1 of 2

শকওয়েভ – ৩৭

সাঁইত্রিশ

পাঁচ মিনিট চলে গেল গালিকিনাকিসের অপেক্ষায়।

দু’মিনিট পেরোল আরও।

তারপর পুরো হলো দশ।

হাসি আর আলাপচারিতায় মুখর চারপাশ। লোকজনের আসা-যাওয়ার বিরাম নেই ডাইনারে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল ধৈর্যচ্যুত কোহেন। পকেট থেকে লেটেস্ট মডেলের স্যামসাং ফোনটা বের করে কল দিল সিণ্ডির নাম্বারে।

সিণ্ডি পোর্টম্যানের বয়স আটতিরিশ। অত্যন্ত প্রাণবন্ত, লাবণ্যময়ী মহিলা। নাচের স্কুল চালায়।

নিজের সৌভাগ্যকে আজও বিশ্বাস হয় না কোহেনের। সিণ্ডির মত মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছে ও! প্রায় দেড় বছর ডেট করার পর, নিজের অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির প্রসঙ্গ তুলেছে মেয়েটা। এর পর এসে উঠবে প্রেমিকের টাউনহাউসে। বিয়েশাদি করে পরিবার শুরু করার ব্যাপারটা হয়েই যাচ্ছে বোধ হয়।

ছয় বার রিং বাজার পর আন্তরিক কণ্ঠে সাড়া দিল সিণ্ডি।

‘হাই, সিণ্ডারেলা।’ মিলফোর্ড-সংক্রান্ত উদ্বেগ সত্ত্বেও হাসছে কোহেন। ‘একটু ব্যস্ত আজকে। আরও অনেকক্ষণ থাকতে হবে কাজ নিয়ে। তুমি কি স্কুল থেকে বাসায় থামবে একটু, বাগানে ছেড়ে দেবে বুস্টারকে? নইলে অতক্ষণ ঘরবন্দিই থাকতে হবে ওকে। চাই না, মনের ওপর চাপ পড়ুক বেচারির।’

‘ঠিক আছে। দশ মিনিটেই পৌঁছচ্ছি আমি। অপেক্ষা করব? কত দেরি হবে তোমার?’

‘দশটার মধ্যেই ফিরতে পারব বোধ হয়… মম্‌… বেশি হলে, সাড়ে দশ!’

‘তোমার পছন্দের কিয়ান্টি নিয়ে আসছি এক বোতল।’

‘লক্ষ্মী মেয়ে। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।’

‘আমিও। শিগগির দেখা হচ্ছে তা হলে।’

ফোন রাখার পর আরেকটু অপেক্ষা করল কোহেন। তার পর ভাবল, যথেষ্ট হয়েছে। খোদা, হলো কী লোকটার!

উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে। লম্বা পা ফেলে রওনা হলো টয়লেটের দিকে।

দরজায় ঝোলানো আউট অভ অর্ডার সাইনটা চোখে পড়তেই থমকাল কোহেন। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক, ভাবল ঠোঁট কামড়ে। কী মনে করে ঠেলা দিতেই খুলে গেল কবাট।

টয়লেটে পা রেখেই কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করল কোহেন।

‘মিস্টার গালিফিনাকিস!’ ডাকল সে বন্ধ কিউবিকলের দরজায় টোকা দিয়ে। ‘ভিতরেই কাটিয়ে দেবেন নাকি সারা রাত?’

সাড়া নেই।

‘শুনতে পাচ্ছেন, মিস্টার গালিফিনাকিস?’

তা-ও নেই কোনও সাড়া।

মেঝেতে দু’হাত রেখে উবু হলো কোহেন। বিশ্বাস হচ্ছে না, এ কাজ করতে হচ্ছে ওকে! কেউ এসে পড়লে কী ভাববে! দরজার নিচ দিয়ে উঁকি দিতেই ধাক্কা খেল একটা।

কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে যেন চোখ জোড়া, টয়লেটের মেঝেতে শুয়ে পলকহীন দৃষ্টিতে সোজা ওর দিকেই চেয়ে রয়েছে গালিফিনাকিস। নীল হয়ে ওঠা চেহারায় ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে ঝুলে পড়েছে জিভটা।

নিশ্চয়ই টয়লেটের মধ্যে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়েছে জলহস্তি!

বিড়বিড় করে কাকে জানি অভিশাপ দিল কোহেন। আরও অনেক কিছু বলবে বলেছিল… শোনা হলো না কথাগুলো!

দ্বিধা করল একটা মুহূর্ত। চকিত দৃষ্টি হানল বাথরুমের দরজায়।

না, আসছে না কেউ।

এক কালের শক্তিসামর্থ্য না থাকতে পারে, তবে এখনও কর্মক্ষমতা হারায়নি কোহেন। তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে কিউবিকলের দরজার উপর দিয়ে টেনে তুলল নিজেকে। বিড়ালের মত নিঃশব্দ পায়ে নেমে এল মৃত ব্যক্তির পাশে।

দ্রুত হাতে লোকটার পকেট সার্চ করতে গিয়ে সাবধানতা বজায় রাখা সম্ভব হলো না কোহেনের পক্ষে। উত্তেজনায় শ্বাস নিতে লাগল মুখ দিয়ে।

চাবির একটা রিং আর সস্তা একটা ওয়ালেট ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেল না পকেটে।

ওয়ালেটের খাপগুলো দেখে চলল একের পর এক। নগদ কিছু ডলার রয়েছে ভিতরে। আর পেল ক’টা ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কুঁচকে যাওয়া একটা মাত্র ভিজিটিং কার্ড।

কার্ডটা পরীক্ষা করল কোহেন।

সামনের দিকে বোল্ড করে ছাপা ফ্যান্টম হোল্ডিংস, নিউ ইয়র্ক কথাটা। তার নিচে ঠিকানা। উল্টো পিঠে অপরিচ্ছন্ন হস্তাক্ষরে তাড়াহুড়োয় লেখা: পসাইডন।

কী মিন করছে শব্দটা?

অর্থোদ্ধারের সময় নেই এখন।

বিজনেস কার্ডটা পকেটস্থ করল কোহেন। টয়লেট থেকে বেরিয়ে ছুটল ডাইনারের ম্যানেজারকে খারাপ খবরটা দিতে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *