে নাগাদ। তারপর সোজা লালবাজারে চলে যাব আমরা।… :

.

গোপাল অধিকারীর ধরা পড়ার পেছনে স্মিতার অবদান আছে জেনে কর্নেল যেমন অবাক হলেন, শান্তও তেমনি।

কর্নেল আর শান্ত লালবাজার থেকে সোজা স্মিতার বাড়ি হাজির হলেন। স্মিতা একটু বিব্রত হল। বাসায় অতিথিদের আপ্যায়ন করার মতো যথেষ্ট জায়গা নেই। সেটা টের পেয়ে কর্নেল বললেন, চলো–বরং আমরা কোথাও পার্কে গিয়ে বসি।

তিনজনে কিছুদূর এসে একটা পার্কে নির্জন জায়গা খুঁজে বসল! তখন কর্নেল বললেন, তোমার মুখে গোপাল অধিকারীর ধরা পড়ার ঘটনা শুনতে চাই, স্মিতা। সেজন্যেই এসেছি। তোমাকে ডেকেই পাঠাতুম আমার বাসায়। কিন্তু এত দেরি করার ধৈর্য আর নেই।

তখন বেশ সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আকাশ আজ পরিষ্কার। স্মিতা একটু হেসে বলল, শান্ত আর আমি প্রথমে ঠিক করেছিলুম, জাল সোমনাথবাবুর সেই বাসাটার ওপর নজর রাখব। তারপর…

কর্নেল বললেন, সি দা ফান এগেন! শান্ত আমাকে এটা বলেনি।

শান্ত কিছু বলল না। স্মিতা বলল, শান্তর অনেক ব্যাপার রহস্যময়। এই দেখুন না, দুজনে, বাসাটা ওয়াচ করব ঠিক হল–আমরা হাজির হলুম কথামতো। তারপর আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে আসছি বলে সে উধাও। আমি কী বিশ্রী অবস্থায় পড়ে গেলুম। রাস্তার ধারে অমন করে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়! লোকেই বা কী ভাববে! চলে আসব ভাবছি, হঠাৎ দেখি আমার চেনা একটি মেয়ে সামনের একটা বাড়ি থেকে বেরোল। সে আমাকে দেখেই দৌড়ে এল। তাদের বাসায় নিয়ে গেল। দোতলায় বাসা। ওখান থেকে গোপাল অধিকারীর ঘরের জানলা আর বাড়ির নিচটা স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু বেশিক্ষণ ওখানে থাকিই বা কীভাবে? মাথায় একটা মতলব এল। শিখা ততক্ষণে আমাকে গান গাইবার জন্যে পীড়াপীড়ি করছে। আমি সুযোগটা নিলুম। দুপুর অব্দি একটার পর একটা গান গেয়ে চললুম। ওদের বাড়ির সবাই তখন গানে পাগল হয়ে উঠেছে। সে-বেলা আর আসতেই দিল না। খাওয়া-দাওয়া হল। তারপর ঘুমের ভান করে শিখার বিছানায় গড়িয়ে পড়লুম। কিন্তু সারাক্ষণ চোখ রেখেছিলুম আসল জায়গায়। বেলা তখন তিনটে–আবার গানের আসর বসল। শিখারা খুব গান-পাগলা ফ্যামিলি। এদিকে শান্তর পাত্তা নেই। বুঝুন কাণ্ড!

শান্ত বলল, আমিও তখন এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে তার বাড়ি সারাদিন আড্ডা দিচ্ছি।

অদ্ভুত ছেলে!..স্মিতা বলল।..সন্ধে অব্দি কাটিয়ে চলে আসতে হল। কোন কাজ হল না। কিন্তু শিখাকে বুদ্ধি করে বলে এসেছিলুম, ওই বাসাটার দিকে লক্ষ্য রাখতে। যদি জানলা খোলা দ্যাখে তো আমাকে তক্ষুনি একটা ফোন করে। আমাদের নিচের তলায় ডাক্তারবাবুর ফোন আছে। খুব খাতির আছে ওঁর সঙ্গে। ফোন এলেই খবর পেয়ে যাব। তা পরদিন আর শান্তর পাত্তা নেই। ওর বাসায় গেলুম। শুনলুম, বাইরে গেছে শুটিঙে! বাড়ির লোককে ও কী ঠকায়!

শান্ত একটু হাসল।..আমি কর্নেলের ডাকে মুর্শিদাবাদ গিয়েছিলুম।

পরদিন দুপুরে–মানে গতকাল শিখার ফোন পেলুম। সে ভদ্রলোক এসে গেছেন বাসায়। তক্ষুনি হাজির হলুম। ডিরেকটর মশাই আমাকে দেখে খুব খুশি হবার ভান করল। বলল, মিছিমিছি মুর্শিদাবাদ যাওয়ার পরিশ্রম হল–তোমাদের গোঁয়ার্তুমিতে অমন ছবির থিমটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না!..এরপর যা হল– তা বলতে লজ্জা করছে কর্নেল।

কর্নেল বললেন, তুমি নিশ্চয় ওর সঙ্গে প্রেমিকার অভিনয় করলে!

স্মিতা জবাব দিল–হু।

 নিশ্চয় গোপালচন্দ্র তোমার প্রেমে পড়ে গেল।

হু-উ।

তারপর তোমাকে প্রস্তাব দিল হোটেলে দুজনে একসঙ্গে গিয়ে মৌজ করতে।

দিল।

তখন ওর সঙ্গে স্টার হোটেলে চলে গেলে?

গেলুম।

এবং কোন ছলে বেরিয়ে পুলিসকে ফোন করলে?

স্মিতা মুখ তুলে বলল, আপনি তো সবই জানেন!

কর্নেল একটু হেসে বললেন, সেইজন্যেই শান্তর তোমার সঙ্গে থাকা ভুল হত। শান্ত খুব বুদ্ধিমান ছেলে।

স্মিতা বলল, হ্যাঁ-বুদ্ধির ঢেঁকি! শুধু অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলতে ওস্তাদ!

কর্নেল হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন।…তোমরা বসো। আমি এক্ষুনি আসছি। একটা জরুরী ফোন সেরে আসি–দেখি কোথায় পাই। আমি না ফেরা অব্দি যেও না কিন্তু।

কর্নেল মাঠ পেরিয়ে চলে গেলেন। তার টাক চকচক করতে করতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

তখন শান্ত গম্ভীরভাবে ডাকল, স্মিতা?

বলো।

গোপাল অধিকারীর সঙ্গে লাভ-মেকিং কদ্দুর গড়িয়েছিল?

যাঃ! শুধু অদ্ভুত কথা ছাড়া আর কিছুই নেই।

একটুকু ছোঁওয়া লাগে একটুকু গান শুনি!

স্মিতা ওর পিঠে কিল মেরে বসল।

শান্ত বলল, শালা গোপলা ফাঁসিতে মরলে অক্ষয় স্বর্গ পাবে, স্মিতা।

 আর তুমি কী পাবে?

হয়তো নরক।

আবার অদ্ভুত কথা!

 হু, এখনই যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেছে, স্মিতা।

তাহলে আমি তোমাকে ছুঁই!…স্মিতা ওর ঘাড়ে হাত রাখল।

 হু, বড় আরাম লাগছে। ঘুম পাচ্ছে।

শুয়ে পড়ো না!

তোমার পায়ে মাথা রাখতে দেবে?

বোকা, বোকা! এক্কেবারে হাবাকান্ত! মেয়েদের পায়ে মাথা রাখতে চায় ভ্যাট!

মানে ইয়ে, ঠিক পায়ে নয় ঊরুদেশে।

না, না! কর্নেল এসে পড়বেন।

 ও বুড়োকে তুমি চেনো না। ও আর ফিরছে না।

 তাহলে–ঠিক আছে! আঃ, এত চাপে না! তোমার মাথার ওজন কত টন? শান্ত অস্ফুট কণ্ঠে বলল, হে আলমপানা! তার চেয়ে আমার কবরে দিতে যদি সুন্দরীদের একটুকরো হাড়, আমি অনন্ত সুখে ঘুমোতে পারতুম।