শকওয়েভ – ৭০

সত্তর

ব্যস্ততার মধ্যে কাটল পরবর্তী আটচল্লিশ ঘণ্টা। রানা আর কোহেনের জন্য হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে দিল হ্যারি হফম্যান। পাদাং পানজাং থেকে দক্ষিণ-পুবে সুমাত্রা হয়ে জাভার পশ্চিম প্রান্তে জাকার্তা পর্যন্ত নিয়ে গেল ওদের এই উড়োযান।

ইউএস এমব্যাসি থেকে ঢিল ছোঁড়ার দূরত্বে ছোট-কিন্তু- আরামদায়ক অ্যাপার্টমেন্টেরও ব্যবস্থা হলো সেখানে।

আধ ঘণ্টা ব্যয় করে পেট ভরে গিলল রানা আর কোহেন। আরও দুটো ঘণ্টায় পূরণ হলো ঘুমের ঘাটতি।

সময় এবার অ্যাকশনে নামার।

ঢাকায়, বিসিআই হেডকোয়ার্টারে করল রানা প্রথম ফোনকলটা। বস রাহাত খানকে খুলে বলল সব কিছু।

সুনামির খবরটা টিভিতে দেখেছেন বিসিআই চিফ। নেপথ্য কাহিনী জেনে চিন্তার ভাঁজ পড়ল তাঁর কপালে। নরপিশাচগুলোকে অবিলম্বে দমন করা না গেলে সোনার বাংলাও যে বিপদমুক্ত নয়—উপলব্ধি করে শিউরে উঠলেন তিনি।

‘রানা,’ ফোনের ওপাশে বললেন তিনি জলদগম্ভীর কণ্ঠে। ‘টেক নেসেসারি স্টেপস অ্যাসাপ। যা-ই করো না কেন, আমার সমর্থন থাকবে তোমার পিছনে। কিছু লাগলে জানিয়ো। আর নিজের দিকে খেয়াল রেখো। গুড লাক।’

চিফের কাছ থেকে স্নেহ মিশ্রিত অফিশিয়াল নির্দেশ পেয়ে, দ্বিতীয় ফোনটা করল রানা ফ্রান্সের রানা এজেন্সিতে । ঝাড়া আধঘণ্টা কথা বলল ও টম হার্ডির সঙ্গে। যা যা জানানোর, জানাল বন্ধুকে। বিনিময়ে প্যাকেজ চাইল একখানা। যত শিগগির সম্ভব, সেটা নিয়ে প্লেনে উঠতে হবে এজেন্সির কাউকে।

শুনল হার্ডি। বেশি কিছু জিজ্ঞেস করল না। ভালো করেই চেনে ও রানাকে।

‘কী বলল?’ ফোন রাখার পর জানতে চাইল কোহেন।

‘কাজ হয়ে গেছে।’

‘বিশ্বাস করেন এদের? বিয়ারের ক্যান খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল সিআইএ এজেন্ট।

‘অন্তর থেকে।’

একই কথা খাটে ভিনসেন্ট গুগলের বেলায়।

ইয়োরোপের সবচেয়ে সফল অস্ত্র ব্যবসায়ী। যদিও সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে না সে কখনও।

পরস্পরকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করে রানা আর গগল। পরস্পরের কাছ থেকে সাহায্য পেলে, মুখে সামান্য ধন্যবাদ না জানিয়ে বন্ধুর কোনও বিপদ উত্তরে দিয়ে ঋণ শোধ করে।

অস্ত্রের অভিভাবককে দরকারি চাহিদা জানানোর পর, চতুর্থ কলটা করল রানা পেঁচা-র কাছে।

পেঁচা ব্রিয়াঁ ফুলজেন্স ফরাসি। গোলগাল মুখ। নাকের ডগায় রিমলেস চশমা। ওটার কারণেই বন্ধুরা নাম দিয়েছে: হুতোম-পেঁচা।

আগে ছিল মার্সেই-এর গ্যাংস্টার ও পাতি এক রাজনৈতিক নেতার বডিগার্ড। গগলই ওকে জঘন্য ওই পথ থেকে সরিয়ে এনে রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। গগলের মাধ্যমে রানার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর মনে মনে ওকে নিজের ওস্তাদ এবং সত্যিকারের বন্ধু বলে মেনে নিয়েছে ফুলজেন্স।

কুড়ি ঘণ্টা পর চার্লস ডি গল এয়ারপোর্ট থেকে একটা ফ্লাইট এসে স্পর্শ করল জাকার্তার মাটি।

কালো শেভ্রোলে এসইউভিতে করে বিমানবন্দরে এসেছে রানা আর কোহেন। দেখে মনে হয়, ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের বাতিল মাল এ-জিনিস। যথারীতি এটারও ব্যবস্থা করে দিয়েছে হ্যারি হফম্যান।

কিন্তু অন্য কারও বদলে স্বয়ং টম হার্ডি নেমে এল প্লেন থেকে।

‘হায়, মা মেরি!’ রানার মুখের প্রায়-সেরে ওঠা ক্ষতগুলো দেখে আঁতকে উঠল টম। ‘এ কী হাল হয়েছে চেহারার! মনে হচ্ছে, ভুল লোকের বউয়ের সাথে প্রেম করতে গিয়ে বমাল ধরা খেয়েছ!’

‘আমার কথা ছাড়ো!’ বন্ধুর উপস্থিতিতে বাস্তবিকই ভিরমি খেয়েছে রানা। ‘তুমি, শালার-পো-শালা, কী করছ এখানে?’

‘মিশনে বেরোেচ্ছ… বডিগার্ড লাগবে না?’ এক গাল হেসে বলল ওর বন্ধু। ‘অ্যাট ইয়োর সার্ভিস, পাড়নাহ্।’

গাড়ি ছোটাল কোহেন ওদের অ্যাপার্টমেন্টের উদ্দেশে।

পিছনে, হোল্ডঅল খুলে সাদা একটা খাম দিল রানাকে হার্ডি। ‘যা চাইছিলে।’

রানা এজেন্সির আর্মারি রুমের সেফ থেকে আনা উইলার্ড স্মিথ নামধারী পাসপোর্টটা পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলো রানা।

পাসপোর্টের সঙ্গে রয়েছে একই নামে চালু ক্রেডিট কার্ড আর এক তাড়া নগদ নারায়ণ।

‘ঠিক আছে তো সব?’ জানতে চাইল হার্ডি।

‘ধন্যবাদ, টম। আর কিছুর প্রয়োজন নেই।‘

‘নেই মানে?’

‘পার্কে হাওয়া খেতে যাচ্ছি না আমি।’

‘আরেকটা উল্টোপাল্টা কথা বললেই এক বক্সিং লাগাব, বলে দিচ্ছি!’ দাঁত খিঁচাল রানার পার্টনার। ‘প্ল্যানটা কী, খুলে বলো দেখি।’

হাল ছেড়ে দিল রানা। ‘আগামী কাল রাতে রওনা হচ্ছি লণ্ডন। হিথরোয় উড়ে আসছে পেঁচা। পরের গন্তব্য নিউ ইয়র্ক। আপাতত এটুকুই জানি।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *