6 of 8

অপ্রত্যাশিত

অপ্রত্যাশিত

আশা। প্রত্যাশা। প্রতি + আশা = প্রত্যাশা। আশা আর প্রত্যাশার অর্থ খুব কাছাকাছি। প্রায় একই রকম। তবে প্রত্যাশায় একটু জোর আছে, কোনও ন্যায্য প্রাপ্যের জন্যে আশা হল প্রত্যাশা। আশা- প্রত্যাশা আরও জোরালো শব্দ। উদাহরণ, জীবনের কাছে আমার প্রায় কোনও আশা প্রত্যাশা নেই। এ রচনা কিন্তু আশা প্রত্যাশা নিয়ে নয়। প্রত্যাশা থেকে প্রত্যাশিত। যার বিপরীত হল অপ্রত্যাশিত অর্থাৎ যা প্রত্যাশিত নয় মানে যা আশা করা যায় না।

অপ্রত্যাশিত প্রসঙ্গে সর্ব প্রথমে সেই এক ফোটোগ্রাফারের কথা মনে পড়ে। ফোটোগ্রাফার ভদ্রলোক শ্মশানযাত্রার আগে এক মৃতদেহের ফোটো তোলার জন্য নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি চিরাচরিত অভ্যাসবশত মৃতদেহের মুখের দিকে ক্যামেরার লেন্স তাক করে শাটার টিপবার ক্ষণে মুখে বলেছিলেন, (বলে ফেলেছিলেন), ‘স্মাইল প্লিজ’। বলা বাহুল্য, এমন অপ্রত্যাশিত অনুরোধ সেই মৃতদেহের পক্ষে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। চারপাশে আত্মীয় পরিজনও চমকে গিয়েছিলেন।

অবশ্য চমকানোর এখানেই শেষ নয়। এর চেয়ে অপ্রত্যাশিত একটা পুরনো কাহিনী মনে পড়েছে, যাতে চমক আরও বেশি।

তখনও জমিদারি তালুকদারির যুগ শেষ হয়নি। পাড়াগাঁয়ের প্রধান জমিদার। বয়স হলে যা হয়, জমিদার মশায় নানারকম অসুখে ভোগেন, শ্লেষ্মা, কাশি, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।

স্থানীয় কবিরাজ মশায় জমিদারবাবুকে দেখতে গেছেন। জমিদারবাবু যথারীতি বাইরের বারান্দায় ইজিচেয়ারে শুয়ে হুঁকো টানছেন আর খক খক করে কাশছেন।

কবিরাজ মশায় পাশের চেয়ারে আসন গ্রহণ করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ লক্ষ করলেন জমিদার মশায়ের হুঁকোর নলটা অস্বাভাবিক রকমের লম্বা। তিনি উঁকি দিয়ে দেখলেন হুঁকোর নলটা ভিতরের ঘরের মধ্য দিয়ে ওপাশের বারান্দায় চলে গেছে, এখান থেকে হুঁকোটা দেখাই যাচ্ছে না।

অবাক হয়ে সেই নলের দিকে তাকিয়ে কবিরাজ মশায় বললেন, ‘এটা কী ব্যাপার?’

জমিদারবাবু বললেন, ‘আপনার উপদেশ অনুযায়ী কাজ করছি।’

কবিরাজ মশায় আরও অবাক, ‘আমি আবার কী উপদেশ দিয়েছিলাম?’

জমিদারবাবু বললেন, ‘সেদিন আপনি আমাকে বলেছিলেন না, তামাক থেকে দূরে থাকুন। তাহ তো পনেরো হাত লম্বা নল কিনেছি, পাক্কা সাড়ে বাইশ ফুট। আর কতদূরে থাকব, বলুন?’

অপ্রত্যাশিত কথামালায় বোধহয় এই গুজবটিরও স্থান পাওয়া উচিত।

এখনকার মুম্বাই তৎকালীন বোম্বাইয়ের ভুবনমোহিনী নৃত্য পটিয়সী নায়িকা শ্রীদেবীর কাছে একবার বিয়ের প্রস্তাব পৌঁছে ছিল কোটিপতি এক সুদর্শন, সুশিক্ষিত, ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। সদ্বংশজাত, সুভদ্র এই যুবক সর্বত্র সংক্ষিপ্তভাবে পরিচিত ছিলেন মিস্টার লাল হিসাবে। মিস্টার লালের মতো সুপাত্র সুন্দরী চিত্রতারকাদের কপালেও কদাচিৎ জোটে। কিন্তু একটি অপ্রত্যাশিত কারণে শ্রীদেবী এই প্রস্তাবটি বাতিল করে দেন।

অনেক বিচার বিবেচনায় অবশেষে সুন্দরী শ্রীদেবী বলেছিলেন, ‘মি, লালের স্ত্রী হলে আমি তো শ্রীদেবী লাল হব। আমি চাই না লোকে আমাকে শ্রীদেবীলাল বলুক।’

(যাঁরা জানেন না তাঁদের জানাই দেবীলাল ছিলেন উত্তর ভারতের এক গোলমেলে রাজনীতিক। সম্ভবত একবার ভারতের উপপ্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন।)

শ্রীদেবীর আপত্তির কারণ নিয়ে প্রশ্ন করা চলে কি?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *