কুসুম আসছে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
কাল বড়দিন। ইস্কুলে একটানা বেশ কদিনের ছুটি। ঈশেন পণ্ডিতের বাড়ি প্রাইভেট পড়তে যাওয়াটা আছে। তবে কাল দিনটায় নয়। দুর্গামণ্ডপে এখন তাদের ক্লাস হচ্ছে। মানে, তিন চারটে ক্লাসের বেঞ্চিগুলো একটু পৃথক পৃথকভাবে বসানো হয়েছে। পড়ার নামে অষ্টরম্ভা। রাম হই হই। বুদ্ধিশ্বর পেটা ঘড়িতে ক্লাস ভাঙার ঘণ্টা একটু তাড়াতাড়ি মারছে কেবল। এটুকুই যা ভরসা। ইতিহাস ভূগোল অঙ্কের গলায় মাখামাখি। ছুটির পরে যে যার ঘরে ফিরে যাওয়া—অর্থাৎ ক্লাসঘরে। এ-কটা দিনের মধ্যেই ভাঙচুরে পলেস্তরা ধরে যাবে। রং পড়বে। তবে একটা কথা, দুর্গামণ্ডপের পায়রার গুয়ে বেঞ্চিগুলো ডুবে যাবে। পরীক্ষার সময় তাদের মাথাতেও পালক আর পুরীষ হরবখত পড়ে। এখন আর দুর্গা ঠাকরুণ আসেন না। এলে তাঁর মাথা বাঁচাতে চাঁদোয়া টাঙাতে মিঠুরা আগে দেখেছে।
ইস্কুল থেকে ফিরে সোজা ঘাটে গেল মিঠু। রানার ওপর স্যুটকেসটা কাত করে রেখে গোয়ালে। গাই-বাছুরের জন্যে খোল ভেজানোই ছিল। হাতের কোষে খানিকটা তুলে নিয়ে আবার ঘাটে। হাঁটু পর্যন্ত ধুলো। তার ওপর আবার খড়ি উঠেছে। পা জলে ডুবিয়ে রানায় রেখে খোল ঘষতে থাকে। দারুণ বাস ছাড়ে। খিদেয় পেট গুড়গুড় করে ওঠে। নোলায় জল। পায়ে না মেখে হাতটা গালে পুরে দিতে ইচ্ছে করে।
চোখ তুলে পাহারাদার ডেমরেল মাছ মাঝপুকুরে ঘুরপাক খায়। নারকোলের ডেকলোয় বসে শঙ্খচিল টেঁটুঁই ডাক ছাড়ে। হাছিমপুরের বাদার দিকে গোল রাঙা বল পড়ে থাকে। শিউলি রসের হাঁড়ি নামিয়ে, গাছ চেঁছে আবার হাঁড়ি বসায় গোটা রাতের জন্যে। বলে রাখতে হবে, রস কাল বেশ খানিকটাই চাই। ওরা যদি ভোর-ভোর না-আসতে পারে, তা হলে মেতে যাবার আশঙ্কা। একটু জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে।
রোদ্দুর রানার ওপর পড়েছে, রানার গায়ের স্থলপদ্ম ফুল মুষড়ে পড়ে তাই। ছ্যাপচ্যালা মাছের ঝাঁক পুকুরের কোলের কাছের রোদ্দুরে তিড়িংবিড়িং করে। গায়ের রুপো উলটে পালটে দেখায়। রানার গায়ের জলে গেঁড়ি শামুক বলটুর মন বসে গেছে। হাত গুটিয়ে মিঠু মুঠো মুঠো শামুক জল থেকে তুলে পৈঠেয় রাখে। সেগুলো নিয়ে শানের মেঝেয় জড়ো করে। তারপর ঝামার ওপর রেখে ইট দিয়ে থেঁতো করে আর কলসিতে ফেলে। এই গোটা আষ্টেক করে। চারটে কলসি। একছুট্টে বাগান থেকে কলার বাসনা টেনে ছিঁড়ে আনে। প্রতিটি কলসির গলায় জড়িয়ে জলে, হাত নাগালে বুড়িয়ে দেয়। কাল ভোরবেলা তুলে জল ফেলতে না-ফেলতেই ভেতরটা খরখরিয়ে উঠবে। তেলে কাঁকড়ায় বোঝাই। কাল ওরা এলে কাঁকড়া খাওয়াতে হবে—তাই এই চার চারটে কলসি। শীতের কাঁকড়া আর ভাস্য কাঁকড়ায় তফাত অনেক। শীতের তেলে কাঁকড়ার স্বাদ জিবে লেগে থাকবে। বুক ভর্তি ডিম, হলুদ রঙিন। দাঁড়ার শাঁসই বা কি স্বাদ!
আর কী খাওয়াবে মিঠু ওদের? আলাদা করে? বাড়ির ব্যাপার তো বাড়ি করবেই। ওর তো আলাদা কিছু করা দরকার। বিশেষ করে কুস্মির জন্যে। বড়দিনে অর্থাৎ কালই ওরা আসছে। এবার পুজোর সময়ও ওরা এসেছিল। কিন্তু মিঠু গিয়েছিল পাটনায় মার কাছে। যেদিন ফিরল, তার দু-তিন দিন আগেই ওরা সক্কলে ফিরে গেছে দ্বারভাঙায়। এবারে তাই দ্বারভাঙার গল্প আর শোনা হয়নি; দ্বারভাঙা, লাহেরিয়া সরাই বা মধুবনীর। মাখানা, মাছ, টাঙ্গার গল্প। মিঠু কালই সুদে-আসলে সব শুনে নেবে। এবার তো দু-এক দিনের সময় মাত্র। এখান থেকে যাবে কলকাতায়। সেখানে যেন ওদের কার বিয়ে আছে। তারই মধ্যে যে মনে করে মিঠুকে দেখতে আসছে, তাই-ই যথেষ্ট। আসলে কুসমি। সেই-ই কেঁদে কেটে আনা করাচ্ছে। এই আনা করাচ্ছে—ভাষা ওদের। বাংলা বলে, কিন্তু মৈথিলি টানে। ভারী মিষ্টি লাগে মিঠুর। আরও ভাল লাগে যখন তখন ওকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলে, জী। মিঠুও বলে, কি জী? বলে আর দুজনে কেঁপে-কেঁপে হাসতে থাকে। অনেকক্ষণ ধরে দুজনে দুজনের হাত জড়িয়ে ধরে গড়িয়ে পড়ে।
এত হাসি কীসের রে বাপু? কুসমির মা বলত। মিঠুর মাসি।
এমন কথায় ওরা হেসে আরও কুটিপাটি। রাঙা মাসি আর সেখানে দাঁড়ান না। তিনিও হাসতে হাসতে ভেতরে চলে যান।
দুটিতে ভারী মিল। সাক্ষাত বোনপো না হলে—
না হলে কি? কিচ্ছু না। মিচ্ছি মিচ্ছি।
ওরা দুটোয় তখনও হাসছে। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিল কুসমির। মিঠুর জিবে পড়ে হঠাৎ। চমকে ওঠে মিঠু।
কী রে কাঁদছিস না কি?
হ্যাঁরে, তোর জন্যে মনটা মাঝে মাঝে বড্ড খারাপ লাগে। বলেই, হই হই করে হাসে।
আজ থেকে বছর তিন আগের কথা ভাবতে মিঠুর গা চমকে ওঠে।
ফিসফিসিয়ে উঠেছিল কুসমি। এই, একটা জিনিস খাবি?
কী জিনিস রে?
মিষ্টি মতন…বলেই মুখটা ধরে—ছিঃ, ছিঃ, তারপর রাঙা মুখের ওপর থুঃ থুঃ করে ভোঁ দৌড়।
ঠোঁটে ক্রিমের গন্ধ, না দুধ-সরের? মিঠুর সেদিন জ্বর হয়। জ্বরো মুখে কপালে ওর ঠাণ্ডা হাত চলতে-ফিরতে এসে পড়ে।
আমার বোধ হয় জ্বর আর সারবে না কুসমি।
সারবে না-ই তো। তোকে অনেক দিন এখানে থাকতে হবে। বলে, আবার সে-রকম—
এই, তোরও জ্বর হব দেখিস।
হোক না, তোর কি?
সেবার সত্যিই মিঠু অনেক দিন কুসমিদের দ্বারভাঙায় ছিল। ভালই ছিল—একা একা আর তার ভাল লাগে না। কাল কুসমিরা আসছে। কুসমি আর মাসি৷ মিঠু তাই ভারী ব্যস্ত। শিশির ভেতর কাঁচপোকা ধরে রেখেছে। হুল ছাড়িয়ে। আমডাল চাঁছতে যাচ্ছে। টিপের আঠা তো চাই। ওর আবার টিপ না হলে চলে না। মাথা ভর্তি চুলে, পুকুরে বাতাস পড়লে যেমন ডুরেকাটা জল—তেমনি ডুরে উলিরুলি, বাসমতী আর শীতল।
আর কিছুদিন আগে এলে কোঁড়ক পেত। উঠোনের একপাশে পড়ে পল পচেছিল। তাতে ছাতাফুল ধরেছে কত। মিঠু আর মিঠুর দাদু ফি-রোজ দু-দশটি ভেজে খেত। বিলিয়ে দিত পাড়ায়। খেতে এক্কেবারে মাংসের মতন, নাকি মাংসের চেয়েও ভাল। দাদু বলত, স্বর্গে ফোটে। সারাজীবন খেলে দেবকান্তি পাবি, মৃত্যু জরা কাছে ঘেঁষতে ভয় পাবে। এর নামই স্বর্গপুষ্প।
বাগানের তিন পাশ দিয়ে নয়ানজুলি। বাদা ভর্তি ধান। এক হাঁটু জল। কৈ, খলসে, চ্যাং। ট্যাংরা সিঙ্গি মাগুর থই থই। এ ছাড়া পুঁটি, চাঁদা আর গুঁতে। ধানবুনে চিংড়ি চোখ রাখলেই দেখতে পাবে। পেট ভর্তি শাওলাটে ডিম। তরকারি একটু মাখো-মাখো হবে। কাঁচকলা ডুমো ডুমো করে দেওয়া যেতে পারে। অল্প চিরে-চুরে আলু। ব্যস, আর কিছু নয়। মিঠু ঘুনি আটল পাততে শিখেছে। জুলি একটু ঘাস আর কয়েক চাবড়া মাটিতে বেঁধে মাঝ বরাবর ফাঁক রেখে দিলেই যথেষ্ট। ঘুনি আটল ঠিকঠাক বসে যায়। ঘুনিতে কুঁচো মাছ চিংড়ি আর আটলে বেশি বড়সড় মাছ পড়ে। সবই বাদার মাছ। তার সঙ্গে অবশ্য রুই কাতলা অল্পবিস্তর থাকে। কাছাকাছি পুকুর বেরিয়ে গেলে—বাদায় কুলীন মাছ থই থই করে। সে মাছ আটল বোঝাই। তার সঙ্গে মেটে সাপ আর জলদাঁড়াস, জলো পোকামাকড়—এই সব। মিঠু তখন মাছ ছাড়া আর প্রায় কিছুই খায় না। জামরুল পাতায় পিঁপড়ের বাসা। লাল পিঁপড়ের। তার ডিম ভাঙা যে সে কাজ নয়। সেই ডিমের টোপে টকাটক মাছ ওঠে ডাঙায়। মিঠু তাদের পুকুরেও বসে। ছোট ছিপে চারাপোনা ওঠে আর ও তাদের নখ দিয়ে লেজ কেটে আবার পুকুরে ছেড়ে দেয়। পরে বড় হয়ে ধরা পড়লে বোঝা যাবে, ওরা মিঠুর হাতে একদিন ধরা পড়েছিল।
কুসমি আসবে, অথচ এই দুরন্ত শীতে সেই মাছ ধরার বাহাদুরি দেখাতে পারবে না—ভাবতেও খারাপ লাগছে। মাছেদের মুখে এখন শীত ঠুঁটো। ঘা হয়েছে, তাই টোপ ছোঁবে না। কানায় কানায় জল। জালের কাঠি নামতে-না-নামতেই সরে পড়বে। সুতরাং মাছের আশা দুরাশা। ওদের নিরামিষ খেয়ে থাকতে হবে। লাউডগা দিয়ে পোস্তবাটা। নতুন আলু দিয়ে ফুলকপি বড়ির ঝোল। কচি মটরশুঁটি কাল ছিড়লেই হবে।
ভোর বেলায় সবজির ট্রেন যায় আধো ঘুমের মধ্যে। ঠিক ভোর নয়, বেশ রাত থাকতেই ট্রেনটা এসে দাঁড়ায় ইস্টিশানে। ইস্টিশানের সামনেই ওদের বাড়ি। ব্যাপারীরা ঘোর কুয়াশার ভেতর ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। ওদের নাম ভেনডর, মিঠু একদিন জেনেছিল। সেই ভেনডররা চা খেতে জমে বাদামতলার দোকানে। সেটা আবার মিঠুর ঘরের একদম পাশেই। পাখির মতন ভাষায় কিচিরমিচির করে। মিঠু কিচ্ছু বোঝে না। চটাস পটাস শব্দে বিড়ি ধরায়। রেলগাড়ি অনেক দূর থেকে সিটি বাজায়। ওরা যত ব্যস্ত হয়, ওদের ভাষা আর চিৎকার চেঁচামেচি কেমন আগলাপাগলা হয়ে ওঠে। লেপের মধ্যে গলা পর্যন্ত ডুবিয়েও মিঠুর বুক কেমন গুরগুর করে ওঠে। বাগানে সজারু দৌড়ূচ্ছে কন্দ ছেড়ে। তার কাঁটা বাজছে ঝমঝম। বেশ কয়েকটা শাঁকালু গাছ পুঁতে ছিল ফলসা গাছতলা চেপে। তার দফারফা। সকালে উঠে দেখবে লতাপাতা ছেঁড়া, মাটি খোঁড়া, খোদাল—তার মধ্যে থেকে মিঠুর শাঁকালু লোপাট। সব নয়।
ভাগ্যিস সবজির ট্রেনটা এই সময়ে এসে গিয়েছিল। সজারু সেই শব্দেই পালিয়েছে। কোথায় থাকে ওরা? মিঠু কল্পনায় কল্পনায় একটা কলাগাছ ছুঁড়ে মারে ওর দিকে। কলার থোড়ে কাঁটা বিঁধে ধরা পড়ে ব্যাটা। নড়তে পারে না। তখন ওর গা থেকে হাজার হাজার কাঁটা ছাড়িয়ে নাও। সুন্দর রঙিন কাঁটা কুসুম। যত ইচ্ছে পরুক। আর মাংসটা? শুনেছে, নাকি চমৎকার খেতে ওর মাংস। কিন্তু দাদুর জ্বালায় সে তো আর মুখে তোলার জো নেই। রাখালটাকে দিয়ে দিতে হবে। কলাপাতায় মুড়ে একটুখানি আনতে বলবে অবশ্য। কুসুম আর সে দুজনে চেখে দেখবে। শোনা কথায় বাপু তার অত বিশ্বাস নেই। ভোরবেলার ঝোঁকে একটু যেন দুচোখ জড়িয়ে এসেছিল। দাদু ডাকলেন, মিঠাই উঠে পড়ো। এখনও উঠলে শুকতারা দেখতে পাবে। তা ছাড়া তোমার কাজও তে বিস্তর, কাল বলছিলে। ঘুমের মধ্যে অনেকবার কুসুমের নাম করেছে। মাছ ধরে এনে বলেছে, মুড়োটা কিন্তু তোর। দাদু আর আমি তো প্রায়ই খাই। তুই আমাদের অতিথি—তাই জন্যে।
উঠেই ছাতে চলে গেল মিঠু। এখনও চতুর্দিক কুয়াশায় ঢাকা। ইস্টিশানের প্লাটফর্মে সেই কানাবাতি দুটো জ্বলছে। আর আকাশে জ্বলজ্বল করছে শুকতারা। শ্যাওলা-ধরা ভিজে ছাতে একটু পায়চারি করল। পায়রার খোপের দরজা দিল খুলে। সিরজু, মুখখী আর চিলে পৰ্পন—এই তিন জোড়া সম্বল তার। ডিম হলেই কাক নিয়ে যায়। ছানা ফুটতে পায় না। খোলা ছাত থেকে ওদের গোয়ালের মাচায় রাখাই ভাল। কুসুমের সঙ্গে ধরাধরি করে নিয়ে যাবে। বাদাবন থেকে কুয়াশা গলছে। দূরের বেলাবিলে পানকৌড়ির একটি দুটি বসছে এসে। বসছে আর জল সেলাই করছে যেন। ডুবছে আর উঠছে। কার্নিশের ওপরেই গুচ্ছ গুচ্ছ বকফুল। ছিঁড়তে গিয়ে শিশির আর বুড়ো পাতা ঝরঝর করে নীচে পড়ল। অ্যাত্ত ফুল তুলল মিঠু। কিছু দাদুর পুজোর জন্যে রেখে বাকিগুলো নীচে নিয়ে চলল। ব্যাসম দিয়ে ভাজা দারুণ লাগে। ডাঁটা এখনও হয়নি। ডাঁটাও সরষে মেখে খায়। খায় না যে কি?
কুসমি বলে, তোমরা আগের জন্মে ছাগল ছিলে। বুট জুতোও তো খেয়ে থাকো শুনেছি।
সেঁকুল খাবে কুসুম।
সে আবার কি কুল? নাকি সুরে বলে।
আচ্ছা, তোমার জন্যে তুলে তেলনুনে মাখিয়ে রেখে দেব। দুপুরে রোদ্দুরে বসে বসে খাবে। আমি খাই না।
এঃ, খায় না আবার চাটে।
পুকুরের ভিতরে কোথায় আগুন লেগেছে এই ভোরে। ধোঁয়ায় ধোঁয়াকার। মিঠু হাঁ করলেও ধোঁয়া। গাছপালা সব কিছু থেকেই কিরকম ঠাণ্ডা ধোঁয়া বের হচ্ছে এখন। কপি পাতাগুলোয় শিশির পড়ে কেমন ভেলভেটের মতন দেখাচ্ছে। এককোণে ডালিমের রাঙা ফুল ঝরে রয়েছে। জলে ভাসছে কেউ কেউ। পুকুরে ফুট কাটছে না মাছ।
রস খেলে হাড়ে আরও কাঁপন ধরে। কী করে গেলাসের পর গেলাস উড়িয়ে দিচ্ছে কুসমি?
এই পেট ফেটে যাবে যে রে?
ধুস। কিচ্ছু হবে না, আরও খাব দে।
আর তো নেই। কাল দেব।
না, এক্ষুনি চাই। আজই চাই। নইলে—
রসের হাঁড়িটাই ভেঙে গেল ছাই। শিউলি তো কখন চলে গেছে। দ্যাখো গিয়ে গুড় জ্বাল দিচ্ছে সে এখন চারমুখো উনুনে। কাল দিলে হবে না? আজ অন্য অনেক কিছুই জোগাড় করে রেখেছি। দেয়ালের পাশে আমরুলের লতার চাপ। মুঠো মুঠো ছিঁড়ছে মিঠু।-কলাপাতায় জড়িয়ে নিবুনিবু আঁচে ঠেসে দিয়ে খানিকক্ষণ বাদে বের করে নিতে হবে। তারপর একপলা তেল, একটু নুন। সেই কালচে গাছের শিরে চুষতে চুষতে রস। জীবনে খাওনি কখখনো। আমি একা খাই।
তুমি বিচ্ছিরি সব খাও, আমি ওসব কিচ্ছু খাই না। রাগে ঝলসে ওঠে কুসুম।
তা হলে, কী খাও তুমি?
সে-ই যে, মিষ্টিমতন—
ছাই খাও, তুমি ছাই খাও। একমুঠো সুরকি প্লাটফরমের ওপরেই ছুড়ে মারল মিঠু। নখ দিয়ে ঘষে ঘষে কুকুরের মতন গর্ত করল একটা জায়গায়। ফিসফিস করে বলল, এসে এখানেই থেকো। আমাদের ওখানে আর যেতে হবে না। এখানে বসে বসে ধুলোই খাও।
মিঠুর ছায়া মিঠুর গায়ের ভেতর ডুবে গেছে এখন। ওদের এখনও আসার সময় যায়নি!
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭৩