বিপন্ন বিশ্বে নতুন সভ্যতার জন্যে

এমন মনেই হয়, হতে থাকে-দূর থেকে এক যেন আমাকে
ডাকছে ব্যাকুল। কে ডাকবে এই ঘোর অবেলায়
দিগন্ত ঝাঁকিয়ে খুব? একরত্তি শব্দ নেই, তবু
অস্তিত্ব-কাঁপানো কিছু শব্দহীন প্রবল গর্জন
আমাকে ভয়ার্ত করে, ঠেলে দেয় তীক্ষ্ম দাঁত-নখ অধ্যুষিত
অরণ্যের দিকে।

তা হ’লে কী করি, বলো? চোখ, কান বন্ধ করে নিজস্ব বালিশে
মুখ গুঁজে গৃহকোণে থাকব কি পড়ে
হতাশাপীড়িত বিষপান করে মানুষের মতো? অকস্মাৎ
গেস্টাপোর ধরনে আমার দরজায় যদি কেউ
কড়া নাড়ে জোরে কিংবা বাজায় কলিংবেল, তবে
কি করব, কেউ কি আমাকে যে করেই হোক বলে
দেবে ঠারেঠোরো? স্বস্তি শান্তি নেই সেই কবে থেকে
ঘরের ভেতর কাগজের খস্‌ খস্‌ শুনে কারও পায়ের অশুভ শব্দ ভেবে
কেঁপে উঠি
শীতার্ত পাতার মতো। গলা জুড়ে বালির সন্ত্রাস।

ভোরবেলা কারা এসে ঘরে ঢুকে পড়ে; চোখ দু’টি
কচলাতে কচলাতে দেখি,-কয়েকটি রুক্ষ পশু
মানুষের কণ্ঠস্বরে বলে, ‘এক্ষুণি বেরিয়ে যাও
এই ঘর ছেড়ে,
এখানে থাকার অধিকার বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে,
তুমি বনবাদাড়ে আস্তানা খুঁজে নাও।
বিভ্রান্ত, নির্বাক আমি চেয়ে থাকি হাবার ধরনে, ভয়ঙ্কর
ভূমিকম্প ভীষণ দুলিয়ে
এবং ঘুলিয়ে দেয় সবকিছু; তাসের ঘরের
মতো ধসে পড়ে চতুর্দিকে, ‘গীতবিতান’ এবং
গালিবের গজল নিমেষে মুছে যায়
থাবার আক্রোশে, সবখানে অশ্লীল চিৎকার আর
আমি নিজে ডুবে যাচ্ছি অতল বিষ্ঠায়। মনে হয়,
যুগযুগান্তর কাটে অথবা নিশ্চল সবকিছু।

এমন মনেই হয়, হতে থাকে আজকাল। তবু মাঝে মাঝে
একটি কি দু’টি পাখি রেলিঙে নিশ্চিন্ত বসে দোল
খেতে-খেতে আমাকে শুনিয়ে যায় গান। কী আশ্চর্য,
জানি না কোত্থেকে ভেসে আসে বাঁশির অমর্ত্য সুর
অন্তর্লোকে। চতুর্দিকে অনাচার, ভ্রষ্টাচার, হিংসার ফোঁসানি;
হায়, কবে আসবে বিপন্ন বিশ্বে নতুন সভ্যতা?