৪.০২ সিসিলি ভোর

০২.

সিসিলি ভোর।

হলদেটে রোদে ভরে গেছে মাইকেলের শোবার ঘর। ঘুম ভাঙতেই টের পেল ও, মখমলের মত অ্যাপলোনিয়ার শরীরটা ওর নিজের শরীরের সাথে সেঁটে রয়েছে। আদর সোহাগ দিয়ে জাগাল ওকে মাইকেল। এই কমাস তাকে পুরোপুরি অধিকার করেও তার রূপ, তার তীব্র বাসনা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারে না ও।

কামরা থেকে বেরিয়ে বাথরুমে ঢুকল অ্যাপলোনিয়া। খালি গায়ে খাটে শুয়ে রইল মাইকেল। একটা সিগারেট ধরাল। গায়ে এসে পড়েছে সকালের রোদ। এই বাগানবাড়িতে আজ ওদের শেষ দিন। সিসিলির দক্ষিণ তীরে, আরেক শহরে ওদের থাকাব ব্যবস্থা করেছেন ডন টুমাসিনো। এক মাসের অন্তঃসত্ত্বা অ্যাপলোনিয়া, কয়েক হপ্তা বাপের বাড়ি কাটিয়ে সেও যাবে মাইকেলের কাছে, ওদের নতুন নিরাপদ আশ্রয়ে।

গত রাতে অ্যাপলোনিয়া শুয়ে পড়ার পর, মাইকেলকে ডেকে নিয়ে এসে বাগানে বসেছিলেন ডন টমালিনো উদ্বিগ্ন আর ক্লান্ত দেখাচ্ছিল তাকে। মাইকেলের নিরাপত্য সম্পর্কে তাঁর দুশির কথা জানালেন। বললেন, বিয়ে করে তুমি লোকের চোখে পড়ে গেছ। তোমার বাবার কথা ভেবে অবাকই লাগছে আমার, তিনি তোমার জন্যে অন্য কোথাও ব্যবস্থা করছেন না কেন? এদিকে পালার্মোর নতুন সর্দারদের নিয়ে আমাকেও অস্বাভাবিক ভুগতে হচ্ছে। কিছু কিছু সুযোগ দিতে চেয়েছি ওদেরকে, তাতে ন্যায্য ভাগের কিছু বেশিই পাবে ওরা, কিন্তু মসিবত হলো বোকার দল সবটুকুই মুঠোয় ভরতে চায়। ওদের হাবভাব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না আমি কয়েকবার চেষ্টাও করেছে, কিন্তু আমাকে খুন করা অত সহজ নয়। ছেলেমানুষদের দোষটাই ওখানে, কার কত শক্তি বোঝে না, তা তারা যত গুণীই হোক না কেন। নিজেদের অধিকার কতটা ভেবে দেখবে না, যত পানি আছে কুয়োয় সবটুকু গিলে ফেলতে চাইবে।

এরপর ডন টমাসিনো জানালেন, দুই রাখাল দেহরক্ষী কার্লো আর ফ্যাব্রিযুযিয়ো মাইকেলের সাথে গাড়িতে থাকবে। তিনি নিজে আজ রাতেই বিদায় নেবেন, কারণ জরুরী কাজে খুব ভোরেই তাকে পলার্মোয় যেতে হচ্ছে। নিষেধ করলেন, মাইকেল যেন ডাক্তার তাজাকে ওর যাবার ব্যাপারে কিছু না বলে। কারণ, আজ সন্ধ্যাটা তিনি পালার্মোতেই কাটাবেন। গল্প করা স্বভাব, কার কাছে কি বলে বসেন তার কোন ঠিক নেই।

ডন টমাসিনো যে বিপদে জড়িয়ে পড়েছেন মাইকেল তা খুব ভালভাবে বুঝতে পারে। সশস্ত্র গার্ডরা বাড়ির চারদিকে পাহারা দেয় রাতে। কয়েকজন বিশ্বস্ত রাখাল লুপারা হাতে নিয়ে চব্বিশ ঘন্টা ঘুরে বেড়ায় বাড়ির ভেতর। নিজেও তিনি প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র সাথে নিয়ে বেরোন। সাথে তার ব্যক্তিগত বডিগার্ডরা তো থাকেই।

রোদটা এখন কড়া হয়ে এসেছে। সিগারেট নিভিয়ে ফেলল মাইকেল! এবার তৈরি হতে হয়। সিসিলীয় শ্রমিকদের প্রিয় ট্রাউজার পরল ও, তারপর শার্ট আর ঠোঁট লাগানো টুপি। খালি পায়ে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল ও, একটু ঝুঁকে পড়তেই ফ্যাব্রিযযিয়োকে দেখতে পেল। বাগানে একটা চেয়ারে বসে রয়েছে, খুব আয়েশের সাথে ঘন কার্লো চুলে চিরুনি চালাচ্ছে সে। লুপারা বন্দুকটা অবহেলার সাথে ফেলে রেখেছে টেবিলের ওপর। শিস দিল মাইকেল, সাথে সাথে মুখ তুলে তালাল ফ্যাব্যিযিয়ো।

গাড়িটা নিয়ে এসো, বলল মাইকেল, পাঁচ মিনিটের মধ্যে রওনা হব আমি কার্লোকে দেখছি না যে?

কিচেনে, কফি খাচ্ছে, উঠে দাঁড়িয়ে বলল ফ্যাৱিষযিয়ো। বোতাম খোলা শার্টের ভেতর লাল-নীল উল্কি দেখা যাচ্ছে বুকে। তোমার সাথে তোমার স্ত্রীও যাচ্ছেন নাকি, মাইক?

ভুরু কুঁচকে উঠল মাইকেলের। হঠাৎ যেন খেয়াল হলো, কয়েক হপ্তা থেকে অ্যাপিলোনিয়ার ওপর বড় বেশি নজর রেখেছে ফ্যাব্রিযযিয়ো, বড় বেশি খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করছে। না, ভয় পাবার কিছু নেই–ডন টমাসিনোর বন্ধু মাইকেল, ওর স্ত্রীর সাথে বাড়াবাড়ি করার সাহস কখনোই হবে না তার। সিসিলিতে কেউ যদি মরতে চায়, সম্মানী লোকের বউয়ের দিকে নজর দিক, তাহলেই সাধ মিটে যাবে তার।

না, ঠাণ্ডা গলায় বলল মাইকেল। এখন বাপের বাড়িতে থাকবে ও, তারপর আমার কাছে যাবে। একটা পাথরের কুটিরে মেরামত করা হয় আলফা রোমিও, তাড়াতাড়ি সেখানে যেতে বলল ফ্যাৱিষযিয়োকে।

হলঘরের ওদিকে হাত-মুখ ধুতে গেল মাইকেল। আশপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না অ্যাপলোনিয়াকে। হয়তো কিচেনে গিয়ে খাবার তৈরি করছে ওর জন্যে। মাইকেলের সাথে এক সাথে যেতে পারছে না বলে বিবেকের একটু দংশন অনুভব করছে হয়তো। মাইকেল তাকে সাথে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু সিসিলির আরেক প্রান্তে চলে যেতে হচ্ছে, তাই মা-বাপ-ভাইদের সাথে কটা দিন কাটিয়ে যেতে চাইছে সে! বিবেককে একটু শান্ত করার জন্যে হয়তো আজ সে রাঁধতে বসেছে।

কিন্তু কিচেনে নেমে এসে অ্যাপলোনিয়াকে দেখতে পেল না মাইকেল। ওকে কফি দিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল বুড়ি ফিলোমিনা, পিছন থেকে বলল মাইকেল, তোমার কথা বাবাকে বলব আমি। একটু থেমে হাসল বুড়ি, তারপর মাথা দোলাল।

কার্লো ভেতরে ঢুকল, বাইরে তোমার জন্যে গাড়ি অপেক্ষা করছে, মাইকেলকে বলল সে। ব্যাগ নিয়ে আসি সব?

না, বলল মাইকেল। আমি আনছি। অপলা কোথায়?

 আমুদে হাসিতে ভরে উঠল কার্লোর মুখ! গাড়ির ড্রাইভিং সীটে বসে আছে, স্টার্ট দেবার জন্যে হাত দুটো নিশপিশ করছে যাই বলো, ও কিন্তু আমেরিকায় পৌঁছুবার আগেই মার্কিনী বনে যাচ্ছে। কার্লো কিছু বাড়িয়ে বলছে না। চাষী পরিবারের একটা মেয়ে গাড়ি চালানো শিখেছে, সিসিলিতে এর চেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার আর কিছু হতে পারে না।

অ্যাপলোনিয়াকে একা একাও গাড়িটা চালাতে দেয় বটে মাইকেল, কিন্তু সব সময় পাশে থাকে ও। বাড়ির ভেতরই প্র্যাকটিস করে অ্যাপলোনিয়া, আজ পর্যন্ত বাইরে একবারও গাড়ি নিয়ে বেরোয়নি সে। চালানোটা এখনও রপ্ত করতে পারেনি ঠিকমত, প্রায়ই ব্রেক চাপতে গিয়ে ভুল করে অ্যাকসিলারেটরে চাপ দিয়ে ফেলে।

ফ্যাব্রিকে নিয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করে গাড়িতে, কার্লোকে বলল মাইকেল। কিচেন থেকে বেরিয়ে এল ও, একসাথে দুতিনটে করে সিঁড়ির ধাপ টপকে দোতলায় উঠল। ব্যাগগুলো আগেই গোছানো হয়েছে। তুলে নেবার আগে জানালা দিয়ে নিচে কাল একবার, দেখল গাড়িটা কিচেনের দরজার সামনে নয়, গাড়িবারান্দার সামনে রয়েছে।

গাড়ির ভেতর দেখা যাচ্ছে অ্যাপলোনিয়াকে। হাত দুটো স্টিয়ারিং হুইলের ওপর সত্যি নিশপিশ করছে। পিছনের সীটে খাবারের টুকরি নামিয়ে রাখছে কার্লো। কিন্তু ফ্যাব্রিযযিয়োকে এই মুহূর্তে কোথাও দেখতে পেল না মাইকেল। তারপর হঠাৎ চোখে পড়ল ওকে। বিরক্ত হলো মাইকেল। বাগানবাড়ির গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, খুব ব্যস্ত ভাবে, যেন হঠাৎ জরুরী কি একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেছে তার। ব্যাটা করছেটা কি? এই সময় পিছন ফিরে তাকাল ফ্যাব্রিযযিয়ো, চোখে কেমন যেন চোরা চাহনি। ছোকরাকে একটু শাসন করতে হবে, নিজেকে মনে করিয়ে দিল মাইকেল। নিচে নেমে আবার কিচেনে ঢোকার ইচ্ছে রয়েছে ওর, আরেকবার বিদায় নেবে বুড়ি ফিলোমিনার কাছ থেকে। তাই করল। কথা শেষ করে জানতে চাইল, ডাক্তার তাজা কোথায়? এখনও ঘুমাচ্ছেন নাকি?

বুড়ো মোরগদের সূর্য ওঠার তর সয়না, ফিলোমিনার আঁকিবুকি কাটা মুখে ধূর্ত ভাব ফুটে উঠল। কাল রাতেই পালার্মোয় চলে গেছেন তিনি।

হাসল মাইকেল। পালার্মোর বেশ্যাপাড়ার কমবয়েসী মেয়েগুলোর সান্নিধ্য না পেলে পেটের খাবার হজম হয় না ডাক্তার তাজার।

কিচেনের দরজার সামনে এসেদিাড়াল ও! সাথে সাথে নাকে এসে লাগল লেবু ফুলের গন্ধ। গত কমাসের স্মৃতি হঠাৎ পীড়া দিল ওকে। চলে যেতে হচ্ছে, কে জানে আবার কোনদিন ফেরা হবে কিনা! এগোতে যাবে, হঠাৎ অ্যাপলোনিয়াকে হাত নাড়তে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল ও।

হাত পনেরো দূরে গাড়িটা। অ্যাপলোনিয়া চাইছে মাইকেল ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুক, গাড়ি নিয়ে সেই আসবে ওর কাছে। গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে কার্লো, দুপাটি দাঁতের সবগুলো বের করে হাসছে সে। হাতে ঝুলছে লুপারা। কিন্তু ফ্যাব্রিযযিয়োর ছায়া পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না কোথাও।

ঠিক এই মূহুর্তে, কেমন করে যেন আচমকা সব পরিষ্কার বুঝে ফেলল মাইকেল। সচেতনভাবে কিছু চিন্তা করেনি ও আত্মরক্ষার সহজাত বুদ্ধিতেই ধরা পড়েছে ব্যাপারটা। মুহর্তে উন্মাদের মত হয়ে উঠল ওর চেহারা। গলার সবটুকু জোর দিয়ে চিৎকার করে নিষেধ করল অ্যাপলোনিয়াকে, না! না

কিন্তু দেরি হয়ে গেছে এরই মধ্যে, ইগনিশনে চাবি দিয়ে ফেলেছে অ্যাপলোনিয়া। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের আওয়াজে চাপা পড়ে গেল মাইকেলের চিৎকার। বিস্ফোরণের ধাক্কায় কিচেনের দরজাটা ভেঙে খান খান হয়ে গেল, ছিটকে পড়ল মাইকেল দশ হাত দূরে। বাগানবাড়ির পাচিলে গিয়ে পড়ল সে, সেখান থেকে মাটিতে। পর মুহূর্তে ওপর থেকে বাড়ির পাথরের ছাদ ধসে পড়ল ওর কাঁধে আর মাথায়।

এখনও জ্ঞান রয়েছে ওর বুঝতে পারছে, মারা যায়নি সে। বোকার মত তাকাচ্ছে চারদিকে, যেন পেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে দুনিয়াকে দেখে নিচ্ছে। কোথাও নেই আলফা রোমিওটা, চারটে চাকা আর চাকাগুলো জোড়া লাগাবার দুটো ডাণ্ডা ছাড়া তার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। হঠাৎ সব অন্ধকার হয়ে গেল।

.

জ্ঞান ফিরল মাইকেলের। কামরাটা অন্ধকার লাগছে। কার যেন কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে ও অস্পষ্ট, বোঝা যাচ্ছে না কিছু! সহজাত বুদ্ধিতেই অচেতন হয়ে থাকার ভান করছে ও। কিন্তু কিভাবে যেন টের পেয়ে গেল ওরা, কেউ আর কথা বলছে না এখন। চোখ না খুলেও বুঝতে পারল মাইকেল, কে যেন খাটের ওপাশ থেকে ঝুঁকে পড়ল ওর ওপর। গলাটা চেনা গেল না, তবে স্পষ্ট যীশুর দয়ায় আবার আমাদের কাছে ফিরে এসেছে ও?

কে যেন আলো জ্বালল একটা। সাদা আলোর ঝলক লাগল ওর বন্ধ চোখের পাতায় মাথাটা ফেরাল ও। অসম্ভব ভারি আর অবশ লাগছে। এখনও ওর ওপর ঝুঁকে রয়েছে মুখটা চিনতে পারল ডাক্তার তাজার মুখ।

 তোমাকে একবার খেই নিভিয়ে দেব আলোটা, কোমল স্নেহের সুরে বললেন ডাক্তার তাজা। ছোট পেন্সিল টর্চটা আবার জ্বাললেন তিনি, আলো ফেললেন মাইকেলের চোখে। কোন ভয় নেই, সুস্থ হয়ে উঠবে তুমি। আরও কেউ একজন আছে কামরায়, তার দিকে ফিরে আবার বললেন, ইচ্ছে করলে এখন ওর সাথে কথা বলতে পারো।

খাটের কাছাকাছি একটা চেয়ারে বসে আছেন ডন টমাসিনো। এতক্ষণে তাঁকে স্পষ্ট দেখতে পেল মাইকেল।

মাইকেল? মাইকেল? তোমার সাথে কথা বলতে পারব? নাকি খারাপ লাগছে, বিশ্রাম করার ইচ্ছা?

কথা বলতে পারল না মাইকেল, হাত তুলে ইশারা করল।

কে এনেছিল গাড়িটা গ্যারেজ থেকে? জানতে চাইলেন ডন টমাসিনো। ফ্যাব্রিযযিয়ো?

কিছু চিন্তা না করেই, নিজের অজান্তে হসিল মাইকেল-বরফের মত ঠাণ্ডা অদ্ভুত এক সম্মতির হাসি।

ফ্যাব্রিযযিয়ো গায়েব হয়ে গেছে, বললেন ডন টমাসিনো। আমার কথা সব বুঝতে পারছ তো তুমি, মাইকেল? প্রায় এক হপ্তা অজ্ঞান থাকার পর আজ তোমার জ্ঞান ফিরেছে। সবাই জানে তুমি বেঁচে নেই। বুঝতে পারছ? তার মানে, তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ, ওরা তোমাকে খুঁজছে না। খবরটা পেয়ে আমেরিকা থেকে তোমার বাবা কয়েকটা নির্দেশ পাঠিয়েছেন আমেরিকায় ফিরে যেতে তোমার আর খুব বেশি দেরি নেই। তার আগে পর্যন্ত এখানে তুমি নিরিবিলিতে বিশ্রাম করবে। এটা পাহাড়ের ওপর আমার একটা ছোট খামার বাড়ি, এখানে তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ, কোনও ভয় নেই। পালার্মোর লোকেরা আপোস করেছে আমার সাথে, তার কারণ, ওরা জানে মারা গেছ তুমি। হ্যাঁ, আসলে তুমিই ওদের হামলার লক্ষ্য ছিলে। ওরা তোমাকেই খুন করার সুযোগে ছিল, কিন্তু সবাইকে ভাবতে দিয়েছিল তোমাকে নয় আমাকে খুন করতে চায়। বিশেষভাবে এই কথাটা তোমার জানা উচিত, তাই এত কথা বলছি। আর সব ব্যাপার আমার ওপর ছেড়ে দাও তুমি, সবদিক খুব ভালই সামলাতে পারব আমি। তুমি শুধু সুস্থ হয়ে ওঠো। মনটাকে শক্ত করো।

একে একে সব কথা মনে পড়ছে এখন মাইকেলের। জানে, অ্যাপলোনিয়া মারা গেছে। মারা গেছে কার্লো। বুড়ি ফিনোমিনার কথা মনে পড়ল। কিচেন থেকে ওর সাথে সে-ও বাইরে বেরিয়ে এসেছিল কিনা স্মরণ হলো না। ফিস ফিস করে জানতে চাইল ও, ফিলোমিনা?

শান্ত গলায় ধীরে ধীরে বললেন ডন টমাসিনো, কোথাও আঘাত পায়নি, শুধু বিস্ফোরণের ধাক্কায় রক্ত বেরিয়েছে নাক দিয়ে। তার কথা ভেবে দুশ্চিন্তা কোরো না।

ফ্যাব্রিযযিয়ো, মৃদু গলায়, ফিস ফিস করে বলল মাইকেল। ফ্যাব্রিযযিয়ো। হু বেশ, আপনার রাখালদের জানিয়ে দিন, ওকে আমি চাই। কেউ যদি সিসিলির সেরা ঘাস-জমির মালিক হতে চায়, ফ্যাব্রিযযিয়োকে এনে দিক আমার কাছে।

মস্ত একটা হাঁফ ছাড়লেন ডন টমালিনো আর ডাক্তার তাজা তো নিঃশব্দে হেসেই ফেললেন। পাশের একটা টেবিল থেকে হলদেটে পানায় ভরা একটা গ্লাস তুলে নিয়ে তাতে চুমুক লাগালেন ডন টমাসিনো সাথে সাথে মাথাটা পরিষ্কার হয়ে উঠল তার।

হাসিটা মুখ থেকে মুছে ফেলে খাটের ওপর বসলেন ডাক্তার তাজা। একটু অন্যমনস্কভাবে বললেন, তোমার স্ত্রী মারা গেছেন, তুমি এখন বিপত্নীক। জানো তো, সিসিলিতে বিপত্নীকের সংখ্যা খুবই কম, নেই বললেই চলে। ভাবটা যেন, এই বৈশিষ্ট্যটুকুর জন্যে খানিকটা সান্তনা পাবে মাইকেল।

ইশারা করল মাইকেল। সাথে সাথে ওর দিকে আরও ঝুঁকে পড়লেন ডন টমাসিনো।

বাবাকে খবর পাঠান, শান্ত গলায় বলল মাইকেল। আমি বাড়ি ফিরতে চাই। আঁকে জানান, তার ছেলে হতে চাই আমি।

কিন্তু পুরোপুরি সেরে উঠতে আরও একটা মাস সময় লাগল মাইকেলের। সুস্থ হয়ে ওঠার পরও সাথে সাথে দেশে ফিরতে পারল না সে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যোগাড়, এবং অন্যান্য কাজ সারতে সময় লেগে গেল আরও দুটো মান। তারপর প্লেনে চড়ে পালার্মো থেকে বোম, বোম হয়ে সোজা নিউইয়র্ক। এই তিন মাসে কোথাও ছায়া পর্যন্ত দেখেনি কেউ ফ্যাব্রিযযিয়ো নামের সেই রাখালের।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *