৪. ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা

রিসিভার রেখে ফাগুলালকে বললুম, শিগগির আমার ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করো ফাগুলাল। বেরুব। ওসি সায়েব আসার আগেই আমি বেরুতে চাই। উনি এলে বলবে, খেয়ালি মানুষ। নীল সারস বাইনোকুলারে দেখেই পাগলের মতো বেরিয়ে গেছেন। উনি ফিরলে থানায় যেতে বলব।

ফাগুলাল অবাক হয়ে শুনছিল। সে কিচেনের দিকে চলে গেল। আমি দোতলায় আমার ঘরের দিকে চললুম। বারান্দা দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ করলুম, পূর্বের ফুলবাগান এবং মন্দিরের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে মিসেস সুষমা রায়চৌধুরি তাঁর বউমার সঙ্গে চাপা গলায় কিছু আলোচনা করছেন। মন্দিরের বাঁদিকে খিড়কির দরজা। দরজার বাইরে একটা পুকুর আছে। আমাকে শিগগির ওই পথে নীল সারস দম্পতির অছিলায় বেরুতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে আমার উদ্দেশ্য ছিল ভাঁজকরা ভিজে কাগজটা যত শিগগির সম্ভব রোদে শুকিয়ে নিয়ে পাঠোদ্ধার। আকাশে শরৎকালের খণ্ডমেঘ মাঝে মাঝে রোদ আড়াল করছিল। একটা করে ভাজ শুকিয়ে খুলতে কয়েকঘণ্টা সময় লাগতে পারে। আমার তর সইছিল না। ওসি মিঃ সিংহ যে আমাকে তোয়াজের প্রলেপে ঢাকতে এবং নিজের কৃতিত্বের তালিকা শোনাতে আসছেন, এ বিষয়ে আমি নিঃসংশয়। এ আর শর্মা আমার বিশেষ পরিচিত এবং স্নেহভাজন। কাজেই তিনি আমার সম্পর্কে রং চড়িয়ে মিঃ সিংহকে আমার মর্যাদা রক্ষার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এটা তার পক্ষে স্বাভাবিক। এই অবস্থায় শ্যামসুন্দর সিংহের বাগাড়ম্বর শুনে অমূল্য সময় নষ্ট করার মানে হয় না।

কুড়ি মিনিটের মধ্যে খাওয়া সেরে এবং যথারীতি কফি পান করে সেজেগুজে নিচে গেলুম। ততক্ষণে শাশুড়ি-বউমা মন্দির থেকে ফিরে এসেছেন। ফাগুলাল আমাকে খিড়কির দরজা খুলে দিয়ে বলল, আপনার জুতোয় খুব শব্দ হচ্ছে। জুতো শুকোয়নি স্যার।

বললুম, ওই পুবের পাহাড়টার কী নাম যেন?

চণ্ডীপাহাড়।

ওখানে শুকিয়ে নেব। ওসি সায়েবকে বলবে আমি চণ্ডীপাহাড়ের দিকে পাগলের মতো ছুটে গেছি। তুমি বুদ্ধিমান ফাগুলাল আমার পাগলামির কথা হাসিমুখে যা ইচ্ছা শুনিয়ে দেবে।

ফাগুলাল হাসার চেষ্টা করল। কিন্তু ওর গাম্ভীর্য কাল বিকাল থেকে একটুও চিড় খাচ্ছে না কেন? মালির খন্তা সম্পর্কে ওর সন্দেহ যা নির্দেশ করছে, তা সত্য না হলেই খুশি হব। তবে এ-ও ঠিক, কালীপদর ভুললামনের কিছু মজার কাহিনী আমাকে সুষমা দেবী শুনিয়েছেন।

পুকুড়পাড়ে আম-লিচুর বাগান। কয়েকটা তেজি এবং জমকালো চেহারার সফেদাগাছও দেখলুম। একপাড়ে সবজিখেত। আগাছার জঙ্গলও কম নেই। ওর ওধারে রুক্ষ মাটির পর চণ্ডীপাহাড় খাড়া পাঁচিলের মতো উঠে চুড়ার দিকে ঢালু হয়েছে। আমি পাহাড়ের কাছাকাছি গিয়ে একটা পাথরের আড়ালে বসলুম। জুতোর ভিতরটা ভিজে থাকায় অন্য একজোড়া মোজা পরেছিলুম, তাও ভিজে গেছে। জুতো-মোজা খুলে রোদে শুকোতে দিলুম। তারপর বুকপকেট থেকে সেই ভাঁজকরা কাগজটা একটা পাথরের উপর রাখলুম। রোদ এখন উজ্জ্বল এবং তীব্র।

কিছুক্ষণ বসে থাকার পর রোদের উত্তাপ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য একটু তফাতে একটা পলাশ গাছের ছায়ায় গিয়ে বসলুম। তারপর বাইনোকুলারে পশ্চিমে বাঙালিটোলা খুঁটিয়ে দেখতে লাগলুম। গাছপালার ফাঁকে পুরোনো আমলের বাড়িগুলি দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু বিস্ময়করভাবে জনহীন। বাইনোকুলার রেখে চুরুট টানতে মন দিলুম।

মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে কাগজটা দেখছিলুম। খালি পায়ে হাঁটা–বিশেষ করে কঠিন ও কঁকুরে মাটিতে কষ্টদায়ক। সামরিক জীবনের কথা মনে পড়ছিল। এমন মাটিতে খালি পায়ে হাঁটা এবং দৌড়ানো তখন আমার পক্ষে চ্যালেঞ্জ হিসাবে খুবই সুখপ্রদ ছিল।

প্রায় একঘণ্টা পরে জুতো-মোজা শুকিয়ে গেল। চিঠির প্রথম ভাঁজ, তারপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ভাঁজ খুলতে অসুবিধা হল না। চতুর্থ ভাঁজ খুললেই পুরোটা খোলা যাবে। কিন্তু লেখাগুলো ধেবড়ে গেছে। পাঠোদ্ধার হয়তো খুব কঠিন। হবে।

আরও আধঘণ্টা বাইনোকুলারে চারদিক খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে কেটে গেল। উঠে গিয়ে চতুর্থ ভাজটা সাবধানে খুলে ফেললুম। খোলা জায়গায় বাতাস বইছে উত্তাল। ভাঁজগুলো ছিঁড়ে কোনোক্রমে আটকে আছে। ডটপেনের লেখা বাংলা হরফগুলো হিজিবিজি নকশার মতো দেখাচ্ছে। চিঠিটা বাতাসে টুকরো করে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে ভেবে পেটের কাছে রেখে আতসকাঁচ বের করলুম। কিন্তু পাঠোদ্ধার সত্যি কঠিন। আতসকাঁচ আর বাইনোকুলার চিঠিটার উপর চাপিয়ে রেখে কিটব্যাগে হাত ভরলুম। আমি এই ব্যাগটাকে কিটব্যাগ বলি বটে, কিন্তু এর মধ্যে সূঁচ-সুতো থেকে সব দরকারি জিনিস ঠাসা থাকে। আমার প্যাডটা বের করার পর আঠার টিউব বের করলুম। প্যাডের একটা পাতা ছিঁড়ে আঠা মাখিয়ে চিঠিটা সাবধানে সেঁটে দিলুম। এবার নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।

কয়েক মিনিটের মধ্যে আঠা শুকিয়ে চিঠির চারটে টুকরো সেঁটে গেল প্যাডের কাগজে। আবার আতসকাঁচের সাহায্য নিলুম। কিন্তু গেরুয়া ছোপে কালির রং ফিকে হয়ে মিশে গিয়ে চিঠিটা যেন সিন্ধুসভ্যতার লিপি হয়ে উঠেছে। আমি লাইন মেলানোর চেষ্টা ছেড়ে এলোমেলোভাবে হরফ উদ্ধারের চেষ্টা করতে থাকলুম। অনেক চেষ্টার পর একটা হরফ চেনা গেল। সেটা ইংরেজি ক্যাপিটাল লেটার বি। এই হরফটার ছাপ উপর এবং নিচের লাইনে ছাপ ফেলেছে। এ থেকে কি Bengal Club ধরে নেওয়া ঠিক হবে?

চিঠির কাগজটার আয়তন পাঁচ ইঞ্চি বাই ছইঞ্চি। তার মানে একটা স্লিপ। এই আয়তনের প্যাড সর্বত্র পাওয়া যায়। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা এগুলো ব্যবহাব করেন ফর্দ লেখার জন্য। সম্বোধনের শব্দটা কি জয়া? মনে হল জয়াই হবে। কিন্তু মনে হলে তো চলবে না।

আরও একটা চুরুট পুড়ে শেষ হয়ে গেল। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে গেল। কিন্তু মাথায় জেদ চেপেছে। আমার সেই ইনটুইশন বলছে, জয়া কারও চিঠি পেয়ে বেঙ্গল ক্লাবে গিয়েছিল। অথচ চিঠিতে শুধু ইংরেজি বি হরফ থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো কি ঠিক হবে?

সেই মুহূর্তে হঠাৎ মাথায় প্রশ্নটা এসে গেল। চাবির গোছা যদি সত্যি বেঙ্গল ক্লাবের হয়, তাহলে তো চিঠিটা ঠিকই আমি পড়তে পারছি। কেউ জয়াকে কোনো কারণ দেখিয়ে বেঙ্গল ক্লাবে ডেকেছিল।

চাবির গোছার সঙ্গে চিঠিটাকে মিলিয়ে নেওয়া যায়, যদি সত্যিই চাবিগুলো বেঙ্গল ক্লাবের হয়। চিঠিটা খুনি জীবিত বা মৃত জয়ার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে নিজের শার্টের পকেটে রেখেছিল। ছিঁড়ে ফেলতে ভুলে গিয়েছিল।

প্যাডের কাগজে আঁটা শুকনো চিঠিটা ভাঁজ করে বুকপকেটে ঢুকিয়ে উঠে দাঁড়ালুম। ঘড়ি দেখলুম, সাড়ে বারোটা বেজে গেছে। নাক বরাবর পশ্চিমে বাঙালিটোলার দিকে হেঁটে চললুম। মাঝেমাঝে বাইনোকুলারে দেখে নিচ্ছিলুম কেউ কোথাও আমাকে লক্ষ করছে কি না।

বেঙ্গল ক্লাবে পাঁচবছর আগে এক সন্ধ্যায় অরিন্দম রায়চৌধুরি আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাঙালিটোলার মাঝামাঝি একটা একতলা বাড়ি। পিছন দিকে ব্যায়ামাগার দেখেছিলুম। ব্যায়ামাগারের উত্তরে একটা ঘরে থিয়েটারের স্টেজ এবং গোটানো দৃশ্যপট ছিল। পিছন দিক থেকে দেখলে এল প্যাটার্ন পাড়ি। পাশাপাশি দুটো পশ্চিমমুখী ঘর। পিছনে বারান্দা ছিল। একটা ঘর লাইব্রেরি। অন্য ঘরে মেঝেয় কার্পেট পেতে অনুষ্ঠান হত। ওই ঘরটা বেশ বড়ো।

একটু পরে মনে পড়ল, বাঙালিটোলার সামনে পিচরাস্তা থেকে একটা গলিপথে হেঁটে গিয়েছিলুম। দুধারে বাড়ির উঁচু পাঁচিল। তারপর একটুকরো খোলা জমির সামনে বেঙ্গল ক্লাব। ওই খোলা জমিতে থিয়েটারের স্টেজ গড়া হত।

একটা আমবাগানের ভিতরে ঢুকে মনে পড়ল, বেঙ্গল ক্লাব-এর উত্তরে এবং গলিপথটা বেরিয়ে এসে চলে গেছে পূর্বের মাঠের শেষে একটা আদিবাসী বস্তিতে। কিন্তু সেই সংকীর্ণ মেঠো রাস্তায় কেউ এদিকে আসছে না।

গলিপথে গিয়ে বেঙ্গল ক্লাবের পিছনে ব্যায়ামাগারে ঢুকলুম। জায়গাটায় ঘাস আর আগাছার মধ্যে মুগুর, ডাম্বেল, বার এইসব জিনিস অবহেলায় পড়ে আছে। পশ্চিমের ঘরদুটো ভিতর থেকে আটকানো আছে। ব্যায়ামাগারের উত্তরে ঘরটার বারান্দার একপাশে ভাঙা চেয়ারের স্তূপ। তার তলায় অনেকগুলো লম্বা ও বেঁটে বাঁশ। বাঁশগুলোতে আলকাতরা মাখানো হয়েছিল। জায়গায়-জায়গায়। কালো রং উঠে গেছে। নারকেল ছোবড়ার দড়ি কুণ্ডলী পাকিয়ে পড়ে আছে ভাঙা চেয়ারের স্থূপে।

ব্যায়ামাগারের উত্তরের ঘরটা তালাবন্ধ। দরজার সামনেটা কঁকা। বারান্দার ডানদিকে ছেঁড়া তেরপলের তলায় আরও অনেকগুলো বেঁটে বাঁশ কাত হয়ে পড়ে আছে। কিছু না ভেবেই আমি তেরপলের একটা কোণ ধরে টেনে সরিয়ে। দিলুম। এমন জায়গায় বিষধর সাপ লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই জুতোর ডগা দিয়ে বাঁশগুলোকে নাড়িয়ে দিলুম। কিন্তু কোনো সাপই ফণা তুলে ফোঁস করল না।

বাঁশগুলো আলকাতরা মাখানো। কিন্তু কালো রং ফিকে হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও রং মুছে গিয়ে ঘূণ ধরেছে। ফুট ছয়েক লম্বা এই মোটা বাঁশগুলো সম্ভবত স্টেজের পাটাতন তৈরির কাজে ব্যবহার করা হত। তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেয়াল ঘেঁষে রাখা দুটো মোটা বাঁশের একটু বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ল। জায়গায় জায়গায় রাঙামাটি মেখে আছে। মাথার ভিতরে যেন বিদ্যুৎ ঝিলিক দিল।

বাঁশদুটো দুহাতে তুলতেই তলায় কয়েক গোছা নারকেল ছোবড়ার দড়ি দেখতে পেলুম। দড়িগুলো ভেজা এবং কাদার ছোপ লেগে আছে।

অমনি মনে পড়ে গেল ডমরুপাহাড়ের নিচে শালবনের মধ্যে দুটো লম্বা দাগের কথা। একটু ভুল করে ফেলেছি। দরজার সামনে বারান্দার ভোলা অংশটুকু লক্ষ করিনি। আমার জুতোর ছাপে পুরোটা ঢাকা পড়েছে। এবার প্যান্টের পকেট থেকে খুনির প্যান্টের পকেটে পাওয়া চাবির গোছা বের করলুম। তারপর দেখে এলুম গলিপথে কেউ আসছে কি না। তারপর আন্দাজ করে একটা চাবি ঢোকাতেই তালাটা খুলে গেল। দরজা খোলার পর টর্চ জ্বেলে কয়েকমুহূর্তে কিছু বুঝতে পারলুম না, আলো কীসের উপর পড়েছে। ডানদিকে একটা ছোটো স্যুইচ বোর্ড দেখামাত্র টিপলুম। আলো জ্বলে উঠল। থিয়েটারের স্টেজের তিনটে অংশ, আর কয়েকটা উইংস দেয়াল ঘেঁষে রাখা আছে। মেঝেয় সিন বা ড্রপসিন কেউ যেন বিছিয়ে রেখেছে। দরজা ভিতর থেকে ভিজিয়ে দিয়ে সিন, ড্রপসিন, তারপর কালো জীর্ণ স্ক্রিন তুলেই স্থির হয়ে দাঁড়ালুম।

মেঝেতে চাপ-চাপ জমাট রক্ত। স্ক্রিনেও রক্ত মেখে গেছে। আততায়ী নিশ্চিত ছিল, এই ঘর কেউ আর খুলবে না।

আলো নিভিয়ে দরজা একটু ফাঁক করে দেখে নিলুম গলিরাস্তা দিয়ে কিংবা উলটোদিক থেকে কেউ আসছে কি না। নিঃশব্দে বেরিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে তালা এঁটে চলে এলুম।

গলিরাস্তায় এসে বাইনোকুলারে পাখি দেখার ভান করতে করতে পিচরাস্তায় পৌঁছেলুম। রাস্তার ধারে ঘাসজমিতে একটা আদিবাসী ছেলে কয়েকটা গোরু চরাচ্ছিল। সে অবাক হয়ে আমাকে দেখতে থাকল। নিজেকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলুম। একটা কাজের মতো কাজ করতে পেরেছি বলে নয়, চিঠিতে লেখা ইংরেজি বি হরফ এবং চাবির গোছা আমাকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে দিয়েছে। বলে।

দুটো বাঁশে জয়ার মৃতদেহ লম্বালম্বি বেঁধে গলিরাস্তা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গিয়েছিল খুনি। রাতের বৃষ্টি দুটো বাঁশের রেখা ধুয়ে ফেলেছে। এখানেই পাহাড়ে ওঠার চড়াইরাস্তা শুরু হয়েছে। খুনি কষ্টসাধ্য কাজ না করে বাঁদিকে শালবনে ঢুকেছে। তারপর মৃতদেহ বয়ে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের নিচে বিশ্রাম নিয়েছে। তারপর দুই পা ধরে টানতে টানতে চূড়ায় উঠেছে। তার গায়ের জোর আছে।

তার একটা খন্তা বা কোদাল দরকার ছিল। কিন্তু খন্তাসহ মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সে কি আগেই মৃতদেহ পুঁতে ফেলার জায়গা ঠিক করে গর্ত খুঁড়ে রেখে এসেছিল?

আমার অঙ্ককষা হল না। ফাগুলালকে আসতে দেখলুম। সে সেলাম ঠুকে বলল, ওসিসায়েব এসে খাপ্পা হয়ে গেছেন।

বললুম, তুমি কোথায় যাচ্ছ?

বাচ্চুবাবু ফোন করেছিলেন। কবরেজমশাইয়ের মেয়েকে শ্মশানে নিয়ে গেছে। বাচ্চুবাবুর যাওয়া হবে না। একটা কাজে আটকে পড়েছেন। আমাদের বাড়ির পক্ষ থেকে শ্মশানে একজনের থাকা দরকার। সায়েব থাকলে তিনিই যেতেন। মেমসায়েব আমাকে যেতে বললেন। তাই যাচ্ছি।

হ্যাঁ। যাও।

আপনি–বলে ফাগুলাল থেমে গেল। তারপর বলল, না, আপনি অতদূর কষ্ট করে কেন যাবেন? আপনার খাওয়ার টাইম হয়ে গেছে।

বলে সে চলে গেল। আমি সত্যিই তো, আমি গিয়ে কী করব? তাছাড়া আমার সামনে এখন বড়ো কাজ। একটু চিন্তাভাবনাও করা দরকার।…

দোতলার বারান্দায় মিসেস সুষমা রায়চৌধুরি আমাকে একটু বকে দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, কী আশ্চর্য মানুষ আপনি। এই রোদ মাথায় করে চণ্ডীপাহাড়ে না উঠলেই চলত না? নীল সারসের পাল্লায় পড়ে আপনার সত্যি মাথার ঠিক নেই। আপনি চণ্ডীপাহাড়ে গেছেন শুনেই আমি মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে। এলুম। সিজন চেঞ্জের সময় এখন। তাছাড়া এই পাহাড়টার দুর্নাম আছে।

একটু হেসে বললুম, আপনার মতো শুভাকাঙ্ক্ষী থাকতে আমার কোনো অমঙ্গল হবে না।

ইস! আপনার সায়েবি রং পুড়ে কী হয়েছে আয়নায় দেখুন গে!

কলকাতা ফিরলেই সায়েবি রং ফিরে পাব মিসেস রায়চৌধুরি।

সুষমা রায়চৌধুরি আমার পাশে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চাপাস্বরে বললেন, আমার কেন যেন বড্ড ভয় হচ্ছে, কবরেজ বাচ্চুকে না ফাসায়।

বাচ্চুকে? কেন?

বাচ্চু জয়াকে বেঙ্গল ক্লাব আর লাইব্রেরি দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিল। তা ছাড়া

উনি থেমে গেলে বললুম, তা ছাড়া?

বাচ্চুর সঙ্গে জয়ার একসময় একটু ইমোশনাল সম্পর্ক হয়েছিল। শিগগিরি বাচ্চুর বিয়ে দিয়েছিলুম। পরে বাচ্চু অবশ্য ওর প্রতি সিমপ্যাথিবশত সাহায্য করতে চেয়েছে। কিন্তু জয়া বাচ্চুকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। অন্তরা আমাকে একটু আভাস দিয়েছিল।

তালা খুলে ঘরে ঢুকে বললুম, আচ্ছা মিসেস রায়চৌধুরি, জয়াকে কারও খুন করার কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

সুষমা চাপাস্বরে বললেন, কেন? কোনো চেনা লোক তাকে রেপ করে খুন করেছে।…

.