কবি শিশির রায়ের মৃত্যু – অজিতকৃষ্ণ বসু
কবি শিশির রায়ের মৃত্যু হয়েছে। এবারের কাগজে এ খবর ওঠেনি, উঠবেও না। শোক সভাও হবে না তার জন্য। কিন্তু ভাবতেও আমার মন ব্যথায় ভরে উঠছে যে কবি শিশির রায় আর নেই।
কাহিনীটা প্রথম থেকেই শুরু করা যাক। আমি তখন সদ্য বেরিয়েছি বি এ পাশ করে প্রাইভেট টুইশনির বাজারে, চাকরির বাজার তত সুলভ নয় দেখে। বরাত ভাল ছিল, একটা টুইশনি জুটে গেল বাঙলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মদ্য ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত চৌধুরীর বাড়িতে। শ্রীকান্তবাবুর একমাত্র ছেলে নবকান্ত গত কয়েক বছর ধরে ম্যাট্রিক ক্লাসে পড়ে আসছে, তাকে স্কুলপাঠ্য সমস্ত বিষয়ই পড়াতে হবে। মাইনে মাসিক পঞ্চাশ টাকা, তা ছাড়া তার বাড়িতেই বিনামূল্যে থাকা এবং খাওয়া।
শ্রীকান্তবাবু বললেন, “দেখুন নেপেনবাবু, অনেক মাস্টার এল অনেক মাস্টার গেল, কেউ ঠিক করে আমার ছেলেটাকে শেষ পর্যন্ত পড়াতে পারলে না। পরীক্ষার আগেই সবাই ভেগে যায়। আপনার ভারী প্রশংসা শুনেছি আপনাদের পড়ার কেষ্টো মিত্তিরের কাছে—। তাই আপনার স্মরণ নিয়েছি। আপনিও আবার কোনও ফাঁকে কেটে পড়বেন না যেন।’
কোষ্টো মিত্তিরে উক্তরূপ প্রশংসার কারণ আছে। একবার মদে বেহুস অবস্থায় তাকে বাড়িতে পেৌঁছে দিয়েছিলুম, সেই থেকে তিনি আমার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। এত কৃতজ্ঞ যে অর্নগল আমার প্রশংসা তিনি যেখানে সেখানে করে বেড়ান। সুযোগ পেলে তো করেই, দুর্যোগেও আটকায় না।
যাই হোক, শ্রীকান্তবাবুকে আমি আশ্বাস দিলুম, আমি প্রাণপণেই চেষ্টা করব কেটে না পড়তে। খুশির হাসি হেসে শ্রীকান্তবাবু বললেন, “এই তো কথার মতো কথা। গেল মাস্টার বলত নবকান্ত নাকি ডাল। আরে মশাই ডাল চাল ওসব কিসসু নয়। আসল কথা পড়াতে জানা চাই। ওটি না জানলে ডালও যা চালও তাই।”
তিনি বলে চললেন—”আমার ছেলে এবং একমাত্র ছেলে নবু, তার না পড়লে চলবে কেন? কি বলেন আপনি নেপেনবাবু? বটে কি না?”
মদের ব্যাপারী শ্রীকান্ত চৌধুরীর মদ খাওয়া দরকার হয় না, মদ না খেয়েই তিনি মাতালের মতো কথা কইতে পারেন। বললুম, ‘বটেই তো। আপনার ছেলে পড়বে না এ কি একটা কথা হল?”
“দিন দুচার পড়ালেই টের পাবেন ছোকরার মাথা আছে। কিন্তু থাকলে কী হবে? আজকাল এমন সব বেছে বেছে পাঠ্য করেছে যা কোনও ভদ্রলোকের ছেলের সাধ্যি নেই যে মনে রাখে।”
পড়াতে শুরু করলুম নবকান্তকে। কি কারণে আমার পূর্ববর্তীরা পরীক্ষার আগেই সরে পড়তেন সেটা সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারলুম। এরকম অসাধারণ মেধা নিয়ে কি করে নবকান্ত ম্যাট্রিক ক্লাস পর্যন্ত উঠে এল সেটাই ছিল আমার কাছে এক মস্ত রহস্য। নবকান্তের কাছ থেকেই রহস্যের সমাধান পেলাম। যে স্কুলের সে ছাত্র সেটি প্রাইভেট স্কুল; স্বর্গীয়া সহধর্মিণীর স্মৃতিরক্ষার্থে শ্রীকান্ত চৌধুরী স্কুলটিকে বেশ মোটা রকমেই অর্থসাহায্য করেন। নবকান্তের কায়েমী অবস্থান নিচু বা উঁচু যে ক্লাসেই হোক স্কুলের পক্ষে সমান কথা, কাজেই স্কুলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক শ্রীকান্ত চৌধুরীর একমাত্র বংশধরকে স্কুলের উচ্চতম ক্লাসে কায়েমী অবস্থানের মর্যাদাই দেওয়া হয়েছে।
“জানেন মাস্টারমশাই?” নবকান্ত বললে, “আপনার বেলাতেই এই নতুন নিয়ম শুরু হল।”
“কি নতুন নিয়ম?”
“এই যে পাশ ফেলের কোনও প্রশ্ন নেই, শুধু পড়িয়ে যাওয়া। বাবা আগে বলতেন, পাশ আমাকে করানো চাই-ই। ওই ভয়েই মাস্টার মশাইরা সবাই পালাতেন। পাছে আপনিও পালান তাই এবারে নিয়ম পালটেছে।”
“কিন্তু আমার যে কর্তব্য তোমাকে পাশ করানো।”
“আমাকে পাশ করাবার স্বয়ং ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরেরও সাধ্য নেই। কেন অনর্থক আপনি মাথা ঘামান মাস্টার মশাই? তা ছাড়া আমার দরকার হবে না লেখাপড়া শেখা বা টাকা রোজগার করার। দরকার হবে শুধু চেক সই করতে আর টাকা খরচ করতে জানা। ও দুটিই আমি খুব ভাল জানি। এক নম্বরটা এই দেখুন” বলে কাগজে সই করে দেখাল নিজের নাম ইংরাজিতে। তারপর বলল “দু নম্বরটা এখন আপনাকে ভাল করে দেখাতে পারব না। পয়সার ব্যাপারে বাবা একেবারে হাড় কেপ্পন। আপনি ঘাবড়াবেন না আপনার টাকা আপনি ঠিক পাবেন। কিন্তু আমাকে একটি পয়সা দিতে বাবার হাত ওঠে না। অথচ একমাত্র বংশধর আমি। বুঝে দেখুন একবার।”
আশ্চর্য লাগল কথাটা। বড়লোকের একমাত্র ছেলেকে বড়লোক বাপ মোটা হাতখরচ দেয় না, একথা বিশ্বাস করা সহজ নয়। কিন্তু একটু খেয়াল করে নবকান্তর দিকে তাকাতেই বিশ্বাস করাটা সহজ হয়ে গেল। গায়ে অত্যন্ত সস্তা ছিটের জামা। পরনের কাপড় হাঁটুর প্রায় কাছাকাছি উঠেছে। বড় লোকের আদুরে ছেলের বেশভূষা এ রকমটি হয় না, অবশ্য ছেলেটি যদি নিশ্চিত ঐশ্বর্যের নিশ্চিন্ততায় সৌখিন সর্বহাবা না হয়, যে জাতীয় সর্বহারা আজকাল মাঝে মাঝে দেখতে পাওয়া যায়।
“বাবা একটি আধলা দেয় না বটে” নবকান্ত বলে, “কিন্তু তাই বলে টাকা যে একেবারে ওড়াইনে তা নয়। দোকানের ম্যানেজারদের কাছ থেকে ধমক দিয়েই কিছু কিছু আদায় করে নিই——ওরা গোঁজামিল দিয়ে হিসেব ঠিক মিলিয়ে রাখে, বাবা ধরতেও পারে না।” তারপর একটু থেমে নবকান্ত আবার বলে, “ইচ্ছেমতো টাকা এখন অবশ্য ওড়াতে পারিনে মাস্টারমশাই, কিন্তু তাতে আর কি হয়েছে? পরে হাতে তো আসবেই, তখন দুহাতে ওড়াব। রাইট অ্যান্ড লেফট। তবু সব ওড়ানো শক্ত হবে। অনে—ক টাকা বাবা জমিয়েছে কি না!”
বুঝলুম শ্রীকান্ত চৌধুরি বর্তমানে কৃচ্ছ্রসাধন করাবার চেষ্টা করে ভবিষ্যৎ নবকান্ত চৌধুরির জাহান্নামে যাবার রাস্তা বেশ ভাল করে বাঁধিয়ে রেখে যাচ্ছেন। কিন্তু এ নিয়ে নবকান্তের সঙ্গে আলোচনা করে কোনও লাভ হবে না ভেবে তার কথা শুধু শুনেই গেলুম।
শ্রীকান্তবাবুর লম্বা বক্তৃতা মাঝে মাঝেই শুনতে হত। “কেমন পড়ছে নব আজকাল?…অবশ্য আজকালকার পড়ায় আবার এমন তেমন কী? পড়লেই হল।…গীতার কথাটা ভুলবেন না; বড় চমৎকার লিখেছে কি? না, মা ফলেষু কদাচন। এই যে সামান্য কিছু টাকা করেছি এবং করছি, সবই হচ্ছে লোককে মাতাল করে। ফলাফলের জন্য কেয়ার করি না তো! এসো টাকা যাও ব্যাঙ্কে—আর কোনও কথা নেই।…আমার প্রিয় স্বপ্ন কি জানেন নেপেনবাবু? তামাম দুনিয়া মাতাল হয়ে যাচ্ছে, আর মদ জোগাচ্ছে শ্রীকান্ত চৌধুরি অ্যান্ড কোম্পানি। চারধার থেকে হু হু করে আসছে টাকার স্রোত, তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছি কোথায়?—যত বিদেশি ব্যাঙ্কের আশ্রয়ে।”
টাকার অবিরাম স্রোতকে মাত্র দুটি হাত দিয়ে এতগুলো ব্যাঙ্কের দিকে ঘুরিয়ে দিতে হয়রান হয়ে ওঠেন শ্রীকান্তবাবু।
“সম্পত্তি-টম্পত্তি আমি বুঝি-টুঝিনে মশাই নেপেনবাবু। করি তরল জিনিসের কারবার, বুঝি তরল টাকা, যাকে বলে liquid cash, বুঝলেন কিনা? কিন্তু ওই তরল টাকা সম্বন্ধে খুব হুঁশিয়ার, হাত গলে বেরিয়ে না যায়। ওই জন্যই হাতে টাকা রাখিনে মোটে, সব ব্যাঙ্কে। নবুকে তেমনি করে তৈরি করছি, একটি পয়সা হাতে দিইনে। এখন থেকেই খরচার হাত হয়ে গেলে টাকা রাখতে পারবে কেন? টাকা ভারী চঞ্চল নেপেনবাবু, তাকে সর্বদা এই এমনি করে কষে রাখতে হয়।”
বলে দুহাত খুব শক্ত করে মুঠো করে টাকাকে কষে রাখবার প্রক্রিয়াটা দেখিয়ে দেন, যদিও আমার সেটি ভাল লাগবার কথা নয়। কিন্তু একটা কারণে ভারী ভাল লাগে শ্রীকান্তবাবুকে—তিনি আমাকে সম্বোধন করতে আমার নামটিই ব্যবহার করেন, ‘মাস্টারমশাই’ বলে আমাকে ভদ্র অপমান করেন না আমার দৈন্যের কথা মনে জাগিয়ে দিয়ে।
একটা চমৎকার দামি গ্রামোফোন ছিল শ্রীকান্তবাবুর বাড়িতে, শ্রীকান্তবাবুর স্ত্রীর সখ করে কেনা। ওপারে রওনা হয়ে যাবার আগে বেশিদিন তিনি সেটাকে বাজিয়ে যেতে পারেননি। গ্রামোফোনটা শ্রীকান্তবাবু ছেড়ে দিয়েছেন সম্পূর্ণভাবে নবকান্তর হেফাজতে, যখন খুশি সে বাজাবে। কারণ শ্রীকান্তবাবুর ধারণা, “এক-আধখানা সখ থাকা ভাল, জানেন নেপেনবাবু? ওতে মনটা ভাল থাকে মাঝে মাঝে বাড়িতেই যদি রেকর্ড শোনে, সেটা ভাল। তা না হলে বাইরে কোথায় আবার গানটান শুনতে যাবে অজায়গায় কুজায়গায়, বুঝলেন না? কলকাতা বড় খারাপ জায়গা মশাই।”
নতুন নতুন ভাল রেকর্ড প্রতি মাসেই বাছাই করে কিনবার ভার পড়ল আমার ওপর। হোক না মাসে মাসে কিছু টাকা খরচ, কিন্তু তাতে ছেলের চরিত্র যে রক্ষা হবে তার দাম কম নয়। বাঙলার বিখ্যাত মদ্য ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত চৌধুরি তাঁর বংশধরের চরিত্র রক্ষার জন্য অত্যন্ত যত্নবান।
দার্শনিকের ভঙ্গিতে শ্রীকান্ত চৌধুরি বললেন, “আমি কিন্তু চিরদিন বেঁচে থাকতে আসিনি,এক দিন সব কিছু পেছনে ফেলে রেখে পাড়ি দিতেই হবে। তখন নবুকেই তো চালাতে হবে ব্যবসা; চরিত্রটি ঠিক না রাখলে সেটি পারবে কেন? পরকে যে মাতাল করবে সে নিজে মাতাল হলে তো চলবে না। ঠিক এই রকম নবুকেও করে তুলতে চাই। আমাকে আর গিন্নিকে যেন স্বর্গ থেকে দেখতে না হয় যে আমাদের নবু চরিত্ৰখারাপ করে মাতাল হয়ে আমার এমন সোনার কারবার ছারখার করে দিচ্ছে।” স্বর্গে যে সস্ত্রীক তিনি যাবেনই এ সম্বন্ধে কোনও সন্দেহই নেই শ্রীকান্তবাবুর মনে।
নবকান্তর চরিত্র ভাল রাখবার শ্রেষ্ঠ উপায় সম্বন্ধে আমার নিজস্ব অভিমত যা ছিল তা শ্রীকান্তবাবুকে শোনাবার সুযোগই হল না। মতামত সম্বন্ধে তিনি একেবারে দাতাকর্ণ; শুধু দানই করে যেতে চান, গ্রহণের রুচি নেই।
নবকান্তর চরিত্র রক্ষার জন্য দোকানে রেকর্ড বাছাই করতে যাবার ব্যাপারে প্রথম পরিচয় হল কবি শিশির রায়ের নামের সঙ্গে। নবকান্ত বলল, “এখন থাক মাস্টারমশাই। শিশির ফিরে আসুক। ওকে সঙ্গে না নিলে আমার রেকর্ড কেনা হয় না।”
বললুম, “শিশির কে?” নবকান্ত সাগ্রহে পরিচয় দিল।
শিশির রায় এই পাড়ারই ছেলে, নবকান্তর সমবয়স্ক। বাপ মা ভাই বোন কেউ তার নেই। বহু দূরসম্পর্কীয় মামা মুনসেফ কৃতান্ত সেনের বাড়িতেই মানুষ হয়েছে শিশির। মানুষ হয়েছে মানে ম্যাট্রিকটা কোনও রকমে পাশ করেছে এবং তার পরে আর পড়তে চায়নি। ভাল লাগেনি বলেই চায়নি, যদিও দূর সম্পৰ্কীয় মামা চেয়েছিলেন আরও পড়াতে। প্রথম দুই মামি এই সৃষ্টিছাড়া ভাগনেটিকে সহ্য করেছিলেন, কিন্তু তৃতীয় পক্ষের মামি তাকে সহ্য করতে রাজি হলেন না। কোথাকার কে একটা দূর সম্পর্কের ভাগনে, অকেজো অপদার্থ ছোকরা, যে জানে শুধু কবিতা না কতকগুলো ছাইপাশ লিখতে আর তাই নিয়ে মেতে থাকতে দিনরাত, তাকে অনর্থক বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো কেন? বৃদ্ধকালে তরুণী ভার্যার কথা ফেলতে পারলেন না মুনসেফ কৃতান্ত সেন। ঠিক করলেন যেমন করে হোক দূর সম্পর্কীয় ভাগনেটিকে দূরে সরাতেই হবে। ভারতের একজন জুতো সম্রাটের হোমরা-চোমরা ভারতীয় কর্মচারী ছিলেন বন্ধুলোক, তাঁরই সাহায্যে ভাগনে শিশিরের একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেন। কবি শিশির রায় চলে গেলেন জুতো তৈরি করতে।
“কিন্তু’’ নবকান্ত বলতে লাগল, “কবির কেন ভাল লাগবে জুতো তৈরির আবহাওয়া? নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করেছিল প্রাণপণে, কিন্তু পেরে ওঠেনি শেষ পর্যন্ত। আগেই জানতুম শিশির তা পারবে না। যে যা কিছুতেই পারে না সেটা তার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। নয় কি মাস্টারমশাই?”
ছাত্র নবকান্তের আবিষ্কৃত এই দার্শনিক তথ্যটির সত্যতা অস্বীকার করতে পারলুম না। মাথা নেড়ে সায় দিলুম।
নবকান্তের বক্তৃতা চলল, “শিশির যেন স্রেফ কবিতা লিখবার জন্যেই তৈরি, অন্য কোনও কাজের জন্যে ওর জন্ম নয়। আমি যে আমি, আমার পর্যন্ত ওর কবিতা ভাল লাগে। বুঝতে যে পারি তা নয়, তবু ভাল লাগে। সব চেয়ে বেশি ভাল লাগে ওর কবিতা ওর নিজের মুখে শুনতে। আওড়াতে আওড়াতে ও যেন একেবারে ক্ষেপে ওঠে। দিগ্বিদিক জ্ঞান থাকে না। তাই তো অনেকে দেখে ভাবে ছোকরা বদ্ধ পাগল।…হ্যাঁ, চাকরির কথা বলছিলুম। চিঠি পেয়েছি শিশিরের। চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সে ফিরে আসছে। ওর মামা লোকটা মন্দ নন, কিছু বলবেন না। কিন্তু নতুন মামিটি ভয়ানক মহিলা, উনি যে কি করবেন তাই ভাবি।”
সত্যিই ফিরে এল শিশির রায়। এক দিন বিকেলে গ্রামোফোন বাজাচ্ছি আমি আর নবকান্ত, এমন সময় সে এসে হাজির। নবকান্ত খুশি হয়ে বলল, “এসেছিস শিশির? ইনি আমার মাস্টার। বোস।”
আমাকে নমস্কার জানিয়ে বসল শিশির, কবি শিশির রায়। লম্বা, পাতলা ছিপছিপে চেহারা, আর কিছুর জন্যে না হোক অন্তত এই জন্যেই চোখে পড়বে। নিজের প্রতি তার তেমন নজর নেই, এটা ঘরে ঢুকবার সময় তার চলার ভঙ্গি দেখেই বোঝা গিয়েছিল। চেহারায় সৌন্দর্য নেই, কিন্তু বিশেষত্ব আছে যা অন্তত আমার চোখে ধরা পড়ল। সব চেয়ে বেশি লক্ষ্য করবার জিনিস তার চোখ দুটি, যাদের আমি বলব অসাধারণ, অন্য কেউ হয়তো বলত অস্বাভাবিক। কি কারণে জানি না, আমার মনেই হল না শিশিরকে এর আগে কখনও দেখিনি, মনে হল সে যেন আমার কাছে নতুন নয়। কণ্ঠে আত্মীয়তার সুর আপনি এসে গেল যখন বললুম, “তোমার কথা নবকান্তর কাছে শুনেছি শিশির। এই দুর্দিনে চাকরিটা একেবারে ছেড়ে দিয়েই এলে? একবার ভেবে দেখলে না?”
শিশির বলল, “ভেবে দেখলুম বলেই তো ছেড়ে দিতে হল মাস্টারমশাই। আগে ভেবে দেখিনি বলেই গিয়েছিলুম। ওই জুতো চক্রের চক্রী হওয়া আমার জন্যে নয়। বিদেশি এসে সারা ভারতকে জুতো মারার ব্যবসা চালাচ্ছে, আর সেই বিরাট জুতো মারার যজ্ঞে যোগ দিয়েছি এদেশের আমি শিশির রায়। ভেবে রক্ত গরম হয়ে উঠল। পালিয়ে এলুম।”
“কিন্তু জুতো-চক্রে তোমার শূন্যস্থান পূর্ণ করবার জন্যে এদেশি চক্রীর তো অভাব হবে না শিশির।”
“আমি গাঁট না কাটলেও গাঁট-কাটার অভাব হবে না জানি। কিন্তু তাই বলেই কি আমি গাঁট কাটব?” বলে কি যেন একটু ভেবে শিশির আবার বলতে লাগল: “জানেন মাস্টারমশাই? আমরা কবিরা স্বপ্ন দেখি, সংগীত রচনা করি, কিন্তু আমরা স্বপ্নবিলাসী নই, স্বপ্নসাধক। আমরা স্বপ্ন দেখি বলেই বাস্তব মহান হয়ে ওঠে, পৃথিবী এগিয়ে চলে।”
শিশির রায়ের কথা শুনে মনে পড়ল ইংরেজ কবির—
“We are the music makers,
We are the dreamers of dreams.”
ইচ্ছা হল বলি “স্বপ্নের গান শুনিয়ে পেট ভরে না, অন্তত এদেশে ভরে না। আগে পেটের খোরাকের ব্যবস্থাটি পাকা করে তারপর যত খুশি স্বপ্নের গান শোনাও।” কিন্তু বলতে পারলুম না। নবকান্ত বলল “তোর মামা আর মামি কি বললেন শিশির?” শিশির পরম নিশ্চিতভাবে বলল, “ওরা এখন পর্যন্ত কিছু জানেন না। দুজনে গেছেন সিনেমা দেখতে। ফিরে এসে জানবেন। মামি চটবেন খুব, কিন্তু কি করব বল? আমাদ্বারা যা হবার নয় তা আমাদ্বারা হবেই না। রেকর্ড বাজানো বন্ধ হল কেন? কি কি নতুন রেকর্ড হল দেখি।”
বললুম, “নতুন কিছুই কেনা হয়নি শিশির। তুমি এলে তোমায় সঙ্গে নিয়ে রেকর্ড পছন্দ করে কিনব বলেই কেনা হয়নি।”
আনন্দের হাসিতে আলোকিত হয়ে উঠল শিশির রায়ের কালো মুখ। “নবুর ওই এক পাগলামি। আমি সঙ্গে না থাকলে ও রেকর্ড কিনতে পারে না।”
বলে রেকর্ডের গাদা থেকে বেছে নিয়ে বাজাল দেশবিখ্যাত এক সুরকারের একখানা রেকর্ড। সংগীত জাদুকরের সুরের জাদুতে ঘরের আবহাওয়া করুণ হয়ে উঠল। কবি শিশির রায় শুনতে লাগল দুচোখ বুজে, পাথরের মূর্তির মতো নিশ্চল হয়ে। তার দু চোখ বেয়ে ঝরে পড়ল অশ্রু। গান শেষ হয়ে যাওয়ার একটু পরে হঠাৎ যেন ধ্যান ভঙ্গ হয়ে যাওয়ায় চোখ মেলে সে ঈষৎ লজ্জিতভাবে চোখ মুছে ফেলল। বলল “এ গানটা শুনে আমি পাগল হয়ে যাই মাস্টারমশাই। আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে যমুনার তীরের ছবি। প্রণাম করি এই জাদুকর সুর-শিল্পীকে, যিনি সুরের তুলিতে এমন চমৎকার ছবি আঁকতে পারেন।”পরক্ষণেই হঠাৎ কথার সুর বদলে ফেলে শিশির আমাকে প্রশ্ন করল “এই সুরের জাদু যার মর্মে প্রবেশ করেছে বেসুরো ঘানি সে কি টানতে পারে?”
এই সুরশিল্পীর সবগুলো রেকর্ড শিশির তন্ময় হয়ে শুনল। ঠিক এই রেকর্ডগুলোই এর আগে অনেকবার শুনেছি, কিন্তু শিশির রায়ের সঙ্গে বসে শুনে সেগুলো যে কি আশ্চর্য ভাল লাগল তা বুঝিয়ে বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। উচ্চ সংগীতকে উচ্চ বলেই দূর থেকে সেলাম জানাতুম এতদিন, মধুর বলে নয়; কিন্তু সেদিন যেন তার মাধুর্য সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে অনুভব করলুম।
শিশির বলতে লাগল, “রেকর্ডের বুকে যে সুর বন্দি হয়ে থাকে, পিনগুলো নিষ্ঠুরভাবে আঁচড় কেটে চলে তারই ওপর। ওই আঁচড়ের যন্ত্রণায় রেকর্ড করে আর্তনাদ, সেই আর্তনাদের মাধুর্যে আমরা মুগ্ধ হই।…
আমরা কবিরাও গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো। পৃথিবীর দুঃখ বেদনা আমরা সারা অন্তর দিয়ে গভীরভাবে অনুভব করি, তাদের সুর বন্দি হয়ে থাকে আমাদের বুকে। গভীর ব্যথার আঁচড়ে আমরা যে আর্তনাদ করে উঠি সেই আর্তনাদই সত্যিকারের কাব্য।”
সেদিন এভাবে আলাপের মধ্য দিয়ে অল্পক্ষণের মধ্যেই কবি শিশির রায়ের সঙ্গে পরিচয় নিবিড় হয়ে উঠল। একদিকে যেমন তার অসাধারণত্ব (অধিকাংশ লোকের চোখেই যা অস্বাভাবিকত্ব বলে প্রতিভাত হত) আমাকে মুগ্ধ করল, অন্যদিকে তেমনি দুঃখ হল তার সাংসারিক বুদ্ধির শোচনীয় অভাব দেখে, ভাবলুম তাকে ভাল করে বুঝিয়ে তার ছেলেমানুষি সারিয়ে দেব। কিন্তু তার স্বরচিত যৌবনের জয়গান সে যখন আবৃত্তি করে শোনাল তখন তাকে সুবুদ্ধি দিয়ে খাটো করবার প্রবৃত্তি আমার আর রইল না। বুঝলুম ওর ভেতরে যে আগুন আছে সে ওকে জ্বালাবেই, বাইরে থেকে কোনও উপায়েই তাকে নেভানো! সম্ভব হবে না। গভীর দুঃখের দহনে যে আনন্দ আছে তার স্বাদ যে পেয়েছে সংকীর্ণ সুখ-সুবিধার প্রতি আকর্ষণ তার হবে কী করে?
শুধু বললুম, “চমৎকার কবিতা লেখো তুমি শিশির। তোমার সব কবিতা শোনাবে আমায় একদিন?”
“কবিতা তো আমি লিখি না মাস্টারমশাই?” হেসে বলল শিশির। “কবিতা নিজেই নিজেকে প্রকাশ করে আমার মধ্য দিয়ে। ভূতের মতো এসে ভর করে। তাকে বাইরে রূপ দিতে না পারা পর্যন্ত এক ফোঁটা স্বস্তি পাইনে। ভেতরের রূপ যখন বাইরে ফুটে ওঠে, তখন যেন নিশ্বাস ফেলে বাঁচি, মন অদ্ভুত আনন্দে ভরে ওঠে।…হ্যাঁ, শোনাব একদিন আপনাকে কবিতা। ভাল করে খুঁজে পেতে সব গুছিয়ে নিতে হবে। টুকরো টুকরো কাগজে লেখা হয়ে সব এলোমেলো ছড়িয়ে আছে কিনা!”
বললুম, “একটা বাঁধানো খাতা রাখলেই তো পারো। এমন অগোছালো কেন? গুছিয়ে চলতে না শিখলে জীবনে উন্নতি করবে কী করে?
“একথা নবুও আমায় অনেক বুঝিয়েছে বটে। কিন্তু কি জানেন মাস্টারমশাই? এলোমেলোতা আমার রক্তে মিশে আছে, সাধ্য নেই এড়াবাব। এর বিরুদ্ধে লড়তে গেলে চব্বিশ ঘণ্টা শুধু লড়াই করতে হবে, অত উৎসাহ আমার নেই। তা ছাড়া উচ্ছৃঙ্খল হতে পারল না যে দুর্ভাগা, শৃঙ্খলা কি জিনিস সে বুঝবে কি করে?”…বলে হেসে উঠল শিশিব রায়।
শিশিরের এভাবে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আসাটা তার মামা এবং মামি ভাল চোখে দেখলেন না। মামা যদিও তেমন কিছু বললেন না, কিন্তু মামি স্পষ্টই বলে দিলেন তাকে এবার আর তাঁদের ওপর নির্ভর না করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
সেদিনই মামা এবং মামির সঙ্গে সম্পর্ক ঘুচিয়ে দিয়ে শিশির রায় বেরিয়ে এল মামাবাড়ি থেকে, এক হাতে সুটকেস অন্য হাতে ছোট্ট একটি বিছানা। নবকান্ত ব্যাপার শুনে খুশি হয়ে বলল, “তুই আমাদের বাড়িতেই থাক শিশির আমার সঙ্গে। তুই থাকলে বাবা খুব খুশি হবে।”
শিশির রায় গম্ভীরভাবে বলল, “দেখা যাক কি করি।” বুঝলাম মামা ও মামির আশ্রয় ছেড়ে এসে নিঃসম্পর্কীয়ের আশ্রয় গ্রহণে সে ইচ্ছুক নয়। শুধু সাময়িকভাবে সে বন্ধুর আতিথ্য গ্রহণ করেছে মাত্র। এবার সে যেন হঠাৎ সুশৃঙ্খল হয়ে উঠল। তার রচিত কবিতাগুলো একসঙ্গে গুছিয়ে ফেলল। এই কবিতাগুচ্ছই তার জীবনযাত্রার মুলধন; এ দিয়ে হবে তার পরিচয়, যশ, সম্মান, অর্থ, এই ছিল কবি শিশির রায়ের বিশ্বাস। কিন্তু তার স্বপ্ন ভেঙে যেতে দেরি হল না রূঢ় বাস্তব অভিজ্ঞতার আঘাতে। তারপর একদিন ভোরবেলা দেখা গেল শিশির নেই তার ঘরে। একধারে পড়ে আছে কতকগুলো কাগজ-পোড়া, আর বিছানার ওপর একটুকরো কাগজে শিশিরের হাতে লেখা: “যে জিনিস আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারল না, যা শুধু তাচ্ছিল্য, অনাদর আর অনুকম্পাই পেল, পেল না তার প্রাপ্য মর্যাদা, তাকে পুড়ে ছাই করে ফেলে যাচ্ছি।
এ জীবন আর ভাল লাগছে না। ভাই নবু, বিদায়।…”
এর পর দশটি বছর যেন দেখতে দেখতে কেটে গেল। এই দশ বছরের মধ্যে বাঙলার মদ্য-সম্রাট শ্রীকান্ত চৌধুরি স্বর্গে গেলেন, নবকান্ত চৌধুরি পৈতৃক কারবারের একমাত্র মালিক এবং বাঙলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাতাল হল, তারপর একদিন মদ্যপানের মাত্রাধিক্যে মারা গেল, এবং আমি অশেষ ভাগ্য এবং অসামান্য তব্দির, খোসামোদ প্রভৃতির ফলে একটা বড় ব্যাঙ্কে ছোট চাকরি পেলুম। আমার প্রধান কাজ হল মোটা বাঁধানো খাতায় পরের টাকার নানারকম হিসাব রাখা।
ব্যাঙ্কে এক দিন খাতা উলটাতে চোখে পড়ল শ্রীযুক্ত শিশির রায়ের নামে অল্পদিন আগে একটা নতুন হিসাব খোলা হয়েছে, তাতে জমা দাঁড়িয়েছে প্রায় পঁচাত্তর হাজার টাকা। নামের সাদৃশ্যে কবি শিশিরের কথা মনে পড়ল; অতীতের স্মৃতি মনে পড়ে দুঃখও হল। বর্ণনা করা আমার পক্ষে অসম্ভব, কতটা বিস্মিত সেদিন হলুম যেদিন এই টাকার মালিক স্বয়ং ব্যাঙ্কে উপস্থিত হল এবং আমি দেখলুম সে সেই দশ বছর আগেকার কবি শিশির রায়।
শিশির আমাকে দেখে চিনতে পেরে বিস্মিত হয়ে বলল, “কি আশ্চর্য! আপনি?” অর্থাৎ আমাকে এখানে এভাবে দেখবে বলে সে আশা করেনি। আমার মুখ থেকেই প্রথমটা ঠিক ওই জাতীয় প্রশ্নই বেরুল। আমার কাজের তাড়া এবং ব্যবসায়ী শিশির রায়েরও সময়াভাবের দরুন কথাবার্তা বেশি হতে পারল না, শিশির আমাকে তার ঠিকানা দিয়ে সেদিনই ফিরবার পথে তার বাড়ি যেতে অনুরোধ করে গেল।…
টালিগঞ্জে চমৎকার বাড়ি। গেটে সাদা পাথরে কালো অক্ষরে নাম লেখা আছে শিশির রায়ের। শিশির নিজেই এগিয়ে এসে অভ্যর্থনা করে নিয়ে গেল বাড়ির ভেতরে। পরিচয় করিয়ে দিল ওর স্ত্রীর সঙ্গে। মেয়েটির—মেয়েটিই বলব, মহিলা বলবার মতো বয়স হয়নি তার—রুক্ষ চেহারায় কেমনতরো একটা তাচ্ছিল্যের ভাব, যেন পৃথিবীর কাউকেই এবং কিছুতেই তার পছন্দ নয়। আমার সঙ্গে আলাপিতা হয়ে যেন তার মর্যাদার হানি ঘটল অত্যন্ত, এভাবে দু’একটি কথা বলেই তিনি অন্দরে চলে গেলেন, জানিয়ে গেলেন অবিলম্বেই চাকর দিয়ে চা পাঠাচ্ছেন।
আমার প্রতি মনোভাব আগেকার মতোই আছে, কিন্তু অন্যান্য দিক দিয়ে একেবারে বদলে গেছে শিশির রায়। দশ বছর আগের আত্মভোলা কবি হয়ে গেছে অতিমাত্রায় আত্মসচেতন কাজের লোক, দশ বছর আগেকার স্বপ্নালুতার আভাস তার এখনকার চোখে পাওয়া যায় না, আদর্শবাদ চাপা পড়ে গেছে বস্তুতান্ত্রিকতার তলায়।
দশ বছর আগে বেপরোয়া হয়ে ভাগ্য অন্বেষণে বেরিয়ে পড়ে কীভাবে সে নানা বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে তক্তা সরবরাহের ব্যবসায়ে ধনী হয়েছে সে কাহিনী আমার কাছে রূপকথার মতো শোনাল। স্ত্রী এই ব্যবসায়েই ধনীর একমাত্র মেয়ে, তাকে বিয়ে করার ফলেই এত তাড়াতাড়ি এত টাকা রোজগার করা সম্ভব হয়েছে, একথাও স্বীকার করল শিশির।
কবিতার কথা তুলতেই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উঠল শিশির; নিজের দশ বছর আগেকার কবিতা পাগলামির কথা মনে করে একটু লজ্জিতও হল যেন। বলল, “ও পাগলামির ভূত দশ বছর আগেই ঘাড় থেকে নেমে গেছে। এখন শুধু একটি কাব্য বুঝি—টাকার কাব্য। জঙ্গলের পর জঙ্গল কেটে সাফ করাই, গাছ চিরিয়ে তক্তা বানিয়ে চালান করি, আর টাকা এসে ব্যাঙ্কে জমা হয়।” মনে হল বহুকাল আগে মদ্য-ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত চৌধুরির টাকা প্রশস্তির প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি তক্তা-ব্যবসায়ী শিশির রায়ের মুখ থেকে।
“কবিতার কথা শুনলেই এখন হাসি পায় মাস্টারমশাই। কবি শিশির রায় অনেক দিন হল মরেছে। আমি শিশির রায় স্বপ্ন দেখি শুধু তক্তার। কাটা হচ্ছে গাছের পর গাছ, তৈরি হয়ে চালান হচ্ছে তক্তার পরে তক্তা, ব্যাঙ্কে জমছে টাকার পরে টাকা। স্বপ্ন দেখি তক্তা- ব্যবসায়ী শিশির রায় হবে ভারতের তক্তা সম্রাট শিশির রায়। ভাগ্যিস কবি শিশির বায় মরেছিল!”
আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে শিশির রায়; আমিও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠি এই ভেবে—তক্তা আর কবিতার অন্ত্যমিলই কি কবি যশঃপ্রয়াসী শিশির রায়কে তক্তাবিলাসী করে তুলেছে!
৪ মার্চ ১৯৪৫