নিকোলাস নিকলবি – ১০

দশ

এক সকালে নিচে মিস লা ক্রিভির ঘরে’ নেমে এল কেট। ওর পোর্ট্রেট আঁকা হচ্ছে, চেয়ারে স্থির বসে রইল ও।

‘মিলটা আসতে শুরু করেছে,’ আঁকার ফাঁকে বলল লা ক্রিভি। ‘এটাই হবে আমার জীবনের সেরা পোর্ট্রেট।

কেট মৃদু হাসল, ‘আপনার হাতে জাদু আছে, আমি জানি।’

‘আরে না,’ বলল লা ক্রিভি। ‘সাবজেক্টটাই আসলে দারুণ বেছেছি।’

সকালটা কেটে যাচ্ছিল হাসি-আনন্দে, গল্পগুজবে, কিন্তু বাগড়া দিলেন রালফ নিকলবি। আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তিনি।

ওপরতলায় বসে ভদ্রলোক যে খবরগুলো দিলেন তাতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলো। ম্যাডাম ম্যানটালিনির দর্জির দোকানে কেটের জন্যে চাকরি ঠিক করেছেন। স্পষ্ট বলে দিলেন, কেটের শীঘ্রি কাজ আরম্ভ করা উচিত এবং খুশি মনে। রাজি হতেই হলো কেট আর তার মাকে।

‘সকাল ন’টা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত ডিউটি’ বললেন চাচা। ‘খাবার ওরাই দেবে, আর বেতন সপ্তাহে ছ’ শিলিং।’

‘রাত ন’টা পর্যন্ত মা একা থাকবে!’ বলল কেট।

‘তাতে কি? ন’টার পর তো ফিরেই আসছ।’

‘ঠিক আছে, করব,’ বলল কেট। ডেভনশায়ার ফার্মে জীবন কত মধুর ছিল! কে জানে কর্মজীবন কেমন লাগবে। দু’চোখ ভরে পানি এল ওর।

‘কেঁদো না তো,’ ভ্রূ কুঁচকে বললেন রালফ। কান্নাকাটি অসহ্য লাগে!’

দ্রুত চোখ মুছে নিল কেট।

‘তোর চাচা আমাদের কত উপকার করছেন! মনে রাখিস, মা, সুখের দিন শেষ। এখন কাজ করার সময়।’

‘জানি, মা,’ বলল কেট।

‘শহরের পুব দিকে,’ বললেন রালফ, ‘আমার একটা বাড়ি খালি পড়ে আছে। শনিবার এবাড়ি ছেড়ে ওখানে চলে যাবেন আপনারা। বিকেল পাঁচটায় আমার কেরানীকে পাঠাব আপনাদের নিয়ে যেতে।’

ভদ্রলোক চলে গেলে জীবনের নতুন মোড়গুলো সম্বন্ধে আলোচনা করল মা- মেয়ে। মিস লা ক্রিভি ওদের বিদায়ের খবর শুনে মুষড়ে পড়ল।

শনিবার দিন কাঁটায় কাঁটায় পাঁচটায় হাজির হয়ে গেল নিউম্যান নগস। একটু পরেই নতুন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করল ওরা।

বাড়িটা টেমস স্ট্রীটে, নদীর প্রায় লাগোয়া। নগস দরজা খুললে রাজ্যের ধুলো-ময়লা আর ঝুল দেখা গেল জানালাগুলোয়। বোঝা যায়, বহু বছর কেউ বাস করেনি এখানে।

‘কী বিশ্রি অন্ধকার বাড়ি,’ ভেতরে ঢুকে বলল কেট। ‘না জানি কত দুষ্কর্ম হয়েছে এখানে— সে জন্যেই এমন ঘুটঘুটে আঁধার!’

‘তোর যত আজগুবি চিন্তা,’ বললেন ওর মা। নগসের পেছন পেছন দোতলায় উঠে এলেন।

গুটি কয়েক আসবাবপত্র দেখা গেল। শেলফে খানিকটা দুধ আর চা-ও আছে।

‘দেখেছিস,’ বললেন মা, ‘তোর চাচার সবদিকে কত খেয়াল?’

‘হ্যাঁ, চাচার সত্যিই কোন তুলনা হয় না,’ বলল, কেট। চোখ বুলিয়ে পুরানো চেয়ার-টেবিল আর সিঙ্গল খাটটা দেখে নিল।

ওরা জানে না, চাচা নয়, নিউম্যান নগস এসবের ব্যবস্থা করেছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *