০৩.
পিছনের সীটে বসাল ওরা হেগেনকে। ওর দুপাশে উঠে বসল দুজন লোক। সামনের সীটে, ড্রাইভারের পাশে বসেছে সলোযো।
ওর দিকে একটা হাত এগিয়ে আসছে দেখে ছ্যাৎ করে উঠল হেগেনের বুক। ডান পাশের লোকটা হেগেনের টুপিটা ধরে নিজের দিকে টেনে চোখ দুটো আড়াল করে দিল। নড়বে না, উত্তেজিত চাপা কণ্ঠে বলল সে।
বিশ মিনিট পর থামল গাড়ি। নিচে নামতে বলা হলো হেগেনকে। কোন প্রশ্ন বা প্রতিবাদ না করে নামল হেগেন। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, জায়গাটা চিনতে পারছে না সে। একটা বাড়ির উঠান বলে মনে হলো।
কড়া পাহারা দিয়ে বেসমেন্টের একটা কামরায় নিয়ে যাওয়া হলো তাকে। শক্ত কাঠের খাড়া পিঠওয়ালা একটা চেয়ারে বসতে বলা হলো। টেবিলের অপর দিকে একটা চেয়ারে বসল, সলোযো। তার সেই আগের চেহারা নেই এখন আর। ঘামে পিচ্ছিল মুখে শকুনের শঠতা প্রকাশ পাচ্ছে।
দেখো, টম, এর মধ্যে তোমার বিপদের কোন আশঙ্কা নেই, সলোযো আন্তরিকতার ভান করছে, অভয় দিয়ে হেগেনের মাথাটাকে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করছে। শক্তি প্রয়োগের দিকটা তোমার এক্তিয়ারের বাইরে, আমি জানি।
কি চান আপনি? ঠোঁটে একটা সিগারেট তুলল হেগেন। হাত দুটো কাঁপছে। সলোমোর চোখে চোখ রেখে উত্তরের অপেক্ষায় আছে সে।
ঠক করে আওয়াজ হলো টেবিলে। ঘাড় ফেরাতেই হেগেন দেখল একজন লোক হুইস্কিভর্তি একটা গ্লাস রেখে সরে যাচ্ছে দরজার দিকে। নিঃশব্দে গ্লাসটা তুলে নিল হেগেন। ইচ্ছা করছে এক নিঃশ্বসে সবটুকু খেয়ে ফেলতে কিন্তু তা সে করল না। একটু একটু করে চুমুক দিল দুবার। সলোহোর চোখে চোখ রাখল। আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। হাত দুটো স্থির হয়ে গেছে তার। পায়ে এখন জোর পাচ্ছে।
ডন কর্লিয়নি নেই…
মুখে কোন প্রতিক্রিয়া নেই হেগেনের, কিন্তু নিমেষের মধ্যে দুচোখ থেকে ঝর ঝর করে পানি নামতে শুরু করল। আশ্চর্য হয়ে গেল সলোযো। গভীরভাবে, সগর্বে আবার বলল সে, ওকে আমরা ওর অফিসের বাইরে খুন করেছি। পাকা খবর পেয়েই এখানে নিয়ে এসেছি তোমাকে, কিছু কথা বলার জন্যে।
পাথর হয়ে গেছে হেগেন। চোখের পাতা নড়ছে না, শুধু পানি ঝরছে। শোকের গভীরতা অনুভব করে নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে সে। একটা হাহাকার ধ্বনি ছাড়া কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। জীবনে কখনও এমন নিঃসঙ্গ বোধ করেনি সে। কেউ যদি এসে বলত, হেগেন, তুমি মারা গেছ-তাহলেও বুঝি এমন অসহায় বোধ করত না। ধীরে ধীরে শোকের প্রকোপ কমে আসছে। মৃত্যুর কথা ভাবছে এখন হেগেন। সলোযোকে ভয় পাচ্ছে, ঠিক তা নয়। দুনিয়ার সব কিছুই এখন ভীতিকর মনে হচ্ছে তার। ডন নেই, তাই স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে গেছে সে, আর দুর্বল হলে যা হয়, মৃত্যুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
সনি এখন কর্লিয়নি পরিবারের হাল ধরবে, চতুর শিয়ালের মত লাগছে সলোযোকে। হাসছে সে। ডনকে সরিয়ে ওর উপকারই করেছি আমি, কি বলে? বাপ বেঁচে থাকতে ওর কোন আশা ছিল না। একটু থেমে কণ্ঠস্বরটাকে দরাজ করুল সে, ডনের ওপর আমার ব্যক্তিগত কোন আক্রোশ ছিল না, এটা তোমাকে বুঝতে হবে, হেগেন। আমার ব্যবসার স্বার্থ ডন রক্ষা করতে রাজি হয়নি, কিন্তু তার ছেলে সনি বেশ একটু আগ্রহ দেখিয়েছে, সুতরাং সনিকে সুবিধে মত জায়গায় তুলে না দিয়ে উপায় ছিল না আমার।
চিন্তাশক্তি দ্রুত ফিরে পাচ্ছে হেগেন।, সনির সেই ভুলটা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, এ ভয় অনেক আগেই হয়েছিল তার। ওর বিশ্বাস, ডনও ব্যাপারটা বুঝেছিলেন। হেগেনের চিন্তায় বাধাপড়ল। সলোযো আবার কথা বলছে।
আমার প্রস্তাবটা সবদিক থেকে ভাল,কণ্ঠস্বরে কাঠিন্য ফুটে উঠল সলোযোর। তাছাড়া বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করলে তুমিও বুঝতে পারবে আমার প্রস্তাবটা গ্রহণ করাই তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। সত্যি কথা বলতে কি, এছাড়া তোমার উপায়ও নেই। একটু থেমে সলোযো আবার বলল, এর চেয়ে ভাল ব্যবসা আর হয় না। সংশ্লিষ্ট আমরা সবাই বছর দুয়েকের মধ্যে বিরাট ধনী হয়ে যাব। ডন কর্লিয়নি ছিল সেকেলে, কিন্তু তোমরা সেকেলেও নও, বোকাও নও–অন্তত আমার তাই ধারণা। তাই বলছি, নতুন করে সমঝোতা করি এসো। আমি চাই সনিকে সঠিক বুদ্ধি যোগান দিয়ে আমার প্রস্তাবে রাজি করাও ওকে তুমি।
একটুও উত্তেজনার ছাপ নেইহেগেনের চেহারায়। খুব সহজভাবে, কিন্তু পরিপূর্ণ দৃঢ় নিশ্চয়তার সাথে কলল, যা ভাবছেন তা ভুলে যান। কোন আশা নেই আপনার। সনিকে আপনি এখনও চেনেননি। ওর আক্রোশ থেকে আপনার রেহাই নেই। সমস্ত শক্তি দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে লাগবে ও।
অধৈর্যের সাথে সলোযো বলল, রগচটা লোক সে, আমরা সবাই তা জানি। আমাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলার ইচ্ছে হবে তার, ঠিক, কিন্তু, সেটা হবে তার প্রথম প্রতিক্রিয়া। তারপর মাথা ঠাণ্ডা হবে, চিন্তাশক্তি ফিরে পাবে। তখনই বৃদ্ধির আলোতে সামনের পথটা দেখতে সাহায্য করবে তাকে তুমি। সলোযো একটু থেমে আবার বলল, সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাকে সাহায্য করছে টাটাগ্লিয়ারা। ডন না থাকায় তোমাদের শক্তি কতটা কমে গেল তা সনিকে বোঝাতে হবে তোমার। সামগ্রিক যুদ্ধ কেউই চায় না, তাই নিউইয়র্কের আর সব পরিবারগুলো চাইবে একটা আপোস হয়ে যাক, অর্থাৎ তারাও আমাকে সমর্থন দেবে। লড়াই রেধে গেলে ব্যবসার অপূরণীয় ক্ষতি হয়, সেই ঝুঁকি কেউ নিতে রাজি হবে না। সনিকে তোমার বোঝাতে হবে, ওদের সবার সমর্থন হারাবার মত বোকামি সে যেন না করে। তাছাড়া, আল জিনিসই হারিয়ে ফেলেছ তোমরা, লড়াই করে কিছু লাভ করতে পারবে না। মাথা নাড়তে শুরু করল সলোযা, তবে গোটা ব্যাপারটা এখন নির্ভর করছে সনির ওপর। সে আমার সাথে রাগ করলে এ দেশের সবকটা পরিবার ভাববে ব্যাপারটার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। ডন কর্লিয়নির সুহৃদরাও স্বস্তির সাথে তাই ভাববে।
মাথা নিচু করে নিজের হাতের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে আছে হেগেন। নিচু গলায় তাকে পটাতে চেষ্টা করছে সলোযো। আগের সেই প্রচণ্ড প্রতাপ ছিল না ডনের। তার শক্তি কমে যাচ্ছিল। তা নাহলে এমন বে-কায়দায় তাকে পাই? তারপর তোমার ব্যাপারটাই ধরো, তুমি ইতালীয় পর্যন্ত নও, সিসিলীয় হওয়া তো দূরের কথা, অথচ তোমাকে সে কনসিলিয়রি করল–অন্যান্য পরিবারগুলো ব্যাপারটা খুব খারাপ ভাবে নিয়েছে। ডন কর্লিয়নির ওপর তারা আস্থা হারিয়েছিল।
হেগেনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে সঁলোযো। এত কথায় কিছু কাজ হচ্ছে কিনা বোঝার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু হেগেনের মুখ যেন পাথর দিয়ে খোদাই করা, ভাবের কোন প্রকাশ সেখানে নেই।
আমাকে আবার ভুল বুঝো না, একটু ব্যঙ্গের সাথে বলল ধূর্ত সলোযো। ভেব না ডনকে খুন করে খুব ভয় পেয়ে গেছি। আসলে সামগ্রিক যুদ্ধ চাই না। তাতে তোমাদের একা নয়, সবার ক্ষতি হবে-আমারও। কিন্তু, যুদ্ধ যদি হয়ই, আমিও তৈরি।
একবার চোখ তুলল হেগেন। কিন্তু তার মুখ দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।
টাকার চেয়ে আমাদের বেশি দরকার কর্লিয়নিদের রাজনৈতিক প্রভাবের ছত্রছায়া, সলোযো বলল। তোমাদের ওই জিনিসটা এখনও আছে বলেই এত মূল্য পাচ্ছ। ডন মারা যাওয়ায় সেই প্রভার কদ্দিন তোমাদের থাকবে তা অবশ্য সঠিকভাবে কিছু বলা যায় না। সনিকে বোঝাও লড়াই করতে গেলে খুব তাড়াতাড়ি জিনিসটি হারাতে হবে তাকে। ওর একার সাথে নয়, ক্যাপোরেজিমিদের সাথেও আলোচনা করো, নিজেরা ভাল করে বুঝে দেখো, ঠিক করো কি চাও তোমরা-রক্তপাত, নাকি শান্তি?
হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিয়ে সেটা একটু দূরে নামিয়ে রাখল হেগেন। সাথে সাথে দরজার পাশে দাঁড়ানো লোকটা এগিয়ে এসে সেটা আবার ভরে দিল। নিরপেক্ষ সুরে হৈগেন বলল, চেষ্টা করব। এর বেশি কিছু এই মুহূর্তে আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনাকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি, সনির গোয়ার্তুমিটা ভয়ঙ্কর। তাছাড়া, লুকা ব্রাসিকে ঠেকাবার ক্ষমতা সনিরও নেই। আপনার সাথে সন্ধি করলে সনিকেও ক্ষমা করবে না সে। আমাকে তো নয়ই।
অদ্ভুত শান্ত ভঙ্গিতে সলোযো বলল, লুকার কথা ভেবে ভয় পেতে হবে না। তার ব্যবস্থা আমি করব, সে-দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দিতে পারো। তুমি তিন ভাইয়ের দায়িত্ব নাও। ওদের বলো, বাপের সাথে ফ্রেডিকেও খুন করা হত আজ। যাদেরকে এ কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলাম তারা তাই চেয়েছিল, কেননা এ ধরনের কাজে বাছ বিচার করে গুলি চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু বিপদের ঝুঁকি নিয়ে আমি কড়া নির্দেশ দিয়েছিলাম তাদেরকে, ফ্রেডিকে খুন করা চলবে না। বুঝতেই পারছ, ঠিক যতটুকু দরকার তারচেয়ে বেশি বিদ্বেষ আমি দেখাতে চাইনি। ফ্রেডি বেঁচে আছে, সেটা আমারই মহানুভবতা, এটা বলতে ভুল কোরো না সনিকে।
সব বুঝতে পারছে হেগেন। সলোযোর উদ্দেশ্য ওকে মেরে ফেলা নয়। জিমী হিসাবে আটকে রাখতে চাইছে না। এটুকু বুঝতে পারার সাথে সাথে অদ্ভুত একটা আনন্দের সোত অনুভব করল শরীরে, কিন্তু পরক্ষণে লজ্জায় আপনা থেকেই নিচু হয়ে গেল মাথাটা। ডনের চেয়ে নিজের জীবনকে সে বেশি ভালবাসে, এটা আজ এই প্রথম বুঝতে পেরে নিজেকে অপরাধী লাগছে তার।
হেগেনের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে সলোযো। আইরিশ কনসিলিয়রির মনের প্রতিটি ভাবনা স্পষ্ট পড়তে পারছে যেন সে।
পরিস্থিতিটা নিয়ে ভাবছে হেগেন। সলোহোর প্রস্তাবে তার সমর্থন আছে, এখানে বসে এ কথা তাকে বলতেই হবে, তা না হলে তুর্কী শয়তান তাকে ছাড়বে না, মেরেই ফেলবে। ব্যাটা চাইছে কি? চাইছে তাকে দিয়ে সনির কাছে প্রস্তাবটা নতুন করে উত্থাপন করতে চাইছে প্রস্তাবের পক্ষে যত যুক্তি আছে সব যেন সে সনিকে বুঝিয়ে বলে। তা বলতেও হেগেনের আপত্তি নেই। কনসিলিয়রি হিসাবে এটাই তো তার দায়িত্ব। আরও খানিক চিন্তা করে হেগেন বুঝল, সলোযোর কথার মধ্যে অযৌক্তিক কিছু নেই। টাটাগ্লিয়া আর কর্লিয়নিদের মধ্যে একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাধতে যাচ্ছে, কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু যে কোন ভাবে এটাকে ঠেকাতেই হবে। ঠেকাতে হবে ব্যবসার খাতিরে। মারামারি করে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরামর্শ সনিকে দিতে পারে না সে। কনসিলিয়রি হিসাবে তার দায়িত্ব সবার আগে ব্যবসার স্বার্থ দেখা। গড ফাদারকে সমাধিস্থ করেই সব ভুলে যেতে হবে। নতুন করে শান্তিচুক্তি করতে হবে। তারপর অপেক্ষা করতে হবে অনুকূল সময়ের জন্যে, তখন ব্যবস্থা নেয়া যাবে সলোযো আর টার্টগ্লিয়াদের বিরুদ্ধে।
মুখ তুলল হেগেন। চোখাচোখি হতেই সলোযো সবজান্তার ভঙ্গিতে হাসল একটু।
শরীরটা শিরশির করে উঠল হেগেনের। তার ভাবনা-চিন্তা সবটুকুই গড় গড় করে পড়ে ফেলেছে সলোগো।
খানিক আগে থেকেই কি একটা ব্যাপারে মনটা খুঁত খুঁত করছিল, হঠাৎ কারণটা আবিষ্কার করে ফেলল হেগেন। লুকা ব্রাসি! তার ব্যাপারে একটুও দুশ্চিন্তা করছে না সলোযো। ব্যাপার কি? ডনের সাথে লুকা বেঈমানী করল নাকি? দূর, নিজেকে ধিক্কার দিল হেগেন, কস্মিনকালেও তা সম্ভব নয়। সেই সাথে একটা কথা মনে পড়ে গেল তার। সলোযোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেই নিজের অফিসে লুকাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ডন। গোপনে তাকে কিছু বলেছিলেন তিনি।
এসব ব্যাপার এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়, ভাবছে হেগেন। সবচেয়ে আগে লং বীচে, কর্লিয়নিদের দুর্ভেদ্য কেল্লার নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যেতে হবে তাকে। আপনার কথার মধ্যে মুক্তি আছে, একথা বত ডনও স্বীকার করতেন। এই পরিস্থিতিতে ডন কি রতেন, তাও বুঝতে পারি আমি। তিনি আপনার প্রস্তাব মেনে নিতেন।
হ্যাঁ, সলোমো একটু গম্ভীর হয়ে বলল, তোমার সাথে আমি একমত। সেকেলে বলেই তাকে মরতে হলো, কিন্তু তার ব্যবসা-বুদ্ধির প্রশংসা না করে উপায় নেই।
কিন্তু সনিকে রাজি করাতে পারব, এখানে বসে সে প্রতিশ্রুতি আপনাকে আমি দিতে পারি না, ধীর গলায় কথাগুলো বলল হেগেন। এইটুকু বলতে পারি, আমার তরফ থেকে চেষ্টার কোন ত্রুটি হবে না।
মাথা ঝাঁকিয়ে নরম গলায় সলোযো বলল, গুড, ওইটুকুই চাই আমি তোমার কাছ থেকে। ব্যবসায়ী মানুষ আমি, রক্তপাতের দাম বহুত চড়া, তাই ওসব ভালবাসি না।
ঝন ঝন করে বেজে উঠল টেলিফোনটা। হেগেনের পিছনে দাঁড়ানো একজন লোক এগিয়ে এসে রিসিভার তুলল। কি শুনল সে কে জানে, মুখটা কালো হয়ে গেল নিমেষে, বলল, আচ্ছা, দিদি, খবরটা।
সনোযোর দিকে তাকাল লোকটা। রিনির নামিয়ে রাখছে ক্র্যাডলে। তার। দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। হেলে লক্ষ করল, লোকটার কাপুনি ধরে গেছে। এগিয়ে গিয়ে সলোমোর পাশে গিঁয়ে দাঁড়াল সে, নিচু হয়ে তার কানে কানে কিছু বলল।
মুহূর্তে রক্তশূন্য ফ্যাকাসে হয়ে গেল সলোযোর চেহারা। হিংস্র একটা আক্রোশ ফুটে উঠল দুই চোখে।
অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠল হেগেনের। সলোযো তীব্র দৃষ্টিতে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, সাংঘাতিক কোন মতলব ফঁদছে যেন।
ঘন অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমকে উঠল যেন, হেগেন পরিষ্কার বুঝে ফেলল তাকে এখন আর ছেড়ে দেয়া হবে না। প্রতিকূল এমন কিছু ঘটেছে, এখন আর তাকে মেরে না ফেলে সলোযোর কোন উপায় নেই।
শালা বুড়ো মরেনি! দাঁতে দাঁত ঘষে বলল সলোযো। চেহারাটা বিকৃত হয়ে উঠেছে তার, ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর দেখাচ্ছে তাকে। পাঁচটা গুলি খেয়েও টিকে আছে এখনও।
হেগেনের দম বন্ধ হয়ে এল। অদ্ভুত একটা স্বস্তির পরশ অনুভব করল সে। হঠাৎ উপলব্ধি করছে, এখন আর সে নিঃসঙ্গ নয়। গডফাদার যেন ঠিক তার পাশেই উপস্থিত রয়েছেন।
কাঁধ ঝাঁকাল সলোযো। ভঙ্গিটা আত্মসমর্পণের। উপায়ও নেই তার এখন নিজেকে সম্পূর্ণ ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেয়া ছাড়া। ডন কর্লিয়নি বেঁচে থাকা মানে গোটা পরিস্থিতি ওর বিরুদ্ধে চলে যাওয়া।
হেগেনের চোখে চোখ রেখে আবার কাঁধ ঝাঁকাল সলোযো। মুখে অসহায়। ভাব ফুটিয়ে বলল, আমিও ডুবলাম, তুমিও ডুবলে-দুৰ্ভগ্য আর কাকে বলে!