কলকাতার আড্ডা ও মেয়ে মজলিস
অভিধানে দেখি ‘আড্ডা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে কোন মিলনস্থল যেখানে কিছু লোক দলবদ্ধ হয়ে গল্পগুজব ও রঙ্গ-তামাশা করে কালক্ষেপ করে। সেদিক থেকে কলকাতা বরাবরই আড্ডাবাজ শহর। শহরের প্রতিষ্ঠাতা জোব চার্নকই ছিলেন প্রথম আড্ডাবাজ ব্যক্তি। প্রত্যহ নিমতলা থেকে শিয়ালদহ-বৈঠকখানায় তিনি যেতেন তামাক খেতে খেতে আড্ডা দিতে। তারপর সাহেবদের আড্ডা হত লালবাজার ও কসাইটোলার সরাইখানা বা ট্যাভার্ণগুলোতে। কলকাতায় যখন ‘বাবু’ সমাজের উদ্ভব হল,তখন বাবুদের ফরাস পাতা বৈঠকখানায় আড্ডা চলত ‘বাবু’ ও তাঁর মোসাহেবদের। ঊনিশ শতকের কলকাতার এক বিখ্যাত আড্ডা ছিল বাগবাজারে দুর্গাচরণ মুখুজ্যের বাড়িতে। নাম ছিল ‘পীর আড্ডা’, কেননা সেখানে আড্ডাবাজরা এক একটা পাখীর বেশ ধারণ করে একখানা ইটের ওপর বসে গাঁজা খেত। আর একটা বিখ্যাত আড্ডার কথাও আমরা শুনি। এটা হচ্ছে ‘হরি ঘোষের গোয়াল’। এখানে পরিচিত অপরিচিত সবাই একত্রিত হয়ে আড্ডা দিত ও হরি ঘোষের অন্ন ধ্বংসাত। এছাড়া ছিল পারিবারিক আড্ডা, যেমন, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির আড্ডা, যেখানে পরিবারের সকলে মিলিত হয়ে সাহিত্য, সঙ্গীত ও নাট্যাভিনয় ইত্যাদি সম্বন্ধে আলোচনা করত। বাগবাজারে ভুবন নিয়োগীর গঙ্গার ধারের বৈঠকখানার নাট্যাভিনয়ের মহড়া দেবার আড্ডাও বিখ্যাত, কেননা এরই পরিণতিতে কলকাতায় স্থাপিত হয়েছিল প্রথম সাধারণ রঙ্গালয়। এছাড়া ছিল দুপুরে মেয়েদের আড্ডা। একে বলা হত ‘মেয়ে মজলিস’। বর্তমান শতাব্দীর ত্রিশ-চল্লিশ দশকে আড্ডার মিলনস্থল ছিল চায়ের দোকান। উনিশ শতকের বাঙালী চা খেত না। তারা জানতই না, চা তরল পদার্থ না নীরেট বস্তু। শহরে চা খাওয়া শুরু হয় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের (১৯১৪- ১৮) পর, বিশের দশকের গোড়ার দিকে। ইণ্ডিয়ান টি সেস্ কমিটি’ এক বিরাট অভিযান চালায় শহরের লোককে চা খাওয়া রপ্ত করাবার জন্য। পাড়ায় পাড়ায় তখন আবির্ভূত হয় ইণ্ডিয়ান টি সেস্ কমিটি’র সুদৃশ্য গাড়িগুলো লোককে চা খাওয়ায় দীক্ষিত করবার জন্য। ওই গাড়িতে চা তৈরি করে তারা লোককে বিনা পয়সায় চা খাওয়াতে লাগল। এরই পরিণতিতে কলকাতায় পয়সা দিয়ে চা পানের জন্য দু-চারটে চায়ের দোকান প্রতিষ্ঠিত হল। চা প্রথম অন্তঃপুরে ঢুকতে পারে নি। সেজন্য লোক চা পানের জন্য চায়ের দোকানেই যেত। তা থেকেই চায়ের দোকানের আড্ডার উদ্ভব হল। একটা মার্কামারা চায়ের দোকান ছিল বেচু চাটুজ্যে স্ট্রীটের শেষপ্রান্তে সিটি কলেজের বিপরীত দিকে। মালিক একজন নিরক্ষর ব্যক্তি। মেদিনীপুরে বাড়ি, নাম রাম মাইতি। কলেজের ছেলেরা গৌরবার্থে তাকে রামবাবু’ বলে ডাকত, কেননা রামের চায়ের দোকানটাই ছিল কলেজের পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্রের উত্তর-লেখা খাতা পাচার করবার কেন্দ্র। সেজন্যই ছেলেরা রামকে ‘রামবাবু’ বলে সম্মান করত। রামের দোকানটাই ছিল ছেলেদের দুপুরবেলা আড্ডা দেবার জায়গা। এখানে উল্লেখ করি যে আমাদের স্কটিশ চার্চেস কলেজের কাছে এরকম কোন চায়ের দোকান ছিল না।
আমাদের বাগবাজারে কোন চায়ের দোকানই ছিল না। ছিল একটা শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর গায়ে মল্লিকদের ঘরে পাল মশায়ের চায়ের দোকান। তবে সেখানে আড্ডা বড় একটা বসত না। চা বিক্রির চেয়ে পাল মশাইয়ের বড় ‘ইনকাম’ ছিল এজেনসী কমিশন থেকে, কেননা, উত্তর কলকাতায় পাল মশায় ছিলেন একমাত্র এজেন্ট গ্রেট ইস্টার্ণ হোটোলের ‘হস্তদ্বারা সৃষ্ট নয়’ লেখা ‘পাউরুটি’ বিক্রির জন্য।
সালটা বোধ হয় ১৯২৯ হবে। একদিন সকালে পথে বেরিয়ে দেখি আমাদের বাগবাজারে একটা চায়ের দোকান হয়েছে। উঁকি মেরে দেখি দোকানের ভেতর রাম মাইতি রয়েছে। ঢুকে পড়লাম। জিজ্ঞাসা করলাম, কি হে রাম, বাগবাজারেও একটা দোকান খুললে। রাম বলল, না বাবু, কলেজ কর্তৃপক্ষ পিছনে লাগায় ও দোকানটা তুলে দিলাম। বাগবাজারেই একটা দোকান খুললাম। কিন্তু রামের দোকানের আড্ডা ভাল জমল না। রাম দোকানটা তুলে দিল। ওই ঘরেই এক বুড়ো ভদ্রলোক একটা চায়ের দোকান খুললেন, নাম দিলেন ‘স্বরাজ কেবিন’। কথাশিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তখন আমাদের পাড়াতেই থাকতেন। বোধ হয় দোকানটার নামের মাহাত্ম্য হেতু তারাশঙ্করবাবু ‘স্বরাজ কেবিন’-এ-ই চা খেতে লাগলেন। কিন্তু ওই দোকানের অন্যান্য খরিদ্দাররা সবই নিম্নস্তরের লোক। সুতরাং ওখানে চায়ের দোকানের আড্ডার আর কোন লক্ষণই দেখা দিল না।
ভীষণভাবে চায়ের দোকানের আড্ডাটা জমল বাগবাজার স্ট্রীট ও আনন্দ চ্যাটার্জি লেনের গলির মুখে অবস্থিত বিপিন নিয়োগীর বাড়ির তলায় ‘নিশানাথ কেবিন’এ। এ বাড়িটাতে আগে সিনেমা জগতের ডি.জি.বা ধীরেন গাঙ্গুলী থাকতেন। ওই ঘরটাই ছিল ওঁর বৈঠকখানা। ডি. জি. উঠে যাবার পর যশোর জেলার তিন যুবক ভাই ওই ঘরটা ভাড়া নিয়ে ‘নিশানাথ কেবিন’ নামে এক চায়ের দোকান খুলল। গোড়া থেকেই রমরমা বিজনেস্। আড্ডা দেবার ওটা একটা মহাপীঠ হয়ে দাঁড়াল। “নিশানাথ কেবিন’-এর একটা বিশদ বিবরণ আমি দিয়েছি আমার শতাব্দীর প্রতিধ্বনি’ নামক বইয়ে। ওই বইয়ে ত্রিশের ও চল্লিশের দশকের আরও আড্ডার কথা আছে। তা থেকেই কতকগুলো বাক্য আমি এখানে উদ্ধৃত করছি “নিশানাথ কেবিন’ সম্বন্ধে। ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’র সম্পাদকমণ্ডলীর সব কর্মীই ‘নিশানাথ কেবিন’-এ আসত চা খেতে। তখন ওদের সঙ্গে বেশ মজলিশ হত। ওই ‘নিশানাথ কেবিন’-এ আরও আসতেন আমার পাড়ার বন্ধুরা ও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি।…’নিশানাথ কেবিন’-এ দুবেলা চা খেতে আসতন বিখ্যাত দ্বিকণ্ঠী গায়ক অনাথ বসু ও সেতারী মুস্তাক আলি খান। মুস্তাক তখন অনাথদার বাড়িতেই থাকতেন। বহুদিন মুস্তাক অনাথদার বাড়িতেই থেকেছে। কতলোক যে ‘নিশানাথ কেবিন’-এ আনাগোনা করত, তার ইয়ত্তা নেই। খুব জমাটি করে আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিত সেই মোটা জারমান সাহেবটা যে এখানে এসেছিল ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’র বিরাট রোটারি মেশিনটা ফিট করতে।…আমরা বন্ধুরা যারা দু’বেলা ‘নিশানাথ কেবিন’-এ জড় হতাম, তাদের মধ্যে ছিল শ্যামাচরণ ভট্টাচার্য, হীরেন মল্লিক (ওরফে চণ্ডী), মদন দত্ত, কেদার সর্বাধিকারী ও তার দাদা প্রভাত সর্বাধিকারী। শ্যামাচরণ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র ও ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’র স্পোর্টস্ এডিটর। হীরেন মল্লিকদের ছিল খড়ের ব্যবসা। শান্তিনিকেতন-এর সে প্রাক্তন ছাত্র। মদন দত্ত পরে ‘যুগান্তর’ পত্রিকার চীফ অ্যাকাউন্টটেণ্ট হয়েছিল। কেদার টেলিগ্রাফ ডিমার্টমেন্টে চাকরি করত। ওরই দাদা হচ্ছে প্রভাত সর্বাধিকারী। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। তিনটা বিষয়ে এম.এ.ম্যাথামেটিকস্, ফিজিকস্ ও ইকনমিকস্ পরে প্রভাত ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক হয়েছিল। একদিন ‘নিশানাথ কেবিনে’-এ খুব জমাটি আড্ডা বসেছে। চণ্ডী জানালার ভেতর দিয়ে বাইরে রাস্তায় কাকে দেখেছে। দেখামাত্রই ঘরের ভেতর থেকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল, অঃ সাগর, অঃ সাগর। চণ্ডীর ডাক শুনে চকিতের মধ্যে আমার মনে পড়ে গেল ‘দেবী চৌধুরাণী’র সাগরের কথা। সুতরাং প্রথম বুঝতে পারলাম না চণ্ডী যাকে ডাকছে, সে মেয়ে কি পুরুষ। চণ্ডী বেরিয়ে গিয়ে যখন ঘরের ভেতর নিয়ে এল, তখন বুঝতে পারলাম ও যাকে ডাকছে সে মেয়ে নয়, একজন তরুণ পুরুষ। চণ্ডী তাকে চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসিয়ে আমাদের বলল, এ আমাদের শান্তিনিকেতন-এর সহপাঠী সাগরময় ঘোষ, কালীমোহন ঘোষের ছেলে।’
চায়ের দোকানের আড্ডা ছাড়া ছিল রকের আড্ডা। নিশানাথ কেবিন’-এর উলটো দিকেই রাস্তার অপর পারে শিশির কুমার ইনস্টিট্যুট-এর নিচের তলার রকে বসতো আর একটা আড্ডা। ওরা সকলেই শিশির ইনস্টিট্যুট-এর সদস্য। ওই রকে সমবেত হয়ে আড্ডার আসর বসাতো সুকোমল কান্তি ঘোষ, প্রফুল্লকান্তি ঘোষ (শত ঘোষ), ক্রিকেটিয়ার কমল ভট্টাচার্য ও ওর দাদা সঙ্গীতজ্ঞ অনিল ভট্টাচার্য, মিহির লাল গাঙ্গুলী, প্রভাতকুমার বসু (বসুদা), জ্যোতির্ময় নাগ (নাগু), সুধীর কুমার বসু, বগলা ভট্টাচার্য (বিধায়ক ভট্টাচার্য) ও আরও অনেকে। ওরা মাঝে মাঝে চিৎকার করে নিশানাথ কেবিন’-এ বলত, “সাতটা হাফ্-কাপ্ চা দিয়ে যা’। ওরা নানা বিষয় নিয়ে গলা-ফাটিয়ে তর্ক-বিতর্ক করত। মাঝে মাঝে খুবই উত্তেজিত হয়ে উঠত। (অবশ্য আমাদের ‘নিশানাথ কেবিন’-এও আলোচনা মাঝে মাঝে খুব উত্তপ্ত হয়ে উঠত।)
কাছাকাছি আর একটা রক্ ছিল, আমার বাড়ির গলির মুখে রসিকমোহন বিদ্যাভূষণের রক। ওর নেতা ছিল মিনার্ভা থিয়েটারের কৌতুক অভিনেতা কুমার মিত্তির। ওটা ছিল পাড়ার যত ‘বকা’ ছেলের আড্ডা। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলাম আমি। একবার আমি হাজারিবাগ থেকে ফিরে এসে দেখি কুমার মিত্তিরের আড্ডায় জুটেছে এক নতুন যুবক। দেখলাম যুবকটিও বেশ মজাদার গল্পগুজব করে, এবং সেই কারণে সকলেরই প্রিয় হয়ে উঠেছে। তখন ‘আগস্ট বিপ্লব’ চলছে। আমাদের বাই লেনের দেওয়ালের গায়ে রাত্তিরে কে বা কারা হাতে লেখা সাইক্লোস্টাইল করা সংবাদপত্র লাগিয়ে দিয়ে যেত। তাতে মেদিনীপুরে যে সব অমানুষিক অত্যাচার ঘটছিল তার বিবরণ থাকত। একদিন আমাদের পাড়াতে একটা মিটিং হল। ওই মিটিং-এ কুমারদার আড্ডার ওই নতুন যুবকটি একটা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিল। তার পরের দিনই পুলিস এল, বাড়ি-বাড়ি সার্চ করতে। কিন্তু ওই যুবকটি সঙ্গে সঙ্গে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। শুনলাম ও হচ্ছে রামমনোহর লোহিয়া। কুমারদার খিস্তিখেয়ুড়ের আড্ডার দিকে পুলিশ কোনদিন নজর দেবে না, এই ভেবেই ও ওভাবে ওখানে আত্মগোপন করেছিল। সব শুনে কুমারদা বলল, ‘ব্যাটা আমার চেয়েও ভাল অভিনয় করে গেল’।
আর একটা আড্ডার কথা বলি। সেখানে আমার যাওয়া কুমারদার সূত্রেই ঘটেছিল। ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে মিনার্ভা থিয়েটার পুড়ে যাবার পর, ওখানে যে নূতন বাড়িটা তৈরি হচ্ছিল, তার অসমাপ্ত দোতলার ওপর একটা ঘরে সকালের দিকে থিয়েটারের নট-নটীরা আড্ডা দেবার জন্য জড় হত, এবং আমি তখন বাঁশের ভারা দিয়ে উঠে (তখনও সিঁড়ি হয় নি) ওই আড্ডায় যেতাম এবং সেখানে আঙুর নামে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার খুব সম্প্রীতি বন্ধুত্বও হয়েছিল। ওরই সঙ্গে বসে আমি একান্তে আড্ডা দিতাম। এছাড়া, ত্রিশের চল্লিশের দশকে দাবার ও তাসের আড্ডা, সাহিত্য বাসরও ছিল। আমাদের শ্যামবাজার পাড়ায় তাসখেলার বিখ্যাত আড্ডা ছিল মিত্রিদের বাড়িতে ‘থেটা বেটা’ ক্লাব। আর যে সব সাহিত্যবাসরে আমি যোগ দিতাম, তা হচ্ছে কাঁটাপুকুরে সরোজ মিত্তিরদের বাড়িতে ও যামিনদার (শিল্পী যামিনী রায়) বাড়িতে। এছাড়া ছিল ‘শনিবারের চিঠি’র আসর, ‘কালি-কলমে’র আসর, ‘দেশ’ পত্রিকায় ও এম.সি.সরকারের দোকানের আড্ডা। এগুলো, সবই সাহিত্যিকদের আড্ডা ছিল। এবার ওই যুগের আরও আড্ডার কথা বলি। আমাদের বাগবাজার বাই লেনের গলির মুখে ছেলেদের একটা আড্ডা হত। ওখানে সকলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আড্ডা দিত। আবার ছেলেদের মধ্যে যারা প্রথম বিড়ি-সিগারেট খেতে আরম্ভ করত, তারা খালধারে গিয়ে নিরালায় ওই কাজটা সারত এবং ওখানেই আড্ডা দিত। আর বয়স্ক লোকরা যারা গাঁজা খেত (এ বিষয়ে বাগবাজারের প্রসিদ্ধি অনেক কালের) বাগবাজারের বিচালি ঘাটে গিয়ে গাঁজার আড্ডা বসাত। গঙ্গার ঘাটের আরও আড্ডার কথা বলি। ঊনিশ শতকের যে ‘মেয়ে মজলিস’-এর কথা বলেছি, সেটা পাড়ার কোন বাড়ির বর্ষিয়সী গৃহিণীর ঘরে বসত। তখনকার দিনের মেয়েরা সম্পূর্ণ অসূর্যম্পশ্যা ছিল বলে, বাড়ির পিছনের খিড়কির দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ওই মজলিসে যোগ দিত। ঘরকন্নার কথা নিয়েই তারা আলোচনা করত। কিন্তু ১৯২৮ খ্রীষ্টাব্দে পার্ক সার্কাসের কংগ্রেসে নেতাজী সুভাষচন্দ্র যখন এক মহিলা স্বেচ্ছাসেবিকার দল গঠন করলেন, তখন মেয়েরা আর অসূর্যম্পশ্যা রইল না। আগে মেয়েরা গঙ্গাস্নানে যেত ভোর রাতে এবং সূর্যোদয়ের পূর্বেই বাড়ি ফিরত। কিন্তু ত্রিশের দশকে মেয়েরা দিনের আলোতেই গঙ্গাস্নানে যেতে লাগল এবং গঙ্গার ঘাটে মজলিস বসাতে লাগল। এসব মজলিসে আলোচনা হতে লাগল নানা বাড়ির কুৎসা ও কেচ্ছা। তার মানে মেয়ে মজলিসের বিষয়বস্তু পালটে গেল। গঙ্গার ঘাটে আর এক রকমেরও আড্ডা বসত। বিকালে স্কুল কলেজের ছেলেরা জেটির ওপর বা গাধা বোটের ওপর বসে আড্ডা দিত।
বিকালে স্কুল-কলেজের ছেলেদের আড্ডা দেবার আর একটা জায়গা ছিল পার্কের মাঠে বা খেলার মাঠে। ময়দানে খুব জমাটি আড্ডা বসত ক্লাব ঘরে খেলোয়াড়দের ও অন্যান্য সদস্যদের। আর পার্কের মাঠে যে ছাউনিগুলো ছিল সেখানে পেনসনভোগী বা অবসরপ্রান্ত বুড়োদের আড্ডা বসত। এদের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল সংসার খরচ ও কোম্পানির কাগজের দরের ওঠানামা।