২.৩ রেসের তিনটে বাজির স্লিপ

০৩.

অফিসে বসে রেসের তিনটে বাজির স্লিপ নাড়াচাড়া করছে ক্যাপ্টেন ম্যাককাশ্মি। কপালে চিন্তার রেখা, ভাবছে, স্লিপে লেখা সাংকেতিক শব্দগুলো পড়তে পারলে কাজ হত। গত রাতে ওর লোকেরা কর্লিয়নিদের এক বুকমেকারের আস্তানায় হানা দিয়ে সংগ্রহ করেছে এগুলো। দাম দিয়ে এগুলো আবার ফিরিয়ে নিতে হবে বুকমেকারকে, তা না হলে খেলোয়াড়েরা তাদের জেতা টাকা দাবি করতে পারবে না–আর তা যদি ঘটে, বুকমেকারের পিঠের ছাল তুলে ফেলবে তারা।

স্লিপে লেখা কথাগুলোর অর্থ উদ্ধার করা ম্যাকক্লাস্কির জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা না হলে বুকমেকারের কাছে এগুলো ক্বিক্রি করার সময় ঠকতে হবে তাকে। কারবার যদি পঞ্চাশ হাজার ডলারের হয় তাহলে পাঁচ হাজার দাবি করা যেতে পারে, কিন্তু বাজিগুলো যদি অস্বাভাবিক বড় ধরনের হয়ে থাকে। যদি লাখ লাখের ব্যাপার হয়, তাহলে তো সেই অনুপাতে দামও অনেক বাড়বে। ঠিক আছে, বুকি ব্যাটা খানিক ভেবে মরুক, তারপর সেই একটা প্রস্তাব দিক, তখন বোঝা যাবে ঠিক কত দাম চাওয়া যেতে পারে।

দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ম্যাকক্লাস্কি দেখল তুর্ক সলো:কে তুলে নেবার সময় হয়েছে, কর্লিয়নিদের সাথে কথা বলার জন্যে কোথায় যে কে নিয়ে যেতে হবে। পোশাক পাল্টে ইউনিফর্ম পরল সে, স্ত্রীকে ফোনে ডেকে বলে দিল আজ রাতে বাড়িতে খাবে না, জুরুরী একটা কাজে যাচ্ছে সে, ফিরতে দেরি হবে। পেশা সংক্রান্ত কোন কথা স্ত্রীকে কখনও জানায় না সে, তার কারণ স্ত্রীর ধারণা পুলিশ স্বামীর বেতনেকটাকাতেই তাদের সংসারে এই সচ্ছলতা। আপন মনে হাসল সে, মনে পড়ে গেছে তার মায়েরও এই রকম ধারণা ছিল। কিন্তু তার নিজের ব্যাপারটা আলাদা, খুব কম বয়সেই সব শেখা হয়ে গিয়েছিল তার। বাবাই তাকে পথ চিনিয়ে ছিলেন।

পুলিশ সার্জেন্ট ছিলেন বাবা। ছেলেকে সাথে নিয়ে হপ্তায় ছয়বার নিজের এলাকায় যেতেন তিনি, দোকানদারদেরকে বলতেন, এটি আমার ছেলে। দোকানদাররা ওর গায়ে মাথায় আদরের হাত বুলাত, ওর সাথে করমর্দন করত, ওর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করত, পাঁচ-দশ ডলার উপহারও দিত। দিনের শেষে দেখা যেত, খুদে ম্যাকক্লাস্কির সবগুলো পকেট কাগুঁজে নোটে বোঝাই হয়ে গেছে। ছোট তো, তাই ভাবত যে তার বাবার বন্ধুরা এত ভাল আর ধনী যে যতবার দেখা হয় ততবারই তাকে টাকা উপহার দেয়। টাকাগুলো ব্যাংকে তার নামে জমা রাখতেন বাবা, তার কলেজের খরচ মেটানো হবে বলে। খোকা মার্কের কপালে বড়জোর পঞ্চাশ সেন্ট জুটত হত-খরচের জন্যে।

বাড়িতে পুলিশ কাকারা জানতে চাইত, বড় হলে তুমি কি হবে? সাথে সাথে জবাব দিত সে, পুলিশ হব। গলা ছেড়ে হাসত সবাই। বাবার ইচ্ছা ছিল আগে কলেজের পড়া শেষ করুক সে, তারপর না হয় পুলিশেই ভর্তি হবে, কিন্তু হাই স্কুল শেষ করেই পুলিশে ঢোকার জন্যে পড়াশোনা শুরু করে দিল সে।

পুলিশ হিসেবে খুব সাহসী আর কড়া ম্যাকক্লাস্কি, প্রথম দিকে রাস্তার মোড়ে যত গুণ্ডা আর রংবাজ শয়তানি করে বেড়াত তারা ওকে আসতে দেখলেই ছুটে পালাতে দিশা পেত না। টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তারা ওর এলাকা ছেড়েই চলে গেছে। ওর বিচক্ষণতারও প্রশংসা করতে হয়, নিজের ছেলেকে কখনও দোকানদারদের কাছে নিয়ে যায় না। ঘুষ খায়, নিজেই হাত পেতে খায়। আর সব পুলিশের মত পায়ে হেঁটে টহল দেবার সময় শীতের ভয়ে সিনেমায় বা কোন রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়বে না সে। ব্যবসায়ী আর দোকানদারদের নিরাপত্তার দিকটা তো দেখেই, তাদের অনেক সুবিধেও করে দেয়। মদ্যপ মাতাল, আর গুণ্ডা পাণ্ডারা বাওয়ারির দিক থেকে ওর এলাকায় এসে উৎপাত শুরু করলে রক্ষচক্ষু মেলে এমনভাবে তাড়া করে যে বাছাধনেরা ভুলেও আর এদিকে পা বাড়াতে সাহস পায় না। এসব কারণে দোকানদাররা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

সব ব্যাপারে একটা নিয়ম মেনে চলতে চেষ্টা করে ম্যাকক্লাস্কি। তার এলাকার বুকিরা সবাই জানে নিজে বেশি লাভ করার জন্যে সে কখনও ওদেরকে বিপদে ফেলবে না। থানার কমিশনের বরাদ্দ ভাগ নিয়েই খুশি সে। আসলে কাজে ফাঁকি দেয় না লোকটা, ঘুষ খায় ন্যায্য ভাবে, তাই চাকরিতে তার পদোন্নতি নিয়মিত ভাবেই হয়ে আসছে।

চারটে ছেলে নিয়ে বড় একটা পরিবার প্রতিপালন করছে সে। ছেলেদের কাউকে পুলিশে পাঠায়নি। সকলেই ফর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। ক্যাপ্টেনের পদে ওঠার পর তার পরিবারকে কখনও অভাবের মুখ দেখতে হয়নি। তবে একটা সময় এল যখন সবাই বলতে শুরু করল যে ম্যাকক্লাস্কির টাকার বাইবেড়ে গেছে। শহরের আর সব এলাকার চেয়ে তার এলাকার বুকমেকারদেরকে বেশি ঘুষ দিতে হচ্ছে। এর কারণ সম্ভবত চারটে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাবার জন্যে একটু বেশি লোভী হয়ে উঠতে হয়েছে তাকে।

ম্যাকক্লাস্কির পুরানো বন্ধুর মধ্যে একজন হলো ব্রুনো টাটাগ্লিয়া। তার এক ছেলের সাথে নো ফর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে। পড়া শেষ করে একটা নাইট-ক্লাব খুলেছে ব্রুনো, কখনও যদি সপরিবারে শহরে বেড়াতে আসে ম্যাকক্কাস্কি, এই নাইট-ক্লাবে নিখরচায় ভুরিভোজন আর ক্যাবারে শো তার উপরি পাওনা হয়। প্রত্যেক নতুন বছরের আগের সন্ধ্যায় ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকে মেহমান হবার জন্যে এনগ্রেভ করা দাওয়াতপত্র পায় তারা। তাদের জন্যে সবচেয়ে ভাল টেবিলগুলোর একটা বেছে রাখা হয়। ব্রুনোর উদ্দেশ্য ছিল ওর নাইটক্লাবে নাম করা যে সব মেহমানরা নাচ-গান করতে আসে তাদের সাথে ম্যাককারি। পরিচয় করিয়ে দেয়া। পরিচয় হয়। এদের মধ্যে অনেকে হলিউডের বিখ্যাত গাইয়ে আর তারকাও আছে। তবে মাঝেসাঝে ছোটখাটো ব্যাপারে সাহায্য দরকার হয় ব্রুনোর। হয়তো ক্যাবারেতে কাজ করার লাইসেন্স পাবার জন্যে কোন মেয়ে-কর্মীর রেকর্ড অনুমোদিত হওয়া দরকার, অথচ সুন্দরী মেয়েকমটির নামে পুলিশের খাতায় খারাপ রেকর্ড আছে। এ-ধরনের কাজ খুশির সাথেই করে দেয় ম্যাকক্লাস্কি।

কারও কীর্তিকলাপ সম্পর্কে যদি কিছু টের পায় তা তাকে বা আর কাউকে বুঝতে দেয় না সে। তাই সলোযো যখন তাকে অনুরোধ করল যে ডন কর্লিয়নিকে হাসপাতালে অরক্ষিত অবস্থায় রাখতে হবে, কোন প্রশ্ন করেনি সে। কিন্তু কাজটার জন্যে কত টাকা পাবে তা জেনে নিতেও ভুল করেনি। সলোযো দশ হাজার ডলারের কথা বলতেই সব রহস্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল তার কাছে। কাজটা করে। দেবার প্রতিশ্রুতি দিতে কোনরকম ইতস্তত ভাক দেখায়নি সে। তার জানা আছে, ডন কর্লিয়নি দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী মাফিয়া দলের মাথা। তার যত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক আছে, আল কাপুরও তা নেই। তার বিশ্বাস, এই লোককে খতম করা গেলে দেশের একটা মস্ত উপকার হবে। অগ্রিম টাকা নিয়ে নিখুঁতভাবে সলোযোর কাজটা করে দিল সে।

কিন্তু খানিক পর সলোযো খবর দিল এখনও কর্লিয়নিদের দুজন লোক হাসপাতালে রয়েছে, খবরটা শুনে প্রচণ্ড রাগে প্রায় অন্ধ হয়ে গেল ম্যাককুাস্কি। টেসিওর সব লোককে কয়েদ করেছে সে, ডন কর্লিয়নির কামরার দরজা থেকে সরিয়ে দিয়েছে ডিটেকটিভদেরকে, অথচ এখন কিনা দশ হাজার ডলার ফিরিয়ে দিতে হবে তাকে। এই রাগেই হাসপাতালে মাইকেলকে ঘুসি মেরেছিল সে।

তবে শেষ পর্যন্ত যা হবার তা ভালই হয়েছে। টাটাগ্লিয়া নাইটক্লাবে তার সাথে দেখা হয়েছিল সলোযোর, এবং ওর সাথে আগের চেয়ে লাভজনক রফায় পৌঁছানো গেছে। এবারও কোন প্রশ্ন করেনি সে, শুধু টাকার ব্যাপারটা জেনে নিয়েছে। ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি সে এর মধ্যে তার জন্যে কোন বিপদ থাকতে পারে। তা ভাবার কোন কারণও নেই। অতি বড় দুঃসাহসীও একজন পুলিশ ক্যাপ্টেনকে খুন করার কথা ভাবতে পারে না। মাফিয়াদের সবচেয়ে শক্তিশালী গুণ্ডাও নিচু স্তরের একজন পুলিশের চড় খেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে, এটাই স্বাভাবিক। আসনে পুলিশ মেরে লাভ নেই। তেমন ঘটনা যদি ঘটে শুধু শুধু একগাদা গুণ্ডা গ্রেফতার এড়াতে গিয়ে গুলি খেয়ে মারা পড়বে। এ ধরনের ব্যাপারে পুলিশ বিভাগ কখনও আপস করবে না। গোলমালটা লেগেই থাকবে, এর কোন সুরাহা হবে না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে থানা থেকে বেরুবার জন্যে তৈরি হচ্ছে ম্যাকক্লাস্কি। মাথার ভিতর নানা সমস্যা গিজগিজ করছে তার। সবে আয়ারল্যাণ্ডে মারা গেছে তার শ্যালিকা, ক্যানসার বাধিয়ে প্রচুর টাকা খসিয়ে দিয়ে গেছে তার, এখন তাকে কবর দেবার জন্যে আরও টাকা খরচ করতে হবে। দেশে রয়েছে বুড়ো কাকা আর ফুফুরা, তাদেরও সাহায্য করতে হয়। যাই হোক, হাতে এতগুলো টাকা এসে যাচ্ছে, এবার স্ত্রীকে নিয়ে আরেকবার দেশে যাওয়া যেতে পারে, বিশেষ করে যুদ্ধ যখন থেমে গেছে। তাকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে তা একজন কেরানীকে জানিয়ে বেরিয়ে পড়ল সে। কোনরকম সতর্কতা অবলম্বন করার কথা ভাবল না। যদি প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন বললেই হবে যে সলোযো কিছু তথ্য দেবে বলে ডেকে পাঠিয়েছিল। একটা ট্যাক্সি নিয়ে সনোযোর দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী একটা বাড়িতে এসে পৌঁছল সে।

.

মাইকেলের দেশ ত্যাগের সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে টম হেগেন। নকল পাসপোর্ট, ন্যাভাল কার্ড, একটা ইতালীয় মালবাহী জাহাজে ওর জন্যে বার্থ—সব ব্যবস্থা সারা। একটা সিসিলীয় বন্দরে গিয়ে পৌঁছুবে জাহাজটা। এরই মধ্যে প্লেনে চড়ে ওদের অনুচর চলে গেছে, সে সিসিলির পাহাড়ী এলাকার একজন মাফিয়া নেতার কাছে মাইকেলের লুকিয়ে থাকার ব্যবস্থা করবে।

একটা গাড়ি আর একজন অতি বিশ্বস্ত ড্রাইভারের বন্দোবস্ত করে রেখেছে সনি। সলোযোর সাথে যে রেস্তোরাঁয় দেখা করার ব্যবস্থা হয়েছে সেখান থেকে বেরিয়েই ওই গাড়িতে উঠতে পারবে মাইকেল। ড্রাইভার স্বয়ং টেসিও। নিজে যেচে পড়ে কাজটা নিয়েছে ও। গাড়িটার চেহারা খুবই খারাপ, যেন যে-কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়বে, কিন্তু এঞ্জিনটা প্রায় আনকোরা নতুন। নকল লাইসেন্স প্লেট ঝুলানো থাকবে গাড়িতে, কেউ এর হদিস খুঁজে বের করতে পারবে না। এই গাড়িটা তুলৈ রাখা হয়েছিল বিশেষ প্রয়োজনের কথা মনে রেখেই।

 যে পিস্তলটা ওকে দেয়া হবে সেটা ক্লেমেঞ্জার সাথে প্র্যাকটিস করে দিনটা কাটল মাইকেলের। ২২ পিস্তলটায় নরম নাকের বুলেট ভরা হয়েছে, বৈশিষ্ট্য হলো ঢোকার সময় পিন ফোঁটার খুদে ফুটো আর বেরুবার সময় বিরাট হাঁ করা গর্ত তৈরি করে। প্র্যাকটিস করতে গিয়ে মাইকেল আবিষ্কার করল টার্গেটের কাছ থেকে পাঁচ পা দূরে থাকলে লক্ষ্য অব্যর্থ হয়। এর চেয়ে দূর থেকে গুলি ছুঁড়লে গুলিটা, এদিক সেদিক সরে যেতে চায়। ট্রিগারটা বড় শক্ত, তরে কয়েকটা যন্ত্র দিয়ে ঠোকাঠুকি করে সেটাকে ঢিলে করে দিল ক্লেমেঞ্জা। আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বিস্ফোরণের শব্দ চাপা দেয়া হবে না। পরিস্থিতিটা বুঝতে না পেরে কোন নির্দোষ পথিক মিছেমিছি বীরত্ব, দেখাবার অর্থাৎ নাক গলাবার চেষ্টা করুক তা ওরা চায় না। পিস্তলের আওয়াজ শুনতে পেলে মাইকেলের কাছ থেকে দূরে সরে থাকবে তারা।

মাইকেলকে তালিম দেবার সময় বার বার পাখি-পড়ানো করছে ক্লেমেঞ্জা, গুলি করা হয়ে গেলেই হাত থেকে ফেলে দিবে পিস্তলটা। শরীরের পাশে ঝুলিয়ে দেবে হাতটা, ছুঁড়ে নয়, বেফ ছেড়ে দেবে পিস্তলটা। কেউ দেখতে পাবে না। সবাই মনে করবে তখনও তোমার হাতে আছে সেটা। কারণ সবাই ওরা তাকিয়ে থাকবে তোমার মুখের দিকে। তারপর? অভয় দিয়ে মিটিমিটি হাসছে ক্লেমেঞ্জা।

তারপর, আবার বলতে শুরু করল সে, খুব তাড়াতাড়ি, হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে আসবে ওখান থেকে। কিন্তু খবরদার, দৌড় দেবে না। সরাসরি কারও চোখের দিকে তাকাবে না, আবার কারও দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেবারও দরকার নেই। বিশ্বাস করো, ওরা সবাই ভয় করবে তোমাকে যমের মত। কেউ বাধা দিতে এগিয়ে আসবে না। বাইরে বেরিয়ে এসেই দেখবে গাড়ি নিয়ে তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে টেসিও। দ্রুত উঠে বসবে তুমি, তারপর আর কিছু করার নেই তোমার, বাকিটা টেসিওর ওপর নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিয়ে। দুর্ঘটনা ঘটবে মনে করে ভয় কোরো না। এই আমি বলছি এসব এমন সুই আর সহজভাবে সমাধা হবে যে দেখে তুমি অবাক হয়ে যাবে। এই টুপিটা পরো এবার। দেখি কেমন মানায়।

ছাই রঙের একটা ফিডরা টুপি মাইকেলকে পরিয়ে দিল ক্লেমেঞ্জা। মুখ বাঁকাল মাইকেল, টুপি পরার অভ্যাস নেই ওর।

 ওকে আশ্বাস দিয়ে ক্লেমেঞ্জা বলল, সে-রকম পরিস্থিতি যদি দেখা দেয়, এই টুপি থাকায় তোমাকে চিনতে অসুবিধে হবে। সাধারণত সাক্ষীদেরকে যদি আমাদের অনুকূলে কথা বলতে রাজি করাতে পারি, এই টুপি তখন ওদের মত পাল্টাবার একটা অছিলা এনে দেয়। মনে রেখো, আঙুলের ছাপ নিয়ে মাখা ঘামাতে হবে না তোমাকে। পিস্তলের ট্রিগার আর হাতলে বিশেষ টেপ লাগানো থাকছে। তবে পিলের অন্য কোথাও হাত দিয়ো না।

সনি কি জানতে পেরেছে আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে সলোযো? প্রশ্ন করুল মাইকেল।

মৃদু কাঁধ ঝাঁকাল ক্লেমেঞ্জা। বলল, না, এখনও জানতে পারেনি। সাংঘাতিক সতর্কতার সাথে কাজ করছে সলোযো। কিন্তু তাই বলে ভেব না সে তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে। তুমি না ফেরা পর্যন্ত তো মধ্যস্থতাকারী আমাদের হাতে থাকছেই। তোমার কিছু হলে ওকে তার দাম দিতে হবে।

সে বিপদের ঝুঁকি নিচ্ছে কেন? জানতে চাইল মাইকেল।

মোটা লাভ পাবে, তাই। ছোটখাটো একটা রাজার ভাণ্ডার বলতে পারো। তাছাড়া, পরিবারগুলোর মধ্যে এই লোকের যথেষ্ট সম্মান রয়েছে, সে জানে, তার কোন ক্ষতি হতে দেবার সাধ্য সলোযোর নেই। আসলে এই মধ্যস্থর্টির প্রাণের মূল্য তোমার প্রাণের মূল্যের চেয়ে বেশি। পানির মত সহজ ব্যাপার। কোন বিপদ হতে পারে না তোমার। পরে অবশ্য যা করছি সেজন্য আমাদেরকে ভূগতে হবে।

অবস্থা কতটা খারাপ দাঁড়াবে বলে মনে করো তুমি? জানতে চাইল মাইকেল।

যতটা খারাপ হতে পারে, বলল ক্লেমেঞ্জা! কর্লিয়নিদের সাথে টাটাগ্লিয়া পরিবারের সামগ্রিক যুদ্ধ। অন্যান্য পরিবারগুলো প্রায় সবাই ওদের ক্ষ নেবে। প্রচণ্ড শীতে স্বাস্থ্য সংরক্ষণ বিভাগকে এক গাদা লাশ সরাতে হবে। শ্রাগ করে একটু গম্ভীর হলো ক্লেমেঞ্জা। সাধারণত দশ বছর পর পর একবার করে এইধরনের গোলমাল দেখা দেয়। ব্যাপারটা ঠিক খারাপ না, এতে দৃষিত রক্ত সব দূর হয়ে যায়। আমরা ওদেরকে এমনিতে ছেড়ে দিতে পারি না। কারণ ছোটখাটো ব্যাপারে ওদের কাছে যদি হার মানি, একেবারে পেয়ে বসবে ওরা আমাদেরকে, আমাদের যথাসর্ব গিলে নিতে চাইবে। প্রথমেই ওদের জড় কেটে দেয়া ভাল। ঠিক যেমন উচিত ছিল মিউনিকেই হিটলারের জড় কেটে দেয়া ওখানে তাকে ছেড়ে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি।

মাইকেলের মনে আছে, উনিশশো উনচল্লিশ সালে যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে, বাবাও এই কথা বলত। নিঃশব্দে হেসে ভাবল সে, নিউ ইয়র্কের পাঁচ পরিবারের হাতে যদি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব থাকত তাহলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ঘটতই না।

প্রাঙ্গণে ডনের বাড়িতে ফিরে এল ওরা, এখনও এটা সনির হেডকোয়ার্টার। ভাবছে মাইকেল, আর কত দিন প্রাঙ্গণের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারবে সনি? বেরুতে তো ওকে হবেই।

দুপুরে দেরি করে খেয়েছে সনি, একটা কফি টেবিলে অভুক্ত খাবার পড়ে আছে-স্টেকের টুকরো, রুটির ছাল, আধ বোতল হুইস্কি। একটা কাউচে শুয়ে আছে সনি, ঘুমাচ্ছে সে।

ডরে পরিষ্কার কামরাটা নোংরা হয়ে গেছে। বড় ভাইকে ধরে ঝাঁকি দিয়ে জাগাল মাইকেল। বলল, এই রকম ছন্নছাড়ার মত কত দিন থাকবে আর এখানে? জায়গাটা একটু পরিষ্কার করিয়ে নিলে তো পারো।

একটা হাই তুলল সনি এ্যাই, তুই কি এখানে ব্যারাক পরিদর্শনে এসেছিস? মাইক, চিন্তায় আছি রে, এখনও খবর পেলাম না কোথায়, তোকে নিয়ে যাবে সলোগো ব্যাটা। তা না জানতে পারলে পিস্তলটা কিভাবে পৌঁছে দেব তোর কাছে!

সাথে নিতে পারব না? জানতে চাইল মাইকেল। ওরা হয়তো আমাকে সার্চ করবে না। অথবা আমরা যদি তেমন বুদ্ধি খরচ করি, ওরা টেরও পাবে না। আর যদি টের পায়ও, কি এসে যায় তাতে? কেড়ে নেবে, এই তো, তা নিক।

এদিক ওদিক মাথা নাড়ল সনি। বলল, না। সলোযো শয়তানটাকে এই সুযোগে খতম না করলেই নয়। মনে রাখিস, যদি সম্ভব হয় ওকেই আগে মারবি। ম্যাকক্লাস্কিবোকা, সে আরও আস্তে ধীরে নড়াচড়া করে। তাকে খতম করার যথেষ্ট সময় পাবি তুই। পিস্তলটা মাটিতে ফেলে দিতে হবে এ-কথা তোকে বলেছে ক্লেমেঞ্জা?

কম করেও দশ লক্ষ বার বলেছে, বলল মাইকেল।

সোফা থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙল সনি। তোর চোয়ালের নতুন কোন খবর আছে নাকি?

আগের মতই, ভাল না, বলল মাইকেল। ওর মুখের বাঁ দিকের খানিকটা অসাড় হয়ে আছে, তার কারণ ভাঙা চোয়াল বাধা হয়েছে ওষুধ মাখা তার দিয়ে, মুখের বাকি অংশ টনটন করছে ব্যথায়। হুইস্কির বোতলটা টেবিল থেকে তুলে নিয়ে লম্বা একটা চুমুক দিতে একটু কমল ব্যথা।

সাবধান, মাইক, বলল, সনি, মদ খেয়ে হাতের টিপ কমাবার সময় নয় এটা।

হয়েছে, হয়েছে। তোমাকে আর দাদাগিরি ফলাতে হবে না, সনি। আরও সঙ্গীন অবস্থায় সলোযোর চেয়ে ধুরন্ধর শত্রুর সাথে লড়াই করার অভিজ্ঞতা আছে আমার। ওর মর্টার আছে? মাথার ওপর ফাইটার বিমান আছে? ভারি কামান, ল্যাণ্ড লাইন? ও তো স্রেফ একটা অতি চালাক বেজন্ম, আর সঙ্গীটা তার অযোগ্য এক পেয়াদা। একবার যদি মন ঠিক করে ফেলা যায় যে ব্যাটাদের মারতে হবে, ব্যস, হয়ে গেল, তারপর আর কোন সমস্যা নেই। কে যে ওদেরকে খতম করল তা টেরই পাবে না।

ঝনঝন শব্দে বেজে উঠল ফোন। একহাতে রিসিভার ধরে আরেক হাত এমন ভারে তুলল সনি, যেন ওদেরকে চুপ করে থাকতে বলছে, যদিও কেউই কোন কথা বলছে না ওরা। একটা প্যাডে কিছু টুকে নিল সনি। ঠিক আছে, ওখানে যাবে ও, বলে রিসিভার নামিয়ে রাখল ও।

হাসছে সনি। বলল, শালা মহাশয়তান, সলোযোর কথা বলছি। কি ব্যবস্থা করেছে সে, শোনো। ও আর ক্যাপ্টেন ম্যাককাঙ্কি আজ রাত আটটার সময় ডওঁয়ের ওপর জ্যাক ডেম্পলির বারের সামনে থেকে তুলে নেবে মাইকেলকে। ওখান থেকে ওদের নির্বাচিত কোন জায়গায় যাবে ওরা আলোচনার জন্যে। আরও ব্যাপার আছে। মাইক কথা বলবে সলোযোর সাথে, অন্য কোন ভাষায় নয়, ইতালীয় ভাষায়। এই ব্যবস্থার একমাত্র কারণ আলোচনাটা ক্যাপ্টেনকে বুঝতে দিতে চায় না। সে। প্রসঙ্গক্রমে বলল, ক্যাপ্টেন, ইতালী ভাষার একটা বর্ণও বোঝে না। আরও বলল, তুমি যে সিসিলীয় পর-ভাবাও বোঝো সে-খবরও রাখে ও।

বুঝি, তবে খুব ভাল বুঝি না। যাই হোক, বেশিক্ষণ তো আর কথা বলতে হবে না, নীরস গলায় বলল মাইকেল।

জামিন লোকটা আগে আসবে, তারপর আমরা মাইককে ছাড়ব, ঠিক তো? জানতে চাইল টম হেগেন।

মাথা নেড়ে সায় দিল ক্লেমেঞ্জা । এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে সে, আমার বাড়িতে বসে আমার তিনজন লোকের সাথে পিকল খেলছে। আমার কাছ থেকে হুকুম পেলে তবে তাকে ছাড়বে ওরা।

আরাম কেদারায় বসে হেলান দিল সনি। আলোচনার জায়গাটা চেনার কি উপায় তাহলে? টম, আমাদের চর তো টাটাঙ্গিয়া পরিবারের মধ্যেই রয়েছে, তারা কোন খবর দিচ্ছে না, ব্যাপারটা কি?

শ্রাগ করে হেগেন বলল, এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সব রকম সতর্কতা অবলম্বন করে কাজ করছে সলোযো, এমন কি নিরাপত্তার জন্যেও কোন লোক রাখছে না। তার ধারণা সাথে ক্যাপ্টেন থাকলেই যথেষ্ট, এক ডজন বন্দুকধারী যে নিরাপত্তা দিতে পারে তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তা পেয়ে যাচ্ছে সে। তার এই ধারণা যুক্তিসঙ্গত তাতে কোন সন্দেহ নেই। এখন একমাত্র উপায় যা দেখতে পাচ্ছি, মাইকের পিছনে ফেউ লাগিয়ে আশায় আশায় থাকতে হবে আমাদেরকে।

এদিক ওদিক মাথা নাড়ল সনি। উঁহু, যে-কেউ ইচ্ছা করলে ঝেড়ে ফেলতে পারে ফেউ। ফেউ পিছু নিয়েছে কিনা তা ওরা প্রথমেই দেখে নেবে।

শেষ বিকেলে পৌঁছে গেছে বেলা, পাঁচটা বাজে। কপালে চিন্তার রেখা, উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে সনিকে। তাহলে বোধ হয় মাইকেলকে গাড়িতে তুলে নেবার জন্যে যে আসবে তাকে গুলি করাই ভাল।

কিন্তু গাড়িতে যদি না থাকে সলোযো? বলল হেগেন। তাতে শুধু মিছিমিছি নিজেদের হাতের কার্ড দেখানো হয়ে যাবে। কি যন্ত্রণা, ওরা কোথায় নিয়ে যাবে মাইককে সেটা তো জানা দরকার!

প্রকাণ্ড গম্ভীর মুখটাকে আরও গভীর করে তুলে বলল ক্লেমেঞ্জা, সলোযোই বা এত লুকোছাপা করছে কেন, সেটাও আমাদেরকে ভাল করে ভেবে চিন্তে দেখতে

বিরক্তির সাথে বলল মাইকেল, হারজিত বা লাভ-লোকসানের ব্যাপারটাই তো ওখানে। কিছু যদি গোপন করা সব হয়, কেনই বা জানাবে? তাছাড়া বিপদের গন্ধও কি পাচ্ছে না? পাশে পুলিশ ক্যাপ্টেন থাকলেও হাত-পা ঠাণ্ডা বরফ তার।

 আঙুল মটকাচ্ছে হেগেন, বলল, আচ্ছা, সনি, ডিটেকটিভ ফিলিপসকে একবার ফোন করে দেখলে হয় না? ক্যাপ্টেনের সাথে যোগাযোগ করতে হলে কোথায় তাকে পাওয়া যাবে তা হয়তো সে বলতে পারবে। ও কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে তা কেউ জাল কি না জাল তা মোটেও পরোয়া করবে না ম্যাকক্লাস্কি।

ফোন তুলে একটা নাম্বারে ডায়াল করুল সনি। চাপা কণ্ঠে কিছু বলে রিসিভারট্টা নামিয়ে রেখে দিল ও, বলল, একটু পর জানাবে।

ঝাড়া ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করার পর ফোনের বেল বেজে উঠল। রিসিভার তুলে ফিলিপসের কথা শুনছে সনি, প্যাডে নোট করছে দ্রুত। রিসিভার রেখে দিয়ে মুখ তুলে তাকাল সে, পেশীগুলো শক্ত হয়ে গেছে। বলল, মনে হচ্ছে পাওয়া গেছে। অভ্যাস মত আজও ম্যাকক্লাস্কি বলে গেছে কোথায় তাকে পাওয়া যাবে। ব্রঙ্কসে লুনা অ্যাজিওর রেস্তোরাঁয় থাকরে সে, আজ রাত আটটা থেকে দশটা পর্ষন্ত। কেউ চেনো নাকি জায়গাটা?

আমি চিনি, বলল টেসিও। আমাদের জন্যে খুব ভাল জায়গা। ছোট একটা ঘরোয়া পরিবেশ, কেবিনগুলো বেশ বড় বড়, নিরিবিলিতে কথা বলার আদর্শ জায়গা। ওখানের খাবারটাও খুব ভাল। যে যার নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে ওখানে সরাই। ভালই হয়েছে। সনির ডেস্কের ওপর ঝুঁকে পড়ে কয়েকটা পোড়া সিগারেটের টুকরো দিয়ে একটা নকশা তৈরি করছে সে। এটা প্রবেশ পথ। মাইক, কাজ শেষ করে বা দিকে ঘুরতে হবে তোমাকে, তারপর একটা মোড়নেবে। আমি খুঁজে নেব তোমাকে, গাড়ির হেডলাইট জেলে রাখব, চলন্ত গাড়িতে ছুটে উঠে পড়বে তুমি। কোন অসুবিধে দেখতে পেলে চিৎকার করবে। ভেতরে গিয়ে। তোমাকে আমি বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। ক্লেমেঞ্জা, খুব তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে তোমাকে। দেরি না করে পিস্তল রেখে আসার জন্যে ওখানে কাউকে পাঠিয়ে দাও। ওখানে যে ল্যাট্রিনটা আছে সেটা সেকেলে..ধরনের, পানির টাঙ্কি আর দেওয়ালের মাঝখানে একটু ফাঁকা জায়গা আছে.। পিস্তলটা টেপ দিয়ে ওখানে আটকে রেখে আসতে হবে তোমার লোককে। মাইকেলের দিকে ফিরল টেসিও। শোনো, মাইক, গাড়িতে তুমি ওঠার পর তোমাকে ওরা সার্চ করবে, যখন দেখবে তোমার কাছে অস্ত্র নেই, তারপর থেকে তোমার ব্যাপারে মাথা ঘামানো ছেড়ে দেবে ওরা। রেস্তোরাঁয় ঢুকে অপেক্ষা করবে তুমি, তারপর উঠে দাঁড়াবার অনুমতি চাইবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি ল্যাট্রিনে যেতে চাও। তার আগে এমন ভাব দেখাবে। যেন একটু অসুবিধে হচ্ছে তোমার। এ তো খুবই স্বাভাবিক। এতে সন্দেহ করার কিছুই থাকবে না ওদের। ল্যাট্রিন থেকে বেরিয়ে এসে মোটেও আর সময় নষ্ট করবে না। চেয়ারে বসতে যেয়ো না আবার ফিরে এসেই গুলি করতে শুরু করবে। কোন ঝুঁকি নেবার দরকার নেই। দুজনেরই মাথায় মারবে, প্রত্যেককে দুবার। তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করবে।

টেসিওর সব কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনল সনি, তারপর ক্লেমেঞ্জাকে বলল, পিস্তল রেখে আসার জন্যে সবচেয়ে এক্সপার্ট লোককে পাঠানো হোক, আমি চাই না আমার ভাই ল্যাট্রিন থেকে খালি হাতে বেরিয়ে আসুক।

আত্মবিশ্বাসের সাথে জোর দিয়ে বলল ক্লেমেঞ্জা, পিস্তল ওখানে ঠিকই থাকবে।

বেশ, বলল সনি। যার যা কাজ শুরু করে দাও তাহলে।

বিদায় নিয়ে চলে গেল টেসিও আর ক্লেমেঞ্জা।

সনি, জানতে চাইল টম হেগেন, মাইকেলকে নিউ ইয়র্কে পৌঁছে দেয়া উচিত আমার?

না। এখানে চাই আমি তোমাকে। মাইকের কাজ শেষ হওয়া মাত্র শুরু হবে আমাদের কাজ। তোমাকে তখন দরকার হবে আমার। ভাল কথা, সাংবাদিকদের ব্যবস্থা করে রেখেছ তো?

ঘাড় কাত করে বলল হেগেন, ঘটনা ঘটতে শুরু হওয়া মাত্র ওদেরকে তথ্য দিতে শুরু করব আমি।

উঠে দাঁড়াল সনি। এগিয়ে এসে ছোট ভাইয়ের সামনে দাঁড়াল। মাইকেলের হাত ধরে নাড়া দিল সে, বলল, ঠিক হ্যায়, ভাইয়া। শুরু করে দে কাজ। মাকে। আমি বুঝিয়ে বলে দেব যাবার আগে কেন দেখা করে যেতে পারিসনি। তোর বান্ধবীকেও খবর পৌঁছে দেব, সময় হয়েছে বলে মনে করব যখন। কোন ব্যাপারে কিছু বলার আছে তোর?

সব ঠিক আছে, বলল মাইকেল। আবার কবে ফিরতে পারব বলে মনে করো?

এক বছরের আগে নয়।

ওদের কথার মাঝখানে হেগেন বলল, আমি মনে করি ডন সম্ভবত আরও আগে বন্দোবস্ত করতে পারবেন। কিন্তু সেটার ওপর আশা করে থেকো না, মাইক। কখন তোমার ফিরে আসার সময় হবে তা নির্ভর করে অন্যান্য অনেক বিষয়ের ওপর। খবরের কাগজে আমাদের বিবৃতি আমরা কতটা সাফল্যের সাথে ছাপাতে পারি, আর সব পরিবারগুলো গোটা ব্যাপারটা কতটা তীব্রভাবে নেয়, পুলিশ বিভাগ কি পরিমাণ ধামাচাপা দিতে রাজি হয়–আরও অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে ব্যাপারটা। প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হবে, সাংঘাতিক উত্তপ্ত হয়ে উঠবে আবহাওয়া। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

টম হেগেনের সাথে হ্যাণ্ডশেক করল মাইকেল। বলল, যতটা পারো চেষ্টা করো। বাড়ি ছেড়ে আরও তিন বছর দূরে সরে থাকতে চাই না আমি।

নরম সুরে বলল, হেগেন, ভেবে দেখো, মাইক, পিছিয়ে আসার এখনও সময় আছে। তোমার বদলে আর কাউকে পাঠানো যায়, আর যারা রয়েছে তাদের কথা না হয় আরেকবার ভেবে দেখা যেতে পারে। হয়তো সোযোকে খুন করার সত্যি কোন দরকার নেই।

হাসল মাইকেল। নিজেদেরকে বোধহয় যা খুশি বোঝানো যায়। কিন্তু প্রথমে যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি সেটাই ঠিক। আমি তো চিরকাল আরামই করে এসেছি, এবার একটু কাজ না করলে চলবে কেন?

ওই ভাঙা চোয়ালটা যেন খুব বেশি প্রভাবিত না করে তোমাকে। এক নম্বরের বোকা লোক ম্যাককাকি, তাছাড়া, ঘটনাটাও ব্যবসার স্বার্থে ঘটেছে, এর মধ্যে ব্যক্তিগত কিছু নেই।

এবার নিয়ে এই দ্বিতীয়বার দেখল হেগেন, নিমেষে মাইকেলের মুখটা জমাট পাথরের মত হয়ে গেল, ঠিক যেন ডনের মুখের হবহু প্রতিকৃতি।

টম, নিজেকে বোকা বানিয়ো না, বলল মাইকেল এর সমস্তটাই ব্যক্তিগত বিষয়, ব্যবসার প্রতিটি বিন্দুমাত্রই তাই। যে অপমান মানুষকে রোজ সারা জীবন ধরে হজম করতে হয় তার সবটুকুই নিখাদ ব্যক্তিগত ব্যাপার। তোমরা এটাকে ব্যবসা বলছ। বেশ, তাই। কিন্তু তবু নরকযন্ত্রণার মত সবটাই একান্ত ব্যক্তিগত। কার কাছ থেকে শিখেছি এ কথা, জানো? উন। আমার বাবা। গড ফাদার। তার কোন বন্ধুর মাথায় বজ্রাঘাত হলে বাবা সেটাকে ব্যক্তিগত ভাবে নেন। নৌ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম আমি, বাবা সেটাকে ব্যক্তিগত ভাবে নিয়েছিলেন। তাই তিনি মহৎ। সেজন্যেই তিনি মহান ডন। যাই ঘটুক, সব তাকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করে। সৃষ্টিকর্তার মত চড়ুই পাখির লেজ থেকে যদি একটা পালক খসে পড়ে, তাও তিনি জানতে পারেন, কোন চুলোয় গেল সেটা তাও তার অজানা থাকে না। ঠিক? আর কি জানো? দুর্ঘটনাকে যারা ব্যক্তিগত অপমান হিসেবে নেয় তাদের জীবনে কখনও দুর্ঘটনা ঘটে না। স্বীকার করি, দেরিতে এসেছি, কিন্তু সবটা পথ পেরিয়ে এসেছি আমি। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ, ভাঙা চোয়ালটাকে ব্যক্তিগতভাবে নিচ্ছি আমি। হ্যাঁ, বাবাকে মারার জন্যে সোযোর এই যে নাছোড় চেষ্টা, এটাকে ব্যক্তিগত ভাবে নিচ্ছি! হাসল মাইকেল। গড ফাদারকে জানিয়ো এসব আমি তার কাছেই শিখেছি। আর, জানাতে ভুলো না, তিনি যে আমার জন্যে এত কিছু করেছেন, তার বিনিময়ে সামান্য কিছু করার এই সুযোগটা পেয়ে আমি ভীষণ সুখী। বাবা আমার খুব ভাল মানুষ।

একটু থেমে, চিন্তিতভাবে আবার হেগেনকে বলল মাইকেল, জানোবাবা আমাকে কবে মেরেছেন তা আমি মনে করতে পারি না।-সনি বা ফ্রেডিকেও মেরেছেন বলে মনে পড়ে না। আর কনিকে তো জোরে বকেননি পর্যন্ত। ঠিক করে বলো তো, টম, কয়জন লোককেই বা খুন করেছেন ডন বা করিয়েছেন?

অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে টম হেগেন বলল, আমিও তোমাকে একটা জিনিস মনে করিয়ে দিচ্ছি, যা তোমার বাবার কাছ থেকে শেখোনি তুমি–এখন যেভাবে কথা বলছ,। এমন অনেক ব্যাপার আছে যা শুধু কাজ করে দেখাতে হয়, করতে হয়, তা নিয়ে কথা বলতে হয় না, সেটার ন্যায্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করতে হয় না। আসলে তা প্রমাণ করা যায় না। কাজটা শুধু করে ফেলতে হয়। এবং তারপর ভুলে যেতে হয়।

ভুরু কুঁচকে উঠল মাইকেল কর্লিয়নির। শান্ত গলায় জানতে চাইল সে, কনসিলিয়রি হিসেবে স্বীকার করো তুমি সলোযোকে বাঁচিয়ে রাখা বাবা, আর আমাদের পরির্বারের জন্যে বিপদজনক?

হ্যাঁ, বলল হেগেন।

 ঠিক আছে, বলল মাইকেল, তাহলে সলোযোকে খুন করতেই হয় আমার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *