নিকোলাস নিকলবি – ১৯

উনিশ 

রালফ আর গ্রাইড শীঘ্রিই পৌঁছে গেল ব্রের বাড়িতে। অসুস্থ ভদ্রলোক একাই বসে ছিলেন, তাঁকে জানিয়ে দেয়া হলো আগমনের উদ্দেশ্য। সব শুনে ব্রে বললেন, ‘আমার ম্যাডেলিন সোনার টুকরো মেয়ে। যে কেউ ওকে পেলে বর্তে যাবে!’ 

‘সেজন্যেই,’ সুযোগ বুঝে বললেন রালফ, ‘মিস্টার গ্রাইডের মত হীরের টুকরোকে নিয়ে এসেছি। একেবারে সোনায় সোহাগা। ম্যাডেলিনের টাকা নেই, আর গ্রাইড সাহেবের নেই বিয়ের বয়স- সুখী দম্পতি।’ 

‘আমি আর কি বলব?’ বললেন ব্রে। ‘মেয়েই সিদ্ধান্ত নেবে।‘ 

‘তা ঠিক, কিন্তু আপনি তো তাকে রাজি করাতে পারেন,’ বললেন রালফ। ‘আরামেও থাকতে পারবেন, দেনাও শোধবোধ হয়ে যাবে। যেভাবে পারেন মেয়েকে মানিয়ে ফেলুন। একটু-আধটু হয়তো কান্নাকাটি করবে–’ 

‘শ!’ বলে উঠলেন ব্রে। ‘আসছে বোধহয়!’ 

‘কবে জানাচ্ছেন?’ দ্রুত জিজ্ঞেস করলেন রালফ। 

‘এই এক সপ্তাহ। একটা সপ্তাহ সময় দিন,’ বললেন ব্রে। রালফ আর গ্রাইড বেরিয়ে পড়ল। 

.

রালফদের ষড়যন্ত্র জেনে ফেলার পর নগস সেটা নিকোলাসের কানে তুলল।

‘মেয়েটা যে কে তা বুঝতে পারলাম না,’ সব শেষে বলল নগস।

‘নাম কি?’ প্রশ্ন করল নিকোলাস। 

‘ম্যাডেলিন,‘ বলল নগস। ‘ম্যাডেলিন ব্রে। আর যে লোক ওকে বিয়ে করতে চায় সে শয়তানের হাড্ডি, তোমার চাচারও বাড়া!’ 

‘ম্যাডেলিন!’ আঁতকে উঠল নিকোলাস। ‘আমি যে ওকে ভালবাসি!’ 

‘বলো কি,’ নগসের অবাক হবার পালা। ‘তোমার চাচা তো এক সুদখোর বুড়োর সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক করছেন। আমাদের উচিত মেয়েটাকে বাঁচানো।‘ 

‘দরকার হলে জান দিয়ে দেব,’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল নিকোলাস। ‘ওর বাবার কাছে যাব- না, তারচেয়ে রালফের কাছেই যাই।’ 

‘উনি এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাছাড়া, তোমার কথায় কান দেবেন না,’ বলল নগস। ‘আমাদের বরং চিয়ারিবলদের কাছে যাওয়া উচিত।’

‘ওঁরা দু’জনেই ব্যবসার কাজে বাইরে গেছেন,’ হতাশ কণ্ঠে বলল নিকোলাস। ‘কিন্তু সেটা তো কথা নয়। বাবার চাপে মেয়ে রাজি হয়ে গেলে আমার কি করার আছে!’

‘হাল ছাড়ছ কেন!’ বলল নগস। ‘ভেবে রাস্তা বার করো।‘ 

‘একটাই উপায় আছে, বলল নিকোলাস। ‘ম্যাডেলিনের সঙ্গে দেখা করব- অনুরোধ করব রাজি না হতে। অন্ততপক্ষে বিয়েটা কিছুদিন ঠেকিয়ে রাখুক। কাল আপনার সঙ্গে কথা হবে- এখন বাড়ি গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় একটু চিন্তা ভাবনা করব।‘ 

ঘুরেই রওনা দিল ও। 

.

পরদিন সকালে কেটকে নিয়ে ব্রের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলো নিকোলাস। খানিক পরেই রালফ আর গ্রাইডকেও আসতে দেখে দু’জনে পথ রুখে দাঁড়াল। 

‘অ্যাই, এখানে কি?’ গর্জালেন রালফ। ‘সামনে থেকে সরো, চোর কোথাকার!’ 

‘আপনাদের কবল থেকে ম্যাডেলিনকে বাঁচাতে এসেছি,’ নিচু স্বরে বলল নিকোলাস। ‘ও চাইলৈ সঙ্গে করে নিয়ে যাব।’ 

‘ও, তলে তলে এত?’ ঠেলে সরিয়ে জায়গা করে নিতে চাইলেন রালফ। ‘গ্রাইড, ব্রেকে ডাকুন, দেখি সে কি বলে।’ 

‘যেখানে আছেন থাকুন।‘ বলল নিকোলাস। ‘সামনে আসার চেষ্টা করবেন না’। 

দ্বিধা করছে গ্রাইড। রালফ কেটকে পাশ কাটিয়ে ঢুকতে চাইলেন, মেয়েটিকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে সরিয়ে। তাঁর কলার চেপে ধরণ নিকোলাস। 

ঠিক সেই মুহূর্তে ওপর থেকে একটা তীক্ষ্ণ আর্তনাদ এবং ভারী কিছু পতনের শব্দ শোনা গেল। ওরা সবাই হতবাক। পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। সংবিৎ ফিরে পেয়ে শব্দ লক্ষ্য করে সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ল নিকোলাস। বেডরুমের দরজার সামনের জটলাটা ঠেলে পথ করে নিল। মেঝেতে পড়ে রয়েছেন মিস্টার ব্রে, মৃত। আর তাঁর পাশে শুয়ে আছে অচেতন ম্যাডেলিন। 

‘কিভাবে হলো?’ গলা চড়িয়ে জানতে চাইল নিকোলাস 

‘চেয়ার থেকে পড়ে মরেছেন,’ অনেকগুলো কণ্ঠ জানাল। 

‘এ বাড়ির মালিক কে?’ ম্যাডেলিনের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞেস করল নিকোলাস। লোকজন এক বৃদ্ধাকে দেখিয়ে দিলে তাঁকে বলল, ‘আমি এই মেয়েটির বন্ধুদের তরফ থেকে এসেছি। এই যে, আমার নাম-ঠিকানা। আমার বোন নিচে আছে, একে ও-ই সেবা শুশ্রূষা করবে। আর লাশ দাফনের ব্যবস্থা আমিই করব।’ 

অজ্ঞান মেয়েটিকে পাঁজাকোলা করে নেমে এল নিকোলাস, কোচ অপেক্ষা করছিল। ম্যাডেলিনকে কেটের দায়িত্বে বুঝিয়ে দিয়ে ফিরে এল রালফ আর গ্রাইডের কাছে। লোক দু’জন এই আকস্মিক বিপর্যয়ে হতভম্ব হয়ে গেছে। 

‘আপনাদের সব চালাকি বানচাল হয়ে গেছে,’ বলল ও।

‘তুমি এর বউকে কোথায় রেখে এলে?’ প্রশ্ন করলেন রালফ। 

‘এর বউ মানে?’ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ল নিকোলাস। ‘বিয়ে হয়েছে? আমর মালিকরা এই মেয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাঁদের পক্ষ হয়ে মেয়েটাকে নিয়ে যাচ্ছি আমরা।’

‘তোমার ওপর অভিশাপ পড়ুক, বদমাশ ছোকরা।’ বললেন চাচা।

তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করল নিকোলাস। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *