পিয়ানো ভূতের গল্প
সেবার আমাদের মিশনারি ইশকুলে একটা মজার ব্যাপার ঘটে গেলো। ফোর থেকে ফাঁইভে উঠেছি। তখনও বইয়ের লিস্ট দেওয়া হয়নি। টিচাররা ক্লাশে ঢুকেই গল্প জুড়ে দিতেন; সারাদিন শুধু রকমারি গল্প আর গল্প। তবে সব টিচারের গল্প শুনতে যে ভালো লাগে, এমন কথা বলছি না। শুভদারঞ্জন স্যার মুখখানা হাঁড়ির মতো গম্ভীর করে কি সব আত্মা আর মুক্তির গল্প শোনাতেন; আমার একেবারে ভালো লাগতো না। হয়তো পলুকে বলেছি–এরচে নিকোলাস স্যার ঢের ভালো গল্প বলেন। অমনি গম্ভীর গলায়–কথা বলে কে? আমরা তখন ভেজা বেড়ালটির মতো চুপ।
টিচারদের মধ্যে গাঙ্গুলী স্যারই শুধু গল্প বলতেন না। গতবারের মতো তিনি ক্লাসে ঢুকে চেয়ার টেনে বসে পা দু’খানা টেবিলে তুলে দিয়ে পরম শান্তিতে ঘুমোতেন। আমরা এতে আরো খুশি। ইচ্ছেমতো হৈ-চৈ করো, কেউ বারণ করবে না।
আমাদের বেশিদিন গাঙ্গলী স্যারের ভাগ্য সইলো না। কদিন পরে দেখি তার বদলে এক ব্রাদার এসেছেন। একেবারে খাঁটি সাহেব হলেও আমি প্রথম দিন ব্রাদার পিটারকে দেখে হাসি চাপতে পারিনি। ফাদার ফিলিপস আমাদের প্রত্যেক রোববারে উপাসনার পর বায়স্কোপ দেখাতেন। সেখানে আমরা মিকি মাউস, ডোনাল্ড ডাক আর লরেল-হার্ডির ছবিই বেশি দেখতাম। বিশ্বাস করো, ব্রাদার পিটারকে দেখে আমার ঠিক বেঁটে-মোটা হার্ডির কথা মনে হয়েছিল। গোল চোখ, ছোট্ট ভোতা নাক, মাথায় কদম ছাঁট, সব মিলিয়ে ব্রাদার পিটারকে হার্ডি ছাড়া আর কিছু ভাবা যেতো না। সে জন্যে কদিন পর থেকে আমরা সবাই তাকে ব্রাদার হার্ডি বলে ডাকতে শুরু করেছিলাম।
ব্রাদার হার্ডি আমাদের শোনালেন পিয়ানো ভূতের গল্প। ব্রাদার হার্ডি দশ বছর আগে আমাদের ইশকুলে প্রথম এসেছিলেন। চার বছর এখানে থেকে তারপর চলে গিয়েছিলেন বোর্নিও দ্বীপে। ছ’বছর সেখানে থেকে বহু ‘অসভ্য ভ্রান্ত মেষ শাবককে’ যীশুর ভক্ত বানিয়ে আবার আমাদের কাছে এসেছেন। একবার নাকি সেখানকার এক বুড়ি তাঁকে কুক্রী দিয়ে কুপিয়ে মারতে এসেছিলো। বুড়িকে ঈশ্বরের ভ্রান্ত শেষ শাবক বলাতে নাকি খুব চটে গিয়েছিলো।
একদিন ক্লাসে কথায় কথায় ব্রাদার হার্ডি বলছিলেন, আইচ্ছা, তোমরা কইতে পারো নাকি, আমাদের ক্রিকেট খেলার মাঠটা একটু নিচা ক্যান?
ব্রাদারদের বাংলা বলার ধরণ ছিলো এমনি। আমরা কেউ বলতে পারলাম না কেন এমন হলো। বলবোই বা কেমন করে। এ নিয়ে যে আগে কখনো মাথাই ঘামাইনি। বললাম, আপনিই বলুন ব্রাদার, কেন মাঠটা নিচু হলো?
আমার কথা শেষ না হতেই বিজু বললো, আসলে হয়তো ভূমিকম্প হয়েছিলো।
ওকে একটা রাম চিমটি কেটে বললাম, তুইতো সবই জানিস আসলে। একটু চুপ থেকে শোন না!
ওর একটা ভারি বদ অভ্যাস–কথায় কথায় ‘আসলে’ বলবে। আর কথার মাঝখানে কথা বলবে। আমার যা রাগ হতো শুনে সে কথা বলার নয়।
ব্রাদার বললেন, ওইখানে আগে একটা পুষ্করণী আছিলো।
মানে পুকুর? আমাদের চোখ আলু হয়ে গেলো। ইশকুলের মাঝখানে পুকুর! এমন কথা আমরা আগে কখনো শুনিনি।
ব্রাদার মাথা দোলালেন–হ, পুকুর। তোমরা তাইলে শোন নাই। ওইখানে মস্তবড় পুষ্করণী আছিলো। এই বলে ব্রাদার বিজুকে বললেন, কওতো পুষ্করণী কই গ্যাছে?
বিজু উঠে তড়বড় করে বললো, আসলে হয়তো চুরি হয়ে গেছে।
ক্লাশের সবাই ওর কথা শুনে হেসে উঠলো। আমি ওকে আরেকটা রাম চিমটি কেটে বললাম, খুব বুঝেছিস, পুকুর কখনো চুরি হয় নাকি রে?
ব্রাদার হার্ডি হাসতে হাসতে বললেন, না চুরি হয় নাই। ওইটা মাটি দিয়া ভরিয়া ফ্যালাইছিলো। এই বলে তিনি গম্ভীর হয়ে গেলেন।
কেন্টু বললো, পুকুর কেন ভরিয়েছিলো ব্রাদার?
ব্রাদার ওর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, ব্রাদার অ্যালিস্টর এই ওই পুষ্করণীতে ডুবিয়া মরিয়াছেন। তারপর ওইটারে মাটি ফালাইয়া বন্ধ করা হইয়াছে।
এরপর ব্রাদার হার্ডি বলেছিলেন, ব্রাদার অ্যালিস্টরের কথা। ভারি বদমেজাজী ছিলেন ব্রাদার অ্যালিস্টর। শুকনো খিটখিটে চেহারা। যখন যাকে কাছে পান তাকেই ধমকে দেন। একদিন তো অনারেবল বিশপকেই কি যেন বলে ফেলেছিলেন। তাই নিয়ে সে এক যাচ্ছেতাই কাণ্ড। শেষটায় মিশনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তবে রক্ষা। অনারেবল বিশপ তাঁর মেজাজের কথা জানতেন বলেই বেশি কিছু করেননি। এমিনতরো হাজার কাণ্ডের নায়ক ছিলেন ব্রাদার অ্যালিস্টর।
সেই নিরস মানুষটির ভারি অদ্ভুত এক শখ ছিলো। সে হলো পিয়ানো বাজানোর সখ । তার একটা মস্তো বড় ভিটোরিয়ান পিয়ানো ছিলো। চিল ডাকা দুপুরে অথবা ঝিঁঝি ডাকা রাতে যখন সবকিছু নিঝুম থাকতো, তখন ব্রাদার অ্যালিস্টর আপন মনে পিয়ানো বাজাতেন। ওই ছিলো তার সখ। অন্য ব্রাদারদের হরেক রকমের সখ থাকে। কেউ স্ট্যাম্প আর জলছবি জমান। কেউ ছবি তোলেন। কেউ সময় পেলেই টেবিল টেনিস খেলেন। ফাদার ফিলিপ্স তো দিনরাত বায়স্কোপ নিয়েই পড়ে থাকতেন আর চুইংগা চিবুতেন। ব্রাদার অ্যালিস্টর পিয়ানো ছাড়া কিছুই পছন্দ করতেন না।
গির্জাঘরের পেছনে বুড়ো নিমগাছটা, যার নীচে পাথরে খোদাই করা মা মেরীর একটা চমৎকার মূর্তি আছে, তারই দেয়াল ঘেঁসে ব্রাদার অ্যালিস্টরের ঘর। এখন সেটাকে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেই ঘরে থাকতেন ব্রাদার অ্যালিস্টর। আপন মনে সেখানে বসেই পিয়ানো বাজাতেন।
খেলতে খেলতে আমরা অনেক সময় ক্রিকেট মাঠ পেরিয়ে সেখানে গিয়েছি। তালাবদ্ধ ঘরটাও দেখেছি। কিন্তু কখনো ভাবিনি ঘরটা বন্ধ কেন। ব্রাদার হার্ডি বললেন–এখনো নাকি পিয়ানোটা ওই ঘরেই আছে।
ব্যাপারটা ঘটেছিলো ব্রাদার অ্যালিস্টর ডুবে মরার কদিন পরে। কি মনে করে সেদিন দুপুরে ইশকুলের বুড়ো দপ্তরি ধনাই গিয়েছিলো নিমগাছের ওদিকটায়। মা মেরীর কাছে কি যেন প্রার্থনা করছিলো, এমন সময় শুনলো টুংটাং পিয়ানো বাজছে। ধনাই তো অবাক। শব্দটা আসছিলো ব্রাদার অ্যালিস্টরের ঘর থেকে। কার আবার পিয়ানো বাজানোর শখ হলো, এই ভেবে ধনাই জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে ব্রাদার অ্যালিস্টর আপন মনে পিয়ানো বাজাচ্ছেন। জানালায় খুট করে শব্দ হতেই ব্রাদার রেগে কটমট করে ওর দিকে তাকালেন। ধনাই নেমে এলো। ব্রাদার অ্যালিস্টর তাই বলো, আমি ভাবি আর কে। এই ভেবে ও হাঁপ ছাড়তে যাবে, তক্ষুনি মনে পড়লো ব্রাদার অ্যালিস্টর না ক’দিন আগে মারা গেলেন? অমনি ধনাই চোখ কপালে তুলে, দাঁত কপাটি দিয়ে আঁ-আঁ করে মুর্খা গেলো।
মুছা ভাঙতে ধনাই দেখে চারপাশে বাবুর্চি লিস্টার, ঘন্টাবুড়ো প্যাট্রিক, আর স্ট্যাম্পঅলা অ্যান্টনী।
ধনাই করুণ কণ্ঠে বললো, আমি কোথায়?
ওরা জবাব দিলো, তোমার ঘরে।
আমি এখানে এলাম কী করে?
লিস্টার বললো, তা কী করে বলি। আমি এসে শুনি তুমি বিছানায় শুয়ে গোঁ গোঁ করছে। তারপর…….।
ঘন্টাবুড়ো প্যাট্রিক ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো, আমিই প্রথম শুনেছি লিস্টার, আমি ডাকতেই না তুমি এলে!
লিস্টার রেগে বললো, তুমি কক্ষনো আমাকে দেখতে ডাকোনি প্যাট খুড়ো। আমিই তো–।
ধনাইর এদিকে কোনো খেয়াল নেই। যখন বুঝলো –ওরা কেউ ওকে উঠিয়ে আনেনি, তখনই—এ্যাঁ তাহলে ব্রাদার এলিস্টরই আমাকে এখানে আনলো নাকি? বলেই বুকে জুস একে ধনাই আবার চোখ কপালে তুলে ভির্মি খেলো। তিনদিন তিনরাত সে আর উঠে বসে না। চোখ মেলে তাকিয়ে কথাটা মনে করে, আবার বুকে ক্রস এঁকে ভির্মি খায়।
ধনাইয়ের পরে দেখলো বাবুর্চি লিস্টার। তারপর ঘন্টাবুড়ো প্যাট্রিক, স্ট্যাম্পঅলা অ্যান্টনী, বিউগল কাকা কেউ বাদ পড়লো না। সবাই নিজ কানে শুনলো ব্রাদার অ্যালিস্টরের ভূত ঘরে বসে পিয়ানো বাজাচ্ছে।
শেষে একদিন পুকুরটা ভরিয়ে ফেলা হলো। কি আশ্চর্য, এরপর আর কেউ পিয়ানো বাজানো শোনেনি। ধনাই অবশ্য পরে ওকথা ভেবে অনেকবার ভির্মি খেয়েছে। তবে ওর কথা আলাদা।
পিয়ানো ভূতের গল্প নিয়ে আমরা কদিন মেতে রইলাম। শুভদারঞ্জন স্যারকে জিজ্ঞেস করতে তিনি গম্ভীর হয়ে বললেন, হতে পারে। কোনো কারণে যদি আত্মার মুক্তি না ঘটে তাহলে এরকম হয়ে থাকে। বিশেষত অপঘাতে মৃত্যুতে। এরপর তিনি পুরো একঘন্টা অপঘাতের মৃত্যু আর তার মুক্তির কথা শোনালেন সবাইকে।
কিছুদিন যাবার পর পিয়ানো ভূতও পুরনো হয়ে গেলো। নতুন বইয়ের লিস্ট দেয়া হয়েছে। সবাই বইয়ে চকচকে ছবিঅলা মলাট লাগাতে ব্যস্ত। নতুন নতুন খাতা বানানো হচ্ছে। নতুন বই খাতায় কী চমৎকার গন্ধ! শুকলে বুকটা ভরে যায়।
এমন সময় একদিন আবার নতুন করে পিয়ানো ভূতের উৎপাতের কথা শোনা গেলো। এবার আমাদের নিজেদের শোনা, অবিশ্বাসের কোনো কারণ নেই। টিফিনের ঘন্টা শেষ হবার অল্প আগে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো পন্টু। ওর চোখমুখ দেখে মনে হলো এক্ষুণি বুঝি ভির্মি খাবে।
সবাই ওকে ঘিরে হাজারটা প্রশ্ন, রীতিমতো হৈ চৈ! ব্রাদার হার্ডি এসে বললেন, কি হইয়াছে পলু?
পলু তখন আস্তে আস্তে সব খুলে বললো। টিফিনের ঘন্টা বাজার পরে পলুর মনে হলো, মা মেরীর কাছে গিয়ে একটা প্রতিজ্ঞা করতে হবে। এই ভেবে ভালো মনে পলু গেলো ঘোড়া নিমের গোড়ায়। ব্রাদার এলিস্টরের ঘরের দরজায় নিচের সিঁড়িতে টিফিনের কৌটাটা রেখে পলু প্রতিজ্ঞা করতে গেলো। কতক্ষণই বা হবে–বড়জোর তিন মিনিট! ফিরে এসে দেখে সিঁড়ি ফাঁকা, কৌটা নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ কোথাও নেই। ঠিক তখনি পলু শুনতে পেলো ব্রাদার অ্যালিস্টরের ঘরে পিয়ানো বাজছে। এর পরই সে ছুটে পালিয়ে এলো।
শুনে সবার চোখ ট্যারা হয়ে গেলো। ব্রাদার হার্ডি তো বারবার বুকে ক্রুস আঁকেন, আর বললে, সত্যই শুনিয়াছ? সত্যই?
আমরা সবাই রায় দিলাম–এটা পিয়ানো ভূতেরই কাণ্ড। ব্রাদার হার্ডি তখন পলুকে একগাদা ক্যান্ডি আর চকোলেট খেতে দিলেন। সবার জুলুজুলু চোখের সামনে পলু সবগুলো ক্যান্ডি খেয়ে ফেললো। আমরা শুধু ঢোক গিলোম।
পরদিন আরেক কাণ্ড! ব্রাদার হার্ডির ক্লাশে পলু তার পেন্সিল খুঁজে পেলো না। ব্রাদার বললেন, কোথায় হারাইয়াছ?
পলু মাথা নিচু করে বললো, টিফিনে খেলতে খেলতে নাকি ঘোড়া নিমের ওপাশটায় গিয়েছিলো। শেষে হয়রান হয়ে ব্রাদার অ্যালিস্টরের সিঁড়িতে বসেছিলো। হঠাৎ ওর মনে হলো, প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে কে যেন পেছন থেকে পেন্সিলটা টেনে নিয়ে গেলো। ও ভাবলো বিজু বুঝি! কিন্তু তাকিয়ে দেখে কেউ নেই সেখানে। আর তখনই ঘরের ভেতর পিয়ানোর শব্দ শোনা গেলো। ও ছুটে চলে এলো।
ব্রাদার বললেন, তোমার যাওন উচিৎ আছিলো না। এরপর ব্রাদার তাকে চমৎকার একটা বিদেশী পেন্সিল দিলেন। ওটার গায়ে মিষ্টি গন্ধ, কি সুন্দর দেখতে!
পরদিন সকালে মন্টির খাতা হারালো। সে নাকি খাতাটা ব্রাদার অ্যালিস্টরের দরজার সামনে রেখেছিলো। আর টিফিনে রোজারিওর যে বড় রাবারটা হারালো, তাও ব্রাদার অ্যালিস্টরের দরজার সামনে সিঁড়িতে বসেছিল বলে ।
ব্রাদার হার্ডি সব শুনে–কি আইশ্চর্য! কি আইশ্চর্য! বলে মন্টি আর রোজারিওকে অদ্ভুত সুন্দর দুটো খাতা আর রাবার দিলেন।
এরপর যে কি কাণ্ড! প্রত্যেক দিন ক্লাশের কারো না কারো কিছু হারানো শুরু হলো। এসব যে পিয়ানো ভূতেরই কাজ এ ব্যাপারে কারো মনে সন্দেহ রইলো না। আর তারই মাশুল দিতে লাগলেন গোবেচারী ব্রাদার হার্ডি। তিনি শুধু আপন মনে বলতেন, ব্রাদার অ্যালিস্টরের কথা তোমাদের বলা উচিৎ হয় নাই। ব্রাদার তোমাদের উপর রাগিয়াছেন।
ব্যাপারটা আমাদের গা-সহা হয়ে গেলো। রোজ ব্রাদার পকেট ভর্তি জিনিস আনতেন। যার যা হারাতো তিনি দিতেন। শুধু বাদ থাকতাম আমি। এজন্যে আমার ভারি দুঃখ হতো। খুব ভোরে এসে ব্রাদার অ্যালিস্টরের সিঁড়িতে বই খাতা রেখে দূরে অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কি যে ছাই পিয়ানো ভূত! একদিনও আমার বই খাতা ছুঁয়ে দেখলো না।
তবে একদিন পলু দেখে মুখ টিপে হেসে চলে গেলো। কথাটা ক্লাশে গিয়ে সব্বাইকে বলে দিলো। আমি মনিটর বলে কেউ সামনে কিছু বলতো না। তবে আড়ালে মুখ টিপে হাসতো। আমার তখন কি যে লজ্জা!
শেষে আমি এক বুদ্ধি আঁটলাম। আমি হাতে নাতেই প্রমাণ করবো ব্রাদার এলিস্টরের ভূত আমার পেন্সিল নিয়েছে। টিফিনের ঘন্টা বাজতেই হনহন করে চলে গেলাম ব্রাদার অ্যালিস্টরের ঘরের দিকে।
ঘরটা দেখলাম। দরজায় তালা দেয়া, জানালাটাও বন্ধ মনে হলো। কাছে এসে একটু ঠেলতেই জানালা খুলে গেলো। তখন আমার আনন্দ দেখে কে! পকেট থেকে পেন্সিলটা নিয়ে ঘরের ভেতর ছুঁড়ে ফেলতে যাবো তক্ষুণি আমার হাত থেমে গেলো।
হাত থেমে গেলো পিয়ানো ভূতকে দেখে নয়। ঘরের ভিতর তাকিয়ে দেখি এখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে পলুর পেন্সিল, জাকি আর মন্টির খাতা, রোজারিওর রাবার, আরও কত কি!
আমি অবাক হয়ে গেলাম। তাই তো বলি পিয়ানো ভূত এদ্দিন পর আমাদের ঘাড়ে কেন চাপলো!
ক্লাশে গিয়ে কাউকে কিছু বললাম না। ঘন্টা বাজার পর ব্রাদার হার্ডি ক্লাশে এলেন। রোজকার মতো বললেন, কার কী হারাইয়াছে দাঁড়াও।
পেছনে কারা যেন দাঁড়াতে যাচ্ছিলো–আমি তড়াক করে দাঁড়িয়ে বললাম, আর কোন জিনিস হারাবে না ব্রাদার। চোর ধরা পড়েছে। জিনিসও পাওয়া গেছে।
ব্রাদারের গোল মুখটা আরো গোল হয়ে গেলো। বললেন, কাছে আইস।
আমি ব্রাদারের কাছে গেলাম। ব্রাদার বললেন, জিনিস কোথায়?
আমি বললাম, ব্রাদার অ্যালিস্টরের ঘরে।
ব্রাদার আরো অবাক হয়ে বললেন, কীভাবে গেলো সেইখানে?
আমি বললাম, সবাই জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলেছে যে।
ব্রাদার গলা নামিয়ে বললেন, তুমি কীভাবে বুঝিলে?
লজ্জায় লাল হয়ে চুপি চুপি বললাম, আমি যে আজ পেন্সিলটা ওভাবে ফেলতে গিয়েছিলাম!