কালের কালো পাথর
এই ঘটনার পটভূমি কলকাতা থেকে অনেক দূরে মধ্যপ্রদেশের এক খোলামেলা গ্রাম। এই অঞ্চলের লোকজন খুবই শান্তিপ্রিয়। বেশির ভাগই চাষবাস বা কোষা রেশমের কাজ করে। কেউ কেউ দূরে খনিতে বা কারখানায় কাজ করতে যায়। এখন শীত শেষ হয়ে বসন্ত পড়বে-পড়বে করছে। এখানে এই সময়টা বেশ আরামপ্রদ। তবে গ্রামটির কাছে এমন কোনও বিখ্যাত দ্রষ্টব্যস্থান নেই বা আশপাশে কোনও অফিস-কারখানাও নেই যে, বাইরের লোক এখানে এসে বাড়ি করে বা বাড়ি ভাড়া করে থাকবে। সবাই স্থানীয় অধিবাসী।
তাই এহেন জায়গায় কয়েকদিন আগে এক বৃদ্ধ বাঙালি ডাক্তারের আগমন সে অঞ্চলের লোকদের কৌতূহল বাড়িয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। হঠাৎ একদিন একটা স্যুটকেস হাতে বাস থেকে নেমে বৃদ্ধ সরাসরি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের মাস্টার ভিনসেন্ট টিগার বাড়ি এসে হাজির। বললেন, ভিনসেন্টের বাড়ির মতন একটা ছোট্ট বাড়ি ভাড়া নিয়ে মাসখানেক থাকতে চান এখানে। একটা ঘর হলেও হবে, তবে সেটা সম্পূর্ণ আলাদা হওয়া চাই। তিনি কিছু দিন বিশ্রাম নিয়ে ছুটি কাটানোর জন্যে এই নিরালা জায়গায় এসেছেন। কাজেই একেবারে একা থাকতে চান। একটু দূরে একটা ধাবা আছে দেখেছেন, সেখানেই দু-বেলা খেয়ে নেবেন।
ভিনসেন্টের বাড়ির বাইরে একটা আলাদা খালি ঘর ছিল। বাগান-ঘেরা এই ঘরটিই সে সানন্দে বাঙালি ডাক্তারকে দিল। একে এখানে এই প্রথম একজন বাড়ি ভাড়া নিতে চাইছে, তার ওপর সে আবার কলকাতার এক বাঙালি ডাক্তার–এটা গ্রামের মধ্যে তার মর্যাদা কতখানি বাড়িয়ে দেবে, এটা ভেবেই ভিনসেন্ট খুশি। বৃদ্ধ যে বাঙালি, সে কথা তো তিনি নিজেই বলেছেন। তবে তিনি যে ডাক্তার, সেটা অবশ্য ভিনসেন্টের আবিষ্কার। টেবিলের ওপর ইংরেজিতে ছাপানো ওষুধ লেখার কাগজ ভিনসেন্টের নজরে পড়েছে, যখন সে মটকাতে জল ভরে রাখতে গিয়েছিল। তখনই দেখেছে, নামের আগে ডাক্তার শব্দটাও ছাপা আছে।
বুড়ো ডাক্তার একাই ছিলেন বেশ কিছু দিন। হঠাৎ আরেকজন কমবয়সি বাঙালি লোকও হাজির হয়েছে গতকাল। এসে অবধি দু-জনের তর্কই শুনছে ভিনসেন্ট। বাংলা না বুঝলেও তাদের কথার ঢঙেই সেটা সে বুঝতে পারে। আগামীকালই নাকি ছেলেটা চলে যাবে। যাওয়ার আগে অমরকন্টক ঘুরে যাবে বলছিল। বৃদ্ধ অবশ্য দূরে কোথাও যান না। মাঝে মাঝে বাগানে বা মাঠে বসে থাকেন একা একা।
সকালেও দু-জনের তর্ক শোনা যাচ্ছিল ঘর থেকে। তরুণ বলছিল, আপনি যেরকম পরিবেশ চেয়েছিলেন, এখানে তো সেসব কিছুই নেই। পুকুর কেন, একটা ডোবাও তো দেখছি না আশপাশে। তা ছাড়া এখন ব্যাং-ডাকা বর্ষাকালও নয়।
বৃদ্ধ হেসে বললেন, সে জন্যে আমি হুঁকো তামাক আর পাঁচালিও আনিনি। তবে পৃথিবীর নানা দেশের শিশুদের মতন প্রকৃতির ভেতরের সৌন্দর্যও এক। হোক-না একটা সমতল বঙ্গের কাশফুলে ভরা মাঠ আর অন্যটা মধ্যপ্রদেশের প্রস্তরময় লালমাটির প্রান্তর। দেখার চোখটাই আসল।
তরুণ হেসে বলল, তাহলে রমেশ বেরি ঠিকই বলেছিলেন। বঙ্গালি লোগ বিজ্ঞানী হেবে, খিলাড়ি হোবে, বেওসাদার হবে, ফির কবি ভি হোবে। আপনাকে দেখে…
তার কথা শেষ হল না। দরজায় করাঘাতের সঙ্গে একটা আর্ত কণ্ঠস্বর শুনে দু-জনেই চমকে উঠলেন, ডাকদার সাব! ডাকদার সাব!
বৃদ্ধ উঠে দরজা খুলতেই দেখলেন, একজন লোক একটি ছোট ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে। লোকটার চোখে ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠেছে। ছেলেটিও ভীত। লোকটা ছেলেটির ডান হাত তুলে ধরতেই বৃদ্ধ দেখলেন তার হাতের কয়েকটি আঙুল কাটা। কাটা বললে ভুল হবে, কাঠের কিছুটা পুড়ে গেলে যেমন কয়লা হয়ে সেই অংশটা খসে পড়ে, এর আঙুলগুলোও যেন সেভাবে ভেঙে গিয়েছে।
বৃদ্ধ বুঝতে পারলেন, লোকটি তাঁকে ডাক্তার ভেবে ভুল করেছে। কিন্তু লোকটিকে সে কথা বলে চলে যেতে বলতে তাঁর বিবেকে বাধল। তা ছাড়া এসব অঙ্গহানি তো অনায়াসেই সারিয়ে তোলা যায় এখন কৃত্রিম সংযোজন করে। তিনি জানেন, এই একবিংশ শতাব্দীতেও গ্রাম অঞ্চলে এখনও অনেকে কুষ্ঠের চিকিৎসা করায় না। অনেকে আজও এই রোগকে পূর্বজন্মের পাপের ফল বা অভিশাপ বলে মনে করে।
লোকটি তাঁর মনের কথাই যেন বলে ফেলল হিন্দিতে, আমার ছেলের ওপর দেবতার অভিশাপ লেগেছে, ডাক্তারবাবু!
বৃদ্ধ হতাশ দৃষ্টিতে সঙ্গী তরুণের দিকে তাকালেন। যেন মনে মনে বললেন, তোমার দলের লোক এখনও দেশে অনেক আছে। এই একবিংশ শতকের বাঙালি তরুণটিও পূর্বজন্ম, ভূতপ্রেত, অলৌকিক তত্ত্ব–এসবে বিশ্বাসী। সুযোগ পেলেই বৃদ্ধের বিরক্তি জাগিয়ে সেগুলো যুক্তি দিয়ে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করে। বৃদ্ধ অবশ্য তখন মন দিয়ে শোনার ভান করে দু-কানে হাত রেখে চোখ বুজে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকেন।
যা-ই হোক, লোকটিকে বসতে বলে বৃদ্ধ তাকে তার ছেলের রোগের কথা বলতে বললেন। লোকটি যা বলে গেল, তা শুনে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। তরুণ তাঁর দিকে চেয়ে হাসল। যেন বলতে চাইল, দেখলেন তো, অঘটন আজও ঘটে।
লোকটি হিন্দিতে যা বলল, তা হল–তার নাম অজিত দেবাঙ্গন। এখানেই কাঠগোড়ার কাছে তার বাড়ি। সে চাষবাস করে। আজ সকালেও সে জমিতে কাজ করছিল। তার জমির পাশেই একটা প্রায় শুকিয়ে-যাওয়া নালা আছে। চারপাশে ছড়িয়ে আছে বিরাট আকারের কালো গোল পাথর। যখন বাবা জমিতে কাজ করে, ছেলেটা তখন মাঝে মাঝে এখানে একাই খেলা করে। আজ সকালেও সেখানে ছিল। হঠাৎ সে চিৎকার করে কেঁদে উঠতেই লোকটা ছুটে গিয়ে দ্যাখে, ছেলেটার হাতের কয়েকটা আঙুল আমসির মতো হয়ে গিয়েছে। ধরতেই পোড়া কাঠের মতো ভেঙে গেল। ছেলের কাছে শুনল–বড় পাথরগুলোর পাশে একটা ছোট্ট বলের মতন মিশমিশে কালো পাথর পড়ে ছিল। সেটা ধরে তুলতে গিয়েই ছেলের এই দশা। ওই পাথরটা নিঃসন্দেহে দেবতা। ছেলেটা তাকে ছুঁতেই দেবতা রেগে গিয়েছেন। এবার তার সর্বনাশ হবে।
অনেক বুঝিয়ে বৃদ্ধ তাকে শান্ত করলেন। বললেন, ছেলের আঙুল ভালো করে দেওয়ার দায়িত্ব তিনি নিচ্ছেন। তারপর তরুণের দিকে চেয়ে বললেন, চলো, একবার দুর্বাসা পাথরকে দেখেই আসি।
তরুণ হেসে বলল, আপনার বাক্সটা তাহলে সঙ্গে নিই, ডাক্তারবাবু?
বৃদ্ধ হেসে ফেলে সায় দিলেন। এই ডাক্তারি বাক্সটা আসলে একটা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির বাক্স ছাড়া কিছুই নয়। এটা বৃদ্ধের খুব ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি ছাড়া কেউ জানে না। এতে বেশ কয়েকটি যন্ত্র আছে। যেমন, বয়সনির্ধারক যন্ত্র। কোটি কোটি বছরের প্রাচীন কফিন বা প্রস্তরপিণ্ড থেকে মাত্র পঞ্চাশ বছরের পুরোনো দলিলের কাগজ–সব কিছুর বয়সই এতে ধরা পড়ে। আছে ছোট আকারের এসপিএ, বৃদ্ধের আবিষ্কৃত পলিউশন অ্যাবজর্ভার। দরকারমতো চালু করে দিলে চারপাশের এক হাজার বর্গমিটার বাতাস পলকে দূষণমুক্ত হয়ে যাবে। তারপর আছে মবস্যাটেল (Mobsatel)। আগেকার দিনের ইনমারস্যাটের উন্নত রূপ। ব্রিফকেস খুলেই পৃথিবী বা চাঁদের যে-কোনও জায়গায় টেলিফোন, ফ্যাক্স বা অন্য ধরনের বার্তা পাঠাতে পারবেন।
ঘটনাস্থলে এসে সত্যিই অবাক হলেন বৃদ্ধ। একটা লাঠি দিয়ে পাথরটাকে ছুঁয়ে দেখলেন, যতটা বড় মনে হচ্ছে, পাথরটা তার চাইতে অনেক ছোট। একটা কালো জ্যোতি বা ধোঁয়ার আবরণ যেন ওটাকে ঘিরে রয়েছে। তাঁর বাক্স থেকে বিশেষ ধরনের তাপমান যন্ত্র বার করলেন তিনি। পাথরটিতে সেটা লাগাতেই অস্ফুট বিস্ময়ের শব্দ বেরোল তাঁর মুখ থেকে। তরুণও অবাক হয়ে দেখল পাথরটির তাপমাত্রা। শূন্যের চাইতে পাঁচশো ডিগ্রি নীচে। এই পাথরে হাত দিলে যে আঙুলের রক্তমাংস জমাট বেঁধে যাবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক।
বৃদ্ধ তরুণের দিকে চেয়ে বললেন, শূন্যের পৌনে তিনশো ডিগ্রি নীচে বাতাস জমে জল হয়ে যায়। এখানে বাতাসের বরফের আবরণ আছে পাথরটাকে ঘিরে। পাথরটির আসল আকার হয়তো একটা মটরদানার মতন। কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ করেছ? পাথরটার চারপাশে কিছুটা জায়গা কালো অন্ধকার হয়ে আছে। এটা কিন্তু বড় পাথরের ছায়া নয়। সূর্য তো উলটোদিকে। এর কারণ এই শীতল পাথর আলোও শুষে নেয়। অর্থাৎ, এককথায় এই ছোট পাথর একটা উলটো সূর্যের কণা। সূর্য আলো দেয়, উত্তাপ দেয়। আর এই দুর্বাসা শালগ্রাম শিলা আলো টেনে নিয়ে আঁধার দেয়। আর উত্তাপ তো দেখলেই। দাঁড়াও, এবার বয়সটা দেখি।
বৃদ্ধ তাঁর ছোট বয়সনির্ধারক যন্ত্র বার করলেন। তাঁর মনে পড়ল, অনেকদিন আগে এরকমই এক প্রস্তরদেবতার বয়স নির্ধারণ করতে এই যন্ত্র বার করেছিলেন। সে দিন তাঁর সঙ্গে ছিল আরেক তরুণ।
বয়সনির্ধারক যন্ত্রটা পাথরে স্পর্শ করে তিনি সংখ্যাটা পড়তে ঝুঁকলেন। তারপরেই তিনি বিস্ময়ে প্রায় চিৎকার করে উঠলেন। তাঁর মুখ দিয়ে এরকম শব্দ তরুণ এই প্রথম শুনল–হা ঈশ্বর! এ-ও সম্ভব!
তরুণ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতে বৃদ্ধ একটু ধাতস্থ হয়ে বললেন, আমার যন্ত্রকে সামনের দিকে তাকানোর ব্যবস্থা করেছিলাম, সেটা শুধু নিয়ম রক্ষা করতে। মানুষের জ্বর মাপার থার্মোমিটারের ওপরের তাপমাত্রা যদি দু-শো ডিগ্রি সেলসিয়াস করা হয়, তা-ই বলে সত্যিই কি কারও জ্বর অত হবে? থার্মোমিটার আমার ইচ্ছেমতো করতে পারি, তা-ই না গৌতম!
তরুণ অর্থাৎ গৌতমকে হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বৃদ্ধ বললেন, এই পাথরটার বয়স কত হতে পারে, বলো তো গৌতম?
গৌতম বলল, হয়তো কোটি পরার্ধ বছর আগের হবে।
বৃদ্ধ হেসে বললেন, আমি যদি তোমাকে জিজ্ঞেস করি, তোমার নাতির ছেলেটা কত বড় হল, তুমি কী উত্তর দেবে, গৌতম?
গৌতম হেসে উঠল এরকম প্রশ্নে।
বৃদ্ধ বললেন, হেসো না গৌতম। তোমার সহস্রতম নাতি-নাতনির চাইতেও এই পাথরের বয়স কম। আমার যন্ত্রে এর বয়স প্লাস কয়েক কোটি। অর্থাৎ কয়েক কোটি বছর পরে পাথরটার সৃষ্টি হবে।
গৌতম অবাক হয়ে বলল, কী বলছেন আপনি? তবে এটা যে এখন…
তার কথা শেষ হল না। সূর্য মাথার ওপর উঠতে-না উঠতেই ঠিক কুয়াশার মতন কালো জ্যোতিটা মিলিয়ে যেতে লাগল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাথরটা অদৃশ্য হয়ে গেল। তার জায়গার ছায়াছবির মতো ফুটে উঠল একটা ফুলে ভরা ঢোলকলমির গাছ।
অজিত দেবাঙ্গন চেঁচিয়ে উঠল, ডাকদার সাব! তারপরেই কেঁদে ফেলল।
বৃদ্ধ তরুণকে উদ্দেশ করে বললেন, মহাকালের প্রবাহের খেলায় একটা ছোট্ট গোলমাল হয়ে গিয়েছিল। যেন সিনেমার পরের রিলটা আগে চলে এসে আগের রিলের ছবির ওপর পড়েছিল। এখানে বড় কিছু ঘটনা হয়নি, শুধু পঁচিশ বর্গসেন্টিমিটার জায়গায় সেটা হয়েছিল কয়েক ঘণ্টার জন্যে।
তারপর অজিত দেবাঙ্গনের পিঠে হাত রেখে বৃদ্ধ বললেন, তুমি আর তোমার ছেলে অনেক সৌভাগ্যবান, অজিত। তোমরা মহাকালদেবের দর্শন পেয়েছ। তোমার ছেলে তাকে স্পর্শ করেছে। তবে এ কথা কাউকে বোলো না। নাস্তিক লোকে বিশ্বাস করবে না, পাগল ভাববে। ওই দ্যাখো, তোমার ছেলের অভিশাপও চলে গিয়েছে।
সত্যিই সকলে অবাক হয়ে দেখল, ছোট ছেলেটির হাত সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আঙুলে একটা আঁচড়ের দাগও দেখা যাচ্ছে না।
বৃদ্ধ আবার লোকটাকে বললেন, সব কিছু ভুলে যাও, অজিত। তোমার ছেলে পড়ালেখা শিখে যে দিন বড় হবে, তখন বুঝবে, এই পাথর আসলে মহাকালের বিগ্রহ ছিল।
ঘরে ফিরতে ফিরতে গৌতম বলল, আপনি কলকাতার আলোর অভিশাপ থেকে পালিয়ে এসেছেন, তাই অন্ধকারের অভিশাপ আপনাকে তাড়া করেছে এখানে।
বৃদ্ধ আনমনে চলতে চলতে বললেন, কিন্তু আমি যে মাঝখানে থাকতে চাই, গৌতম। এখন আমার সেই অবস্থা।.. দিনের আলো যার ফুরাল, সাঁঝের আলো জ্বলল না–
গৌতমকে অবাক করে দিয়ে এই নির্জন প্রান্তরে ভরাট গলায় গেয়ে উঠলেন বিশ্বের দিকপাল বিজ্ঞানী ডক্টর সাত্যকি সোম।
[শুকতারা, শারদীয়া ১৪০১]