বাংলায় কেন হয় না
‘রোমীয়’ বানানে দীর্ঘ-ঈ-কার দেখে নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে যে, এই ‘রোমীয়’ মহাকবি শেক্সপিয়রের রোমিও-জুলিয়েটের নায়ক নয়। এই রোমীয় হল রোম দেশীয়, রোম নগরীর রসিকতা অথবা ইতালির রসিকতা।
প্রাচীন বাংলা কবিতায় বোধহয় ছিল, গৃহিণী খোঁজ নিচ্ছেন রোমে রসনের দাম কত? এই প্রশ্ন অবশ্য সন্ধ্যাভাষার কাছাকাছি যুগের হেঁয়ালি পদ্য।
সে যা হোক, ইস্কুলে একটা প্রবাদবাক্য মুখস্থ করেছিলাম, সব রাস্তাই রোমে যাবে। অন্য বহু প্রবাদ-প্রবচনের এই প্রবচন মোটেই মেলেনি। সারা পৃথিবীর কত রাস্তাতেই তো গেলাম, এই তো এই মুহূর্তে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী সানফ্রানসিসকোর নগরগুলিতে বসে এই কিস্তি রচনা করছি, কিন্তু আজও আমার রোমে যাওয়া হয়নি।
সে-দুঃখ আপাতত মাথায় থাকুক, পায়ের নীচের সরষে যদি কোনও দিন রোমের দিকে গড়ায় খুবই খুশি হব। কিন্তু, আপাতত আনন্দে আছি অন্য কারণে।
কারণটা বলার আগে একটা হালকা গল্প বলে নিই। একটা কার্টুন গল্প। জনৈক ভিক্ষুক রাস্তায় বসে ভিক্ষা করছে, তার গলায় একটা প্ল্যাকার্ড ঝোলানো, তাতে লেখা, ‘জন্মান্ধ’। তার পাশ দিয়ে দু’জন পেশাদার ভিক্ষুক যেতে যেতে আলোচনা করছে, “এ লোকটা আমাদের সিনিয়র। জন্ম থেকেই ব্যবসা শুরু করেছে।”
আমার পছন্দ মতো একটা বই দু’দিন আগে হাতে পেয়েছি। বইটির খুব দাম, মার্কিন মুদ্রায় ১৬ ডলার, ৯৫ সেন্ট। মানে প্রায় সতেরো ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় ৮০০ টাকার বেশি। ডলারে জিনিস কিনতে গিয়ে টাকার কথা ভাবলে কিছুই কেনা হয় না। ছেলের উপার্জনের টাকা বলে একটু সংকোচ ছিল, কিন্তু লোভে পড়ে চোখ বুজে বইটা কিনে ফেললাম।
বইটির নাম ‘Joy of Italian Humar’, লেখকের নাম হেনরি ডি স্প্যালডিং। বলা বাহুল্য, একটু আগের কৌতুকটি এই বই থেকেই নেওয়া। রসিকতাটি যে অতি উচ্চমানের তা বলতে পারব না, কিন্তু বেশ টাটকা, এর আগে কোথাও পড়েছি বা শুনেছি বলে মনে পড়ে না।
স্প্যালডিংসাহেব সেই রোম নগরের আদি যুগ থেকে এখনকার দিন পর্যন্ত সরস গল্প, রচনা, উক্তির এক বিস্ময়কর সংকলন তৈরি করেছেন। বাংলায় এ রকম কেন হয় না। আমাদের সংকলন- সম্পাদকদের দৌড় বড়জোর বঙ্কিম, বিদ্যাসাগর পর্যন্ত। এ নিয়ে আক্ষেপের সুযোগ এখানে নেই, বরং নবলব্ধ রসিকতার দু’-একটি নিবেদন করেই খানিকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করি।
ওই বইয়েই পেলাম, বেনামি চিঠির গল্প। ভদ্রলোক একটা কুৎসামূলক চিঠি পেয়ে কুচি কুচি করে ছিড়ে ফেললেন, তা দেখে তাঁর বন্ধু বিস্ময় প্রকাশ করায় তিনি বললেন, “কোনও ভদ্রলোক বেনামি চিঠি লেখে না, আমি যদি কখনও লিখি তার নীচে সই করে দিই।”
দ্বিতীয় রসিকতাটি এত সূক্ষ্ম নয়।
মা তাঁর নাবালক পুত্রকে স্কুল বোর্ডিংয়ে একটা জামা পাঠিয়েছেন। জামার বুক পকেটে একটা চিঠি, খামের ওপরে লেখা, স্নেহের খোকা,
জামার পকেটে হাত দিলেই চিঠিটা পাবে।
ইতি আশীর্বাদক তোমার মা।