কড়িখেলা – ১০

॥ ১০ ॥

নিক্কো পার্কের পাশ দিয়ে সোজা রাজারহাটের দিকের ফ্লাইওভারে উঠে গেল শাঁটুল। ঝড়ের বেগে বাইক চালাচ্ছে। সোহিনী জাপটে ধরে আছে তাকে। মুখটা গুঁজে দিয়েছে তার ডান কাঁধে। শাঁটুল ঠিক মাপতে পারছে না তার ভিতরে কী চলছে এই মুহূর্তে। সামান্য বেসামাল হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে! সে সাঁ-সাঁ করে উইপ্রোর পাশ দিয়ে ছুটে গেল। সোহিনী হাসছে। সোহিনী সাউথ! কোনও ইনহিবিশন নেই। ছেলেদের কনুইয়ের গুঁতো মারে না। চিমটি কাটে না, ঠোঁট কামড়ায় না দাঁত দিয়ে। লজ্জা কদাচিৎ পায়, নিজের বুকের দিকে তাকায় না বারবার, রেস্তরাঁয় বিল দেওয়ার সময় বলে, ‘আমি দিই? অ্যাট লিস্ট লেট মি শেয়ার?’ সেই সোহিনী সাউথ শাঁটুলকে সম্পূর্ণ জড়িয়ে ধরেছে। স্পিড কমিয়ে এবার শাঁটুল সল্টলেকে ঢুকে গেল। একটার পর একটা আইল্যান্ড পেরিয়ে যাচ্ছে। সোহিনীর শাঁটুলকে অনেক মনের কথা বলার ছিল। কিন্তু সেসব পরে হবে। আজ সোহিনী শ্যাম্পু করে আর সিঁদুর পরেনি। শাঁটুলের একবারও মনে হচ্ছে না এই মেয়েটা অন্য কারও বউ! সোহিনী খুব মজা পাচ্ছে দেখে পুলক জেগেছে তার ডানায়। সে শুধু উড়তে চাইছে। পাক খেতে চাইছে। সোহিনী চিৎকার করে বলল, “শাঁটুল, তোমার ভাল নাম কী?”

“গৌরচাঁদ দাস।”

“আর তোমার ডাক নাম?”

“মিউ।”

‘“মিউ? সে আবার কী?”

“আমার পিসির একটা পোষা বেড়াল ছিল। সে ডাকত মিঁউ মিঁউ, আমিও কথা বলতে শিখে মিউ মিউ করতাম। ওটাই হয়ে গেল নাম!”

এই সময় শাঁটুলের ফোন এল একটা। পার্টি ফোন করছে নিশ্চয়ই। সে বাইকটা দাঁড় করাল একটা বাড়ির সামনে। বিশাল বাড়ি। সামনে লন, খুব মোটা করে গাছের ফেন্সিং। তারপর কাঁটাতার। বিদেশি ডিজাইনে তৈরি দোতলা বাংলো। শাঁটুল কথা বলছে। সোহিনী বাইক থেকে নেমে বাংলোটা মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগল। আহা, কী বাড়ি! কী দারুণ দারুণ সব বাড়ি আছে সল্টলেকে। এই বাংলোটার পাশের বাংলোটাও দারুণ। তবে রংটা তার অতটা মনঃপূত হল না। সোহিনী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাড়িগুলো দেখতে দেখতে চলে গেল একটু পাড়াটার ভিতরে। ঠিক সেখান থেকে শাঁটুলকে আর দেখা যাচ্ছে না। সোহিনী এতক্ষণ শাঁটুলের শরীরের সান্নিধ্যে রয়েছে, সেই ওম ছড়িয়ে পড়েছে গহনে। তার মনে হচ্ছে, ইস, যদি সুযোগ থাকত, যদি একটু আদর পেত সে এই লম্বা-চওড়া ছেলেটার, তা ছাড়া শাঁটুল যে তাকে ভালবাসে, তা সে চোখ দেখে বুঝতে পারে। সোহিনী যৌনতার স্বাদ পাওয়া মেয়ে। আর অতৃপ্ত, কোনও পুরুষের প্রতি তৎগত ভাব তৈরি হলে ঘুমের মধ্যেও তার সেই পুরুষের জন্য দুটো ঊরু, দুই পা দু’দিকে প্রসারিত হয়ে যায়। এই কামভাব দমন করে সে হাসিমিশ্রিত মুখে চারিদিকে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ দেখল ওই সবচেয়ে সুন্দর বাড়ি থেকে সাদা লিনেন প্যান্ট, আকাশি টি-শার্ট পরা, চোখে অ্যাভিয়েটর সানগ্লাস পরা একটা প্রায় তারই বয়সি ছেলে গেট খুলে বেরিয়ে এল। ছেলেটা হাতের চাবি টিপে সামনে দাঁড়ানো দুধসাদা বড় একটা গাড়ির সেন্ট্রাল লক খুলল। পিক পিক আওয়াজ করে আলো জ্বলে উঠল গাড়িটার। ছেলেটার স্টাইল আছে, ভাবল সে। ছেলেটা চোখে কালো চশমা, তবু ছেলেটা যে তাকে দেখছে, তাও বুঝতে পারল সে। ছেলেটা কি এক পা-এক পা করে তার দিকেই এগিয়ে আসছে?

“সোহিনী না? সোহিনী দত্ত?” ছেলেটা আঙুল তুলল একটা, “সাউথ পয়েন্ট?” চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ফেলল ছেলেটা।

“মহুল? তুই?”

“চিনতে পারছিস?”

“হ্যাঁ, পারব না কেন? তুই তো ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছিস।’

“ফেসবুকে সকলেই আছে। কিন্তু আমার ফেসবুক করার সময় হয় না।”

“তুই তো প্লাস টু থেকে বিদেশে ছিলি। এখন কী করছিস?”

“ফ্যামিলি বিজনেস। তুই?”

“কিচ্ছু না। বিয়ে করে কাইন্ড অফ হাউজ় ওয়াইফ।”

“তুই হাউজ় ওয়াইফ? মারাত্মক ব্যাপার। বরকে নাচাচ্ছিস, না বর তোকে নাচাচ্ছে?”

সোহিনী হেসে উঠল হো-হো করে।

শাঁটুলের কথা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে খুঁজল সোহিনীকে। মনে মনে বলল, হেভি চঞ্চল মেয়ে। এই মেয়েকে সামলানো যার-তার কম্মো নয়। সে এদিক-ওদিক তাকাল, সরে গেল একটু বাইকটা রেখে। এবং তখনই দেখতে পেল, সোহিনী হেভি হ্যান্ডসাম একটা ছেলের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে। বাপ রে! ছেলেটা খুব সফি! গা থেকে বড়লোকের তেজ ছড়াচ্ছে যেন। সে সট করে সরে গেল আড়ালে। কে জানে ছেলেটা কে? তার পক্ষে সামনে যাওয়া কখনওই ঠিক হবে না। এমনিতেই এভাবে বাইকে ঘোরা রিস্ক হয়ে যাচ্ছে। হয়তো তাদের অজান্তে অনেকে দেখেও ফেলেছে তাদের! ঈশ্বর জানেন, এর পরিণতি কী! মনের মধ্যে অনেক সংশয় থাকলেও সোহিনীর প্রতি তীব্র আকর্ষণবশত সে নিজেকে আটকাতে ব্যর্থ হচ্ছে। জানাজানি হলে কী হবে, ভাবতেই পারছে না। কী আর হবে! কমল ডিভোর্স দিয়ে দেবে সোহিনীকে। সে বিয়ে করবে তখন মেয়েটাকে। পাড়া ছেড়ে দেবে। সাউথের দিকে বাড়ি ভাড়া নেবে তখন। আরে, পুরুষমানুষের টাকা রোজগার করতে কতক্ষণ লাগে? সোহিনীকে গৌরচাঁদ দাস খুব তোয়াজ করেই রাখবে। আইপিএস অফিসার ভদ্রলোক নিজের যে ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিলেন, সেটা পুরো ফার্নিশড্। তাতে মাস্টার বেডরুমে যা একখানা খাট আছে না…মাথার কাছে আয়না লাগানো। ওরকম একটা খাট বানাবে শাঁটুল। সোহিনীকে সুখ দিচ্ছে দেখেও সুখ! একস্ট্রা ইনিংস। শাঁটুল অপেক্ষা করতে লাগল সোহিনী আসার।

ওদিকে মহুল সোহিনীকে জিজ্ঞেস করল, “তোর বর কী করে?”

সোহিনী বলল, “ডাক্তার, এম ডি।”

“ভাল ছেলেই হাতিয়েছ বস!”

“দূর, সে একটা মায়ের বুড়ো খোকা! যা-তা একদম। কোনও অ্যাম্বিশন নেই, পাড়ায় চেম্বার খুলে বসে আছে। কমফর্ট জ়োন থেকে বেরোতই চায় না। দেড়শো টাকা ভিজ়িট। তাও অনেকে দেয় না বোধহয়। আমি একটা চার হাজার টাকার শাড়ি কিনলে কেঁদে ফেলার অবস্থা ওর! তা ছাড়া আমাদের মধ্যে কোনও অ্যাডজাস্টমেন্ট হয়নি কখনও!”

“লিভিং আ স্যাড লাইফ?”

“টু স্যাড। শ্বশুরবাড়িতে আমি কমপ্লিটলি লেফট আউট। একঘরে। আমিও ওদের দেখতে পারি না, ওরাও আমায় দেখতে পারে না। এই হল সিচুয়েশন। বিয়েটা ভাঙবে একটা চাকরি পেলে। তুই বিয়ে করিসনি?”

“এবার বিয়ে হচ্ছে,” বলে বেশ গম্ভীর হয়ে গেল মহুল, “রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি কেন আমরা? বাড়িতে চল। কফি খাবি। মা তোকে ঠিক চিনতে পারবে।”

এবার সোহিনী বিপাকে পড়ল, “বাড়িতে যাব না রে আজ। অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

“কাম অন সোহিনী, চল। ফর হাফ অ্যান আওয়ার। এনি ওয়ে! তুই এখানে কোথায় এসেছিলি? এপাড়ায় কেউ থাকে? তোর গোপন বয়ফ্রেন্ড ট্রেন্ড? চালাচ্ছিস কিছু?”

হকচকিয়ে গিয়ে সোহিনী বলল, “না, না, এসেছিলাম একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ইন্টারভিউ দিতে,” ফট করে বানাল সোহিনী।

“কোথায় স্কুলটা?”

তো-তো করে সোহিনী বলল, “এই আইল্যান্ড, তার পরের আইল্যান্ডে। স্কুল খোলেনি এখনও। সব প্রস্তুতি নিচ্ছে। সল্টলেকটা এত সুন্দর, তাই বেরিয়ে হাঁটতে লাগলাম।”

“সঙ্গে তো বাহন নেই? ওকে, চল আমি তোকে কিছুটা ছেড়ে দেব, ডোন্ট ওয়ারি।”

শাঁটুল ফোন করছে, একবার-দু’বার। মহুল স্কুলের বন্ধু, গোপনে প্রেম করছে বলতে সোহিনীর কোনও প্রবলেম নেই। কিন্তু প্রেমিক কে? না শাঁটুল দাস! বাড়ি-ফ্ল্যাটের দালাল, এইচ এস। থাকে একটা এঁদো গলিতে! নাঃ, নাঃ, অসম্ভব। এই রুচি-বিকৃতি প্রকাশযোগ্য নয়। প্রেম হতে পারে। শরীর আসতে পারে, মায়া আসতে পারে, করুণা জন্মাতে পারে। কিন্তু সামাজিকতা হতে পারে না। মহুলের ওই সফিস্টিকেশন, ঝকঝকে উপস্থিতি, ওই আভিজাত্য — সব কিছুর সামনে শাঁটুলের পরিচয় দেওয়ারই যোগ্য নয়। কমল একটা শয়তান। কিন্তু কমল ডাক্তার, মার্জিত, বনেদি বংশ। বন্ধ ঘরে কমলকে সে লাথি মারতে চায় রোজ। কিন্তু পরিবার, পরিজন, আত্মীয়, বন্ধু সকলের সামনে কমলের পাশে দাঁড়াতে তার অশ্রদ্ধা হয় না কখনও।

“শোন না, আমার শ্বশুরের একটা অ্যাম্বাসাডর ছিল। সেটা সেল আউট করে একটা ডিজ়ায়ার কেনা হয়েছে। তাকে রোজ ধোওয়া-মোছা হয়, তোয়াজ করা হয়, তারপর গ্যারেজে চাবি দিয়ে দেওয়া হয়। নর্থের লোকেরা মহা কৃপণ, এক পয়সা খরচ করবে না। পেট্রলের দাম যত বার বাড়ে, আমার শাশুড়ি বলেন, ‘আর কেন? এবার গাড়িটা বিদেয় করো।’ একদম ভোগ করতে জানে না রে ওরা! রাতে কুমড়োর ঘ্যাঁট আর রুটি খাবে। আমি কী করি জানিস না? রান্নাঘরে যাই, দুটো ডিমের পোচ বানাই। ওদের দেখিয়ে দেখিয়ে খাই।”

মহুল হা-হা করে হাসতে লাগল, “কী ডেসপারেট সিচুয়েশন তোর!”

সোহিনীর মনে হল, মন খুলে কথা বলতে পেরে তার অনেক হালকা লাগছে। শাঁটুলের সঙ্গে কথা বলে বটে। বাট ইউ হ্যাভ নাথিং টু টক উইথ শাঁটুল।

“দাঁড়া, তোর শ্বশুরবাড়ি একদিন যেতে হবে, ইন্টারেস্টিং প্লেস।”

“যাস না খবরদার। হার্ট ফেল করবে আমার শাশুড়ি। কত বয়ফ্রেন্ড আসছে বাড়িতে বলে পা ছড়িয়ে কাঁদতে শুরু করবে!” সোহিনী থামল, “অ্যান্ড লেট মে টেল ইউ দে আর রিয়্যালি ন্যাস্টি পিপল!” বিজ্ঞের মতো ঘাড় নাড়তে নাড়তে বলল সোহিনী, “বিয়ের পর শাশুড়ি আমাকে বারান্দায় নিয়ে বসিয়ে বাড়ি দেখিয়ে দেখিয়ে পাড়ার সবার পরিচয় দিত, ‘এই যে ওই বাড়িটা দেখছ? ওটা শর্বরীদের বাড়ি। শর্বরীর সঙ্গে জানো তো ওর ছোটকাকার ভালবাসা ছিল। পেটে বাচ্চাও চলে এসেছিল। সে কী কেলেঙ্কারি ব্যাপার! মা গো, গা গুলিয়ে উঠবে! তারপর শর্বরী গলায় দড়ি দিয়ে মরল! আর ওই যে সবুজ লোহার গেট একদম একতলা সমান উঁচু বাড়ির ভিতর কী হচ্ছে, কেউ জানতে পারবে না! ওরা সোনার বেনে। ওই বাড়ির বড়বউ বাড়িতে ল্যাংটো হয়ে ঘুরে বেড়ায়…ল্যাংটো— বুঝলি তো? নেকেড…”

“আরে বুঝব না কেন? আমাকে কি তুই ইংরেজ ভাবছিস? আমি পাতি বাঙালি সন্তান।”

“হ্যাঁ, তো ‘ল্যাংটো হয়ে ঘুরে বেড়ায়, চুল এলো করে, বিশাল চেহারা, ওইটাই হল বড়বউয়ের বড়লোকি! বাড়িতে চাকরবাকর ঘুরছে। ও বাড়িতে কোনও চাকরবাকর কাজ করতে ঢুকে আর কখনও বেরোতে পারে না। চাকরকে পাশে নিয়ে শোয়, চাকর স্নান করায়, চাকর খাইয়ে দেয়।’ শুনে আমি বললাম, “আচ্ছা মা, বড়বউ কি সাইকোপ্যাথ? মাথাখারাপ? পাগল? উত্তর, ‘ওই আর কী!’ ভাব, চাকরের সঙ্গে মিন করছে নোংরা সম্পর্ক, সত্যিটা বলছে না যে, বড়বউ জাস্ট পাগল, উন্মাদ। এই হল উত্তর কলকাতা!”

শাঁটুল সমানে ফোন করে যাচ্ছে আর সোহিনী ফেঁসে গেছে বেজায়। এটা তো সম্ভব নয় যে মহুলের সামনে দিয়ে সোহিনী শাঁটুলের বাইকে গিয়ে উঠবে। অগত্যা সোহিনী ফোনটা সুইচ অফ করে দিল। রাজি হল মহুলের বাড়িতে দু’মিনিট বসতে। ভাবল, শাঁটুলের সঙ্গে মিশে মিশে সে একটু হ্যা-হ্যা পার্টি হয়ে গেছে নাকি? নিজেকে একটু গুছিয়ে নিল সোহিনী। তারপর বহু বছর পর মহুলের মাকে দেখে গাল বাড়িয়ে দিয়ে উম্ করে বলে উঠল, “কেমন আছ আন্টি?”

শাঁটুল দেখল সোহিনী ওই বাড়িটায় ঢুকে গেল। সোহিনীর ফোন অফ হয়ে গেছে। একটু সময় তার মাথার ভিতরটা হালকা হয়ে গেল! ও জাস্ট চলে গেল? সে যে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, তাকে একটা কথা বলা— কিচ্ছু না! বড়লোক, হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে পেয়ে ভুলে গেল তার কথা। এক মুহূর্ত শাঁটুলের মনে হল, ওই বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ‘সোহিনী, সোহিনী’ বলে ডাকে। ক্রমশ তার শূন্য মাথার মধ্যে লালবর্ণ রাগ দাপাতে লাগল উঠে এসে। সে নিজেকে ধিক্কার দিল, কী গান্ডু সে! এই মুহূর্তে তার কোথাও কোনও আশ্রয় নেই, আর কোনওদিন, আর কোনওদিন সে সোহিনীর মুখ দেখবে না! তার মনে পড়ল, সোহিনী যেদিন তাকে বারান্দা থেকে হাত তুলে চড় দেখিয়েছিল, সেদিন সোহিনীর চোখে ছিল অবজ্ঞা! সেই চড়টা তার গালে বসে গেল এখন! দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে বাইক ছোটাল শাঁটুল। ট্র্যাফিক সিগনাল ভেঙে পাড়ায় ফিরল সে। তখন ছ’টা বাজে। পাড়ায় ঢুকেই দেখল, অনাদি ঘোষাল স্ট্রিট থেকে তিন মাথার মোড় অবধি বেশ লোকজনের ভিড়। কী হয়েছে জানতে চাইল শাঁটুল। জ্যোতিষ্মানদা মুখ থেকে রক্ত তুলতে তুলতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল কতক্ষণ, কেউ জানে না। দরজা ভেঙে বের করে জ্যোতিষ্মানদাকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মকাইরা কেউ দায়িত্ব নিতে চায়নি। আয়েষাদিই আগে ট্রিটমেন্ট করানোর চেষ্টা করছিল, আয়েষাই লোকজন জুটিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে গেছে। আজ রাতেই ঠাকুরপুকুরে ট্রান্সফার করা হবে।

নার্সিংহোমের নাম জেনে নিয়ে তখনই বাইক ঘুরিয়ে সেখানে ছুটল শাঁটুল। লালুকে যেতে যেতে ফোন করল, “তুই আমাকে ফোন করিসনি কেন গাড়ল?”

সে বলল, “তুমি গেছ প্রেম মারাতে, ডিস্টার্ব করব?”

“সব সময় ইয়ার্কি ভাল লাগে না লালু।”

লালু চলে গেছে আয়েষাদির সঙ্গে, আগেই।

“কী অবস্থা?”

“এবার কেমো না দিলেই নয়। কিন্তু জ্যোতিষ্মানদা তো কেমো নেবে না বলে দিয়েছে। পুরনো নকশাল, তেজ খুব।”

“জ্ঞান ফিরেছে?”

“ফিরেছে।”

“আমি আসছি।”

সে গিয়ে পৌঁছোল নার্সিংহোমে। সেই সল্টলেক। আয়েষাদি ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছে। ধীমানদাও সেখানে। মকাইদাও আছে। মুখ ভেটকে দাঁড়িয়ে ওয়েটিং এরিয়ার সামনে। সে লালুর দিকে এগিয়ে গেল। লালু বলল, “শাঁটুল তোর গা থেকে একটা উগ্র সেন্টের গন্ধ বেরোচ্ছে।”

“তুই থামবি?”

“তোর মুখের অবস্থা তো খুব খারাপ রে? সবটাই কি জ্যোতিষ্মানদার জন্য? নাকি অন্য কারণ আছে?” তখনই লিফ্ট থেকে বেরিয়ে এল আয়েষাদি। আয়েষাদি এসেই শাঁটুলের কাঁধ চেপে ধরল, “তুই এসেছিস, শোন শাঁটুল! অভীকদাকে ফোন করে ডাক। জ্যোতিষ্মানদা বোধহয় সুইসাইড করতে গেছিল!”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *