অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ
মসের সঙ্গে বোঝাপড়া হয়ে যাবার দু’দিন পরে অলিভার গাড়ি করে যাচ্ছিলো সেই অনাথ-আশ্রমে যেখানে সে জন্মেছিলো। তার সঙ্গে ছিলেন মিসেস্ মেইলী, রোজ ও মিসেস্ বেডুইন। মিস্টার ব্রাউন্লো অপর সঙ্গীদের নিয়ে আরেকখানা গাড়িতে আসছিলেন।
গাড়ি যতই অনাথ-আশ্রমের কাছাকাছি এগিয়ে এলো, ততই অলিভারের চোখের সামনে তার ছেলেবেলার ঘটনাগুলো ভেসে উঠতে লাগলো—সেই পথঘাট, সেই বাড়িঘর, এমনকি অনাথশালার দরোয়ানটা পর্যন্ত ঠিক তেমনি আছে। এসব দেখে অলিভার কখনও হেসে উঠলো…কখনও বা কাঁদতে লাগলো।
গাড়ি এসে দাঁড়ালো শহরের সেরা হোটেলের সামনে, যে-হোটেলের দিকে অলিভার তার ছেলেবেলায় তাকিয়ে থাকতো ভয়-মেশানো সম্ভ্রম নিয়ে। এই হোটেলেই দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মিসেস্ মেইলী, মিসেস্ বেডুইন্ ও রোজ অলিভারকে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে চুপচাপ বসে কাটালেন বাকি দিনটা। রাত নটায় মিস্টার গ্রীমউইগ্ আর মিস্টার ব্রাউন্লো সেই ঘরে ঢুকলেন মঞ্চকে নিয়ে। মঙ্ককে দেখে অলিভার আঁতকে উঠলো। মসের চোখে-মুখেও নিদারুণ ঘৃণার ছাপ ফুটে বেরুলো।
মিস্টার ব্রাউন্লোর হাতে একতাড়া কাগজ ছিলো। তিনি জানালেন যে, লন্ডনের বহু সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকের সামনে মসের কাছ থেকে এই স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। তারপর তিনি অলিভারকে দেখিয়ে মঙ্কসকে বললেন : “এডওয়ার্ড লীফোর্ড, এই হলো তোমার বৈমাত্রেয় ভাই—তোমার বাপ এবং য়্যাগনেস্ ফ্লেমিংয়ের একমাত্র ছেলে।”
মিস্টার ব্রাউন্লোর হুকুমে মঙ্কস সকলের সামনে আসল কথাটা প্রকাশ করলো। সে জানালো যে, রোমে তার ও অলিভারের বাবা যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, মক্কসের মা তখন প্যারিসে ছিলেন। স্বামীর গুরুতর অসুখের খবরটা শুনেই তিনি সম্পত্তির লোভে ছুটে যান সেখানে। মসের বাবার কাগজপত্তরের মধ্যে অলিভারের মায়ের কাছে লেখা একখানা চিঠি এবং তাঁর উইল ছিলো। সেই চিঠিতে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, য়্যাগনেস্ তাঁর বাগদত্তা বউ, আর সেই উইলে তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন যে, মঙ্কস ও তার মা প্রত্যেকে বছরে আটশো পাউন্ড করে বৃত্তি পাবে এবং বাকি সম্পত্তি সমান দু’ভাগে ভাগ হবে— এক ভাগ পাবে য়্যাগনেস্ এবং বাকিটা পাবে য়্যাগনেসের ছেলে। উইলে শর্ত ছিলো যে, য়্যাগনেসের ছেলে যদি নাবালক বয়সে বদ-সঙ্গীদের সাথে মিশে উচ্ছন্নে না যায়, তবেই সে তার বাবার সম্পত্তি পাবে, নইলে তার পাওনা ভাগটা সবই পাবে মঙ্কস্।
মঙ্কস আরো জানালো যে বাবার এই চিঠি ও উইল তার মা নষ্ট করে ফেলেন। তারপর তিনি য়্যাগনেসের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করে য়্যাগনেসের নামে নানারকম মিথ্যা অপবাদ দেন। ফলে, তার পরদিনই য়্যাগনেসের বাবা সে-বাড়ি ছেড়ে দিয়ে, কাউকে ঠিকানা না জানিয়ে অন্য জায়গায় চলে যান। য়্যাগনেস্ এর আগেই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলো। বাড়ি বদলানোর ক’দিন পরেই য়্যাগনেসের বাবা মনের দুঃখে হার্টফেল করে মারা যান।
মঙ্কস এবার বললো যে, মারা যাবার কয়েকদিন আগে তার মা সেই উইল ও চিঠির বিষয়ে সমস্ত গোপন খবর তার কাছে ফাঁস করে দেন। মসের মা সে-সময় মকে আরও বলে যান যে তাঁর ধারণা, য়্যাগনেসের একটা ছেলে হয়েছে এবং সেই ছেলের ব্যাপারে সে যেন সব সময় সাবধান থাকে। একথা শুনে মঙ্কস তার মায়ের কাছে শপথ করে যে, সে তার বৈমাত্রেয় ভাইকে বেকায়দায় ফেলে জেলে পাঠিয়ে ঘানি টানাবে, আর এভাবে বাপের উইলের শর্ত অনুসারে তার ভাইয়ের পাওনা ভাগটা সে নিজেই ভোগ করবে।
তারপর মঙ্কস বললো যে, তার মায়ের মৃত্যুর পরে সে অলিভারকে হঠাৎ রাস্তায় ফ্যাগিনের দলের লোকদের সাথে দেখতে পায়। তখন সে ফ্যাগিনের কাছে গিয়ে তাকে অনেক টাকার লোভ দেখালো, যাতে ফ্যাগিন্ আলিভারকে আটকে রেখে ধীরে ধীরে পাকা চোর বানিয়ে দেয়। মঙ্কস আরও বললো যে, মিসেস্ বাম্বলের কাছ থেকে সে কায়দা করে য়্যাগনেসের লকেট ও আঙটি হাতিয়ে নিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। শেষে মঙ্কস্ বললো যে, অলিভারের খোঁজ করার জন্যে সে ফ্যাগিকে নিয়ে মিসেস্ মেইলীর বাড়িতে গিয়েছিলো এবং জানালায় অলিভারকে বসে থাকতে দেখেছিলো।
মঙ্কস থামলে মিঃ ব্রাউন্লোর ইশারায় মিঃ গ্রীমউইগ্ উঠে গিয়ে বাম্ – দম্পতিকে নিয়ে এলেন। ঘরে ঢুকেই আন্তরিকতার ভান করে বলে উঠলেন মিস্টার বাম্বল : “আরে আরে অলিভার যে! আঃ, অলিভার! তোমার জন্যে আমি এতোদিন কী দুঃখই না পেয়েছি!”
মিসেস্ বাম্বল ধমকে উঠলেন : “চুপ করো, বোকচন্দর!”
মিস্টার বাম্বল বললেন : “আঃ, মিসেস্ বাল! তুমি বুঝতে পারছো না— এই উচ্ছ্বাসটা যে স্বাভাবিক! কত যত্নে ওকে লালন-পালন করেছি আমি…ওর কথা কি আমি ভুলতে পারি? আমি চিরকাল ভালোবেসেছি ওকে ঠিক আমার বুড়ো ঠাকুরদাদার মতো!
মিঃ গ্রীমউইগ্ এবার রেগে বলে উঠলেন : “আরে মশাই, আপনার উচ্ছ্বাসটা একটু থামান তো!”
মিস্টার বাম্বল বললেন, “ও, আচ্ছা, বেশ-বেশ! তা, আপনি কেমন আছেন স্যার?” প্রশ্নটা করলেন তিনি মিঃ ব্রাউন্লোকে!
মিঃ ব্রাউন্লো সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মিসেস্ বাম্বলকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি মঙ্ককে চেনেন কিনা। মিসেস্ বাম্বল সাফ জবাব দিলেন—না। সোনার লকেট ও আঙটির কথাও অস্বীকার করলেন তিনি। তখন মিঃ ব্রাউন্লোর ইশারায় মিঃ গ্রীমউইগ্ আবার উঠে গিয়ে বাইরে থেকে দু’জন বুড়িকে নিয়ে এলেন সেখানে।
বুড়ি দুজন জানালো যে, স্যালী বুড়ি মরবার সময়ে মিসেস্ বাম্বলকে যা বলেছিলো, তারা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে তা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলো। তাছাড়া তারা মিসেস্ বাম্বলকে বন্ধকীর দোকান থেকে একটা লকেট ও সোনার আঙটি ছাড়িয়ে আনতে দেখেছে।
মিসেস্ বাম্বল্ এবার সব কিছু স্বীকার করলেন।
মিস্টার বাম্বল ভয় পেয়ে মিঃ ব্রাউন্লোকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ও এই ঘটনার ফলে তাঁর অনাথ-আশ্রমের চাকরিটা যাবে কি না!
মিঃ ব্রাউন্লো জানালেন : “নিশ্চয়ই যাবে।”
মিস্টার বাম্বল বললেন যে, এ-ব্যাপারে তাঁর কোনো দোষ নেই—সব দোষ তাঁর স্ত্রীর।
মিঃ ব্রাউন্লো বললেন : “এ-কৈফিয়ত আইন মানবে না, কেননা সব জেনে শুনেও পরিচয় চিহ্নটা নষ্ট করা হয়েছে এবং আইন ধরে নেবে যে, তাঁরই কথামতো তাঁর স্ত্রী এই বেআইনী কাজ করেছেন।”
মিস্টার বাম্বল বললেন : “আইন যদি এ-কথা ধরে নেয় তো, আইন একটা নিরেট গাধা। আইন তাহলে কখনো বিয়ে করেনি!”
একথায় সকলে হো-হো করে গলা ফাটিয়ে হেসে উঠলো।
বাম্বল-দম্পতি চলে গেলে মিঃ ব্রাউন্লোর প্রশ্নের জবাবে মঙ্কস জানালো, য়্যাগনেসের ছোটো বোন রোজকে সে এর আগে বহুবার দেখেছে! সে আরও জানালো যে, বাবাকে হারিয়ে রোজ একেবারে অনাথ হয়ে পড়ে। তখন এক গরীব ছাপোষা লোক দয়াপরবশ হয়ে তাকে লালন-পালন করতে থাকে। আত্মীয়- স্বজনেরা রোজের খোঁজ না পেলেও, মসের মা কিন্তু তাকে খুঁজে বের করেন এবং তার আশ্রয়দাতাকে কিছু টাকা দিয়ে য়্যাগনেস্ এবং রোজের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আসেন। রোজকে আশ্রয় থেকে তাড়িয়ে দেওয়াই ছিলো তার মায়ের মতলব। এসময়ে একজন বিধবা মহিলা রোজকে দেখে দয়াপরবশ হয়ে নিজের বাড়িতে এনে লালন-পালন করতে থাকেন।
মিঃ ব্রাউন্লো জিজ্ঞাসা করলেন : “রোজকে কি এখানে দেখতে পাচ্ছো?”
রোজের দিকে আঙুল বাড়িয়ে মঙ্কস্ বললো : “হ্যাঁ, ওই যে হাতের ওপরে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোজ।”
অলিভার রোজকে জড়িয়ে ধরে বললো : “আমি কিন্তু তোমাকে মাসি বলে ডাকবো না–দিদি বলেই ডাকবো।”
কিছুক্ষণ পরে হ্যারী মেইলী এসে ঢুকলো সেই ঘরে। তখন রোজ আর হ্যারীকে সে-ঘরে রেখে বাকি সবাই বেরিয়ে গেল।
হ্যারী রোজকে জানালো যে, রোজের পুরোনো ইতিহাসের সবকিছুই সে আগে থেকে জানে…এখন তো রোজের অপবাদ দূর হয়ে গেছে, তাই সে আবার এসেছে রোজের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করতে।
রোজ তবুও এ বিয়েতে রাজী হলো না। সে বললো যে, যদিও সে আজ অপবাদ থেকে রেহাই পেয়েছে, তাহলেও সে গরীব, আর হ্যারী শুধু বড়লোকই নয়—আইনসভার সদস্যও বটে।
হ্যারী তখন জানালো যে, এ বাধাও আর নেই, কেননা রোজের সঙ্গে নিজের অবস্থার তফাতটা দূর করার জন্যে সে আইন সভার সদস্যের পদে ইস্তফা দিয়ে গাঁয়ের গির্জায় পাদরীর চাকরি নিয়েছে। এবার থেকে তার জীবন হবে শান্ত…সহজ…সরল অনাড়ম্বর।
অগত্যা রোজ এ বিয়েতে রাজী হতে বাধ্য হলো।
***
আদালতের বিচারে ফ্যাগিনের প্রাণদণ্ড হলো। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো অনেক। ছোটো ছোটো ছেলেদের দলে টেনে তাদের চোর ও পকেটমার বানিয়ে অর্থ যোগাড় করাই ছিলো তার প্রধান পেশা—তাছাড়া সিঁধেল চোর, ডাকাত প্রভৃতি নানা অসামাজিক লোকের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিলো ঘনিষ্ঠ… শেষে সাইকে তাতিয়ে ন্যানসিকে খুন করার মূলে ছিলো সে।
আদালত-গৃহ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠলো ফ্যাগিনের বিচারের সময়। দর্শকরা ফ্যাগিনের ওপর আক্রোশে ফেটে পড়লো। অনেক কষ্টে আদালতের কর্মচারীরা তাদের শান্ত করলো।
ফ্যাগিন্ বললো যে, অনাথ ছেলেদের দুঃখ-দুর্দশায় ব্যথিত হয়ে সে তার যথাসাধ্য চেষ্টা করতো তাদের কাজকর্ম যোগাড় করে দিতে। তাই তারা তার কাছে আশ্রয় নিতো। সে স্বীকার করলো যে, নিদারুণ অভাবের জন্যে হয়তো বা তাদের কেউ কেউ পকেটমারের কাজ করতো, কিন্তু সেজন্যে সে মোটেই দায়ী নয়। তার উদ্দেশ্য ছিলো মহৎ—অনাথদের সেবা করা।
ন্যানসিকে খুনের ব্যাপারে ফ্যাগিন্ স্বীকার করলো যে সে সাইকে সাধ্যমতো বুঝিয়েছিলো খুন না করতে, কিন্তু সাইক্স্ ছিলো জেদী ও গোঁয়ার। সে তার কোনো কথা না শুনেই খুন করে বসলো ন্যানসিকে।
ফ্যাগিন্ নিজের সাফাই গাইলেও আদালত তাকে ক্ষমা করলো না। বিচারে তার ফাঁসির সাজা হয়ে গেল।
ফাঁসির দিন জেলখানায় লোক জমায়েত হলো দলে দলে। ন্যানসির মতো সমাজের আস্তাকুঁড়ের অসহায় মেয়ে কিভাবে নিজের জীবন বলি দিয়ে একটা অনাথ ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো সেকথা ছড়িয়ে পড়েছিলো লোকের মুখে মুখে। ন্যানসি মহীয়সী হয়ে উঠেছে সকলের কাছে। তাই ন্যানসিকে খুনের অপরাধে যাকে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে, সেই মহাপাপীকে দেখার ইচ্ছে হলো অনেকের, বিশেষ করে যারা এর আগে আদালতে ফ্যাগিকে দেখতে পায়নি তারা এসে ভিড় করলো জেলখানার দরজায়।
ফাঁসিকাঠে নিয়ে যাবার সময় ফ্যাগিকে একটা সরু গলিপথ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। সেই গলিপথের চারদিকে জনতা দাঁড়িয়ে ফ্যাগিকে গালিগালাজ করতে লাগলো, তাদের মধ্যে কেউ বা থুথু দিলো তার গায়ে, কেউ বা ছেঁড়া জুতো ছুঁড়লো তার দিকে।
অসংখ্য লোকের গালিগালাজ শুনতে-শুনতে ফ্যাগিন্ গিয়ে ফাঁসিকাঠের সামনে হাজির হলো। প্রাণভয়ে তার পা থরথর করে কাঁপছে তখন। মনে পড়লো ন্যানসিকে ও সাইকে। তাদের কথা মনে করতে করতে ফ্যাগিন্ ফাঁসিকাঠে ঝুলে পড়লো।
***
এর পরের কাহিনী খুবই ছোটো। তিন মাসের মধ্যেই হ্যারী আর রোজের বিয়ে হয়ে গেল। হ্যারী যে-গাঁয়ের গির্জায় পাদরীর পদ পেয়েছিলো, সেখানে সে রোজকে নিয়ে গিয়ে বাস করতে লাগলো। মিসেস্ মেইলীও তাদের সঙ্গে বাস করতে গেলেন।
বাবার উইল-মতো অলিভার সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয়েও, মিস্টার ব্রাউন্লোর উপদেশে মকে একটা ভাগ ছেড়ে দিলো। মঙ্কস সে টাকা নিয়ে সুদূর আমেরিকার এক শহরে চলে গেল। সেখানেও সে আবার খারাপ দলে মিশে কিছুদিনের মধ্যেই সব সম্পত্তি উড়িয়ে ফেললো। তারপর জালিয়াতির অপরাধে হলো তার সশ্রম কারাবাস আর জেলের মধ্যেই রোগে ভুগে সে একদিন মারা গেল।
মিঃ ব্রাউন্লো অলিভারকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করে, হ্যারী ও রোজের বাড়ির মাইলখানেক দূরে এসে বাসা বাঁধলেন। মিঃ গ্রীমউই তাঁর চিরসাথী হয়ে রইলেন সেখানে
ডাক্তার লসবার্নেরও আর তাঁর কাজের জায়গায় মন টিকলো না। তিনি তাঁর ডাক্তারখানা সহকারীকে দান করে, হ্যারীদের গাঁয়ের ধারে একখানা কুটির কিনে বাস করতে লাগলেন।
রাজসাক্ষী হয়ে শাস্তি থেকে রেহাই পেয়েছিলো নোয়া ক্লেপোল্। সে এখন শার্লটির সাথে বেসরকারী গোয়েন্দার কাজ করতে লাগলো।
বাম্বল-দম্পতি চাকরি খুইয়ে, অনাথ-আশ্রমেই আশ্রয় নিয়ে অতি দীনভাবে জীবন কাটাতে লাগলেন।
গাইলস্ আর ব্রিটলসের অবস্থা দেখে বোঝাই যেতো না, তারা আসলে কাদের চাকর। কখনও মেইলী-পরিবার, কখনও বা মিঃ ব্রাউন্লো ও অলিভার, কখনও-বা ডাক্তার লস্বার্নের বাড়িতে তারা থাকতো।
চার্লস্ বেটস্ এর পর থেকে ভালোভাবে জীবন কাটানোর কড়া সংকল্প নিয়ে নানা দুঃখকষ্ট ভোগ করলো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো নর্দাম্পটনশায়ারের সবচেয়ে সুখী রাখাল হিসেবে।
রোজের স্নেহে ও মিস্টার ব্রাউন্লোর যত্নে—অলিভার দিন-দিন নানা বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠতে লাগলো।
***
আজও পথিকেরা পথ চলার সময় একবার থমকে থামে অলিভারের জন্মস্থানের পুরোনো গির্জার প্রাঙ্গণে—যেখানে একটা কবরের ওপরে একখানা স্মৃতিফলকে সোনার অক্ষরে একটা নাম লেখা আছে—’য়্যাগনেস্!
সমাপ্ত
Thanks a lot. Very interesting!
Awesome!