কড়িখেলা – ৯

॥ ৯ ॥

শাঁটুল বেলা আড়াইটে নাগাদ বাড়ি ফিরল বিস্তর ঘোরাঘুরি করে। মোটরবাইকটা রেখে এল ছাতিম তলায়, গলির মুখে। বাড়ি ঢুকল জিন্সটা বদলে বারমুডা পরবে বলে। তখনই ভাইঝি মিনি এসে মোবাইলটা ধরল। এই মাসেই এই দামি ফোনটা কিনেছে শাঁটুল, দশ হাজার টাকা দিয়ে। সে মিনির হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল সঙ্গে সঙ্গে। ধমকে বলল, “অ্যাই, ফোন নিতে বারণ করেছি না?” ছিঁচকাঁদুনে মিনি কাঁদতে শুরু করে দিল ভ্যাঁ করে।

অমনই বউদি তড়পাতে লাগল তাকে, “শাঁটুল, তুমি মিনিকে কথায় কথায় ধমকাও কেন? কীসের জন্য? ও তোমার কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে? আজ আমি তোমার দাদা এলে বলব, একটা বাচ্চার পিছনে লাগছে।”

সে খচে গেল জোর, “আমি ওর পিছনে লাগব? সারাদিন বাড়ি থাকি না, বাড়ি ঢুকলেই তুমি কোনও না-কোনও ইসু নিয়ে ঝগড়া লাগাও বউদি। কেন, সেটা আমি খুব ভাল করে বুঝি।”

মা বেরিয়ে এল রান্নাঘর থেকে, “ও তোর সঙ্গে ঝগড়া করতে যাবে কেন? তোরই খুব মেজাজ হয়েছে। দুটো টাকা রোজগার করছিস বলে ধরাকে সরা জ্ঞান করছিস? তাও যদি টাকাগুলো বাড়িতে দিতিস। শুধু নিজের পিছনে খরচ করছিস, দামি দামি জিনিস কিনছিস। সংসারে দিস? আমাদের ফ্যামিলিতে বাড়ির বউয়ের সঙ্গে কেউ খারাপ করে কথা বলে না শাঁটুল।”

“কী আমার ফ্যামিলি রে!”

মা’র ধারণা সে কোনওদিন মাকে দেখবে না। দাদা-বউদিই দেখবে। তাই মা খুব দাদা-বউদির ধামা ধরে চলে। চলে চলুক, তারই ভাল। আর যে কথাই হোক, মা টাকার কথা তুলবে। মা’র একটা অদৃশ্য শুড় আছে, টাকা শোষার! আজ শিবচরণ মুখার্জি লেনে একটা ফ্ল্যাট দেখে এসেছে শাঁটুল। মালিক ফ্ল্যাটটা ভাড়ায় দেবে। চার কাঠা জমির উপর প্রায় চোখের সামনে পরের পর বাড়ি ভেঙে চারতলা ফ্ল্যাটটা তৈরি হল। এদিকে পুরনো বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট তৈরি হলে সেগুলো প্রত্যেকটা খুব দম চাপা হয়। গায়ে গায়ে বাড়ি। নতুন ফ্ল্যাটগুলোতে আলো হাওয়ার খুব অভাব। এই ফ্ল্যাটটা তা নয়। হেভি আলো। দক্ষিণে বারান্দা। ভাড়া চাইছে সাত হাজার। মালিক আজ চাবি দিয়ে দিয়েছে তাকে। শাঁটুল জানে, যাকে দেখাবে, তারই পছন্দ হয়ে যাবে ফ্ল্যাটটা। তার খুব ইচ্ছে, এরকম একটা ফ্ল্যাটে থাকে। এখন যা রোজগার দাঁড়িয়েছে, এরকম একটা ফ্ল্যাট সে নিজেই ভাড়া নিতে পারে। কিন্তু এখনও সময় আসেনি। তাকে টাকা জমাতে হবে। ধীরে ধীরে তার কাজ কারবার সে সরিয়ে নিয়ে যাবে অন্য দিকে। সাউথের দিকে। বছর তিন-চারের মধ্যে সে নিজেকে সাউথ ক্যালকাটায় দেখতে চায়। অর্ণব মুখার্জি বলে এক প্রোমোটারের সঙ্গে আলাপ হয়েছে শাঁটুলের। সব পশ এলাকায় কাজ করছেন ভদ্রলোক। আস্তে আস্তে এই লোকটার সঙ্গে র‍্যাপোটা বাড়াতে হবে, যাতে সে সাউথেও কাজ করতে পারে। এই যেমন সল্টলেকেও সে ঢুকে পড়েছে এবার। চারটে দালাল মাঝখানে থাকলেও আলটিমেটলি বি ই ব্লকের ফ্ল্যাটটা তার হাত দিয়েই লিজ হল। পার্টি তার।

কিন্তু সে অনেক টাকা রোজগার করলেই যে সোহিনী সাউথ সব ছেড়েছুড়ে তার কাছে চলে আসবে, এমনটা সে এখনও ভাবছে না। সব কিছুর সময় লাগে। তাকে অ্যাকসেপ্ট করতে সোহিনীর অনেক সময় লাগবে। ব্রোকারিই করুক আর যাই করুক, শাঁটুল পরিশ্রমী, জেদি। একদিন সে অনেক বড় জায়গায় চলে যাবে, সে জানে। কিন্তু তখনও সে থাকবে এইচ এস। সোহিনীর এখানেই সবচেয়ে বড় বাধা তাকে নিয়ে। এই তো শনিবার পার্ক স্ট্রিটের একটা রেস্তরাঁয় বসে সোহিনী তার ডান হাতটা আলতো করে ছুঁয়েই বলল, ‘তোমার আঙুলগুলো কী সুন্দর, লম্বা লম্বা! নখের শেপটাও ভাল। তোমার তো পড়াশোনা হওয়া উচিত ছিল। ফাইন আর্টসের দিকে যেতে পারতে। কী যে করলে! পড়াশোনাটা করলে না?’ দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল মেয়েটা। তখনই সে বুঝেছিল, নিজের মনের সঙ্গে সারাক্ষণ একটা যুদ্ধ চলছে সোহিনীর। তবে লালুকে বললে লালু বলবে, ‘কোনও যুদ্ধের গল্প নেই। কমলের বউ তোকে থোড়াই সিরিয়াসলি নেয়। ও কি তোকে ‘আই লাভ ইউ’ বলেছে কখনও? ওটা একটা টাইম পাস। যদি তুই ভাবিস, কমলের বউ তোকে ভালবাসে, তা হলে তুই ব্যাটা মহা মূর্খ!’

শাঁটুল নিজেও কি সোহিনীকে ভালবাসে? বোধহয় না। তবে সোহিনীকে দেখলে আগে যেমন আগুন দাপাত শরীরে, মাথাটা চড়াক চড়াক করত, একবার বাথরুমে ঘুরে আসতে হত, এখন সেটার সঙ্গে একটা ফাল্গুন মাসের চিতি চিতি হাওয়ার মেজাজও এসেছে বুকে! যখন এপাড়ার বাতাসে চামেলির গন্ধ পাওয়া যায়, কদম ফোটে আর তখন গোস্বামীদের দলটা পাড়া মাতাতে আসে প্রতি বছর, ওরা আসে বিকেলে, দূর থেকে মৃদু মৃদু সুরভিত হাওয়ায় মিশে যায় খঞ্জনীর শব্দ। যত কাছে এগিয়ে আসে ঢোল আর খঞ্জনীর বাদ্য ভারী হয়ে দোলে বুকের কাছটায়। ওই গোস্বামীদের কচি বউটা তাকে দেখলেই হাতে একটু চমনবাহার দিয়ে বলে, “চলো না গো, বৃন্দাবন চলো আমার সঙ্গে!’ সে চোখের তারায় হাসে, কান চুলকায়, মাথা চুলকোয়! ওই বউটার জন্য পাড়ায় বন্ধুদের কাছে তাকে ঠাট্টা-তামাশা শুনতে হয়। বউটার নাম উত্তরা। ‘তুমি হলে ওস্তাদ গো, ওস্তাদ!’ বলে উত্তরা, আর বার এসে তোমাকে কী দিই দেখো?’ সে বলেছিল, ‘কী দেবে?’ ‘আমার কোমরের কার!’ ফিসফিস করে বলেছিল উত্তরা। ‘যাঃ!’ শাঁটুল সত্যিই লজ্জা পেয়েছিল। ‘তাতে কড়ি লাগানো। কড়ি মানে কী বোঝো তো? হুঁ?’

সে যাই হোক, আজকাল সোহিনীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় তার মনের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়াটা হয়, তাকে বর্ণনা করতে গেলে এই সব কিছু দিয়েই উপমাটা তৈরি করতে হবে। খঞ্জনীর আওয়াজটাও ধরতে হবে, কদম ফুলও ধরতে হবে, উত্তরার পালিশ পরা ছেনালিটাও বাদ দেওয়া যাবে না!

ছাতিমগাছতলায় চলল শাঁটুল এক বালতি জল নিয়ে, মোটরবাইকটা তার প্রাণ! একদিন ছাড়া ছাড়াই বাইকটা ভাল করে ধোওয়া-মোছা করে সে। নিজের সমস্ত জিনিসের প্রতিই তার অগাধ যত্ন। জল-নেকড়া দিয়ে চাকাগুলো ধুতে লাগল শাঁটুল। এরপর সে জামা-প্যান্ট কাচবে। ছাতে উঠে মেলবে সেগুলো। আরও কাজ আছে। সি ডি প্লেয়ারে ধুলো জমেছে, স্পিরিট দিয়ে পরিষ্কার করবে। শেষে নর্দমা পরিষ্কার করে সে শ্যাম্পু ট্যাম্পু করে স্নান করে খাবে। খেতে খেতে আজ চারটে। ঠিক পাঁচটার সময় এক পার্টিকে উলটোডাঙায় একটা বাড়ি দেখাতে যেতে হবে তাকে। বিকেলে বেরিয়ে আজ তার নানা কাজ আছে। সন্তোষ উকিলের কাছে তিনটে এগ্রিমেন্ট তৈরি করতে দিতে হবে। পাড়ায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা। তখন নিমাই খুড়োর রকে লালু ছাড়া তেমন কেউ থাকবে না। বিকেলে বেরোনোর মুখে সোহিনীকে একবার বারান্দায় দেখতে পেলেই সে খুশি। কিন্তু সোহিনীকে বললেও কখন মেয়েটার মর্জি হবে, কখন হবে না, কে জানে? সোহিনী বলবে, ‘জানো তো, আমার ভীষণ মুড সুইং হয়।’

তার বাইক ধোওয়া যখন প্রায় হয়ে এসেছে, দরদর ঘামে গেঞ্জি টেঞ্জি ভিজে একা, তখন তার পাশে এসে দাঁড়াল লালু, “হেভি বাওয়াল হচ্ছে মিত্তির বাড়িতে। কমলের বউ ডুকরে ডুকরে কাঁদছিল।”

ন্যাতাটা চিপে বালতির জলটা ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়াল শাঁটুল, “কাঁদছে? চেঁচিয়ে কাঁদছে?” আশ্চর্য! চেঁচিয়ে ঝগড়া করা, চেঁচিয়ে কাঁদার মেয়ে তো সোহিনী নয়। ও তো সাউথ ক্যালকাটার মেয়ে। নর্থের মেয়েদের সব্বার এই সমস্যাটা আছে।

“হ্যাঁ, শুনেই তো চলে এলাম তোকে খবরটা দিতে।”

“কমল নেই বাড়িতে?”

“তা জানি না। আমি খেয়ে উঠে একটা সিগারেট নিতে বেরোলাম, তখন শুনলাম।”

“কী নিয়ে চেঁচামিচি কিছু বুঝলি?”

“না, না!” লালু হাত ঝাড়ল, “তোর দরকার, তুই ফোন করে খবর নে, ফোন কর।”

শাঁটুল ভাবল, এখনই ফোন করাটা কি ঠিক হবে? সে লালুকে বলল, “তুই যা, আমি দেখছি।”

লালু বলল, “আবার বেশি নাক গলাতে যাস না। যতই হোক, অন্যের বউ।” এই “অন্যের বউ’টা লালু বার বার ইচ্ছে করে বলে। বলে তার পৌরুষকে হ্যাটা করে। শালা, যাকে আমি চাই, সে রোজ অন্য একটা ছেলের পাশে শোয়! ঠিক! ধিক আমাকে! আমি এটা সহ্য করি কী করে? লালু এভাবে হিড়িক দেয়। তার সঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দেয়, তার আর সোহিনীর কেসটা পাতি ‘ফস্টিনস্টি!’ লালুকে না একদিন ঘাড়ে রদ্দা মেরে বসে শাঁটুল।

সে গলা চড়াল হঠাৎ, “আমি কী করব তুই আমায় বলে দিবি? আমি শালা তোর ধন ধরে বসে আছি?”

“যা, যা!” বলল লালু, “খেতে যা, তোর খিদে পেয়েছে!”

“আরে রেখে দে, অভীকের চাকর! তোকে দিয়ে আয়েষাদি এবার নীচের সায়া কাচাবে, দ্যাখ না তোর কী হয়!” লালুর দুর্বলতায় পতাকা পুঁতে দিল শাঁটুল।

“ওদের তো ওয়াশিং মেশিন আছে। দশ কেজি লোড।”

“তুই মহা হারামি। তোর নজর এখন কোথায় ঘুরছে আমি জানি না শালা? ঠিক বয়সে বিয়ে হলে বাঁধনের মতো মেয়ে হত তোর লালু!”

“কী যা তা বলছিস শাঁটুল। বাঁধন তো আমাদের চেয়ে মাত্র দশ-বারো বছরের ছোট। তোর ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা, তুই তো তার আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছিস।” এসব খারাপ খারাপ কথা ছেলেমাত্রই বলে থাকে। লালু একটু গলাটা নামাল, “শোনো বাপধন, তোমাকে একটা খবর দিই। বাঁধনের সঙ্গে একটা ছেলের প্রেম চলছে, ফেসবুকে আলাপ। ছেলেটা থাকে ভূপেন বোসে। নামটাও বলে দিচ্ছি, কল্পান্ত সিংহ রায়। ডাক নাম তাতার!”

শাঁটুল বলল, “বাসি খবর, আমাকে খবর বেচতে আসিস না। আমি বহু আগে থেকেই জানি!” মনটা পড়ে আছে সোহিনীর দিকে। পকেটের ফোনে হাতের চাপ দিল শাঁটুল। কমল দুপুরে বাড়িতেই থাকে, তাই দুপুরের দিকে সোহিনীকে কখনও ফোন করে না শাঁটুল। তবু সে আজ একটা ট্রাই মারল। হাত নিশপিশ করছিল তার।

ফোন ধরল সোহিনী, কেটে দিল না, “হুঁ বলো…”

“কাঁদছ নাকি?”

“নাঃ!”

“কী হয়েছে কেসটা?”

“তেমন কিচ্ছু নয়।”

“বলা যাবে কি যাবে না?”

“আমার এক দিদি থাকে বেঙ্গালুরুতে, ওর হাজব্যান্ড তিন-চার মাসের জন্য বিদেশ যাচ্ছে। আমাকে বলল…দাঁড়াও, দরজাটা বন্ধ করে আসি।”

“কমল কোথায়?”

“কোথায় আবার! মা-র ঘরে ঘুমোচ্ছে খোকন।”

সোহিনীর দরজা বন্ধ করা শুনতে পেল শাঁটুল।

“তো কী হয়েছে?”

“আমাকে দিদি বলল, ‘তুই মাসখানেক আমার কাছে এসে থাক। ও সব জানে। মানে, কমল আর আমার ব্যাপারটা।”

“আর আমাদেরটা?”

“উঁহু।”

“সেটা তো বলার মতো নয় নাকি?”

“শাঁটুল, আমার এখন ফ্যামিলির সাপোর্ট দরকার। নাকি আমি সবাইকে বিপক্ষে করে তুলব?”

“একদিন তো বলতেই হবে।”

“কী বলতে হবে?”

শাঁটুল বলতে পারল না, তার মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল খুব। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।

“আমি কমলকে বললাম, আমি বেঙ্গালুরুতে গিয়ে থাকব মাসখানেক। কমল বলল, মাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমি বললাম, যাও, তা হলে জিজ্ঞেস করে এসো। কমল জিজ্ঞেস করে এসে বলল, কান্তা বাই বলেছে আষাঢ়-শ্রাবণে আত্মীয়স্বজনদের অনেক বিয়ে আছে। এখন কোথাও যাওয়া চলবে না। বাড়ির বউ। একমাত্র ছেলের বউ। হিল্লিদিল্লি ঘুরে বেড়ালেই হবে? কার বউ আমি? কীসের বউ?”

শাঁটুলের মতো ছেলের রাগ টাগ হয়। আজ কিন্তু শাঁটুলের অভিমানে গলাটা টনটন করে উঠল, “সোহিনী, তুমি আমাকে একবারও জিজ্ঞেস করোনি তো বেঙ্গালুরু যাবে কি না?”

“হোয়াই? হোয়াই ডু আই নিড টু আস্ক এনিবডি শাঁটুল? আমি তো এদের কাছে, কমলের কাছেও পারমিশন চাইনি। আমি শুধু যেতে চেয়েছি। এখান থেকে অনেক দূরে।”

সোহিনীকে শাঁটুলের বারবারই অচেনা লাগে, এখনও লাগল।

“আমার কাছ থেকেও দূরে যেতে চাও তুমি?” এরকম একটা ন্যাকা ন্যাকা কথা বলে ফেলল শাঁটুল।

সোহিনী চুপ করে থাকল একটু, “মাত্র তো এক মাসের জন্য! আমি আর পারছি না শাঁটুল। বোঝো তো৷”

“শেষ অবধি কী দাঁড়াল?”

“আমি কমলকে বললাম, ঠিক আছে, ক’টা দিনের জন্য তুমিই আমাকে বেড়াতে নিয়ে চলো তা হলে? গোয়া টোয়া কোথাও?”

শাঁটুল কোনও কথা উচ্চারণই করতে পারল না এটা শুনে!

“কমল বলল, তোমার সঙ্গে বেড়াতে যাব ভাবলে কী করে? হি ইজ় আ চিট ইউ নো? ওকে আমি শায়েস্তা করেই ছাড়ব। তুমি দেখে নিয়ে,” সোহিনী কাঁদছে।

সে ফোনটা রেখে দিচ্ছিল, সোহিনী খুব নরম করে ডাকল তাকে, “শাঁটুল মিট করবে?”

এবার নিজেকে ফিরে পেল শাঁটুল! মটকা গরম হল তার। সে বলল, “কীসের জন্য?”

“একটু ঘুরতাম তোমার বাইকে চড়ে। মনটা ভাল নেই।”

সাংঘাতিক প্রস্তাব! সে এ পর্যন্ত সোহিনীর সঙ্গে খুব নামী দামি রেস্তরাঁয় দেখা করেছে। তার মোটরবাইকে সোহিনী বসবে, এটা শাঁটুল ভাবেওনি কখনও! মোটরবাইকে চড়বে, দুটো শরীর ঘনিষ্ঠ হবেই। ব্রেক কষলে সোহিনীর বড় বড় দুটো বুক এসে তার পিঠে ধাক্কা খাবে— এ সুযোগ শাঁটুল হারানোর কথা ভাবতেও পারে না। কিন্তু সে বোধহয় প্রেমে পড়েছে মেয়েটার। নইলে তার মধ্যে এসব কী লক্ষণ ফুটে উঠছে? কষ্টের? যন্ত্রণার? সত্যি তার চোখের কোণ দুটো জ্বালা করছে! কমলের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার কথা কী করে বলল সোহিনী? ফের রেগে উঠল শাঁটুল। খেলাচ্ছে? তাকে খেলাচ্ছে?

সে বলল, “আমার সময় হবে না।”

“সময় নেই?”

“না।”

“তোমারও সময় নেই?” হাহাকার করে উঠল সোহিনী, “আমার কেউ নেই, কেউ নেই!”

শাঁটুল দু পা পিছিয়ে গেল, “এই তো বরের সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছিলে।”

“কোনওদিন যেতাম না। আমি শুধু কমলকে ডিস্টার্ব করে যেতে চাই।”

“তাতে কী হবে?”

“শাঁটুল তোমাকে বলিনি, কাউকে বলিনি, হাউ হি হ্যাজ় ট্রিটেড মি, দ্যাট মামাজ় বয়, দ্যাট মাদার ফাকার— কী অন্যায় করেছে আমার সঙ্গে তুমি কি জানো?”

শাঁটুলের তেজ কমে গেল, “আমি কী করে জানব সোহিনী?”

“কখন কোথায় ওয়েট করবে বলো?” নাক টানল সোহিনী।

“প্লিজ সোহিনী, কাল দুপুরে দেখা করি? আজ এক আইপিএস অফিসারকে টাইম দেওয়া হয়ে গেছে। ভদ্রলোক এককথার মানুষ।”

“ওকে।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *