নিজের কোট খুলতে পারে না
বৃদ্ধদের নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনেক রঙ্গ-রসিকতা-ছেলেখেলা করলাম। বৃদ্ধরা অনেকেই আমার প্রতি চটেছেন। আমি নিজেও প্রায় বৃদ্ধ। আয়নার আমি সুযোগ পেলেই আমাকে ধমকাচ্ছে, বলছে, হচ্ছেটা কী!
সুতরাং, আপাতত বৃদ্ধরা কিঞ্চিৎ দূরে থাকুন, ছেলেদের নিয়ে, মানে, শিশুদের নিয়ে একটু ছেলেখেলা করি।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,
“জগৎ পারাবারের তীরে—
শিশুরা করে খেলা—”
বছর কয়েক আগে একালের রঙ্গ সাহিত্যিক এই সুবাদে লিখেছিলেন, শিশুরা শুধু জগৎ পারাবারের তীরেই খেলা করে না, তারা আলমারির মাথায়, ছাদের কার্নিশে, রাজপথে চলন্ত ট্রাফিকের মধ্যে, মাঠে-ঘাটে যেখানে পারে খেলা করে।
খেলার কথায় পরে যাচ্ছি, আপাতত একটা লেখাপড়ার গল্প বলে নিই।
আমার এক অসমবয়সি অনুরাগিণীর পাঁচ বছরের মেয়েটি স্কুলে ভর্তি হয়েছে। আমি যেদিন বিকেলবেলায় তাদের বাসায় যাই, তখন সে স্কুল থেকে ফিরল।
আমি তাকে ডেকে বললাম, “বাঃ! স্কুলে যাচ্ছ? আজ কী শিখলে?”
সে শুকনো মুখে জবাব দিল, “আজ কিছু শেখা হয়নি। কাল আবার যেতে হবে।”
আমি তাকে বোঝাতে গেলাম, না শুধু কাল নয়, আরও কত কাল তাকে বইয়ের বোঝা কাঁধে করে, পরীক্ষার চিন্তা মাথায় করে দশ-বারো-বিশ বছর শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা-বসন্ত বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে, গ্রীষ্মের রোদে পুড়তে পুড়তে হাজার হাজার দিন ক্লাসে যেতে হবে।
বাচ্চাদের বুদ্ধির গল্প দুই-একটা বলি। এত লেখাপড়া, বইখাতার অত্যাচারে ও বিদ্যার পাহাড়ের নীচে চাপা পড়েও বালকের বুদ্ধিবৃত্তির অভাব হয় না।
একটি বালককে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “মনে করো তুমি পার্কে খেলতে গিয়ে একটা টাকার ব্যাগ পেয়েছ, বড় চটের থলেভর্তি টাকা—প্রায় পাঁচ দশ লাখ— টাকার মালিক যদি তোমার কাছে আসে, তা হলে কি তুমি তাকে টাকাটা ফেরত দেবে?
ছেলেটি সামান্য ভেবে নিয়ে তারপর বলল, “ওই টাকার মালিক যদি গরিব হয়, তা হলে নিশ্চয় দেব।”
আর একবার একটি মেলায় একটি ছোট মেয়েকে দেখেছিলাম তার হাতে আঁকা গ্রিটিংস কার্ড দু’টাকা করে বেচছে। আমি কিনতে গেলে সে আমাকে বলল, সে এই টাকা নিজে নেবে না। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তা হলে এই টাকা কী করবে?”
মেয়েটি বলল, দেশের যত লোক না খেয়ে আছে, তাদের পাউরুটি কিনে খাওয়াবে। আমি বললাম, “খুব ভাল কথা। কিন্তু তুমি একা কী করে এত বড় কাজ করবে?”
সে গর্বিতভাবে বলল, “আমি একা নই, আমার বন্ধু বাচ্চু, সে ওই গেটের কাছে এ রকম গ্রিটিংস কার্ড বেচছে।” অন্য এক শিশুর কথা মনে পড়ছে। সেই শিশুটির কথা কতবার বলেছি। তাকে স্কুলের দিদিমণি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কাক কালো কেন?”
সে শশব্যস্তভাবে উত্তর দিয়েছিল, “কাক কী করবে? কাকের মাও কালো। বাবাও কালো।”
এরই সঙ্গে আর-একটি ছেলেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “ভাল্লুকের গায়ের কোট কেন ভাল্লুক কখনওই খোলে না?”
সে চটজলদি জবাব দিয়েছিল, “কী করে খুলবে? ভগবান যে বোতামগুলো লুকিয়ে রেখেছে।”