1 of 2

শকওয়েভ – ২৮

আটাশ

সদ্য বেক করা পাঁউরুটির ঘ্রাণ ছাড়া সকালের প্যারিসকে কল্পনাই করা যায় না প্যারিস বলে। প্রাতঃকৃত্যের পর যখন নাতা কিনতে বেরিয়ে পড়ল রানা, সদা-বিদ্যমান ট্রাফিকের ধোঁয়ার সঙ্গে মন সজীব করা বাতাসে ভাসছে তখনও পাঁউরুটির সুবাস।

রাস্তার ধারের ‘বুলজেরি’ নামের দোকান থেকে বাদামি একখানা পেপারব্যাগ নিয়ে ফিরল ও সেফহাউসে। কফি তৈরির ফাঁকে খুটখাট আওয়াজ শুনে বুঝতে পারল, ঘুম ভেঙেছে সেলেনার।

খানিক বাদেই আলুলায়িত চুলে দেখা গেল মেয়েটাকে কিচেনের দরজায়। রানার দেয়া বেঢপ সাইজের শার্টটার ঝুলের পর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত নিরাবরণ। বোঝা যাচ্ছে না, ভিতরে কিছু আছে কি নেই।

অবাধ্য চোখ দুটোকে শাসন করল রানা। ‘ক্রোসাস্ এনেছি নাশতার জন্যে।’

‘ওহ, নাইস। এখুনি আসছি আমি কাপড় পাল্টে।’

কিচেনেই নাশ্তা সারল ওরা। মুখোমুখি বসে কফিতে চুবিয়ে ক্রোসাস্ মুখে তুলল নীরবে।

‘আগেই ঘুম ভেঙেছিল আমার,’ জানাল সেলেনা। ‘শুয়ে শুয়ে তোমার ব্যায়াম করার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। খুবই সিরিয়াস তুমি এক্সারসাইজের ব্যাপারে? ক’টা দাও, রানা?’

‘কী, পুশ-আপ? এই… ধরো… এক শ’টার মত।’

‘রোজই?’ চোখের তারা বিস্ফারিত হলো মেয়েটার।

‘দিনে দু’বার করে সাধারণত। আর সময় পেলে দৌড়াই। এ-দুটোই মূলত ফিট থাকতে সাহায্য করে আমাকে।’

‘নট ব্যাড,’ বলল সেলেনা মৃদু হেসে।

‘জলদি শেষ করো কফি,’ তাড়া দিল রানা। ‘ব্যস্ত একটা দিন পড়ে আছে সামনে।’

.

ধূসর মার্সিডিসের স্টিয়ারিঙের পিছনে গতরখানা এমন ঠেসে ঢুকিয়েছে ড্রাইভার যে, গাড়িটারই অংশ বলে মনে হচ্ছে মোটকুটাকে।

কেন জানি ইদু মিয়ার কথা মনে পড়ল রানার। পড়ার কোনও কারণই নেই যদিও কোথায় সেই দিল খোলা ঢাকাইয়া গালিবাজ, আর কোথায় এ-মোটুরাম! যাকে বলে—কোথায় আগরতলা, আর কোথায় খাটের তলা।

বুলেভার্ড জর্ডানে এসে ব্যাঙ্ক ন্যাশনাল দে প্যারিস-এর সামনে নামিয়ে দিল ওদেরকে ট্যাক্সিটা। শহরের দক্ষিণ প্রান্তে ওটা, পোখতে দোখলিয়ন্সের কাছে।

অপেক্ষা করতে বলল রানা ড্রাইভারকে।

খুশি মনেই রাজি হলো মোটু। পাশের সিটে গাদা করা হারিবো স্ন্যাকসের মজুত থেকে নতুন একটা প্যাকেট খোলার মওকা পেয়ে গেল।

জনাকীর্ণ ব্যাঙ্কে পা রেখে টেলারের কাউন্টারের দিকে এগোচ্ছিল সেলেনা, ‘এদিকে নয়,’ বলে কনুই ধরে ওকে টেনে নিয়ে চলল রানা আরেক দিকে।

‘আমি তো ভেবেছি, টাকা তুলতে এসেছ তুমি।’

‘অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা যাবে না টাকা।’ মাথা নাড়ল রানা।

ফ্রান্সের নানান ব্যাঙ্কে পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট রয়েছে ওর। কিন্তু যারা ওদের পিছনে লেগেছে, তারা নির্ঘাত নজর রাখবে অ্যাকাউন্টগুলোতে। সেক্ষেত্রে থেকেই যাচ্ছে খোলা কোনও রেকর্ডেড ট্রানজ্যাকশনের মাধ্যমে ব্যাটাদের হুঁশিয়ার করে দেয়ার ঝুঁকিটা। সেকেণ্ডের মধ্যেই হয়তো বের করে ফেলবে তারা রানাদের অবস্থান।

‘অবশ্য এর বিকল্প অন্য উপায়ও রয়েছে,’ বাক্যটা সম্পূর্ণ করণ রানা।

‘তা-ই নাকি!’

অ্যাকাউন্ট ছাড়াও ইয়োরোপের নানান শহরে বেশ কয়েকটা সেফ ডিপোজিট বক্স রয়েছে রানার। কেউ কেউ সোনার বার রাখে এসব বাক্সে। কেউ রাখে হীরার গয়না। আর ওরগুলো ভর্তি নগদ টাকা, হরেক ফলস আইডি, অস্ত্র এবং আরও অনেক দরকারি জিনিসে।

প্রয়োজনীয় ফর্মালিটি এবং মখমলে মোড়া ছোট্ট লাউঞ্জ এরিয়ায় ক্ষণিকের অপেক্ষার পর প্রাইভেট ভিউয়িং রুমে এনে হাজির করা হলো ওদের। ওখানেই ভল্ট থেকে এনে রাখা হয়েছে বাক্সটা।

স্বচ্ছ প্লাসটিকে মোড়া থরে থরে ব্যাঙ্কনোট দেখে শ্বাস চাপল সেলেনা।

একটা বাণ্ডিল হাতে তুলল রানা। গুনে দেখার দরকার নেই—কুড়ি হাজারমত ইউরো রয়েছে বাক্সটায়।

‘দরকারের চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে…’ আন্দাজে বলল মেয়েটা।

‘বেশি… তা-ও খুব বেশি বলা চলে না। তবে আশা করছি, এ দিয়েই খরচ-খরচা চলে যাবে আমাদের… যদ্দিন না হাতের কাজটা শেষ হয়।’ আরও কয়েকটা বাণ্ডিল তুলল রানা।

টাকাগুলোর নিচে চুপটি করে থাকা সেমি-অটোমেটিকটা দেখে চোখ দুটো কপালে উঠল মেয়েটার।

পাঁচখানা স্পেয়ার লোডেড ম্যাগাজিন সমেত তুলে নিল রানা ওটা। মিলিটারি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে পুরানো এই ব্রাউনিং হাই-পাওয়ারটাকে। লুকানো যেমন সহজ, নধরকান্তি মেশিন কারবাইনের তুলনায় অনেক সহজে কাজে লাগানো যায়।

অস্ত্রটা হাতে নিয়ে জোশ এসে গেল ওর মধ্যে। ডান নিতম্বের উপর বেল্টে গুঁজল রানা পিস্তলটা। চমৎকার ঢাকা পড়ল ওটা জ্যাকেটের আড়ালে। নাইনএমএম প্যারাবেলামের আটাত্তর রাউণ্ড গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনগুলো জায়গা পেল পকেটে।

সাব-মেশিন গানের সঙ্গে ব্যাগে ভরল ও টাকার বাণ্ডিলগুলো। প্লাসটিকের কাভারটা ফেলে দিয়ে একটা শুধু ঢোকাল ওয়ালেটে।

সব শেষে, এক গাদা নকল পাসপোর্ট থেকে বেছে নিল * একটা। জনৈক লোগান বালবোয়ার নামে করা হয়েছে পাসপোর্টটা। ইতালির পেশাদার ওয়াইন ক্রেতার কাভার নিচ্ছে রানা।

ব্যাগের স্ট্র্যাপ লাগিয়ে বলল, ‘ব্যস, অ্যাকশনের জন্যে তৈরি এবার আমরা।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *