পরিশিষ্ট

অমৃতের মৃত্যু – ৯

নয়

ইতিপূর্বে ব্যোমকেশ কখনও আমাকে এমনভাবে ফেলিয়া পালায় নাই। মাথায় আকাশ ভাঙিয়া পড়িল। প্রাণকেষ্টবাবুকে কী জেরা করিব? ব্যোমকেশ যখন জেরা করে তখন তাহার প্রয়োগনৈপুণ্য উপভোগ করিতে পারি, কিন্তু নিজে এ-কাজ কখনও করি নাই। শেষে কি ধাষ্টামো করিয়া বসিব! ব্যোমকেশ আমাকে একি আতান্তরে ফেলিয়া গেল!

প্যাসেঞ্জার গাড়ি দুল্‌কি চালে চলিয়াছে; দু’তিন মাইল অন্তর ছোট ছোট স্টেশন, তবু অবিলম্বে গাড়ি রামডিহি পৌঁছিবে। সুতরাং এইবেলা মাথা ঠাণ্ডা করিয়া ভাবিয়া লওয়া দরকার। প্রথমেই ভাবিতে হইবে, প্রাণকেষ্টবাবুকে ব্যোমকেশ জেরা করিতে চায় কেন? প্রাণকেষ্টবাবু সদানন্দ সুরের ভগিনীপতি, সম্ভবত প্রাণকেষ্টবাবুর স্ত্রী সদানন্দবাবুর উত্তরাধিকারিণী, কারণ সদানন্দবাবুর নিকট আত্মীয় আর কেহ নাই। …সদানন্দবাবু কলিকাতা যাইবার পথে কি ভগিনীপতির কাছে লোহার তোরঙ্গ রাখিয়া গিয়াছিলেন? তোরঙ্গে কি কোনও মহামূল্য দ্রব্য ছিল? প্রাণকেষ্টবাবু কর্মসূত্রে এই পথ দিয়া ট্রলি চড়িয়া যাতায়াত করিতেন; তাঁহার পক্ষে ট্রলি হইতে নামিয়া বাঘমারি গ্রামে উপস্থিত হওয়া মোটেই শক্ত নয়। তবে কি ব্যোমকেশের সন্দেহ প্রাণকেষ্টবাবুই শ্যালককে সংহার করিয়াছেন?…

রামডিহি জংশনে পৌঁছিয়া প্রাণকেষ্ট পালের ঠিকানা পাইতে বিলম্ব হইল না। স্টেশনের সন্নিকটে তারের বেড়া দিয়া ঘেরা কয়েকটি ছোট ছোট কুঠি, তাহারই একটাতে প্রাণকেষ্টবাবু বাস করেন। কুঠির সামনে ছোট্ট বাগান; প্যান্টুলুন ও হাত-কাটা গেঞ্জি পরা একটি পুষ্টকায় ব্যক্তি হাতে খুরপি লইয়া বাগানের পরিচর্যা করিতেছিলেন, আমাকে দেখিয়া ফ্যালফ্যাল চক্ষে চাহিয়া রহিলেন।

জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘আপনিই কি প্রাণকেষ্ট পাল?’

তাঁহার হাত হইতে খুরপি পড়িয়া গেল। তিনি কিছুক্ষণ হাঁ করিয়া থাকিয়া বিহ্বলভাবে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়িলেন। বলিলাম, ‘আমি পুলিসের পক্ষ থেকে আসছি। খবর পেয়েছেন বোধহয় আপনার শালা সদানন্দ সুর মারা গেছেন।’

এই প্রশ্নে ভদ্রলোক এমন স্তম্ভিত হইয়া গেলেন যে, মনে হইল তাঁহার প্যান্টুলুন এখনি খসিয়া পড়িবে। তারপর তিনি চমকিয়া উঠিয়া ‘সুশীলা! সুশীলা! বলিয়া ডাকিতে ডাকিতে বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়া পড়িলেন।

আমিও কম স্তম্ভিত হই নাই। মনে-মনে যাহাকে দুর্দান্ত শ্যালক-হন্তা বলিয়া আঁচ করিয়াছি, তাঁহার এইরূপ আচার-আচরণ! পুলিসের নাম শুনিয়াই শিথিলাঙ্গ হইয়া পড়িলেন! কিংবা—এটা একটা ভান মাত্র। ঘাগী অপরাধীরা পুলিসের চোখে ধূলা দিবার জন্য নানাপ্রকার ছলচাতুরি অবলম্বন করে—প্রাণকেষ্টবাবু কি তাহাই করিতেছেন? সুশীলাই বা কে? তাঁহার স্ত্রী?

পাঁচ মিনিট কাটিয়া গেল, বাড়ির ভিতর হইতে সাড়াশব্দ নাই। অতঃপর কি করিব, ডাকাডাকি করিব কি ফিরিয়া যাইব, এইসব ভাবিতেছি, এমন সময় দ্বারের কাছে প্রাণকেষ্টবাবুকে দেখা গেল। তিনি যেন কতকটা ধাতস্থ হইয়াছেন, প্যান্টুলুন যথাস্থানে আছে বটে, কিন্তু হাত-কাটা গেঞ্জির উপর বুশ-কোট চড়াইয়াছেন। মুখে মুমূর্ষ হাসি আনিয়া বলিলেন, ‘আসুন।’

সামনের বসিবার ঘরে প্রবেশ করিলাম। ঘরটি ছোট, কয়েকটি সস্তা বেতের চেয়ার ও টেবিল দিয়া সাজানো, অন্দরে যাইবার দরজায় পর্দা; বিলিতি অনুকৃতির মধ্যেও একটু পরিচ্ছন্নতা আছে। আমি অন্দরে যাইবার দরজার দিকে পিছন করিয়া বসিলাম, প্রাণকেষ্টবাবু আমার মুখোমুখি বসিলেন।

শুরু করিলাম, ‘আপনার শালা সদানন্দবাবুর মৃত্যু-সংবাদ পেয়েছেন তাহলে?’

প্রাণকেষ্ট চমকিয়া বলিলেন, ‘অ্যাঁ—হ্যাঁ।’

‘কখন খবর পেলেন?’

‘অ্যাঁ—সকালবেলা।’

‘কার মুখে খবর পেলেন?’

‘অ্যাঁ—সান্তালগোলা থেকে হরিবিলাসবাবু টেলিফোন করেছিলেন।’

‘মাফ করবেন, আপনার স্ত্রী, মানে সদানন্দবাবুর ভগ্নী কি এখানে আছেন?’

দেখিলাম আমার প্রশ্নের উত্তর দিবার আগে প্রাণকেষ্টবাবুর চক্ষু দু’টি আমার মুখ ছাড়িয়া আমার পিছন দিকে চলিয়া গেল এবং তৎক্ষণাৎ ফিরিয়া আসিল।

‘হ্যাঁ—আছেন।’

আমি পিছনে ঘাড় ফিরাইলাম। অন্দরের পর্দা একটু ফাঁক হইয়া ছিল, চকিতে যথাস্থানে সন্নিবিষ্ট হইল। বুঝিতে বাকি রহিল না, পর্দার আড়ালে আছেন পত্নী সুশীলা এবং নেপথ্য হইতে প্রাণকেষ্টবাবুকে পরিচালিত করিতেছেন।

‘আপনার স্ত্রী নিশ্চয় খুব শোক পেয়েছেন?’

আবার প্রাণকেষ্টবাবুর চকিতচক্ষু পিছন দিকে গিয়া ফিরিয়া আসিল।

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়, খুব শোক পেয়েছেন।’

‘আপনার স্ত্রী সদানন্দবাবুর উত্তরাধিকারিণী?’

‘তা—তা তো জানি না। মানে—’

‘সদানন্দবাবুর সঙ্গে আপনার সদ্ভাব ছিল?’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, খুব সদ্ভাব ছিল।’

‘যাওয়া-আসা ছিল?’

‘তা ছিল বৈকি। মানে—’

তাঁহার চক্ষু আবার পর্দার পানে ধাবিত হইল, ‘অ্যাঁ—মানে—বেশি যাওয়া-আসা ছিল না। কালেভদ্রে—’

‘শেষ কবে দেখা হয়েছে?’

‘শেষ? অ্যাঁ—ঠিক মনে পড়ছে না—‘

‘দশ-বারো দিন আগে তিনি আপনার বাসায় আসেননি?’

প্রাণকেষ্টবাবুর চক্ষু দু’টি ভয়ার্ত হইয়া উঠিল, ‘কৈ না তো!’

‘তিনি কলকাতা যাবার আগে আপনার কাছে একটা স্টীলের ট্রাঙ্ক রেখে যাননি?’

প্রাণকেষ্টবাবুর দেহ কাঁপিয়া উঠিল, ‘না, না, স্টীলের ট্রাঙ্ক—না না, কৈ আমি তো কিছু—’

আমি কড়া সুরে বলিলাম, ‘আপনি এত নাভার্স হয়ে পড়েছেন কেন?’

‘নার্ভাস! না না—’

পর্দা সরাইয়া প্রাণকেষ্টবাবুর স্ত্রী প্রবেশ করিলেন। স্বামীর চেয়ারের পিছনে দাঁড়াইয়া দৃঢ়স্বরে বলিলেন, ‘আমার স্বামী নার্ভাস প্রকৃতির মানুষ, অচেনা লোক দেখলে আরও নার্ভাস হয়ে পড়েন। আপনি কি জানতে চান আমাকে বলুন।’

মহিলাকে দেখিলাম। বয়স আন্দাজ পঁয়ত্রিশ, দৃঢ়গঠিত দেহ, চোয়ালের হাড় মজবুত, চোখের দৃষ্টি প্রখর। মুখমণ্ডলে ভ্রাতৃশোকের কোনও চিহ্নই নাই। তিনি যে অতি জবরদস্ত মহিলা তাহা বুঝিতে তিলার্ধ বিলম্ব হইল না। আমি উঠিয়া পড়িলাম, আমার যা জানবার ছিল জেনেছি, আর কিছু জানবার নেই। নমস্কার।’ শ্রীমতী সুশীলাকে জেরা করা আমার কর্ম নয়।

স্টেশনে গিয়া জানিতে পারিলাম, ন’টার আগে ফিরিবার ট্রেন নাই। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা কাটাইবার জন্য স্টেশনের স্টলে চা খাইলাম, অসংখ্য সিগারেট পোড়াইয়া প্ল্যাটফর্মে পদচারণ করিলাম, এবং সস্ত্রীক প্রাণকেষ্টবাবুর কথা চিন্তা করিলাম।

প্রাণকেষ্ট পাল নার্ভাস প্রকৃতির মানুষ হইতে পারেন। কিন্তু তিনি যে আমাকে দেখিয়া এত বেশি নার্ভাস হইয়া পড়িয়াছিলেন তাহা কেবল ধাতুগত স্নায়বিক দুর্বলতা নয়, অন্য কারণও আছে। কী সে কারণ? প্রাণকেষ্ট পত্নীর ইশারায় আমার কাছে অনেকগুলা মিথ্যাকথা বলিয়াছিলেন। কী সে মিথ্যাকথা? সদানন্দ সুরের সহিত বেশি সম্প্রীতি না থাক, সদানন্দ সুর তাঁহার বাড়িতে যাতায়াত করিতেন। দশ-বারো দিন আগে কলিকাতায় যাইবার মুখে তিনি স্টীলের ট্রাঙ্কটি নিশ্চয় ভগিনীপতির গৃহে রাখিয়া গিয়াছিলেন। ট্রাঙ্কে নিশ্চয় কোনও মূল্যবান দ্রব্য ছিল। কী মূল্যবান দ্রব্য ছিল? টাকাকড়ি? গহনা? বোমাবারুদ? আন্দাজ করা শক্ত। কিন্তু শ্ৰীমতী সুশীলা বাক্সে কী আছে জানিবার কৌতূহল সংবরণ করিতে পারেন নাই, হয়তো তালা ভাঙিয়াছিলেন। তাঁহার মত জবরদস্ত মহিলার পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়। কিন্তু তারপর? তারপর হয়তো ট্রাঙ্কে এমন কিছু পাওয়া গেল যে সদানন্দ সুরকে খুন করা প্রয়োজন হইল। হয়তো ট্রাঙ্কে হ্যান্ড-গ্রিনেড ছিল, সেই হ্যান্ড-গ্রিনেড দিয়াই সদানন্দকে—

কিন্তু না। শ্রীমতী সুশীলা যত দুর্ধর্ষ মহিলাই হোন, নিজের জ্যেষ্ঠভ্রাতাকে খুন করিবেন? আর প্রাণকেষ্ট পালের পক্ষে এরূপ দুঃসাহসিক কার্যে লিপ্ত হওয়া একেবারেই অসম্ভব। …কিন্তু স্টেশনমাস্টার হরিবিলাসবাবু বন্ধুকে অশুভ সংবাদটা সাত-তাড়াতাড়ি দিতে গেলেন কেন? বন্ধুসুলভ সহানুভূতি?…

সাড়ে ন’টার সময় সান্তালগোলায় ফিরিলাম। আকাশে চাঁদ আছে, শহর-বাজার নিষুতি হইয়া গিয়াছে। ভাবিয়াছিলাম বিশ্রান্তিগৃহে আসিয়া দেখিব ব্যোমকেশ ফিরিয়াছে। কিন্তু তাহার দেখা নাই। কোথায় গেল সে?

বিশ্রান্তিগৃহের চাকরটা রন্ধন শেষ করিয়া বারান্দায় বসিয়া ঢুলিতেছিল, তাহাকে খাবার ঢাকা দিয়া গৃহে ফিরিয়া যাইতে বলিলাম। সে চলিয়া গেল।

কেরোসিনের বাতি কমাইয়া দিয়া বিছানায় অঙ্গ প্রসারিত করিলাম। পিছনের জানালা দিয়া চাঁদের আলো আসিতেছে। …কোথায় গেল ব্যোমকেশ? বলা নাই কহা নাই ট্রেন হইতে নামিয়া চলিয়া গেল। বাঘামারি গ্রামে তার কী কাজ? এতক্ষণ সেখানে কী করিতেছে?

ঘুমাইয়া পড়িয়াছিলাম; ঘুম ভাঙিল কানের কাছে ব্যোমকেশের ফিসফিস গলার শব্দে, ‘অজিত, ওঠো, একটা জিনিস দেখবে এস।’

ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিলাম, ‘কী—?’

‘চুপ! আস্তে! ব্যোমকেশ হাত ধরিয়া আমাকে বিছানা হইতে নামাইল, তারপর পিছনের জানালার দিকে টানিয়া লইয়া গেল; বাহিরের দিকে আঙুল দেখাইয়া বলিল, ‘দেখছ?’

ঘুমের ঘোর তখনও ভালো করিয়া কাটে নাই, ব্যোমকেশের ভাবভঙ্গী দেখিয়া মনে হইয়াছিল না জানি কী দেখিব! কিন্তু যাহা দেখিলাম তাহাতে বোকার মত চাহিয়া রহিলাম। জানালা হইতে পনেরো-কুড়ি হাত দূরে ঝোপঝাড় আগাছার মাঝখানে খানিকটা মুক্ত স্থান, সেইখানে ছয়-সাতটা কৃষ্ণবর্ণ জন্তু অর্ধবৃত্তাকারে বসিয়া ঘাড় উঁচু করিয়া চাঁদের পানে চাহিয়া আছে। প্রথম দর্শনে মনে হইল কৃষ্ণকায় কয়েকটা কুকুর। বলিলাম, ‘কালো কুকুর।’ কিন্তু পরক্ষণেই যখন তাহারা সমস্বরে হুক্কা-হুয়া করিয়া উঠিল, তখন আর সংশয় রহিল না। স্থানীয় শৃগালের দল চন্দ্রালোকে সঙ্গীত-সভা আহ্বান করিয়াছে।

আমার মুখের ভাব দেখিয়া ব্যোমকেশ হো-হো শব্দে অট্টহাস্য করিয়া উঠিল। শৃগালের দল চমকিয়া পলায়ন করিল। আমি বলিলাম, ‘এর মানে? দুপুর রাত্রে আমাকে শেয়াল দেখাবার কী দরকার ছিল?’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘আগে কখনও চাঁদের আলোয় শেয়াল দেখেছ?’

‘চাঁদের আলোয় শেয়াল দেখলে কী হয়?’

‘পুণ্য হয়, অজ্ঞানতিমির নাশ হয়! আমার মনে যেটুকু সংশয় ছিল তা এবার দূর হয়েছে। চলো এখন খাওয়া যাক, পেট চুঁই-চুঁই করছে।’

আলো বাড়াইয়া দিয়া টেবিলে খাইতে বসিলাম। লক্ষ্য করিলাম, ব্যোমকেশ ক্ষুধার্তভাবে অন্নগ্রাস মুখে পুরিতেছে বটে, কিন্তু তাহার মুখ হর্ষোৎফুল্ল। জিজ্ঞাসা করিলাম, এত ফুর্তি কিসের? দুপুর রাত পর্যন্ত ছিলে কোথায়? বাঘমারিতে?’

সে বলিল, ‘বাঘমারির কাজ ন’টার মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারপর—’

‘বাঘমারিতে কী কাজ ছিল?’

‘পটল, দাশু আর গোপালের সঙ্গে কাজ ছিল।’

‘হুঁ, কী কাজ ছিল বলবে না। যাক, তারপর?’

‘তারপর সান্তালগোলায় ফিরে এসে সুখময় দারোগার কাছে গেলাম। সেখানে একঘণ্টা কাটল। তারপর গেলাম স্টেশনে। হরিবিলাসবাবু ছিলেন না, তাঁকে বিছানা থেকে ধরে নিয়ে এলাম। লম্বা টেলিফোন করতে হল। এখানকার থানায় পাঁচটি বৈ লোক নেই। কাল সকালে বাইরে থেকে দশজন আসবে। সব ব্যবস্থা করে ফিরে এলাম।’

জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘প্রাণকেষ্ট পালের কথা জানবার দরকার নেই তাহলে?’

‘আছে বৈকি। কি হল সেখানে?’

সব কথা মাছিমারা ভাবে বয়ান করিলাম। সে মন দিয়া শুনিল, কিন্তু বিশেষ আগ্রহ দেখাইল না। আহারান্তে মুখ ধুইতে ধুইতে বলিল, ‘জোড়ার একটা যদি হয় গবেট, অন্যটা হয় বিচ্ছু। প্রকৃতির এই বিধান।’

অতঃপর সিগারেট ধরানো হইলে বলিলাম, ‘তোমার পকেটে ওটা কি?’

ব্যোমকেশ একটু চকিত হইল, একটু লজ্জিত হইল। বলিল, ‘বন্দুক—মানে, পিস্তল।’

‘কোথায় পেলে?’

‘থানায়। সুখময় দারোগার পিস্তল।’

‘হুঁ। কোনও কথাই পষ্ট করে বলতে চাও না। বেশ, তাহলে এবার শুয়ে পড়া যাক।’

‘তুমি শুয়ে পড়, আমাকে রাতটা জেগেই কাটাতে হবে।’

‘কেন?’

‘যাঁর হাতে হ্যান্ড-গ্রিনেড আছে তিনি যদি ভয় পেয়ে থাকেন তাহলে সাবধান থাকা ভালো।’

‘তবে আমিও জেগে থাকি।’

রাত্রিটা জাগিয়া কাটিল। সুখের বিষয় কোনও উৎপাত হয় নাই। শেষরাত্রে চা পান করিতে করিতে ব্যোমকেশ মুখের বন্ধন একটু আলগা করিল, আমাদের অচিন পাখির নাম জানিতে পারিলাম।