কোকিলের কঙ্কাল কুড়াই

উড়ে উড়ে বহুদূরে পাখির ডানার সুরে সুরে চলে যাই
কোথায় মেঘের খুব নিরিবিলি অন্দরমহলে-
‘ও ভাই, কে আছো’ বলে ডাকি। মেঘেদের
গহীন ভেতরে ডাক পৌছে যায়, অনুমান করি; তবু কেন
পাই না তিলেক সাড়া কারও। এখানে তো পাখিদের
ঝাঁক নেই, সুরের আনন্দধারা বইবার নেই অবকাশ।

উড়ে উড়ে নিত্য মেঘে থাকা, বাসা বাঁধা অসম্ভব
মনে হয়; বস্তুত অপ্রতিরোধ্য মাটির অহ্বান চিরদিন-
কাজ সেরে বাড়ি ফিরে বাজানো কলিংবেল, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা,
শিশুর অম্লান আলিঙ্গন, জানালার শিক ধরে
গোধূলির রঙ দেখা ভালো লাগে। অকস্মাৎ গলির সুন্দর
কৃষ্ণচূড়া গাছটির নিধন-পর্বের জন্যে, পড়শিনী মহিলার সদ্য
সন্তান-হারানো আর্তনাদ আমাকে বিমর্ষ করে।
তবু ধোঁয়া-ওড়ানো চায়ের পেয়ালায় চুমু দিই, কবিতার
বই খুলে বসি, উড়ে উড়ে বহুদূরে গোধূলি-মেঘের দিকে
চলে যাই, মেঘবালাদের সঙ্গে কেলিপরায়ণ হয়ে উঠি।

ওলো মেঘ, ওরে মেঘ, বল তো এমন
কী পাই তোদের কাছে? তবে কেন এই শেষবেলা
উড়ে উড়ে চলে যাই বারবার তোদের সান্নিধ্যে? বল কেন
এমন কাঙাল আমি মাঝে মাঝে মনে হয়, এই তো শুনছি
তোদের মোহিনী ডাক, ভাবি, এই বুঝি ঢুকে গেলি
আমার ভেতর আর এমন ধারণা হয়, মেঘের রেশম,
গোধূলি-বিচ্ছুরণে অকৃপণ ফ্ল্যাট তৈরি হয়ে যাবে শূন্যলোকে।

এই বয়সেও খুব ঝুঁকে কত কিছু গড়ি, ভাঙার খেলাও
কিছু কম খেলি না বিবাগী ঝোঁকে-ভগ্নাংশের কথা
ভেবে খেদ জাগে না কখনও। মাঝে মাঝে নিরুদ্বেগ,
নিঃস্পৃহ ওড়াই ছাই, কোকিলের কঙ্কাল কুড়াই।
২০.৯.২০০০