• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

৪৫. মিস্টার বনাম মিস এবং মিসেস

লাইব্রেরি » তসলিমা নাসরিন » প্রবন্ধ সংকলন (তসলিমা নাসরিন) » নির্বাচিত কলাম (১৯৯০) » ৪৫. মিস্টার বনাম মিস এবং মিসেস

মিস্টার বনাম মিস এবং মিসেস

বিয়ে দুজনেরই ঘটে, নারী এবং পুরুষ, দুজনেরই কিন্তু বিবাহিতের যাবতীয় চিহ্ন নারীকেই এক বহন করতে হয়, পুরুষকে নয়। অবিবাহিত এবং বিবাহিত পুরুষের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই; নামে নেই, কাপড়-চোপড়ে নেই, চুলের ফাকে নেই, হাতের আঙুলে নেই। বিবাহিত এবং বিপত্নীক পুরুষকেও আলাদা করবার কোনও উপায় নেই। অথচ অবিবাহিত ও বিবাহিত নারীর মধ্যে বিস্তর পার্থক্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিবাহিত এবং বিধবা নারীর ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা।

পাশ্চাত্যে এই নিয়মটি খুব প্রচলিত, কোনও নারী যখন কোনও পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট হয়—নারী তার আঙুলে একটি অঙ্গুরি পরে, এবং বিবাহিত হবার পরও একটি অঙ্গুরি। নারীর হাতের অঙ্গুরিই তার বিবাহিতের চিহ্ন বহন করে। নারী তার বিবাহের সকল সংস্কার একাই এক অঙ্গ জুড়ে লালন করে। শুধু পাশ্চাত্যে নয়, প্রাচ্যেও এই অঙ্গুরি নারীর কুমারীত্ব ঘুচে যাবার চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিবাহিত, অবিবাহিত ও বিধবা নারীর সজ্জা বিভিন্ন রকম। তবে পৃথিবীর সকল দেশের সকল সম্প্রদায় পুরুষের জন্য একই রকম সজ্জা এবং সম্বোধন তৈরি করেছে। অবিবাহিত নারী তার নামের আগে মিস এবং বিবাহিত নারী মিসেস শব্দ ব্যবহার করে নিজের বৈবাহিক অবস্থার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। কিন্তু পুরুষ তার ‘মিস্টার’ সম্বোধনটিকেই আগাগোড়া লালন করে মিস্টার সৌমেন এবং মিস্টার মিলনের মধ্যে কে বিবাহিত এবং কে বিবাহিত নয় তা নির্ণয় করবার সাধ্য আছে কারও?

কিন্তু মিস লীনা এবং মিসেস বীণার বৈবাহিক পরিচিতি সম্বন্ধে আমরা মোটেও সন্দিগ্ধ নই। নারী বিবাহিত কি বিবাহিত নয়, তা তার নামের মধ্যে নিহিত—বিবাহ নিশ্চয়ই নারীর জন্য অধিক গুরুত্ববাহক কিছু, যা পুরুষের জন্য নয়। বিবাহ একটি নারীর জীবনযাপনে এমন পরিবর্তন ঘটায়, তার ঘর দরজা পরিবর্তিত হয়, তার পোশাক-আশাক পরিবর্তিত হয়; তার নিরাভরণ হাত, নাক ও সাদা সিথিও পরিবর্তিত হয়; পুরুষের জীবনযাপনকে বিবাহ কোনও পরিবর্তন দেয় না।

নারী এয়োতির চিহ্ন বহন করে, হাতে শাঁখা, সিঁথিতে সিঁদুর, নাকে নোলক, গায়ে গয়না, কাতান বেনারসী পরে নারী প্রমাণ করে সে বিবাহিত। এই সজ্জার অর্থ সে একটি পুরুষের কাছে বাঁধা, সে তার অঙ্গুরি ও সম্বোধন দিয়ে বাঁধা, সে তার ঝলমলে পোশাক ও শাখা-সিদুর দিয়ে বাঁধা। পুরুষেরাও চুলে সিঁথি করে, সেই সিঁথিতে তারা সিঁদুর পরে না, পুরুষেরও দুটো হাত আছে, সেই হাতে তারা শাঁখাও পরে না। তাদের সজ্জায় কোনও পরিবর্তন নেই, তারা নানা ধাতুদ্রব্য  দ্বারাও অলংকৃত হয় না।

বিধবা এবং বিপত্নীক-এর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিধবার গা থেকে যাবতীয় অলংকার খুলে ফেলতে হবে। বিধবার পরিধেয় বস্ত্র হবে কাফনের মত সাদা। অন্য এক সম্প্রদায়ে বিধবার আমিষ খাওয়ার বিধান নেই, বিধবা মাছ মাংস ডিম দুধ খেতে পারবে না। কিন্তু বিপত্নীক পুরুষের জন্য কিছুই বাধা নয়। তাকে নিরাভরণ এবং নিরামিষাশী হতে হয় না।

আমিষ শরীরের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় খাদ্য। এই খাদ্যকে নিষিদ্ধ করবার কারণ, বিধবা নারীকে অপুষ্টি এবং নানা রোগব্যাধির দিকে ঠেলে দেওয়া। বিধবাকে শারীরিক ও মানসিক জরার শিকার করা এক ধরনের গোপন অভিসন্ধি পুরুষ এবং পুরুষ তৈরি সমাজের।

নারী ও পুরুষ যদি মানুষ হিসেবে সমান মাপের হয়, তবে বিবাহের সঙ্গীটির মৃত্যু হলে নারীকে যে আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, পুরুষকে তা যেতে হয় না কেন? কেন পুরুষের শরীরে জড়াতে হয় না সাদা কাফনের মত কাপড়, পুরুষকে নানা ব্রত পালন করতে হয় না, আমিষ বর্জন করতে হয় না?

আমরা কি একবার ভেবে দেখতে পারি, মানুষে মানুষে এত বৈষম্য কেন? সঙ্গীলাভের এবং সঙ্গীহীনতার আচার কেন দুজনের ক্ষেত্রে দুরকম? নারীকে নানা কিছু অর্জন এবং বর্জন করতে হয়। আর পাশাপাশি পুরুষেরা ঝাড়া হাত পা। অবিবাহিত, বিবাহিত এবং বিপত্নীক অবস্থায় পুরুষেরা কোনও সংস্কার স্পর্শ করে না; পুরুষ তার শরীরে-স্বভাবে কিছু অর্জন করে না, এবং শরীর ও স্বভাব থেকে কিছু বর্জনও করে না।

কেবল নারীকেই হতে হয় অলংকৃত এবং নিরলংকৃত। কারণ, সামাজিক এই নিয়মের একটিই কারণ, পুরুষের জীবনে নারী খুব তুচ্ছ একটি ঘটনা, কিন্তু নারীর জীবনে পুরুষ অতি মূল্যবান, অতি উৎকৃষ্ট, অতি কাঙিক্ষত, অতি আরাধ্য বিষয়—তাই নারীর শরীরে ধারণ করতে হয় সধবার ঔজ্জ্বল্য এবং বৈধব্যের বিষাদ। শরীরে ধারণ করবার কারণ—শরীরই নারীর একমাত্র সম্পদ। শরীরের ত্বক যদি মসৃণ এবং উজ্জ্বল হয়, শরীরের অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গ যদি সুডৌল ও সুছাদ হয় তবে পুরুষ নারীকে ভোগের জন্য নির্বাচন করে। আর যে নারী পুরুষের ভোগে আসে না, সে নারী সমাজে উপেক্ষিত, অপকৃষ্ট, অপাঙক্তেয় ও অস্পৃশ্য।

পুরুষের ভোগের যোগ্য হলেই নারীকে সাজানো হয় মূল্যবান বস্ত্র ও ধাতুতে। পুরুষের ভোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হলেই তাকে নিক্ষেপ করা হয় সমাজের আস্তাকুঁড়ে, নারীর প্রধান যোগ্যতা পুরুষের যোগ্য হওয়া। নারীর প্রধান যোগ্যতা পুরুষকে তৃপ্ত ও তুষ্ট করা।

কী এই সমাজ এবং কেন এই সমাজ–নারী যদি সমাজের অন্তঃসারশূন্য চেহারা একবার অনুভব করতে পারে, নারী যদি নিজেকে মানুষ হিসেবে একবার উপলব্ধি করতে পারে; তবে একটি পুরুষ তার জীবনযাপনের সঙ্গী হওয়ার কারণে তার গায়ে কোনও ধাতব-পদার্থের বৃদ্ধি ঘটবে না, তার পোশাকে কোনও পরিবর্তন আসবে না, তার নাকে, হাতে, হাতের আঙুলে ও সিথিতে কোনও উপদ্রব উপস্থিত হবে না। এবং তার সম্বোধনেও নয়।

একটি সম্পূর্ণ ও একক মানুষ হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করবার প্রথম উপায়—নারী তার নাম থেকে, অঙ্গ থেকে বিবাহ ও বৈধব্যের বেশ খুলে ফেলবে। নারী যদি নিবোধ না হয়, তবে নিশ্চয় অলংকার তাকে আর কলংকিত করবে না, মিস ও মিসেসের চিহ্নিতকরণ তাকে আর জড় বস্তুতে পরিণত করবে না, সাদা বৈধব্য তাকে আর স্থবিরতা দেবে না নিরামিষ আহার তাকে চিতার দিকে ঠেলবে না।

নারী, তুমি সকল মিথ্যে সংস্কার ভেঙে এবার মানুষ হও।

Share on FacebookShare on TwitterShare on WhatsAppShare on TelegramShare on SMS
Category: নির্বাচিত কলাম (১৯৯০)
পূর্ববর্তী:
« ৪৪. ভিন্ন এক সমাজে নারীরা
পরবর্তী:
৪৬. বন্ধ্যা, ওর বাচ্চা হয় না »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑