মকছুদোল মোমেনীন বা বেহেশতের কুঞ্জী
‘মকছুদোল মো’মেনীন’ নামে একটি বই আছে, বইটি আমাদের অশিক্ষিত, মূর্খ ও বর্বর মুসলমানদের অতি প্রিয় একটি বই, বইটি এ অবধি সম্ভবত কয়েক লক্ষ কপি ছাপা হয়েছে। মুসলমান হিসেবে জন্ম নেবার প্রমাণ হিসেবে খৎনা করা এবং ঘরে একটি ‘মকছুদোল মোমেনীন’ রাখা অবশ্য কর্তব্য বলে অধিকাংশ মুসলমানই মনে করে।
মকছুদোল মোমেনীন বা বেহেশতের কুঞ্জীর প্রথম পাতায় লেখা স্বৰ্গসুখ, শান্তি যদি চাহ দোজাহানে, মকছুদোল মোমেনীন কিনে দাও বিবিগণে। পতি ভক্তি করি যদি নিতে চাও পুঞ্জি। স্বামীকে কিনিতে বল বেহেশতের কুঞ্জী।
বইটির সাড়ে চারশ’ পৃষ্ঠা জুড়ে রচিত বাক্যাবলি যে কোনও সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করবার জন্য যথেষ্ট। বইয়ের ৩৪৩ থেকে ৩৫৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত রচিত হয়েছে স্ত্রীলোকদের জন্য ৩৫টি নছিহত।
এই নছিহতগুলো পড়লেই বিবিগণের মান মর্যাদা সম্বন্ধে প্রভূত জ্ঞান লাভ করা যায়। আমি কিছু নছিহতের নমুনা দিচ্ছি— –
স্বামীকে কখনও নিজের উপর অসন্তুষ্ট হইতে দিবেন না। তিনি যে ইশারায় চালাইতে চাহেন, সেই ইশারাতেই চলিতে থাকুন। আপনার স্বামী যদি আপনাকে বলেন, তুমি দুই হাত বাঁধিয়া সমস্ত রাত্রি আমার সামনে দাঁড়াইয়া থাক, তথাপি তাহাতে বাধ্য হোন। তাহা হইলে খোদা ও রসুল আপনার উপর সন্তুষ্ট থাকিবেন। (৭ম নছিহত)
আপনাদের স্বামী আপনাদের নিকট থাকিতে কখনও তাহদের বিনা হুকুমে নফল নামাজ, নফল রোজা, নফল এবাদত ইত্যাদি কার্য করবেন না এবং তাহদের অগ্রে খানা খাইবেন না, করিতে হইলে তাহার হুকুম লইয়া তাহাদিগকে সন্তুষ্ট রাখিয়া করিতে থাকিবেন। কেননা নফল এবাদতের চেয়েও স্বামীর খেদমতেই ছওয়াব অত্যন্ত বেশি পাইবেন। (১০ম নছিহত)
স্বামীর বিন হুকুমে তাহার ঘরের কোনও মালপত্র টাকাকড়ি কাহাকেও দিবেন না, দান খয়রাতও করবেন না, প্রতিবেশীর বাড়ি বা কুটুম্বালয়ে যাইবেন না। কারণ স্বামীর বিনা হুকুমে ঐ সমস্ত কাজ করা মহাপাপ | (১১শ নছিহত )
স্বামীর কোনও দোষের কথা কখনও অন্যের নিকট প্রকাশ করিবেন না। সর্বদাই আপন স্বামীর সুখে সুখী হইবেন ও তাহার দুঃখে দুঃখী হইবেন। (১২শ নছিহত)
সকল সময়ে স্বামীর মেজাজ বুঝিয়া ব্যবহার করিতে থাকুন। যখন দেখিবেন যে, স্বামী হাস্যবদনে আছেন তখন হাসিয়া হাসিয়া ব্যবহার করুন। আর যখন দেখিবেন যে, গম্ভীর হইয়া আছেন, তখন হাসিয়া হাসিয়া ব্যবহার করিলে চলিবে না। হয়ত রাগিয়া উঠিয়া মারও দিতে পারেন, কিংবা কোনও কটু বাক্য বলিয়া দিতে পারেন, কোনও সন্দেহ নেই। অতএব পূর্বেই সাবধান হইয়া ব্যবহার করা উচিত। (১৮শ নছিহত) –
স্বামী যদি কোনও সময় কোনও ক্রটি পাইয়া আপনাদিগকে মারেন বা গালাগালি করেন তজ্জন্য চুপচাপ গাল ফুলাইয়া মনের রাগে দূরে সরিয়া থাকিবেন না। বরং হাতে পায়ে ধরিয়া অনুনয় করুন। (১৯শ নছিহত)
অতি চালাকির সহিত আপন আপন স্বামীর সঙ্গে মিলেমিশে জিন্দেগি কাটাইতে থাকুন। যদিও কোনও কোনও সময় তাহারা মহব্বতে পড়িয়া আপনাদের হাত-পা টিপিয়া দিতে অথবা অন্য কোনও খেদমত করিয়া দিতে চাহেন, শক্তি থাকিতে তাহা কখনও করিতে দিবেন না। কারণ আপনাদের পিতা-মাতা ঐরূপ করিতে চাহিলে তাহা ভাল মনে করিবেন কি? না, না, না। তবে বুঝিতে গেলে পিতা-মাতার চেয়েও স্বামীর সম্মান বেশি। (২০শ নছিহত)
আপনাদের স্বামীগণ আপনাদিগকে যেইরূপ চালাইতে চাহেন, সেইরূপই চলিতে থাকুন এবং তাহারা যেইভাবে চলিতে থাকেন আপনারা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকুন। কোনও কাজে ও কোনও কথায়ই তাহদের মতের বিরুদ্ধাচরণ করবেন না। (২৯শ নছিহত)
খোদার নিবন্ধনে যাহার যেরূপ অদৃষ্ট ফলিয়াছে তাহার উপরই শোকর করা একান্ত কর্তব্য যাহার স্বামী পাগল, বুদ্ধিহীন বা মূখ, তাহার পক্ষে সেই-ই আকাশের চাঁদ মনে করিতে হইবে। তাহার পদতলে মাথা নিচু করিয়া দিয়া জিন্দেগি কাটাইয়া লইলেই পরকালে বেহেসতের সুখ-শান্তি ভোগ করিতে পারবেন। (৩৪শ নছিহত)
মুখ হোক, অন্ধ হোক কি কানা হোক, খঞ্জ হোক কি আতুর হোক, সুশ্ৰী হোক কি কুত্ৰী হোক, সর্বদাই সন্তুষ্ট চিত্তে তাহার পদতলে জীবনখানিকে লুটাইয়া দিতে থাকুন এবং সর্বদাই উভয় মিলেমিশে মহব্বতের সহিত জিন্দেগি কাটাইতে চেষ্টা করুন। (৩৫শ নছিহত)
মুসলমান পুরুষেরা তাদের বিবিগণের জন্য স্বৰ্গ-সুখ ও শান্তি’র বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন মকছুদোল মোমেনীন-এর মাধ্যমে। এবং আমাদের ততোধিক মুসলমান বিবিগণ সাদরে বরণ করে নিচ্ছেন পুরুষ রচিত তাবৎ নছিহত।
ধিক্ ‘বিবিগণ’ ধিক্। যদি লজ্জা বলে সামান্য কিছু অবশিষ্ট থাকে, যদি একবারও মানুষ বলে নিজেকে মনে হয় তবে আসুন—সমস্বরে নিষিদ্ধ করতে বলি মকছুদোল মোমেনীন নামক একটি অশিষ্ট, অসংহত, অমার্জিত, অযৌক্তিক ও অশ্লীল প্রকাশনা।
আমাদের সংবিধানে নাকি নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা লেখা আছে। একদিকে সমান অধিকারের ধুয়ো, আরেক দিকে ধর্মের নামে নারীকে অমানুষ বানাবার কায়দা কৌশল। নিষিদ্ধ করতে বলবার কেবল একটি কারণ নয়—এই বইয়ে যে অদ্ভুত চিকিৎসাপ্রণালী বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে একটি বিজ্ঞান নির্ভর উন্নয়নশীল সভ্য দেশের লজ্জিত হওয়া উচিত। ঘরে আগুন লাগলে উচ্চস্বরে আল্লাহ আকবর বললে খোদার কৃপায় আগুন নিভে যায় বলে আমি বিশ্বাস করি না। ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করলে ফোড়ার জন্ম হয় এবং সেই ফোড়াকে নির্মুল করতে হলে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার। শরীরের কোনও স্থানে ফোড়া হলে শাহাদাৎ অঙ্গুলিকে মাটির ওপর কিছুক্ষণ ধরে রেখে কোনও একটি দোয়া পড়লে সেই ফোড়া নিরাময়ের কোনও কারণ নেই। চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি ও নানারকম চোখের রোগ, অন্ধত্ব ইত্যাদি দূর করতে কোনও আয়াত বা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বন্ধ্যা স্ত্রীলোকের সন্তান হওয়ার জন্য একটি তদবীর লিখে গলায় বুলিয়ে দিলে এবং ৪০টি লবঙ্গের মধ্যে ৭ বার করে একটি দেওয়া পড়ে প্রতি রাতে খেলে নাকি গর্ভে সন্তান হয়। ধরা যাক জরায়ুর নালী (ফ্যালোপিয়ান টিউব) বন্ধের কারণে কোনও স্ত্রীলোকের সন্তান হচ্ছে না, কোনও ডিম্বাণুই ওই নালীপথে জরায়ুতে পৌঁছুতে পারছে না, যেখানে তার সঙ্গে শুক্রাণুর মিলন হবে। তবে কি কোরানের সবকটি আয়াত গুলে তাকে খাওয়ালে সে সন্তান জন্ম দিতে পারবে? আমি জানি পারবে না, এবং পাঠক, আপনারাও নিশ্চয়ই তা স্বীকার করবেন।
জ্বর হলে, বসন্ত হলে, কলেরা হলে, অতিরিক্ত রক্তস্রাব হলে হাতে ও নাভির নিচে যে সমস্ত তাবিজ লাগাবার বর্ণনা আছে, এবং সুস্থ হয়ে যাবার নিশ্চয়তা আছে তা দেখে আমি বিস্মিত হই। জ্বর কোনও রোগ নয়, রোগের উপসর্গ, রোগের কারণ খুঁজে বের করে যে জীবাণু দ্বারা রোগের উৎপত্তি সেই জীবাণুনাশক ব্যবহার করলেই জ্বর সেরে যায়। কলেরা হলে শরীর থেকে জলীয় পদার্থ যে পরিমান বের হয়, একই পরিমাণ জলীয় পদার্থ রোগীর শরীরে প্রবেশ করাতে হয়, সঙ্গে কলেরার জীবাণু নাশ করবে এমন পরীক্ষিত জীবাণুনাশক প্রয়োগ করতে হয়। অতিরিক্ত রক্তস্রাব জরায়ুতে এক ধরনের টিউমারের কারণে সাধারণত হয়, রক্তস্রাবের কারণ বের করে সেই কারণের সেবন-চিকিৎসা অথবা শল্য-চিকিৎসা করতে হয়। অথচ দেশের অধিকাংশ মানুষ ঝাড়ফুক, তাবিজ কবচের উপর ভরসা করে বেঁচে থাকে। আর বিশ্বাসে ভুগতে ভুগতে অধিকাংশই মরে, বাকিরা প্রায় মরো-মরো অবস্থায় উপস্থিত হয় অগত্যা চিকিৎসকের কাছে।
এই অশিক্ষা, এই ধর্মীয় কুসংস্কার, এই সর্বগ্রাসী অসুস্থতায় মানুষ আক্রান্ত হতে হতে এখন এমন এক মহামারী শুরু হয়েছে যে খুব শীঘ্র মকছুদোল মোমেনীন এবং এ জাতীয় বিভ্রান্তিকর প্রকাশনা বন্ধ না করা হলে আমরা একটি কঙ্কালসার অসুস্থ জাতিতে পরিণত হব, বিদ্যমান বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও শেষ অদি এই মহামারীকে ঠেকাতে পারবে না।
সালা নাস্তিত।।।কিতাবে যা যা বলেছে,,মানতে পারলে সুখি জীবন লাভ করবে।।।
এখানে যা যা বলা হয়েছে সব সহিহ হাদিসেরই কথা। এটা একদমই সত্যি। রাসূল সাঃ বলেছেন,”কোন স্ত্রী যদি স্বামীর শরীরের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঘা ও চেটে দেয় তাও কখনো স্বামীর হক পূরণ করতে পারবে না”। এটা ও সত্যি নফল ইবাদত এর চেয়ে স্বামীর খেদমত বড়, কারণ স্বামীর আনুগত্য, স্বামীর কথা শুনা একদম ফরজ। এটা ও জানা উচিত কেউ ফরজ ত্যাগ করলে সে নাফরমানে পরিণত হবে।
মোকছুদুল মোমিন