• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০২. পরদিন সকালবেলা সত্যবতী বলিল‌

লাইব্রেরি » শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় » ব্যোমকেশ সমগ্র (ব্যোমকেশ বক্সী) » ১৬. রক্তের দাগ - ব্যোমকেশ বক্সী - শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় » ০২. পরদিন সকালবেলা সত্যবতী বলিল‌

পরদিন সকালবেলা সত্যবতী বলিল‌, ‘কাশ্মীর যে যাবে‌, লেপ বিছানা কৈ?’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘কেন‌, গত বছর পাটনায় তো ছিল।’

সত্যবতী বলিল‌, ‘সে তো সব দাদার। আমাদের কি কিছু আছে! নেহাত কলকাতার শীত‌, তাই চলে যায়। কাশ্মীর যেতে হলে অন্তত দুটো বিলিতি কম্বল চাই। আর আমার জন্যে একটা বীভার-কোট।’

‘হুঁ। চল অজিত‌, বেরুনো যাক।’

প্রশ্ন করিলাম‌, ‘কোথায় যাবে?’

সে বলিল‌, ‘চল‌, সুচিত্রা এম্পেরিয়মে যাই। রথ দেখা কলা বেচা দুইই হবে।’

বলিলাম‌, ‘সত্যবতীও চলুক না‌, নিজে পছন্দ করে কেনাকাটা করতে পারবে।’

ব্যোমকেশ সত্যবতীর পানে তাকাইল‌, সত্যবতী করুণ স্বরে বলিল‌, ‘যেতে তো ইচ্ছে করছে‌, কিন্তু যাই কী করে? খোকার ইস্কুলের গাড়ি আসবে যে।’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘তোমার যাবার দরকার নেই। আমি তোমার জিনিস পছন্দ করে নিয়ে আসব। দেখো‌, অপছন্দ হবে না।’

সত্যবতী ব্যোমকেশের পানে সহাস্য কটাক্ষপাত করিয়ে ভিতরে চলিয়া গেল, ব্যোমকেশের পছন্দের উপর তাহার যে অটল বিশ্বাস আছে তাহাই জানাইয়া গেল। সত্যবতীর শৌখিন জিনিসের কেনাকাটা অবশ্য চিরকাল আমিই করিয়া থাকি। কিন্তু এখন বসন্তকাল পড়িয়াছে‌, ফাল্গুন মাস চলিতেছে–

দু’জনে বাহির হইলাম। সাড়ে ন’টার সময় ধর্মতলা স্ট্রীটে পৌঁছিয়া দেখিলাম এম্পেরিয়মে দ্বার খুলিয়াছে‌, প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড আস্ত কাচের জানালা হইতে পদ সরিয়া গিয়াছে। ভিতরে প্রবেশ করিলাম। বিশাল ঘর‌, মোজেয়িক মেঝের উপর ইতস্তত নানা শৌখিন পণ্যের শো-কেস সাজানো রহিয়াছে। দুই চারিজন গ্ৰাহক ইতিমধ্যেই আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন‌, তাঁহারা অধিকাংশই উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মহিলা। কর্মচারীরা নিজ নিজ স্থানে দাঁড়াইয়া ক্রেতাদের মন যোগাইতেছে। একটি প্রৌঢ়াগোছের ভদ্রলোক ঘরের এ-প্ৰান্ত হইতে ও-প্রাস্ত পদচারণ করিতে করিতে সর্বত্র নজর রাখিয়াছেন।

‘আসতে আজ্ঞা হোক। কী চাই বলুন?’

ব্যোমকেশ ঘরের এদিক ওদিক তাকাইয়া কুষ্ঠিতম্বরে বলিল‌, ‘সামান্য জিনিস–গোটা দুই বিলিতি কম্বল। পাওয়া যাবে কি?’

‘নিশ্চয়। আসুন আমার সঙ্গে।’ ভদ্রলোক আমাদের একদিকে লইয়া চলিলেন‌, ‘আর কিছু?’

‘আর একটা মেয়েদের বীভার-কোট।’

‘পাবেন। এই যে লিফট—ওপরে কম্বল বীভার-কোট দুইই পাবেন।’

ঘরের কোণে একটি ছোট লিফট ওঠা-নামা করিতেছে‌, আমরা তাহার সামনে গিয়া দাঁড়াইতেই পিছন হইতে কে বলিল‌, ‘আমি এঁদের দেখছি।’

পরিচিত কণ্ঠস্বরে পিছু ফিরিয়া দেখিলাম–সত্যকাম। সিল্কের স্যুট পরা ছিমছাম চেহারা‌, এতক্ষণ সে বোধহয় এই ঘরেই ছিল‌, বিজাতীয় পোশাকের জন্য লক্ষ্য করি নাই। প্রৌঢ় ভদ্রলোকটি তাহাকে দেখিয়া বলিলেন‌, ‘ও-আচ্ছা। তুমি এঁদের ওপরে নিয়ে যাও‌, এঁরা বিলিতি কম্বল আর বীভার-কোট কিনবেন।’ বলিয়া আমাদের দিকে একটু হাসিয়া অন্যত্র চলিয়া গেল।

ব্যোমকেশ চকিতে একবার সত্যকমের দিকে একবার প্রৌঢ় ভদ্রলোকের দিকে চাহিয়া মৃদুকণ্ঠে বলিল‌, ‘ইনি আপনার—’

সত্যকাম মুখ টিপিয়া হাসিল‌, ‘পার্টনার।’

‘অর্থাৎ–বাবা?’

সত্যকাম ঘাড় নাড়িয়া সায় দিল। এতক্ষণ প্রৌঢ় ভদ্রলোককে দেখিয়াও লক্ষ্য করি নাই‌, এখন ভাল করিয়া দেখিলাম। তিনি অদূরে দাঁড়াইয়া অন্য একজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলিতেছিলেন এবং মাঝে মাঝে অস্বচ্ছন্দভাবে আমাদের দিকে দৃষ্টি ফিরাইতেছিলেন। শ্যামবর্ণ দীর্ঘাকৃতি চওড়া কাঠামোর মানুষ‌, চিবুকের হাড় দৃঢ়। বয়স আন্দাজ পায়তাল্লিশ‌, রাগের চুলে ঈষৎ পাক ধরিয়াছে। দোকানদারির লৌকিক শিষ্টতা সত্ত্বেও মুখে একটা তপঃকৃশ রুক্ষতার ভাব। দোকানদারির অবকাশে ভদ্রলোকের মেজাজ বোধ করি একটু কড়া।

এই সময় লিফট নামিয়া আসিল‌, আমরা খাঁচার মধ্যে ঢুকিয়া দ্বিতলে উপস্থিত হইলাম।

সত্যকাম ব্যোমকেশের দিকে চটুল ভূভঙ্গী করিয়া বলিল‌, ‘সত্যি কিছু কিনবেন? না সরেজমিন তদারকে বেরিয়েছেন?’

‘সত্যি কিনব।’

উপরিতলাটি নীচের মত সাজান নয়‌, অনেকটা গুদামের মত। তবু এখানেও গুটিকয়েক ক্রেতা ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। সত্যকাম আমাদের যে-দিকে লইয়া গেল সে-দিকটা গরম কাপড়-চোপড়ের বিভাগ। সত্যকমের ইঙ্গিতে কর্মচারী অনেক রকম বিলিতি কম্বল বাহির করিয়া দেখাইল। এ-সব ব্যাপারে ব্যোমকেশ চিটা ও চিনির প্রভেদ বোঝে না‌, আমিই দুইটি কম্বল বাছিয়া লইলাম। দাম বিলক্ষণ চড়া, কিন্তু জিনিস ভাল।

অতঃপর বীভার-কোট। নানা রঙের–নানা মাপের কোট–সবগুলিই অগ্নিমূল্য। আমরা সেগুলি লইয়া নাড়াচাড়া করিতেছি দেখিয়া সত্যকাম বলিল‌, ‘মাপের কথা ভাবছেন? বীভার-কোট একটু ঢিলেঢালা হলেও ক্ষতি হয় না। যেটা পছন্দ হয় আপনার নিয়ে যান‌, যদি নেহাত বেমানান হয় বদলে দেব।’

একটি গাঢ় বেগুনি রঙের কোট আমার পছন্দ হইল‌, কিন্তু দামের টিকিট দেখিয়া ইতস্তত করিতে লাগিলাম। সত্যকাম অবস্থা বুঝিয়া বলিল‌, ‘দামের জন্যে ভাববেন না। ওটা সাধারণ খরিদ্দারের জন্যে। আপনারা খরিদ দামে পাবেন। —আসুন।’

আমাদের ক্যাশিয়ারের কাছে লইয়া গিয়া সত্যকাম বলিল‌, ‘এই জিনিসগুলো খরিদ দরে দেওয়া হচ্ছে। ক্যাশমেমো কেটে দিন।’

‘যে আজ্ঞা।’ বলিয়া বৃদ্ধ ক্যাশিয়ার ক্যাশমেমো লিখিয়া দিল। দেখিলাম টিকিটের দামের চেয়ে প্রায় পঞ্চাশ টাকা কম হইয়াছে। মন খুশি হইয়া উঠিল; গত রাত্রে সত্যকাম সম্বন্ধে যে ধারণা জন্মিয়াছিল তাহাও বেশ খানিকটা পরিবর্তিত হইল। নাঃ‌, আর যাই হোক‌, ছোকরা একেবারে চুষুণ্ডি চামার নয়।

এই সময় উপরিতলায় একটি তরুণীর আবির্ভাব হইল। বরবর্ণিনী যুবতী‌, সাজ পোশাকে লীলা-লালিত্যের পরিচয় আছে। সত্যকাম একবার ঘাড় ফিরাইয়া তরুণীকে দেখিল; তাহার মুখের চেহারা বদলাইয়া গেল। সে এক চক্ষু কুঞ্চিত করিয়া আমাদের বলিল‌, ‘আপনাদের বোধহয় আর কিছু কেনার নেই? আমি তাহলে—নতুন গ্রাহক এসেছে–আচ্ছা নমস্কার।’

মধুগন্ধে আকৃষ্ট মৌমাছির মত সত্যকাম সিধা যুবতীর দিকে উড়িয়া গেল। আমরা জিনিসপত্র প্যাক করাইয়া যখন নীচে নামিবার উপক্রম করিতেছি‌, দেখিলাম সত্যকাম যুবতীকে সম্পূর্ণ মন্ত্রমুগ্ধ করিয়া ফেলিয়াছে, যুবতী সত্যকামের বচানামৃত পান করিতে করিতে তাহার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরিতেছে।

বাসায় ফিরিয়া সত্যবতীকে আমাদের খরিদ দেখাইলাম। সত্যবতী খুবই আহ্বাদিত হইল এবং নিবাচন-নৈপুণ্যের সমস্ত প্রশংসা নির্বিচারে ব্যোমকেশকে অর্পণ করিল। বসন্তকালের এমনই शशिभ!

আমি যখন জিনিসগুলির মূল্য হ্রাসের কথা বলিলাম তখন সত্যবতী বিগলিত হইয়া বলিল‌, ‘অ্যাঁ–সত্যি। ভারী ভাল ছেলে তো সত্যকাম।’

ব্যোমকেশ ঊর্ধ্বদিকে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়িয়া বলিল‌, ‘ভারী ভাল ছেলে! সোনার চাঁদ ছেলে! যদি কেউ ওকে খুন না করে‌, দোকান শীগ্‌গিরই লাটে উঠবে।’

সন্ধ্যাবেলা ব্যোমকেশ আমাকে লইয়া বেড়াইতে বাহির হইল। এবার গতি আমহার্স্ট স্ট্রীটের দিকে। ৩৩/৩৪ নম্বর বাড়ির সম্মুখে যখন পৌঁছিলাম তখন ঘোর ঘোর হইয়া আসিয়াছে। প্রদোষের এই সময়টিতে কলিকাতার ফুটপাথেও ক্ষণকালের জন্য লোক-চলাচল কমিয়া যায়‌, বোধ করি রাস্তার আলো জ্বলার প্রতীক্ষ্ণ করে। আমরা উদ্দিষ্ট বাড়ির সম্মুখে গিয়া দাঁড়াইলাম। বেশি পথিক নাই, কেবল গায়ে চাদর-জড়ানো একটি লোক ফুটপাথে ঘোরাফেরা করতেছিল, আমাদের দেখিয়া একটু দূরে সরিয়া গেল।

৩৩/৩৪ নম্বর বাড়ি একেবারে ফুটপাথের উপর নয়। প্রথমে একটি ছোট লোহার ফটক‌, ফটক হইতে গলির মত সরু ইট-বাঁধানো রাস্তা কুড়ি-পঁচিশ ফুট। গিয়া বাড়ির সদরে ঠেকিয়ছে। দোতলা বাড়ি‌, সম্মুখ হইতে খুব বড় মনে হয় না। সদর দরজার দুই পাশে দুইটি জানালা‌, জানালার মাথার উপর দোতলায় দুইটি গোলাকৃতি ব্যালকনি। বাড়ির ভিতরে এখনও আলো জ্বলে নাই। ফুটপাথে দাঁড়াইয়া মনে হইল একটি স্ত্রীলোক দোতলার একটি ব্যালকনিতে বসিয়া বই পড়িতেছে কিংবা সেলাই করিতেছে। ব্যালকনির ঢালাই লোহার রেলিঙের ভিতর দিয়া অস্পষ্টভাবে দেখা গেল।

‘ব্যোমকেশবাবু!’

ছন হইতে অতর্কিত আহ্বানে দু’জনেই ফিরিলাম। গায়ে চাদর-জড়ানো যে লোকটিকে ঘোরাফেরা করিতে দেখিয়ছিলাম‌, সে আমাদের পিছনে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। পুষ্টকায় যুবক,  মাথায় চুল ছোট করিয়া ছাঁটা‌, মুখখানা যেন চেনা-চেনা মনে হইল। ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘কে?’

যুবক বলিল‌, ‘আমাকে চিনতে পারলেন না। স্যার? সেদিন সরস্বতী পুজোর চাঁদা নিতে গিয়েছিলাম। আমার নাম নন্দ ঘোষ‌, আপনার পাড়াতেই থাকি।’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘মনে পড়েছে। তা তুমি ও-পাড়ার ছেলে‌, ভর সন্ধ্যেবেলা এখানে ঘোরাঘুরি করছ‌, কেন?’

‘আজ্ঞে–নন্দ ঘোষের একটা হাত চাদরের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আসিয়া আবার তৎক্ষণাৎ চাদরের মধ্যে লুকাইল। তবু দেখিয়া ফেলিলাম‌, হাতে একটি ভিন্দিপাল। অর্থাৎ দেড় হেতে খেঁটে। বস্তুটি আকারে ক্ষুদ্র হইলেও বলবান ব্যক্তির হাতে মারাত্মক অস্ত্র। ব্যোমকেশ সন্দিগ্ধ নেত্ৰে নন্দ ঘোষকে নিরীক্ষণ করিয়া বলিল‌, ‘কী মতলব বল দেখি?’

‘মতলব-আজ্ঞে নন্দ একটু কাছে ঘেঁষিয়া নিম্নস্বরে বলিল‌, ‘আপনাকে বলছি স্যার‌, এ-বাড়িতে একটা ছোঁড়া থাকে‌, তাকে ঠ্যাঙাব।’

‘তাই নাকি! ঠ্যাঙাবে কেন?’

‘কারণ আছে স্যার। কিন্তু আপনারা এখানে কী করছেন? এ-বাড়ির কাউকে চেনেন নাকি?’

‘সত্যকামকে চিনি। তাকেই ঠ্যাঙাতে চাও-কেমন?’

‘আজ্ঞে—’ নন্দ একটু বিচলিত হইয়া পড়িল‌, ‘আপনার সঙ্গে কি ওর খুব ঘনিষ্ঠতা আছে নাকি?’

‘ঘনিষ্ঠতা নেই। কিন্তু জানতে চাই ওকে কেন ঠ্যাঙাতে চাও। ও কি তোমার কোনও অনিষ্ট করেছে?’

‘অনিষ্ট–সে অনেক কথা স্যার। যদি শুনতে চান‌, আমার সঙ্গে আসুন; কাছেই ভুতেশ্বরের আখড়া‌, সেখানে সব শুনবেন।’

‘ভূতেশ্বরের আখড়া! ‘

‘আজ্ঞে আমাদের ব্যায়াম সমিতি। কাছেই গলির মধ্যে। চলুন।’

‘চল।’

ইতিমধ্যে রাস্তার আলো জ্বলিয়াছে। আমরা নন্দকে অনুসরণ করিয়া একটি গলির মধ্যে প্রবেশ করিলাম‌, কিছু দূর গিয়া একটি পাঁচলঘেরা উঠানের মত স্থানে পৌঁছিলাম। উঠানের পাশে গোটা দুই নোনাধরা জীৰ্ণ ঘরে আলো জ্বলিতেছে। উঠান প্রায় অন্ধকার‌, সেখানে কয়েকজন কপনিপরা যুবক ডন-বৈঠক দিতেছে‌, মুগুর ঘুরাইতেছে এবং আরও নানা প্রকারে দেহযন্ত্রকে মজবুত করিতেছে। নন্দ পাশ কাটাইয়া আমাদের ঘরে লইয়া গেল।

ঘরের মেঝোয় সতরঞ্চি পাতা; একটি অতিকায় ব্যক্তি বসিয়া আছেন। নন্দ পরিচয় করাইয়া দিল‌, ইনি ব্যায়াম সমিতির ওস্তাদ‌, নাম ভূতেশ্বর বাগ। সার্থকনামা ব্যক্তি‌, কারণ তাঁহার গায়ের রঙ ভূতের মতন এবং মুখখানা বাঘের মতন; উপরন্তু দেহায়তন হাতির মতন। মাথায় একগাছিও চুল নাই‌, বয়স ষাটের কাছাকাছি। ইনি বোধহয় যৌবনকালে গুণ্ডা ছিলেন অথবা কুস্তিগির ছিলেন‌, বয়োগতে ব্যায়াম সমিতি খুলিয়া বসিয়াছেন।

নন্দ বলিল‌, ‘ভুতেশ্বরদা‌, ব্যোমকেশবাবু মস্ত ডিটেকটিভ‌, সত্যকামকে চেনেন।’

ভুতেশ্বর ব্যোমকেশের দিকে বাঘা চোখ ফিরাইয়া বলিলেন‌, ‘আপনি পুলিসের লোক? ঐ ছোঁড়ার মুরুব্বি?’

ব্যোমকেশ সবিনয়ে জানাইল‌, সে পুলিসের লোক নয়‌, সত্যকামের সহিত তাহার আলাপও মাত্র একদিনের। সত্যকামকে প্রহার করিবার প্রয়োজন কেন হইয়াছে তাঁহাই শুধু জানিতে চায়‌, অন্য কোনও দুরভিসন্ধি নাই। ভুতেশ্বর একটু নরম হইয়া বলিলেন‌, ‘ছোঁড়া পগেয়া পাজি। পাড়ার কয়েকজন ভদ্রলোক আমাদের কাছে নালিশ করেছেন। ছোঁড়া মেয়েদের বিরক্ত করে। এটা ভদরলোকের পাড়া‌, এ-পাড়ায় ও-সব চলবে না।’

এই সময় আরও কয়েকজন গলদঘর্ম মল্লবীর ঘরে প্রবেশ করিল এবং আমাদের ঘিরিয়া বসিয় কটমট চক্ষে আমাদের নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। স্পষ্টই বোঝা গেল‌, সত্যকামকে ঠ্যাঙইবার সঙ্কল্প একজনের নয়‌, সমস্ত ব্যায়াম সমিতির অনুমোদন ইহার পশ্চাতে আছে। নিজেদের নিরাপত্তা সম্বন্ধে শঙ্কিত হইয়া উঠিলাম। গতিক সুবিধার নয়‌, সত্যকামের ফাঁড়াটা আমাদের উপর দিয়া বুঝি যায়।

ব্যোমকেশ কিন্তু সামলাইয়া লইল। শান্তস্বরে বলিল‌, ‘পাড়ার কোনও লোক যদি বজ্জাতি করে তাকে শাসন করা পাড়ার লোকেরই কাজ‌, এ-কাজ অন্য কাউকে দিয়ে হয় না। আপনারা সত্যকামকে শায়েস্তা করতে চান তাতে আমার কোনই আপত্তি নেই। তাকে যতটুকু জানি দু’ ঘা পিঠে পড়লে তার উপকারই হবে। শুধু একটা কথা‌, খুনোখুনি করবেন না। আর‌, কাজটা সাবধানে করবেন‌, যাতে ধরা না পড়েন।’

নন্দ এক মুখ হাসিয়া বলিল‌, ‘সেইজনেই তো কাজটা আমি হাতে নিয়েছি স্যার। দু-চার ঘা দিয়ে কেটে পড়ব। আমি এ-পাড়ার ছেলে নই‌, চিনতে পারলেও সনাক্ত করতে পারবে না।’

ব্যোমকেশ হাসিয়া গাত্ৰোত্থান করিল‌, ‘তবু্‌, যদি কোনও গণ্ডগোল বাধে আমাকে খবর দিও। আজ তাহলে উঠি। নমস্কার‌, ভূতেশ্বরবাবু।’

বড় রাস্তায় আমাদের পৌঁছাইয়া দিয়া নন্দ আখড়ায় ফিরিয়া গেল। ব্যোমকেশ নিশ্বাস ছাড়িয়া বলিল‌, ‘বাপ‌, একেবারে বাঘের গুহায় গলা বাড়িয়েছিলাম!’

আমি বলিলাম‌, ‘কিন্তু সত্যকামকে মারধর করার উৎসাহ দেওয়া কি তোমার উচিত? তুমি ওর টাকা নিয়েছ।’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘দু-চার ঘা খেয়ে যদি ওর প্রাণটা বেঁচে যায় সেটা কি ভাল নয়?’

Category: ১৬. রক্তের দাগ - ব্যোমকেশ বক্সী - শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
পূর্ববর্তী:
« ০১. স্বাধীনতা প্ৰাপ্তির পর প্রথম বসন্তঋতু
পরবর্তী:
০৩. রক্তের মধ্যে দাসত্বের দাগ »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑