দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
অনাথ-আশ্রমের বৈঠকখানার অগ্নিকুণ্ডের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলেন মিস্টার বাম্বল। তাঁর চোখ দুটো উদাস ছলছল, মুখে বিষাদের কালো ছায়া। তিনি তাঁর পুরোনো জীবনের কথা ভাবছিলেন।
তাঁর পোশাকের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। অনাথ-আশ্রমের তত্ত্বাবধায়কের চকচকে মেরজাই আর তাঁর গায়ে নেই। তিনি আজকাল আর তত্ত্বাবধায়ক নন— মিসেস্ কর্নিকে বিয়ে করে আশ্রমের কর্তা হয়েছেন। অন্য লোক এখন তত্ত্বাবধায়কের কাজ করছেন।
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মিঃ বাম্বল বললেন : “কাল দু’মাস পুরো হবে। মনে হচ্ছে একটা যুগ কেটে গেছে যেন! উঃ, নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছি আমি মাত্র ছ- খানা চামচ, একজোড়া রুপোর বাটি, একটা দুধের গামলা, কিছু পুরোনো আসবাব আর কুড়িটা পাউন্ডের জন্যে। বড়ো সস্তায় বিকিয়ে গেছি….ধুলোর মতো সস্তা!”
—“সস্তা!” পেছন থেকে একটা চড়া গলা ভেসে এলো : “যে-দামেই তোমাকে কেনা হয়ে থাক না কেন, সেটা-ই বেশি দেওয়া হয়েছে!”
ফিরে তাকিয়ে মিঃ বাম্বল দেখলেন, তাঁর নতুন বিয়ে করা বউ দাঁড়িয়ে। মিঃ বাম্বল তাঁর বরাবরের অভ্যাসমতো রুক্ষ মেজাজে বললেন : “কী ব্যাপার?”
মিঃ বাম্বলের যেরকম চাহনি দেখে অনাথ-আশ্রমের বাসিন্দারা ভয়ে কুঁকড়ে যেতো ঠিক সেই ধরনের হিংস্র চাহনি নিয়ে কটমটিয়ে তাকালেন নিজের স্ত্রীর দিকে। কিন্তু মিসেস্ বাম্বল ওরফে কর্নি তাতে একটুও ভয় পেলেন না, বরং তুড়ি মেরে হেসে উঠলেন।
মিস্টার বাম্বল মুখ গোমড়া করে বসে রইলেন।
মিসেস্ বাম্বল জিজ্ঞাসা করলেন, “আজ কি সারাদিনটাই ওখানে বসে নাক ডাকাবে নাকি?”
মিস্টার বাম্বল জবাব দিলেন : “আমার যা খুশি তাই করবো। নাক ডাকাবো….হাঁ করে থাকবো….হাঁচবো কাঁদবো…আমার যা ইচ্ছে, আমি তাই করবো…সে অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে।”
আর এ পরদা গলা চড়িয়ে রুক্ষ মেজাজে মিসেস্ বাম্বল বললেন : “ তোমার অধিকার?”
—“হ্যাঁ, অধিকার। সব-কিছু করার একচেটিয়া অধিকার পুরুষদের আছে। মেয়েদের অধিকার শুধু পুরুষদের হুকুম তামিল করা।”
রাগে মিসেস্ বাম্বল গর্জে উঠলেন : “তোমাদের মতো জানোয়ার ছাড়া এ ধরনের কথা কেউ বলে না। তুমি তো মানুষও নও, একটা আস্ত গাধা!” তারপর মিসেস্ বাম্বল রাগে কেঁদে ফেললেন।
মিস্টার বাম্বল তাতে কিন্তু একটু ঘাবড়ে গেলেন না। ব্যঙ্গের সুরে তিনি বললেন : “হ্যাঁ, খুব করে কাঁদো। চোখের জলে ধুলে মুখের ময়লা কেটে যায়, চোখের ব্যায়াম হয়.. মেজাজ ঠাণ্ডা হয়….বুঝলে? আচ্ছা করে কেঁদে নাও।” একথা বলে বেশ চালের সঙ্গে দাঁড়িয়ে উঠে ‘তিনি ট্রাউজারের দু’পকেটে হাত ঢুকিয়ে ঘরের বাইরে পা বাড়ালেন।
মিঃ বাম্বল মাত্র ঘরের দরজা অবধি গেছেন, এমন সময় তাঁর মাথা থেকে বোঁ করে টুপিটা উড়ে গেল। তাঁর স্ত্রী তাঁকে জাপটে ধরে বেশ গোটাকয়েক কিল বসিয়ে দিলেন। তারপর স্বামীকে ঘরের মধ্যে টেনে এনে চেয়ারে জোর করে বসিয়ে ক্ষেপা কুকুরের মতো হাতের নখ দিয়ে চোখ-মুখ আঁচড়াতে লাগলেন। শেষে মুঠো করে মাথার চুল টেনে ধরে বললেন : “ওঠো শীগগির। এখনি বেরিয়ে যাও এখান থেকে। নইলে তোমার কপালে এর চেয়েও ঢের বেশি দুর্ভোগ আছে।”
মিঃ বাম্বল ভয়ে-ভয়ে তাঁর টুপিটা মেঝে থেকে কুড়িয়ে নিয়ে সরে পড়লেন।
বেরুবার সময় মিঃ বাম্বলের নজরে পড়লো, বাইরে একটা ঘরের ভেতর কতকগুলো অনাথা মেয়ে গোলমাল করছে। কর্তৃত্বের অভিমানে ঘরে ঢুকে ধমক দিয়ে উঠলেন : “কি হচ্ছে? এত হল্লা করছিস্ কেন?”
এমন সময় মিসেস্ বাম্বল সেখানে ছুটে এসে স্বামীকে দেখে গর্জে উঠলেন : “এখনো দূর হওনি এখান থেকে?”
ভিজে বেড়ালের মতো মিঃ বাম্বল বললেন “এরা যে গোলমাল করছিলো।”
—“গোলমাল করছিলো তো তোমার কি?” ভেংচে উঠলেন মিসেস্ বাম্বল : “এরা চেঁচাক, হৈ-হট্টগোল করুক, তাতে তোমার কি? খবরদার এদের ব্যাপারে কখনো নাক গলাতে এসো না। যাও এখান থেকে দূর হও শীগির!”
মুখ কাঁচু-মাচু করে মিঃ বাম্বল বেরিয়ে গেলেন অনাথ-আশ্রম থেকে
সদর দরজা দিয়ে বেরুবার সময়, রাগ দেখাবার জন্যে দ্বাররক্ষী অনাথ- বালকটার কানে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলেন। তারপর পথে-পথে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়িয়ে মনের জ্বালাটা কিছুটা উপশম করলেন। এমন সময়ে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো। তখন একটা মদের দোকানে ঢুকে এক গেলাস মদ দেবার হুকুম দিয়ে বসলেন তিনি।
দোকানে তখন আর একজন মাত্র লোক ছিলো। লোকটা লম্বা, গায়ের রং ময়লা, মস্ত একটা কোট তার পরনে। মিঃ বাম্বুলের সঙ্গে তার চোরা-চাহনির বিনিময় হলো কয়েকবার, কিন্তু দুজনেই চুপচাপ
কিছুক্ষণ পরে লোকটা বললো : “মনে হচ্ছে যেন আগে কোথাও দেখেছি আপনাকে, তখন কিন্তু আপনার বেশভূষা ছিলো অন্যরকম।”
মিঃ বাম্বল বললেন : “হ্যাঁ। আমি তখন অনাথ-আশ্রমের তত্ত্বাবধায়ক ছিলাম। এখন আমি আশ্রমের কর্তা
লোকটা বললো : “তা; উঁচু পদে উঠলেও আপনার টাকার খাঁকতি কমেনি নিশ্চয়ই?”
মিঃ বাম্বল বললেন : “তা, অনাথ-আশ্রমের কর্মীদের মাইনে তো এমন কিছু বেশি নয়। ভদ্রভাবে উপরি-আয় কিছু হলে তারা কি তা ছাড়তে পারে?”
লোকটা তখন দোকানদারদের ডেকে আরও দু-গেলাস মদ দেবার হুকুম দিয়ে মিঃ বাম্বলকে বললো : “শুনুন তবে। আপনার খোঁজেই আমি আজ এসেছি এ- শহরে। তা, ভাগ্যক্রমে সহজেই দেখা হয়ে গেল আপনার সঙ্গে। আপনার কাছে কিছু খবর জানতে চাই, অবশ্য বিনি পয়সায় নয়। এর প্রমাণ হিসেবে এই নিন সামান্য কিছু আগাম—রাখুন এটা।” এই বলে সে দুটো গিনি গুঁজে দিলো মিঃ বাম্বলের হাতে।
মিঃ বাম্বল গিনি দুটো ভালো করে দেখে নিয়ে পকেটে পুরলেন। লোকটা বলতে লাগলো : “এবারে কাজের কথায় আসা যাক্। আপনাকে একটু কষ্ট করে ভাবতে হবে বছর-বারো আগের কথা। শীতকাল স্থান অনাথশালা….. সময় রাত। একটা ছেলে জন্ম দিয়ে মারা গেলো এক অনাথা তরুণী।”
বাধা দিয়ে মিঃ বাম্বল বললেন : “একটা কেন, এরকম ঘটনা তো আগে অনেক ঘটতে দেখেছি।”
লোকটা চেঁচিয়ে উঠলো : “গোল্লায় যাক্ আপনার অনেক ঘটনা। আমি একটা ঘটনার কথাই বলছি। যে-ছোঁড়াটা কিছুদিন কফিনওয়ালার কাছে কাজ করেছিলো, আমি সেই ছোঁড়াটার কথাই বলছি। ছোঁড়াটা যে কেন নিজের কফিনও ওই সাথে তৈরি করে তার মধ্যে চিরদিনের মতো শুয়ে পড়লো না, সেকথাই বার বার ভাবি।”
—“ও, আপনি কি তাহলে অলিভারের কথা বলছেন? অলিভার টুইস্ট? সেই লক্ষ্মীছাড়া ছোঁড়াটার কথা বোধহয় জানতে চান?”
—“না, অলিভারের বিষয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না—অনেক শুনেছি তার বিষয়ে। আমি জানতে চাই সেই বুড়ির কথা, যে অলিভারের মায়ের দাইয়ের কাজ করেছিলো।”
—“সে বুড়ি গত বছর শীতকালে মারা গেছে।” মিঃ বাম্বল বললেন। এ- কথা শুনে লোকটা কি যেন খানিকক্ষণ ভাবতে লাগলো, তারপর “যাক্-গে” বলে উঠে পড়লো। মিঃ বাম্বলের মনে হলো, তাঁর স্ত্রীর কাছে এমন কিছু গোপন খবর থাকতে পারে, যা হয়তো এ লোকটাকে দিতে পারলে কিছু টাকা রোজগার করা যাবে। কেননা, স্যালী বুড়ি মারা যাবার আগে তাঁর স্ত্রীকে ডেকে গোপনে কি সব বলে গিয়েছিলো। সেসব মনে করে তিনি লোকটাকে বললেন : “সেই বুড়ি মরার কিছু আগে অপর এক মেয়েছেলেকে গোপনে কিসব যেন বলেছিলো—খুব সম্ভব তা থেকে আপনার কিছুটা কাজ হতে পারে।”
এ কথায় লোকটার মুখে চিন্তার রেখে ফুটে উঠলো। সে জিজ্ঞাসা করলো : ‘কেমন করে আমি সেই মেয়েছেলের দেখা পেতে পারি।”
মিঃ বাম্বল বললেন : “সে ব্যবস্থা আমি করে দিতে পারি, মশাই। অবশ্য আপনি যদি আগামীকাল পর্যন্ত সময় দেন আমাকে।”
— “তাহলে কাল ঠিক রাত নটার সময় এই ঠিকানায় সেই মেয়েছেলেকে নিয়ে আসবেন গোপনে।” এই বলে সে এক টুকরো কাগজে একটা ঠিকানা লিখে বাম্বলকে দিলো। তারপর মদের দাম মিটিয়ে দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে গেল লোকটা।
মিঃ বাম্বল কাগজের টুকরোটা পড়ে দেখলেন যে তাতে কোনো নাম লেখা নেই। তিনি তাড়াতাড়ি লোকটার পিছু ধাওয়া করে কাছে এগিয়ে গিয়ে ডাকতেই লোকটা চেঁচিয়ে উঠলো : “কি হলো আবার? পেছু ধাওয়া করলেন কেন?”
কাগজখানা দেখিয়ে মিঃ বাম্বল বললেন : “কার নাম ধরে ডাকবো আমি?”
—“মঙ্কস্।”
***
গরমের গুমোট-ভরা রাত। ঘন মেঘে-ঢাকা আকাশ। এর মাঝে এক পশলা জোর বৃষ্টি হয়ে গেছে—ঝড়ের সঙ্কেতও মাঝে মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এমন সময় মিস্টার ও মিসেস্ বা এক বস্তিতে একটা পুরোনো ভাঙা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালেন। বাড়িটার পাশ দিয়ে একটা নদী বয়ে যাচ্ছে।
—“কে ওখানে? দাঁড়াও এক মিনিট!”
দোতলা থেকে ঝুঁকে পড়ে একটা লোক বাল-দম্পতিকে দেখে ওই কথা বললো। একটু পরেই লোকটা নেমে এসে দরজা খুলে দিয়ে বললো : “ভেতরে এসো।”
মিসেস বাম্বল প্রথমে একটু ইতস্তত করে তারপর সাহসের সঙ্গে ঢুকে পড়লেন। লজ্জায় হোক বা ভয়ে হোক মিস্টার বাম্বলও স্ত্রীর পেছন পেছন চললেন।
মঙ্কস্ বললো : “ভূতের মতো ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন তোমরা?”
“আমরা?…..আমরা এই একটু ঠাণ্ডা হচ্ছিলাম।”—ধরা গলায় জবাব দিলেন মিঃ বাম্বল।
“ঠাণ্ডা হচ্ছিলে?”—ঝাঁজিয়ে উঠলো মঙ্কস্ : “মানুষের মনে যে নরকের আগুন জ্বলছে, তা ঠাণ্ডা করার মতো বৃষ্টি কোনোদিন পড়েনি, পড়বেও না! যাক, এ সেই মেয়েছেলে নাকি?”
“হ্যাঁ।”—জবাব দিলেন মিঃ বাম্বল।
তারপর তিনজনে মই বেয়ে দোতলার ঘরে উঠলেন। ঘরে ঢুকে সমস্ত জানালা বন্ধ করে দিয়ে লণ্ঠনের শিখাটা কমিয়ে দিলো মঙ্কস্। তারপর একটা পুরোনো টেবিলের চারপাশে তিনখানা চেয়ারে বসলো তারা।
কথায়-কথায় মঙ্কস জেনে ফেললো যে, আগন্তুক মেয়েছেলে মিস্টার বাম্বলেরই স্ত্রী। সে আর সময় নষ্ট না করে মিসেস্ বাম্বলকে জিজ্ঞাসা করলো : “সেই বুড়ির মরণের সময় তুমি নাকি তার কাছে ছিলে। সে তোমাকে কি বলেছিলো?”
মিসেস্ বাম্বল বললেন : “হ্যাঁ তুমি এঁর কাছে যে ছেলেটার নাম করেছো, তার মায়ের সম্বন্ধে সে আমাকে কিছু বলেছিলো।”
মঙ্কস বললো : “তাহলে প্রথম প্রশ্ন হলো, কি বিষয়ে সে তোমাকে বলেছিলো?”
মিসেস্ বাম্বল বললেন : “ওটা হচ্ছে দ্বিতীয় প্রশ্ন। প্রথম প্রশ্ন হলো, এ খবরটা তোমাকে দিলে তার দক্ষিণা কতো পাবো?”
“সে শুধু শয়তানই জানে!” বললো মঙ্কস্।
মিসেস্ বাম্বল বললেন : “তাহলে তো তোমারই তা জানা উচিত!”
মিসেস্ বাম্বলের এই নির্ভীক জবাবে মঙ্কস্ অবাক্ হয়ে গেল।
মঙ্কস বুঝলো যে, ভারী শক্ত মেয়েমানুষের পাল্লায় পড়েছে সে; বেশ কিছু লোভ না দেখালে আসল খবরটা বের করা যাবে না। তাই খবরটার বিনিময়ে সে কুড়ি পাউন্ড দিতে কবুল করলো। মিসেস্ বাম্বল অতো অল্প দামে খবরটা বেচতে রাজী হলেন না। শেষে দর কষাকষি করে দামটাকে পঁচিশ পাউন্ডে তুললেন। অগত্যা টাকাটা গুনে টেবিলের ওপর রেখে মঙ্কস্ বললো : “নাও, টাকাটা তুলে রাখো। এবার খবরটা বলো।”
মিসেস্ বাম্বল বলতে শুরু করলেন : “সেই বুড়ি দাই যখন মারা যায়, তখন ঘরে আমিই শুধু ছিলাম তার কাছে, আর কেউ না। মরার সময় সে একটা তরুণীর কথা বলেছিলো, যে নাকি কয়েক বছর আগে ঠিক ওই ঘরেই এবং ওই বিছানাতেই শুয়ে একটা সন্তান প্রসব করে মারা যায়। মরার সময়ে সেই তরুণী ওই বুড়িকে একটা জিনিস দিয়ে যায় এবং তার সন্তানের মুখ চেয়ে সেটাকে রক্ষা করতে বলে। বুড়ি অবশ্য পরে জিনিসটা বেচে দেয়।”
“বেচে দিয়েছে?”—চেঁচিয়ে উঠলো মঙ্কস : “কোথায়? কবে? কার কাছে?” মিসেস্ বাম্বল বললেন : “এটুকু আমাকে বলেই সেই বুড়ি মারা যায়।” “মিছে কথা?”—গরজে উঠলো মঙ্কস : “আমার সঙ্গে চালাকি খাটাবে না। নিশ্চয়ই সে আরও কিছু বলেছে। সব কথা আমাকে খুলে বলো নইলে জেনে রেখো, যেভাবে ঢুকেছো, সেভাবে এখানে থেকে বেরুতে পারবে না!”
মসের কথা শুনে মিঃ বাম্বল ভয়ে কাঠ হয়ে গেলেন, কিন্তু মিসেস্ বাম্বল কিছুমাত্র ভয় না পেয়ে বেশ ঠাণ্ডা মাথায় বললেন : “যা বললাম তার চেয়ে বেশি একটা কথাও সেই বুড়ি আর বলেনি। তবে সে হাত দিয়ে আমার পোশাক চেপে ধরেছিলো। সে মারা গেলে, আমি জোর করে তার হাত ছাড়বার সময়ে একখানা কাগজ পাই—সেখানা বন্ধকীর রসিদ। বুড়ি অনেক দিন ধরে রেখেছিলো জিনিসটাকে, আসল মালিকের কাছে পৌঁছে দিয়ে একটা মোটা দাঁও মরার মতলবে। কিন্তু অনেক অপেক্ষা করার পরেও কেউই যখন এলো না, আর বুড়িরও যখন অর্থের অভাব ঘটলো, তখন সে জিনিসটা বাঁধা দেয় এবং বছরের পর বছর নিয়মিত ভাবে সুদ দিতে থাকে। আমি রসিদখানা পেয়ে জিনিসটাকে ছাড়িয়ে এনে নিজের কাছে রেখে দিয়েছি, কি জানি কখন কি কাজে লাগে।”
“কোথায় সে জিনিসটা!”—ব্যগ্র কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো মঙ্কস্।
“এই যে!”—বলে মিসেস্ বাম্বল একটা ছোট ব্যাগ বের করে দিয়ে যেন নিশ্চিন্ত হলেন। মঙ্কস সেটা ছোঁ মেরে নিয়ে খুলে ফেলে দেখলো ব্যাগের মধ্যে একটা ছোট্ট সোনার লকেট…লকেটের মধ্যে দু’গোছা চুল আর একটা সাধারণ বিয়ের আংটি। আংটিতে য়্যাগনেস্’ নাম লেখা—কোনো পদবী নেই, আর আছে অলিভারের জন্মের কয়েক বছর আগেকার একটা তারিখ।
মিসেস্ বাম্বল মকে জিজ্ঞাসা করলেন : “এটা নিয়ে তুমি কি করবে? এ দিয়ে আমার ক্ষতি করবে না তো?”
“কখনোই না। এই দেখ না, কি করি। সাবধান। এক পাও এগিয়ো না, তাহলে তোমাদের জীবনের দাম একটা কানাকড়িও থাকবে না”–এই বলে মঙ্কস হঠাৎ টেবিলটা সরিয়ে ফেলে মেঝের একটা আড্ডা ধরে টান দিতেই মিঃ বাম্বলের পায়ের কাছ থেকে একটা চোরা-দরজা বেরিয়ে পড়লো।
মিস্টার বাম্বল আঁৎকে উঠে কয়েক পা পেছিয়ে গেলেন।
তারপর মসের কথামতো তাঁরা সেই চোরা-দরজার নিচে তাকিয়ে দেখলেন সেখান দিয়ে একটা নদী বয়ে যাচ্ছে। মঙ্কস বললো : “আমি ইচ্ছে করলে তোমাদের ওই নদীতে ডুবিয়ে মারতে পারতাম।”
মিস্টার বাম্বল বললেন : ‘উঃ কি স্রোত! ওখানে আজ কেউ পড়লে কাল সকালে তার লাশ বারো মাইল দূরে গিয়ে ভেসে উঠবে।”
মঙ্কস তখন মিসেস্ বাম্বলের কাছ থেকে পাওয়া ব্যাগটার সাথে একটা লোহার ভারী জিনিস বেঁধে সেটাকে নদীর মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে চোরা-দরজাটা বন্ধ করে দিলো। তারপর সে মিস্টার বাম্বলকে বললো : “তোমার স্ত্রীকে ভয় নেই, কিন্তু তুমি এরপর মুখ বুজে থেকো বুঝলে? এখন তোমরা বিদায় হও!”