ফুল – শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়
না, এ ব্যাপার নিয়ে রাখালবাবুর কোনও অপরাধবোধ নেই। আপনি যদি নৈতিক প্রশ্ন তোলেন, সে বলবে, হ্যাঁ বাড়িটা আমার পৈতৃক—ঠিক কথা; আর, বুড়োহাবড়া গলগ্রহ—তা-ও আমার নেই কেউ; নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ আমি একটু শান্তিতে থাকতে চাই; রবিবার দুপুরে এই দু-তিন ঘণ্টা সময় আমি পরিবার নিয়ে থাকার মতো থাকি, তাতেই আমার আশ মিটে যায়। শরীরকে উপোসি রাখব কেন, সে বলবে— আবার মেয়েমানুষের ইচ্ছে পেলে খ্যাপা কুকুরের মতো রাস্তায় ঘাটে বেপাড়ায় ঘুরঘুর করতে আমার রুচিতে বাধে। এই ব্যবস্থাই ভাল।
প্রশ্ন করলে হয়তো এইসব কথা সে বলবে। কিন্তু প্রশ্ন কেউ করেনি ওকে। লেক রোডের এই অঞ্চলটায় একটু যেন আঠাছাড়া ভাব। পাঞ্জাবি, মাদ্রাজি, মারোয়াড়ি—নানান জাতের বাসিন্দা, তার মধ্যে ছড়ানো ছিটোনো বাঙালিরা—সুতরাং জায়গাটা ঠিক পাড়া হয়ে উঠতে পারেনি। দানা বাঁধতে পারেনি আর কি। পাড়ার মধ্যে একটা মণিহারি দোকান এই রাখাল স্টোর্স, ফাই-ফরমাশ খাটে যারা, তারা চেনে। হেঁটে বা রিকশায় চড়ে যেতে-যেতে উটকো লোকেরও নজর পড়ে যায় সারবন্দি লজেন্স, বিস্কুট আর চিকলেট ভরতি বয়ামের ওপাশে, একটি গোলপানা হাসি-হাসি মুখ, চোখে চশমা, কালো ফ্রেম, কপালের ওপরে দুটো টাকের গুলি। তার পেছনে ডাঁই করা বেবিফুডের টিন, গুঁড়ো সাবান বা শরীর-খারাপের বাক্স। এই পর্যন্ত।
ভিন্ন পরিবেশে, অর্থাৎ গাছের তলায় বা ট্রাম স্টপে রাখালবাবুকে দাঁড় করিয়ে দিলে হয়তো পাড়ার লোকেরাই ঠিক চিনে উঠতে পারবে না ঠিক কোথায় দেখেছে ওকে। সুতরাং তার ব্যক্তি জীবন, আচরণ ও অভ্যাসগুলি আর কারও লক্ষ করার কথা ওঠে না। বিশেষত, যখন সে বাস্তবিক শান্তিপ্রিয় মানুষ।
আয়না ঘুমোচ্ছিল। রাখালবাবু চোখবুজে পড়েছিল অনেকক্ষণ। এক-একবার তাকিয়ে দেখছিল আয়নার ঘুমন্ত মুখটা, ওর উঁচু চোয়াল, ট্রিম করা ভুরু, একটু বড় মুখের প্রসার। ভাবছিল, ওর পুষ্ট স্বাস্থ্যকে স্প্রিং-এর মতো শরীরের সঙ্গে মিলিয়ে মুখটা যদি আর-একটু সুশ্রী হত, রংটা যদি আর একটু ফর্সা হত, তবে আয়নাও এতদিন পড়ে থাকত না। কেউ বিয়ে করে নিত ওকে। আবার ভাবছিল, ভাগ্যিস হয়নি!
ঘড়িতে পাঁচটা বাজছে দেখে আয়নার কাঁধে মৃদু ধাক্কা দিল রাখালবাবু। বলল, ‘এই ওঠো, তোমার যাবার সময় হয়েছে।’
ধড়মড় করে উঠে বসল আয়না। মুখে লজ্জাভাব। অপরের বিছানায় আরাম উপভোগ করছিল বলে লজ্জা। একটুক্ষণ। তারপর হাই তুলল শব্দ করে। আলনার কাছে এগিয়ে গেল।
জানলা দুটো বন্ধ, তাই ঘরটার মধ্যে আলো কম। রাখালবাবু সুইচ টিপে আলো জ্বালল, তারপর দরোজাটা একটু ফাঁক করে খুলে বেরিয়ে গেল বাক্স-মাপের বারান্দাটায়। দু-ভাঁজ করে পরা ধুতি, গায়ে গেঞ্জি, রেলিং-এ ভর দিয়ে বিকেল পাঁচটার রাস্তা দেখতে লাগল। একটা আইস-ক্রিমওলা হেঁকে যাচ্ছে চিৎকার করে। ওদিক থেকে আসছে, ধবধবে সাদা টুপি-পরা হিন্দুস্থানী চানাচুর গরম।
ছোঁড়াটাকে ডেকে চা করতে বললে হয়, একবার মনে হল রাখালবাবুর। তারপর ভাবল, মেয়েটা চলে যাক।।
ভেতরে যে চুল বাঁধছে, সাজগোছ করছে, তার আসল নাম আয়না নয়। শিপ্রা। রাখালবাবু আয়না বলে ডাকে। আজ দু বছর ধরে ডাকছে। এর যদি বিয়ে হয়ে যায় বা অন্যরকম কাজ পেয়ে এ যদি আসা ছেড়ে দেয়, তা হলে রাখালবাবু আবার যার সঙ্গে ব্যবস্থা করবে, তাকেও আয়না বলে ডাকবে। কারণ এই বিকল্প ব্যবস্থাপনার সুত্রপাত আজ থেকে দশ-বারো বছর আগে যাকে দিয়ে হয়েছিল, তার নাম ছিল আয়না। সে মেয়েটা লেখাপড়া জানত না। মানুষ বদলে বদলে গেলেও রাখালবাবু এই দীর্ঘ দশ-বারো বছর আয়না নামের মেয়ের সঙ্গেই মেলামেশা করছে। সপ্তাহে একদিন দু-তিনঘণ্টা সময় পরিবার নিয়ে থাকার মতো আছে। বাকি দিনগুলো আর সব কটা রাত ও একা থাকা পছন্দ করে। একা থাকে, নির্ঝঞ্চাট।
নীচের তলার পৈতৃক আমলের ভাড়াটের কাছে, যে-টাকা সে পরিশ্রম না করেই মাসে-মাসে পায়, তাতে উঠে আসে খরচ। দোকানের আয় থেকে নিজের পেট আর ছোঁড়া চাকরটার মাইনে; আর ট্যাকস, ইলেকট্রিক বিল। রাখালবাবু সিগারেট খায় না।
ভেতর থেকে শিপ্রা শব্দ করল, ‘আমার হয়ে গেছে।’
ঘরের মধ্যে মৃদু আলো আর পারফিউমের মেয়েলি গন্ধ। রাখালবাবু দেখল, ওপাশের দরোজার মুখে দাঁড়িয়ে আছে আয়না, ফিটফাট। কপালে নীলরঙের টিপ। বেশ লম্বা দেখাচ্ছে এখন। পায়ে বোধ হয় উঁচু-হিল-এর জুতো। ছাপা সিল্কের নীল এত সুন্দরভাবে ওর গায়ে জড়ানো, যেন বিজ্ঞাপন থেকে এইমাত্র উঠে এসেছে আয়না।
রাখালবাবু জিজ্ঞেস করল, ‘পরের রবিবার দেখা হচ্ছে।’
হঠাৎ যেন মনে পড়ে গেছে—সেই রকম চমকে শিপ্রা বলল, ‘না, আমার অসুবিধে আছে। অন্য কোনওদিন—’
—শনিবার? সোমবার?
—শনিবার না। সোমবার। সোমবারই ঠিক রইল, কেমন?
সিঁড়ি দিয়ে খট-খট শব্দ করতে করতে নেমে গেল শিপ্রা। শব্দগুলো মিলিয়ে যাবার আগেই দরোজা বন্ধ করল রাখালবালু। তারপর হাঁক পড়ল, শম্ভু, চা কর।
নির্দিষ্ট জায়গায় এসে শিপ্রা যখন রিকশা থেকে নামল, দেখে, তপন দাঁড়িয়ে আছে আর ঘন-ঘন সিগারেট ফুঁকছে।
কানঢাকা বাবরি চুল, লম্বা ঝুলপি, গায়ে টি-শার্ট। পরনে ছ্যাতরানো পা-ওলা হলুদ প্যান্ট, সামনের দিকের পকেট দুটোর কাছে ময়লা। ঝোলা গোঁফজো্ড়া ছড়িয়ে তপন হাসে।
—‘এই’, তপন এগিয়ে আসে, ‘আজ তোদের বাসায় গেছিলাম সকালে। তুই ছিলি না।’
—‘আমার গানের ক্লাস। তুই তো জানিস।’
—‘মনে ছিল না। মাইরি বলছি। তোর মাকে যখন বললাম, একটা চাকরি এবার হয়ে যেতে পারে, মুখটা কেমন আমসি মেরে গেল জানিস।’
—‘ওই তো ভয়। তোর চাকরি হলেই যে পাখি উড়ে যাবে।’
—‘যাবেই তো।’
হাঁটতে হাঁটতে ওরা একটা বড় পার্কের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
অন্ধকার নামছে। পার্ক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। বাবা, মা, ঝি-চাকরদের সঙ্গে বাচ্চারা বল বুকে চেপে বাড়ি ফিরছে। হল্লা করতে করতে খেলোয়াড়রা। ঘামে ভেজা ওদের শরীর। প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রতি ওদের ভ্রূক্ষেপ নেই।
পার্কের বেশ ভেতরে একটা খালি বেঞ্চি পেয়ে ওরা বসে। পাশাপাশি, কিন্তু খুব ঘনিষ্ঠভাবে না।
তপন বলে, ‘অনেক দেরি হয়ে গেছে আমাদের। চাকরিটা পেলেই কিন্তু আর দেরি করব না। আর শোন—’
‘কি?’ শিপ্রার খুকখুক হাসির শব্দ শোনা যায়। ‘কী বল না! তাকে যে ভারী একসাইটেড দেখাচ্ছে?’
—‘নাটক-ফাটক করা কিন্তু তোকে বন্ধ করতে হবে, বলে দিচ্ছি। আমি ও সব পছন্দ করি না।’
—‘এখনই এত। কর্তামশাই হলে তো হাতে মাথা কাটবি।’
তপন একটু চুপ করে যায়।
বলে, ‘খুব ভালবাসব তোকে দেখিস। কর্তামশাই কথাটা বেশ মিষ্টি, না? আমার কর্তা হবার ইচ্ছে। লাইফে শালা চাকরের চাকর হয়ে রইলাম।’
—‘এত বছর ভ্যারান্ডা ভাজলি তপুদা, এখন কাজ পেলে রাখতে পারবি তো? কাজের একটা অভ্যেস—’
কথা শেষ করতে না দিয়ে তপন বলে, ‘আরে, রাখ। পারব না মানে? এই তো টেস্ট নিল, কুড়ি জন ক্যান্ডিডেট, মিনিটে ষাটটা ওয়র্ড পিটিয়ে দিয়ে এলাম। নির্ভুল। আরে, কেউ তো ইংরিজিই শুদ্ধ লিখতে পারে না।’
—‘তোর ডিগ্রির কথা বলিসনি তো?’ শিপ্রা ভয়ে-ভয়ে জিজ্ঞেস করে।
—‘এত বোকা! একবার যখন বুঝে গেছি, শালা এম এ ডিগ্রিটাই আমার গলগণ্ড! স্রেফ দেখিয়ে দিলাম, হায়ার সেকেন্ডারি, সেকেন্ড ডিভিসন, টাইপিং ষাট! বলে, ছ মাসের মধ্যে শর্টহ্যান্ডটাও শিখে নিতে হবে। বললাম, চাকরিটা দাও, তিনমাসে শিখে দেখিয়ে দেব, ঝড় বইয়ে দেব।’
—‘এত বকিসনি তপুদা, চুপ কর। দশ বছর ধরে মুখে তোর যত ঝড়!’ শিপ্রার দীর্ঘশ্বাস পড়ে ‘তোর চাকরিও হবে না, আমাদের বিয়েও হবে না। স্বপ্ন-টপ্ন দেখে কোনও লাভ নেই। তার চেয়ে কোনও দোকানে টোকানে কাজ খোঁজ। যেমন চলছে সব, তেমনি চলুক। তোর ধরাকরার লোক নেই, আমার বাবার টাকা নেই—ওসব কথা চিন্তা করিস না।’
তপন আরও উত্তেজিত হয়। বলে, ‘এইভাবে জীবন চলে মানুষের—? চলা উচিত?’
—‘আমার কিন্তু মন্দ লাগে না এই নাটক থিয়েটারের কাজ। বেশ সয়ে গেছে। দু-পয়সা আমদানিও হচ্ছে সংসারে। বাড়িতে ডাঁটের ওপর থাকি।’
হঠাৎ তপন তার থাবাদুটো শিপ্রার উরুর ওপর চেপে ধরে। পাশ ফিরে মুখ নিচু করে বলে, ‘আমার মন ভেঙে দিস না লক্ষ্মীটি।’
তপন ভাবপ্রবণ হয়ে উঠছে দেখে শিপ্রা টান হয়ে বসে। কব্জি উলটে ঘড়ি দেখে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না।
পার্কের ওপরে বেনারসী পাতা আকাশ। ছোট ভাঙা চাঁদ, তারাদের বুটি। ঝিরঝির করে হাওয়া দিচ্ছে। হাওয়ায় না-জানা বুনো গন্ধ।
শিপ্রা উঠে পড়তে তপনও ওঠে। ওদের কোনও কথা হয় না অনেকক্ষণ। পার্ক থেকে বেরিয়ে ওরা রাস্তায় দাঁড়ায়। কিছুটা হেঁটে ট্রামরাস্তা। আলো।
শিপ্রা আবার ঘড়ি দেখে। এবং ছটফট করে ওঠে।
—‘একটা ট্যাক্সি ধরে দিবি তপুদা? দেরি হয়ে গেছে।’
তপন অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে, ‘বাসায় ফিরবি না?’
—‘না রে, না। আমার প্লে আছে। আটটার মধ্যে হাওড়ায় পৌঁছতেই হবে।’
—‘পৌঁছে দেব, না একা যেতে পারবি?’
ঠাণ্ডা গলায় জিজ্ঞেস করে তপন।
আবার হাসে শিপ্রা। ওর আলতো হাসি আর চলে যাবার জন্যে ব্যগ্রতা তপনের মন আরও খারাপ করে দেয়।
—‘টাক্সিটা ডেকে দে প্লিজ! নিজেই চলে যাব।’
ট্যাক্সির দরজা খুলে তপন যখন দাঁড়িয়ে থাকে, ওকে বড় বেচারা দেখায়। টি-শার্ট, হলুদ প্যান্ট, জুলপি, কান পর্যন্ত ঢাকা বাবরি সত্ত্বেও। মুগ্ধ চোখে ও তাকিয়ে থাকে শিপ্রার দিকে।
উঠতে গিয়ে শিপ্রা বলে, ‘কাল সকাল আটটায় কোয়ালিটির সামনে থাকবি, বুঝলি। ঠিক আটটায়।’
তপন মাথা নাড়ে। তারপর একটু ইতস্তত করে বলে, ‘তোর কাছে দুটো টাকা হবে? ধার।’
পেছনের সিটে বসে শিপ্রা তার হাত ব্যাগ খোলে। আন্দাজে ব্যাগের মধ্যে আঙুল নাড়ে। ছোট-বড় নানান সাইজের নোটে আঙুল ঠেকে যায়। শেষে একটা খাপি নোট টেনে বার করে দেখে, পাঁচ। পাঁচটা টাকাই দিয়ে দেয় তপুদাকে।
তপন হাত নাড়ে, ‘টা টা।’
কিছুদূর এগোলে পর শিপ্রা ড্রাইভারকে বলে, ‘থিয়েটার রোড।’
পরের অ্যাপয়েন্টমেন্টটা চুকে গেলে চার-পাঁচ দিন ছুটি। ভেবে শিপ্রা এখনই খুশি হয়ে ওঠে। ছুটির দিনগুলো আরাম করে ঘুমিয়ে, সিনেমা দেখে কাটাবে। তপুদাকে ঠকাচ্ছে বলে একসময় প্রথম দিকে, ওর কষ্ট হত। আজকাল আর হয় না। ওর ধারণা, সবাই ব্যাপারটা জানে, কিন্তু চুপ করে থাকে। মেনে নিয়েছে। না হলে, তপুদা টাকা চায় কেন? মা ওর হাতব্যাগ খুলে দেখে কেন। সচ্ছলতার জন্যে লোভ কার না হয়? কে আর দুঃস্থ থাকতে ভালবাসে। শুধু বাবাকে দেখে ওর মনে হয়, তিনি আশা করে আছেন, একদিন না একদিন সময় ফিরবে।
নিজের কথা শিপ্রা যখন ভাবে, ওর মনে হয়, এ-ই বা মন্দ কী। বিয়ে হলেই বা কী এমন স্বর্গলাভ হত। সেই তো ছুটিহীন ঘানিটানা আর দাসীবৃত্তি। মেয়ে হিসেবে বরং ওর দাম আরও দশ পনেরো বছর চড়াই থাকবে, নাটক-থিয়েটারের মুখোশটা তো আছে। এটা স্বীকার করে নিয়েছে সবাই। সবাই মানে একরকমের সমাজ।
ট্যাক্সি থেকে নেমে শিপ্রা একটা দোকান থেকে ফোন করল।
—‘মিস্টার সেনগুপ্ত? আমি মিস চক্রবর্তী কথা বলছি।’
—‘শিপ্রা, তুমি কোথায়? বলো?’
শিপ্রা জায়গাটার নাম বলল। বলল, ‘আমাকে নিয়ে যান। আর শুনুন ভদ্রলোকটি কে? কী রকম?’
সেনগুপ্ত বললেন, ‘মালহোত্রা? হি ইজ এ ফাইন অ্যান্ড ক্লিন ম্যান, তুমি কেন চিন্তা করছ? কোনও বাজে লোকের সঙ্গে ইনট্রোডিউস করিয়ে দিয়েছি তোমায়? বল?’
—‘কাল সকাল সাড়ে সাতটায় চলে যাব কিন্তু। ওকে বলে দিন। আমার অন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে।’
—‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। গেস্ট হাউসের বেয়ারা চা করে দেবে। চা খেয়ে চলে যেও। আমি আসছি।’
সেনগুপ্ত নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে এলেন। সামনের সিটে—পাশে বসল শিপ্রা।
জিগ্যেস করল, ‘আপনার বউ রাগ করে না?’
সেনগুপ্ত বললেন, ‘আমি এগারোটার সময় কেটে পড়ব। মিস্টার মালহোত্রা উইল লুক আফটার য়ু।’
গেস্ট হাউস মানে একটি নিরবচ্ছিন্ন ফ্ল্যাট। সাজানো গোছানো। সব কিছুই আছে। এখন শিপ্রাকে নিয়ে সেনগুপ্ত সেই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলেন। সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন মালহোত্রা। হাতে হুইস্কির প্লাস। মিউজিক চলছে ধীরে।
সেনগুপ্ত পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘মাই ফ্রেন্ড, শিপ্রা।’
মালহোত্রা উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন করলেন। গায়ে পরিচ্ছন্ন স্যুট, লাল টাই। মাথায় কাঁচা-পাকা চুল। বয়েস পঞ্চাশের কাছাকাছি। হাসিমাখা দাঁতগুলি ঝকঝকে পরিষ্কার। একটু মোটা।
ভদ্রলোকটির পরিচ্ছন্ন পোশাকের আড়ালে একজন ডোরাকাটা আন্ডারওয়্যার পরা জন্তুর ছবি উদ্ভাসিত হয়ে উঠল শিপ্রার চোখের সামনে।
বলল, ‘প্লিজড টু মিট য়ু।’
পরের দিন সকালে প্রতুলবাবু বাজার করতে যাচ্ছিলেন। লেভেলক্রসিং-এর মুখে দেখলেন, তপন আর শিপ্রা পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে আসছে। তপনের মুখে জ্বলন্ত সিগারেট। পাছে ওরা আড়ষ্ট বোধ করে, প্রতুলবাবু একটা পানের দোকানের আড়ালে আত্মগোপন করলেন।
ওরা কথা বলছে। কী কথা, উনি জানেন না। প্রতুলবাবু শুধু মনে-মনে প্রার্থনা করলেন, ঠাকুর কবে এদের বিয়ের ফুল ফুটবে, তুমি বলে দাও।
২১ মার্চ ১৯৭৬