নিকোলাস নিকলবি – ১৭

সতেরো 

মিস্টার স্কুয়্যারস সারাসিনে আরও ক’দিন থেকে যাবেন ঠিক করলেন। রালফ নিকলবির সঙ্গে আলোচনায় বসলেন তিনি, নিকোলাসের ওপর প্রতিশোধ নিয়ে কিভাবে স্মাইককে পুনরুদ্ধার করবেন সে ব্যাপারে। শীঘ্রিই নতুন ফন্দি এঁটে ফেললেন ওঁরা। 

ওদিকে, নিকোলাসদের বাড়িতে বসেছে রসাল আড্ডা। সস্ত্রীক এসেছেন ব্রাউডি। তাছাড়া স্মাইক, কেট, নিকোলাস এবং তার মা তো আছেনই। রাত ঘনালে জোরে টোকা পড়ল দরজায়। 

‘এত রাতে কে এল?’ বিরক্ত নিকোলাস দেখতে গেল। রালফ নিকলবি! তাকে দেখে কেটের পেছনে আড়াল নিল স্মাইক। রালফ নিকোলাসের চাচা–অনুমান করে চাচা-ভাতিজার মধ্যখানে এসে দাঁড়ালেন ব্রাউডি।

‘আমার কিছু কথা ছিল,’ বললেন রালফ। 

‘কি বলবেন বলুন,’ বললেন ব্রাউডি। ‘তবে দেখবেন, আমার মেজাজ গরম করে দেবেন না যেন!’

‘কথাবার্তার ধরনেই বুঝতে পারছি আপনি মিস্টার ব্রাউডি,’ বললেন রালফ। ‘হাজার হলেও ইয়র্কশায়ারের গলা।’ 

‘ওই লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না,’ ব্লাউডিকে বলল নিকোলাস। লোকটার অন্তরে শুধু পাপ আর ঘৃণা। 

‘আরে, মাস্টার সাহেব,’ একজনকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন ব্রাউডি। ‘আপনি বাইরে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে আসতে লজ্জা হচ্ছে বুঝি?’ 

অগত্যা ঘরে ঢুকলেন স্কুয়্যারস, পেছনে স্নলি। 

‘আমরা এসেছি বাপ-ছেলের মিলমিশ করাতে,’ ক্রুর হেসে বললেন রালফ। ‘মানে ওই স্মাইকের কথা বলছি আরকি।’ 

‘কি যা-তা বলছেন!’ গর্জে উঠল নিকোলাস। 

‘এই যে, ইনি হচ্ছেন স্মাইকের বাবা,’ স্ললিকে দেখিয়ে বললেন স্কুয়্যারস।

 ‘ফাজলামির আর জায়গা পাননি?’ স্কুয়্যারসকে বলল নিকোলাস। আবার মার খাওয়ার শখ হয়েছে?’ অমনি দু’পা হটে গেলেন স্কুলশিক্ষক। 

‘কেমন আছিস রে, বাপ! ইস, তুই যে বেঁচে আছিস আমি ঘুণাক্ষরেও জানতাম না রে!’ স্মাইকের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন স্নলি। চাপ পড়তে হাঁসফাঁস করতে লাগল বেচারা। 

নিকোলাস স্নলি, স্কুয়্যারস এবং রালফের দিকে বারবার তাকাচ্ছে। বিচলিত বোধ করছে। এক ফাঁকে ঝটকা মেরে মলির হাত ছাড়িয়ে নিকোলাসের কাছে দৌড়ে এল স্মাইক। ‘আমাকে যেতে দেবেন না, দোহাই লাগে,’ মিনতি ঝরছে ছেলেটির কণ্ঠে।

‘বাবাই যদি হবেন তো ছেলের এই হাল কেন? ওই জঘনা স্কুলে ছেলেকে পাঠায় কেউ?’ প্রশ্ন করল নিকোলাস। 

‘অ্যাই, ছোকরা, মুখ সামলে কথা বলবে,’ চেতে উঠলেন স্কুয়্যারস। ‘জঘন্য – স্কুল মানে?’ 

‘থামুন!’ ধমক দিলেন রালফ। পুরো ব্যাপারটা খোলসা করা দরকার। মিস্টার মলি প্রমাণ করতে পারবেন, স্মাইক তাঁরই ছেলে। মিস্টার স্কুয়্যারস, এই ছেলেটিকেই তো আপনার স্কুলে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল?’ 

‘হ্যাঁ, এটাকেই,’ জবাবে বললেন স্কুয়্যারস।

‘বেশ’ বললেন রালফ। ‘এবার সব শোনা যাক। মিস্টার স্নলি, আপনার প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে হয়েছিল?’ 

‘হ্যাঁ।’ 

বলে চলেছেন রালফ, ‘স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছিল, তাই তো? ছেলেকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন উনি। পরে জানিয়েছেন, ছেলেটা মারা গেছে- আপনিও বিশ্বাস করেছেন?’ 

‘নিশ্চয়।’ 

‘ভদ্রমহিলা মারা যাওয়ার আগে চিঠিতে স্বীকার করেছেন ছেলে মারা যায়নি – ওকে একটা স্কুলে পাঠিয়েছেন উনি?’ বলছেন রালফ। 

‘ঠিক তাই,‘ বললেন স্নলি, ‘চিঠিটা মাত্র ক’দিন আগে হাতে পেয়েছি।‘ 

গল্প ফুরালে উপযুক্ত প্রমাণও দেখানো হলো। ভাতিজার দিকে চেয়ে বক্র হাসছেন রালফ। আত্মতৃপ্ত। নিকোলাস আর জন ব্ৰাউডি, দু’জন মিলে পরীক্ষা করেও কাগজপত্রের কোন খুঁত বার করতে পারল না। 

‘নিকোলাস,‘ ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল কেট, ‘কথাগুলো কি সত্যি?’

‘তাই তো মনে হচ্ছে রে,’ বলল নিকোলাস। 

কিন্তু স্মাইক কারও কথা শুনবে না। আমি ওদের সঙ্গে যাব না, ‘আপনাদের ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।’ কাঁদতে কাঁদতে বলছে। স্কুয়্যারস হাত ধরে টানতে লাগলেন ওকে। বাধ্য হয়ে তাঁকে কলার ধরে হিড়হিড় করে বারান্দায় টেনে নিয়ে গেল নিকোলাস। মুখের ওপর বন্ধ করে দিল দরজা। 

‘প্লীজ, আপনারাও আসুন,’ স্কুয়্যারসের সঙ্গীদের বলল ও।

‘ছেলেকে না নিয়ে যাব না,’ বললেন স্নলি। 

‘সেটা ছেলেই ঠিক করবে,’ কঠোর কণ্ঠে জানাল নিকোলাস। ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওকে নিয়ে যেতে পারবেন না। ও যদি এখানে থাকতে চায়, থাকবে।’ 

ভীত ছেলেটির দিকে তাকালেন স্নলি। ‘অকৃতজ্ঞ ছেলে। বাপের ভালবাসা চাস না, না? চল, বাড়ি চল।’ 

‘না, না, না!’ নিকোলাসকে জড়িয়ে ধরে চেঁচাতে লাগল স্মাইক। 

মিস্টার স্নলি বুঝলেন হেরে গেছেন। ধীর পায়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। নিকোলাসদের দু’কথা শুনিয়ে দিয়ে রালফ তাঁকে অনুসরণ করলেন।

ওঁরা চলে গেলে কেট জিজ্ঞেস করল, ‘স্মাইককে ধরে নিয়ে যেতে অত অস্থির কেন লোকগুলো?’ 

‘বিনে পয়সায় অমন কাজের লোক পাবে আর?’ পাল্টা প্রশ্নে জবাব দিল নিকোলাস। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *