৪.১২ একই দিনের ঘটনা

১২.

একই দিনের ঘটনা!

লং বীচ। উঠানে এসে থামল দুটো গাড়ি। একটা গাড়ি কনি, তার মা, আর তার দুই ছেলেকে নিয়ে এয়ারপোর্টে যাবে। কার্লোর পরিবার ভেগাসে ছুটি কাটাতে যাচ্ছে। স্থায়ীভাবে সেখানে উঠে যাবার আগে এটা ওদের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার মহড়া বলা যেতে পারে। কনি অবশ্য আপত্তি করেছে, কিন্তু তা জেনেও কার্লোকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে নিজের ইচ্ছাটাকে কাজে পরিণত করেছে মাইকেল। বার্জিনির সাথে শান্তি সভায় বসার আগে সবাইকে উঠান থেকে সরিয়ে দিতে চায় ও, কিন্তু কথাটা কাউকে ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন বোধ করেনি। শান্তি সভা আয়োজন সম্পর্কে অত্যন্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়েছে, পরিবারের অল্প কয়েকজন মাথা ছাড়া আর কেউ জানে না ব্যাপারটা।

দ্বিতীয় গাড়িটা কে আর তার ছেলেদের জন্যে। কে তার বাপের বাড়ি নিউ হ্যাম্পশায়ারে বেড়াতে যাচ্ছে। ওদের সাথে মাইকেল যাচ্ছে না, তার কারণ কাজের সাঙ্ঘাতিক চাপ পড়েছে, উঠান ছেড়ে বেরুবার উপায় নেই তার।

গতরাতে লোক মারফত খবর পাঠিয়ে কার্লোকে জানিয়ে দিয়েছে মাইকেল, বিশেষ জরুরী ব্যাপারে দিন কয়েক তাকেও থাকতে হবে উঠানে। হপ্তার শেষের দিকে ভেগাসে গিয়ে পরিবারের সাথে মিলিত হতে পারবে সে। খবরটা শুনে ভীষণ চটে গেছে কনি। ফোনে মাইকেলকে ধরার চেষ্টা করেছিল সে গতরাতেই, কিন্তু। ব্যস্ততার অজুহাতে মাইকেলের সাথে যোগাযোগই করতে দেয়া হয়নি তাকে। এই মুহূর্তে কনির দুটো চোখ চঞ্চল হয়ে খুঁজছে মাইকেলকে। কে যেন বলল টম হেগেনের সাথে গোপন পরামর্শে বসেছে ও, এখন ওর সাথে দেখা করা অসম্ভব। অগত্যা গাড়িতে উঠে বল কনি। চোখ রাঙিয়ে স্বামীকে বলল, দুদিন পর তোমাকে যদি ভেগাসে না দেখি, আমি নিজে ফিরে এসে কানটি ধরে নিয়ে যাব, মনে থাকে যেন!

স্বামীসুলভ যৌন ষড়যন্ত্রের একটা ভাব মেশানো হাসি দেখা গেল কার্লোর ঠোঁটে। ঘাবড়াও মাত, কাজ শেষ হলেই ছুটব আমি।

 জানালা দিয়ে মুখটা বাইরে বের করে দিল কনি আচ্ছা, মাইকেল তোমাকে আটকে দিল কেন বলো তো? ভুরু কুঁচকে উঠল তার দুশ্চিন্তায় ভুগছে। অস্বাভাবিক মোটা হয়ে গিয়ে চেহারাটা বিশ্রা করে তুলেছে! মুখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করল কার্লোর

অনেক দিন থেকেই তো বলছে, আমাকে খুব বড় একটা দায়ি; দেবে, বলল কার্লো। হয়তো সে ব্যাপারেই আলাপ করতে চায় যা বলল তাতে তো এই রকম আভাসই পেলাম। শান্তি সভার কথা কিছুই জানে না কার্লো।

সত্যি? আগ্রহের আতিশয্যে চোখ দুটো চকচক করছে কনির।

উপর-নিচে মাথা নেড়ে স্ত্রীকে আশ্বস্ত করল কার্লো কয়েক সেকেণ্ড পরই ফটক পেরিয়ে গেল গাড়িটা।

প্রথম গাড়িটা উঠান ছেড়ে চলে যাবার পর প্রায় সাথে সাথে স্ত্রী এবং ছেলেদেরকে নিয়ে বেরিয়ে এল মাইকেল। ওদেরকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে তুলে দেবে ও। এগিয়ে এল কার্লো! সৌজন্য দেখিয়ে কে-কে বলল, তার বেড়ানো যেন। উপভোগ্য হয়। দ্বিতীয় গাড়িটাও বেরিয়ে গেল উঠান ছেড়ে।

তোমাকে ধরে রাখতে হলো, সেজন্যে আমি দুঃখিত, কার্লো, মৃদু গলায় ভগ্নীপতিকে বলল মাইকেল।

 কি আশ্চর্য, বলল কার্লো। এতে দুঃখিত হবার কি আছে? কাজ কাজই। আমি কিছু মনে করিনি।

 আর, হ্যাঁ, শোনো, ফ্লোনের কাছাকাছি থেকো তুমি, কেমন? বলল মাইকেল। হাতের কাজ শেষ করেই ডাকব তোমাকে হাতের কাজ মানে, কয়েকটা খবর জানতে হবে আমাকে। ঠিক আছে?

অবশ্যই, মাইকেল, অবশ্যই, সমীহের সাথে বলল কার্লো

মাইকেলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে এল সে। এখান থেকে ফোন করল তার রক্ষিতা মেয়েটাকে বাল, অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ একটু বেশি রাত করে যাবে সে এই মেয়েটার ব্যাপারে সম্ভাব্য সব রকম সতর্কতা অবলম্বন করে কার্লো। অত্যন্ত গোপনে ওয়েস্ট বারির একটা ফ্ল্যাটে রেখেছে। তাকে।

এক বোতল হুইস্কি নিয়ে জানালার ধারে বসল কার্লো মাইকেল যখন বলেছে, অপেক্ষা করতেই হবে। বসে বসে মদ খেয়ে অনেকটা সময় পার করে দিল সে। দুপুরের একটু পর থেকে উঠানের ফটক দিয়ে গাড়ি ঢুকতে শুরু করল।

একটা গাড়ি থেকে পীট ক্লেমেঞ্জাকে নামতে দেখল কার্লো। একটু পর আরও একটা গাড়ি ঢুকল উঠানে। টেসিও নামল সেটা থেকে। একজন সেটি মাইকেলের বাড়িতে নিয়ে গেল দুজনকে।

আরও কয়েকটা ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। ক্লেমেঞ্জা মাইকেলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে উঠান ছেড়ে চলে গেল। কিন্তু টেসিওকে বেরিয়ে আনতে দেখল না কার্লো।

নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে উঠানে ঘুর ঘুর করছে এখন কার্লো, নির্মল বাস খাচ্ছে উঠানে যারা পাহারা দেয় তাদের সবাইকে চেনে সে, কয়েকজনের সাথে এক আধটু আলাপালাপও আছে মনে মনে ভাবল, ওদের সাথে গল্পগুজ করে কিছুটা সময় কাটানো যেতে পারে কিন্তু প্রহরাদের কাছে এসে হতভম্ব হয়ে গেল সে। এরা কারা, এদেরকে তো কখনও দেখেনি কার্লো: কিছুক্ষণ বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকার পর ধীর পায়ে ফটকের দিকে এগোল সে এখানে এসে যা দেখল, তাতে বিস্ময়ের মাত্রা আরও বেড়ে গেল তার ফটক পাহারা দিচ্ছে রকো ল্যাস্পনি। কিন্তু ফটক পাহারা দেবার মত হালকা কাজ করার লোক নয় সে। রকো ল্যাম্পনি আরও অনেক উঁচুদরের কর্মচারী তার মানে, বিদ্যুৎ চমকের মত টের পেয়ে গেল কার্লো, অৰাভাবিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বন্ধুরে উষ্ণ হাসি উপহার দিয়ে কার্লোকে হ্যালো বলল রকো

পেশীতে আশ্চর্য টান অনুভব করছে কার্লো। রকোকে আন্তরিকভাবে হাসতে দেখে সতর্ক হয়ে গেল সে।

শুনলাম, বলল রকো, আপনি নাকি ডনের সাথে ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন?

শ্রাগ করল কার্লো, বলল, না ভেগাসে যাবার কথা ছিল আমার, কিন্তু মাইকেল আমাকে কি একটা দায়িত্ব দেবে বলে দুদিন থেকে যেতে বলেছে।

তাই নাকি? একটু খুশি, একটু অবাক দেখাল রকাকে। আমাকেও তো তাই বলেছে। তারপর ডেকে বলল ফটকের ওপর কড়া নজর রাখতে হবে আমাকে। ভাবো একবার! এর কোন মানে হয়? যাক বাবা, আমার কি, হুকুমের চাকর বৈ তো নই। মালিক যা বলে শিরোধার্য। তার কথা শুনে মনে হলো, বলতে চায়, বাপের সাথে মাইকেলের তুলনা হয় না কথায় একটু যেন নিন্দার সুর।

কিন্তু সুরটাকে উপেক্ষা করে গভীর ভাবে বলল কার্লো, সব কিছুর ভাল মন্দ জেনেই কাজ করে মাইক।

রূঢ় উত্তরটা মুখ বুজে গ্রহণ করল রকে। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ম্রাবার নিজের বাড়িতে ফিরে এল কার্লো। কিছু একটা ঘটবে ঠিকই, কিন্তু সে সম্পর্কে রকো কোন খবর রাখে না।

.

মাইকেলের লিভিংরুম জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ও। দেখতে পাচ্ছে উঠানে ঘুর ঘুর করছে কার্লো একটা গ্লাসে হুইস্কি ঠেলে তার হাতে সেটা ধরিয়ে দিল টম হেগেন। কৃতজ্ঞ বোধ করল মাইকেল, চুমুক দিল গ্লাসে।

পিছন থেকে কথা বলছে হেগেন। মাইকেলের কানে আশ্চর্য কোমল শোনাচ্ছে তার কণ্ঠস্বর। সময় হয়েছে, মাইক। কাজ শুরু করো এবার।

বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মাইকেলের, বলল, এত তাড়াতাড়ি চাইনি আমি, হেগেন। বাবা আরও কিছু দিন বাচলে ভাল হত।

 আমি যখন টের পাইনি, বলল হেগেন, আর কেউ টের পাবার প্রশ্নই ওঠে না। সব ঠিকঠাক মত ঘটবে, কোথাও কোন গোলমাল হবে না। চমৎকার হয়েছে তোমার পরিকল্পনাটা।

ঘুরে দাঁড়াল মাইকেল। এতে বাবার অবদানই বেশি, বলল ও। এত বুদ্ধি রাখেন উনি তা আগে কখনও বুঝিনি। কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই জানো।

তার সাথে কারও তুলনা হয় না, কোমল কণ্ঠে বলল হেগেন। কিন্তু এ-ও অপূর্ব। এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারত না। তার মানে তুমিও কম যাও না।

কি হয় দেখা যাক, বলল মাইকেল। ক্যাপোরেজিমিরা উঠানে?

হ্যাঁ।

এক চুমুকে গ্লাসটা খালি করে ফেলল মাইকেল আমার কাছে পাঠিয়ে দাও ক্লেমেঞ্জাকে। আমি নিজে সরাসরি নির্দেশ দেব ওকে। আর টেসিওর মুখ দেখতে চাই না আমি। আধ ঘন্টা পর তাকে নিয়ে বার্জিনির সাথে দেখা করতে যাব, এইটুকু শুধু বলে রাখো। তারপর ওর ভার নেবে ক্লেমেঞ্জার সৈনিকরা।

টেসিওকে রেহাই দেবার কোন উপায় নেই? উদাস ভঙ্গিতে জানতে চাইল হেগেন।

নেই।

.

বাফেলো সিটি। শহরের ছোট একটা রাস্তা। রাস্তার ধারে ছোট একটা পিটসা পাইয়ের দোকান। খুব ভিড় হয় দোকানটায়, চুটিয়ে ব্যবসা করছে মালিক লোকটা। অন্যান্য দিনের মত আজও লাঞ্চের সময় পেরিয়ে যেতে ভিড় একেবারে কমে গেল। একটু পরই দেখা গেল দোকান একেবারে খালি। সিমেন্টের প্লাস্টার করা উঁচু ওভেনের মাথার উপর একটা থাক রয়েছে, ট্রে থেকে অবশিষ্ট কয়েকটা পাই-এর সুইস সেখানে তুলে রাখল দোকানদার। আর একটা মাত্র পাই বেক হচ্ছে ওডেনে, উঁকি দিয়ে দেখে নিল, সেটাকে। এখনও ফুটতে শুরু করেনি চিজটা। খদ্দেররা অনেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাই কেনে এখান থেকে। তাদের জন্যে আলাদা একটা কাউন্টার আছে। হঠাৎ চোখ পড়তেই দোকানদার দেখতে পেল, কাউন্টারে একটা হাত রেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একজন লোক। কাউন্টারের ওপর হাতের তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে তবলা বাজাচ্ছে সে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখাচোখি হতেই একটু হাল খদ্দের। এক স্নাইস দাও দেখি আমাকে।

কাঠের খুন্তি দিয়ে এক স্নাইস ঠাণ্ডা পাই ওভেনে গরম করতে দিল দোকানদার। এখনও আঙুল দিয়ে তবলা বাজাচ্ছে খদ্দের, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এতেন থেকে বের করে গরম পাই-এর টুকরোটা কাগজের একটা প্লেটে রাখল দোকান্দার, তারপর প্লেটটা বাড়িয়ে দিল খদ্দেরের দিকে। দোকানদারের চোখে চোখ রেখে প্লেটটা নিল খদ্দের। নিয়ম হলো, খেতে শুরু করার আগেই পাই-এর দাম চুকিয়ে দেয়া, কিন্তু পয়সা বের করার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না লোকটার মধ্যে। মুচকি একটু হাসল সে, যেন কতদিনের বন্ধ তারা। তারপর জিজ্ঞেস করল, কি ওটা? ওই যে, তোমার শার্টের কলারের কাছে একটু দেখা যাচ্ছে? নিশ্চয়ই উল্কি, তাই না? মনে হচ্ছে মস্ত বড় উক্তি। সবটা দেখতে দেবে আমাকে? আপত্তি করলে আমি কিন্তু দুঃখ পাব।

স্থির পাথর হয়ে গেছে দোকানের মালিক। চট করে চোখ নামিয়ে শার্টের কলারের নিচেটা দেখে নিল সে। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বুকের ভেতর হাতুড়ির বাড়ি পড়তে শুরু করেছে ওর। এরই মধ্যে দুই নাকের ফুটোর নিচে, বগলের তলায়, হাতের দুই তালুতে আর কপালে ঘাম দেখা দিয়েছে তার। ঢোক গেলার সময় গলাটা লম্বা হয়ে গেল তার।

শার্টটা খোলো না, ভাই, অনুরোধের সুরে বলল খদ্দের। উল্কিটা দেখাও আমাকে।

দ্রুত মাথা নাড়ল মালিক আপনি ভুল করেছেন। রাতে যে লোকটা কাজ করে তার বুকে উল্কি আছে। আমার নেই। তার কথার সূর থেকেই বোঝা গেল বিদেশী লোক সে।

মৃদু শব্দ করে হেসে উঠল খদ্দের। বিনয়, হাসিখুশি অনুরোধের ভাব মুছে গেছে তার চেহারা থেকে এখনকার হাসিটা কর্কশ, ব্যঙ্গাত্মক, ঘৃণায় বিকৃত। ওসব পায়তারা ছাড়ো, বলল সে। উল্কিটা দেখতে না দিলে এখন আমি আর দুঃখ পাব না, রাগ করব। খোলো, খোলো, শার্ট খুলে দেখতে দাও আমাকে।

একটু একটু করে পিছু হটতে শুরু করেছে দোকানের মালিক। ওভেনটা প্রকাণ্ড, এটার পিছনে গা ঢাকা দেবার কথা ভাবছে সে। নিঃশব্দে হাসল খদ্দের। এবার ডান হাতটা তুলল সে কাউন্টারের ওপর। চকচকে নীল একটা পিস্তল দেখা গেল তার হাতে।

পিস্তলটা দেখেই অসহায় জানোয়ারের মত বিদঘুঁটে একটা আঁ আঁ শব্দ করে উঠল দোকানদার, সেই সাথে পিঠটা বেঁকে গেল তার, সাপের মত ভঙ্গিতে হত দুটো তুলল কপালের সামনে, যেন মুখ আর মাথাটাকে রক্ষা করতে চাইছে।

এত ভয়? অবাক বিস্ময়ে মাথা নেড়ে বলল খদ্দের, চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে গেছে তার, কিন্তু দৃষ্টিতে জ্বল জ্বল করছে রাজ্যের মজা আর কৌতুক। তারপর মাথাটা একটু সরিয়ে কান পাতার ভঙ্গি করল সে। একটা শব্দ শুনতে পাচ্ছে। মুখ থেকে নেমে এসে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো দোকানদারের তলপেটের নিচে। এখনও হচ্ছে শব্দটা–ছর-ছর, ছরছর। নোংরা একটা কিছু ঘটতে দেখলে মানুষ যেমন দাঁত দিয়ে জিভ কাটে, খদ্দেরও তার জিভের ডগাটা বাইরে বের করে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল আরে শালা. এ যে মেয়েমানুষের বাড়া! কথাটা বলে নিঃশব্দে হাসল আবার সে।

এখনও পিছু হটছে দোকানদার হাত তুলে পিস্তল তাক করল খদ্দের। দোকানদারের চোখের দৃষ্টি পিস্তলের নল দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেছে, গভীর কালে ফুটোটা যেন তাকে সম্মোহিত করে ফেলেছে। প্রচণ্ড একটা ধাক্কা মারল তাকে প্রথম বলেটটা, ছিটকে ওভেনের ওপর পড়ে গেল সে। কাউন্টার ঘুরে দোকানের ভেতর ঢুকল খদ্দের মেঝেতে জমে থাকা পেছাব টপকে দোকানদারের সামনে দাঁড়া সে বুক থেকে হড়হড় করে রক্ত বেরিয়ে আসছে ঝুঁকে পড়ল খদ্দের! হাত বাড়া শার্টের দিকে। একটা একটা করে খুলে ফেলল কয়েকটা বোতাম। বুলেটের ফুটোটা দেখা যাচ্ছে এখন আঘাতটা মারাত্মক নয়। হার্টেও বেঁধেনি, ফুসফুলও ফুটো। করেনি। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে উল্কিটা। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আছে প্রেমিক প্রেমিকার যুগল মূর্তি। ছোরাটা দুজনের গায়েই বিঁধেছে। আরও একটা গুলি করল খদ্দের। ওভেন থেকে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেল মালিক। ইচ্ছে করেই আজেবাজে জায়গায় গুলি করছে সে। এখুনি নয়, আরও দুচার সেকেন্ড পর লক্ষ্য স্থির করে গুলি করার ইচ্ছে তার।

মুচকি হাসিটা আবার ফিরে এল খদ্দেরের মুখে! মাত্র দশটা সেকেও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা সে, কিন্তু একজন মৃধুপথযাত্রী লোকের কাছে এই দশটা সেকেও দশ যুগের সমান, কিংবা হয়তো তার চেয়েও বেশি।

ফ্যাব্রিযযিয়ো, বলল খদ্দের অকারণে দেরি করছে সে, কেন কি ঘটছে, নিশ্চয়ই তা বুঝতে পারছ?

মাথাটা কাঁপছে ফ্যাব্রিযযিয়োর। কাঁপা মাথাটা দ্রুত কক্ষেবার এদিক ওদিক নাড়ল সে তারপর আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে একটা হাত তুলল মুখের সামনে। চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে তার, যেন এখুনি কেঁদে ফেলবে।

 ফ্যাব্রিযযিয়ো, মাইকেল কর্নিয়নি তোমাকে সালাম জানিয়েছে।

কথা শেষ কবে নিঃশব্দে হাসল খদ্দের, হাতটা বাড়িয়ে, দি দোকানদারের মাথার দিকে, পিস্তলের নলটা তার চুলে ঠেকিয়ে আবার টিপে দিল ট্রিগার!

গুলি করেই ঘুরে দাঁড়াল খদ্দের, একবারও পিছন দিকে না তাকিয়ে দ্রুত দোকান থেকে বেরিয়ে এল সে ফুটপাথের ধারেই অপেক্ষা করছে একটা গাড়ি। দরজাটা খোলা। লাফ দিয়ে গাড়িতে চড়ল নোকটা স্টার্ট দেয়াই ছিল, সাথে সাথে তীব্র একটা ঝাঁকি খেয়ে ছুটতে শুরু করল গাড়ি।

.

লং বীচ। উঠান।

 ফটকের গায়ে লোহার একটা থাম, থামের গায়ে একটা খোপ, সেই খোপের ভেতর ঝন ঝন শব্দে বাজছে টেলিফোনের বেল ছো মেরে রিসিভারটা তুলে নিল বকে ল্যাম্পনি রেডি, অপর প্রান্ত থেকে বলল কেউ কট করে শব্দ হলো একটা, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল যোগাযোগ।

ধীর কিন্তু বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এগোচ্ছে রকে। কোনদিকে না তাকিয়ে, কোন রকম তাড়াহুড়োর ভাব না দেখিয়ে নিজের গাড়িতে চড়ল সে। স্টার্ট দিয়ে ছেড়ে দিল। উঠান ছেড়ে বেরিয়ে গেল গাড়িটা।

নিষ্প্রাণ পাথরের মূর্তির মত জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাইকেল কর্লিয়নি। মাথাটা একচুল নড়ল না ওর, কিন্তু কোর গাড়িটা যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায়, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দেখল ও।

জোনস্ ব্রীজ কজওয়ে এই ব্রিজের ওপর খুন হয়েছিল সনি কর্লিয়নি। সাত করে ব্রিজ পেরিয়ে গেল কোর গাড়ি। ওয়ান্টাগ রেল স্টেশনের কাছাকাছি এসে স্পড কমাল সে, দাঁড় করাল গাড়ি। আগে থেকেই আরেকটা গাড়ি অপেক্ষা করছে ওখানে। দুজন লোক বসে রয়েছে তাতে। নিজের গাড়ি থেকে নেমে সেটায় চড়ল রকো। কোন কথা হলো না। গাড়ি চলতে শুরু করল।

ওয়ান্টাগ স্টেশন থেকে সান রাইজ হাইওয়েতে উঠেএল গাড়িটা। দশ মিনিট পর একটা মোটেলের উঠানে থামল সেটা। আরোহী দুজনকে গাড়িতে রেখেই নেমে পড়ল রকো ল্যাম্পনি পায়ে হেঁটে এগোল ও সামনে একটা বাংলো। এ ধরনের বাংলা সাধারণত সুইস পাহাড়ের ওপর দেখা যায়, ধনী এবং সৌখিন লোকেরা এখান ছুটি বা অবসর কাটাতে ভালবাসে কেউ নেই আশেপাশে। না থাকারই কথা। বুড়ো বয়সে গোপন কাজ করার সময় কে-ই বা সাক্ষী রাখতে চায়? সোনার মত চকচকে দরজাটা দেখা যাচ্ছে। সোজা সেটার দিকেই হাটছে রকো। আত্মবিশ্বাসে দৃঢ় পদক্ষেপ। পাঁচ গজ দূরে থাকতে অকস্মাৎ বিদ্যুৎ খেলে গেল ওর শরীরে। এক ছুটে এগিয়ে গিয়ে দরজার ওপর কাধ দিয়ে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা মারল ও। দুফাঁক হয়ে গেল কবাট দুটো কামরার ভেতর ঢুকে পড়ল রকো ল্যাম্পনি।

দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে ফিলিপ টাটাগ্লিয়া। সম্পূর্ণ নগ্ন! খাটের ওপর শুয়ে রয়েছে কমবয়েসী একটা মেয়ে বড় জোর তেরো কি চোদ্দ বছর বয়স হবে। খিক খিক করে হাসছে মেয়েটা তার একটা হাত ধরে আছে বুড়ো টাটাগ্লিয়া, হাতটা নিজের শরীরের একটা জায়গায় ছোঁয়াবার চেষ্টা করছে সে।

দুধের মত সাদা চুল ফিলিপ টাটাগ্লিয়ার সারা গায়ে, কিন্তু মাথার চুলগুলো ঘোর কৃষ্ণ বর্ণ। শরীরটা নাদুসনুদুস মাত্র দুই সেকেণ্ডেই এসব দেখে নিল রক্সে ল্যাম্পনি; পর পর চারটে গুলি করল ও সবগুলোই পেটে চরকির মত ঘুরে দাঁড়াল আধ পাক, নাফ দিয়ে বেরিয়ে এল কামরা থেকে।

স্টার্ট দেয়াই ছিল গাড়িতে, ছুটে এলে রকো উঠে বসতেই গাড়ি ছেড়ে দিল ড্রাইভার। রকোকে ওয়ান্টাগ রেল স্টেশনে নামিয়ে দেয়া হলো। নিজের গাড়িতে চড়ল রকে। সোজ পৌঁছে গেল লং বীচে।

এক মিনিটের জন্যে মাইকেল কর্লিয়নির সাথে দেখা করল সে। তারপর আবার বেরিয়ে এসে ফটকে দাঁড়াল নিজের জায়গায়

.

ব্রঙ্কস। আলবার্ট নেরির ফ্ল্যাট।

পুলিশের পুরানো ইউনিফর্ম পরিষ্কার করা শেষ করল নেরি। এতটুকু ব্যস্ততা নেই ওর কাজে, ধীরে ধীরে পরছে পোশাকটা। প্রথমে পা, তারপর শার্ট, টাই, কোট, হোলস্টার, সবশেষে রিভলভার ঝোলাবার জন্যে গানবেল্ট। পুলিশের চাকরি হারিয়ে রিভলভার জমা দিয়েছিল নেরি, কিন্তু বিভাগীয় অসতর্কতার দরুন ব্যাজটা বয়ে গেছে তার কাছে। নতুন একটা .৩৮ পুলিশ স্পেশাল দিয়েছে তাকে ক্লেমেঞ্জা। এটা যদি পুলিশের হাতে পড়েও, এর আসল মালিক বা ঠিকানা সম্পর্কে কিছু জানতে পাবে না তারা রিভলভারটা খুলল নেরি তেল দিল পরীক্ষা করল ট্রিগার। তারপর আবার জোড়া লাগিয়ে ট্রিগার মেকানিজম ঠিকমত কাজ করছে কিনা দেখে লি ভাল করে। সিলিণ্ডারগুলো লোড করে নিয়ে উঠে দাঁড়াল এবার নেরি। এখন একে রওনা হতে হবে। বড় একটা এভেলাপে পুলিশের কাপটা ভরে নিল সে, গায়ে একটা ওভারকোট চড়িয়ে ঢেকে নিল পুলিশের ইউনিফর্মটা রিস্টওয়াচ দেখল। সে পনেরো মিনিট পর গাড়ি আসবে ওর জন্যে। সময়টা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাটাল নোর ছবেশ দেখে কোন সন্দেহ জাগতে পারে না। একজন পুলিশ বলেই মনে হচ্ছে ওকে।

ঠিক সময়ে নিচে এসে পৌঁছুল নেরি। ওর জন্যে অপেক্ষা করছে গাড়িটা। ভেতরে বসে রয়েছে রকো ল্যাম্পনির দুজন লোক। পিছনের সীটে একা বসল। নেরি। পাড়া ছেড়ে বেরিয়ে এসে শহরের দিকে ছুটছে গাড়ি, ওভারকোট খুলে পায়ের কাছে রেখে দিল ও। এনভেলাপ থেকে বের করল পুলিশের কাপটা।

খানিক পর ফুটপাথের একধারে থামল গাড়ি ফিফটিফিফথ আর ফিফথ অ্যাভিনিউ-এর মোড় এটা। কারও সাথে কথা হয়নি নেরির। নিঃশজে নেমে পড়ল ও। ফিফথ অ্যাভিনিউ-এর ফুটপাথ ধরে হাঁটছে।

সেই পুরানো অনুভূতিটা ফিরে এসেছে নেরির মনে। ভূয়া হলেও, নিজেকে একজন পুলিশম্যান বলেই মনে হচ্ছে তার। আগে যেমন রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে বেড়াত, আজও তাই দিচ্ছে। রাস্তায় যানবাহন আর ফুটপাথে লোকজনের খুব ভিড়। কিন্তু ত পথ হাঁটতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না নেরির! ইউনিফর্মর একটা মস্ত ণ আছে, দেখেই পথ ছেড়ে দেয় মানুষ।.এদিক-ওদিক না তাকিয়ে হনহন করে হেঁটেই যাচ্ছে নেরি। অবশেষে রকফেলার সেন্টারের সামনে এসে পৌঁছুল ও। উল্টোদিকে দেখা যাচ্ছে সেন্ট প্যাট্রিকের বড় গির্জাটা। এদিকে গাড়ি পার্ক করার কোন জায়গা নেই। কিন্তু তবু আশপাশে কোথাও একটা গাড়ি থাকার কথা। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে নেরি। একটা লিমুসিন গাড়ি খুঁজছে ও চলার গতি মন্থর, কিন্তু এখনও হাঁটছে। কয়েক গজ সামনে গাড়িটাকে দেখতে পেল নেরি। এক সারি লাল রঙের নো পার্কিং আর নো স্ট্যাণ্ডিং লেখা সাইনবোর্ডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়িটা। ওই একটাই, আশপাশে আর কোন গাড়ি নেই হাঁটার গতি আরও মন্থর করল নেরি। একটু আগেই পৌঁছে গেছে ও দাঁড়িয়ে পড়ল ফুটপাথে, সমন-এর বইটা বের করে কি যেন লিখল তাতে। তারপর কয়েক পা এগিয়ে লিমুসিন গাড়িটার পাশে এসে দাঁড়াল ও।

গাড়ির ফেণ্ডারে হাতের বেঁটে লাঠিটা দিয়ে দুটো মৃদু বাড়ি মারল নেরি। অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল ড্রাইভার, বিস্ময় ফুটে উঠল তার চেহারায়। মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে পুলিশ দেখে তার বিস্ময় আরও বাড়ল বৈ কমল না লাঠি দিয়ে নো স্ট্যাণ্ডিং লেখা নোটিশটা তাকে দেখাচ্ছে নেরি।

মুখ ফিরিয়ে আবার অন্য দিকে তাকাল ড্রাইভার পাত্তাই দিল না নেরিকে

ফুটপাথ থেকে রাস্তায় নেমে এল নেরি। ড্রাইভারের পাশে খোলা জানালার সামনে দাঁড়াল ও। হিংস্র গুণ্ডার মত চেহারা ড্রাইভারের, স্বাস্থ্যটা এমন, যেন ভয় কাকে বলে জানা নেই। এরকম লোককেই জ করতে ভালবাসেনের। অপমান। করার ইচ্ছে নিয়েই তাকে বলল ও, এই, ব্যাটা, বাদরামি করার আর জায়গা পাওনি? কেটে পড়বে, নাকি দেব একটা সমনগুঁজে?

নতুন বুঝি? ঠাণ্ডা তাচ্ছিল্যের সাথে বলল ড্রাইভার তোমার থানায় গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে ব্যাপারটা। একটু থেমে আবার বলল, শখ চেপে থাকলে টিকেটটা দিতে পারো আমাকে, তারপর কেটে পড়ো এখানে সুবিধে হবে না তোমার।

গাড়ি সরাও, শান্ত, কিন্তু গম্ভীর সুরে বলল নেরি। তা না হলে টেনে নিচে নামিয়ে পিঠের ছাল তুনব তোমার।

জাদুর মত একটা দশ ডলারের নোট চলে এল ডাইভারের হাতে। এক হাত দিয়েই সেটাকে চার ভাঁজ করল সে, তারপর চট করে নেরির কোটের পকেটে খুঁজে দেবার জন্যে হাত বাড়াল।

পিছিয়ে এসে প্রত্যাখ্যান করল নেরি। ফুটপাথে উঠে এসে তর্জনী নেড়ে ডাকল ড্রাইভারকে। এতক্ষণে রাজ্যের বিরক্তি ফুটে উঠল লোকটার চেহারায়। কাঁধ ঝাঁকাল সে, নেমে পড়ল গাড়ি থেকে।

তোমার লাইসেন্স আর রেজিস্ট্রেশন দেখাও, বলল নেরি। চোখের কোণ দিয়ে কয়েকজন লোককে দেখতে পেয়ে বুঝতে পারল, প্ল্যানটা রদবদল করতে হবে। ভেবে রেখেছিল, গাড়ি নিয়ে ব্লকটার চারদিকে একবার চক্কর কাটতে বাধ্য করতে পাররে ড্রাইভারকে। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়।

প্লাজা বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে তিনজন লোক। তিনজনই লম্বা-চওড়া, মোটাসেটা। মাঝখানে বার্জিনি, সামনে পিছনে বডিগার্ড। মাইকেল কর্লিয়নির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে ওরা।

সামনের বডিগার্ডটা দ্রুত পা চালিয়ে গাড়ির কাছে চলে এল। নেরির আপাদমস্তক দেখে নিয়ে জানতে চাইল, ব্যাপার কি?

চিন্তার কিছু নেই, বলল ড্রাইভার। থানায় নতুন এসেছে মনে হচ্ছে, আমাকে টিকেট দিচ্ছে।

দ্বিতীয় বডিগার্ডকে নিয়ে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল বার্জিনি। আবার কি গণ্ডগোল? জানতে চাইল সে।

এর মধ্যে একবারও মুখ তুলে তাকায়নি নেরি। সমনের বইতে একমনে কি যেন লিখল সে। তারপর সরাসরি তাকাল ড্রাইভারের দিকে। লাইসেন্স আর রেজিস্ট্রেশনটা ফিরিয়ে দিল তাকে। তারপর সমনের বইটা সরিয়ে রাখার জন্য হিপ পকেটে হাত ভরেই এক টানে বের করে ফেলল .৩৮ পুলিশ স্পেশালটা।

পিপের মত মস্ত গোল বার্জিনির বুকে পর পর তিনটে গুলি করল নেরি। স্তম্ভিত ভাবটা কাটিয়ে উঠে আত্মরক্ষার জন্যে খনও ডাইভ দেয়নি বাকি তিনজন। শেষ গুলিটা করে,ছিটকে সরে এল নেরি, তার সাথে বাকি তিনজনও যে যেদিকে পারল ডাইভ দিয়ে পড়ল। এক সেকেণ্ডের মধ্যে ভিড়ের সাথে মিশে গেল নেরি, বাক নিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে এল অপেক্ষারত গাড়িটার কাছে।

নেরিকে নিয়ে ফুল স্পীডে ছুটছে গাড়ি। নাইনথ অ্যাভিনিউ পর্যন্ত এসে আবার একটা বাক নিয়ে ফিরে যাচ্ছে শহরের দিকে আরেকটা গাড়ি অপেক্ষা করছে চিলসে পার্কের কাছে। ইতিমধ্যে ইউনিফর্ম, টুপি খুলে অন্য পোশাক পরে নিয়েছে নেরি। গায়ে আবার ওভারকোটটা চড়িয়েছে। পুলিশের ইউনিফর্ম আর পিস্তল রেখে অন্য গাড়িটায় উঠল ও। প্রথম গাড়িটা সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা হবে।

এক ঘণ্টা পর। লং বীচে পৌঁছুল অ্যালবার্ট নেরি। মাইকেল কর্লিয়নির সাথে কথা বলছে সে।

.

লং বীচ। উঠান।

ডন ভিটো কর্লিয়নির বাড়ি। কিচেনে বসে ধূমায়িত কফির কাপে আয়েশ করে চুমুক দিচ্ছে টেসিও। তাকে নিতে এল টম হেগেন।

তোমার সাথে রওনা হবার জন্যে তৈরি হয়ে বসে রয়েছে মাইক, বলল হেগেন, তুমি বরং ফোন করে বার্ভিনিকেও রওনা হতে বলে দাও!

সাথে সাথে কফির কাপ রেখে দিয়ে উঠে দাঁড়াল টেসিও। দেয়ালে ঝোলানো টেলিফোনের রিসিভারটা নামিয়ে ডায়াল করতে শুরু করল। যোগাযোগ হতে বলল, ব্রুকলিনে যাচ্ছি আমরা। হুকে রিসিভারটা ঝুলিয়ে রেখে ঘুরে তাকাল হেগেনের দিকে। হাসল। বলল, আশা করি আজ রাতে ভাল একটা চুক্তি করে আমাদের খুব সুবিধেজনক একটা পজিশনে নিয়ে আসবে মাইক।

কোনও সন্দেহ নেই, গম্ভীর মুখে বলল হেগেন।

কিচেন থেকে দুজন এক সাথে বেরিয়ে এল ওরা। উঠানের ওপর দিয়ে মাইকেলের বাড়ির দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু দরজার সামনে ওদেরকে থামিয়ে দিল একজন সেন্টি।

বস বলেছেন,ওদেরকে বলল সেন্ট্রি, আলাদা একটা গাড়িতে যাবেন তিনি। আপনাদেরকে আগেই রওনা হয়ে যেতে বলেছেন।

ভুরু কুঁচকে উঠল টেসিওর। ঝট করে ফিরল হেগেনের দিকে। কি যন্ত্রণা, এমন তো কথা ছিল না। এ আবার কি ধরনের পাগলামি মাইকের শেষ মুহূর্তে প্ল্যান বদল করা সব নয় সব যে ভেস্তে যাবে তাহলে!

হঠাৎ এদের চারদিকে আরও তিনজন সেন্ট্রিকে দেখা গেল। আশ্চর্য শান্ত আর কোমল গলায় লল হেগেন, তোমার সাথে আমি যেতে পারছি না, টেসিও।

একপলকে সব বুঝে নিল ক্যাপারিজিমি টেসিও। এবং নিয়তির অমোঘ পরিণতিকে সেই মুহূর্তেই মেনে নিল নিঃশর্তে। নিমেষের জন্যে অসুস্থ, দুর্বল লাগল শরীরটা পর মুহর্তে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠল সে।

মাইককে বোলো, হেগেনের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে টেসিও, যা কিছু ঘটেছে, সবই ব্যবসার স্বার্থে। ওর ওপর আমার কোন রাগ নেই ওকে আর বরাবরই ভাল লেগেছে।

ঘাড় কাত করে রাজি হলো টম হেগেন। বলল, তা সে বোঝে।

স্তব্ধ হয়ে খানিক দাঁড়িয়ে থাকল টেসিও, তারপর ধীর, নরম গলায় জানতে চাইল, তুমি আমাকে রেহাই দিতে পারো না, টম? অনেক দিনের পুরানো বন্ধুত্ব।

ধীরে ধীরে এদিক ওদিক মাথা দোলাল হেগেন। পারি না।

তাকিয়ে আছে হেগেন, দেখছে সেট্রিরা ঘিরে ফেলে একটা গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে টেসিওকে। গাড়িতে উঠছে টেসিও ঘাড় ফিরিয়ে একবার তাকাল সে হেগেনের দিকে কিন্তু কিছু আশা করে নয়। সাথে সাথে সিধে করে নিল, মাথা, উঠে পড়ল গাড়িতে। অসুস্থবোধ করছে হেগেন। গলার ভেতর বমি বমি ভার। শিউরে উঠল সে। কর্লিয়নি পরিবারের সেরা সৈনিক ছিল টেসিও। লুকা ব্রাসির পর ওর ওপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা রাখতেন ডন কর্লিয়নি। খুবই দুঃখজনক, এত তীক্ষ্ণ বুদ্ধির লোক হয়েও এই বয়সে এমন জঘন্য একটা ভুল করে বসল টেসিও।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *