ষাট
‘যাক, পৌঁছুনো গেল অবশেষে, চওড়া হেসে বলল গুস্তাফ। ‘বলেছিলাম না, নিয়ে আসব আপনাদের? শেষ পর্যন্ত শেষ হলো সফর—দি এণ্ড। আপনাদের দু’জনের জন্যে অবশ্যই দি এণ্ড এটা।
‘খুব কনফিডেন্ট মনে হচ্ছে আপনাকে,’ বলল রানা। ‘পোষা কুকুরগুলোকে ফেরত পাঠিয়ে, একটু হলেও কি অনিরাপদ লাগছে না নিজেকে?
ট্রাউযারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে কোল্ট কমাণ্ডারটা বের করল গুস্তাফ। ‘ভুলে গেছেন, এটা রয়েছে আমার কাছে?’ পরম হাসিমুখে তাক করল অস্ত্রটা রানার বুকে।
বাইরে শোনা যাচ্ছে, ওড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে হেলিকপ্টার।
‘ক্র্যাশ-ল্যাণ্ডিঙে হারিয়েছেন বলে?’ আগ্নেয়াস্ত্রটার দিকে তাকিয়ে আছে রানা। লোলুপ দৃষ্টিতে ওর হৃৎপিণ্ড লক্ষ করছে যেন সেটা। এত কাছ থেকে মিস হওয়ার কোনও কারণ নেই। ‘বোঝা গেল, পয়লা নম্বরের মিথ্যুক আপনি।
‘একদম ঠিক বলেছ, রানা!’ রাগে গরগর করছে সেলেনা।
পিস্তলের ইশারা করল গুস্তাফ। স্থির রাখার জন্য দু’হাতে ধরেছে অস্ত্রটা। ‘দু’জনে আরেকটু কাছাকাছি দাঁড়ালে ভালো হয়। আপত্তি করবেন না আশা করি! দু’জনকে চোখে চোখে রাখতে পারতাম একসঙ্গে। … হ্যাঁ, ঠিক আছে এবার।’
‘বাহ! বাহ!’ টিটকারি মারল রানা। ‘আপনি তো দেখছি আগ্নেয়াস্ত্র-বিশেষজ্ঞ এখন!’
‘বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকারটা কী?’ হেসে বলল পিস্তলধারী। ‘হ্যামার কক, সেফটি লক—আপনিই তো সবক দিয়েছেন।’ সন্তুষ্টিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল চোখ দুটো। ‘এত কিছুর পর হয়তো আর বিশ্বাস করবেন না আমার কথা। কিন্তু সত্যিই আমি দুঃখিত প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার জন্যে। এতটা সময় একসঙ্গে কাটিয়ে, প্রায় পছন্দই করে ফেলেছিলাম আপনাদেরকে। কিন্তু ….
কারখানার উপরে কোথাও ধুবধুব করছে এখন হেলিকপ্টারটা। দ্রুত ক্ষীণ হয়ে যেতে লাগল সে-আওয়াজ।
‘মাফ চাওয়ার দরকার নেই। আপনার কিন্তু-টা কী, জানি। ধোঁকাবাজি করেই পেট চালান আপনি। কী, ঠিক বলিনি?’
‘ওভাবে বলবেন না। একটুও ম্লান হলো না হাসিটা। ‘বরঞ্চ স্পাই ভাবি আমি নিজেকে। স্রেফ জেমস বণ্ডের মত খুনোখুনির ধাত আমার নয়।’
কোল্ট কমাণ্ডারটা তাক করে রেখে চট করে ঘড়ি দেখল গুস্তাফ। অপেক্ষা করছে যেন কোনও কিছুর জন্য।
এদ্দূর পর্যন্ত টেনে এনে, খুন করাটা যদি উদ্দেশ্য না হয়, তবে অনুমান করতে পারি, কারও সঙ্গে মোলাকাত হতে চলেছে আমাদের। এরই জন্যে পেতেছিলেন ট্র্যাপটা, তা-ই না?’
‘অনুমান ঠিক হয়েছে, মেজর রানা,’ ব্যঙ্গের সুরে বলল গুস্তাফ ভিকান্দার। ‘গোটা সফরের মেইন পয়েন্ট ওটাই। বিশেষ একজন দেখা করতে চাইছেন আপনাদের সঙ্গে।’
‘মেজর ডাকবেন না দয়া করে।
‘আহা-হা, কী বিনয়।’ পিত্তি জ্বালানো হাসি হাসল গুস্তাফ। ‘ভালো করেই জানা আছে আপনার ঘটনাবহুল, দুর্দান্ত অতীত-বর্তমান সম্বন্ধে। আপনারা আমার খোঁজে সুইডেন যাওয়ার আগেই প্রত্যেক এজেন্টের কাছে আপানার
ব্যাপারে ক্লাসিফায়েড ফাইল পাঠিয়ে দিয়েছে আমাদের নিয়োগকর্তারা। বিশ্বাস করবেন, শুধু আপনার কারণেই রেড অ্যালার্ট জারি করতে হয়েছে ওদের? আমার ওপর নির্দেশ ছিল, আপনাদের দু’জনকে যাতে নিয়ে আসি এখানে। কারণটা শিগগিরই জানতে পারবেন।
‘সেক্ষেত্রে ধরে নিচ্ছি, সাক্ষাৎটা হতে চলেছে আপনার নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে।’
মঞ্চাভিনেতাদের মত বাউ করল গুস্তাফ। ‘আবার সঠিক হয়েছে অনুমান।’
‘কারা আপনারা, মিস্টার ভিকান্দার?’ রেগে কাঁই হয়ে গেছে সেলেনা। ‘ওটাই যদি আপনার আসল নাম হয়ে থাকে! ‘সিআইএ? এনএসএ?’
‘আমাদের নাম কোনও দিন শোনেননি আপনারা,’ গলায় অহঙ্কার ঢেলে জবাব দিন গুস্তাফ। ‘নিজেদের লোক ছাড়া কেউই শোনেনি আসলে। যারা শুনে ফেলে, আয়ু ফুরিয়ে যায় তাদের। এমনকী আমেরিকান সরকারের অধিকাংশ লোকই জানে না আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে। আপনাদের কৌতূহল নিরসনের ভারটা ছেড়ে দিচ্ছি আমার বসের ওপর। অল্পক্ষণেই চলে আসার কথা। এই ধরুন, কয়েক মিনিট? শেষ বিদায় জানানোর জন্যে যথেষ্ট সময়।’
‘কেন, কোথাও যাচ্ছি নাকি আপনার বসের সঙ্গে?’ কিছুতেই রাগ কমছে না সেলেনার।
‘না, তা নয়… আপনারা… আচ্ছা, এটুকু অন্তত বলি। ছোটখাটো একটা বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে আপনাদের জন্যে। এখনই বলে দিয়ে নষ্ট করতে চাইছি না সারপ্রাইজটা।’
ব্যাগটার দিকে ইঙ্গিত করল রানা। দলামোচড়া হয়ে পড়ে আছে ওটা গুস্তাফের পায়ের কাছে।
‘বিনোদনটা যদি হয় এখান থেকে আমাদের জীবিত বেরোতে না দেয়া, তবে আবারও অনুমান করতে পারি, বিশ্বাসযোগ্যতার খাতিরে আনা হয়েছে ওটা–আমরা যে এ দেশে এসেছি, সে-প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করতে। ব্যাকপ্যাক থাকলেই না প্রশ্ন উঠবে ব্যাকপ্যাকারের!
‘উঁহু, ঠিক হলো না এবার।’ লাজুক বধূর মত স্মিত হাসল গুস্তাফ। ‘বরং উল্টোটা। আপনাদের অস্তিত্বকে জোরদার করতেই নিয়ে এসেছি ওটা। চাইনি যে, কেউ সন্দেহ করুক: ইচ্ছের বিরুদ্ধে এখানে এনেছি আপনাদের। ও, ভালো কথা… টাকাগুলো কিন্তু সবই রয়েছে ব্যাগে।’
‘বুঝলাম না আপনার কথা। সন্দেহ মানে? কে সন্দেহ করবে?’
‘পুলিস… সাংবাদিক…
‘তার মানে?’
‘পুলিসের লোকেরা যখন লাশ পাবে আপনাদের, থিয়োরি দাঁড় করাতে সাহায্য করবে টাকাগুলো। ড্রাগসের কথাই ভাববে ওরা প্রথমে… মাদক বেচা টাকা। টিপিকাল কাহিনী, বুঝলেন না? সঙ্গে যদি হেরোইনও পাওয়া যায় ব্যাগের মধ্যে, দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে একটুও বেগ পেতে হবে না ওদের।
‘ঘেয়ো কুকুর কোথাকার!’ বলল সেলেনা দাঁত কিড়মিড় করে।
‘খুঁটিনাটির দিকে লক্ষ রাখা অধমের কাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ,’ সবিনয়ে বলল গুস্তাফ। ‘এ ক্ষেত্রে বলব, ভালো একটা অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়েছে এটা। ড্রাগ ডিলারের জোড়া লাশ নিয়ে মাথা ঘামাবে না কেউ।’ কপট দুঃখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল একটা। ‘তবে যে-কালিমা নিয়ে বিদায় নিতে হচ্ছে আপনাদের, বড়ই লজ্জার ব্যাপার সেটা। কিন্তু না হলে যে অনধিকারচর্চা বন্ধ হবে না আপনাদের!’
‘ঠিক একই অপরাধে বাঁচতে দেননি ক্যারেনকে,’ বলল সেলেনা চিবিয়ে চিবিয়ে। ‘প্রথমে বিশ্বাস অর্জন করেছেন মেয়েটার। তার পর সরিয়ে দিয়েছেন দুনিয়া থেকে।’
রাতের অন্ধকার ভর করল গুস্তাফের চেহারায়। ‘কারও রক্তেই হাত রাঙাইনি আমি। আমার ডিপার্টমেন্টই নয় ওটা।’
‘বুলশিট!’ বিশ্বাস করল না সেলেনা।
‘আমার মনে হয়, এই প্রথম বারের মত মিথ্যা বলছেন না মিস্টার ভিকান্দার,’ ওর কথায় সমর্থন জানাল রানা। ‘অন্তত খুনি নন ইনি।’
মাথা নাড়ল গুস্তাফ। ‘প্রশ্নই আসে না! স্রেফ ঝুঁকির পরিমাপ করি আমি। পেশিশক্তি কিংবা হাতিয়ার নয়, কাজ করি মগজ খাটিয়ে। কারও সন্দেহ না জাগিয়ে তথ্য সংগ্রহ করাই আমার বিশেষত্ব। এ কাজের জন্যেই পয়সা দেয়া হচ্ছে আমাকে।’
‘ছুঁচোগিরি,’ মন্তব্য করল রানা।
‘তা বলতে পারেন,’ একটুও না চটে বলল গুস্তাফ। ‘ছদ্মপরিচয়ে ডুব দিই আমি গভীর জলে। সারা দুনিয়া জুড়ে কন্সপিরেসি থিয়োরি নিয়ে কাজ করে যারা, ঢুকে পড়ি এমন দলগুলোতে। ভাব দেখাই, ওদেরই একজন আমি। নানান উপায়ে আস্থা অর্জন করি ওদের। দলের ভিতরে থেকে বুঝতে চেষ্টা করি—ক্ষতির সম্ভাবনা নেই কার কাছ থেকে, আর কারা হয়ে উঠতে পারে সত্যিকারের বিষফোঁড়া।’
‘ক্যারেনকে তা হলে হুমকি মনে হয়েছে আপনার…’ ক্রূর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেলেনা।
‘ওটাই নিশ্চিত হতে হয়েছে আমাকে।’ সাফাই গাইছে যেন লোকটা। ‘ভালো হতো, যদি উল্টোটা হতো। কিন্তু যতই নিজেকে মেলে ধরল মেয়েটা, ততই অসম্ভব হয়ে উঠল লিস্ট থেকে ওর নাম বাদ দেয়া। ক্যারেনের মন পরিবর্তনের উপায় ছিল না কোনও। উপায় ছিল না টাকা দিয়ে কিনে নেয়ার। রহস্য উদ্ঘাটনের একদম ঠিক রাস্তাতেই চলছিল ও, যে- গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্যে আমার মত শত শত এজেন্ট নিষ্ঠার সাথে কাজ করে চলেছে গত কয়েক দশক ধরে। হ্যাঁ, হুমকিই হয়ে উঠেছিল ক্যারেন!’ উত্তেজিত হয়ে পড়ার সঙ্গে গলার স্বরও এক পর্দা উঁচু হয়েছে গুস্তাফের। ‘সব রকম চেষ্টাই করেছি আমি… সব কিছুই! একার যে-লড়াইয়ে নেমেছিল ও, সেখান থেকে যদি ফেরাতে পারতাম! ওকে পছন্দ করতাম আমি… একটু বেশিই পছন্দ করতাম। আমার যে কাজের ধারা, সেটার ধারেপিঠেও যায় না ওসব আবেগ-টাবেগ। সত্যি কথাই বলব আপনাদের, অনুরাগ জন্মেছিল ক্যারেনের প্রতি। এবং আমার ধারণা, ওরও তা-ই হয়েছিল। একটা পর্যায়ে আলাদা হয়ে পড়ি আমরা। তার পরও বন্ধ করিনি ওকে বোঝানোর চেষ্টা। কিন্তু কথা তো শুনল না ক্যারেন!’
‘আর সেজন্যেই…..
‘কী আর করতে পারতাম এ ছাড়া? আর-সব ফ্রিকদের মত হলে তো একদমই অন্য রকম হতো ব্যাপারটা। টাইপ বি বলি আমরা এদেরকে। ওদেরকে উৎসাহ জোগাই আমরা। পয়সারও জোগান দিই চূড়ান্ত লেভেলের উন্মাদগুলোকে, আমাদের চাওয়ামত যাতে দিকে দিকে গুজব রটিয়ে হাসিঠাট্টার বিষয়ে পরিণত করে গোটা কন্সপিরেসি থিয়োরির কমিউনিটিটাকে। বুঝতে পারছেন, কী রকম অ্যাসেট এরা আমাদের কাছে? নিজেদের অজান্তেই প্রতিনিয়ত কাভার দিয়ে চলেছে আমাদের।’
‘ও… খুন-জখম আর হাজার হাজার নিরীহ মানুষের মহৎ উদ্দেশ্য বানচালে ব্যাপৃত তা হলে আপনারা!’ বলল সেলেনা বিতৃষ্ণা নিয়ে।
ভ্রুকুটি করল গুস্তাফ।
‘কিন্তু ওরকম মেয়ে ছিল না ক্যারেন,’ বলে চলল সে কাউকে গ্রাহ্যের মধ্যে না এনে। ‘ওর প্রোফাইল ছিল টাইপ এ ক্যাটাগরির। সমস্ত ভুল বক্সে টিক দিয়েছিল ও। মানে, ওর জন্যে ওগুলো ভুল ছিল আর কী
‘প্রখর বুদ্ধিমত্তা ছিল ক্যারেনের। অবিশ্বাস্য ছিল জানার পরিধি। রিসার্চের প্রতি পুরোপুরি ন্যায়নিষ্ঠ এবং শেষ দেখার জন্যে উদ্গ্রীব। ঝুঁকি-টুকির পরোয়া করত না বিন্দু মাত্র। পাত্তাই দিত না কোনও ধরনের ভয়ভীতিকে। নিজের আদর্শে অবিচল ছিল, ছিল অসাধারণ একজন কমিউনিকেটর। কাউকে কোনও কিছু বিশ্বাস করানোর যোগ্যতা ছিল ওর। ব্যক্তিত্বের কারণে ওকে সিরিয়াসলি না নিয়ে উপায় ছিল না কারও।’
‘আর সে-কারণেই ছিল না ওর বেঁচে থাকার অধিকার!’ বলল সেলেনা তীব্র শ্লেষ নিয়ে।
‘আমার কিছু করার ছিল না এখানে,’ প্রতিবাদ করল গুস্তাফ। ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলো আসে উপর থেকে। একটা পিঁপড়াও মারিনি আমি আজ পর্যন্ত। আমি শুধু তথ্য চালান দিচ্ছি জুতসই চ্যানেলে। এর পর অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে প্রয়োজনমত।’ এক মুহূর্তের জন্য নিচের দিকে তাকাল লোকটা। খানিকটা অপরাধবোধে ভুগছে যেন ভিতরে ভিতরে।
‘আপনার রিপোর্ট পাওয়ার পরই পাঠাল ওরা রিপেয়ার- ম্যানকে। আপনার কলিগ গিবসনের কথা বলছি, যাকে করাত দিয়ে কচুকাটা করেছি আমি।’
‘আগেই বলেছি আপনাদের,’ রাগত স্বরে বলল গুস্তাফ ‘হুকুমের গোলাম আমি। হুকুমের বাইরে একটা পা ফেলারও জো নেই আমার।’
‘যে যার ভূমিকায়,’ মন্তব্য করল রানা। ‘ঠিক সেলেনার পিছনে লাগা লোকগুলোর মত। কার কাছে ইনফর্মেশন পাচার করেছে মিস ল্যানকাউমে, নিশ্চিত হওয়ার পর নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নেয় ওরা। আপনারই মত।’
‘বুঝতেই চাইছেন না আপনারা!’ মুখ গোমড়া করল গুস্তাফ। ‘একটা যুদ্ধের মত এটা। একক কোনও ব্যক্তির কথা ভাবার সুযোগই নেই এখানে। মহাযুদ্ধের ময়দানে আমি কে, আর আপনিই বা কে? জানেন আপনি, ক্যারেনের মৃত্যুর খবর শুনে হাউমাউ করে কেঁদেছি আমি? বিশেষ কিছু ছিল ও আমার কাছে। কিন্তু বাস্তববাদী আমি। কঠিন বাস্তব মেনে নিতে সেজন্যে সমস্যা হয়নি কোনও। যত বিপত্তি আপনাদের মত মানুষদের নিয়ে। বাকি সবার মত চড়া মাশুল দিতে হবে এখন আপনাদেরকেও। কিন্তু মনে রাখবেন, আমার কোনও দায় নেই এতে।’
‘কী বলব আপনাকে!’ সেলেনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, বমি করে দেবে ও। ‘রাস্তার পকেটমারের চাইতেও নিকৃষ্ট আপনি!
‘যা খুশি, বলতে পারেন, ম্যাডাম!’ শক্ত হলো গুস্তাফ। ‘এটুকু বলব, নিজের কাজ নিয়ে আমি গর্বিত। এ-ও জেনে রাখুন, এ লাইনে আমার বাড়া নেই আর একজনও।’
‘বুঝলাম, ওস্তাদ এজেণ্ট আপনি,’ রানা বলল। ‘আপনার নিয়োগকর্তারা নিশ্চয়ই সাংঘাতিক কদর করে আপনার! যেভাবে ইম্প্রোভাইজ করেন, মূল্য না দিয়ে উপায় কী! সুইডেনে দুর্দান্ত এক মঞ্চ সাজিয়েছিলেন আমাদের জন্যে। অসুস্থ হওয়ার অভিনয় করে বাথরুমে গিয়ে খবর দিয়েছিলেন গিবসনের দলটাকে। ওদের আসার অপেক্ষায় সময় নষ্ট করেছেন আষাঢ়ে গল্প শুনিয়ে। সত্য-মিথ্যে মিশিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি আমরা। তার পর যেভাবে লড়াই থেকে সরিয়ে নিলেন নিজেকে—একদম লা-জবাব। হাততালি পাওনা আপনার।’
‘অভিনয় ছিল না ওটা।’ তোষামোদে হাসছে গুস্তাফ। ‘স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, প্যান্ট নষ্ট করার অবস্থা হয়েছিল সেসময় দস্তুরমত। ওদেরকে জানিয়ে দেয়ার পর, পরিষ্কার ধারণা ছিল, কী হতে পারে এর পর; যেহেতু জানতাম—কে আপনি, কতটুকু আপনার ক্ষমতা। পাখিগুলো যদি ভয় পেয়ে গিয়ে সতর্ক না করত আপনাকে, টিমটা হাজির হওয়ার আগেই কেটে পড়তাম কোনও-না-কোনও ছুতোয়। তার পর যখন শুরু হলো ধুন্ধুমার, দ্বিতীয় কলটা করি পালিয়ে গিয়ে। আপনাদেরকে এখানে নিয়ে আসার নির্দেশ পাই তখন।’ হাসল লোকটা। ‘ওহ, ডিয়ার… বিমলানন্দ হচ্ছে আপনার মত একজনের মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢালতে পেরে!’
‘হুম…’ গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়ল রানা। ‘বুঝতে খানিকটা দেরি হয়ে গেছে আমার। আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা না করলে হয়তো ধরতেও পারতাম না।’