কবি বলেছেন, দীন যথা যায় দূর তীর্থ দরশনে রাজেন্দ্র সঙ্গমে। আমান উল্লা ইয়োরোপ ভ্রমণে বেরলেন, আমিও শীতের দুমাসের ছুটি পেয়ে বেরিয়ে পড়লুম। কিন্তু সত্যযুগ নয় বলে প্রবাদের মাত্র আধখানা ফলল— আমি ইয়োরোপ গেলুম না, গেলুম দেশ।
উল্লেখযোগ্য কিছুই ঘটল না কিন্তু ভারতবর্ষে দেখি আমান উল্লার ইয়োরোপ ভ্রমণ নিয়ে সবাই ক্ষেপে উঠেছে। আমান উল্লার সম্মানে প্রাচ্য ভারতবাসী যেন নিজের সম্মান অনুভব করছে।
আমাকে ধরল হাওড়া স্টেশনে কাবুলী পাজামা আর পেশাওয়ারের টিকিট দেখে হয়ত লাণ্ডিকোটাল থেকে খবরও পেয়েছিল। তন্ন তন্ন করে সার্চ করলে অনেকক্ষণ ধরে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল তারও বেশীক্ষণ ধরে যেন আমি মেকি সিকিটা। কিন্তু আমি যখন কাবুলের কাস্টম হৌসে তালিম পেয়েছি, তখন ধৈর্যে আমাকে হারাতে পারে কোন্ বাঙালী অফিসার। খালাস পেয়ে অজানতে তবু বেরিয়ে গেল, আচ্ছা গেরো রে বাবা।
বাঙালী অফিসার চমকে উঠলেন, বললেন, দাঁড়ান, আপনি বাঙালী, তাহলে আরো ভালো করে সার্চ করি।।
বললুম, করুন, আমার নাম কমলাকান্ত।
দেশে পৌঁছে মাকে দিলুম এক সুটকেসভর্তি বাদাম, পেস্তা–অষ্ট গণ্ডা পয়সা খরচ করে কাবুল শহরে কেনা। মা পরমানন্দে পাড়ার সবাইকে বিলোলেন। পাড়াগাঁয়ে যে বোনটির বিয়ে হয়েছিল, সে-ও বাদ পড়ল না।
কিন্তু থাক। সাত মাস কাবুলেকাটিয়ে একটা তথ্য আবিষ্কার করেছি যে, বাঙালী কাবুলীর চেয়ে ঢের বেশী হুশিয়ার। তারা যে আমার এ-বই পয়সা খরচ করে কিনবে, সে আশা কম। তাই ভাবছি, এ দুমাসের গর্ভাঙ্কটা সফর-ই হিন্দ নাম দিয়ে ফার্সীতে ছাপাবো। তাই দিয়ে যদি দুপয়সা হয়। কাবুলী কিনুক আর না-ই কিনুক, উদ্যমটার প্রশংসা নিশ্চয়ই করবে। কারণ ফার্সীতেই প্রবাদ আছে–
খর বাশ ও খুক বাশ ও ইয়া সগে মুরদার বাশ।
হরচে বাশী বাশ আম্মা আন্দকী জরদার বাশ।।
হও না গাধা, হও না শুয়র, হও না মরা কুকুর।
যা ইচ্ছে হও কিন্তু রেখো রত্তি সোনা টূকুর।।