ভাস্কর্যই বলা যায় এর্নেস্ত ক্রিস্তফ-গড়া প্রায়,
পার্কের কিনারে প’ড়ে আছে,
কয়েকটি দ্রোণ কাক দূরবর্তী গাছে
স্তব্ধতাকে ভীষণ কর্কশ ঠোকরায়।
ভাস্কর্যের পাশে
খুচরো ওয়সা কিছু, দরগার খইয়ের মতন
ছড়ানো ছিটোনো; লোক আসে
যায় প্রথামতো, কেউ কেউ কিছুক্ষণ
দাঁড়িয়ে সেখানে সিগারেট
ফোঁকে, ধোঁয়া ওড়ে; অনেকেই দূর থেকে দৃষ্টি দিয়ে
ছুঁয়ে চ’লে যায় ছিমছাম, কারো মুঠো ভেট
ছুঁড়ে দ্যায় ছেঁড়া কাঁথাটায়। যেন দিয়েছে নিবিয়ে
দিনের সুসভ্য আলো কেউ লহমায়
মনে হয়, যখন আমিও সে-ভাস্কর্যে খুঁজে পাই
নারীর আভাস; বুকে কী যেন লাফায়
অচিন পাখির মতো, তাড়াতাড়ি ভিড়ে মিশে যাই।
সে, ভাস্কর্য, গ্রাম ছেড়ে খুঁজেছে আশ্রয় এ-শহরে।
বন-দোয়েলের শিসে সে কি অকস্মাৎ
এখনো চমকে ওঠে? বেওয়ারিশ রাতের প্রহরে
নক্ষত্রের আকর্ষণ বোধ করে? হাত
তার অন্য কারো হাত স্পর্শ করবার
বিনম্র লাজুক কাতরতা
করে কি কখনো অনুভব? চোখ শিউলি ফোটার
অপেক্ষা থাকে? কোনো কথা
এখনো আছে কি বাকি কাউকে বলার? অতিশয়
নিশ্চুপ সে, নাক মুখ বরাবর
মাছি ভন্ভন্ করলেও তাড়াবার তাড়া নেই, লোকলাজ কিংবা ভয়
কিচ্ছু নেই, আজ খোলা পথই তার একমাত্র ঘর।
পার্কের কিনারে প্রায় ক্রিস্তফের গড়া ভাস্কর্যের প্রদর্শনী
দেখে ফুর্তিবাজ আড্ডা দিই, কফি খাই,
ফ্ল্যাটে ফিরি রাত ক’রে, খানিক সময় ব্যালকনি
থেকে তারা গুনি, কবিতার কিছু অক্ষর সাজাই
মনে মনে । হঠাৎ অক্ষরগুলো, কুলোপানা চক্করের সাপের ধরনে
ফু’সে ওঠে, ভীষণ গর্জন
করে আফ্রিকার অরণ্যের সিংহের মতন; বারবার মনে
দেয় হানা সে-ভাস্কর্য, রুক্ষ ফুটপাতে প’ড়ে-থাকা আসিরন।।