হিসাব নিকাশ – সতীনাথ ভাদুড়ী
এককড়ির কোনও আচরণেই বাড়ির লোকরা অবাক হয়না, তাই একটা খালি বোরা হাতে নিয়ে রাত সাড়ে দশটার সময় জামাই বাড়ি পৌঁছতে দেখে মেয়ে আশ্চর্য হল না; শুধু হাত থেকে বোরাটাকে নিয়ে ভাঁড়ার ঘরে রেখে বলল “এখনই খেতে বসে যাও বাবা”। খাওয়া দাওয়ার পাট তখনও শেষ হয়নি। বেয়ানের শ্রাদ্ধ আগের দিন হয়ে গিয়েছে। সেদিন ছিল মৎস্যমুখের নেমন্তন্ন। খেতে বসেই জানিয়ে দিলেন যে, তিনি ‘এদের’ নিতে এসেছেন। এদের মানে স্ত্রীপুত্রকন্যাদের। তাঁরা এসেছেন দিনকয়েক আগে, বেয়ানের শ্রাদ্ধের কাজটা সামলে দেবার অজুহাতে।
ভোর সাড়ে চারটার গাড়িতেই যেতে হবে। দেরি করবার উপায় নাই; কেন না প্রতিবেশী সিংহিবাবুদের বাড়িতে মেয়ের বিয়ে। কালকেই। তাঁরা স্বামীস্ত্রীতে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভদ্রলোকের দায় উদ্ধার না করে দিলে, দেখায় অত্যন্ত খারাপ।
এককড়ি দাসের পরোপকারের প্রবৃত্তিটা ভাল নয়। একটানা কোনও কাজে লেগে থাকার রুচি নাই। কাজেই পরোপকার করেই সে নিজের জীবিকা সংস্থান করে। সেইজন্য মেয়ে খালি বোরাটা ভরে দিল বেল, আলু, পাটালিগুড়, শিলনোড়া—অর্থাৎ ভাঁড়ার ঘরের যে জিনিস চোখের সম্মুখে পড়ল, তাই দিয়ে।
গাড়ি রাখা থাকে স্টেশন-ইয়ার্ডে সারারাত। শেষরাত্রিতে এতগুলি কাচ্চাবাচ্চাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার নানান লেঠা। তাই জামাই তাঁদের তখনই তুলে দিয়ে এল গাড়িতে। কুলির মাথা থেকে ভারী বোরাটাকে নামাবার সময় জামাই বলল, “একটা বোটকা বোটকা গন্ধ পাচ্ছি যেন বোরাটা থেকে।”
শ্বশুর শুঁকে বললেন—“না তো।”
বাবলু জিজ্ঞাসা করে—“মেজদি, বোটকা কিরে?”
বাবা তাড়া দিলেন—“হল আরম্ভ বাবলুর, এই রাত দুপুরে। শুয়ে পড়!”
মশার কামড়ে ঘুম হয়নি সারারাত। ভোর হতেই এককড়িবাবু জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলেন গার্ডসাহেব আসছেন, মেমসাহেবকে সঙ্গে নিয়ে। দুটো কুলির মাথায় লটবহর। বেয়ারাটা পিছনে পিছনে আসছে হাতের টিফিন বাস্কেটটাকে অতি সন্তর্পণে আলগোছে ধরে। মেমসাহেব উঠলেন গার্ডের গাড়িতে। গার্ডসাহেব এইবার চলেছেন চায়ের স্টলের দিকে। এককড়িবাবুও গাড়ি থেকে নেমে ছুটলেন চায়ের দোকানের দিকে।
গাড়ি এখনও না ছাড়ায় বাবলুও অস্থির হয়ে পড়েছে। গার্ডসাহেব নিশান নেড়ে বাঁশি বাজাবে, তবে তো গাড়ি ছাড়বে। সাহেব দেখলেই তার ভয় ভয় করে। গার্ডসাহেব হেসে বাবার সঙ্গে কথা বলছে চায়ের দোকানে। বাবা সায়েব দেখে একটুও ভয় পায় না। সায়েব দোকানদারকে কি যেন বলছে। দোকানদার সায়েবকে চা দিল মাটির খুরিতে আর বাবাকে দিল কাপে করে। বাবাকে দোকানদার সায়েবের চেয়েও বেশি ভয় করে। বাবা পকেট থেকে পয়সা বার করে দিতে যাচ্ছে, সায়েব দিতে দিল না। সায়েব খুরিতে চা নিয়ে চলে গেল। বাবা বাসিমুখে চা খাচ্ছে। বাবার মতন অত গরম চা আর কেউ খেতে পারবে না; সায়েবও পারবে না; এনজিন-ড্রাইভারও পারবে না। বাড়িতে তাদের চা হয় না; বাবা চা খায় অন্য লোকের বাড়িতে।
বাবা গাড়িতে ফিরতেই বাবলু জিজ্ঞাসা করে—“বাবা, সায়েবরা খুরিতে করে চা খায়?”
“না।”
“ওই যে নিয়ে গেল।”
“ও নিয়ে গেল দুধ।”
“সায়েবরা খুরিতে কবে দুধ খায়?”
“চুপ করে বস! দেখছিস না গাড়িতে কত লোক উঠছে!”
সত্যিই গাড়ি একেবারে লোকে ভরে গিয়েছে ট্রেন ছাড়াবার আগে। এককড়িবাবুর স্ত্রীর কোলে খুকু কাঁদছে। দীপি আর মিনা ঘুমুচ্ছে। তারপর বসেছে বাবলু। তারপর বসেছে বাবলুর মেজদি আর সেজদি। অন্য যাত্রীরা দেখা গেল প্রায় সকলেই সকলের চেনা। একজন বললেন ‘চারটে পঁয়ত্রিশ তো হল।’
“হ্যাঁ, কারেক্ট টাইমে-ই ছাড়বে; গার্ড সাহেবের নিজেরই চাড় আছে আজ।”
“কেন, মেমসাহেব সঙ্গে আছে বলে?”
“হ্যাঁ। দেড় বছর পর মিসেস রবার্টসন ফিরে এসেছে টি বি স্যানেটোরিয়াম থেকে।”
“আজকাল আর টি বি-তে লোক মরে না। বেশ স্বাস্থ্য হয়েছে মেমসাহেবের।”
“হ্যাঁ। কাল রাত্রিতে যদি দেখতে রবার্টসনকে। একেবারে আনন্দে ডগমগ, প্ল্যাটফর্মে মেমসাহেবকে দেখে।”
গাড়ির ঘণ্টা পড়ায় এদের গল্পে বাধা পড়ল। এককড়িবাবুর মুখের উদ্বেগের ভাবটা যেন একটু কাটল। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন—“এরা সব রেলে কাজ করে।”
গাড়ি ছাড়ায়, বাবলুর গল্পের উৎসাহ বাড়ে।
“টেলিগ্রাফের তার ছুঁলে মানুষ মরে যায়, তবে পাখিরা মরে না কেন মেজদি?”
‘পাখিরা যে পাখি, আর মানুষরা যে মানুষ।”
“ও।”
বাবলু জানত, কিন্তু ভুলে গিয়েছিল।
“ওগুলো অমন সার বেঁধে বসেছে কেন মেজদি?”
“নেমন্তন্ন খেতে বসেছে বোধহয়।”
“ধেৎ! পাখিরা আবার নেমন্তন্ন খায় নাকি।”
“আমরা নেমন্তন্ন খাব আজ, আর পাখিরা খাবে না?”
“পাখিবা যে পাখি।”
“তা হলই বা।”
“আমরা কাল খেয়েছি নেমন্তন্ন, পরশু খেয়েছি নেমন্তন্ন। পাখিরা খেয়েছিল?”
“জানি না যা!”
মেজদি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসল। বাবলুর দরকার কথা বলবার লোকের।
“এই দীপি ওঠ। আর চারটে ইস্টিশান পরেই রাধানগরে পৌঁছে যাবে গাড়ি; এখনও ঘুমুচ্ছে।”
মা তাড়া দিলেন—“ও কি হচ্ছে বাবলু! ও ঘুমুচ্ছে, ওকে চিমটি কাটছিস কেন?”
“রাধানগরে ওদের ঘুম ভাঙিয়ে, নামাতে নামাতে যদি গাড়ি ছেড়ে যায়?”
“তোকে সর্দারি করতে হবে না। এখনই উঠে আবার খাওয়ার জন্য চেঁচামেচি আরম্ভ করে দেবে।”
“আমি মা লেডিকেনি খাব।”
বাঙ্কের উপর হাঁড়িতে মেয়ের দেওয়া লেডিকেনি রয়েছে; সেইটাই বাবলুর লক্ষ্য।
“ওখানে গিয়েই তো নেমন্তন্ন বাড়িতে কত কি খাবি। এখন হ্যাংলাপনা করিস না একগাড়ি লোকের মধ্যে!”
বাবা বকে উঠলেন—“বাবলু, হচ্ছে কী। মুখ না ধুয়ে খায় না কি লোকে?”
“তুমি তো মুখ না ধুয়ে চা খেলে।”
“ওকি নিজে থেকে খাওয়া নাকি; সাহেব খাওয়াল, তাই খেতে হল।”
“ও।”
বড়দের যুক্তি বাবলু ঠিক বুঝতে পারে না, তবু ভাব দেখায় যেন বুঝেছে। তার এখন ইচ্ছা করছে খাওয়ার গল্প করতে।
“সেখানে পৌঁছেই আমরা বিয়ে বাড়ি যাব, না?”
“স্নান করে তবে তো যাবি।”
“জলখাবার খাব বিয়ে বাড়িতে গিয়ে—না?”
“হ্যাঁ।”
“তারপর দুপুরবেলা নেমন্তন্ন খাব, রাত্রিতে নেমন্তন্ন খাব।”
“হ্যাঁ। তবে কাজ করতে হবে কিন্তু বিয়েবাড়িতে।”
“কী কাজ?”
“কাক তাড়াবি; জুতো পাহারা দিবি।”
“ধুৎ! দীপি, মিনা, খুকু এরা কিন্তু কাজ না করেই নেমন্তন্ন খাবে।”
“ওরা যে একেবারে বাচ্চা। দেখিস না ওদের টিকিট লাগে না ট্রেনে।”
“আমার টিকিট লাগে?”
“হ্যাঁ, হাফ-টিকিট। তোর হাফ-টিকিট, সেজদির হাফটিকিট, মেজদির হাফটিকিট।”
একটা স্টেশনে গাড়ি থামায়, বাবলুর মনোযোগ অন্যদিকে গেল। জানলা দিয়ে সে প্ল্যাটফর্ম দেখছে।
“মেজদি! মেজদি! ওই দ্যাখ মেমসাহেব। গার্ডের গাড়ির কাছে। ওর কোলে একটা কালো বিড়াল রয়েছে।”
“ফের যদি জানলা দিয়ে ঝুঁকেছ, তা হলে দেব কান ছিঁড়ে!”
এককড়িবাবু বাবলুকে টেনে ধরে সোজা করে বসিয়ে দিলেন বেঞ্চের উপর। তারপর সম্মুখের বেঞ্চের খবরের কাগজ পাঠরত ভদ্রলোকটির দিকে হাত বাড়ালেন।
“দেখি দাদা একখানা পাতা। হ্যাঁ আসল পাতাখানাই হাতে এসেছে ঠিক।”
“কোনখান? ও জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর খুব বিশ্বাস বুঝি মশায়ের?”
“বিশ্বাস! বিশ্বাস বলছেন? হুবহু মিলে যায়। আমার নিজের জন্মের রাশিটা ঠিক জানা ছিল না আগে। একদিন একখানা পুরনো কাগজ নাড়াচাড়া করতে করতে দেখি, মিথুনরাশির ফলাফল আমার সেই সপ্তাহের জীবনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সেই থেকে আমি ধরে নিয়েছি যে মিথুনরাশিতে আমার জন্ম। তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহে মিথুনরাশির ফলাফলের সঙ্গে আমার জীবনের ঘটনাগুলোকে মিলিয়ে আসছি। একেবারে মিলে যায় মশাই। একটুও বাড়িয়ে বলছি না।”
কাগজের দিকে চোখ থাকলে কি হয়, এককড়ি কান খাড়া রেখেছে রেলের বাবুদের গল্পের দিকে। তাদের মধ্যে কি করে যেন রবার্টসনের কথা আবার উঠেছে। সেইটাই হয়েছে তার দুশ্চিন্তার বিষয়। তাদের গল্প কানে আসছে।
“মেমসাহেব স্যানেটোরিয়াম থেকে ফিরতি পথে ওখানে পৌঁছেছিল বিকালের গাড়িতে। আসবার কথা ছিল রাত বারোটার গাড়িতে; কিন্তু পৌঁছে গিয়েছিল আগেই। রবার্টসন সাড়ে ন’টার গাড়ি নিয়ে যখন ওখানে পৌঁছল, তখন মেমসাহেব একমুখ হাসি নিয়ে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে, স্বামীকে ‘রিসিভ’করবার জন্য।”…
প্রয়োজনের চেয়েও জোরে জোরে চেঁচিয়ে এককড়ি হঠাৎ সম্মুখের ভদ্রলোককে জ্যোতিষশাস্ত্র বোঝাতে লাগল।
“একেবারে অঙ্ক মশাই। জ্যোতিষশাস্ত্রের মধ্যে জালজোচ্চুরিও নেই, ধর্মকর্মও নেই, মুনিঋষিও নেই। অঙ্ক ঠিকভাবে কষো, আর পাতা উলটে উত্তর মিলিয়ে দেখে নাও, ঠিক হল কি না।”
ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন—“আপনার এ সপ্তাহ কেমন যাবে, সে সম্বন্ধে কাগজে কী বলে?”
“শুনুন। রাজ কর্মচারীরা জাতকের উপর সদয়। বন্ধুভাগ্য ভাল। সুযশ ও অর্থাগমের সম্ভাবনা।”…
“তবে তো মশাই মেরে দিয়েছেন!”
“মেজদি, বাবা কি পড়ল রে কাগজে?”
“ওসব হাত গোনার কথা। তুই বুঝবি না।”
এককড়ির চিৎকারে ছোটখুকু জেগে উঠেছে। তাই স্ত্রী চটেছেন স্বামীর উপর। “একটু আস্তে কথা বলো না! এখানে কালা কেউ নেই।”
রেলের বাবুদের গল্প তখন বেশ সরস জায়গায় পৌঁছেচে।
“প্ল্যাটফর্মের উপর, এক হাট লোকের মধ্যে, দুজন দুজনকে জড়াজড়ি করে, রবার্টসন আর তার মেমের সে যে কি চুমো খাওয়ার ঘটা কাল রাত্রিতে।”…
এককড়ি তাড়া দিয়ে উঠল—“গাড়িতে মেয়েছেলে রয়েছে দেখতে পাচ্ছেন না! কী রকম ভদ্রলোক মশাই আপনারা?”
“কেন, কী অভদ্রতা করলাম আমরা?”
“নিজের মা-বোনের সম্মুখে আপনারা এই সব অশ্লীল কথা বলেন?”
“আমরা গল্প করছি নিজেদের মধ্যে, সে কথা আপনাদের কান খাড়া করে শোনবারই দরকার কি।”
“চোখের পাতা যখন ইচ্ছা বোঁজা যায়, কিন্তু কান ইচ্ছামতো বন্ধ করবার কোনও ব্যবস্থা যে ভগবান করে দেননি।”
“এত যাঁদের শুচিবাই তাঁরা পুরুষদের গাড়িতে মেয়েছেলেদের ওঠান কেন?”
“রেলে কাজ করেন কিনা; তাই ভাবেন গোটা রেলগাড়ি খানাই আপনাদের। জেনুইন প্যাসেঞ্জারদের সুবিধা দেখবেন কেন আপনারা।”
“দেখুন অনর্থক গায়ে পড়ে আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করতে আসবেন না। হ্যাঁ, তারপর যে কথা হচ্ছিল—সায়েবমেম যখন উল্লাসে আত্মহারা, ঠিক সেই সময় একজন আধপাগলা গোছের লোক চটের থলিতে একটা বিড়াল নিয়ে ওই ট্রেন থেকে নেমেছে। সবাইকে তার সঙ্গে ঠাট্টা তামাসা করতে দেখে মেম জিজ্ঞাসা করে—ওখানে গোলমাল কিসের ডিয়ার? পাগলা লোকটা জানাল যে, কালো বিড়াল বড় অমঙ্গুলে বলে সেটাকে সে এখানে ছেড়ে দেবার জন্য নিয়ে এসেছে। সাহেব তো অবাক। কালো বিড়াল অমঙ্গুলে? কে বলে? ওই বিড়ালটা আমার ট্রেনে ছিল বলেই প্রত্যাশিত সময়ের আগে আমি মেমসাহেবদের দেখা পেয়েছি। মিসেস রবার্টসন বলল—বিড়ালটাকে আমি পুষব, ডিয়ার। লোকটা চটের থলেটা দিতে কিছুতেই রাজি হল না। অতি কষ্টে বিড়ালটাকে ঢোকান হল মেমসাহেবের টিফিন বাস্কেটে।”
বাবলু ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করে—“কি হয়েছিল রে মেজদি কালো বিড়ালের?”
“ওসব অসভ্য কথা শুনিস না।”
বাবলু জানলার দিকে মুখ ফিরিয়ে সুস্থির হয়ে বসল। কালো বিড়ালের খবরটা জানবার জন্য তার খুব ইচ্ছা করছে; তাই সে কান পেতে আছে অসভ্য কথার দিকে।
সমর্থন পাবার আশায় এককড়ি সম্মুখের ভদ্রলোককে বলে—“সবাই ‘কমপ্লেন’ করে যে ভিড়ের ঠেলায় রেলগাড়িতে ওঠা যায় না। আরে ভিড় কমবে কোথা থেকে। প্যাসেঞ্জারের শতকরা নিরানব্বই জনই যে রেলে কাজ করে। সব ‘ফ্রি’ পাসের দল!”
ভদ্রলোকটি কাগজের পাতা থেকে মুখ সরালেন না।
একজন টিকিটচেকার এসে ঢুকেছেন গাড়িতে। বাবলুর সাহেব দেখলে ভয় করে, পুলিশ দেখলে ভয় করে, আর রেলগাড়িতে টিকিটচেকার দেখলে ভয় করে। এঞ্জিনড্রাইভারের চেয়েও সাহস বেশি টিকিটচেকারদের। ডাকাতসর্দারের মতো অন্ধকার রাত্রিতে তারা এক গাড়ি থেকে অন্য গাড়িতে যেতে পারে। চেকার টিকিট ফুটো করবার সাঁড়াশিটা বাবার মুখের সম্মুখে ধরেছে, ঠিক ডাকাতসর্দাররা যেমন করে পিস্তল ধরে। বাবা টিকিট দেখাচ্ছে। দীপি, মিনা, খুকু কারও টিকিট নাই। যদি ওদের ধরে নিয়ে যায়, তা হলে কি হবে! ভয়ে বুক ঢিপ ঢিপ করে বাবলুর।
এককড়ি খবরের কাগজ থেকে চোখ না তুলে অতি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে টিকিটগুলোকে দিল চেকারের হাতে।
“আপনারা কজন?”
“এই যে কজনকে দেখতে পাচ্ছেন এখানে।”
“টিকিট দিলেন তো সাড়ে তিনখান।”
“হ্যাঁ দুখান ফুল আর হাফ তিনখান।”
“আর একখান হাফ টিকিটের দরকার হচ্ছে যে। ছোট দুটির না হয় লাগবে না।”
“না, ওরও লাগবে না। ওর বয়স দুবছর চার মাস।”
“দেখুন, আমরাও মশাই পুত্ৰপরিবার নিয়ে ঘর করি; গেরস্তর দুঃখদরদ বুঝি। অন্যদিন হলে ছেড়ে দিতে পারতাম। আজ উপায় নেই। আজ রাধানগরে magisterial checking হবে, খবর পেয়েছি। নিজের চাকরিটা তো বাঁচাতে হবে। আপনাকে মশাই আর একখান হাফটিকিট কিনতে হবে।”
“কেন কিনব? বলছি, বিশ্বাস করুন, ওর বয়স আড়াই বছরের নীচে। ঠিকুজি কুষ্ঠিতো এখানে দেখাতে পারি না; আমার কথাই আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে।”
“না সে হয় না।”
“হবে না কেন শুনি!”
“তিনজন ফ্রি টিকিটে যাবে, সে হয় না।”
“হয়। হয়। একশোবার হয়!”
আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে এককড়ির।
“হবে না কেন। এক সঙ্গে পাঁচজনেরও জন্ম হয় পৃথিবীতে; কিন্তু সেরকম দাবি তো আপনার নেই। সাড়ে ছ’আনা পয়সার তো মামলা। এ নিয়ে কেন এত কথা বাড়াচ্ছেন?”
টিকিট-চেকারের কথাবার্তার ধরন দেখে এককড়ির মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছে। সব চেয়ে গা জ্বালা করে অন্য সব রেলের বাবুদের হাসি দেখে। সবাই মজা দেখছে! এক গাড়ি প্যাসেঞ্জার; কিন্তু সবাই টিকিট-চেকারের দিকে! সবাই ধরে নিয়েছে যে সে টিকিট ফাঁকি দিতে চায়! ইডিয়টের দল!
“কথা বাড়াচ্ছি আমি, না আপনি? এ সাড়ে ছ’ আনার প্রশ্ন নয়; আইনের প্রশ্ন। Rule is rule. রেলের রুল অনুযায়ী ওর টিকিট লাগবে না।”
“অযথা তর্ক করেন তো আমি নাচার। অতি ছোট ছেলেটাও যে কথা বোঝে, আপনি বুঝেও সে কথা না বোঝবার ভান করছেন।”
“মুখ সামলে কথা বলবেন!”
“দেখুন এক মায়ের পেটের তিনটি মেয়ের টিকিট লাগবে না সরকারি নিয়ম অনুযায়ী—এরকম কথা ভুল, যে কচি ছেলেটা সবে কর গুনতে শিখেছে সেও ধরতে পারবে। আর নিজেই যখন স্বীকার করছেন যে, ওদের মধ্যে যমজও কেউ নয়, আটাশেও কেউ নয়।”
“আমাকে অঙ্ক শেখাতে এসেছেন! তিনটে দোকানদারের ইনকামট্যাক্সের খাতা লিখে দিই আমি প্রতি বছরে। কর গোনা শেখাতে এসেছেন? কোত্থেকে যে রেল কোম্পানি এই সব গবেটগুলোকে ধরে এনে চাকরি দেয় জানি না! আপনাদের একমাত্র কাজ genuine passenger দের harass করা! সব বুঝি। কেবল ঘুষ খাওয়ার মতলব।”
“সাড়ে ছ’আনার টিকিটে কত আর ঘুষ খাব। যাক, আপনি যখন টিকিট কিনতে রাজি না, তখন আপনাকে ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে অ্যাপিয়ার হতেই হবে। ভাল কথায় বললাম, তা হল না। জরিমানা দেবার সাধ গিয়েছে, তার আর আমি কি করি।”
এককড়ির মেজাজ সপ্তমে চড়েছে। গাড়ি কখন পরের স্টেশনে থেমেছে সেকথা তার খেয়াল নাই।
“আপনাদের ওসব ম্যাজিস্ট্রেট-ফ্যাজিস্ট্রেটের তোয়াক্কা রাখে না এককড়ি দাস। দেখে নেব আমি আপনাকে। আপনার চাকরি খাব! Simple যোগ বিয়োগও কি কোনওদিন শেখেননি?”
সে অনর্গল চিৎকার করে যাচ্ছে। গাড়ির দরজার সম্মুখে লোক জমে গিয়েছে। প্যাসেঞ্জারদের প্রত্যেকেই সমর্থন করছে টিকিটচেকারকে। কেউ কেউ সন্দেহ করছে লোকটা হয়তো ছিটগ্রস্ত।
“বেশি গোলমাল করেন তো এখানেই নামিয়ে পুলিশে হ্যান্ডওভার করে দেব।”
উঠে দাঁড়িয়েছে এককড়ি। হাতাহাতি হবার উপক্রম। কয়েকজন প্যাসেঞ্জার এসে দুজনকে আলাদা করে দিল। ছেলেমেয়েরা কাঁদছে। বাবলুর মা স্বামীকে হাত ধরে বেঞ্চিতে বসাতে চাচ্ছেন। এককড়ি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে—“আমি আপনার নামে ক্রিমিনাল কেস আনব। রেলের বিরুদ্ধে ‘ড্যামেজ স্যুট’ আনব। লোকসভায় প্রশ্ন করাব এ নিয়ে। ভাববেন না যে এখানেই এ ব্যাপার শেষ হল!”
ভিড় ঠেলে গার্ডসাহেব এসে গাড়িতে ঢুকলেন।
“কী ব্যাপার? কিসের গণ্ডগোল?”
“তিনটে মেয়েকে ফ্রি টিকিটে নিয়ে যেতে চান এই প্যাসেঞ্জার।”
রবার্টসন সাহেব অবাক হয়ে তাকালেন এককড়ির দিকে।
“ইউ! আপনি! আপনার দেওয়া পুসিটা দুধ খাওয়াবার পর থেকে পোষ মেনে গিয়েছে। এখন বেশ আরাম করে শুয়ে রয়েছে আমার স্ত্রীর কোলে।”
রেলের বাবুরা উপহাসে নির্দয় হয়ে উঠেছে।
“ইনিই তা হলে কাল রাত্রের তিনি!”
“ট্রান্সপোর্ট বিজনেস করেন।”
“অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স আনলিমিটেড।”
খেপে উঠেছে এককড়ি।
“সাট আপ! ভেবেছেন এককড়ি দাস ইংরাজি রসিকতার মানে বোঝে না! স্ত্রীপুত্র পরিবারের সম্মুখে এই সব ইনডিসেন্ট কথা বলে আমাকে অপমান করা!”
“হ্যাঁ, জেনুইন প্যাসেঞ্জারকে।”
রবার্টসন সাহেব রেলের বাবুদের থামিয়ে দিয়ে, টিকিট-চেকারকে জিজ্ঞাসা করলেন—“কত দিতে হবে?” পকেট থেকে পয়সা বার করছেন দেখে এককড়ি হুঙ্কার দিয়ে উঠেছে।
“আমি ভিখিরি নই। কারও দানের প্রত্যাশী নই। আমি শুধু চাই রেলকর্মচারীরা, গভর্নমেন্টের তয়ের করা নিয়ম মেনে চলুক!”
“তবে যা মন চায় করুন।”
গার্ডসাহেব চলে গেলেন।
গাড়ি ছেড়েছে। এর পরের স্টেশনই রাধানগর। গাড়িতে একটা থমথমে ভাব এসেছে। রেলের বাবুরা টিপ্পনী কাটা বন্ধ করেছেন। ছেলেমেয়েদের কান্না বন্ধ হয়েছে। বাবলুর মুখে পর্যন্ত কথা নাই। আসন্ন বিপদের ভয়ে ভাইবোন সকলে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেছে। বাবলুর মা মাথা নিচু করে বসে আছেন। স্বামীর কাণ্ডতে লজ্জায় তাঁর মাথা কাটা যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে তিনি সব প্যাসেঞ্জারদের সহানভূতি আকর্ষণ করতে পেরেছেন। একজন সাহস সঞ্চয় করে তাঁকে বলল—“আপনি একটু বুঝিয়ে বলুন ওঁকে।”
“আপনি আমার স্ত্রীর উপরও কর্তৃত্ব ফলাতে চান দেখছি। এককড়ি দাস মেয়েমানুষের কথা শুনে চলে না।”
রাধানগর স্টেশনে যখন গাড়ি থামল তখনও এককড়ির আস্ফালন থামেনি।
“চলুন কোথায় যেতে হবে।”
ওয়েটিংরুমে কোর্ট বসেছে ম্যাজিস্ট্রেটের। লটবহর, স্ত্রী ছেলেমেয়ে সবসুদ্ধ এককড়িকে হাজির করা হল তাঁর সম্মুখে। লোকে লোকারণ্য।
ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞাসা করলেন—“আপনি সাড়ে ছ’আনা দিয়ে দিতে প্রস্তুত আছেন?
“আপনিও সার এই কথা বলছেন! টিকিটচেকারটা আপনাকেও হিপনটাইজ করল নাকি?”
“সাবধানে কথাবার্তা বলবেন এখানে। এটা কোর্ট। অন্যায় করেছেন, কোথায় লজ্জিত হবেন, তা নয় আবার উদ্ধতভাবে কথা বলছেন।”
“লজ্জিত হবার মতো কিছু আমি করিনি। রেলের নিয়ম অনুযায়ীই আমি আমার ছোট মেয়ে তিনটিকে নিয়ে যাচ্ছি বিনা টিকিটে।”
“তা হলে দেখান সে রুল আমায়।”
“রুল দেখাবার দরকার নেই। শুধু যোগবিয়োগ জানলেই হবে। ওই তিনটির মধ্যে বড়টির বয়স দু’বছর চার মাস। ওর কি টিকিট লাগবে?”
“ওর বয়সটাতো আমরা অবিশ্বাস করছি। আপনার তিনটি সন্তান ফ্রি টিকিটে যেতে পারে না। সম্ভব অসম্ভব বলেও তো একটা জিনিস আছে।”
“অসম্ভব? একটি সন্তান মায়ের পেটে থাকে কতদিন? দশ মাস?”
“দশ মাস কেন, আমি আরও কমিয়ে দিচ্ছি। Period of gestation ২৭৩ থেকে ২৮০ দিন পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ ধরুন ন’মাস তিনদিন।
“আমি কনশেসন চাচ্ছি না সার—দশ মাসই আপনি রাখুন। একজনের বয়স যদি দুই বছর চার মাস হয় এবং তার পরেরটি যদি এক বছর পর জন্মায়, তা হলে তার বয়স হয় এক বছর চার মাস। কেমন কিনা? আর আমার ছোট মেয়েটি আঁতুড়ঘর থেকে বেরিয়েছে মাসখানেক আগে। বিশ্বাস না হয়, ওর মাকে জিজ্ঞাসা করুন। এর মধ্যে সম্ভব অসম্ভবের কথা কি করে আসছে? সোজা হিসাব। অথচ লোকে গুলিয়ে ফেলছে। জালজোচ্চুরি দেখতে দেখতে লোকের এমন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, সার, যে যেই দেখল তিনটি মেয়েকে বিনাটিকিটে নিয়ে যাচ্ছে, অমনি ধরে নিল যে নিশ্চয়ই ফাঁকি দিচ্ছে লোকটা। লোকে বলল কাকে কান নিয়ে গিয়েছে, অমনি তার পেছু পেছু ছোট। আপনি তো তবু আমার কথা ধৈর্য ধরে শুনলেন; চেকারবাবুর সে সময় কোথায়! আর প্যাসেঞ্জারদের কথা বাদ দেন। একজন যেই বললে চোর অমনি সবাই চেঁচাল ‘ধর! ধর!’—সবাই মিলে আমায় হেসেই উড়িয়ে দিল সার।”
ম্যাজিস্ট্রেটসাহেব চেকারকে তাড়া দিলেন অনর্থক জেনুইন প্যাসেঞ্জারকে কষ্ট দেবার জন্য।
“ঠিক আছে সার। আমি চেকারের বিরুদ্ধে ড্যামেজ স্যুট আনব, আর আপনাকে সে কেসে সাক্ষী মানব, বলে রাখলাম। এখন আমার একটু বিশেষ তাড়াতাড়ি আছে। এই কুলি! মাল ওঠাও।”
দোরগোড়াতেই মিস্টার আর মিসেস রবার্টসন দাঁড়িয়ে। গলায় রিকনবাঁধা একটা কালো বিড়াল মেমসাহেবের কোলে। জটিল বিষয়কে সরল করবার অদ্ভুত প্রতিভাসম্পন্ন এই funny বাবুটির সঙ্গে করমর্দন করবার জন্য সাহেবমেম দুইজনেই হাত বাড়ালেন। কী হল ঠিক বলা যায় না; কুলির মাথার প্রকাণ্ড বস্তাটার গন্ধ পেয়ে, কিংবা এককড়ি তাকে আবার ধরতে আসছে ভেবে, বিড়ালটা লাফ মেরে ম্যাজিষ্ট্রেটের টেবিলের উপর দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল।
স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরবার পথে বাবলু মেজদিকে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করল—“বাবা অঙ্কে ফাস্ট—নারে?”
“হ্যাঁ।”
“ম্যাজিস্ট্রেটসাহেব সেকেন্ড?”
“হ্যাঁ।”
“গার্ডসাহেব থার্ড?”
“হ্যাঁ।”
“আর টিকিটচেকার লাস্ট।”
বাবলুর মা এতক্ষণে মুখ খুললেন।
“কাঁধে করে বিড়াল বয়ে নিয়ে যাবার হুজুগ আবার উঠেছিল কেন তোমার? মাথা খারাপ হল না কি!”
“আরে তুমিও যেমন! বিয়েবাড়িতে বিড়ালটা পরিত্রাহি চিৎকার করছিল। বাড়ির গিন্নি বললেন, কালো বিড়ালের ডাক বিয়েবাড়িতে অমঙ্গল ডেকে আনে। আর যাবে কোথায়। সিংহিবাবুকে তো জানই। তখনই হুকুম হয়ে গেল, যে ওটাকে ধরে দূরে নিয়ে গেয়ে ফেলে দিয়ে আসতে পারবে তাকে দশটাকা দেবেন তিনি। বিড়াল ধরা কি যে সে লোকের কম্ম। শেষ পর্যন্ত সেটাকে ধরল সিংহিবাবুর নেপালি দারোয়ান। নেপালি বলেই পেরেছিল। তখন মালিকের মনে পড়ল যে, বিয়েবাড়ির গেট ছেড়ে দারোয়ানের কিছুতেই বাইরে যাওয়া উচিত না। কাজেই আমাকেই নিতে হল ওটাকে দূরে ফেলে আসবার ভার।”
“কেন, আর কি পৃথিবীতে লোক ছিল না তুমি ছাড়া?”
“লোকের অভাব কি পৃথিবীতে; অভাব হচ্ছে টাকা পয়সার। নেপালিটার সঙ্গে দরকষাকষির পর ঠিক হল—সে পাবে ওটাকে ধরবার জন্য চার টাকা, আর আমি পাব রাহা খরচ ছাড়া ওটাকে ফেলে আসবার জন্য চার টাকা। আমি ভাবলাম তোমাদের জামাইবাড়ি থেকে আনবার খরচটাও উঠে যাবে; শ্রদ্ধবাড়িতেও একবার হাজরি দেওয়া হবে; তারপর বিয়েবাড়িতেও বাড়িসুদ্ধ সবাই মিলে দিনকয়েক বেশ…”
কথাটাকে আর শেষ করল না এককড়ি। মুখ দেখে বুঝল যে গিন্নি বুঝে গিয়েছেন, শেষ করবার আগেই। তারপর এককড়ি হিসাব খতিয়ে নিল মনে মনে।
যাবার সময়ের রেল ভাড়া—তেরো আনা। ওখানকার কুলিভাড়া দিয়ে দিয়েছে—জামাই। ওখান থেকে আসবার রেলভাড়া—দুই টাকা সাড়ে তেরো আনা।
রাধানগরে কুলিভাড়া—তিন আনা।
স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরবার গাড়িভাড়া—এক টাকা
মোট খরচ চারটাকা তেরো আনা।
বাঁচল—এক টাকা তিন আনা। আর জামাইবাড়িতে চটের বোরাটা নিয়ে গিয়ে ঠিকই করেছিল সে। তার হিসাবে কোথাও ভুল হয়নি। যা করেন শ্রীহরি!
গিন্নি বললেন—“ওই নোংরা বোরার জিনিসপত্রগুলোকে কিন্তু আমি না ধুয়ে ঘরে তুলতে দেব না। ওটা থাক আজকে উঠোনে পড়ে। এখনই বিয়েবাড়িতে যেতে হবে। ধোয়াধুয়ি করবার সময় হবে না এখন।”
গাড়ি থেকে নেমে সবে বাড়ির মধ্যে ঢুকেছেন; বাইরে হুঙ্কার শোনা গেল। সিংহিদের বাড়ির নেপালি দারোয়ান। ছুটতে ছুটতে এসেছে বলে হাঁপাচ্ছে। চক্ষুরক্তবর্ণ; ভোজালির খাপে হাত। কোথায় বেইমান এককড়িবাবু! টাকার বখরা নিয়েছে, অথচ তার মনিবের কাজ করে দেয়নি! বিয়েবাড়িতে হুলস্থূল কাণ্ড বেধেছে। মনিব চটে লাল। মাইজিরা কাঁদছে। কালো বিড়ালটা এখনই ফিরে এসেছে, সেই বিদঘুটে ডাকটা মুখে নিয়ে।…
দড়াম করে সদর দরজার খিল এঁটে দিল এককড়ি, নেপালিটার মুখের উপর।
কুয়োতলা থেকে বাবলুর গলা শোনা যাচ্ছে।
“বাবা হাত গোনায় ফাস্ট, নারে মেজদি; আর মা সেকেন্ড?”
বার্ষিক সংখ্যা ১৩৬৮ (১৯৬২)