একাদশ পরিচ্ছেদ
দিন-পনেরো পর মিস্ রোজ ও অলিভারকে নিয়ে মিসেস্ মেইলী তাঁর পল্লীভবনে গিয়ে বাস করতে লাগলেন।
এখানে এসে অলিভারের মন খুশির আমেজে ভরে গেল। খোলা বাতাস, সবুজ ঘাসে-মোড়া ছোটো ছোটো পাহাড়—চারদিকের এই সবুজের সমারোহ তার চোখে মায়া-কাজল টেনে দিলো। নিকটেই এক মনোরম ছোটো গির্জা, তার প্রাঙ্গণে এখানে ওখানে কতকগুলো সমাধি। অলিভার প্রায়ই সেসব সমাধিক্ষেত্রের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াতো এবং তার মায়ের কথা মনে করে চোখের জল ফেলতো।
এখানে পরম শান্তিতে কাটতে লাগলো অলিভারের দিনগুলো। রোজ সকালে গির্জার কাছে এক প্রবীণ জ্ঞানী লোকের কাছে সে পড়তে যেত। বিকেলে মিসেস্ মেইলী ও মিস্ রোজের সঙ্গে সে বেড়াতো। ওঁরা নানা বই নিয়ে আলোচনা করতেন, আর একমনে সে শুনতো। কোনো-কোনো দিন গাছের ছায়ায় বসে আঁধার ঘনিয়ে না-আসা পর্যন্ত সে মিস্ রোজের বই-পড়া শুনতো। এর মাঝে কখনো যদি তাঁরা অলিভারকে ফুল তুলে আনতে বলতেন, সে খুশি হয়ে ছুটে গিয়ে হুকুম তামিল করতো। সন্ধ্যার পর তাঁরা বাড়ি ফিরতেন। পিয়ানো বাজিয়ে চমৎকার মিষ্টি গলায় মিস্ রোজ গান গাইতো—অলিভার মুগ্ধ হয়ে সে গান শুনতো।
সবচেয়ে ভালো লাগতো তার রবিবারের দিনটা। সারা গাঁয়ের লোক এসে সকালবেলায় জড়ো হতো গির্জার প্রার্থনা-সভায়। তারা দরিদ্র হলেও তাদের অনাবিল-হৃদয়ের সমস্ত আবেগ দিয়ে সকলের সঙ্গে প্রার্থনা-সংগীত গাইতো।
অলিভারের কিন্তু কাজের অন্ত ছিল না। ঘর সাজাবার জন্যে ফুল কুড়োনো, মিসেস্ মেইলীর পাখিদের জন্যে খাঁচা তৈরি করা, গাঁয়ের ছেলেদের সঙ্গে মিশে ক্রিকেট খেলা, আর পাড়ার জানা লোকেদের টুকিটাকি ফাই-ফরমাশ খাটা ইত্যাদি কাজ সে বেশ আনন্দের সঙ্গেই করতো।
এভাবে তিনমাস কেটে গেল। ধীরে ধীরে অলিভার মিসেস্ মেইলীর পরিবারেরই একজন হয়ে উঠলো। তার ব্যবহারে বাড়ির লোকেরা ভুলে গেল যে, সে কয়েকমাস আগেও ছিল তাদের একেবারে অচেনা—তাদের কেউ নয়। বসন্ত এলো আর গেল। তারপর এলো গ্রীষ্ম। গ্রামখানা আরও সুন্দর, আরও মধুর হয়ে উঠলো।
সেদিন দিনের বেলা হঠাৎ খুব গরম পড়েছিলো। রাতে বেশ সুন্দর হয়ে দেখা দিলো চাঁদ এবং মৃদু-মন্দ বাতাস বইলো। অলিভার, মিসেস্ মেইলী ও রোজ বেড়িয়ে বাড়ি ফিরলেন। রোজ পিয়ানোর সামনে বসে আচ্ছন্নের মতো যন্ত্রটার চাবি টিপতে টিপতে হঠাৎ বাজনা থামিয়ে কেঁদে উঠলো।
বিস্ময়ে রোজের মুখের দিকে তাকিয়ে মিসেস্ মেইলী বুঝতে পারলেন যে, রোজ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রোজও তাই বললো। মিসেস্ মেইলী তখন গান গাইতে বারণ করে, রোজকে শুতে পাঠিয়ে দিলেন।
রোজের অসুস্থতায় শুধু মিসেস্ মেইলী উৎকণ্ঠিত হলেন না— অলিভারও দারুণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণ পরে মিসেস্ মেইলী অলিভারকে একখানা চিঠি দিয়ে বললেন : “অলিভার, এখন মুখভার করে বসে থাকলে চলবে না আমাদের। এই চিঠিখানা খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিতে হবে ডাক্তার লস্বার্নের কাছে। এখান থেকে মাইল চারেক দূরে গঞ্জে এখানা নিয়ে যেতে হবে। সেখানে সরাইখানায় লোক আছে। তাদের কাছে চিঠিটা দিলে তারা ঘোড়ায় চেপে চিঠিখানা তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি যে, তুমি এ-কাজ ঠিকমতো করতে পারবে।”
অলিভার কোনো জবাব দিলো না—তখনি চিঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়ার জন্যে তার চোখে-মুখে দারুণ অস্থিরতা ফুটে উঠলো।
মিসেস্ মেইলীর হাতে আরও একখানা চিঠি ছিলো। সে-খামের ওপরে হ্যারী মেইলীর নাম লেখা। মিসেস্ মেইলী জানালেন যে, কাল পর্যন্ত রোজের অবস্থা না দেখে তিনি এ-চিঠিখানা পাঠাবেন না।
চিঠি আর পথ-খরচের টাকা নিয়ে অলিভার বেরিয়ে পড়লো। তার সাধ্যমতো তাড়াতাড়ি চলতে লাগলো সে। অনেক মাঠঘাট পেরিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে ‘হাজির হলো ‘জর্জ’ নামে এক সরাইখানায়। সেখানে অনেক কাকুতি-মিনতি করে তখনি একজন ডাকবাহী ঘোড়সওয়ারকে পাঠিয়ে দিলো চিঠি নিয়ে ডাক্তার লসবার্নের কাছে।
কাজটা ভালোভাবে শেষ হয়ে গেল দেখে আনন্দে সে সরাইখানা থেকে বেরোবার মুখে একজন ঢ্যাঙা লোকের ঘাড়ের ওপর গিয়ে পড়লো। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে অলিভার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে ক্ষমা চাইলো।
লোকটা কিন্তু ঝাঁঝিয়ে উঠে বললো : “আরে আরে, এটা আবার কে রে? আ-মলো যা।” এই বলে সে অলিভারকে ভালোভাবে নজর করেই চেঁচিয়ে উঠলো : “আরে—এ যে আমাদের সেই হারানিধি! ওরে বাবাঃ। কে ভেবেছিলো যে, আবার ও কবর থেকে উঠে এসে আমার পথের কাঁটা হবে।” এই বলে ঘুষি পাকিয়ে অলিভারের দিকে তেড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল। তার শরীরটা সাপের মতো মোচড়াতে লাগলো, আর তার মুখ থেকে ফেনা বেরুতে লাগলো।
অলিভার তাড়াতাড়ি সরাইখানার লোকজনদের ডেকে আনলো ওই লোকটার সেবা করার জন্যে। তারপর অবাক হয়ে লোকটার অদ্ভুত আচরণের কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে পা চালিয়ে দিল সে।
বাড়ি এসে জানলো, মিস্ রোজের অবস্থা খুব খারাপ, অসুখটা হঠাৎ মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে।
ডাক্তার লসবার্ন সেদিন গভীর রাতে এসে পৌঁছোলেন। রোগিণীকে পরীক্ষা করে তিনি জানালেন যে, জীবনের আশা খুবই কম, তাকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে—এ ঘুম-ভাঙার সাথে সাথে হয় সে মারা যাবে, নয় তো সে ভালোর দিকে যাবে।
এ-কথা শুনে সারাটা রাত, সারাটা দিন অলিভার ও মিসেস্ মেইলী দুরুদুরু বুকে চুপ করে বসে রইলেন আলাদা-আলাদা ঘরে। তাঁদের খাবার পর্যন্ত পড়ে রইলো।
সন্ধ্যা উতরে গেলে, ঘরের বাইরে পায়ের আওয়াজ শুনে তাঁরা দু’জনে দরজার কাছে ছুটে গেলেন। ঘরে ঢুকলেন ডাক্তার লসবার্ন।
ব্যাকুল কণ্ঠে মিসেস্ মেইলী জিজ্ঞাসা করলেন : “কি খবর রোজের? বলুন—বলুন।”
কড়া ধমক দিয়ে বলে উঠলেন ডাক্তার লসবার্ন : “থামুন! ভগবানের অসীম করুণা—রোজ এখনও অনেক বছর বাঁচবে।”
ডাক্তারের কথায় ওঁরা আনন্দে অধীর হয়ে উঠলেন।
.
রাত ঘনিয়ে আসছিলো। রোগিণীর ঘর সাজাবার জন্য কতকগুলো ফুল যোগাড় করে বাড়ি ফিরছিলো অলিভার। এমন সময় একখানা চলন্ত ঘোড়ার গাড়ি তার কাছে এসে হঠাৎ থেমে গেল। গাড়ির ভিতর থেকে কে যেন চেঁচিয়ে উঠলো : “এই অলিভার! খবর কি? মিস্ রোজ কি রকম আছেন?”
রোজের নাম শুনেই গাড়ির কাছে ছুটে গিয়ে অলিভার বললো : “কে, গাইলস্ নাকি?”
গাইল্স কি-যেন বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু তাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে এক যুবক সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো : “এককথায় বলো,—ভালো না মন্দ?”
অলিভার তাড়াতাড়ি জবাব দিলো : “ভালো—অনেক ভালো।”
—“জয় ভগবান!” যুবক আনন্দে লাফিয়ে উঠলো—“ঠিক বলছো তো খোকা? আমাকে ঠকাচ্ছো না তো?”
অলিভার বললো : “না স্যার, ঠিকই বলছি—ডাক্তার বলেছেন, অনেক দিন বাঁচবেন তিনি।”
যুবক তখন গাইকে বললো : “তুমি গাড়ি করে গিয়ে আগে মাকে খবর দাও, আমি হেঁটে যেতে-যেতে মনটা একটু ঠিক করে নিই।”
গাইলস্ বললো : “মাফ করবেন, মিস্টার হ্যারী। খবর দেওয়ার ভারটা কোচোয়ানের ওপরই দিন। আমি এ-বেশে ঝি-চাকরানীদের সামনে গেলে তারা আর আমাকে মানবে না।”
মৃদ্যু হেসে হ্যারী বললো : “বেশ! তবে আগে তোমার ওই টুপিটা বদলে ফেল, নইলে লোকে পাগল ভাববে!’
গাইলস্ চটপট তার টুপি বদলে নিলো। তারপর কোচোয়ানকে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যেতে বলে তারা তিনজনে ধীরে ধীরে হেঁটে চললো।
মিসেস্ মেইলীর সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র হ্যারী বলে উঠলো : “আমাকে আগে কেন চিঠি দাওনি, মা?”
মিসেস্ মেইলী বললেন : “দেবো ভেবেছিলুম, কিন্তু ডাক্তার লসবার্নের অভিমত জানার আগে তোমাকে চিঠি দেওয়া উচিত বলে মনে করিনি।”
ডাক্তার লসবার্নও ঘরে ছিলেন। তিনি হ্যারীকে রোগের পুরো বিবরণ দিলেন। তারপর গাইকে বললেন : “কি হে গাইলস্, এর মধ্যে আর-কাউকে গুলি- টুলি করেছো নাকি?”
ডাক্তার তামাশা করছেন বুঝতে পেরে লজ্জা পেলো গাইলস্। সে আমতা- আমতা করে বললো : “না, তেমন বিশেষ কাউকে নয়।”
—“চোর-টোরও ধরোনি?”
—“না স্যার।”
“বড়ই হতাশ হলাম শুনে। সেবার অমন ডাকাত ধরেছিলে কিনা… যাক ব্রিটলস্ কেমন আছে?”
—“ভালোই আছে ছেলেটা,—আপনাকে সে ধন্যবাদ জানিয়েছে স্যার!”
—“ভালো, ভালো। এদিকে শোনো। তোমার জন্যে একটা ভালো খবর আছে গাইলস্,” এই বলে ডাক্তার লসবার্ন তাকে ঘরের কোণে টেনে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে কি যেন সব বললেন। শুনেই গাইলস্ ছুটে গেল রান্নাঘরে— অন্যান্য চাকর-বাকরকে ডেকে এনে নিজের পয়সায় খাইয়ে দিলো তাদের। এরপর নিজের বাহবা জাহির করে সে সকলকে জানালো যে, ডাকাতির রাতে সে যে সাহস দেখিয়েছিলো, তার জন্যে মনিব ঠাকরুন তাঁকে পঁচিশ পাউন্ড বকশিশ দিয়েছেন।
পরদিন থেকে রোজ সকালে অলিভার মিস্ রোজের ঘর সাজাবার জন্য ফুল তুলতে যেতো। হ্যারী মেইলীও তার সঙ্গী হতো। মিস্ রোজ ধীরে ধীরে সেরে উঠতে লাগলো।
আজকাল অলিভারের হাতে তেমন কাজ না থাকায় যে গভীরভাবে পড়াশুনায় মন দিলো। তারপর এত তাড়াতাড়ি পড়াশুনায় সে এগিয়ে গেল যে, সে নিজেই অবাক হয়ে গেল।
একদিন সন্ধ্যাবেলা জানালার ধারে বসে পড়তে পড়তে অলিভার তন্দ্রায় ঝিমিয়ে পড়েছিলো। তন্দ্রার ঘোরে তার মনে হলো—সে যেন স্বপ্ন দেখছে, চারিদিকে কেমন যেন গুমোট….সে যেন ফের ফ্যাগিনের আড্ডায় গিয়ে পড়েছে, তার সামনেই বসে আছে ফ্যাগিন্ আর অপর কে একজন লোক। লোকটা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে, যেন কেউ তাকে না দেখতে পায়। অলিভারের মনে হলো—সে যেন ফ্যাগিনের গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে….ফ্যাগিন্ যেন বলছে : “চুপ, সেই ছোঁড়াটাই বটে! চলে এসো।” অপর লোকটা বলছে : “সে-ই বটে! আমি কি ওকে ভুল করতে পারি? একদল ভূত যদি ওর মতো চেহারা করে ওর সঙ্গে মিশে বসে থাকে, তবুও আমি ওকে চিনে বের করতে পারবো। পঞ্চাশ ফুট মাটির তলায় ওকে কবর দিয়ে আমাকে যদি সে-কবরের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাও, তাহলেও আমি টের পাবো যে ওকে ওখানে কবর দেওয়া হয়েছে।”
কথাগুলোর মধ্যে এমনি একটা ভয়ংকর আক্রোশের ভাব ফুটে উঠেছিলো যে, আতঙ্কে অলিভারের তন্দ্রা ভেঙে গেলে সে চমকে উঠে বসলো। সে সত্যি সত্যি দেখলো, দু’জন লোক যেন জানালার পাশ থেকে সরে যাচ্ছে। তার সমস্ত রক্ত বুকের কাছে যেন জমা হতে লাগলো,—বারোধ হয়ে গলে। ওই….ওই জানালার ওপাশে…..হাত বাড়ালেই সে হয়তো তাদের ছুঁতে পারে। অলিভার স্পষ্ট দেখলো, ফ্যাগিন্ দাঁড়িয়ে উঁকি মারছে, আর তার পাশে দাঁড়িয়ে সরাইখানায় বেহুঁশ হয়ে-যাওয়া সেই লোকটা!
একটা নিমেষ মাত্র! তারপরই তারা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল! অলিভার এক মুহূর্ত সেদিকে অপলকে তাকিয়ে রইলো, তারপর জানালা ডিঙিয়ে বাগানের মধ্যে লাফিয়ে পড়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
অলিভারের চেঁচামেচি শুনে বাড়িসুদ্ধ লোক ছুটো এলো। একগাছা মোটা লাঠি হাতে তুলে নিয়ে হ্যারী মেইলী ছুটো এসে জিজ্ঞাসা করলো : “কোন্ দিকে গেছে ওরা?”
আঙুল বাড়িয়ে অলিভার বললো : “ওই দিকে।”
—“তাহলে খানার মধ্যে গিয়ে লুকিয়েছে। যত তাড়াতাড়ি পারো, আমার পেছনে ছুটে এসো।” বলে হ্যারী এক লাফে ঝোপ ডিঙিয়ে তীরের মতো ছুটে চললো। গাইলস্ এবং ডাক্তার লসবার্নও ছুটলেন।
কিন্তু সমস্তই বিফল হলো। কাউকেই আশে-পাশে কোথাও দেখা গেল না। হ্যারী বলো : “তুমি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখেছো, অলিভার।”
অলিভার জোর গলায় বললো : “না-না স্বপ্ন নয়—আমি স্পষ্টই দেখেছি- দু’জনকেই দেখেছি।”
“দুজন কে কে?” হ্যারী ও লসবার্ন একসঙ্গে প্রশ্ন করলেন।
—“ফ্যাগিন্ আর যে-লোকটা সরাইখানায় আমাকে মারতে এসে নিজে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিল।”
এ-কথা শুনে আবার চারদিক খুঁজে দেখা হলো এবং তার পরদিন অলিভারকে নিয়ে গঞ্জে গিয়েও হ্যারী খোঁজ নিলো, কিন্তু সে লোক দুটোর কোনো পাত্তাই পাওয়া গেল না।
এদিকে মিস্ রোজ তাড়াতাড়ি সেরে উঠলো। সমস্ত পরিবারে আবার আনন্দের জোয়ার বইলো, কিন্তু অলিভারের নজর এড়ালো না যে, মাঝে মাঝে রোজ যেন কেমন গম্ভীর হয়ে যায়। লুকিয়ে সে দেখেছে, রোজ প্রায়ই নিজের চোখের জল মোছে।
কয়েকদিন পরে সকালবেলায় হ্যারী জানালো যে, সে রোজকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু রোজ এ প্রস্তাবে রাজী হলো না। সে বললো : “আমি সহায়- সম্পদহীনা; তাছাড়া, আমার জীবনের ইতিহাস কলঙ্কে ভরা। আমি তোমাকে বিয়ে করে তোমার উন্নতির পথে কাঁটা হতে পারি না। সত্যি বটে, ওসব অপবাদ সত্ত্বেও আমি নির্দোষ, তবু আমি কাউকে সে অপবাদের ভাগীদার করতে চাই না। যদি তোমার অবস্থা অন্যরকম হতো—যদি তোমার স্থান আমার চেয়ে এত উঁচুতে না হতো, তাহলে হয়তো তোমার প্রস্তাব মেনে নিতাম, কিন্তু এখন তোমাকে বিয়ে করলে লোকে ভাববে, তোমার সম্পদ আর খ্যাতির লোভে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি।”
হ্যারী এর ওপর আর কোনো কথা বলতে পারলো না। শেষ পর্যন্ত সে রোজের কাছ থেকে শুধু এই প্রতিশ্রুতি আদায় করলো যে, এক বছরের মধ্যে সে আবার বিয়ের প্রস্তাব পেশ করবে এবং রোজ এর মধ্যে যেন এ বিষয়ে ভালো করে আবার ভেবে দেখে।