1 of 2

শকওয়েভ – ৭

সাত

রিসার্চ। গবেষণা। শব্দটা শুনে তিক্ত স্মৃতি ভিড় করল রানার মনে। একটা অযৌক্তিক রাগের মৃদু উত্তাপ অনুভব করল সে নিজের ভিতর।

অপবিজ্ঞান নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কারণে নিষ্ঠুর কিছু মানুষের কুনজরে পড়ে গিয়েছিল সেলেনা। ঘটনাচক্রে তাতে জড়িয়ে পড়ে রানাও। নরক দর্শনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেবার। ভাগ্য খুব ভালো ছিল বলে শয়তানের সঙ্গে বসে বৈঠক করছে না এখন।

‘লেকচারার ছিল, বলছ, তোমার বন্ধু।’ সেলেনার দিকে মনোযোগ দিল রানা। ‘কোন্ সাবজেক্টের?’

‘ফিজিকস।

‘ফিজিকস, না? আচ্ছা, বলো তো, পদার্থবিদ্যার একজন প্রভাষক কীভাবে হুমকি হয়ে উঠবে কারও কাছে!’

‘হতে পারে-এমন কোনও কিছু জেনে ফেলেছিল মেয়েটা, যেটা ওর জানার কথা নয়। আচ্ছা, রানা, কতটুকু জানো তুমি ফিজিকস সম্বন্ধে?’

কলা বিভাগের গ্র্যাজুয়েট হলেও জানা আছে রানার অনেক কিছুই। তবে ও নীরব রইল।

‘যা ভেবেছিলাম…’ নীরবতার ভুল মানে করল সেলেনা। ‘সেক্ষেত্রে, ধরে নিচ্ছি, টেসলা বলে কারও নাম শোনোনি কখনও।’

‘আলবত শুনেছি,’ রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে বলে উঠল রানা। ‘তিনিই তো উনিশ শতকে প্রথম গবেষণা করেন বিদ্যুৎ নিয়ে,’ স্কুলের বইয়ে পড়া জ্ঞানটুকু জাহির করল ও। ‘মরা ব্যাঙের ঠ্যাং নাচাতে সক্ষম হন লাশের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চালনা করে। ঠিক বলেছি না?’

‘তুমি যাঁর কথা বলছ, তিনি হচ্ছেন গ্যালভানি।’ উপহাসের হাসি হাসল সেলেনা।

‘পাঠ্য বইয়েই যদি ভুল তথ্য থাকে, কী শিখবে তা হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা!’ বলল রানা উদাস কণ্ঠে।

‘সে যা-ই হোক…’ হাত ঝাপটা দিল সেলেনা। ‘আমি বলছি মহান সার্বিয়ান বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার কথা। ইনিই ক্যারেনের গবেষণার বিষয়বস্তু। আমাদের পরিচয়ের সময় থেকেই রিসার্চ করছিল বিজ্ঞানীকে নিয়ে।’ একটু থামল মেয়েটা। ‘আঠারো শ’ ছাপ্পান্ন সালে জন্ম টেসলার। ওঁর সম্বন্ধে পরিষ্কার জানো না দেখে অবাক হইনি, রানা। বলতে চাইছি—মার্কোনি, ফ্যারাডে আর এডিসনকে নিয়ে দুনিয়া জুড়ে যেরকম মাতামাতি হয়, তার পাঁচ পারসেন্টও দেখা যায় না প্রতিভাবান এ-পাইয়োনিয়ারকে ঘিরে। অথচ সেই উনিশ শ’ আট সালেই ওয়াওয়ারলেস কমিউনিকেশন, রেইডার, সোনার, রিমোট কন্ট্রোল, রোবটিকস, নিয়ন আর ফ্লুরেসেন্ট লাইটের সূত্র দিয়ে গেছেন মানুষটা; দেখেছিলেন সেলফোন আর ইণ্টারনেটের ভবিষ্যৎ। অবিশ্বাস্য নয়, বলো? টেসলার আরও যেসব আবিষ্কারের কথা না বললেই নয়—’

‘ব্যস, ব্যস, যথেষ্ট ধারণা পেয়েছি!’ হাত তুলে বাধা দিল রানা। নইলে লেকচার থামবে না মেয়েটার

‘মোটেও কোনও ধারণা পাওনি তুমি, রানা। চোখ পাকাল সেলেনা। দৃষ্টি বোলাল, পার্কের যেখানে তরুণী মা-টা বাচ্চাকে দোল দিচ্ছে। দোল খেতে খেতে পুলকিত চিৎকার বেরিয়ে আসছে শিশুটির মুখ দিয়ে।

‘ওদিকটায় দেখো,’ বলল সেলেনা চোখের ইঙ্গিত করে। ‘আমার চাইতেও ছোটখাটো ওই মহিলা। অথচ সামান্যই শক্তি লাগছে দোলনাটাকে উঁচুতে তুলতে।’ তাকাল ও রানার মুখের দিকে। জ্বলজ্বল করছে চোখ দুটো। ‘ক্যারেনের গবেষণাও ছিল এ-ই নিয়ে।’

‘ছোট বাচ্চাকে দোলনায় দোল দেয়ার ব্যাপারে?’

‘নির্বোধের মত কথা বোলো না তো!’ বিরক্তির ছাপ পড়েছে সেলেনার চেহারায়। ‘গবেষণাটা অনুরণনের সূত্র নিয়ে। সঠিক স্থান আর সময়ে অল্প বল প্রয়োগ করে প্রচণ্ড শক্তি অর্জনের ধারণা এটা।’

‘কিছুই বুঝলাম না।’ ঠোঁট ওল্টাল রানা।

‘আচ্ছা, অন্যভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি তা হলে।’ নড়েচড়ে বসল সেলেনা। ‘উম… কীভাবে বোঝাই… ওকে…. তুমি কি জানো, প্রায় এক ঘণ্টা ঊনপঞ্চাশ মিনিটের পর্যাবৃত্তি আমাদের এই পৃথিবী গ্রহটার?’ নিজের লেকচারার-রূপে ফিরে এসেছে মেয়েটা। ‘অন্য কথায়, সলিড কোনও কিছু যদি এ মুহূর্তে মাটিতে ফেলি আমি, গোটা গ্রহ জুড়ে যে সঙ্কোচন- তরঙ্গ বয়ে যাবে, সেটা আবার প্রসারণ-তরঙ্গ হিসেবে একই জায়গায় ফিরে আসবে এক ঘণ্টা ঊনপঞ্চাশ মিনিট পর। …বুঝতে পারছ, কী বলছি?’

‘অ্যাবসোলিউটলি,’ বলল বটে, কিন্তু রানার মনে হচ্ছে, সেলেনার দেয়া পাথর চিবাচ্ছে ও।

‘আর-সব কিছুর মতই পৃথিবী জুড়ে ভাইব্রেশন হচ্ছে ক্রমাগত, প্রতিনিয়ত চলছে সঙ্কোচন-প্রসারণ।’ বিদ্রূপের সুরটা কান এড়িয়ে গেছে মেয়েটার। ‘এখন, কল্পনা করো—ঠিক যেখানটায়, যেসময় সঙ্কুচিত হতে শুরু করেছে পৃথিবী; এক টন হাই-এক্সপ্লোসিভ ফাটালাম সেখানে। কী ঘটবে তাতে? বেড়ে যাবে সঙ্কোচনের হার। ফলাফল, এক ঘণ্টা ঊনপঞ্চাশ মিনিট পর একই হারে প্রসারণ-তরঙ্গ ফিরে আসবে ওখানটায়!

‘এবার ধরো-প্রসারণ-তরঙ্গ যখন থিতিয়ে আসছে, আবারও আরেকটা এক্সপ্লোসিভ ফাটালাম আমি; এই সিস্টেমে ফাটিয়ে চললাম একের পর এক। শেষ পর্যন্ত তা হলে কী ঘটবে বলে মনে হয়, রানা?’

জবাবে ‘আমি কী জানি?’ দেখল ও রানার দৃষ্টিতে।

‘একটু চিন্তা করলেই না-বোঝার কিচ্ছু নেই,’ বলল সেলেনা। ‘হিসেব করে বের করেছেন টেসলা, এই প্যাটার্ন ফলো করে এত বেশি শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব, যা দিয়ে দু’ভাগ করে ফেলা যাবে আস্ত পৃথিবীকে!’

চমকে উঠল রানা। মনে হলো, কেউ যেন হেঁটে গেল ওর কবরের উপর দিয়ে।

‘দু’ভাগ করে ফেলা যাবে!’ প্রতিধ্বনি করল ও অস্ফুটে।

এমনভাবে কাঁধ ঝাঁকাল মেয়েটা, পৃথিবীকে দু’টুকরো করা যেন সায়েন্টিস্টদের কাছে সকালের নাশতা করার মতই সহজ, স্বাভাবিক ব্যাপার।

‘ধারণা পেলে এবার?’ বলল ও ভ্রু নাচিয়ে। ‘ছোট ইনপুট, বড় আউটপুট। টেসলার বেশির ভাগ কাজই এই সূত্রের উপর ভিত্তি করে। আর এসব নিয়েই বাচ্চাদের মত কৌতূহলী ছিল ক্যারেন। প্রথম পরিচয়েই এই বিষয়ে শেয়ার করে ও আমার সঙ্গে। শেষ বার যখন ফোনে কথা হলো, তখনও। ছয় মাস আগের কথা সেটা।’

গোলকধাঁধায় পড়েছে যেন রানা। ‘আমি কিন্তু এখনও বুঝতে পারছি না, ঠিক কোন্ দোষে আমার ওপর এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বর্ষণ করা হলো!’

‘আরেকটু ব্যাখ্যা করি তা হলে?’ বলল সেলেনা ডেডিকেটেড শিক্ষকের মত। ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ছোটখাটো একটা হাতে চালানো ডিভাইস আবিষ্কার করেন টেসলা। ‘ইলেকট্রো-মেকানিকাল অসিলেটর’ নাম দেন তিনি যন্ত্রটার। ‘ছোট ইনপুট, বড় আউটপুট’— প্রিন্সিপলটার ভিত্তিতে তৈরি এই ডিভাইস দিয়ে প্রমাণ করে দেন তিনি: ফ্রিকিউয়েন্সি ঠিক থাকলে, সূক্ষ্ম ভাইব্রেশন

ভাইব্রেশনও প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে আবির্ভূত হতে পারে প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে। গগনচুম্বী অট্টালিকা ধসিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে এই শক্তি।

‘বোমার মত?’

‘উহু… কোনও ধরনের এক্সপ্লোসিভ কিংবা রাসায়নিক কিছুর ব্যবহার নেই এতে।’ মাথা নাড়ল সেলেনা। ‘এমনকী কোনও আওয়াজ কিংবা ধোঁয়াও হবে না। স্রেফ বাষ্পের শক্তিতে বেসিক কিছু যন্ত্রাংশের নড়াচড়ায় ঘটছে এই ঘটনা।’

রানা অবাক। ‘বাষ্প? খেলনা নাকি জিনিসটা?’

হাসল মেয়েটা। ‘হাই-টেকনোলজির যুগে বাস করছি বলে অমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কোন সময়ের কথা বলছি, সেটাও তো মাথায় রাখতে হবে, রানা। তবে হ্যাঁ, খুবই সিম্পল ধরনের ছিল যন্ত্রটা। বলতে পারো, পিস্টন ইঞ্জিনের মিনিয়েচার ছিল দেখতে। অনায়াসে পকেটে ভরে ফেলা যেত ছয় কি সাত ইঞ্চির জিনিসটা। ছোট্ট এক অন- বোর্ড বয়লার যুক্ত ছিল যন্ত্রটার সঙ্গে, অন্তর্দাহ প্রক্রিয়ায় উত্তপ্ত করা হতো বয়লারটা। ওসব দিনে বাষ্পই ছিল শক্তির একমাত্র উৎস, যন্ত্রপাতি অপারেট করার জন্যে শক্তির জোগান দিত বাষ্পই.‘

‘আর ওটাই ধসিয়ে দিচ্ছে আকাশছোঁয়া দালান?’ প্রচ্ছন্ন শেষ রানার কণ্ঠে।

‘নিশ্চয়ই।’

‘এমনকী দু’ভাগ করে ফেলছে আস্ত একটা গ্রহও!

‘ওহ, নো!’ ফিক করে হেসে ফেলল সেলেনা। এরকম ক্ষমতার জন্যে আরও বড় কোনও ভার্শন চাই যন্ত্রটার।

‘তোমার এসব বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী যদিও বিশ্বাস করা মুশকিল…’

‘মিথ্যে বলছি না আমি!’ বলল সেলেনা মরিয়া হয়ে। ‘সত্যিই অস্তিত্ব রয়েছে এরকম ইলেকট্রো-মেকানিকাল অসিলেটরের। টেসলার তত্ত্ব অনুযায়ী, অসীমই হওয়ার কথা এর ক্ষমতা।‘

‘থিয়োরিটিকালি হলে ঠিক আছে।’ মৃদু হাসি রানার ঠোঁটে। ‘হাতির ডিম, ঘোড়ার ডিম—কত কিছুই তো দেখানো যায় কাগজে-কলমে। সত্যি সত্যি প্রমাণ কিংবা বাস্তবায়ন আরেক জিনিস। আর তুমি বলছ, এসব নিয়েই মজে ছিল তোমার বান্ধবী? মরতে হয়েছে কমিকসে আঁকা উদ্ভুটি অস্ত্রের মত আজব ডিভাইসের সাহায্যে গ্রহ-নক্ষত্র ধ্বংস করার অবিশ্বাস্য আইডিয়া নিয়ে কাজ করার জন্যে?’ গলার স্বর নেমে গেল আরেক পর্দা। ‘শোনো, মেয়ে! বেশ কয়েক বছর আর্মিতে ছিলাম আমি। ভেঙে, গুঁড়িয়ে ধ্বংস করার সূত্র জানা আছে আমার। সৈনিকদের চেয়ে দক্ষভাবে করতে পারে না কেউ কাজটা। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালা হচ্ছে হাই-টেক এক্সপ্লোসিভকে আরও উন্নত করতে; বিস্ফোরণে উড়ে না গিয়ে কীভাবে ওসব জিনিস হ্যালে করতে হয়, সেটার প্রশিক্ষণে। হাজারো লোক মারা যাচ্ছে কিংবা পঙ্গু হচ্ছে এগুলো নাড়াচাড়া করতে গিয়ে। তোমার কি মনে হয়, সহজ কোনও উপায় থেকে থাকলে এত দিনে সেটার উদ্ভাবন না করে বসে থাকত স্পেশাল ফোর্সেস ইউনিট?

‘ভাইব্রেশন আর বাষ্প, হাহ!’ ফিক করে হাসল রানা। ‘আস্ত পৃথিবীকে দু’ভাগ করে ফেলা! এর পর হয়তো শোনাতে চাইবে স্টার ট্রেকের মারণরশ্মির কথা!’

রাগে ফুলতে ফুলতে বিস্ফোরিত হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল মেয়েটা, রানার শেষ কথাটা শুনে ঝপ্ করে পড়ে গেল রাগ।

‘রানা!’ বলে উঠল বিস্মিত কণ্ঠে। ‘জানো তুমি টেসলার মারণরশ্মি সম্বন্ধে?’

বিপন্ন অনুভব করল স্পাই-তারকা। অত কিছু ভেবে বলেনি ও কথাটা। কবে, কোথায় যেন শুনেছিল ওটার ব্যাপারে।

‘আরে, ওই জিনিস আছে কি নেই, সেটাই তো মস্ত বড় এনিগমা! তা-ই না?’

‘না, রানা, আছে… সত্যিই আছে ওটা!’ স্থির বিশ্বাসের সঙ্গে বলল সেলেনা। ‘ঐতিহাসিক সত্য এটা।’

‘ননসেন্স!’

হঠাৎ করেই এর পর নেমে এল দীর্ঘ নীরবতা।

সন্তানকে দোলনা থেকে তুলে নিয়েছে মা। ছেলের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে ছায়াচ্ছন্ন ফুটপাথ ধরে মিলিয়ে যাচ্ছে দূর থেকে দূরে। কেমন যেন সুখী সুখী, আবার বিষণ্ণবিধুর দৃশ্যটা।

স্রেফ ওরা দু’জন ছাড়া আর কেউ নেই এখন উদ্যানটায়। মিহি বাতাস বইছে বহু দূরের বারতা নিয়ে।

‘এখন মনে হচ্ছে, তোমার কাছে আসাই উচিত হয়নি আমার!’ তিক্ততা প্রকাশ পেল সেলেনার কণ্ঠে। ‘অযথাই নষ্ট করেছি সময়। নিজেরও, তোমারও। শেষের কথাটা বিষাদ মাথা। ‘মনে পড়ে, রানা… ওই দিনটার কথা? আমাকে দেখার জন্যে ছুটে গিয়েছিলে ক্যানাডায় … চিরকালের বন্ধু বলে গ্রহণ করেছিলে আমাকে… এ জীবনেও, পরের জীবনেও! …ভুল করেছি কথাটা বিশ্বাস করে!’ মন ভেঙে গেছে মেয়েটার। টপ্ করে এক ফোঁটা অশ্রু নেমে এল ওর গাল বেয়ে।

‘সেলেনা, আমি—’

‘ঠিক আছে, রানা। আই অ্যাম সরি। তোমাকে বিরক্ত করার জন্যে সত্যিই আমি দুঃখিত।’ হ্যাণ্ডব্যাগ তুলে নিল মেয়েটা, হাত বাড়াল গাড়ির চাবির জন্য।

‘ভুল বুঝছ আমাকে…’ সেলেনার হাত ধরতে গেল রানা। গলায় দলা পাকানো কিছু একটার উপস্থিতি।

এমনভাবে হাত এড়াল মেয়েটা, যেন ছোঁয়াচে রোগ রয়েছে রানার। জলে ভরে এসেছে চোখ দুটো। অশ্রু মুছে নিয়ে রাগত স্বরে বলল, ‘দুরো, ছাই! গেল কই চাবিটা?’ সটান উঠে দাঁড়িয়ে কদম বাড়াল পাশে।

আরও কিছু বলার জন্য মুখ খুলেছিল রানা, মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল ওর।

চাপা ‘কড়াৎ’ শব্দের সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে চলটা উড়ল রংচটা বেঞ্চের ব্যাকরেস্ট থেকে।

পিছন-দেয়ালে প্রচণ্ড আঘাত হানল কিছু একটা।

মুহূর্তের ভগ্নাংশ সময়ে—যেটাকে মনে হলো পুরো একটা মিনিট——দেখে নিল রানা বুলেটহোলটা। এই মাত্র যেখানটায় বসে ছিল মেয়েটা, দগদগে ক্ষতের মত নিজের উপস্থিতি জাহির করছে সেখানে গর্তটা। ওর থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি তফাতে।

সেলেনা যদি সরে না যেত…

চিন্তার গতি রোধ করতে বাধ্য হলো রানা। মুহূর্তেই সক্রিয় হয়ে উঠল পুরো মাত্রায়।

ওদের সামনের দিক থেকে আবারও আগুন ঝরাল সাইলেন্সার লাগানো অস্ত্রটা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *