তেষট্টি
‘আমি ফিল কোহেন।’ ফাটা ঠোঁটের ব্যথায় কাতরে উঠল আগন্তুক। ‘সিআইএ-তে আছি। আপনারা দু’জন কোথাকার রত্ন, শুনি!’
‘আশ্চর্য তো!’ বলে উঠল সেলেনা। ‘সিআইএ কি তা হলে পজিটিভ রোল প্লে করছে এখন?’
‘আমার নাম মাসুদ রানা।’ বলতে বলতে ঘড়ি দেখল রানা। ‘আর ইনি ডক্টর সেলেনা বার্নহার্ট। বিস্তারিত চিনপরিচয় পরেও’ করা যাবে। তার চেয়েও জরুরি হচ্ছে, আগামী বিশ মিনিটের মধ্যে এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া।’
‘আপনাদের এ-মরহুম বন্ধুটিরও নাম-টাম রয়েছে নিশ্চয়ই?’ মেঝেতে পড়ে থাকা মৃত দেহটার দিকে ইঙ্গিত করল কোহেন। ‘দেখে তো মনে হচ্ছে, গর্দানটা গেছে!’
‘আসল নাম জানা নেই,’ রানা বলল। ‘পরিচয় দিয়েছে গুস্তাফ ভিকান্দার বলে। ওদের দলেরই একজন। বন্ধুদের এ অবস্থা করি না আমি।’
‘আপনারা কোন্ দলে?’
‘মনে তো হচ্ছে, একই নৌকার যাত্রী আমরা তিনজনা। চটপট বলে ফেলুন তো আপনার কেচ্ছাটা!’
‘ওদের পথের কাঁটা হয়েছিলাম আমি,’ ঠোঁট মুড়ে বলল সিআইএ এজেন্ট। ‘অনুমান করছি, আর-সবার মতই দুনিয়া থেকে মুছে দেয়া হচ্ছে আমাকে।’ আচমকা বিস্ফোরিত হলো অবদমিত বিক্ষোভ। আবেগের প্রচণ্ডতায় মুখ-ঠোঁটের শুকিয়ে আসা ক্ষতে টান লাগায় রক্তপাত শুরু হলো আবার। ‘কুত্তাগুলো খুন করেছে আমার ফিয়াসেকে! একই সঙ্গে উড়িয়ে দিয়েছে আমার প্রিয় কুকুরটাকেও! মিলফোর্ডের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর জন্যেও দায়ী ওরা, জানি আমি এখন!’
নামটা স্ট্রাইক করল রানার মনে। কোথায় যেন শুনেছে এ নাম! প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মস্তিষ্ক নামক কমপিউটারের পর্দায় ভেসে উঠল জবাবটা।
‘মিলফোর্ড ব্রাউন… ডুবে মরা সিআইএ অপারেটর?’ জিজ্ঞেস করল ও। ‘একসঙ্গে কাজ করতেন নাকি আপনারা?
মাথা ঝাঁকাল কোহেন। ‘হ্যাঁ… এক সময়।’
‘ওর ব্যাপারে বলেছিল গুস্তাফ ভিকান্দার।
‘সহকর্মীর চেয়েও বেশি ছিল ও। মিলফোর্ড যে এদের পাল্লায় পড়েছিল, কোনই ধারণা ছিল না আমার। জানতামই তো না, কারা এরা।
‘জড়িয়ে গিয়েছিলেন,’ বলল সেলেনা। ‘কিন্তু বেরোতেও চেয়েছিলেন ওখান থেকে। মৃত্যুর আগে যোগাযোগ করেন ফ্লেচার নামে এক জার্নালিস্টের সঙ্গে। সত্য উন্মোচনের প্ল্যান এঁটেছিলেন ওঁরা দু’জনে মিলে।’
‘কৌশলে খুন করে অ্যাক্সিডেন্টের মত করে সাজানো হয়েছে বিষয়টা!’ অদম্য ক্রোধে মাথা ঝাঁকাল ব্রাউনের বন্ধু। ‘জারজের গুষ্ঠি!’
‘ওই জার্নালিস্টেরও একই দশা হয়েছে। মারা পড়েছে গাড়ি-দুর্ঘটনায়।’
‘ঠিক যেভাবে গ্যাস লিক হয়ে বান্ধবী আর ল্যাব্রাডরটা সহ উড়ে গেছে আমার গোটা বাড়ি।’ চোখ জ্বলজ্বল করছে কোহেনের। ‘আমারই দোষ। ফিরতে আমার দেরি হচ্ছিল বলে আমিই বলেছিলাম ওকে বাড়িতে এসে কুত্তাটাকে ছেড়ে দেয়ার জন্যে। সেরাতে জাক গালিফিনাকিসের সঙ্গে ছিলাম আমি, জ্ঞান আহরণ করছিলাম প্রজেক্ট ডুডের ব্যাপারে। তথ্য ফাঁসের অপরাধে সে-ও টার্গেট হয়েছে ওদের। হার্ট অ্যাটাক ছিল না ওর মৃত্যুর কারণ!’
‘কে লোকটা?’
‘ডি.সি.-র এক ইঞ্জিনিয়ার। এক্স-ডারপা। ডারপা হচ্ছে—’
‘ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি। আচ্ছা, কতটুকু জানেন আপনি ডুডের ব্যাপারে?’
‘ইঞ্জিনিয়ার যতটুকু বলেছে, ততটুকুই। সে-ও কাজ করত ওদের হয়ে। আমাকে বলেছে, ওই কাজ ছেড়ে দিয়েছে সে। নিজের আবিষ্কৃত নগ্নসত্য তুলে ধরতে চায় দুনিয়াবাসীর সামনে। সেজন্যে সাহায্য চাইছিল আমার। প্রথমে বিশ্বাস করিনি লোকটার কথা… চাইনি করতে। গালিফিনাকিসই ফ্যান্টম হোল্ডিংসের পিছনে লাগতে বাধ্য করেছে আমাকে… আর পসাইডন।’
‘পসাইডন? কী এটা?’
‘এখন পর্যন্ত কোনও আইডিয়া নেই।’
চোখে প্রশ্ন নিয়ে রানার দিকে চাইল সেলেনা। চাউনি দেখেই বুঝল, রানাও জানে না।
‘কোনও এক ধরনের… অস্ত্রের কথা বলছিল ইঞ্জিনিয়ার,’ বলে চলল কোহেন। ‘এমন এক মারণাস্ত্র, কস্মিনকালেও যা দেখেনি পৃথিবী। নয়া রণকৌশল, বলেছিল লোকটা। বছরের পর বছর ধরে কাজ করছে ওরা টেকনোলজিটা নিয়ে। ইচ্ছে করলেই নাকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটানো যাবে ও-দিয়ে। পাগলের প্রলাপ মনে হয়েছিল শুনে।’
‘বিশ্বাস করুন, প্রলাপ নয় ওটা। সত্যিই রয়েছে ও- জিনিস। নিজ চোখে দেখেছি আমরা অস্ত্রটার ক্ষমতা।’
সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কোহেন। ‘ঠাট্টা করছেন না, জানি। কিন্তু আদৌ কি সম্ভব এটা? এ ধরনের প্রযুক্তির অস্তিত্ব রয়েছে দুনিয়ায়?
‘ধারণাও করতে পারবেন না, কী রকম কর্মক্ষম ওটা।’ রহস্য মাখা হাসি সেলেনার ঠোঁটে। ‘কেউই পারবে না আসলে। তবে সঙ্গে যেহেতু রয়েছেন, কেন জানি মনে হচ্ছে, আপনিও দেখতে পাবেন নিজের চোখে।’
‘কীভাবে ধরা পড়লেন আপনি, মিস্টার কোহেন?’ জিজ্ঞেস করল রানা।
‘ফ্যান্টম হোল্ডিংসে গিয়ে। ওদেরও কোনও-না-কোনও যোগসাজশ রয়েছে এসবের সঙ্গে। নিউ ইয়র্কে অফিস রয়েছে প্রতিষ্ঠানটার। কোনও রকম চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই সোজা গিয়ে উপস্থিত হই ওখানে। পরের ঘটনা যেটা জানি… অজ্ঞান অবস্থায় মাটির নিচের কোনও এক কামরায় নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। যে-দুই ষণ্ডা আপনাদের সামনে নিয়ে এল আমাকে, ওরাই টর্চার চালায় আমার উপর। ডুডে সম্বন্ধে কী কী জানি, সব বের করতে চেয়েছিল পেট থেকে। আপনাদের ব্যাপারটা কী?’
‘আপনি যেমন আপনার বন্ধুকে হারিয়েছেন, আমরাও তা-ই,’ খোলসা করল সেলেনা। ‘আপনার বন্ধু চেয়েছেন ভিতর থেকে গুমর ফাঁস করতে, আর আমাদের বান্ধবী বাইরে থেকে। সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখেছিল ও। যতক্ষণে পৌঁছুই ওর কাছে, সব রকম সাহায্যের ঊর্ধ্বে চলে গেছে ক্যারেন।
ওদের কথায় মন নেই আর রানার। আঁজলা ভরা পানির মত আঙুলের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে যেন সময়। শিগগিরই এখান থেকে বেরোতে না পারলে…
একদিকের দেয়ালের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ভালো মতন পরীক্ষা করল দেয়ালটা। নোনা বাতাসের অত্যাচারে স্থানে স্থানে ক্ষয়ে গেছে পুরানো প্লাস্টার। তবে নিচের পাথর নিরেট আর পুরু।
ঘাড় উঁচিয়ে তাকাল রানা জানালাগুলোর দিকে।
মাকড়সার ঘন জালে ভরা মরচে ধরা স্টিল গার্ডারের জাফরির কাজ। উপরের ছাত হেভি-ডিউটি টিন প্লেটের। বহু বছর আগে ফার্স্ট ফ্লোর ছিল উপরতলায়। গ্রাউণ্ড ফ্লোরটা ব্যবহার হতো সম্ভবত স্টোরেজ এরিয়া হিসাবে।
ময়লা দড়ির এক বাণ্ডিল দেখতে পেল ও নাগাল থেকে চল্লিশ ফুট উঁচুতে, পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে কড়িবরগায়। এদিকে তেমন কোনও সম্ভাবনা দেখছে না রানা।
এন্ট্রান্সে গিয়ে নিজের শরীর দিয়ে বার কয়েক ধাক্কা দিয়ে দেখল ইস্পাতের দরজায়। আধ ইঞ্চিমত সরে বাইরের শেকলে বাধা পেল পাল্লা। গ্যালভানাইজড স্টিলের শেকল কাটার মত বোল্ট কাটার যদি পাওয়াও যেত কপালগুণে, চিলতে এই ফাঁক দিয়ে ঢুকতই না সেটা; দরজার হিঞ্জ তো সেখানে বিশাল ব্যাপার। পাথরের অনেক গভীরে বসানো ওগুলো। স্লেজহ্যামার নিয়ে সাত-আটজনে মিলে ঝাড়া এক ঘণ্টায়ও নড়াতে পারবে না ওই জিনিস। এদিকে আধ ঘণ্টা সময়ও নেই ওদের হাতে।
‘প্রায় সতেরো মিনিট,’ ঘড়ি দেখে জানাল ও ওদেরকে। ‘জানি না, কী লেখা আছে কপালে। শুধু জানি, ঘটনা ঘটার সময় আটকা থাকতে চাই না এখানে।’
‘ক্যারেনের অসিলেটরটা কাজে আসত এখন।’ অসহায়ভাবে চাইল সেলেনা চারদেয়ালের দিকে।
‘বুঝেশুনে বলছ তো? কোনও মতে জান নিয়ে ফিরতে পেরেছিলাম গত বার।’
‘কী মনে হয়, রানা?’ প্রশ্ন রাখল সেলেনা। ‘কী ঘটতে চলেছে?’
কাঁধ ঝাঁকাল রানা। ‘গুলি করে মেরে ফেলতে পারত আমাদের। কিন্তু অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পুহিয়ে এখান পর্যন্ত নিয়ে এসেছে ঝেড়েপুঁছে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্যে, কোনও রকম প্রশ্ন যাতে না ওঠে। প্ল্যান যেটাই হোক, আমাদের বাঁচতে দেয়ার ইচ্ছে নেই ওদের। পরিকল্পনার ফাঁদ কেটে যে বেরোতে পারছি না, তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই নিকলসনের।’
চেহারা কঠিন হলো সেলেনার। ‘আমার অনুমান ঠিক হলে, শুধু আমরাই নই, আরও বহু লোকে শিকার হবে এই আক্রমণের।’
‘কীসের শিকার হওয়ার কথা বলছেন?’ জানতে চাইল সিআইএ এজেন্ট।
‘এমন কিছু, যেটা কল্পনাও করতে চাইবেন না আপনি! এখন শুধু প্রার্থনা করুন, ঠিক যাতে না হয় আমার অনুমান।’
‘কতটুকু সম্ভাবনা ঠিক না হওয়ার?’ ফোলা চোখের ফাঁক দিয়ে চেয়ে রয়েছে কোহেন।
‘জিরো পারসেণ্ট! রানা, যে করেই হোক, উদ্ধার পেতে হবে এখান থেকে!’
ঘড়ির দিকে তাকাল রানা। ষোলো মিনিট একতিরিশ সেকেণ্ড!
সেকেণ্ডগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। প্রচণ্ড চাপ অনুভব করছে ও মগজে। ভাবো… ভাবো… বুদ্ধি বের করো, রানা!
এক সারি দরজা দেখা যাচ্ছে বিশাল ফাঁকা জায়গাটার দূরপ্রান্তে। ছায়ার কারণে চোখে পড়ে কি পড়ে না। ক্ষীণ একটা সম্ভাবনা। তবে কানা মামাও তো কাজে আসতে পারে!
ছুটল রানা ওদিকটায়। হ্যাঁচকা টান মেরে খুলল একটা দরজা। ভিতরে ঢুকে মনে হলো, অফিস ছিল ওটা এক সময়। সম্ভবত অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কামরা কিংবা অ্যাকাউন্টস রুম। এখন স্রেফ খালি এক গহ্বর। একদা যেটা ব্যবহার হতো ফায়ার এসকেপ অথবা এমার্জেন্সি এক্সিট হিসাবে; বহু বছর হলো, পাশের জানালা সহ বুজে দেয়া হয়েছে দেয়াল তুলে। উপায় নেই এদিক দিয়ে বেরোনোর। দেয়াল ভাঙার মত বড়সড়, নিরেট কিছু পেলেও নয়।
রাগের চোটে এত জোরে দেয়ালে লাথি মারল রানা, ব্যথা পেল পায়ের আঙুলে।
এবার ঢুকল পরের কামরাটায়। আগেরটার চেয়ে বড় এটা। একই রকম ফাঁকা। একই রকম রুদ্ধ।
ক্ষীণতর হয়ে আসছে সম্ভাবনা। ছাতা ধরা দরজাটা দড়াম করে লাগিয়ে টান মেরে খুলল এবার শেষেরটা।
প্রথম দেখায় মনে হবে না কারও, টয়লেট এটা। অনেকটাই ছোট বারোয়ারি ল্যাট্রিনের চাইতে। ফ্যাক্টোরি শ্রমিকদের অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজনে ব্যবহার হতো এক কালে। এখন বহু বছর ধরে ছুঁচোদের আবাসস্থল। শুকনো, নোংরা ইউরিনালের সারিগুলো এখনও রয়েছে জায়গামত।
কিন্তু তবুও রানার মগজে ঘাই মারল যেন কিছু। মস্ত এসব দালানের পয়ঃনিষ্কাশন সিস্টেমও সাধারণ বাসাবাড়ির বর্জ্য নির্গমনের পাইপের চেয়ে বড় হওয়ার কথা। এখানেই থাকা উচিত নিচে নামার ম্যানহোলের ঢাকনা।
ধুলোময়লা সরাতে শুরু করল ও পা দিয়ে। যা আশা করছিল, পেয়ে গেল শিগগির। হামাগুড়ি দিয়ে ঝুঁকে পড়ল কয়েক মণ জং পড়া লোহার ঢাকনার উপর। ময়লা মুছে নিয়ে আঙুলের ডগা ঢোকানোর চেষ্টা করতে লাগল ঢাকনাটার কিনারা আর রুক্ষ কংক্রিটের মাঝখানের সরু ফাঁকে।
নাহ, নড়ানো যাবে না! কিন্তু যদি তোলা যেত এটা…
সলিড, ধাতব কিছু প্রয়োজন লিভার হিসাবে ব্যবহারের জন্য। আগের বার যেমন কাজে এসেছিল রেকিং বার।
তেমন কিছু পাওয়া গেল না ধারেকাছে।
আর চোদ্দ মিনিট! সময় যেন শুষে নিচ্ছে কোনও কৃষ্ণগহ্বর!
লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ফিরে এল রানা মূল দালানে।
গুস্তাফের কোল্ট কমাণ্ডারটা যেখানে ফেলেছিল, ওখানেই পড়ে আছে ওটা। খাবলা মেরে তুলে নিল অস্ত্রটা।
‘কী করছ তুমি?’ জিজ্ঞেস করল সেলেনা।
‘বেরোনোর রাস্তা পেয়ে গেছি বোধ হয়,’ বলেই, ঘুরে ছুট মারল আবার ল্যাট্রিনের দিকে।
কোহেন আর সেলেনা যখন যোগ দিল ওর সঙ্গে, ততক্ষণে ডামি ফায়ার আর্মটার একটা অংশ ব্যবহার করছে রানা লোহার ঢাকনাটার কোনা তোলার জন্য।
‘যদি খুলতে পারি এটা,’ বলল ও কাজের ফাঁকে। ‘তা হলেই হয়তো উপায় হতে পারে এখান থেকে বেরোনোর।’
কিন্তু প্লাসটিকের বদলে পুরোদস্তুর ধাতুনির্মিত হলেও, ওদের উদ্দেশ্য পূরণের উপযুক্ত নয় অস্ত্রটা। পিস্তলের ফ্রন্ট সাইট ব্লেড দিয়ে চেষ্টা করল রানা। চেষ্টা করল ম্যাগাজিন ফিড লিপসের পাতলা, শক্ত স্টিল আর বিভারটেইল গ্রিপ সেফটি দিয়ে। বেকার। চোখা কোনও কিছুই লিভার হিসাবে কাজে এল না।
‘নিচে কী আছে, রানা, সুড়ঙ্গ?’ জিজ্ঞেস করল সেলেনা।
‘ময়লার মধ্যে ক্রল করতে হলে ওজর-আপত্তি করবে না, আশা করি,’ কাজ করতে করতেই জবাব দিল রানা।
‘আমি হলে, ঢাকনার চারপাশের কংক্রিট ওড়ানোর চেষ্টা করতাম অত বড় কোল্টটা দিয়ে,’ কোহেনের সাজেশন।
‘পিস্তলটা হাতে নিলে বুঝতেন, কেন কাজে আসবে না আইডিয়াটা।’ থামল রানা একটু দম নেয়ার জন্য। লাভ হচ্ছে না কোনও।
‘স্লাইডটা খুলে রেইলের ভিতরটা দিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন একবার,’ নতুন বুদ্ধি দিল লোকটা।
তা-ই করল রানা। না বললেও করত। রিলিজ বাটন চাপতেই স্লাইড আলাদা হয়ে গেল সড়াত করে।
‘ভালো প্রশিক্ষণই পেয়েছেন সিআইএ-তে,’ প্ৰশংসা করল ও।
‘ভালো, তবে ইউএসএমসি-র মত নয়।’
‘বাহ, মেরিন কোরে ছিলেন আপনি?’
নড করল এক্স-মেরিন।
ঢাকনার কিনারার তলায় স্লাইড ঢুকিয়ে চাপ দিল রানা। টের পেল, কাজ হচ্ছে এবার। ‘দেখুন তো, আঙুল ঢোকাতে পারেন কি না এখানটায়। একসঙ্গে টান দেব আমরা… তিন পর্যন্ত গুনলেই। এক… দুই… তিন!’
টানতে গিয়ে গোঙানি বেরিয়ে এল মুখ দিয়ে। কড়কড় করে উঠে আলগা হয়ে খুলে এল জং ধরা ডালাটা। মেঝেতে পড়ল ‘ঠন্নাৎ’ করে।
পিছিয়ে যেতে হলো ওদের ম্যানহোলের দুরবস্থা দেখে। দুর্গন্ধময় ময়লা পানি জমে আছে প্রায় কানায় কানায়। পচেগলে বিকট গন্ধ ছড়াচ্ছে ভাসমান তিনটে মরা ইঁদুর। কালের বিবর্তনে নিশ্চয়ই ব্লক হয়ে গেছে সিউয়ার পাইপ।
‘ভুলে যাও, রানা! লাভ নেই কোনও।’ প্রবল বেগে মাথা নাড়ছে সেলেনা। ‘মরে গেলেও ওখানে নামছি না আমি!’