দ্বিতীয় খণ্ড (অসম্পূর্ণ)

বলশেভিক মোকদ্দমা সম্পর্কে সাধারণের ধারণা

বলশেভিক মোকদ্দমা সম্পর্কে সাধারণের ধারণা

সেকালে কোনও ঘটনা সম্পর্কে দেশব্যাপী প্রচার ইংরেজি সংবাদপত্রের মারফতেই হতো। এবং বহুল পরিমাণে একালেও তাই হয়। ইংরেজি সংবাদপত্র হতে দেশীয় ভাষাগুলির সকল খবরের কাগজ সংবাদ নকল করত। পেশোয়ারের মোকদ্দমাগুলির কোনও প্রচার হয়নি। ভারত গবর্নমেন্ট তা চাইতেন না। নিউজ এজেন্সিগুলি ইংরেজি ভাষায় কাজ চালাতেন। রয়টার বিদেশের খবর এদেশে প্রচার করতেন, আর এদেশের খবর প্রচার করতেন বিদেশে। দেশের একস্থানের খবর তাঁরা অন্যস্থানে প্রচার করতেন না। তার জন্যে ছিলেন এসোসিয়েটেড প্রেস অফ ইন্ডিয়া। তাঁরা ভারতের খবর ভারতে সরবরাহ করতেন। পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মোকদ্দমার কিছু কিছু খবর পাঞ্জাবের উর্দু কাগজগুলিতে ছাপা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু সেগুলিকে ইংরেজিতে সঙ্কলন ক’রে ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’ অন্যত্র প্রচার করেননি। হয়তো সরকারের বারণ ছিল।

কিন্তু কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমা যখন হলো তখন ভারত সরকারের নীতিতে পরিবর্তন ঘটেছে। গবর্নমেন্ট স্থির করলেন যে সংবাদপত্রের সাহায্যে গবর্নমেন্টেই আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার করবেন। তাঁরা ব্যবস্থা করলেন যে রয়টার ও এসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিনিধি সর্বক্ষণ আদালতে উপস্থিত থাকবেন। ম্যাজিস্ট্রেটের ও সেশন্স জজের আদালতে তো তাঁরা ছিলেনই হয়তো হাইকোর্টেও ছিলেন, আমি ঠিক খবর দিতে পারব না। মিস্টার আয়েঙ্গার একজন দক্ষ সাংবাদিক ছিলেন। তাঁর পুরো নাম মনে করতে পারছিনে। পরে দিল্লীর সাংবাদিক জগতে তাঁর খুব নাম হয়েছিল। একজন সহকারী নিয়ে তিনি রয়টার ও এসোসিয়েটেড প্রেস এই উভয় সংস্থার কাজ চালিয়ে গেছেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে যেদিন মোকদ্দমার প্রথম অনুসন্ধান আরম্ভ হলো সেদিন কর্নেল সেসিল কে’ (ভারত গবর্নমেন্টের হোম ডিপার্টমেন্টের অন্তর্গত ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর এবং ভারত গবর্নমেন্টের পক্ষ হতে মোকদ্দমার ফরিয়াদী) রয়টার ও এসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিনিধিদের ডেকে বলে দিলেন যে মোকদ্দমার শিরোনাম হবে “কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমা।” পরের দিন সকালবেলা ভারতবর্ষের আসাম হতে বোম্বে ও হিমালয় হতে কুমারিকা পর্যন্ত সর্বত্রই “বলশেভিক” নামটি অধীত ও উচ্চারিত হতে লাগল। এই থেকে শুধু কি আমাদের চারপাশে ঘৃণা জমাট বেঁধে উঠেছিল? কারুর দৃষ্টি কি আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি? সরকারী খরচে ও আমাদের কারাবাসের মূল্যে কিছু প্রচার কি আমাদের পক্ষে হয়নি? হয়েছে। চীনের কমিউনিস্টরা শত্রুর যুদ্ধাস্ত্রগুলি কেড়ে নিয়ে তার দ্বারা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমা ছিল সোবিয়েৎ রাষ্ট্র ও আমাদের বিরুদ্ধে একটা সংগঠিত প্রচারভিযান। প্রচারাভিযানে ছাপানো দলীল পত্র থাকতেই হবে। সে-সব দলীল যখন মোকদ্দমার এক্‌জিবিট হয়েছে তখন তার টুকরো টুকরো অংশ সংবাদপত্রে মুদ্রিতও হয়েছে। এই মুদ্রিত অংশগুলি অনেকে পড়ে আরও বেশী পড়ার জন্যে উন্মুখ হয়ে উঠেছেন। ব্রিটিশ যা কিছু ভাবুন না কেন, আমরা আসামীরা যত কষ্ট পাই না কেন, কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমা হতেও আমাদের আন্দোলন প্রেরণা লাভ করেছে। ১৯২৮ সাল পর্যন্ত যে আমাদের আন্দোলন অনেক শক্তি সঞ্চয় করল তাতে কানপুর মোকদ্দমারও কিছু অবদান আছে। ১৯২২ সালের কংগ্রেসের গয়া অধিবেশনে প্রচারিত প্রোগ্রাম ও ইতিহারও প্রচারের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।

কানপুর দায়রা আদালতে যখন আমাদের বিচার চলেছিল তখন স্কুলের ছাত্ররা অন্তত ভেবেছিল যে আমরা কম পক্ষে ইউরোপীয় লোক হব এবং আমাদের চেহারা হবে ভয়ঙ্কর ধরনের। কিন্তু কোর্টে আমাদের দেখতে এসে তারা বলে উঠত – “আরে ইয়ে লোগ তো হিন্দুস্তানী হ্যায়”। বয়স্ক লোকেরা এসেও আমাদের দেখে যেতেন, সকল রাজনীতিক মোকদ্দমা চলাকালেই এরকম লোকেরা আসেন। খুব ভিড় কখনও দেখিনি। লুইস গান দেখে কেউ ভয় পেতেন কিনা তা জানিনে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে লুইস গান্ বসানো হয়েছিল, সেশন্স কোর্টেও।

দায়রা আদালতের রায় প্রকাশের পরে অনেক কাগজ আমাদের পক্ষে- বিপক্ষে লিখেছেন। পেশোয়ারের মোকদ্দমাগুলিতে সরকার পক্ষই লাভবান হয়েছেন। আসামীদের পক্ষে প্রচার কিছু হয়নি বললেও চলে। কিন্তু কানপুর মোকদ্দমা একটি মতবাদকে (বলশেভিকবাদ) ভিত্তি করেই দায়ের করা হয়েছিল। মতবাদ সম্পর্কিত দলীল দস্তাবেজও কোর্টে প্রচুর পরিমাণে দাখিল করা হয়েছিল। সম্পূর্ণ নূতন ধরনের মোকদ্দমা ছিল এটা। সংবাদপত্রগুলির পক্ষে মতামত প্রকাশ করাও সহজ ছিল না। ২০ শে মে (১৯২৪) তারিখে দায়রা জজ তাঁর রায় শুনিয়েছিলেন। ২২ শে মে তারিখে কলকাতার ইংরেজি দৈনিক “অমৃতবাজার পত্রিকা” এই সম্বন্ধে একটি দীর্ঘ সম্পাদকীয় প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এই প্রবন্ধে তাঁরা বিশেষ করে কোর্টের আইন বিষয়ক বিচ্যুতির কথাগুলি একে একে তুলে ধরেছেন। সত্যই কানপুর মোকদ্দমার আইনের বিচ্যুতি অনেক ছিল।

কলকাতার ইংরেজি দৈনিক ‘ বেঙ্গলী’ কোনো মতামত প্রকাশ করেননি। বোম্বের ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ (ব্রিটিশ কাগজ) রিপোর্ট ছেপেছেন কিন্তু কোনো মতামত প্রকাশ করেননি।

কলকাতার ব্রিটিশ দৈনিক “ইংলিশম্যান” আমাদের বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় প্রবন্ধ লিখেছেন।

ইলাহাবাদ হাইকোর্টে আমাদের আপীল নাকচ হয়ে যাওয়ার পরে ২১শে নভেম্বর (১৯২৪) তারিখে বোম্বের “সর্বদল” সম্মেলনে (The “All-Party” Conferences) কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমার কথা ওঠে। ২১শে ও ২২শে নভেম্বর তারিখে সারা দিনশা মানোকজী পেটিটের (Sir Dinsha monockjee Petit) সভাপতিত্বে এই সম্মেলনের অধিবেশন হয়। মিস্টার গান্ধী, মিস্টার সি. আর. দাশ, পণ্ডিত মোতিলাল নেহরু, মিসেস বেসান্ত প্রভৃতি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। গবর্নমেন্টের বঙ্গীয় নীতি (Government’s Bengal Policy) বিশেষ আলোচ্য বিষয় ছিল।

“Mr. Gandhi proposed the appoinment of a representative committee to draw up a resolution dealing with the Governments’ policy in Bengal. Mrs. Besant maintained that the existence of a dangerous revolutionary conspiracy in India had been proved, and referring to the Cawnpore Bolshevist Conspiracy trial, urged the conference to repudiate the Third international.” [The Times (London), November 22, 1924, page 12, Col. 8 ( Reuter)]

বঙ্গানুবাদ

“মিস্টার গান্ধী প্রস্তাব করেন যে বাঙলা দেশে গবর্নমেন্টের নীতি বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈয়ার করার জন্যে একটি প্রতিনিধিমূলক কমিটি নিযুক্ত করা হোক। মিসেস বেসান্ত তাঁর দৃঢ় অভিমত প্রকাশ করলেন, ভারতে যে বিপজ্জনক বৈপ্লবিক ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব আছে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে, এবং কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমার কথা উল্লেখ ক’রে তিনি বিশেষ জোর দিলেন যে তৃতীয় ইন্টারন্যাশনালকে বর্জন করা হোক।” [লন্ডনের “টাইমস” পত্রিকা, ২২ শে নভেম্বর, ১৯২৪, পৃ: ১২, কলম ৮ (রয়টার)]

এই “সর্ব-দল সম্মেলনে মিসেস্ বেসান্তের উক্তি গৃহীত হয়েছিল কিনা তা জানিনে। তবে বিদেশী লেখকেরা এই উক্তি বহুস্থানে উদ্ধৃত করেছেন। মিসেস বেসান্ত নিজে অনেক জায়গায় বলেছেন যে তাঁর এই কথা সকলের কথা।

শ্রীপাট অমৃত ডাঙ্গে ও নলিনীভূষণ দাশগুপ্তের ক্ষমা প্রার্থনা

আগেই বলেছি ১৯২৪ সালের ৭ই জুলাই তারিখে কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমার চারজন দণ্ডিত বন্দী ভিন্ন ভিন্ন জেলে বদলী হয়েছিলেন। ওইদিন আমরা কিছুই জানতাম না যে আমরা বিভিন্ন জেলে বদলী হয়ে যাব। দুপুরের কিছু পরে হঠাৎ একজন জেলের ওয়ার্ডার জেলের ভিতরে গিয়ে বললেন, আপনাদের চারজনই অফিসে চলুন। কেন জিজ্ঞাসা করায় বললেন, আপনাদের বদলীর হুকুম এসে গেছে।

দুপুরের আগে ডাঙ্গের বন্ধুরা (শ্রীজোগ ইত্যাদি) মুলাকত করে গিয়েছিলেন। জেলার ও তাঁর স্পেশাল ক্লার্ক মুহম্মদ হাফিজের সঙ্গে শ্রীজোগদের ভাব হয়েছিল। মনে হয় বদলীর কথাটা হাফিজ সাহেব শ্রীজোগকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনিও হয়তো ডাঙ্গেকে তা আমাদের অগোচরে বলে দিয়ে থাকবেন। রেলওয়ে স্টেশনে রওয়ানা হওয়ার আগে আমাদের কয়েক ঘণ্টা জেল আফিসে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এই সময়ে ডাঙ্গে কানপুরের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের নামে তার দরখাস্তখানা লেখে। কানপুর ডিস্ট্রিক্ট জেলের অফিসে ঘরখানা বেশ বড়। সেখানে এক কোণে বসে সে কি লিখছিল সে বিষয়ে আমরা কোনো ঔৎসুক্য প্রকাশ করিনি। তার বাগদত্তার কানপুরে আসার কথা ছিল। আমরা ভেবেছিলেম সে বিষয়ে সে কিছু লিখে রেখে যাচ্ছে। কোনো সুযোগ বুঝে সে লেখাটা হাফিজ সাহেবের হাতে দিয়েছিল। আমাদের সামনে নলিনী গুপ্ত তাতে স্বাক্ষর করেননি। করলে আমাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হতো এবং আমরা তা দেখতে চাইতাম। অন্য সকলের বিশ্বাস যে নলিনী গুপ্তের নামটিও তখন ডাঙ্গেই স্বাক্ষর করেছিল। তাছাড়া ব্যাপারটা গোপন রাখার অন্য উপায় ছিল না। অবশ্য তাতে নলিনীর সম্মতি ছিল। এই যুক্ত স্বাক্ষরিত কাগজখানিই ছিল শ্রীপাট অমৃত ডাঙ্গে ও নলিনীভূষণ দাশগুপ্তের যুক্ত ক্ষমা প্রার্থনা। এখানি কানপুরের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের বরাবরে লেখা হয়েছিল। তাতে ৭ই জুলাই তারিখ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের রেলওয়ে স্টেশনে রওয়ানা হওয়ার অল্প আগে মুহম্মদ হাফিজ সাহেব ‘কমলা টাওয়ারে’ শ্রীজোগকে টেলিফোন ক’রে দিলেন। ‘কমলা টাওয়ার’ জুগিলাল কমলাপাতের অফিসে ছিল শ্ৰীজোগ, গণেশশঙ্কর বিদ্যার্থী এবং আরও কে কে রেলওয়ে স্টেশনে গিয়েছিলেন। আমরা কিছুই জানতে পারলাম না যে ডাঙ্গে ও নলিনী ক্ষমা প্রার্থনা ক’রে কানপুর জেল ছাড়ল। তারপরে প্রায় চল্লিশ বছর পরে আমরা ভারতের জাতীয় মুহাফিজখানায় রক্ষিত কাগজপত্র পড়ে ব্যাপারটি জানতে পারি ১৯৬৪ সালে।

File No. 421-Poll (Home Deptt.) -1924

P.14

To

The District Magistrate,

Cawnpore.

Sir,

We, the undersigned, beg to inform you that we are willing to give an undertaking to Government not to Commit any more offences, for which we are at present Convicted and we shall be thankful to government if they will deign to consider our request favourably and release us as soon as possible, as we are undergoing suffering which we cannot sustain. We shall be presonally thankful to you fi you will arrange with government for our petition being granted.

We are,
Your Obdt. Servant
Shripat Amrit Dange
Nalini Bhushan Dasgupta

District Jail,
Cawnpore,
7th July 1924

বাঙলা অনুবাদ

পি.১৪

জিলা ম্যাজিস্ট্রেট,

কানপুর

মহাশয়,

আমাদের বিনত নিবেদন এই যে আমরা গবর্নমেন্টের নিকটে এই মুচলিকায় স্বাক্ষর করতে চাই যে যে-অপরাধের জন্যে বর্তমানে আমরা দণ্ডিত হয়েছি সেই অপরাধ আমরা আর কখনও করব না এবং গবর্নমেন্ট যদি দয়া করে আমাদের আবেদন আমাদের পক্ষেই বিবেচনা করেন, আর আমাদের যথাসম্ভব সত্বর মুক্তি দেন তবে আমরা গবর্নমেন্টের নিকটে কৃতজ্ঞ থাকব। কারণ আমরা যে-কষ্টে পড়েছি তা আমরা আর সহ্য করতে পারছি না। গবর্নমেন্টকে দিয়ে আমাদের দরখাস্তে মঞ্জুর করানোর ব্যবস্থা যদি আপনি করে দেন তবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে আপনার নিকটে কৃতজ্ঞ থাকব।

আমরা আপনার
বিশ্বস্ত ভৃত্য
শ্রীপাট অমৃত ডাঙ্গে
নলিনীভূষণ দাশগুপ্ত

ডিস্ট্রিক্ট জেল,
কানপুর
৭ই জুলাই, ১৯২৪

ইংরেজি দরখাস্তখানিই মূল দরখাস্ত। তাতে যে দু’টি স্বাক্ষর আছে সেই স্বাক্ষর দু’টিরও ডাঙ্গেরই হাতের লেখা। আমাদের সামনে একখানা কাগজে ডাঙ্গে ও নলিনী স্বাক্ষর দিলে আমাদের সন্দেহের উদ্রেক হতো। নিশ্চয়ই নলিনীর সম্মতি অনুসারেই তার দস্তখত ডাঙ্গে নিজে করেছে। নলিনী কখনও বলেনি যে স্বাক্ষর তার নয়। দস্তখত-এ “Bh-এ” কালী বেশী পড়েছে। আমার ধারণা ডাঙ্গে Nalini লেখার পরে Ku লিখেছিল। কারণ নলিনীকুমার দাশগুপ্তও নলিনীর একটি নাম। তার বন্ধু কিরণবিহারী রায় সাক্ষ্যে বলেছেন যে “কুমার” নলিনীর দ্বিতীয় নাম। ডাঙ্গে ‘Ku’ লেখার পরে তার মনে এসেছিল যে জজের রায় ‘ভূষণ’ আছে। তখন ‘Ku’-কে ঘষে ঘষে সে ‘Bh’ করে দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন ডাঙ্গে ‘Bhu’ না লিখে ভুলে ‘Bu’ লিখে ফেলেছিল। পরে সেটাকে ‘Bhu’ করতে হয়েছিল। তার জন্যে “Bu”-এ কালি বেশী পড়েছে।

যাক, ক্ষমা প্রার্থনা ক’রে এটাই ডাঙ্গের একমাত্র পত্র নয়। আরও পত্র নলিনী ও সে লিখেছে। একে একে সব ক’খানা পত্র এখানে আমি তুলে দেব। এখানে একটি কথা আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই। ১৯৬৪ সালে ডাঙ্গের পত্রগুলি যখন বা’র হয়ে পড়ে তখন ডাঙ্গের নাম “Shripad” না, ‘Shripat’ এই নিয়ে একটা তর্ক উঠেছিল। ডাঙ্গের দু’জন বন্ধু রেণু চক্রবর্তী ও ‘ফেরিশতা” (সম্ভবত নিখিলনাথ চক্রবর্তী, রেণু চক্রবর্তী স্বামী) যুক্তি দিয়েছিলেন যে ডাঙ্গে বরাবর ‘Shripat’ আছে। অতএব, এই দরখাস্তগুলি জাল। ফেরিশ্তা আরও দু’রকম এগিয়ে গিয়ে বললেন যে এই পত্রগুলি নলিনী গুপ্ত জাল করে দিয়েছেন, যে নলিনী গুপ্ত ইংরেজিতে একখানে পোস্টকার্ড লিখতে হলেও আবদুল হালীমের সাহায্য নিতেন! সুযোগ বুঝে ডাঙ্গেও বলল, সে ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণের কখনও Shripat লিখেন না, তাঁরা লিখেন ‘Shripad’।

এই তর্কটা একেবারেই অহেতুক ছিল। এখন দেখছি এই সব কেঁচো খোঁড়া- খুঁড়ির ভিতর দিয়ে সাপ বা’র হয়ে পড়েছে। তারপরে আরকাইবস হতে আরও প্রচুর কাগজপত্র পাওয়া গেছে। পুলিসের রেকর্ডে ডাঙ্গের নাম শ্রীপাট অমৃত ডাঙ্গে (Shripat Amrit Dange)। কানপুরের মোকদ্দমার যে মঞ্জুরী ভারত গবর্নমেন্ট দিয়েছিলেন সে মঞ্জুরীও দেওয়া হয়েছিল Shripat Amrit Dange-র বিরুদ্ধে। কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমার আসামী ছিল Shripat Amrit Dange,-Shripad Amrit Dange নয়। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ডাঙ্গে নিজে বলেছে:

“My name is Shripat Amrit Dange; my father’s name is amrit Raghunath Dange; I am by caste Brahman; 24 years of age …..

Sd. S.A Dange
Sd. H. Holme,
Sessions Judge.

Above examination (overleaf as well) was taken in my presence and hearing and the record contains a full and true account of Statement made by the accused.

Sd. H.E. Holme,
Sessions Judge.
3.5.’24’

কোর্টের এই রেকর্ড মোকদ্দমার রেকর্ডের মাইক্রোফিল্ম হতে পরিস্ফুট করা হয়েছে। ন্যাশনাল আরকাইবস অফ ইন্ডিয়াতে গৃহীত।

আশা করি নামের বিতর্ক এখানে শেষ হয়ে গেল। এটা নিশ্চিত হয়ে গেল যে যে ডাঙ্গে কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমার আসামী হয়েছিল তার নাম ছিল Shripat Amrit Dange। শওকত উসমানী খুব জোর দিয়ে বলেছিল যে তার নাম শওকত উসমানীই, মাওলা বখ্শ নয়। সরকার পক্ষ তাই মেনে নিয়েছিলেন। তাঁরা বিকানীরের ডুঙ্গর কলেজ হতে ছাত্র রেজিস্টার এনে প্রমাণ করেননি যে শওকত উসমানী আসলে মাওলা বখ্শ। ‘নামে কিবা আসে যায়।’

গোরপুর ডিস্ট্রিক্ট জেলে যাওয়ার পরে নলিনীভূষণ দাশগুপ্ত গোরখপুরের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটকেও ক্ষমা চেয়ে একখানি পত্র লেখে। সেই পত্রখানিও এখানে তুলে দিলাম। এই থেকে আমরা বুঝে নিয়েছি যে ডাঙ্গে তার সম্মতিতেই তার নাম দস্তখৎ করেছিল।

P18

To

The District Magistrate,

Gorakhpur

Sir,

I most humbly and respectfully beg go state that I have been convicted for four years R.I. on 20th May, 1924 under section 121- A., I.P.C. from the Court of Sessions Judge at Cawnpore.

I regret very much what i have done, and I request you kindly to do your best for my release, and promise that in future I will never take part in any kind of political movement, and I am ready to give any kind of assurance you may like.

I have the honour etc.

Sd. Nalini Bhusan Das Gupta

Prisoner

Gorakhpur Dt. Jail

16.7.24

বাঙলা অনুবাদ

পি. ১৮

গোরখপুরের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের বরাবরে

মহাশয়,

বিনয় ও সম্মানপূর্বক আমি হুজুরের গোচরে নিবেদন করছি যে ১৯২৪ সালের ২০ শে মে তারিখে কানপুরের দায়রা জজের আদালত হতে ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনের ১২১-এ ধারা অনুসারে আমি চার বছর কঠোর শ্রম করার সাজা পেয়েছি।

আমি যা করেছি তার জন্যে আমি অনেক, অনেক দুঃখিত, এবং আপনাকে আমি অনুরোধ করছি যে কৃপাপূর্বক আপনি যথাসাধ্য চেষ্টা করে আমার মুক্তির ব্যবস্থা করুন। আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে ভবিষ্যতে আমি কোনো প্রকার রাজনীতিক আন্দোলনে যোগ দিব না। আমি যে কোনো রকমের মুচলিকায় স্বাক্ষর দিতে প্রস্তুত আছি।

সম্মান সহকারে ইত্যাদি
(স্বাক্ষর) নলিনীভূষণ দাশগুপ্ত
কয়েদী, গোরখপুর ডিস্ট্রিক্ট জেল

দায়রা আদালতে সাজা পাওয়ার পরে তখনও উনিশ দিন কাটেনি, ৭ই জুলাই, ১৯২৪) ডাঙ্গে আর নলিনী “as we are undergoing suffering which we cannot sustain” ব’লে কানপুরের ডিস্টিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের মারফতে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল। আবার নলিনী একা গোরখপুর ডিস্ট্রিক্ট জেল হতে ওই মাসেরই ১৬ তারিখে ক্ষমা প্রার্থনা করে আর একখানা দরখাস্ত পাঠিয়েছিল।

সীতাপুর ডিস্ট্রিক্ট জেলে অপেক্ষা ক’রে ক’রে ডাঙ্গে যখন কোনো উত্তর পেল না তখন ২৮শে জুলাই (১৯+২৪) তারিখে সে স-কাউন্সিল ভারতের গবর্নর জেনেরেলের নিকটে একখানা সুদীর্ঘ আবেদন পাঠাল এবং তাতে বলল যে মুক্তি পাওয়ার পরে সে গবর্নমেন্টের গোয়েন্দার কাজ করবে। তার স্বহস্ত লিখিত দরখাস্তের টাইপ কপি নীচে তুলে দিলাম :

C/o. The Superintendent

District Jail,

Sitapur (U.P. of A.O)

From

Shripat Amrit Dange,

Prisoner, (4 years R.I. Under Sec. 121-A. I.P.C

In the Bolshevik Conspiracy Case of Cawnpore)

To His Excellency,

The Governor-General-in Council.

Your Excellency,

I am one of the four in the Bolshevik Conspiracy Case of Cawnpore, I beg to put forward for your Excellency’s Consideration a prayer for the remission of my sentence for following reasons.

In submitting my prayer I have to refer to certain facts, which your Excellency may not be cognisant of; but your Excellency can verify their truth by referring to Col. C..Kaye, Director, Central Intelligence Bureau or to the person mentioned hereinafter.

When the above-referred case was proceeding in the lower Court, Mr. Ross Alston, the learned Counsel for prosecution happened to have a side talk with me, during the course of which he remarked, “Government is not very particular about the punishment of the individual accused. The case is instituted only to prove to a doubting public the truth of Government’s statements, made from time to time as to the existence of Bolshevik Conspiracy in India. “I think the learned Counsel is not likely to have misrepresented Your Excellency’s policy, as he was in too close touch with Government’s officials to have mistaken Government’s intentions, As the position of Your Excelency’s Governmenn has been vindicated by the verdict of the Court, your Excellency may not mind remitting my sentence and granting my prayer.

I might also refer to another incident. Exactly one year back, the Deputy Commissioner of Police of Bombay, mr. Stewart, was having a conversation with me, in his office, regarding my relations with M.N. Roy and an anticipated visit to me of certain persons from abroad. During the course of the conversation theh Honourable officer let drop a hint, in the following words, the full import of

which I failed to catch at that moment. Mr. Stewart said, “You hold and exceptionally influential position in certain circles here and abroad, Government would be gald if this position would be of some use to them. “ I think, I still hold that position. Rather it has been enhanced by the prosecution. If your excellency is pleased to think that I should use that position for the good of Your Excellency’s Government and the country. I should be glad to do so, if I am given the opportunity by Your Excellency granting my prayer for release.

I am given the punishment of four years’ rigorous imprisonment in order that those years may bring a salutary change in my attitude towards the King Emperor’s sovereignty in India. I beg to inform Your Excellency that those years are unnecessary, as i have never been positively disloyal toward His majesty in my writings or speeches nor do I intend to be so in future.

Hopping this respectful undertaking will satisfy and move Your Excellency to grant my prayer and awaiting anxiously a reply,

I beg to remain,

Your Excellency’s

Most Obedient Servant,

Shripat Amrit Dange.

Written this day

28th July, 1924.

Forwarded through the superintendent, District Jail, Sitapur, (U.P)

Endorsement No. 1048, dated Sitapur jail the 31.7.24 Submitted in original to the Inspector General of Prisons, U.P.disposal.

Sd/- Illegible

Major, I.M.D

Supdt. Jail, Sitapur

বঙ্গানুবাদ

পি, ২৪

কেয়ার অফ সুপারিন্টেডেন্ট

ডিস্ট্রিক্ট জেল

সীতাপুর (U.P. of AO)

প্রেরক

শ্রীপাট অমৃত ডাঙ্গে কয়েদী (১২১-এ ধারা অনুসারে কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমায় ৪ বছরের সাজা প্রাপ্ত)

মহামাননীয় স-পরিষদ্ ভারতের গবর্নর জেনেরেলের বরাবরে

মহামাননীয়,

আমি কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমার চারজনের একজন। আমি সবিনয়ে মহামাননীয়ের বিবেচনার জন্য নিম্নলিখিত কারণে একটি প্রার্থনা নিয়ে উপস্থিত হতে চাই, –আমার কয়েদ মৌকুফ করে দেওয়ার প্রার্থনা।

আমার প্রার্থনা দাখিল করতে গিয়ে কয়েকটি ঘটনার কথা এখানে তুলব যে ঘটনাগুলির বিষয়ে মহামাননীয় পরিজ্ঞাত নাও হতে পারেন। কিন্তু আমার কথার ভিতরে সত্য নিহিত আছে কিনা তা মহামাননীয় কেন্দ্রীয় ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর কর্নেল সি কে’র নিকট হতে পরে যাঁর নামোল্লেখ করব তাঁর নিকট হতে যাচাই করতে পারেন।

যখন উল্লিখিত মোকদ্দমা নিম্ন আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে) চলছিল তখন সরকার পক্ষের ব্যারিস্টার রস অলস্টনের সঙ্গে আমার একান্তে কিছু কথা হয়। তখন তিনি বলেছিলেন “কোন্ আসামীর কত সাজা হবে সেই বিষয়ে গবর্নমেন্ট তেমন আগ্রহান্বিত নয়। এদশে বলশেভিক ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সময় সময় গবর্নমেন্ট যে বিবৃতি দিয়ে থাকেন সন্দিগ্ধ জনসাধারণকে তা বোঝাবার জন্যেই এই মোকদ্দমা দায়ের করা হয়েছে।” আমি মনে করি সরকারী ব্যারিস্টার মহামাননীয়ের গবর্নমেন্টের নীতি বুঝতে ভুল করেননি। কারণ সরকারী অফিসারদের সঙ্গে তাঁর ঘন সংযোগ ছিল। হুজুরের সরকারের বক্তব্য আদালতে প্রমাণিত হয়ে গেছে। এখন আমার সাজা মৌকুফ করে দিয়ে আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করতে হুজুরের কোনো আপত্তি নাও থাকতে পারে।

এখানে আমি অন্য একটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করতে চাই। ঠিক এক বছর আগে আমি বোম্বে পুলিসের ডেপুটি কমিশনার মিস্টার স্টুয়ার্টের সঙ্গে তাঁর অফিসে কথা বলছিলাম। এম. এন. রায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নিয়ে ও বিদেশ হতে আমার নিকটে একজন লোক আসবেন বলে যে আশা করা যাচ্ছিল সেই সম্বন্ধেও আমার সঙ্গে তাঁর কথা হচ্ছিল। আমাদের আলোচনার ভিতরে মাননীয় অফিসার পরে উল্লেখ করা কথাগুলির দ্বারা একটি ইঙ্গিত করেছিলেন। সে সময় আমি এই কথাগুলির পূর্ণার্থ হৃদয়ঙ্গম করতে পারিনি। মিস্টার স্টুয়ার্ট বলেছিলেন: “এদেশে ও বিদেশে কোনো কোনো মহলে তোমার অসাধারণ প্রভা আছে। তোমার এই স্থিতি যদি গবর্নমেন্টের কোনো কাজে লাগে তবে গবর্নমেন্ট খুশী হবে।” আমি মনে করি, এখনও আমার সেই মর্যাদা আছে। বরঞ্চ আমার বিরুদ্ধে মোকদ্দমা হওয়ার কারণে আমার সেই মর্যাদা আরও বেড়েছে। যদি হুজুর মনে করেন যে আমার সেই মর্যাদা হুজুরের গবর্নমেন্ট ও দেশের জন্যে ব্যবহার করা উচিত, আমি আনন্দের সহিত তা করতে রাজী আছি, যদি হুজুর আমার মুক্তির প্রার্থনা মঞ্জুর করে আমাকে মুক্তি দেন।

আমাকে চার বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে এই কারণে যে এই চার বছর আমার ধারণায় রাজ-সম্রাটের রাজত্ব সম্বন্ধে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন এনে দেবে। আমি মাননীয়ের গোচরে আনতে চাই যে এই চার বছরের সাজার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। কারণ, আমি কখনও রাজ-সম্রাটদ্রোহী ছিলাম না। আমার লেখায় নয়, বক্তৃতাতেও নয়। ভবিষ্যতে সেই রকম করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।

সম্মানপূর্বক এই যে মুচলিকা আমি দিচ্ছি তা হুজুরের সন্তোষজনক হবে এবং আমি আশা করি যে হুজুর আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করবেন। আমি উৎকণ্ঠার সহিত হুজুরের উত্তরে অপেক্ষায় থাকব।

হুজুরের বাধ্য ও বিশ্বস্ত ভৃত্য

শ্রীপাট অমৃত ডাঙ্গে

২৮শে জুলাই

১৯২৪

স-পরিষদ গবর্নর জেনেরেলের নিকটে সরকারী গোয়েন্দা হওয়ার করারে মুক্তি ভিক্ষা ক’রে যে আবেদন ১৯২৪ সালের ২৮শে জুলাই তারিখে ডাঙ্গে পাঠিয়েছিল, (তার পরবর্তী আবেদনে সে কেন সেই দরখাস্তের তারিখ ২৬শে জুলাই দিয়েছে তা বুঝতে পারছিনে) তার বিষয়ে আরও একটি আবেদন সে ১৯২৪ সালের ১৬ই নভেম্বর তারিখে গবর্নর জেনেরেলকে পাঠিয়েছিল।

From Home Deptt.

Political file no. 278/25 of 1925 Page 2 (Corres)

From

Shripat Amrit Dange, Esq., District Jail, Sitapur (U.P.)

To

His Excellency, Governor General-in-Council

Your Excellency,

Pending my appeal before the Hon’ble High Court., Your Excellency’s Government Were not prepared to take into consideration my petition, dated 26th (?) July, 1924 re. remission of my sentence, in what is known as the Bolshevik Conspiracy case of cawnpore. The decision of the government was conveyed to me in their communication No.5718/IV-1376 D/ Nainitial 11.1024

Forwarded with the endrosement No. 225 / E 37 of 24D/ 21.10.24 of the General of Police, U.P.

My appeal, having now been dismissed, I beg to bring the same petition to Your Excelency’s notice for consideration and await favour.

I beg to remain,

Your Obedient Servent,

Shripat Amrit Dange

16th November,

1924

ডাঙ্গের এই দরখাস্তখানা তার আগেকার দরখাস্তের স্মারক মাত্র। এতে নূতন কোনো আবেদন নেই। যুক্তপ্রদেশের ইনস্পেক্টর জেনেরেল অফ পুলিসের মারফতে (ডাঙ্গে তাদের গোয়েন্দা হতে চেয়েছিল) ২১শে অক্টোবর (১৯২৪) তারিখে ডাঙ্গেকে জানানো হয়েছিল যে আপীলের ফয়সালা হওয়ার আগে ডাঙ্গের গবর্নর জেনেরেলকে পাঠানো আবেদন বিবেচিত হবে না। ১০ই নভেম্বর তারিখ আপীল ডিসমিস হয়ে গিয়েছিল। তাই ১৬ই নভেম্বর তারিখে ডাঙ্গে এই দরখাস্তের দ্বারা গবর্নর জেনেরেলকে জানিয়ে দিয়েছিল যে আমার আপীল ডিসমিস হয়ে গেছে। এবারে দয়া করে আমার আবেদন বিবেচনা করুন।

ডাঙ্গে যে ভাষায় দরখাস্ত করেছিল সেই অনুযায়ী তাকে যদি তখনই মুক্তি দেওয়া হতো তা হলে তার রাজনীতিক জীবন বরাবরের জন্য শেষ হয়ে যেত। সে যে সঙ্গোপনে ভারতে গবর্নমেন্টের হোম ডিপার্টমেন্টের গোয়েন্দার কাজ করার করারে মুক্তি পেয়ে চেয়েছিল সে কাজ সে কখনও করতে পারত না। রাজনীতিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত থেকেই শুধু গোপনে ভারত গবর্নমেন্টকে খবর সে সরবরাহ করতে পারত। একথা গবর্নমেন্টের হোম ডিপার্টমেন্ট বুঝেছিল, ডাঙ্গে বুঝেনি। ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে এই কথা ভেবে ভারত গবর্নমেন্টের হোম ডিপার্টমেন্ট ডাঙ্গকে তখন মুক্তি দেয়নি। কর্নেল কে. সেই সময়ে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর জায়গায় এসেছিলেন ডেভিড পেট্রি। কিন্তু অবসর গ্রহণ করা সত্ত্বেও কে কানপুর মোকদ্দমার আপীলে সাহায্য করেছিলেন। পেট্রি বললেন তখনই ডাঙ্গেকে ছেড়ে দিতে রাজী নন। কারণ, তাতে লোকে ভাববে ক্ষমা চাওয়া মাত্রই যদি মুক্তি পাওয়া যায় তবে অপরাধ করে যাওয়াই ভালো। দু’বছর সাজা খেটে ডাঙ্গে যদি ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে, পেট্রি বললেন, তিনিই সকলের আগে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্যে সুপারিশ করবেন। ভারত গবর্নমেন্টের হোম ডিপার্টমেন্টের কাগজপত্র কিছু কিছু লোক মত প্রকাশ করেছিলেন যে ডাঙ্গেকে জেলখানায় বেশি বেশি রেমিশন দেওয়া হোক যাতে সে তাড়াতাড়ি ছাড়া পেতে পারে। ডাঙ্গে ভালো রেমিশন (এক বছর) পেয়েছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *