কী এক অস্বস্তি আর অস্থিরতা
কাল সারারাত ঘুমোতে দেয় নি আমাকে। অনেকক্ষণ
বই নিয়ে বসে থাকলাম, বুটিদার আকাশ
দেখলাম, ভাবনার নানা পাকদণ্ডীতে
ঘুরতে ঘুরতে কখন যে ভোর রঙরেজের মতো
আমার ঘরে লাগালো পোঁচড়া, খেয়াল ছিল না।
হাতের কাছেই ধোঁয়া-ওগরানো চায়ের পেয়ালা,
কবিতার বইয়ের অক্ষরগুলো
নানা ধরনের মঞ্জরী, আজ রাস্তায় না মোটর কারের
হর্ণ, না রিকশার টুংটাং আওয়াজ, না ফেরিঅলার ডাক।
কল্পনার বীজতলা থেকে কিছু কণা নিয়ে নাড়াচাড়া করি
ডায়েরির পাতায়
রোপণ করার জন্যে। নোনাধরা অসংস্কৃত দেয়ালে
কখনো কখনো যে গুলিবিদ্ধ মানচিত্র দেখি, তা ফুঁড়ে যেন
বেরিয়ে আসতে চায় বলিভিয়ার জঙ্গল
আর চে গুয়েভেরার মুখ।
তৃপ্তিতে টইটম্বুরে
কয়েকটি মুহূর্ত আমার ভেতরে এক
অপরূপ ঐকতান। অনেকক্ষণ ধরে
চৌদিক খুব সান্নাটা; যাকে দেখার জন্যে আমার
ব্যাকুলতা আহত ঈগলের আর্তনাদ,
হয়তো সে এখন চুল এলিয়ে ইন্দ্রজাল-ছাওয়া দ্বীপে
মিরান্ডা নতুন পৃথিবীর দিকে
তার মুখ কী উন্মুখ। আজ আমি বাইরে পা বাড়াবো না।
সুন্দরবনের বাঘের গর্জন ভেসে এল কী করে
পৌরপথে? চমকে উঠে দেখি
হঠাৎ রাস্তায় অকুল সমুদ্র, আকাশ-ছোঁয়া
কল্লোল আমাকে ঘর থেকে টেনে
ছুঁড়ে দিলো সেই সমুদ্রে, আমি তরঙ্গে তরঙ্গে
ভাসমান দুরন্ত সাহসী প্রদীপ,
যে কোনো চোরা টান কিংবা ঘূর্ণির তোয়াক্কা না করে
ক্রমাগত অগ্রসরমান।
যেখান থেকে সরে এসেছি সেখানে ফিরে যাওয়ার পথ
আমি নিজেই রাখি নি।