এই যে আমার চতুর্দিকে সারি সারি গ্রন্থ, রাও
বৌদ্ধ শ্রমণের মতো ধ্যানমগ্ন এখন, প্রায়শ
এরকমই থাকে, মাঝে মাঝে
আমার হাতের স্পর্শে কারও ধ্যান ভাঙে। এসব গ্রন্থের
বই আছে, যেন বিত্তবানের ভবনে
দরিদ্র আত্মীয়, বড় প্রচ্ছন্ন, নীরব,
সঙ্কুচিত সর্বক্ষণ। সময় ওদের কালো করে বয়ে যায়।
কিয়দ্দূরে ডালিম গাছের পাতা হাওয়ার
হাতের স্পর্শে পুলকিত হয়, একটি সুনীল পোকা ঘাসের চাদরে
হাঁটে প্রাতঃভ্রমণকারীর মতো আর
টিঙটিঙে ঘাস ফড়িং-এর নাচানাচি
দেখে নিয়ে ঈষৎ কৌতুক বোধ করে কাকাতুয়া। এই গলি
অকস্মাৎ গভীর রাত্তিরের হয়ে যায় রবীন্দ্রনাথের গান,
গালিবের গজল কখনও। ঘুম থেকে জেগে ওঠে দেখি
আমার চাদ্দিকে সারি সারি বই নিস্তব্ধ কবর।
কখনও-কখনও এই সব কবরের সঙ্গ ছেড়ে
ডালিম গাছের পাতা, কাজল দিঘির পদ্ম, বাঁশবন আর
গোধূলি রঙিন সর্ষে ক্ষেত, ঘন মেঘে ঢাকা-পড়া
শালবন আর মাছরাঙাদের কাছে
চলে যেতে বড় সাধ হয়। তাহলে কি
পুস্তক-বিরোধী আমি? রাশি রাশি হরফের সন্ত্রাসে কাতর?
এখনও তো দেশ-বিদেশের নানান কালের কবিতার
অন্তঃপুর থেকে কত ফুলের সৌরভ, সরোবরের ঝলক,
প্রজাপতিদের শোভা, কামিনীর চোখের সুদূর
উপকথা প্রকাশিত হয় নানা স্তরে।