পরিশিষ্ট

বহ্নি-পতঙ্গ – ১১

এগার

পরদিন সকালে নিদ্রাভঙ্গ হইলে জানা গেল, রাত্রে বৃষ্টি হইয়া গিয়াছে, আকাশ কুয়াশায় আচ্ছন্ন; সূর্যদেব কম্বল মুড়ি দিয়া শুইয়া আছেন। সুতরাং আমাদেরও শয্যাত্যাগ করিয়া লাভ নাই।

সাড়ে আটটার সময় সত্যবতী চা দিতে আসিয়া বলিল, ‘আজ আবার অমাবস্যা। আজ কেউ বাড়ির বার হতে পাবে না।’

এমন দিনে কে বাহির হইতে চায়? কিন্তু পাণ্ডেজি শুনলেন না, ঠিক ন’টার সময় পুলিস-বেশে সজ্জিত হইয়া উপস্থিত হইলেন। আমরা কম্পিত কলেবরে লেপের ভিতর হইতে নির্গত হইলাম। পাণ্ডেজি আমাদের অবস্থা দেখিয়া হাসিলেন। বলিলেন, ‘কাল রাত্রে একটা ব্যাপার ঘটেছে।’

কি ব্যাপার ঘটিয়াছে ব্যোমকেশ জানিতে চাহিল, পাণ্ডেজি সংক্ষেপে ঘটনা বলিলেন—

কাল রাত্রি বারোটা হইতে আকাশে কুয়াশা জমিতে আরম্ভ করিয়াছিল, তারপর টিপ্‌টিপ্‌ বৃষ্টি শুরু হয়। পাণ্ডেজির দেরিতে ঘুমানো অভ্যাস; রাত্রি প্রায় দেড়টার সময় তিনি শয়নের উপক্রম করিতেছিলেন এমন সময় টেলিফোন বাজিয়া উঠিল। দীপনারায়ণের বাড়ি হইতে টেলিফোন, যে জমাদারকে রতিকান্ত চারজন কনস্টেবল সঙ্গে পাহারায় রাখিয়াছিল সে টেলিফোন করিতেছে। জমাদার জানাইল—কিছুক্ষণ আগে দুইজন লোক খিড়কির দরজা দিয়া হাতায় প্রবেশ করিবার চেষ্টা করিয়াছিল; কিন্তু সিপাহীরা সতর্ক ছিল, তাই প্রবেশ করিতে গিয়া সিপাহীদের দেখিয়া পলায়ন করিয়াছে। একজন সিপাহী দূর হইতে তাহাদের উপর টর্চের আলো ফেলিয়াছিল, দু’জনেই কোট-প্যান্ট পরা ভদ্ৰশ্রেণীর লোক, কিন্তু তাহাদের সনাক্ত করা যায় নাই। মনে হয় তাহারা মোটর বাইকে চড়িয়া আসিয়াছিল, কারণ কিছুক্ষণ পরে দূরে মোটর বাইকের ফট্‌ ফট্‌ শব্দ শুনা গিয়াছিল।

পাণ্ডেজি রাত্রে আর কিছু করেন নাই, জমাদারকে সতর্কভাবে পাহারা দিবার উপদেশ দিয়া টেলিফোন ছাড়িয়া দিয়াছিলেন। তারপর আজ সকালে খোঁজ লইয়া জানিয়াছেন যে রাত্রে আর কোনও উপদ্রব হয় নাই।

ব্যোমকশে ভ্রূ তুলিয়া কিছুক্ষণ পাণ্ডেজির পানে চাহিয়া রহিল। আমি বলিলাম, ‘নর্মদাশঙ্কর।’

ব্যোমকেশ আমার দিকে ঘাড় ফিরাইয়া বলিল, ‘আমি ভাবছি অন্য লোকটা কে? নমর্দাশঙ্করই যদি দুষ্মন্ত হয় তাহলে সে কি একজন বয়স্যকে সঙ্গে নিয়ে শকুন্তলার কুঞ্জে যাবে?—পাণ্ডেজি, আপনার কি মনে হয়?’

পাণ্ডেজি বলিলেন, ‘কিছু বুঝতে পারছি না। আমি দুটো ওয়ারেন্ট নিয়ে এসেছি, ওয়ারেন্টে আসামীর নাম নেই, দরকার হলে বসিয়ে দেওয়া যাবে।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘তাহলে চলুন, নর্মদাশঙ্করের বাড়িতে হানা দেওয়া যাক। হঠাৎ আমাদের দেখলে ঘাবড়ে গিয়ে সত্যি কথা বলে ফেলতে পারে।’

পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা তৈরি হইয়া বাহির হইলাম। সত্যবতী কিছু বলিল না, কেবল কটমট করিয়া তাকাইল।

মোটরে উঠিতে গিয়া দেখিলাম ভিতরে একজন পুষ্টকায় সাব-ইন্সপেক্টর বসিয়া আছে। পাণ্ডেজি পরিচয় করাইয়া দিলেন—সাব-ইন্সপেক্টর তিওয়ারী।

তিওয়ারীর চেহারা সাবেক আমলের দারোগার মত। সে পোকা-ধরা দাঁত বাহির করিয়া স্যালুট করিল। বুঝিলাম রতিকান্ত তাহাকেই থানার চার্জে রাখিয়া গিয়াছে।

এদিকে আকাশের অশ্রুবাষ্প ক্রমশ অপসৃত হইতে আরম্ভ করিয়াছিল, সদ্য-জাগ্রত সূর্যদেব শাণিত খড়গ দিয়া তাহাকে খণ্ড খণ্ড করিয়া ফেলিতেছিলেন। এতক্ষণ যাহা ভারী মেঘের মত আকাশের বুকে চাপিয়া ছিল তাহা ধুমকুণ্ডলীর মত মিলাইয়া যাইতে লাগিল। আমরা নর্মদাশঙ্করের বাড়িতে পৌঁছিতে পৌঁছিতে কাঁচা সোনালী রৌদ্রে চারিদিক ঝলমল করিয়া উঠিল।

নর্মদাশঙ্করের বাড়ি শহরের নূতন অংশে। ঢালাই লোহার রেলিং দিয়া ঘেরা, সামনে টেনিস কোর্ট। আমরা বাহিরে মোটর রাখিয়া যথাসম্ভব নিঃশব্দে প্রবেশ করিলাম। ভাবগতিক দেখিয়া মনে হইল এখনও এ বাড়ির ভাল করিয়া ঘুম ভাঙে নাই। সম্মুখের বারান্দায় পা ছড়াইয়া বসিয়া একটা নিদ্রালু চাকর কয়েক জোড়া জুতা বুরুশ করিতেছে। আমাদের দেখিয়া কিছুক্ষণ মুখ-ব্যাদান করিয়া রহিল।

ব্যোমকেশ তাহার কাছে গিয়া টপ করিয়া এক জোড়া জুতা তুলিয়া লইল এবং উল্টাইয়া দেখিল। চাকরকে প্রশ্ন করিল, ‘এ জুতো কার?’

চাকরটা হাঁ-করা অবস্থায় বলিল, ‘মালিকের।’

ব্যোমকেশ জুতা জোড়ার তলদেশ আমাদের দেখাইল। তলায় কাদা লাগিয়া আছে। রাত্রি বারোটার পর যে এই জুতা ব্যবহার হইয়াছে তাহাতে সন্দেহ নাই।

এই সময় বাড়ির ভিতর দিক হইতে একজন উচ্চশ্রেণীর উর্দিপরা বেয়ারা বাহির হইয়া আসিল। সেও দু’জন পুলিস অফিসারকে দেখিয়া থতমত খাইয়া গেল। পাণ্ডেজি কড়া সুরে তাহাকে বলিলেন, নর্মদাশঙ্করবাবু কোথায়?’

বেয়ারা ভয় পাইয়া বলিল, ‘আজ্ঞে, তিনি বাড়িতেই আছেন।’

‘নিয়ে চল আমাদের তাঁর কাছে।’

বেয়ারা একবার একটু ইতস্তত করিল, তারপর পথ দেখাইয়া আমাদের লইয়া চলিল। বাড়ির অভ্যন্তর যতদূর দেখিলাম সুরুচির সহিত সজ্জিত। বেয়ারা আমাদের একটি দরজার সম্মুখে আনিয়া পর্দা সরাইয়া দাঁড়াইল। আমরা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিলাম।

ঘরের জানালা দরজা বন্ধ, বৈদ্যুতিক আলো জ্বলিতেছে। ঘরটিকে শিকারের ঘর বলা চলে। মেঝেয় বাঘ ও হরিণের চামড়া ছড়ানো, দেয়ালে বাঘ ও হরিণের মুণ্ড। একটি কাচের আলমারিতে রাইফেল বন্দুক পিস্তল প্রভৃতি সাজানো রহিয়াছে। ঘরের মাঝখানে একটি গোল টেবিল, তাহাকে ঘিরিয়া কয়েকটি গদি-মোড়া আরাম-কেদারা।

আমরা প্রবেশ করিয়া দেখিলাম, দুটি লোক মুখোমুখি দুটি কেদারায় বসিয়া আছে; তাহাদের হাতে কাচের গেলাসে রঙীন তরল পদার্থ। পাশের টেবিলে সোডা ও হুইস্কির বোতল। সুতরাং গেলাসের তরল পদার্থ যে কী বস্তু তাহা অনুমান করা কঠিন নয়। বোধহয় মধ্য রাত্রে যে সোমযাগ আরম্ভ হইয়াছিল তাহা এখনও চলিতেছে।

আমাদের দিকে মুখ করিয়া যে লোকটি বসিয়া ছিল সে ঘোড়া জগন্নাথ। ঘোলাটে চোখে আমাদের দেখিতে পাইয়া তাহার সমস্ত শরীর বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত ঝাঁকানি দিয়া উঠিল; হাতের গেলাস হইতে তরল পদার্থ চল্‌কাইয়া পড়িল। তখন নর্মদাশঙ্কর ঘাড় ফিরাইয়া দেখিল! তাহার আরক্ত মুখে ভ্রূকুটি দেখা দিল। সে রূঢ় স্বরে বলিল, ‘কি চাই?’

মদের বিচিত্র প্রভাব; পেটে মদ পড়িলে মানুষের চরিত্র বদলাইয়া যায়। কেহ কাঁদে, কেহ গান গায়, কেহ বা যুযুৎসু হইয়া ওঠে। নর্মদাশঙ্করের বিনীত বশংবদ ভাব আর নাই, সে উগ্র স্পর্ধিত চক্ষে আমাদের পানে চাহিয়া রহিল।

পাণ্ডেজি তাহাদের কাছে গিয়া দাঁড়াইলেন, তাঁহার কণ্ঠস্বরে পুলিসী কঠোরতা ফুটিয়া উঠিল, ‘আপনাদের দু’জনের নামে ওয়ারেন্ট আছে।’

নর্মদাশঙ্কর মদের গেলাস হাতে উঠিয়া দাঁড়াইল, উদ্ধত বিস্ময়ে বলিল, ‘ওয়ারেন্ট! আমার নামে? কিসের ওয়ারেন্ট?’

পাণ্ডেজি বলিলেন, ‘আপনারা দু’জনে কাল রাত্রি একটার সময় দীপনারায়ণ সিং-এর বাড়িতে ট্ৰেস্‌পাস করেছিলেন।’

‘প্রমাণ আছে?’

পাণ্ডেজি অবিচলিত কণ্ঠে বলিলেন, ‘আছে। পুলিসের লোকে আপনাকে দেখেছে।’

নর্মদাশঙ্করের রক্ত-রাঙা চোখে কুটিল বজ্জাতি খেলিয়া গেল, সে ঠোঁটের একটা তেরছা ভঙ্গী করিয়া বলিল, ‘যদি বলি শকুন্তলা আমাকে ডেকেছিল তাহলেও কি ট্রেস্‌পাস হবে?’

‘সেকথা আদালতে বলবেন। —সাব-ইন্সপেক্টর তিওয়ারী—’ পাণ্ডেজি তিওয়ারীকে ইঙ্গিত করিলেন, তিওয়ারী পকেট হইতে দুই জোড়া হাতকড়া বাহির করিল।

হাতকড়া দেখিয়া ঘোড়া জগন্নাথ হাউমাউ করিয়া উঠিল। এতক্ষণ সে চুপটি করিয়া ছিল, নাক ঝাড়ার শব্দ পর্যন্ত করে নাই। এখন মদের গেলাস টেবিলে রাখিয়া দু’হাতে পাণ্ডেজির হাত চাপিয়া ধরিল, ব্যগ্র মিনতির কণ্ঠে বলিল, ‘পাণ্ডেজি, দোহাই আপনার, হাতে হাতকড়া পরাবেন না। আমরা সত্যিকারের দোষ কিছু করিনি, আপনাকে সব কথা বলছিনা—না, নর্মদাশঙ্কর, তুমি চুপ কর, গোঁয়ার্তুমি কোরো না—এসব কেচ্ছা জারি হয়ে পড়লে শহরে আর মুখ দেখানো যাবে না। পাণ্ডেজি, আমার বয়ান শুনুন—

পাণ্ডেজি বলিলেন, ‘আপনি যদি সত্যি কথা বলেন শুনতে রাজী আছি।’

‘সত্যি কথা বলব, কোনও কথা লুকোব না।’

‘বেশ, শুনে যদি মনে হয় আপনাদের কোনও মন্দ অভিপ্রায় ছিল না, তাহলে অ্যারেস্ট নাও করতে পারি। —নর্মদাশঙ্করবাবু, আপনি যান, অনেক মদ খেয়েছেন, বিছানায় শুয়ে থাকুন গিয়ে। দরকার হলে ডাকব।’

এতক্ষণে নর্মদাশঙ্করেরও কতকটা হুঁশ হইয়াছিল; সে আমাদের দিকে একটি ব্যর্থ ক্রোধের জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া মদের বোতলটা তুলিয়া লইয়া প্রস্থান করিল।

আমরা তখন উপবেশন করিলাম। ঘোড়া জগন্নাথ কোঁৎ কোঁৎ করিয়া গেলাসের বাকি মদ গলাধঃকরণ করিয়া যে ঘটনা বিবৃত করিল তাহার মর্মার্থ এইরূপ—

নর্মদাশঙ্করের সঙ্গে ঘোড়া জগন্নাথের বন্ধুত্ব খুব গাঢ় নয়; তবে নর্মদাশঙ্করের বাড়িতে আসিলে বিনা পয়সায় বিলাতি মদ পাওয়া যায়, তাই জগন্নাথ তাহার সহিত একটা বাহ্যিক সৌহৃদ্য রাখিয়াছে। কাল রাত্রে জগন্নাথ আরও কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে এখানে আসিয়াছিল, তারপর এখানেই আহারাদি সম্পন্ন করে। অন্যান্য বন্ধুরা প্রস্থান করিলে জগন্নাথ ও নর্মদাশঙ্কর এই ঘরে আসিয়া মদ্য পান করিতে আরম্ভ করে। নর্মদাশঙ্করকে কাল সন্ধ্যাকালে পুলিস শকুন্তলার সহিত সাক্ষাৎ করিতে দেয় নাই, সেজন্য তাহার মনে গভীর ক্ষোভ ছিল; মদ খাইতে খাইতে এই প্রসঙ্গই আলোচনা হয়। ক্রমে রাত্রি দ্বিপ্রহর হইল, বৃষ্টি পড়িতে আরম্ভ করিল। হঠাৎ নর্মদাশঙ্কর বলিল, আজ রাত্রে যেমন করিয়া হোক শকুন্তলার সহিত দেখা করিবে। জগন্নাথ তাহাকে নিবৃত্ত করিবার চেষ্টা করিয়াছিল, কিন্তু সে শুনিল না। তখন দুইজনে মোটর বাইকে চড়িয়া বাহির হইল, জগন্নাথ মোটর বাইকের পিছনের আসনে বসিল। দীপনারায়ণের বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছিয়া তাহারা আমবাগানের মধ্যে মোটর বাইক লুকাইয়া রাখিল, তারপর খিড়কির দরজা দিয়া ভিতরে প্রবেশ করিল। কিন্তু পুলিস পাহারায় ছিল, খিড়কির দরজা পার হইতে না হইতে তাহারা বৈদ্যুতিক টর্চের আলো ফেলিয়া আগন্তুক দুটিকে দেখিতে পাইল। দু’জনে তখন আর কালবিলম্ব না করিয়া পলায়ন করিল এবং মোটর বাইকে চাপিয়া ফিরিয়া আসিল। তারপর হইতে বর্তমান কাল পর্যন্ত তাহারা এখানে বসিয়া মদ্য পান করিয়াছে। তাহাদের কোনও বে-আইনী অভিসন্ধি ছিল না, মদের ঝোঁকে একটা নির্বুদ্ধিতার কাজ করিয়া ফেলিয়াছে। এখন এই সব বিবেচনা করিয়া পাণ্ডেজি নিজ গুণে তাহাদের ক্ষমা করুন।

ঘোড়া জগন্নাথের অনুনয়ান্ত বিবৃতি শেষ হইবার পর পাণ্ডেজি ব্যোমকেশের দিকে ভ্রূভঙ্গ করিলেন। ব্যোমকেশ প্রশ্ন করিল, ‘শকুন্তলা দেবীর সঙ্গে নর্মদাশঙ্করবাবুর সম্বন্ধটা ঠিক কোন ধরনের?’

জগন্নাথ সন্ত্রস্ত হইয়া বলিল, ‘দেখুন, ওসব কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করিবেন না। মানে—’

‘মানে—আপনি বলবেন না?’

জগন্নাথ আরও সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিল, ‘না না, বলব না কেন? তবে ওসব কথায় আমি থাকি না—আমি একজন রেস্‌পেক্টেবল ডাক্তার—কাজ কি আমার পরের হাঁড়িতে কাঠি দিয়ে।’

‘বটে! আপনি পরের হাঁড়িতে কাঠি দেন না! কেবল ডাক্তার পালিতের কম্পাউন্ডার খুবলালকে চাকরি ছেড়ে দেবার জন্য ভয় দেখিয়েছিলেন।’

খুবলালের উল্লেখে ঘোড়া জগন্নাথ একবারে কেঁচো হইয়া গেল—‘আমি—মানে আমি—’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘ওকথা যাক। শকুন্তলার সঙ্গে নর্মদাশঙ্করের ঘনিষ্ঠতা কতদূর গড়িয়েছে তা আপনি জানেন না?’

‘সত্যি বলছি নটঘটের কথা আমি কিছু জানি না।’

‘কাল রাত্রে নর্মদাশঙ্কর কিছু বলেনি?’

‘নর্মদাশঙ্কর ভারি মিথ্যেবাদী। ও মনে করে দুনিয়ার সব মেয়ে ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ওর কথা বিশ্বাস করা যায় না।’

‘অর্থাৎ বলেছিল। কী বলেছিল?’

‘বলেছিল শকুন্তলার সঙ্গে অনেক দিন ধরে ওর প্রেম চলছে। এলাহাবাদে ওরা এক কলেজে পড়ত, তখন থেকে প্রেম।’

ব্যোমকেশ ধীরে ধীরে উঠিয়া দাঁড়াইল, নীরসকণ্ঠে বলিল, ‘হুঁ! আজ আপনি ছাড়া পেলেন। কিন্তু পরে হয়তো আদালতে সাক্ষী দিতে হবে। শহর ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করবেন না, তাহলেই হাতে হাতকড়া পড়বে। চলুন, পাণ্ডেজি।’