পাঞ্জাবে পার্টি গঠন
১৯২০-২১ সালে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের উদ্যোগে তাশকন্দ ও মস্কোতে যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়েছিল তাতে পাঞ্জাবের কমরেডরাও ছিলেন। দেশে ফেরার সময়ে সীমান্তে কিংবা দেশে ফেরার পরে নানাস্থানে তাঁরা গিরেফ্ফার হয়েছিলেন। ১৯২১-২২ সালে তাঁদের বিরুদ্ধে হয়েছিল তাশকন্দ ষড়যন্ত্র মোকদ্দমা, আর ১৯২২-২৩ সালে চলেছিল মস্কো ষড়যন্ত্র মোকদ্দমা। এই দুটি মোকদ্দমার বিচার পরে পরে পেশোয়ারে একই জজের দ্বারা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের বাদ দিয়েও পাঞ্জাবের সঙ্গে পৃথকভাবে একটা সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল। যাঁকে নিয়ে এই কাজটা আরম্ভ হয়েছিল তাঁর নাম ছিল গুলাম হুসায়ন। পেশোয়ারের এডওয়ার্ডস চার্চ মিশন কলেজে তিনি অর্থশাস্ত্র (ইকনমিক্স পড়াতেন। আমি আমার আগেকার কোনো লেখায় পেশোয়ার ইস্লামিয়া কলেজের নামোল্লেখ ক’রে ভুল করেছি। গুলাম হুসায়ন যে এডওয়ার্ডস্ চার্চ মিশন কলেজে পড়াতেন এটাই সঠিক কথা। ১৯২২ সালের শুরুর দিকে কোনো সময়ে গুলাম হুসায়নের পরম বন্ধু মুহম্মদ আলী তাঁকে পেশোয়ার হতে কাবুলে ডেকে নিয়ে যান। আগেও আমি মুহম্মদ আলীর নামোল্লেখ করেছি। তিনি যখন লাহোরে মেডিকাল কলেজে পড়ছিলেন তখন আরও চৌদ্দজন ছাত্রের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অতিক্রম করে আফগানিস্তানে চলে যান। মুহম্মদ আলীর আসল নাম ছিল খুশী মুহম্মদ। বিদেশে তিনি মুহম্মদ আলী, সিপাসি ও আহমদ হাস্সান নাম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এই নামগুলির মধ্যে মুহম্মদ আলী নামটিই ছিল সবচেয়ে বেশী পরিচিত। কাবুলে যখন অস্থায়ী ভারত গবর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তখন মুহম্মদ আলীও ছিলেন তার প্রবর্তক সভ্যদের একজন। কিন্তু তার আগে কাবুলেই মুহম্মদ আলী নিজেকে কমিউনিস্ট বলে ঘোষণা করেছিলেন। তাশকন্দে যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়েছিল তারপরে মুহম্মদ আলী কাবুলে চলে যান। তখনই তিনি তাঁর ছাত্রজীবনের পরম বন্ধু গুলাম হুসায়নকে কাবুলে ডেকে পাঠালেন। সেখানে তাঁর ভিতরে কয়েক দিন ধরে অনেক আলাপ আলোচনা হলো। শেষ পর্যন্ত গুলাম হুসায়ন মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে মেনে নিলেন এবং কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রদর্শিত পথে ভারতের অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে কাজে এগিয়ে যেতে রাজী হলেন। পেশোয়ারে ফিরে এসে কিছু দিনের ভিতরে তিনি পেশোয়ার মিশন কলেজের চাকরী ছেড়ে দিয়ে লাহোরে চলে গেলেন। লাহোরে তিনি রেলওয়ে ওয়ার্কাস ইউনিয়নে ঢুকেছিলেন, আর ‘ইনকিলাব’ (বিপ্লব) নামীয় একখানি উর্দু কাগজ চালিয়েছিলেন। ১৮১৮ সালের ৩ নম্বর রেগুলেশন অনুসারে বিনা বিচারে বন্দী (State Prisoner) হওয়ার পরে গুলাম হুসায়নের রাজনীতিক জীবন শেষ হয়ে যায়। কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মোকদ্দমার সংস্রবে তাঁর সম্বন্ধে আমি বিস্তৃত আলোচনা করব। কমিউনিস্ট পার্টিতে তাঁর অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবার পরে আমরা লাহোরে শামসুদ্দীন হাসানকে ছাড়া আর কিছুই পাইনি। তাঁর ওপরেও বিশ্বাস স্থাপন করতে না পারায় পার্টি তাঁকে এড়িয়ে চলেছে। এইভাবে গুলাম হুসায়ন পর্ব শেষ হয়ে যায়। তারপরে পাঞ্জাবের সত্যকার কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠে পেশোয়ারের বন্দীরা ফিরে আসার পরে।