পৃথিবীর আর সব দেশে যেতে হলে একখানা পাসপোর্ট যোগাড় করে যে কোনো বন্দরে গিয়ে হাজির হলেই হল। আফগানিস্থান যেতে হলে সেটি হবার যো নেই। পেশাওয়ার পৌঁছে আবার নূতন স্ট্যাম্পের প্রয়োজন। সে-ও আবার তিন দিন পরে নাকচ হয়ে যায়। খাইবারপাসের আশেপাশে কখন যে দাঙ্গাহাঙ্গামা লেগে যায় তার স্থিরতা নেই বলেই এই বন্দোবস্ত। আবার এই তিন দিনের মিয়াদি স্ট্যাম্প সত্ত্বেও হয়ত খাইবারের মুখ থেকে মোটর ফিরিয়ে দিতে পারে যদি ইতিমধ্যে কোনো বখেড়া লেগে গিয়ে থাকে।
সেই স্ট্যাম্প নিয়ে বাড়ি ফিরছি এমন সময় দেখি হরেক রকম বিদেশী লোকে ভর্তি কতকগুলো বা পশ্চিম দিকে যাচ্ছে। আহমদ আলীকে জিজ্ঞাসা করলুম, এগুলো কোথায় যাচ্ছে?
তিনি ধমক দিয়ে বললেন, এগুলো কাবুল যায় না। তারপর অন্য কথা পাড়বার জন্য বললেন, বাঙলা দেশের একটা গল্প বলুন না।
আমি মনে মনে বললুম, আচ্ছা তবে শোন। বাইরে বললুম, গল্প বলা আমার আসে না, তবে একটা জিনিসে পাঠানে বাঙালীতে মিল দেখতে পেয়েছি সেইটে আপনাকে বলছি, শুনুন
এখানে যে রকম সব কারবার পাঞ্জাবী আর শিখদের হাতে কলকাতায়ও কারবার বেশীর ভাগ অ-বাঙালীর হাতে। আর বাঙালী যখন ব্যবসা করে তখন তার কায়দাও আজব।
আমি তখন ইলিয়ট রোডে থাকতুম, সেখানে দোকানপাট ফিরিঙ্গীদের। মুসলমানদের কিছু কিছু দর্জীর দোকান আর লণ্ডি, ব্যস। তার মাঝখানে এক বাঙালী মুসলমান ঝা চকচকে ফ্যান্সি দোকান খুলল। লোকটির বেশভূষা দেখে মনে হল, শিক্ষিত, ভদ্রলোকের ছেলে। স্থির করলুম, সাহস করে দোকান যখন খুলেছে তখন তাকে পেট্রনাইজ করতে হবে।
জোর গরম পড়েছে বেলা দুটো। শহরে চর্কিবাজীর মত ঘুরতে হয়েছে দেদার সাবান চোখে পড়েছে কিন্তু কিনিনি ভদ্রলোকের ছেলেকে পেট্রনাইজ করতে হবে।
ট্রাম থেকে নেমে দোকানের সামনে এসে দেখি ভদ্রলোক নাক ডাকিয়ে ঘুমচ্ছেন, পাখিটা খাঁচায় ঘুমচ্ছে, ঘড়িটা পর্যন্ত সেই যে বারোটায় ঘুমিয়ে পড়েছিল, এখনো জাগেনি।
আমি মোলায়েম সুরে বললুম, ও মশাই, মশাই। ফের ডাকলুম, ও সায়েব, সায়েব।
কোনো সাড়াশব্দ নেই। বেজায় গরম, আমারও মেজাজ একটু একটু উষ্ণ হতে আরম্ভ করেছে। এবার চেঁচিয়ে বললুম, ও মশাই, ও সায়েব।
ভদ্রলোক আস্তে আস্তে বোয়াল মাছের মত দুই রাঙা টকটকে চোখ সিকিটাক খুলে বললেন, আজ্ঞে? তারপর ফের চোখ বন্ধ করলেন।
আমি বললুম, সাবান আছে? পামওলিভ সাবান?
চোখ বন্ধ রেখেই উত্তর দিলেন, না।
আমি বললুম, সে কি কথা, ঐ তো রয়েছে শো-কেসে।
ও বিকিরির না।–
তারপর আহমদ আলীকে জিজ্ঞাসা করলুম, পাঠানরাও বুঝি এই রকম ব্যবসা করে? তিনি তো খুব খানিকক্ষণ ধরে হাসলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, কেন বলুন তো?
আমি উত্তর দিলুম, ঐ যে বললেন এসব বাস কাবুল যায় না।
এবার আহমদ আলী থমকে দাঁড়ালেন। দেয়ালের দিকে ঘুরে, কোমরে দুহাত দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ঠাঠা করে হাসলেন। সে তো হাসি নয়–হাসির ধমক। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি কখন তার হাসি থামবে। উত্তর দিলেন ভালো। বললেন, এসব বাস খাইবারপাস অবধি গিয়েই ব্যস!
আমি শুধালুম, এই সামান্য রসিকতায় আপনি এত প্রচুর হাসতে পারেন কি করে?
কেন পারব না? হাসি কি আর গল্পে ঠাসা থাকে, হাসি থাকে খুশ-দিলে। আপনাকে বলিনি স্বাধীনতা কোথায় বাসা বেঁধে থাকে? রাইফেলে নয়, বুকের খুনে। একটা গল্প শুনবেন? ঐ দেখছেন, হোথায় চায়ের দোকানী বটতলায় বেঞ্চি পেতে দিয়েছে। চলুন না।
পাঠান মাত্রই মারাত্মক ডিমোক্র্যাট। নির্জলা টাঙাওয়ালা বিড়িওয়ালার চায়ের দোকান।
আহমদ আলী তার বিশাল বপুখানার ওজন সম্বন্ধে সচেতন বলে খুটির উপর ভর দিয়ে বসলেন, আমি আমার তনুখানা যেখানে খুশী রাখলুম। বললেন–
ওমর খৈয়ামের এক রাত্রে বড্ড নেশা পেয়েছে কিন্তু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন পাঁচখানা রুবাইয়াৎ শেষ না করে উঠবেন না। জানেন তো কি রকম ঠাসবুনুনির কবিতা শেষ করতে করতে রাত প্রায় কাবার হয়ে এল। মদের দোকানে যখন পৌঁছলেন তখন ভোর হব হব। হুঙ্কার দিয়ে বললেন, নিয়ে এস তো হে, এক পাত্তর উৎকৃষ্ট শিরাজী! মদওয়ালা কাচুমাচু হয়ে বলল হুজুর এত দেরীতে এসেছেন, রাত কাবারের সঙ্গে সঙ্গে মদও কাবার হয়ে গিয়েছে। ওমর নরম হয়ে বললেন, শিরাজী নেই তো অন্য কোনো মাল দাও না। মদওয়ালা বলল, শরম কী বাৎ। কিছু নেই হুজুর। ওমর বললেন, পরোয়া নদারদ, ঐ যে সব এটো পেয়ালাগুলো গড়াগড়ি যাচ্ছে সেগুলো ধুয়ে তাই দাও দিকিনি–নেশার জিম্মাদারি আমার।
হিম্মতের জিম্মাদারি, হাসির জিম্মাদারি, নেশার জিম্মাদারি কিসে, কার, সে সম্বন্ধে আলোচনা করার পূর্বেই দেখতে পেলুম রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন সেই ভেজাল পাঠান তার ব্রাত্য-দোষ, তিনি তিন মাস লাহোরে কাটিয়েছিলেন–রমজান খান। আমি আহমদ আলীকে আঙুল দিয়ে দেখালুম। আর যায় কোথায়? ও রমজান খান, জানে মন্, বরাদরে মন্, এদিকে এসো। আমাকে তম্বী করে বললেন, আশ্চর্য লোক, আমি না ডাকলে আপনি এঁকে যেতে দিতেন? এই গরমে? লোকটা সর্দিগমি হয়ে মারা যেত না? আল্লা রসুলের ডর-ভয় নেই?
রমজান খান এসে বললেন, ভগিনীপতির অসুখ, তার করতে যাচ্ছি। বলেই ঝুপ করে বেঞ্চিতে বসে পড়লেন। আহমদ আলী সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, হবে, হবে, সব হবে। টেলিগ্রাফের তার শক্ত মালে তৈরী দুচার ঘণ্টায় ক্ষয়ে যাবে না। সুখবর শোনন। সৈয়দ সাহেব একখানা বহুৎ উন্দা গল্প পেশ করেছেন। বলে তিনি আমার কাঁচাসিদ্ধ গল্পে বিস্তর টমাটো-রস আর উস্টার সস ঢেলে রমজান খানকে পরিবেশন করলেন। বারে বারে বলেন ও সাবান বিকিরির না–এ বাস কাবুল যায় না। এ যেন বাঙলা দেশের পুব আকাশে সূর্যোদয় আর পেশাওয়ারের পশ্চিম আকাশ লাল হয়ে গেল। হুবহু একই রঙ।
রমজান খান বললেন, তা তো বুঝলুম। কিন্তু বাঙালী আর পাঠানে একটা জায়গায় সৎ গরমিল আছে।
আমি শুধালুম, কিসে?
রমজান খান বললেন, আমি সিন্ধুনদ পেরিয়ে আহমদ আলীর পাক নজরে যে মহাপাপ করেছি এটা সেই সিন্ধুপারের কাহিনী। তবে আটকের কাছে নয়, অনেক দক্ষিণে সেখানে সিন্ধু বেশ চওড়া। তারি বালুচরে বসে দুপুর নোদে আটজন পাঠান ঘামছে। উট ভাড়া দিয়ে তারা ছিয়ানব্বই টাকা পেয়েছে, কিন্তু কিছুতেই সমানেসমান ভাগ বাটোয়ারা করতে পারছে না। কখনো কারো হিস্যায় কম পড়ে যায়, কখনো কিছু টাকা উপরি থেকে যায়। ক্রমাগত নূতন করে ভাগ হচ্ছে, হিসেব মিলছে না, ঘাম ঝরছে আর মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গলাও চড়ছে। এমন সময় তারা দেখতে পেল, অন্য পার দিয়ে এক বেনে তার পুঁটুলি হাতে করে যাচ্ছে। সব পাঠান এক সঙ্গে চেঁচিয়ে বেনেকে ডাকল, এপারে এসে তাদের টাকার ফৈালা করে দিয়ে যেতে। বেনে হাত-পা নেড়ে বোঝালো অত মেহন্নত তার সইবে না, আর কত টাকা কজন লোক তাই জানতে চাইল। চার কুড়ি দশ ও তার উপরে ছয় টাকা আর হিস্যেদার আটজন। বেনে বলল, বারো টাকা করে নাও। পাঠানরা চেঁচিয়ে বলল, তুই একটু সবুর কর, আমরা দেখে নিচ্ছি বখরা ঠিক ঠিক মেলে কি না। মিলে গেল সবাই অবাক। তখন তাদের সর্দার চোখ পাকিয়ে বলল, এতক্ষণ ধরে আমরা চেষ্টা করলুম, হিসেব মিলল না; এখন মিলল কি করে? ব্যাটা নিশ্চয়ই কিছু টাকা সরিয়ে নিয়ে হিসেব মিলিয়ে দিয়েছে। ওপার থেকে সে যখন হিসেব মেলাতে পারে তখন নিশ্চয়ই কিছু টাকা সরাতেও পারে। পাকড়ো শালাকো।
রমজান খান বললেন, বুঝতেই পারছেন, পরোপকার করতে গিয়ে বেনের পোর অবস্থা। ভাগ্যিস সিন্ধু সেখানে চওড়া এবং বেনেরা আর কিছু পারুক না-পারুক ছুটতে পারে আরবী ঘোড়ার চেয়েও তেজে। সে-যাত্রা বেনে বেঁচে গেল।
আমি বললুম, গল্পটি উপাদেয়, কিন্তু বাঙালীর সঙ্গে মিলগরমিলের এতে আছে কোন্ চীজ?
রমজান খান বললেন, বাঙালী আপন দেশে বসে, এভারেস্টের গায়ে ফিতে না লাগিয়ে, চুড়োয় চড়তে গিয়ে খামখা জান না দিয়ে ইংরেজকে বাৎলে দেয়নি, ঐ দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়?
আমি বললুম, হাঁ, কিন্তু নাম হয়েছে ইংরেজের।
আহমদ আলী শুধালেন, তাই বুঝি বাঙালী চটে গিয়ে ইংরেজকে বোমা মারে?
আমি অনেকক্ষণ ধরে ঘাড় চুলকে বললুম, সেও একটা অতি সূক্ষ্ম কারণ বটে, তবে কিনা শিকদার এভারেস্ট সায়েবকে বোমা মারেননি।
রমজান খান উম্মা দেখিয়ে বললেন, কিন্তু মারা উচিত ছিল।
আমি বললুম, হুঁ, কিন্তু একটু সামান্য টেকনিকল মুশকিল ছিল। নামকরণ যখন হয় শিকদার তখন কলকাতায় আর মহামান্য স্যার জর্জ লণ্ডনে পেনসন টানছেন। পাল্লাটা
পুরো পাঠান এবং নিমপাঠান এক সঙ্গে হাঁ হাঁ করে উঠলেন। শুধালেন, তার মানে? তবে কি ও লোকটার তদারকিতেও এভারেস্ট মাপা হয়নি?
আমি বললুম, না। কিন্তু আপনারা এত বিচলিত হচ্ছেন কেন? এই আপনাদের ভাইবেরাদরই কতবার কাবুল দখল করেছেন আমার ঠিক স্মরণ নেই, কিন্তু এই কথাটা মনে গাঁথা আছে যে, নাম হয়েছে প্রতিবারেই ইংরেজের। আর আপনারা যখনই হাত গুটিয়ে বসেছিলেন তখনই হয় ইংরেজ কচুকাটা হয়ে মরেছে, নয় আপনাদের বদনাম দিয়ে নিজের অপমান জালার মত মোটা মোটা মেডেল পরে ঢেকেছে। এই গেলবারে যখন দুখানা আকবরশাহী কামান আর তিনখানা জাহাঙ্গিরী বন্দুক দিয়ে আমান উল্লা ইংরেজকে তুলোধোনা করে ছাড়লেন, তখন ইংরেজ তামাম দুনিয়াকে ঢাক পিটিয়ে শোনায়নি যে, পাঠানের ফেরেজিতেই তারা লড়াই হারল?
রমজান খান বললেন, বাঙালী এত খবর রাখে কেন?
আমি বললুম, কিছু যদি মনে করেন, আর গোস্তাকি বেয়াদবি মাফ করেন, তবে সবিনয় নিবেদন, আপনারা যদি একটু বেশী খবর রাখেন তা হলে আমরা নিষ্কৃতি পাই।
দুজনেই চুপ করে শুনলেন। তারপর আহমদ আলী বললেন, সৈয়দ সাহেব, কিছু মনে করবেন না। আপনারা বোমা মারেন, রাজনৈতিক আন্দোলন চালান, ইংরেজ আপনাদের ভয়ও করে। এসব তো আরম্ভ হয়েছে মাত্র সেদিন। কিন্তু বলুন তো, যেদিন দুনিয়ার কেউ জানত না ফ্রন্টিয়ার বলে এক ফালি পাথরভর্তি শুকনো জমিতে একদল পাহাড়ী থাকে সেদিন ইংরেজ তাদের মেরে শেষ করে দিত না, যদি পারত? ফসল ফলে না, মাটি খুঁড়লে সোনা চাঁদি কয়লা তেল কিছুই বেরোয় না, এক ফোঁটা জলের জন্য ভোর হবার তিন ঘণ্টা আগে মেয়েরা দল বেঁধে বাড়ি থেকে বেরোয়, এই দেশ কামড়ে ধরে পড়ে আছে মূর্খ পাঠান, কত যুগ ধরে, কত শতাব্দী ধরে কে জানে? সিন্ধুর ওপারে যখন বর্ষায় বাতাস পর্যন্ত সবুজ হয়ে যায় তখন তার হাতছানি পাঠান দেখেনি? পূরবৈয়া ভেজা ভেজা হাওয়া অদ্ভুত মিঠে মিঠে গন্ধ নিয়ে আসে, আজ পর্যন্ত কত জাত তার নেশায় পাগল হয়ে পুব দেশে চলে গিয়েছে— যায়নি শুধু মূর্খ আফ্রিদী মোমন।
লড়াই করে যখন ইংরেজ এদেশকে উচ্ছন্ন করতে পারল না তখন সে প্রলোভন দেখায়নি। লাখ লাখ লোক পল্টনে ঢুকল। ইংরেজের ঝাণ্ডা এদেশে উড়ল বটে, কিন্তু তার রাজত্ব ঐ ঝাণ্ডা যতদূর থেকে দেখা যায় তার চেয়েও কম। আর পল্টনে না ঢুকে পাঠান করতই বা কি? পাঠানমোগল আমলে তাদের ভাবনা ছিল না। পল্টনের দরওয়াজা খোলা, অথচ মোগলপাঠান এই গরীব দেশের গাঁয়ে গাঁয়ে ঢুকে বুড়ার রুটি কাড়তে চায়নি, বউঝিকে বিদেশী হারাম কাপড় পরাতে চায়নি। শাহানশাহ বাদশাহ দীনদুনিয়ার মালিক দিল্লীর তখত্নশীন সরকার-ই-আলা যখন হিন্দুস্থানের গরম বরদাস্ত না করতে পেরে এদেশ হয়ে ঠাণ্ডা সবুজ মোলায়েম কাবুল শহর যেতেন পাঠান তখন তাকে একবার তসলীম দিতে আসত। শাহানশাহ খুশ, পাঠান তরূ। বাদশাহের মীর-বখশী পিছনের তাঞ্জাম থেকে মুঠা মুঠা আশরফী রাস্তার দুদিকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলতেন। জিন্দাবাদ শাহানশাহ জহানপনা চিৎকার খাইবারের দুদিকের পাহাড়ে টক্কর খেয়ে খেয়ে আকাশ বিদীর্ণ করে খুদাতালার পা-দানে গিয়ে যখন পৌঁছত তখন সে প্রশংসাধ্বনি লক্ষ কণ্ঠের নয়, কোটি কোটি কণ্ঠের। সে আশরফী আজ নেই, পর্বতগাত্রে প্রশংসার প্রতিধ্বনিত হয় না, কিন্তু ঐ পাথরের টুকরোগুলো পাষাণ পাঠান আপন ছাতির খুন দিয়ে এখনো স্বাধীন রেখেছে। তাই তার নাম এখনো নো ম্যান্স ল্যাণ্ড। পাঠান আর কি করতে পারত, বলুন।
আমি অত্যন্ত লজ্জা পেয়ে বারবার আপত্তি জানিয়ে বললুম, আমি সে অর্থে কথাটা বলিনি। আমি ভদ্রসন্তানদের কথা ভাবছিলুম এবং তাঁরাও কিছু কম করেননি। তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ না করলে পাঠান সেপাই হয়তো আমান উল্লার বিরুদ্ধে লড়ত।
আহমদ আলী বললেন, ভদ্রসন্তানদের কথা বাদ দিন। এই অপদার্থ শ্রেণী যত শীঘ্র মরে ভূত হয়ে অজরঈলের দফতরে গিয়ে হাজিরা দেয় ততই মঙ্গল।
রমজান খান আপত্তি জানিয়ে বললেন, ভদ্রসন্তানদের পড়ার কায়দা আর পাঠান সিপাহির লড়ার কায়দা তো আর এক ধরনের হয় না। সময় যেদিন আসবে তখন দেখতে পাবেন আমাদের অপদার্থ আহমদ আলী কোন্ দলে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
আমি আহমদ আলীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালুম। আহমদ আলী বললেন, আমি সব কথা ভালো করে শুনতে পাইনে। একটু কালা-খুদাতালাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।