টেবিলে জমাট মেঘ এক খণ্ড যেন স্বপ্নে বুঁদ,
কিংবা অভিশপ্ত গ্রীক দেবীদের কেউ সারাক্ষণ
মুক্তির প্রহর গুণে গুণে ক্লান্ত, ঘুমে অচেতন,
এক্ষুণি উঠবে জেগে এবং সত্তায় তার হবে
মুঞ্জরিত ক্ষণে ক্ষণে বহুবর্ণ গভীর সংগীত।
টেবিল তরঙ্গ হয় বারে বারে মেঘের প্রভাবে।
যখন বুলাই হাত মেঘখণ্ডে, তোমাকে প্রবল
মনে পড়ে। টেবিলের স্বপ্নিল মেঘের অন্তরালে
আলোড়নকারী কোনো কণ্ঠস্বর আছে জেনে প্রতি
মুহূর্ত অপেক্ষা করি, কখন তোমার অস্তিত্বের
সুর হবে গুঞ্জরিত, কখন এ ঘর পুনরায়
ইডেনের লতাগুল্মে যাবে ছেয়ে, দূর সমুদ্রের
সফেন উল্লাসে হবে উচ্ছ্বসিত আর ভেনাসের
পদচ্ছাপ উঠবে জেগে রেণুময় নিঝুম মেঝেতে।
টেবিলে জমাট মেঘ বেজে ওঠে স্বপ্নে, জাগরণে।
সর্বদা কম্পিত হাতে তুলে নিই মেঘ, প্রতিবার
প্রতিহত আমি শব্দহীনতায়, জব্দ হই খুব।
তবে কি ওঠেনি বেজে মেঘপুঞ্জ? তবে কি মিথ্যেই
গভীর নিদ্রার হৃদে পড়ে টোল? শিরায় শিরায়
কেন তবে সূর্যোদয় আগণন, কেন ঝাঁক ঝাঁক
গাংচিল সহসা ওড়ে বুকের ভেতরে বারংবার?
আমার নিজস্ব হাড় কেন বেহালার মতো বাজে?
টেবিলের এক খণ্ড মেঘে আছে তন্দ্রিল সিম্ফনি
অলৌকিক, বুঝি তাই সুরস্নাত এ ঘর আমার।
দেখেছি কখনো টেবিলের মেঘপুঞ্জে দ্রাক্ষালতা
ক্রমবর্ধমান আর রূপোলি ঝালর চমকায়
ঘন ঘন, কখনো বা মেঘখণ্ডে মৃতকে আরেক
মৃতজন ভীষণ জড়িয়ে পড়ে থাকে স্তব্ধতায়
যমজ ভায়ের মতো। কখনো আবার সামুদ্রিক
মাছের কংকালে গড়া উদ্যান সেখানে জেগে ওঠে।
ইদানীং ভয়ে ভয়ে থাকি-যদি এই মেঘখণ্ড
মরাল সংগীত গেয়ে শেষে ডুবে যায় স্তব্ধতায়,
যদি অস্তরাগময় হয়, যদি মৃত শশকের
মতো একা পড়ে থাকে এক কোণে, তাহলে কী হবে?