সঞ্চয়াভিলাষীর অভিযান – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
একেবারে পাড়া গাঁ, একদিন অন্তর ডাক-পিয়ন আসে, এমনিই চিঠি আসিতে দেরি হয়, তার ওপর কলিকাতা শহর অনেক দূর, তিনখানা গ্রামের পর যে গ্রামটিতে পোস্টাপিসের অধিষ্ঠান, সেখান পর্যন্ত চিঠি পৌঁছিতেই দুদিন সময় লাগে। পোস্টকার্ডে ঠিকানাটাও ঠিকভাবে লেখা হয় নাই, কেবল গ্রাম আর জিলার নাম। বিহারী অনেকদিন গ্রামছাড়া, মাঝে মাঝে গ্রামে আসে, ঠিকানায় কেবলমাত্র তার নামটা থাকার জন্যও হয় তো দেরি হইয়াছে। এ বাড়িকে বিহারীর কাকা রামধনের নামেই চেনে।
বাড়িতে থাকিলেও দুপুরবেলা চিঠিখানা পাওয়া যাইত। পাড়ার তাসের আড্ডায় তাস খেলিয়া আর কলিকাতার রোমাঞ্চকর গল্প বলিয়া সন্ধ্যার খানিক আগে বাড়ি ফিরিয়া বিহারী চিঠিখানা পাইল। নন্দ জানাইয়াছে, যশোদা তাড়াতাড়ি ভূষণের সঙ্গে ব্যায়লার বিবাহ দিয়া দিতেছে, এখন যা করা কর্তব্য বিহারী যেন করে। বিবাহের তারিখটাও নন্দ জানাইয়াছে।
মুখে মাই-গোঁজা ছেলেটাকে এক হাতে কাঁখে ঝুলাইয়া রাখিয়া অন্য হাতে বিহারীর বৌ শক্তি চিঠিখানা তাকে দিয়াছিল। সে বলিল, ‘যশুদা কেডা, কার বিয়া? সুব্লা চিঠি পইড়া কয়, আমি কইলকাতায় য্যানে ঘর নিয়া থাক,—কও না কইবা, গাইল দেও ক্যান?’
কলহ করিবার সময় ছিল না। বিহারী তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হইয়া নিল। শক্তিকে ঘরের মধ্যে ডাকিয়া প্রথমে মিষ্টি কথা বলিয়া বুঝাইবার চেষ্টা করিল, তারপর এক হাতে তাকে শক্ত করিয়া চাপিয়া ধরিয়া গায়ের যেখানে যেটুকু ছিল একে একে সব খুলিয়া নিল, ছেলেটা মাটিতে পড়িয়া চেঁচাইতে লাগিল। শক্তিও যে চুপ করিয়া রহিল তাহা নয়। বাড়ির সকলে ছুটিয়া আসিয়া কলরব জুড়িয়া দিল, বাড়িতে যেন ডাকাত পড়িয়াছে। বিহারী কোন কথা বলল না, কোন কৈফিয়ত দিল না। কিন্তু কৈফিয়ত দিবার প্রয়োজন ছিল না, বৌ-এর গয়নাগুলি কাড়িয়া লইয়া যাইবার উদ্দেশ্যেই সে যে এবার গ্রামে আসিয়াছিল, কারও আর এ বিষয়ে সন্দেহ রহিল না। ছোট একটি পুঁটলি বাঁধিয়া নিয়া ছেলেকে একটু আদর করিয়া বিহারী ভক্তিভরে মাকে প্রণাম করিল। মা কাঁদিতেছিল। বিহারী সান্ত্বনা দিয়া বলিল, ‘কাঁদ ক্যান? বৈশাখ মাসে আইসা তোমাগো নিয়া যামু।’
ব্যাপারটা বুঝিবার পর রামধন স্ত্রীর সন্ধানে গিয়াছিল। এতক্ষণে একটা দা’ হাতে করিয়া আসিয়া উঠানে দাঁড়াইল। রামধন এত বেশি বুড়া হইয়া পড়িয়াছে যে, এই রকম অবস্থাতে ও ভঙ্গিতে সোজা হইয়া দাঁড়াইতে কষ্ট হয়। রামধনের হাতে ধারাল দাটা উদ্যত থাকা সত্ত্বেও বিহারী দা’য়ের নীচে গলা বাড়াইয়া দেওয়ার মতো উবু হইয়া তাকে প্রণাম করিল। ভর্ৎসনা করিয়া বলল, ‘তুমি নি মাইয়ালোক খুড়া, বুঝবার পার না কিছু?’
রামধনকে ব্যাপারটা বুঝাইয়া বলিতে একটু সময় নষ্ট হইল। রামধন কিছুই বলিল না, যেটুকু বুঝিল তাও বিশ্বাস করিল না। কলিকাতায় থাকিয়া কত গল্পই বিহারী বানাইতে শিখিয়াছে। ইতিমধ্যে সকলে চারিদিকে জড়ো হইয়া বিহারীর কথা শুনিতেছিল, বিহারীর মা রামধনের হাত হইতে দা’টি কাড়িয়া লইয়াছে। রামধন দ্বিধাসন্দেহে মাথা নাড়িতে নাড়িতে দাওয়ায় উঠিয়া বসিল।
এতক্ষণে সন্ধ্যা পার হইয়া গিয়াছে। বিহারী অসহিষ্ণু হইয়া পড়িয়াছিল, তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া গেল। কিন্তু যাওয়ার কি উপায় আছে। একের প্রয়োজন অন্যে কি বুঝিতে পারে। ডোবার ধারে আমগাছটার তলে শক্তি দাঁড়াইয়া ছিল। শেষ মুহূর্তে বাড়ির পিছন দিয়া ঘুরিয়া ছুটিতে ছুটিতে সে আসিয়াছে, নিশ্বাস পড়িতেছে জোরে জোরে, সন্তানের খাদ্যে পরিপুষ্ট বুক ওঠা-নামা করিতেছে।
‘আগো শোনো, মাথা খাও শুইনা যাও। এউককা কথা কইয়া যাও আমারে, তুমি নি বিয়া করবা যশুদার মাইয়ারে?’ তর তর করিয়া প্রশ্ন আর মিনতি শুনাইয়া যায় শক্তি, কতবার যে পায়ে পড়িতে চায় সংখ্যা হয় না। বিহারী যশোদার মেয়েকে বিবাহ করিবে না শুনিয়া সে একটু শান্ত হয়। এমনভাবে তবে সে ছুটিয়া যাইতেছে কেন, গয়নার তার কি প্রয়োজন? এত সব বৃত্তান্ত বলিবার সময় নাই এখন? তবে কিছু খাইয়া যাক বিহারী। তারও সময় নাই? তবে এক কাজ করুক বিহারী, এই দু’গাছা চুড়ির বদলে কানের মাকড়ি দুটি বিহারী তাকে দিয়া যাক, হাতে শাঁখা আছে, লোহা আছে, কাঁচের চুড়ি আছে, কানটা একেবারে খালি থাকিবে? লুকানো চুড়ি দু’গাছার বিনিময়ে কানের মাকড়ি পাইয়া শক্তি খুশি হয়। এইবার তাকে একটু আদর করিয়া বিহারী আসুক, আবার কবে দেখা হইবে কে জানে! কিন্তু এ কি, একটু আদর করিবার জন্য ঢেঁকি ঘরে যাওয়ার কি দরকার? তার না তাড়াতাড়ি, দুটা কথা কওয়ারও সময় নাই?
ঢেঁকি ঘর হইতে বাহির হইয়া বিহারী হন হন করিয়া চলিতে আরম্ভ করিল। শীতের শেষ, মস্ত একটা চাঁদ উঠিয়াছে গগন প্রান্তে, কিন্তু এখনো চারিদিক আলো হয় নাই। সবচেয়ে সোজা পথ ধরিয়া গেলেও সাত মাইল হাঁটিলে তবে নদী মিলিবে। সাত মাইল হাঁটা কিছু নয়, সময় যে লাগিবে তাই শুধু বিহারীর ভাবনা। ঢেঁকি ঘরে আধ ঘণ্টা সময় নষ্ট না করিলেই হইত। নন্দর চিঠি পড়িয়া মনটা কিছুক্ষণের জন্য দমিয়া গিয়াছিল, মনে হইয়াছিল এত বড় দুর্ভাগ্যকে ঠেকাইবার ক্ষমতা তার নাই এতদূর বসিয়া, সে একান্ত নিরুপায়, অসহায়। সে ভারটা কাটিয়া গিয়াছে। জোরে হাঁটিতে হাঁটিতে বৌকে আদর করিয়া সময় নষ্ট করার আফশোষও বিহারীর মিলাইয়া যায়। গোটা দুই তিন গ্রাম পিছনে ফেলিয়াই তার এমন উৎসাহ ও আত্মপ্রত্যয় জাগে যে মনে হয়, সময়কে পর্যন্ত সে টানিয়া প্রয়োজন মতো লম্বা করিয়া দিতে পারিবে, সে যদি সময়মতো না পৌঁছিতে পারে গোয়ালন্দ ট্রেনটা পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করিবে।
নদীর ধারে আসিয়া দাঁড়াইল বিহারী। এখন চারিদিক জ্যোৎস্নায় ভরিয়া গিয়াছে। এখানে ঘাট বলিয়া কিছু নাই, কোনদিকে নৌকা বা মানুষের চিহ্নও দেখা যায় না। নদীতীরে গ্রামটি যত ছোট হোক, বিহারী আশা করিতেছিল, দুটি একটি নৌকা নদীতীরে বাঁধা থাকিবে। নদীর দিকে তাকায় বিহারী, এমন কত বড় বড় ঢেউ, পরিষ্কার জ্যোৎস্নালোকেও কোথায় অদৃশ্য হইয়া আছে অপর তীর কে জানে। পরনের কাপড় জামা জুতা খুলিয়া পুঁটলির মধ্যে ভরিয়া গামছাটি বাহির করিয়া নিল। গামছা দিয়া পিঠের সঙ্গে জোরে পুঁটলিটি বাঁধিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িল নদীতে। পার হইতে পারিবে কি না কে জানে, হয় তো জলে বাস করে এমন কিছু তাকে টানিয়া নিবে, হয় তো জলেরই আবর্তে পড়িয়া সে কুটার মতো পাক খাইতে খাইতে তলাইয়া যাইবে, কিন্তু নদী তার পার হওয়া চাই। অপর তীরে পৌঁছিতে স্রোতে কতদূর ভাসিয়া কে জানে, কিন্তু স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করাও চলিবে না। তাতে শুধু শক্তি ক্ষয়, লাভ কিছু নাই। জলে ভিজিয়া পিঠের বোঝা ভারী হইয়া ওঠে, বাড়তি কাপড়জামার মায়া ত্যাগ করিলেই ভাল হইত। পুঁটলির মধ্যে বিড়ি আর দেশলাই ভিজিয়া নষ্ট হইয়া গেল ভাবিয়া বিহারীর আরও বেশি আপশোস হয়। স্রোত আর নিজের গতিতে বিহারী অপর তীরের দিকে কোণাকুণিভাবে আগাইতে থাকে। মনে হয়, এ নদীর শেষ নাই, এমনিভাবে একটানা সাঁতার কাটিতে কাটিতে অবসন্ন হইয়া এক সময় সে স্রোতে গা এলাইয়া দিবে, একটুকরা কাঠের মতো ভাসিয়া চলিতে চলিতে এক সময় জলের নীচে তলাইয়া যাইবে, তবু কূল পাইবে না। কত কথা মনে পড়ে বিহারীর। কীসের লোভে এমনভাবে সে কোথায় চলিয়াছে? একখানা পাকা বাড়ি আর একটি কচি বৌ-এর লোভে? শহরতলির কতকালের পুরানো একটা বাড়ি, বোঁচা নাক দাঁত উঁচু চোদ্দ বছরের একটা মেয়ে! না, এরকম কখনই হইতে পারে না। আরও অনেক কিছু সে চায়, ঠিক কি চায় এখন জানা না থাকিলেও, চায় যে তাতে সন্দেহ নাই। সে কি একটা বাড়ি আর একটা মেয়ের জন্য এত হাঙ্গামা করিবার পাত্র?
এ তীর এখানটায় ভাঙন ধরিয়াছে, পাড় একেবারে খাড়া। নরম মাটিতে আঙুল বসাইয়া আঁকড়াইয়া ধরা যায় না, মাটিশুদ্ধ খসিয়া আসে। পাড় হাতড়াইতে হাতড়াইতে খানিকটা ভাসিয়া গিয়া একটা ফাটল পাওয়া গেল। কোন মতে উপরে উঠিয়া মাটির ওপরেই নগ্ন দেহটা এলাইয়া দিয়া চিৎ হইয়া পড়িয়া রহিল মড়ার মতো, যে নদী সে পার হইয়া আসিয়াছে তারই স্রোতের মতো সময় যে বহিয়া চলিয়াছে অবিরাম, খেয়াল করিয়াও অনেকক্ষণ পড়িতে পারিল না। কেবল শ্রান্তিতে নয়, উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য এতক্ষণ যে পরিমাণ শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করিয়াছে তাহাতেই যেন সন্তুষ্ট হইয়া রহিল।
তারপর সে উঠিয়া দাঁড়াইল হঠাৎ। ভিজা গায়ে মাটি লাগিয়াছিল, ভিজা গামছাটা দিয়াই তাহা যতটা সম্ভব মুছিয়া ফেলিতে হইল, এত কাছে বিস্তীর্ণ জলরাশি, কিন্তু পাড় এখানে এমন খাড়াই যে, নাগাল পাওয়ার উপায় নাই। নদীর জোর বাতাসে বিহারীর শীত করিতেছিল, তবু ভিজা কাপড়জামা নিংড়াইয়াই তাকে পরিতে হইল, গায়েই এগুলি শুকাইয়া ফেলিতে হইল। জুতা পায়ে দিয়া দেখিল ভিজা চপচপে জুতা পায়ে দিয়া হাঁটা প্রায় অসম্ভব, একটা দারুণ অস্বস্তিও বোধ হয়, আলগা মাটি লাগিয়া দেখিতে দেখিতে দশগুণ ভারীও হইয়া ওঠে। পরে আপন মনে অতীত জীবনের কথা ভাবিবার সময়ই হোক অথবা লোকের কাছে নিজের অসামান্য শক্তিমত্তার বিবরণ বলিবার সময়েই হোক, জ্যোৎস্নারাত্রে নদী পার হওয়ার এই ঘটনা মনে আসিলে স্পষ্ট মনে পড়িয়াছে ভিজা জুতার কথাটাই মনে জাগিয়াছে, সবচেয়ে স্পষ্ট হইয়া পুরান জীর্ণ একজোড়া জুতা খানিকদূর হাতে করিয়া লইয়া গিয়া হঠাৎ ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দেওয়াই যেন ছিল তার সেদিনের সমস্ত বীরত্বের, সমস্ত অভিজ্ঞতার চরম। কোনদিন ভুলিতে নাই এমন একটা ব্যাপার।
নদীর এপারে তিলকপুর গ্রামে ভূষণ দাসের বাড়ি হইয়া গোয়ালন্দে গিয়া রাত্রির গাড়ি ধরিবার কল্পনা করিয়া বিহারী বাড়ির বাহির হইয়াছিল। কত রাত্রি হইয়াছে, ঠিক কখন গাড়ি ছাড়ে কিছুই তার জানা ছিল না, তবু সে অনুভব করিতে লাগিল, আজ রাত্রে গাড়ি ধরার আশা বৃথা। তিলকপুর গ্রামটা ঠিক ডাইনে না বাঁয়ে তাও সে ঠাহর করিয়া উঠিতে পারিতেছে না, গ্রামটা খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে। অনেকদূরে গাছপালার আড়ালে একটা মিটমিটে আলো দেখা যাইতেছিল, নদী তীর ছাড়িয়া বিহারী সেইদিকে চলিতে লাগিল। আলোটা হারাইয়া গেল একটু পরেই, হয় নিভিয়া গিয়াছে নয় আড়ালে পড়িয়াছে, কিন্তু দিক্ভুল হইবার সম্ভাবনা ছিল না। চলিতে চলিতে এদিকে ওদিকে আরও দু’একটা আলো চোখে পড়িতে থাকে, কোনটা কাছে কোনটা দূরে। কিন্তু প্রথমে যে আলো লক্ষ্য করিয়া যেদিকে সে চলিতে আরম্ভ করিয়াছিল, যে আলো হারাইয়া গিয়াছে, গোঁয়ারের মতো আন্দাজে সেইদিকেই বিহারী চলিতে থাকে—গায়ের জোরে ঠেলিয়া ফেলা যায় না, বুদ্ধির জোরে পার হওয়া যায় না এমন বাধা সামনে না পড়িলে দিক পরিবর্তন করিবে কেন?
ছোট একটি গ্রাম পাওয়া গেল। একটা চালার নীচে ঝুলানো লণ্ঠনের আলোয় আটদশজন পশ্চিমা জমায়েত হইয়া ঢোল করতাল পিটিয়া পিটিয়া পাগলের মতো আনন্দে আর্তনাদ করিতেছে। শীত শেষ হইতে না হইতে বসন্ত আসিয়া পড়িয়াছে না কি? গায়ের জামাকাপড় তখনও ভাল করিয়া শুকায় নাই, ক্ষুধায় ও শ্রান্তিতে বিহারীর শরীর ভাঙিয়া পড়িতেছিল, তবু সে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া খানিকক্ষণ মানুষগুলির উল্লাস দেখিতে লাগিল। বড় ভাল লাগে বিহারীর এই রকম দুরন্তপনা, মনের সাধে জীবনীশক্তিকে এইভাবে প্রাণপণে ব্যয় করিয়া ফেলিবার চেষ্টা,—এমন না হইলে বাঁচিয়া থাকায় সুখ কি, কাজের সময় অবসরের সময় কেবল নাকিসুরে কাঁদিয়া কাঁদিয়া?
তিলকপুর কোনদিকে আর জিজ্ঞাসা করিয়া জানিবার প্রয়োজন ছিল না, এ গ্রাম বিহারীর চেনা।
পশ্চিমাদের এই কোলাহলের মধ্যেও গ্রামটি ঘুমাইয়া পড়িয়াছে, কোনদিকে মানুষের সাড়াশব্দ নাই, কাছে ও দূরে এলোমেলোভাবে ছড়ানো বাড়িগুলির একটিতেও আলো জ্বালা নাই৷ গ্রাম প্রথম রাতেই ঘুমাইয়া পড়ে, কিন্তু এমন সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ নিদ্রা বিহারীর কেমন অস্বাভাবিক ঠেকিল। ঘুমাইয়া পড়ে নাই, গ্রামের লোকগুলি সব যেন মরিয়া গিয়াছে, ছেলেবুড়া স্ত্রীপুরুষ সকলে।
একটু তফাতে ছোট একটি দোকানে কেবল কালিপড়া টিমটিমে একটা আলো জ্বলিতেছিল, গোরুর গাড়ি নীচে যে চারকোণা কাচলাগানো টিনের আলো জ্বলে। খান তিনেক খড়ের ঘর লইয়া একটা বাড়ি, বাড়ির সামনে গ্রামের এই কাঁচা রাস্তার দিকে খানিকটা ফাঁকা স্থানে খুঁটি পুঁতিয়া বাঁশের পাতা বিছাইয়া চাঁচের বেড়া দিয়া ঘিরিয়া টিন দিয়া ঢাকিয়া কে যেন লাভের আশায় দোকানটি খুলিয়াছে, বোধ হয় পিছনের ছোট বাড়িটিরই মালিক। দোকানের সামনে একপাশে বাঁশের গড়া একটি বেঞ্চিও পাতা আছে অথবা মাটিতে পোঁতা আছে স্থায়ীভাবে। বিহারী বেঞ্চিতে গিয়া বসিল। প্রায় ষাট বছরের এক বুড়া দোকানের চালডাল আটা ময়দা মুড়ি চিড়া গুড় বাতাসা আগলাইয়া ঝিমাইতে ছিল। বিহারী মুড়ি আর বাতাসা চাহিতে চমকিয়া জাগিয়া উঠিল।
অপটু হাতে আন্দাজে পরিমাণ ঠিক করিয়া একখণ্ড ছেঁড়া কাগজে মুড়ি আর বাতাসা দিয়া বলিল, কই যান?
তিলকপুর যামু। সিপাই-পুলিশ য্যান দেহি অ্যানে দশবিজজন?
হ, সিপাই-পুলিশ।
বুড়া দোকানি যেন ঝিম লাগিয়া যায়। বিহারী নীরবে বাতাসা মুড়ি চিবাইতে থাকে। সময় অন্তহীন, জীবন শ্লথ শিথিল, শেষও নাই জীবনের যতক্ষণ না সত্যই শেষ হয়। আলাপ-আলোচনায় অধীর হইতে নাই। বুড়া দোকানি কি ভাবিয়া বাতাসার টিন হইতে আরও গোটা তিনেক বাতাসা বিহারীকে দিল হয়তো প্রথমে কম দিয়াছিল বলিয়া ত্রুটি সংশোধন করিতে হয়তো খাতির করিয়া ফাউ হিসাবে। হ, গ্রামে সিপাই-পুলিশ আসিয়াছে, আসিয়াছে অনেকদিন, দুই সপ্তাহ পুরিতে চলিল। দোকানের অজানা অচেনা অপ্রত্যাশিত অতিথি, তুমি খবর পাও নাই যে এই গ্রামে একটা, ভীষণ ব্যাপার হইয়া গিয়াছে, একটা কুরুক্ষেত্র কাণ্ড? সেই ভয়ানক দাঙ্গাহাঙ্গামার সংবাদ যে জগতের কাহারও অজ্ঞাত থাকিতে পারে বুড়া দোকানির পক্ষে তা যেন কল্পনা করাও কঠিন। মানুষ খুন হইয়াছিল একটা, কত লোকের মাথা ফাটিয়াছিল কত লোক জখম হইয়াছিল কে তার হিসাব জানে—পরে কয়জন মারা গিয়াছে সে খবরই বা রাখে কে? না, খুনটা হইয়াছিল দাঙ্গার আগেই, খুনের জন্যই তো দাঙ্গা। এ গাঁয়ে যারা বাস করে, আর চারপাশের অনেকগুলি গাঁয়ে যারা বাস করে, তারা অনেকে জমি চষে কি-না, বছর ভরিয়া তাই পেট ভরিয়া খাইতে পায় না। অনেকে জমি চষে আর মজুরি পায়, কেউ জমি চষে আর ফসল পায়, কিন্তু খাজনা দেয়, আরও যেন কি সব দেয়। জমিও চষে, যা পাওয়ার কথা তাও পায়, তবু সম্বচ্ছর খাইতে জোটে না, তাই সকলে ভাবে, জমিও চষি, যা পাওয়ার কথা তাও পাই, তবু বছর ভরিয়া খাইতে পাই না কেন, ছেঁড়া ন্যাকড়ায় শুধু বুকের কাছটা আর কোমরের কাছটা কি করিয়া ঢাকা যায়, ভাবিয়া বৌটাকে দিশেহারা হইতে হয় কেন, ছেলেমেয়েগুলির পেটটা মোটা আর হাত-পাগুলি কাঠির মতো সরু হয় কেন, মরিয়াই বা যায় কেন দুটো একটা পট পট করিয়া ন’মাস ছমাস বাদে বাদে? এইসব ভাবে সবাই, মনে মনে ভাবে। সবাই কি আর ভাবে? কেউ কেউ ভাবে, অনেকে ভাবে, প্রায় সবাই ভাবে, বীরেশ নামে একজন যে আছে না গাঁয়ে—না, এখন আর সে নাই, খুন হইয়া কোথায় যেন গিয়াছে, অপমৃত্যু হইলে স্বর্গ অথবা নরকের বদলে মানুষ যেখানে যায় সেইখানে। এই যে বীরেশ, যার বৌও নাই ছেলেমেয়েও নাই, এককালে ছিল কিন্তু এখন নাই, সে সকলকে আরও বেশি করিয়া ভাবিতে বলে, সকলে তাই আরও বেশি করিয়া ভাবে। বীরেশ একদিন সকলকে জমা করিয়া বলে, না, আর জমি চষিব না, আর খাজনা দিব না। বেশি মজুরি দাও, মড়াই-এ তোলার আগে এক ধামার বদলে ধান দাও দু’ধামা, গাদা করার আগে এক আঁটির বদলে খড় দাও দুআঁটি, পাট পচিতে দেওয়ার আগে এক পয়সার বদলে নগদ দাও দু পয়সা, অথবা নগদ পয়সার বদলে ধান দাও, চাল দাও, ডাল দাও, কাপড় দাও, তবে জমে চষিব। আরও বলে বীরেশ, যারা খাজনা দেয় তাদের বলে। বলে, না, আর খাজনা দিব না। আমার জমি আমি চষিব, খাজনা দিব কাকে, কেন দিব? তারপর একদিন অনেকলোক আসে জমি চষিতে, ভিন গাঁয়ের লোক, দূর দেশের লোক। বীরেশ তাদের বলে খবরদার জমি চষিও না। তারা তাই বীরেশের মাথাটা ফাটাইয়া দেয়। তিনদিন পরে বীরেশ তাই মরিয়া যায়। পরদিন তাই ভীষণ দাঙ্গা হয়—একেবারে কুরুক্ষেত্র কাণ্ড। দুদিন পরে যেই গাঁয়ে সিপাই-পুলিশ আসে, অমনি সবাই গাঁ ছাড়িয়া পালায়। সবাই কি আর পালায়, অনেকে পালায়, প্রায় সকলেই। দাঙ্গা আর করিয়াছিল ক’জন, এ পক্ষে বিশ পঁচিশ জন ওপক্ষে বিশ পঁচিশজন, বাস। তাদের মধ্যে কজন আর পালাইতে পারিয়াছিল, প্রায় সব কটাই তো জখম হইয়া কুপোকাৎ,—পালাইয়াছিল দু’পাঁচজন। হ, গ্রাম ছাড়িয়া পালাইয়াছে তারা, যারা দাঙ্গা করে নাই। কেন পালাইয়াছে? গাঁয়ে সিপাই-পুলিশ আসিলে গাঁয়ের লোক পালাইবে না? গাঁ একদম খালি, দোকানে বিক্রি নাই।
এক ঘটি জল পেটের মধ্যে ঢালিয়া বিহারী বলে, ‘তুমি পালাও নাই ক্যান?’
‘কই যামু দোকান বন্ধ কইরা? ধইরা জেল দিব না?’
বিহারী গরম হইয়া বলে, ‘জেল দিব। তোমার না দোকান? তোমার দোকান তুমি বন্ধ করবা, জেল দিব কোন হালায়? ডরাও ক্যান মাইয়ালোকের লাখান?’
বুড়া দোকানিও গরম হইয়া বলে, ‘করুম না দোকান বন্ধ, তোমার কি? কই থেইকা আইছ তুমি, ক্যান ডরামু তোমারে?’
না, বিহারীকে ভয় করিবার কোন কারণ নাই বুড়া দোকানির। নানা হাঙ্গামায় মানুষটার মাথার ঠিক নাই বুঝিতে পারিয়া বিহারী আর কিছু বলে না, দুটি পয়সা তার হাতে দিয়া উঠিয়া দাঁড়ায়।
বুড়া দোকানি বলে, ‘ঝাঁপটা ধরবা? আমার নি জোরে কুলায়, বুড়া হইছি না?’
সে যে বুড়া হইয়াছে, দোকানে ঝাঁপ বন্ধ করিতে তার যে জোরে কুলায় না, একথা বলিয়া দিবার দরকার ছিল না। ঝাঁপটা দোকানের বাহিরে ঠেসান দিয়া দাঁড় করানো ছিল, তুলিয়া আনিয়া বিহারী দোকান বন্ধ করিতে সাহায্য করিল। না, কেউ নাই বুড়া দোকানির বাড়িতে, সকলকে সে পাঠাইয়া দিয়াছে তার মেয়ের বাড়িতে বেতনাড়ায়। আর হ, ছেলেটাকে ধরিয়া লইয়া গিয়াছে বুড়া দোকানির। ঘরে তার কেউ নাই।
তবে সকলে আবার আসিবে। গ্রামের সকলে ফিরিয়া আসিবে, তার বাড়ির সকলে ফিরিয়া আসিবে। ছেলেটাও আসিবে, নমাস ছমাস বাদে একদিন নিশ্চয় ফিরিয়া আসিবে। বড় গোঁয়ার ছেলেটা বুড়া দোকানির, বড় একগুঁয়ে, তার উপর এমন বুদ্ধিহীন যেন আস্ত একটা বলদ। সময়মতো পালাইয়া গেলে কে তাকে ধরিতে পারিত, কে তার পাত্তা পাইত? তারপর আবার যথাসময়ে ফিরিয়া আসিতে পারিত গ্রামের আর দশজন একে একে যেমন আসিবে। কিন্তু বুড়া বাপকে একা ফেলিয়া সে বলদটা কি নড়িবে, বোকা হারামজাদা গোঁয়ারটা? এখন যে বুড়া বাপ তার একা পড়িয়া আছে, তার কি?
কালিপড়া টিনের আলোটা হাতে করিয়া বুড়া দোকানি বিড় বিড় করিয়া বকিতে বকিতে দোকানের পিছনে নির্জন বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়া পড়ে। বিহারী আবার হাঁটিতে আরম্ভ করে তিলকপুরের দিকে। বুড়া দোকানির মতো বড় একা মনে হয় নিজেকে, বড় অসহায় মনে হয়। আজ রাত্রির গাড়িটা ফসকাইয়া গেল, ভোরের গাড়িতে রওনা হইলে কাল রাত্রে এমনি সময় কলিকাতা পৌঁছিবে। পরশু যশোদা ভূষণের সঙ্গে বিবাহ দিবে ব্যায়লাব, কাল রাত্রে কলিকাতা পৌঁছিয়া হয়তো সে বিবাহটা বন্ধ করিতে পারিবে না, সময় থাকিবে না। আজ রাত্রির গাড়িটা যেমন ফসকাইয়া গিয়াছে, যশোদার বাড়িটাও তেমনি ফসকাইয়া যাইবে। বাড়ির অর্ধেকটা ভূষণ পাইবে ব্যায়লাকে বিবাহ করিবার জন্য, বাকি অর্ধেক যশোদা নিশ্চয় বোনের বিবাহে যৌতুক লিখিয়া দিবে। এরকম মতলব না থাকিলে কদিনের জন্য সে দেশে আসা মাত্র সেই অবসরে যশোদা তাড়াতাড়ি বোনের বিবাহটা সারিয়া ফেলিতে চাহিবে কেন? সে থাকিলে সাহস পাইত না, সে সামনে থাকিলে যশোদা কাদার মতো নরম হইয়া থাকে। সে নিজেই ব্যায়লাকে বিবাহ করিতে চায় টের পাইলেও যশোদা বড় জোর খুব খানিকটা কাঁদাকাটা করিত, কিন্তু বিবাহ ঠেকাইতে পারি না। সে যখন বুঝাইয়া বলিত যে, এভাবে একসঙ্গে থাকিলে নিন্দা হইবে যশোদার, বোনকে বিবাহ করিয়া আপন জন হইলে আজীবন তারা একসঙ্গে থাকিতে পারিবে প্রকাশ্যভাবে, কেউ তাতে কিছু বলিবে না, কারও তাতে কিছু মনে করিবার থাকিবে না, যুক্তিটা বুঝিতে পারিয়া যশোদা চুপ করিয়া যাইত, আর কোন হাঙ্গামা হইত না। কিছু টাকা অবশ্য দিতে হইত যশোদাকে, কিছু নগদ টাকা। জমি বেচিয়া টাকা সংগ্রহের জন্যই তো সে দেশে আসিয়াছে।
কিন্তু কিছু কি টের পায় নাই যশোদা, সে যে নিজেই ব্যায়লাকে বিবাহ করিবার মতলব আঁটিয়াছে এ বিষয়ে? টের না পাইলে তাকে না জানাইয়া চুপি চুপি ভূষণের সঙ্গে নিশ্চয় আগে হইতে পরামর্শ করিয়া রাখিয়াছিল। নয়তো ভূষণ ইতিমধ্যে তাকে খবর না দিয়া কলিকাতায় ফিরিয়া গেল কেন? একসঙ্গে দুজনে তারা দেশে আসিয়াছে, আরও প্রায় আট দশ দিন পরে একসঙ্গে ফিরিয়া যাওয়ার কথা। যশোদার সঙ্গে গোপন পরামর্শ করা না থাকিলে হঠাৎ সে কলিকাতায় ফিরিয়া যাইবে কেন? কি বিশ্বাসঘাতক ভূষণ! কি বিশ্বাসঘাতিনী যশোদা! ওদের দুজনকে যদি সে খুন না করে, পাকড়াই গাঁয়ের বীরেশের মতো ওদের দুজনের মাথাই যদি সে ফাটাইয়া না দেয়—
আগে এসব খুঁটিনাটি বিহারীর মনে আসে নাই। নন্দর চিঠি পড়িয়া প্রথমে মনটা দমিয়া গিয়াছিল, পরক্ষণে দুর্বলতা ঝাড়িয়া ফেলিয়া স্থির করিয়া ফেলিয়াছিল, এবার সে কি করিবে। ভূষণের বাড়ি হইয়া যাইবে কলিকাতা, যশোদাকে দিবে এক প্রচণ্ড ধমক, তারপর বলিবে, বিবাহের আয়োজন যখন সব ঠিক হইয়া আছে, তখন বিবাহ হোক, তার সঙ্গে হোক,—এই যে সে গয়না আনিয়াছে ব্যায়লার জন্য, আর এই যে যশোদার জন্য আনিয়াছে টাকা। কেবল এই সব কথা ভাবিয়াছিল বিহারী। কিন্তু জনশূন্য গ্রামে আলোহীন শব্দহীন বাড়িটার সম্মুখে মিটমিটে আলোয় বুড়া দোকানিকে একা অসহায়ভাবে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া আসিয়া, দোকানে পরের সাহায্যে ঝাঁপ বন্ধ করিয়া স্খলিত পদে শূন্য-পুরীতে তাকে ঢুকিতে দেখিয়া আসিয়া, মনটা কেমন উদ্ভ্রান্ত হইয়া গিয়াছে বিহারীর। নিজে কি করিবে, নিজের তার কি করা দরকার, কেবল একথা না ভাবিয়া সে তাই এখন অনুমান করিতে আরম্ভ করিয়াছে কে কি করিয়াছে তার পক্ষে ক্ষতিকর, আর চাঁদের আলোয় নির্জন গ্রামের পথে হাঁটিতে হাঁটিতে জ্বলিয়া মরিতেছে অভিমানে।
তিলকপুর গ্রামটিও ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল, কোন বাড়িতে আলো জ্বলা নাই, কোন বাড়িতে মানুষের সাড়াশব্দ নাই, বিহারীর চেনা দোকানটিতেও ঝাঁপ বন্ধ। তবু গ্রামে ঢুকিয়াই বিহারী অনুভব করিতে পারিল, এ গ্রাম ঘুমন্ত, জনশূন্য নয়, ঢোল করতাল সহ অতগুলি মানুষের কোলাহল সত্বেও পাকড়াই গ্রামটিকে অস্বাভাবিক রকম স্তব্ধ মনে হইয়াছিল, এ গ্রামের স্তব্ধতা সে রকম নয়।
ভূষণের বাড়ির সামনে দাঁড়াইয়া ডাকাডাকি করিতে ভূষণ নিজেই দরজা খুলিয়া বাহিরে আসিল। ঘুম আসিতেছিল, কিন্তু এখনও সে ঘুমাইয়া পড়ে নাই। বিহারীকে দেখিয়া বিস্ময়ে আনন্দে সে এমন চেঁচামেচি আরম্ভ করিয়া দিল যে, ঘরের মধ্যে তার ঘুমন্ত বৌ-এর ঘুম পর্যন্ত ভাঙিয়া গেল।
ভূষণকে দেখিয়াই জয়ের শ্রান্তিতে বিহারীর সর্বাঙ্গ প্রায় অবশ হইয়া আসিয়াছিল। বৌকে আলো জ্বালিয়া তামাক সাজিবার হুকুম দিয়া ভূষণ দাওয়ায় চাটাই বিছাইয়া দিতে সে কেবল বসিবে ভাবিয়া বসিতে গিয়া চিৎপাত হইয়া শুইয়া পড়িল।
‘কাইল কইলকাতা মেলা দেওন লাগে ভূষণ।’
ভূষণের বিস্ময়ের সীমা থাকে না। ‘ক্যান? কাইল কইলকাতা যামু ক্যান? বিশ দিনের ছুটি না আমাগো?’
‘নন্দ লিখছে, না গেলি কাম থাকবো না।’
ভূষণ চিন্তিত হইয়া উঠিল। এমন কথা লিখিয়াছে নন্দ, হ? তবে তো না গিয়া উপায় নাই। তারপর একটু ভাবিয়া বলিল, ‘মন কয়, নন্দ য্যান তাম্সা কইরা লিখছে।’
বিহারী চোখ বুজিয়া বলিল, ‘তাম্সা? ক্যান্, তাম্সা করব ক্যান নন্দ আমার লগে?’
ভূষণ এ কথার জবাব দিতে পারিল না। তাদের কাছে একটা আলো জ্বালিয়া দিয়া ভূষণের বৌ তামাক সাজিতে বসিল।
২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯