জাল টাকা

জাল টাকা

পিউয়ের বিয়ে হয়েছিল সম্বন্ধ করে। ইমিটেশনের গয়নার দোকানে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে পিউ মুখোমুখি হয় সেই ভদ্রমহিলার, যিনি সামান্য কথাবার্তার সুযোগেই চেয়ে নেন ওর বাড়ির ফোন নম্বর। তার বারো ঘণ্টার ভিতর বিলেত ফেরত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের মায়ের ফোন আসে ওদের বাড়িতে। পিউয়ের বাড়ির লোক নেহাতই অবাক হয় এই ঘটনায়, কারণ মুখখানা মিষ্টি হলেও পিউ শ্যামবর্ণা এবং এক্ষেত্রে শ্যামবর্ণার আগে ‘উজ্জ্বল’ শব্দটা না বসালেও কোনও অসুবিধে নেই।

তোর সঙ্গে কথা বলছিল কে? দোকানের কোনও কর্মচারী, নাকি শপিং করতে আসা কোনও ভদ্রমহিলা? সংস্থিতা পনেরোবার অন্তত জিজ্ঞেস করল পিউকে।

আরে, আমি কি অত খেয়াল করেছি নাকি? দুলটা দু’ইঞ্চি বড় না ছোট নেব, তাই ঠিক করতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তখন! পিউ যেভাবে কথা বলে, ঠিক সেভাবেই বলল।

সাজুনি লো সাজুনি, তোর খুলে গেল বিনুনি! ছোটমাসি হেসে গড়িয়ে পড়ল। সেই হাসিতে মা-বাবা সবাই যোগ দিল।

সংস্থিতা কিছুটা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল, আমরা কি পিউয়ের বিয়েটা ঠিক করে ফেলেছি?

বাবা একটু গম্ভীর হয়ে বলল, না, তা নয়। তবে কত বড় ফ্যামিলি থেকে সম্বন্ধ এসেছে দ্যাখো। আমরা নিজেরা চেষ্টা করলে কি এইসব জায়গায় পৌঁছোতে পারতাম?

ছোটমাসি আগ বাড়িয়ে বলল, বাড়ির গেটে-ফেটে দারোয়ান আছে বলল। কথা বলতে বলতে ছেলের মা কাকে যেন একটা বলল, ‘তুমি তা হলে ওই গাড়িটা নিয়ে বেরোও’, তার মানে দু’-তিনটে গাড়ি আছে বাড়িতে। ছেলে শুনলাম আমস্টারড্যাম না ইতালি কোথায় গেছে, তিনদিন পরে ফিরবে। এরপরও না করা যায়, নাকি করা উচিত?

ওরা তো বাবার সঙ্গে কথা বলছিল। তুমি এত কিছু শুনলে কোত্থেকে? সংস্থিতা একটু গলা তুলে জিজ্ঞেস করল।

তোর মা-বাবা বলল তাই শুনলাম। নইলে আমি তো আর দৈবজ্ঞ নই যে ফোনের ওপারের কথা শুনতে পাব! ছোটমাসি ভীষণ রাগের গলায় বলল।

আঃ মৌ, তুই চুপ কর না! মা একটা ধমক লাগাল সংস্থিতাকে।

না না, মৌ ঠিকই বলেছে। আমি তোমাদের ব্যাপারে একটু বেশিই নাক গলাচ্ছি। কী দরকার বাবা! দু’দিনের জন্য এসেছি, ছোটমাসি মুখটা ঘুরিয়ে নিল।

না না, সুজাতা তুই কথাটা ওভাবে নিস না। তুই বলবি না তো কে বলবে? মৌ আসলে একটু ভাল করে খোঁজখবর নেওয়ার কথা বলেছে। একদম হঠাৎ এসেছে তো সম্বন্ধটা…

সম্বন্ধ হঠাৎই আসে সেজদি। আর তুমি ভাল করে খোঁজখবর নেওয়ার কথা বলছ, অত খোঁজখবর নিতে গেলে ওরা এই বাড়িতে ছেলের বিয়ে দেয় কিনা দ্যাখো।

কেন, আমাদের বাড়ি কী প্রবলেম করল? পিউ জিজ্ঞেস করে বসল।

বাজে প্রশ্ন করিস না পিউ। যে-বাড়িতে বড় মেয়ে আইবুড়ো হয়ে বসে থাকে, সেই বাড়িতে ছোটমেয়ে যত ধিঙ্গিই হোক না কেন তার সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেওয়ার আগে লোকে চারবার ভাবে। অনেক সমস্যা দেখা দেয় রে… কথাগুলো বলে ছোটমাসি চোখ ছোট করে তাকাল সংস্থিতার দিকে।

সংস্থিতার সারা গায়ে কে যেন জলবিছুটি বুলিয়ে দিল। ‘তুমি কী বলতে চাইছ?’ ‘তোমার লজ্জা করে না? ‘তুমি আমাদের দু’বোনের মধ্যে ঝগড়া বাধাতে চাইছ?’ ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন গলায় পাক খেয়ে উঠল। কিন্তু সংস্থিতা একটা বড় ঢোঁকে সমস্তটা গিলে নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এল। কাকে বলবে? কী বলবে? ওদের ভাঙাচোরা দোতলা বাড়িটার একতলা ছোটমাসি কিনে নিয়েছিল বলেই বাড়িটা ভেঙে নতুন করে তৈরি করা গেছে। কিনেছিল অবশ্য ছোটমাসির উকিল স্বামী। ধানবাদের উকিল। ভয়ংকর সব কয়লা মাফিয়া, যারা লরির পর লরি কয়লা পাচার করে দেয় আর কোনওরকম প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে, একটাই শব্দ উচ্চারণ করে ‘খাল্লাস’, সেই কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে রাষ্ট্রের একটা-দুটো মামলা এখনও হয়। এই সমস্ত মামলায় কয়লা মাফিয়াদের হয়ে সাক্ষী লোপাট, মিথ্যা সাক্ষী জোগাড় করা এবং তারপরও দরকার হলে সওয়াল করাই ছোটমেসোর কাজ। অন্তহীন কালো টাকা দিয়ে গয়না, গয়না এবং গয়না কেনার পরও যা থেকে যায়, অথচ যাকে লুকোনোও চাই, তাই দিয়েই ওদের বাড়ির হাল ফেরানো। কিন্তু ইনকাম ট্যাক্সের ভয়ে মেসো বা মাসি নিজের নামে দলিল করায়নি। বাড়ির সেই বিশেষ বিশেষ অংশ তাই সংস্থিতাদের জীবনের এক-একটা অংশে রেখে গেছে কয়লার ছাপ।

অরিন্দম যে-সন্ধ্যায় দেখতে এসেছিল পিউকে, সংস্থিতা বাড়ি ছিল না। ইচ্ছে করেই বেরিয়ে গিয়েছিল। রাতে পিউয়ের কাছ থেকে শুনেছিল, ছেলেটা ভীষণ ভদ্র। অল্প কথা বলে। অল্প কথা বলার সঙ্গে ভদ্রতার কী সম্পর্ক, সে-বিষয়ে বেশ সংশয় ছিল সংস্থিতার। কিন্তু প্রকাশ করেনি। ওর বারবার মনে হচ্ছিল ও কতটা বোঝে, যে বলবে? বুঝলে ওর সঙ্গে কল্লোলের সম্পর্কটা এমন ওয়াগন-ভাঙা মালের মতো লুঠ হয়ে গেল কেন? ভাবনার হাজার হাজার ফুট গভীর ফ্যাদমে নেমে চুপ করে রইল সংস্থিতা, হয়তো বা ‘বয়সে বড় আইবুড়ো বোন ছোট বোনের এত ভাল বিয়েটাকে ভাল চোখে দেখছে না’ এই কুৎসার ভয়েই চুপ করে রইল। অরিন্দম দেখে গেল পিউকে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলেও গেল যে, বিয়ে-থা’র আগে ঘোরাঘুরিতে ওর মত নেই। ও সংস্কারী জেনে সংস্থিতাদের সারা বাড়িতে একটা খুশির হাওয়া বয়ে গেল। ঠাকুর স্বয়ং ওদের জন্য এত চমৎকার, এত রক্ষণশীল পাত্র পাঠিয়েছেন, পিউয়ের আগামী জীবন সর্বার্থে ঝলমলে হয়ে উঠবে এই বিশ্বাসে ডুবতে শুরু করল সবাই। শুধু সংস্থিতার মনের মধ্যে একটা কোকিল কোথায় যেন লুকিয়ে ডেকে উঠল, ‘কু’। পিউয়ের বিয়ে হয়ে গেল অরিন্দমের সঙ্গে। অরিন্দমের মায়ের দেওয়া পাঁচ ভরির নেকলেস আঁট হয়ে রইল পিউয়ের গলায়। ওদের বংশে কার বিয়ের সময় দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই দোহাই দিয়ে অরিন্দমের বাবা-মা শুধু মালা বদল এবং সিঁদুরদানে সীমাবদ্ধ রাখলেন বিয়ের অনুষ্ঠান। সংস্থিতারা তাও মেনে নিল এবং দেখল অরিন্দম কাঠের পুতুলের মতো বসে, যে-পুতুলের কপালে অল্প অল্প ঘাম জমে। ওর পাশে জ্যান্ত পুতুলের মতো বসে রইল ছটফটে পিউ, ভবিষ্যতে কী আছে তার বিন্দুবিসর্গ না জেনে।

ভবিষ্যৎ লাফাতে লাফাতে এল। বিয়ের পর অষ্টমঙ্গলায় এল না অরিন্দম। ঠিক তার দু’দিন পরে একাই চলে এল পিউ। গুম হয়ে থাকল সারাদিন। রাতে কান্নায় ভেঙে পড়ল সংস্থিতার কাছে। কথায় কথায় যা বেরিয়ে এল, তা সাংঘাতিক। অরিন্দম ভয়ংকর আরথ্রাইটিসের রুগি। এমনি সময়ে খাইয়ে দিলে খেতে পারে না। বিয়ের দিন বা তার আগে ওদের বাড়িতে যেটুকু নড়াচড়া করেছে, সবই চারটে-ছ’টা করে ব্রুফেনজাতীয় ওষুধ খেয়ে। সংস্থিতা ক্ষিপ্ত হয়ে জানতে চাইল, তুই জিজ্ঞেস করলি না, ও বিয়ে কেন করল?

করলাম তো, পিউ হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতেই বলল।

কী বলল উত্তরে?

বলল যে, ওরা যেসব পোস্টে কাজ করে সেখানে একটা বউ না থাকলে সোশাল প্রেস্টিজ থাকে না।

সোশাল প্রেস্টিজের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট করল?

ও মানতে চাইছে না রে দিদি! বারবার বলছে যে ও তো বিরাট সুন্দরী কাউকে বিয়ে করেনি। একটা কালো, পড়াশোনায় সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করেছে। জিজ্ঞেস করছে, কী এমন বিরাট বিয়ে হতে পারত আমার? কেরানি কিংবা স্কুল মাস্টার, ম্যাক্সিমাম! সেখানে কী এমন সুখে থাকতাম আমি? এখানে গিজার, এসি, প্লাজমা টিভি, বোতাম টিপলেই সামনে এসে দাঁড়ানো কাজের লোক, বাইরে বেরোতে চাইলেই গাড়ির দরজা খুলে টুপি হাতে নতমস্তকে ড্রাইভার, আর কী চাই!

আর কী চাই, মানে? আসল লোকটা কোথায়? যার সঙ্গে বিয়ে হল, সে কোথায়? একটা পঙ্গুকে গছানোর জন্য এসি, গিজার, গাড়ি যাই দিক, আমরা নেব কেন?

আমরা সাধারণ মধ্যবিত্ত বলে। আমাদের অত ফান্ডা নেই বলে। আমার গায়ের রং কালো বলে…

এবার আমি তোকেই ঠাটিয়ে একটা চড় মারব পিউ! তুই কেন রিপিট করছিস কথাগুলো? তুই বিশ্বাস করিস এসব?

আমি ঠিক বুঝতে পারছি না রে দিদি। ওরা বলছে ওই আরামগুলো দিয়ে নাকি আমাকে কমপেনসেট করা যায়। কারণ আমি খুব আনন্দ করে দুশো টাকা দামের ইমিটেশনের দুল কিনি! আমাকে অনেক সোনার গয়না দিয়েছে জানিস তো দিদি। থেকে গেলে আরও দেবে বলেছে, পিউ কেঁদে ফেলল।

সংস্থিতা কাঁদল না ওর দেখাদেখি। বলল, তুই সুটকেস গুছিয়ে ফিরে এসেছিস তো?

না, মানে বাবা-মা কিছু জানে না। হঠাৎ করে এভাবে ফিরে এলে ওরা একটা প্রচণ্ড শক পাবে, তাই না?

ওসব শক-ফক আমি সামলে নেব। তুই আর ফিরে যাবি না ওই বাড়িতে।

না রে দিদি। আমি পারব না।

কী পারবি না পিউ?

গাদা-গুচ্ছের লোক ফেস করতে। সবাই আসবে, এসে প্রশ্ন করবে, কী হয়েছিল, কেন হয়েছিল, কবে জানলে, কোনও শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল কিনা! তারপর সমবেতভাবে, এমা ছি ছি, ছোট্ট একটা মেয়ের সঙ্গে এরকম কেউ করে, ইত্যাদি। এত জিজ্ঞাসা, সহানুভূতি, সহানুভূতির আড়ালে নোংরা সব ইঙ্গিত, আমি নিতে পারব না রে দিদি! তার চেয়ে ওখানেই থাকি আপাতত। আমাকে অরিন্দম কী বলেছে জানিস তো? বলেছে, তোমার যদি শারীরিক চাহিদা খুব বেশি হয়ে ওঠে, তা হলে আমাকে বোলো। আমি ব্যবস্থা করে দেব।

শয়তানটা এই কথাও বলল? সংস্থিতার মাথা দপদপ করছিল।

হ্যাঁ, ইংরেজিতে বলল। ইংরেজিতে বললেই সব নোংরা কথাগুলো পরিষ্কার শোনায় তো…

তুই চলে আয় পিউ। এটা নিয়ে আর কথা বাড়াস না।

আচ্ছা ঠাকুরের বিগ্রহ সামনে রেখে, ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে, মালা-চন্দন দিয়ে আমার বিয়ে হল। আমি বিয়ের দিন সকালেও জপ করলাম। কোনওদিন বাদ দিইনি। তুই তো জানিস। তোর আর আমার একসঙ্গেই দীক্ষা হয়েছে। তাও আমার কেন এরকম হল বল তো?

আমরা লোভী হয়ে গিয়েছিলাম। অতিরিক্ত লোভী। পাত্র বিলিতি ফার্মে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ওদের বালিগঞ্জে অত বড় বাড়ি, দুটো গাড়ি, ব্যস! তা হলে তো আর কিছু দরকার নেই। কিন্তু আমি বাধা দিয়েছিলাম পিউ। তোর নিশ্চয়ই মনে আছে, আমি বাধা দিয়েছিলাম।

তুই দিয়েছিলি রে, আমিই দিইনি। আমার কেমন যেন মনে হচ্ছিল এটা বোধহয় ঠাকুর এনে দিয়েছেন। ওইরকম একটা বাড়ি, অত কোয়ালিফায়েড একটা ছেলে, ওরা যে আমার সর্বনাশ করতে চায় বলে আমাকে ওই কুঠরির মধ্যে নিয়ে গিয়ে ঢোকাচ্ছে, আমি কী করে বুঝব বল!

তুই না বুঝিস, আমাদের বোঝা উচিত ছিল। ওই ছোটমাসির কথায় সবাই নেচে উঠল। বাবা-মা কেউ একটু ভাবল না৷ লোভ, লোভ! লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।

লোভ নয় রে দিদি, স্বপ্ন! বাবা-মাও বুঝতে পারেনি।

পারেনি তো পারেনি। এখন তো পারবে। তুই ওখানে আর যাস না। আমি কালই অন্তরাকে ফোন করে বলছি, একটা মিউচুয়াল ডিভোর্সের মামলা শুরু করতে।

অন্তরাদি এখন কেমন আছে রে?

ওই একইরকম। তবে একটা কাজে লেগেছে সেইটে ভাল।

ব্যাপারটা হজম করতে পেরেছে একটুও?

পারল আর কোথায়! দশটা কথার ভিতরে পাঁচটা কথা ওই প্রসঙ্গে বলে। কিন্তু বেঁচে থাকার একটা সুবিধের দিক হচ্ছে আমরা যা হজম করতে পারি না, তাও মেনে নিই।

তা হলে আমিও মেনে নিতে পারব বল? একটা তো জীবন, ওই একরকমভাবে কেটে যাবে।

না, জীবন এভাবে কাটে না। তাই কালই তোর মিউচুয়াল ডিভোর্সের কাগজ তৈরি শুরু করতে হবে।

ওরা মিউচুয়াল ডিভোর্স দেবে না। অরিন্দম বলে দিয়েছে। ও আমাকে ওর শো-পিস করে রাখতে বদ্ধপরিকর।

কিন্তু কী লাভ বল তো ওর? ও হারামজাদা তো ঠিকমতো একটা চুমুও খেতে পারবে না তোকে জীবনে।

না-ই বা পারল। কিন্তু লোকে তো জানবে পেরেছে। পুরুষের সাফল্যের একটা ছক আছে। সেই ছক অনুযায়ী যে-পুরুষ একটা মেয়েকে অন্তত নিজের কবজায় আনতে পারেনি, তাকে কেউ সফল বলে মনে করে না। তোর মনে নেই, প্রতুলকাকু আমাদের বাড়িতে সন্ধেবেলা চা খেতে এসে কী বলত?

সংস্থিতা এক মুহূর্ত চোখ বন্ধ করে আবার খুলে বলল, বলত, বিয়ে করিনি বলে কেউ পাত্তা দেয় না।

এগজ্যাক্টলি। অরিন্দমও ওই পাত্তাটা পেতে চায়। একটা লোক যার কোটি টাকা, এতবড় চাকরি, এতগুলো ক্লাবের মেম্বারশিপ, তার যতই শারীরিক খামতি থাক, একটা পোষা কুকুর থাকবে না?

শাট আপ, পিউ! ওর কলিগরা নিশ্চয়ই জানে ও পঙ্গু?

হয়তো জেনেও বিশ্বাস করে যে, ওই লোকটা যা করেছে ঠিকই করেছে, নইলে বউভাতের রিসেপশনে আমাকে কেউ কিছু বলল না তো!

বলুক না বলুক, রাস্তা একটা বের করতেই হবে পিউ। তুই ঘুমো, আমি একটু ভাবি।

কল্লোলদার সঙ্গে তোর এখনও কথা হয় দিদি?

হ্যাঁ মাঝে মাঝে কথা হয়, তবে খুব সামান্যই। হঠাৎ কল্লোলের কথা জিজ্ঞেস করলি কেন?

না, এমনিই। তোর এতদিনের একটা সম্পর্ক ভেঙে গেল, আমার এরকম দুর্দশা হল, আমরা কি অন্যায় করলাম রে দিদি?

কোনও অন্যায়, কোনও পাপ করিনি, তোর এরকম মনে হচ্ছে কেন? জীবনে তো ঝুটঝামেলা থাকবেই, তাই না? কল্লোলের সঙ্গে আমার পোষাচ্ছিল না, আমি সম্পর্কটা ভেঙে বেরিয়ে এসেছি। তোকেও এই নোংরা চক্কর থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। ভাবছি, কীভাবে কী করা যায়।

কিন্তু আমার কপালে যদি বিধাতাপুরুষ এই বিয়েটাই লিখে রেখে থাকেন…

সংস্থিতা পিউকে থামিয়ে দিয়ে বলল, তুই ভাব তুই একজন জনমজুর। সারাদিন মাটি কুপিয়ে একশো টাকা পেয়েছিস। এবার ঘরে ফেরার পথে কেরোসিন তেল আর আটা কিনতে গিয়ে দেখলি টাকাটা জাল। তুই কী করবি? টাকাটা বদলাতে যাবি না?

পিউ কিছু বলল না। আবার কেঁদে ফেলল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *