কড়িখেলা – ৫

॥ ৫ ॥

আয়েষা সহজে কিছু ভোলার মেয়ে নয়। কমলের ওই জঙ্গি বউটা আর শাঁটুলের ইশারা-ইঙ্গিত দেখে হজম করার মেয়ে আয়েষা নয়! সে যদি অত নিরীহ টাইপ হত, তা হলে এই শক্ত জমির উপর আজ আর তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হত না। সেই দুপুরেই সে ভেবে নিয়েছিল, কমলের কানে কথাটা তুলতে হবে তাকে। শুধু কমলের কানে কেন, বিকেলে রাধাদিদের রকে বসে একটু রসিয়ে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথাটা বলে দিলেই হল। পাড়ায় ঢি-ঢি পড়ে যাবে! কমলের বউটাকে সে দু’চক্ষে সহ্য করতে পারে না। কমল নিজেই নিজের বউকে নিয়ে জেরবার! জিজ্ঞেস করলে কিছু বলে না অবশ্য। কমল মানুষটা তো বড্ড ভাল। সৎ, সাদাসিধে। আসলে আয়েষা এখন চালাক লোকজন একদম দেখতে পারে না। কেউ তার উপর দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেই আয়েষা তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে চেষ্টা করে। অভীককেই ছাড়ে না আয়েষা।

পান নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সে ঠিক করেছিল, কমলকে একটা ছুতোনাতায় রাতে ডেকে পাঠাবে বাড়িতে। কিন্তু বিপত্তি শুরু হল তখনই। তার ছোট মেয়েটা বড়ই দুরন্ত। সারাক্ষণই লাফাচ্ছে। বড় মেয়ে বাঁধন জন্ম থেকে শান্তশিষ্ট, মেয়েলি। যেমন হওয়ার কথা আর কী। পুতুল খেলতে ভালবাসে, ঘর সাজাতে ভালবাসে, কে কোথায় কোন শাড়ি পরল, কোন গয়নাটা পরল, পড়াশোনার চেয়ে এসবেই ওর ন্যাক বেশি। সেই সঙ্গে বাঁধন একটু বোকাও আছে। ষোলো- সতেরো বছর বয়স হল, কিন্তু নিজের ভাল-মন্দ এখনও কিচ্ছু বোঝে না! অনেকটা আয়েষা নিজে যেমন ছিল ছোটবেলায়, গোবেচারা জাতের, সেরকম। লোকে অবশ্য বিশ্বাস করে না সে গোবেচারা ছিল! সকলেই ভাবে, সে জন্ম থেকেই সেয়ানা! নইলে গোলক মাঝি লেনের খোঁয়াড় থেকে সে মোহিনীমোহন লেনের এই অট্টালিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারত না! সে যাই হোক, বাঁধন বড়লোকের আদুরে মেয়ের যেমন হওয়া উচিত তেমনই হয়েছে। এখনও বাঁধনের জন্মদিনের কেকের ডিজাইন সেই ঘাগরা পরা পরি। কিন্তু ছোট মেয়ে বাঁধুলির ধরনটা আলাদা। ও রক্তের মধ্যে আধিপত্য করার স্পৃহা নিয়েই জন্মেছে যেন। অনেকটা তার শ্বশুর বিশ্বম্ভর ঘোষের মতো। অনেকটা এখন সে যেমন, সেরকম। বাঁধন যেমন জন্ম থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ল, কিন্তু ইংলিশে কথা প্রায় বলতেই চায় না।

“বলিস না কেন?”

“বলি তো। কিন্তু এখানে সকলেই তো বাঙালি, তাদের সঙ্গে ইংলিশ বলতে লজ্জা করবে না?”

“কষ্ট করে শিখলি, বলবি না?”

“মা, তুমি না সত্যি! কষ্ট কোথায়?”

উফ, বাঁধন কী জানবে, কষ্ট কি না! সে কি জানে, কোনও কালে ইংলিশে আয়েষা বত্রিশের বেশি পায়নি! এখন ব্যাগে হাজার হাজার টাকা, ক্রেডিট কার্ড, তবু শপিং মলে ‘ইয়েস ম্যাডাম, হাউ মে আই হেল্প ইউ’ শুনলেই তার কেমন হীনম্মন্যতা হয়, তখন সে খুব রাগী রাগী আচরণ করে ফেলে। এদিকে বাঁধুলি একদম উলটো, ফটর ফটর ইংলিশ বলছে, বাড়িতেও কাঁটা-চামচে খায়, ভাত-ডাল মুখে রোচে না, সারাক্ষণ পিৎজ়া আর বিদেশি ফুড জয়েন্টের স্যান্ডউইচ- স্যালাডের জন্য বায়না। এদিকে সেরকম কোনও দোকানই নেই! ব্যস, গাড়ি পাঠাও সিটি সেন্টার সল্টলেক। মেয়ের পুতুল খেলায় মন নেই। ক্রিকেট খেলবে বলছে, জেদ! হাত-পা ছুড়ে কান্নাকাটি! এগারো বছরের মেয়ে শর্টস আর গেঞ্জি ছাড়া কিচ্ছু পরবে না। সালোয়ার-কামিজ? ‘ম্যা গো, তুমি পরো! ওসব জরি-চুমকি, তুমি পরো। পাথর সেটিং গয়না তুমি পরো না, তুমি পরো। প্লিজ়, ডোন্ট আস্ক মি টু ড্রেস আপ লাইক আ ক্লাউন!’ বাঁধুলি ভীষণ দাম্ভিক, ভীষণ অহংকারী। আর সেই কারণে গোপনে বাঁধুলিকেই বেশি পছন্দ করে আয়েষা। ছেলে হল না? এই তো ছেলে, ব্যাবসা দেখবে! বাঁধন তো তাও এখনও ‘দিদা, দিদা’ করে গোলক মাঝি লেনে ঢোকে, বাঁধুলি পা-ই রাখবে না!

সেই ছোট মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরে গাড়ি থেকে নামছে আয়েষা, মেয়ে লাফ দিয়ে নামল আর পা মচকে পড়ে গেল একেবারে উলটোনো ছাতার মতো! অভীকও তখন বাড়ি ঢুকছে দুপুরের ভাত খেতে। সকাল থেকেই আজকাল অভীক মদ্যপান শুরু করে। ফলে অভীকের চোখ লাল, বেশ একটু শিবাশিস শিবাশিস ভাব, পা সামান্য টলল হয়তো, দেখল, মেয়ে পড়ে গেছে, তাকালই না! চলে গেল সোজা উপরে। ফলকই ভরসা, ধরাধরি করে সে আর ফলক বাঁধুলিকে তিনতলায় তুলে আনল। পড়ে গিয়েও মেয়ে একটুও কাঁদেনি। কিন্তু ক্রমশ ব্যথা বাড়তে ছটফট করতে লাগল। পা ফুলে ঢোল হয়ে গেল, নীল জমাট কালশিটে।

ব্যথা পেয়েছে বলে বাঁধুলিকে নিজের ঘরে শুইয়েছিল আয়েষা। দেখাশোনা করতে সুবিধে হবে ভেবে। নইলে সে এমন মোটা হয়ে গেছে যে দোতলা তিনতলা করতে কষ্ট হয়। সিঁড়ি ভাঙতে পারে না। বাঁধুলি শুয়ে শুয়ে ‘উঃ আঃ’ করছে…অভীক এসে কী হম্বিতম্বি শুরু করল!

“নীচে নিয়ে যাও না! এখন আমি একটু খেলা দেখব, ঘুমোব। ওর অসুবিধে হবে।”

“এখন ও এঘরে থাকবে, আমার কাছে। তোমার যেতে হয়, অন্য ঘরে যাও।”

“আমার ঘরে আমি থাকব।”

“এটা আমারও ঘর!”

“ধুস শালা, যত জঞ্জাল এসে জুটেছে!” বলে অভীক চলে গেল ঘর থেকে। তিনতলায় একটা বসার ঘর আছে, সেখানে সোফা টোফা পাতা, মেঝেতেও গদি পেতে তাকিয়া টাকিয়া দেওয়া আছে, একটা টিভিও আছে বিয়াল্লিশ ইঞ্চির আর আছে শোকেস ভর্তি মদের বোতল, মদের আসর ওখানেই বসায় অভীক। আয়েষাও। তবে আয়েষা কখনও কাউকে মদ খেতে ডাকে না। সে অন্য অন্য উপলক্ষে পাড়ায় নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি বজায় রাখতে লোকজন ডেকে গ্যাদারিং করে। যেমন হোলির দিন, পয়লা বৈশাখে, সরস্বতীপুজোয়, লক্ষ্মীপুজোয়, কালীপুজোয়। তখন কেউ যদি বলে ‘আয়েষাদি একটু বের করো না!’ সে বের করে দেয়, নিজেও খায়। অভীকই তো খাওয়া ধরিয়েছে। অবশ্য আজকাল আয়েষা একদম একা খেতে পারে না, কাউকে লাগে তার। সত্যি কথা বলতে গেলে, এই ঘরটা আজকাল সন্ধের পর তারই দখলে চলে আসে। তার গ্রুপ, অভীকের গ্রুপ আলাদা! অভীক বেশিরভাগ দিনই সন্ধে জমাট বাঁধলে পার্ক স্ট্রিটের পানশালায় গিয়ে ওঠে, প্রচুর টাকা ওড়ায়। সেও টাকা ওড়াচ্ছে। লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন! তবে আয়েষা অনেক সৎ কাজেও অর্থ ব্যয় করে।

জঞ্জাল? হাসি পায় আয়েষার। সে গায়েই মাখে না অভীকের কথা। কিন্তু বাঁধুলি রেগে ওঠে, “চলো, চলো, আমি নীচে যাব। এখানে থাকব না।”

সে বলে, “চুপ করে শুয়ে থাক। আর উপর-নীচ করতে হবে না।”

“শোনো মা, আমাকে নীচে নিয়ে চলো। বিকেল হলেই তো তুমি পাড়া বেড়াতে বেরিয়ে পড়বে। আমার জন্য এত ওরিড হতে হবে না। ইউ মাইন্ড ইয়োর ওন বিজনেস।”

বাঁধুলি কি তাকে আজকাল ভিতর ভিতর ঘৃণা করে? কেন? তা কেন হবে? মেয়েদের তো আয়েষা বুক দিয়ে আগলে বড় করেছে। বিশেষত বাধুলিকে বাঁধনের চেয়েও বেশি যত্ন করেছে। কারণ, কেউ চায়নি তার দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হোক। অভীক আর বিশ্বম্ভর ঘোষ, দু’জনেই পুত্রসন্তান চেয়েছিল। শ্বশুর তো বেনারসে গিয়ে বিশ্বনাথের কাছে মানত করে এসেছিলেন। এই ইতিহাস থেকে তো আয়েষা নিজেই মেয়েকে আড়াল করেছে। সেই মেয়ে যত বড় হচ্ছে, মায়ের বিরুদ্ধাচরণ করছে। হায়, কপাল! কোনও কথাই শুনল না বাঁধুলি, দোতলায় চলে গেল।

নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে তারস্বরে টিভি চালিয়ে দিল। তাইল্যান্ড থেকে একটা বাম কিনে এনেছিল আয়েষা। মচকানো, ব্যথায় লাগালে খুব কাজ দেয়। সে বারবার দরজা ধাক্কাল মেয়ের ঘরের, “আচ্ছা শোন, এই বামটা লাগিয়ে নে। দ্যাখ, সেরে যাবে ব্যথা?” কোনও ফল হল না। বাঁধন নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বোনকে ডাকল, তা-ও মেয়ে শুনল না। আয়েষা তখন বাঁধনের ঘরে গিয়ে বসল একটু। ডালিয়া ছিল, ডালিয়া রোজই আসে দুপুরের দিকে। অগত্যা মেজাজটা ঠিক করতে আয়েষা ডালিয়ার সঙ্গে গল্প করতে লাগল তখন, “কী রে, ভানু এসেছিল শুনলাম। এতদিন পর হঠাৎ?”

ডালিয়া পায়ে নেলপলিশ লাগাচ্ছিল একটা নীল রঙের। বাঁধনের বোধহয় এক ক্রেট নেলপালিশ আছে। রোজ লাগাচ্ছে, রোজ তুলছে। মাঝে মাঝে তাকেও লাগিয়ে দেয়। ডালিয়া মুখ তুলে বলল, “এমনিই এসেছিল, ভানুদি তো আসতেই চায়। বরটা আসতে দেয় না। বাবার সঙ্গে একদম আদায় কাঁচকলায়। বাবাকেও তো তুমি জানো, ভীষণ জেদি। ভানুদিকে বাবা ভালইবাসে। কিন্তু ওই, বাবার অমতে বিয়ে করেছে! মা কত বলে ‘ভানুর বাবা-মা নেই, আমরা ছাড়া কেউ নেই। একটু ডাকি, একটু আসতে বলি, পুজোয় একটা শাড়ি পাঠাই’ বাবা কিছুতেই রাজি হবে না!” |

অভীকের একসময় খুব পছন্দ ছিল ভানুকে। দুজনে একই রাস্তার এমাথা-ওমাথা, একসঙ্গে বড় হয়েছে, সেই বরং সেদিক থেকে ভেবে দেখলে বেপাড়ার মেয়ে। ওদের দু’জনের- দু’জনকে পছন্দ ছিল, আয়েষা মাঝখানে ঢুকে পড়ল কী করে? সে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল, হঠাৎ ডালিয়া বলল, “ভানুদিকে কী দারুণ দেখতে হয়েছে, জানো তো আয়েষাদি? অন্য স্টাইলের দেখতে একদম! আর শাড়িটাও পরে এসেছিল দারুণ, ওরকম শাড়ি তোমার একটাও নেই, আমি শিয়োর!”

এইটুকু শুনেই গা-পিত্তি জ্বলে গেল আয়েষার। তার নেই, এমন কী শাড়ি আছে ভানুর শুনি? সেটার চেয়েও বেশি তার রাগ হল ডালিয়ার কথা বলার ধরন দেখে। থাকুক না-থাকুক, তুই বলবি কেন? আছে কি নেই, তুই কি জানিস?

“আমার কত শাড়ি আছে জানিস?” মোটা গোল হাত নেড়ে আয়েষা বলল, “তোর কল্পনাতেও আসবে না রে ডালিয়া।”

“তা তো বলিনি আয়েষাদি,” ডালিয়া বাঁ হাতে লাল নেলপলিশ লাগাচ্ছে এখন, “বললাম, ওরকম শাড়ি আমি তোমাকে কখনও পরতে দেখিনি! বলল, শাড়িটা সিল্ক মঙ্গলগিরি। তোমার আছে?”

“আছে কি নেই, সেটা দেখতেই পাবি যখন পরব!” বলল সে।

বাঁধনটা তত বোকাই, অমনই বলল, “তোমার আছে মা সিল্ক মঙ্গলগিরি? কেমন শাড়ি গো? দেখাও, দেখাও না?”

সিল্ক মঙ্গলগিরি? সিল্ক মঙ্গলগিরি! কোথায় পাওয়া যাবে সিল্ক মঙ্গলগিরি? বেনারসি কুঠি টুঠি? নাঃ, এদিকে পাওয়া যাবে না। শ্যামবাজার, হাতিবাগান, কলেজ স্ট্রিটে নয়, তা হলে সিটি সেন্টার? নাকি পার্ক স্ট্রিট? গড়িয়াহাট? মোটা শরীর নিয়েও তড়াক করে উঠে দাঁড়াল আয়েষা। বাঁধনকে বলল, “শোন, আমি একটু বেরোচ্ছি। দরকার আছে। বিকেল হলে সাবিত্রী মাসিকে বলবি বোনকে দুধ দিতে। চাউমিন করে দেবে, তোরা খেয়ে নিস।”

বাঁধন বলল, “মা, আমি আর ডালিয়ামাসি একটু হাঁড়ির গলিতে ফুচকা খেতে যাব? গাড়ি নিয়ে নেব।”

তার তখন সময় নেই, পারমিশন দিয়ে দিল আয়েষা! তারপর ফলককে ডেকে নামতে লাগল নীচে। ভুলেই গেল বাঁধুলি ব্যথা পেয়েছে।

গাড়ি ছুটল পার্ক স্ট্রিটে। ‘রং দে’ শাড়ির দোকান থেকে অজস্র শাড়ি কিনেছে আয়েষা জীবনে। কুড়ি হাজার, পঁচিশ হাজার টাকার শাড়িও কিনেছে কত। নেট, জারদৌসি, জরি- চুমকি, প্যাচওয়ার্ক, বাঁধনি, ক্রেপ ট্রেপ তো অগুনতি। ওরা তাকে শাড়ি গছাতে চেষ্টা করল, সিল্ক মঙ্গলগিরি কোথায় পাবে, বলতে পারল না। সম্মানের খাতিরে সে একটা আট হাজার টাকার সালোয়ার সুট কিনে স্টিচ করতে দিয়ে বেরিয়ে এল। তা হলে সিল্ক মঙ্গলগিরির জন্য এবার সে কোথায় যাবে? সন্ধে সাতটা নাগাদ যখন গড়িয়াহাট হয়ে আয়েষা দক্ষিণাপণে ঢুকল, তখন দোকানপাট বন্ধ হওয়ার মুখে। আশ্চর্য, তার শপিং-এর তালিকায় কেন কোনওদিন দক্ষিণাপণ পড়েনি? গোলপার্কের পর এই ঢাকুরিয়ার এদিকটা সে প্রায় কোনওদিনই আসেনি। যখন সাউথ সিটি তৈরি হচ্ছিল, সেই ২০০৩-’০৪ সালে তখন পঁয়ত্রিশ তলা আবাসন তৈরি হচ্ছে, কেমন হচ্ছে দেখতে এসেছিল সে একবার অভীকের সঙ্গে। তখন বাঁধন হয়েছে। অভীক প্রায় রবিবারই দু’-একজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে, তাকে নিয়ে, মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ত গাড়ি ড্রাইভ করে। তারপর সাউথ সিটিতে তারা কত এসেছে। কিন্তু ঢাকুরিয়া দিয়ে আসেনি, এসব জায়গা তার কাছে একদম নতুন!

একে-ওকে জিজ্ঞেস করে ঠিক দোকানে পৌঁছে যখন সে সিল্ক মঙ্গলগিরি দেখল, তখন নেহাতই নিরাশ হল! ও বাবা, এতে কিচ্ছুই তো নেই। সিল্কের থানের ওপর জড়ির পাড়। ব্যস? হেলায় তিন-চারটে মঙ্গলগিরি কিনে ফেলল সে। এটা দেখি, ওটা দেখি করে আরও কয়েকটা নানা খটমট নামের শাড়ি, তার ফর্সা নধর চেহারা, হাতে মোটা মোটা বালা, ব্যাগে গোছা গোছা নোট, দোকানটার সেলসগার্লরা তাকে দারুণ খাতির করল।

ওখানে সতেরো-আঠারো হাজার টাকার শাড়ি কিনে বেরিয়ে একতলার চত্বরের দোকানহীন পসরাগুলো থেকেও সে দু’-চারটে জিনিস কিনল।

সাদা বগল কাটা ঢিলেঢালা ম্যাক্সি দুশো টাকা করে দুটো। লাল, নীল, হলুদ টেবিল ম্যাট ছ’টা, বাঁধন আর বাঁধুলির জন্য দুটো রাজস্থানি জুতি। এসব কিনে যখন বাড়ি ফিরল আয়েষা, তখন রাত সাড়ে ন’টা।

সে এসে দেখল, বাঁধুলির ঘরে বসে আছেন শাশুড়ি আর বাঁধন। বাঁধুলির বেশ জ্বর এসেছে। অভীক বাড়িতে নেই। বিশ্বম্ভর ঘোষ একতলায় চল্লিশ বছরের পুরনো বোতলের বন্ধুর সঙ্গে দরজা বন্ধ করে পান করছেন।

তাকে দেখেই বাঁধন বলল, “ফুচকা খেয়ে ফিরে দেখি বোনের জ্বর। ঠাম্মিকে ডাকলাম নীচ থেকে। কমলকাকুকে ফোন করেছি। আসছে!”

শাশুড়ি তার সঙ্গে কথা বলেন না, বাঁধনকে শাশুড়ি বললেন, “এই তো, মা এসে গেছে। আমি যাই, গোপালকে শুইয়ে আসি।”

আয়েষা তাড়াতাড়ি উপরে ছুটল জিনিসপত্র রাখতে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *