হাসি কেন নাই ও নয়নে

পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়

জীবনে এ কি প্রথম বসন্ত এল

হৃদয় আমার ওই বুঝি তোর

ও জলের রানী ঘাটে বাঁধা একশো ডিঙি

শ্রাবণের বারিধারা ঝরিছে বিরামহারা

কেন গো সে মোরে যেন করে না বিশ্বাস

একবার বলো সখী ভালোবাস মোরে

গা সখী গাইলি যদি আবার সে গান

কাছে ছিলে দূরে গেলে

ওরে বকুল পারুল ওরে শালপিয়ালের বন

ভয় নেই রে তোদের নেই রে ভয়

যারা বিহান-বেলায় গান এনেছিল আমার মনে

তোরা বসে গাঁথিস মালা

কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া

ও গান আর গাস্‌ নে

যদি ভরিয়া লইবে কুম্ভ

হিয়ামাঝে গোপনে হেরিয়ে তোমারে

ঝাঁকড়া চুলের মেয়ের কথা কাউকে বলি নি

পাখি তোর সুর ভুলিস নে

বলি ও আমার গোলাপ-বালা

কেমনে শুধিব বলো তোমার এ ঋণ

সকলই ফুরাইল যামিনী পোহাইল

বড়ো বিস্ময় লাগে হেরি তোমারে

যেন কোন্‌ ভুলের ঘোরে

মনে হল পেরিয়ে এলেম অসীম পথ

আমার হারিয়ে যাওয়া দিন

গোলাপ ফুল ফুটিয়ে আছে

এ ভালোবাসার যদি দিতে প্রতিদান

ফুলটি ঝরে গেছে রে

আজি মোর দ্বারে কাহার মুখ হেরেছি

অবেলায় যদি এসেছ আমার বনে

জানি জানি এসেছ এ পথে মনের ভুলে

পাগলিনী তোর লাগি

ওকি সখা কেন মোরে কর তিরস্কার

সখা হে কী দিয়ে আমি তুষিব তোমায়

বৃথা গেয়েছি বহু গান

তুমি তো সেই যাবেই চ’লে

কী বেদনা মোর জানো সে কি তুমি জানো

ওই কথা বলো সখী

ওকি সখা মুছ আঁখি

বলি গো সজনী যেয়ো না যেয়ো না

তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা

আপনহারা মাতোয়ারা আছি তোমার আশা ধরে

আমার কী বেদনা সে কি জানো

প্রলয়-নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে

হাটের ধুলা সয় না যে আর

আকাশ হতে আকাশ-পথে হাজার স্রোতে

গগনে গগনে ধায় হাঁকি

আমি কেবলই স্বপন করেছি বপন বাতাসে

দূরদেশী সেই রাখাল ছেলে

তিমিরময় নিবিড় নিশা

পায়ে পড়ি শোনো ভাই গাইয়ে

আমার যাবার সময় হল

দুই হাতে– কালের মন্দিরা

আমি একলা চলেছি এ ভবে

আলোক-চোরা লুকিয়ে এল ওই

ভাঙো বাঁধ ভেঙে দাও

শুধু যাওয়া আসা শুধু স্রোতে ভাসা

বাজে গুরু গুরু শঙ্কার ডঙ্কা