পাতলা চাদর

পাতলা চাদর

সংস্থিতা ওকে আগেও পছন্দ করত না, এখনও করে না। এ বিষয়ে সতীর্থ শতকরা একশোভাগ নিশ্চিত। কিন্তু এই মুহূর্তে সংস্থিতার ওপর ওর কোনও রাগ নেই, বরং কৃতজ্ঞতা আছে কিছুটা। সেদিন যদি সংস্থিতা ফোন করে পিয়ালকে না চাইত, তা হলে ওর পক্ষে বারবার টুয়াকে ফোন করা সম্ভব হত না। টুয়া ফোন ধরছিল না দেখে রাগ হচ্ছিল, অসম্ভব রাগ হচ্ছিল মেয়েটার ওপর। সবচেয়ে বড় কথা, জীবনে প্রথমবার হিংসে হচ্ছিল পিয়ালকে। একটা ছেলে যে প্রায় পাঁচ বছরের বাচ্চার মতো সমস্ত ব্যাপারে নির্ভর করে সতীর্থর ওপর, সে হঠাৎ করে একটা দু’দিনের চেনা মেয়েকে নিয়ে বর্ধমান বেড়াতে চলে গেল?

তুই একটা স্টার, তোর অত খোলাখুলি কথা বলা মানায় না, সতীর্থ ওকে সতর্ক করার জন্য বলেছিল।

পিয়াল মানল না। বলল, কী আশ্চর্য, আমি আমার মনের কথা বলতে পারব না?

পারবি না কেন, পারবি। কিন্তু একই সঙ্গে তোকে খেয়াল রাখতে হবে, তোর মনের কথা নিয়ে পাঁচজন যেন গসিপ করতে না পারে।

আর যেই করুক, টুয়া করবে না।

ওরে ব্বাবা! প্রেম যে গভীর! সতীর্থ একটা ব্যঙ্গের হাসি হাসল।

পিয়াল ধরতে পারল না। বলল, হ্যাঁ রে, আজ এতদিন পর মনে হচ্ছে আমি মুক্ত। আমাকে নতুন নতুন গান লিখতে হবে, সুর করতে হবে, গাইতে হবে। সেসব গান কোনও মনুমেন্ট পাহারা দেওয়ার কথা বলবে না, খোলা আকাশের নীচে শুয়ে থাকার কথা, দৌড়োনোর কথা বলবে।

দৌড়োনো নয় তবু ঠিক আছে। কিন্তু ওই খোলা আকাশের নীচে শুয়ে থাকা, শুভেন্দুর বাড়িতে মানবে? সতীর্থ ভুরু নাচাল।

কী করে বলব বল? আমি তো হাত গুনতে জানি না।

জ্যোতিষী না হলেও কিছু কথা বলা যায় পিয়াল। আর সেই কথা হচ্ছে সামনে খারাপ দিন আসছে।

মানে? তুই টুয়ার ব্যাপারে বলছিস?

আমি তোর রুটি-রুজির ব্যাপারে বলছি। আর তোর রুটি-রুজি মানে তোর একার নয়, আরও অনেকে জড়িত। ইনফ্যাক্ট আমিও।

একটু খোলসা করে বল সতীর্থ, আমি বুঝতে পারছি না।

বুঝতে হবে পিয়াল। দিন দিন যেভাবে কল শো-এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে…

পিয়াল ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, কমে যাচ্ছে কী বলছিস, এই মাসেই তো বারোটা নাকি তেরোটা শো করলাম।

আমি সামনের মাসগুলোর কথা বলছি। অ্যাডভান্স বুকিং কিন্তু খুব বেশি নেই, সতীর্থ বলল।

নেই তো হয়ে যাবে। ঘাবড়াচ্ছিস কেন? ছুটির মাসেই এতগুলো খেপ মারলাম আর ডিসেম্বর-জানুয়ারির যে-সময়টা রমরমিয়ে কলেজ ফেস্টগুলো হবে তখন কি বসে থাকব নাকি?

তুই তো তোর নিজের বানানো একটা কল্পনার স্বর্গে থাকিস তাই জানিস না, সেরকম ফেস্ট এখন খুব কম জায়গাতেই হবে। আর যেখানে হবে তারাও তোদের ডাকবে কিনা সন্দেহ।

কেন, কলেজিয়াদের মধ্যে আমার পপুলারিটি কমে গেছে নাকি? পিয়াল হাসল।

তোর পপুলারিটি কমেনি বন্ধু কিন্তু কমবেশি সবারই বাজেট অনেকটা কমে গেছে।

কেন? স্পনসর?

পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানিগুলো ইন্টারেস্টেড নয়।

কী বলছিস তুই? বাংলা ব্যান্ডেরই তো বাজার।

হ্যাঁ, কিন্তু সেই বাজারটা তো বাংলায়। আর যারা বিজ্ঞাপন দেয়, স্পনসর করে তারা মনে করছে বাংলায় বাজার ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে।

সারা দেশে বাড়ছে আর এখানে ছোট হচ্ছে?

অবশ্যই। যেখানে নতুন নতুন কলকারখানা হচ্ছে, হাজার-হাজার কোটি টাকা লগ্নির পর আরও হাজার-হাজার কোটি লগ্নি আসছে, সেখানে বাজার তো বাড়বেই। আর আমাদের এখানে হয়ে যাওয়া কারখানাকে পাছায় লাথি মেরে ভাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখানে বাজার শামুকের মতো গুটিয়ে যাবে না? এই যে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো কলকাতা থেকে ফ্লাইট তুলে নিচ্ছে, কেন নিচ্ছে?

কলকাতায় পয়সা দিয়ে টিকিট কেনার লোক কম? পিয়াল জিজ্ঞেস করল।

ব্যাবসার খাতিরে হাই-ফাই লোকের কলকাতায় আসার প্রয়োজন কম। আর যেখানে প্রয়োজন কম, সেখানে সাপ্লাই তো কমতে বাধ্য।

গানও পড়বে এইসব জটিলতার মধ্যে?

হাজার বার পড়বে। তোর প্রোগ্রাম দেখতে ভবিষ্যতের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সিএ, ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিরা আসছে জানলে যে-সমস্ত কোম্পানি টাকা দেবে, বেকার ছেলে-মেয়েরা আসছে জানলে তারা পয়সা ঢালবে কেন? ওই বেকারদের কাছে তো ওদের মাল বিক্রি হবে না। তা হলে ওরা তোকে হাইলাইট কেন করবে বল? করে কার কাছে পৌঁছোবে?

এভাবে তো ভেবে দেখিনি রে সতীর্থ! পিয়াল গুম হয়ে গেল।

সারাদিন-রাত তো শুধু ওই কচি মেয়েটার কথাই ভাবছিস, অন্য কিছু আর ভাববি কখন? অবশ্য ওই মেয়েটা যদি শেষ অবধি এনআরআই বিয়ে করে তোকে করে তা হলে তোর আর রুজি-রুটির কথা অত ভাবতে হবে না, অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা তোকে তরিয়ে দেবে, সতীর্থ দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলল।

আমি এ সমস্ত ভাবি না। বিশ্বাস কর, পিয়াল ব্যথিত গলায় বলল।

পিয়াল হয়তো সত্যিই ভাবেনি। কিন্তু সতীর্থ তো ভাবে। একটা কথার সূত্রে ওর মাথায় আরও দশটা কথা এসে যায়, তার সবগুলোই যে ধোওয়া তুলসীপাতা এমন গ্যারান্টি ও দিতে পারবে না। সেদিন প্রিয়ম কী একটা কথায় ওর পেটে ঘুসি চালিয়ে দেওয়ামাত্র সতীর্থ ওর দুটো জুলপি দু’হাত দিয়ে ওপরে টেনে ধরেছে আর প্রিয়ম দাঁতে দাঁত চেপে ওর দিকে খুনে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, একটা আওয়াজ বের করছে না মুখ দিয়ে। হঠাৎ আশমানি ঘরে ঢুকে এল। প্রিয়মের সঙ্গে যুদ্ধে এতই মগ্ন ছিল যে আশমানির পায়ের শব্দ পর্যন্ত পায়নি সতীর্থ। কিন্তু ঘরে ঢোকামাত্র আশমানির মুখ দিয়ে যে-শব্দটা বেরিয়ে এল, তাতে করে অনেকটা চোরাবালির মধ্যে সেঁধিয়ে গেল ও। বেরিয়ে আসার প্রাণপণ চেষ্টায় বলল, প্রিয়ম একদম বেয়াড়া হয়ে উঠছে। ওকে একটু-আধটু শাসন করতেই হবে।

আশমানি রাগ আর অভিমান মেশানো গলায় বলল, কিন্তু তুমি তো ওকে মারছিলে।

সতীর্থ মুহূর্তের মধ্যে উঠে গিয়ে প্রিয়মের বিস্ফারিত চোখের সামনেই আশমানিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গায়ে গা ঘষতে শুরু করল। আশমানি একটু গা-ঝাড়া দিল বটে কিন্তু নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রবল কোনও চেষ্টা করল না। বদলে প্রিয়মকে বলল ওদের মধ্যে এসে দাঁড়াতে। প্রিয়ম লাফিয়ে উঠে এসে সতীর্থর বুক আর আশমানির পিঠ ছুঁয়ে দাঁড়াতে গেল, ঠিক তখনই সতীর্থর বাঁ-হাতের আঙুল ওর পেটে একটা মোক্ষম চিমটি কাটল। আসলে সতীর্থ ওকে চুমু খেতে চেয়েছিল, আদর করতে চেয়েছিল। কিন্তু কে জানে কোন অজানা আক্রোশে আরও একবার মেরে বসল। প্রিয়ম ছিটকে সরে গেল।

সতীর্থ কোমর দিয়ে আশমানিকে পাশের ঘরের দিকে ঠেলতে ঠেলতে বলল, চলো মানি, ওই ঘরে চলো।

আশমানি চোখ বন্ধ করে বলল, তুমি একবার প্রিয়মকে আদর করে এসো তীর্থ।

সতীর্থ বলল, করলাম তো, এইমাত্র ওকে চুমু খেলাম, দেখলে না?

আশমানি পরম নিশ্চিন্ততায় সতীর্থর গায়ে নিজেকে প্রায় ছেড়ে দিতে দিতে বলল, আমি প্রিয়মকে বলব তুমিই ওর নতুন বাবা। কিন্তু ও তোমায় কী বলে ডাকবে, ‘বাপি’ না ‘পাপা’! কে যেন একটা চারশো চল্লিশ ভোল্টের শক দিল সতীর্থকে। ও আতঙ্ক আর অস্থিরতায় হিম হয়ে গেল।

ইদানীং সেই শিরশিরে ভয়ের অনুভূতিটাকে সঙ্গে নিয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি ও টের পাচ্ছে, পিয়াল ওর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সেই যাওয়া হয়তো আপাত অর্থে দুশো কিলোমিটার কিন্তু তার ভিতরে বহুযোজন দূরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা উঁকি মারছে।

পিয়াল আসেনি এখনও? বর্ধমানের প্রোগ্রামের দিন সকালে চাঁদুর বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল সতীর্থ।

পিয়াল ওর গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে গাড়িতে যাচ্ছে। আমরা এখান থেকে বেরোব, চাঁদু বলল।

তুহিন স্বগতোক্তির ঢঙে বলল, পিয়াল নিল অন্য ডাল, মাতব্বরের কী হবে?

অন্য সময় হলে এটা নিয়ে ঝামেলা, এমনকী মারপিট পর্যন্ত করত সতীর্থ। কিন্তু ও কিচ্ছু করল না। এমনকী পিয়ালকে একটা ফোনও না। দুপুর বারোটা নাগাদ পিয়ালই ফোন করে বলল, তোকে সকাল থেকে ট্রাই করছিলাম। টুয়ার আজ জন্মদিন। তুই এলে সকলে মিলে সেলিব্রেট করতে পারতাম।

টুয়ার জন্মদিন? ভাল। টুয়া বর্ধমান গেছে? ভাল। সেলিব্রেশন হবে? আরও ভাল। কিন্তু সেই সেলিব্রেশনের সঙ্গে নিজেকে কীভাবে মেলাবে সতীর্থ? সকালে একটা বাড়িতে বিয়ের খাট পৌঁছে দিতে গিয়েছিল ও। ভাল পার্টি, স্পেশ্যাল অর্ডার ছিল। টুয়ার বিয়েতেও কি এরকম স্পেশ্যাল অর্ডারি খাট সাপ্লাই দেবে সতীর্থ? সেটাই সেলিব্রেশন?

তখনই সংস্থিতার ফোনটা এল। আর সতীর্থর মাথায় জ্বলে উঠল হাজার ওয়াট পরিকল্পনা। একটু যে পাপবোধ মনে এল না তা নয়, কিন্তু ভালভাবে বেঁচে থাকার প্যাশনের কাছে যে-কোনও পাপবোধ তুচ্ছ। আর তা ছাড়া যে পিয়ালকে ও অন্তর থেকে ভালবাসে সেই পিয়ালের ঘাড়ে বন্দুক রেখে যদি একটা শিকার করেই, তাতে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়? বরং এর ফলে পিয়াল আর সংস্থিতার মধ্যে আবার নতুন করে সম্পর্ক শুরু হতেও তো পারে? টুয়াকে হারানোর দুঃখ? সে-দুঃখ নিশ্চয়ই সংস্থিতাকে ফিরে পাওয়ার খুশির চেয়ে কম হবে?

প্রশ্ন, প্রশ্ন, প্রশ্ন, উত্তরগুলো বোধহয় আগে থেকে ঠিক হয়েই থাকে, মানুষ শুধু এসক্যালেটর বেয়ে নামতে নামতে মনে করে সে নিজের মর্জিমতো নামছে। নইলে সংস্থিতা ফোন করেছিল শুনেই পিয়াল অমন খেপে উঠবে কেন? আর ওর গান শুনতে ভিতরে না গিয়ে টুয়াই বা কেন সেদিন সতীর্থকে জিজ্ঞেস করবে পিয়ালের অতীত?

সেই অতীত যে কতখানি নিরামিষ শুভেন্দুকে জিজ্ঞেস করলেও জানতে পারত টুয়া। কিন্তু অধিকাংশ মেয়ের মনেই কমবেশি সেই সিংহটা লুকিয়ে থাকে, যে নিজের ছায়াকেও যাচাই না করেই ভয় পায়, প্রতিদ্বন্দ্বী বলে ভাবে।

শীতের দেশে জলের ওপর একটা পাতলা চাদর পড়ে বরফের, দেখেছ? সতীর্থ টুয়াকে বলল।

আমাদের দেশেই দেখেছি। কুলু-মানালিতে, টুয়া জবাব দিল।

সেই বরফের চাদর দেখে মুগ্ধ হওয়া যায়, কিন্তু তার ওপর দিয়ে হাঁটতে গেলে সেটা ভেঙে যায়। মানে যেতে পারে।

কী প্রসঙ্গে বলছেন?

তোমার জন্য পিয়ালের মনে যেটা তৈরি হয়েছে, সেটা ওই বরফের চাদর। ওরকম আস্তরণ পিয়ালের মনে আমি অনেক পড়তে দেখেছি।

আবার ভেঙেও যেতে দেখেছেন?

স্বাভাবিক। কিন্তু বরফের নীচের ওই জলটা বরাবরই টলটলে। প্রথম প্রেম তো, সতীর্থ টাগরায় জিভ ছুঁইয়ে একটা শব্দ করল।

ওই ভদ্রমহিলাও ভালবাসেন পিয়ালকে?

সতীর্থ খেয়াল করল টুয়া পিয়ালদা বলল না। ও আরও একটু মশলা দিয়ে বলল, বাসে আবার বাসেও না। আসলে সংস্থিতাকে নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, ও নিজে পিয়ালকে নিয়ে খুশি থাকুক বা না থাকুক, পিয়ালকে অন্য কারও সঙ্গে সুখী হতে দেবে না। আর এই জোরটা ও পিয়ালের থেকেই পায়। নইলে তোমার সঙ্গে একান্তে বসে আছে যখন, তখনও সংস্থিতার একটা ফোন এসেছে শুনলেই অতটা উতলা হয়ে পড়ে কেন?

আপনি জানালেন কেন ওকে? চেপে গেলে পারতেন।

আমি জানাতে চাইনি টুয়া। কিন্তু আমি ভয় পেয়ে গেলাম। সংস্থিতা ওকে খুঁজছিল অথচ আমি সে-খবরটা ওকে দিইনি, এটা জানলে পরে পিয়াল হয়তো আর আমার মুখদর্শন করত না জীবনে। তবু তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে আমি ফোনটা পিয়ালকে করিনি, তোমাকে করেছিলাম।

কিন্তু আমি কী করতাম!

সতীর্থ টুয়ার একটা হাত খপাত করে ধরে বলল, করলে একমাত্র তুমিই কিছু করতে পারো। পিয়ালকে সংস্থিতার খপ্পর থেকে ছাড়িয়ে আনো টুয়া। তারপরও হয়তো ও সারাজীবন ধরে সংস্থিতাকেই ভালবাসবে। তোমাকে ‘দুই’ বাসলে ওই মেয়েটাকে ‘আট’ বাসবে কিন্তু তুমি তো পিয়ালকে ভালবাসো টুয়া। ওর জন্য এটুকু স্যাক্রিফাইস তুমি করবে না?

টুয়া চরম বিরক্তিতে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, আমার দায় পড়েছে!

এই কথোপকথনের ছ’দিনের মাথায় চন্দননগরে পিয়ালের প্রোগ্রাম শুনতে শুনতে টুয়া ওর পাশের সিটে বসা সতীর্থকে বলল, একটু বাইরে গেলে হয় না? ভিতরে কীরকম গুমোট লাগছে!

চন্দননগরে গঙ্গার ধারটা খুব সুন্দর করে বাঁধানো। সন্ধের দিকটা বাতাসও দিলদরিয়া। মুশকিল একটাই। অজস্র হনুমান এদিক ওদিকের গাছ থেকে ঝুপঝাপ লাফিয়ে পড়ে, হাত থেকে ঠোঙা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। টুয়া চুপ করে বসে ছিল, হঠাৎ সতীর্থ ওদের সামান্য দূরে লাফিয়ে নামা একটা হনুমানের দিকে তাকিয়ে বলল, ওই ধরল ধরল, হনুমান ধরল!

টুয়া প্রায় একটা ঝাঁপ খেয়ে সরে এসে সতীর্থর বুকে মুখ লুকোল। সতীর্থ দু’হাত দিয়ে টুয়ার মুখটা তুলে ধরে এলোপাথাড়ি চুমু খেতে লাগল ওর কপালে, চোখে, গালে, ঠোঁটেও। টুয়া দুমদাম হাত চালাতে চালাতে বলল, শয়তান, পাজি কেন এরকম করলে?

সতীর্থ টুয়ার দুটো কাঁধ শক্ত করে ধরে বলল, যাই হই না কেন, আমার মনে তোমার জন্য কোনও পাতলা চাদর নেই। যা আছে, তা আমাদের পায়ের তলার এই কংক্রিটের চেয়েও শক্ত। কোনও সংস্থিতার চাপে ভেঙে যাবে না।

টুয়া জড়িয়ে ধরল সতীর্থকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *